Lesson 13 

ফাঁকি রাজকিশোর পট্টনায়ক

 
1. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো:
 
1.  কটক কোন্ নদীর তীরে অবস্থিত? ওড়িশার আরও একটি নদীর নাম লেখো
উত্তর: কটক মহানদীর তীরে অবস্থিত। ওড়িশার আরও একটি নদী হল-কাঠজোড়ি
 
2. গোপালের বাবা প্রথমে কেন বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি?
উত্তর: গোপালের বাবা প্রথমে বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি, কারণ সেখানকার বেলে মাটিতে জল দেওয়ার সুবিধাও ছিল না। তা ছাড়া গোপাল যে গাছে জল দিতে পারবে-এ ব্যাপারে তাঁর বাবার ভরসাও ছিল না। কেন-না, গোপাল কোনোদিন নিজের হাতে জল তুলে স্নানটুকুও করত না
 
3. আমগাছে কেন ঠেকো দিতে হয়েছিল?
উত্তর: যুদ্ধের সময় উড়োজাহাজ থেকে যদি বোমা পড়ে, তবে তার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে সরকারের লোক একেবারে আমগাছের গোড়া পর্যন্ত ট্রেঞ্চ (গর্ত) খুঁড়েছিল। সেই কারণে, আমগাছটি পুব দিকে হেলে গিয়েছিল। ফলে গাছটি দুর্বল হয়ে যাতে পড়ে না-যায়, সেইজন্যে আমগাছে ঠেকো দিতে হয়েছিল
 
4. গাছটিকে উইয়ে খেয়ে ফেলল কীভাবে?
উত্তর:গোপাল ডিডিটি দিয়ে আমগাছের সব পিঁপড়ে মেরে ফেলেছিল। তার ফলে উইনিধনকারী সব পিঁপড়ে মারা গেল, কিন্তু সেই সুযোগে উইপোকা ভিতর থেকে গাছটিকে খেয়ে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল
 
5. গল্প অনুসারে কটকের খবরের কাগজে আমগাছটিকে নিয়ে কী সংবাদ বেরিয়েছিল?
উত্তর: কটকের খবরের কাগজে আমগাছটিকে নিয়ে নিম্নোক্ত সংবাদটি বেরিয়েছিল-
"কটকে অর্ধরাত্রে ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি। শহরের ভিতরে পুরীঘাটে আম গাছ উপড়ে পড়েছে।"
 
2. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:
 
1. "একটু জমি খালি রাখা যাক”- প্রস্তাবটি কে দিয়েছিলেন? কেন তিনি এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন?
উত্তর: প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন, রাজকিশোর পট্টনায়কের লেখা 'ফাঁকি' গল্পের কিশোর গোপালের বাবা
উত্তর: তিনি সেই ফাঁকা অংশে বাগান করতে চেয়েছিলেন। কারণ সেখানকার প্রকৃতি ছিল মরুভূমির মতো, চারদিকে ছিল পাথরের মতো শুকনো মাটি। সেখানে বাগান করলে একটু শান্তি ও ছায়ার আশ্রয় পাওয়া যাবে-এই কথা ভেবেই তিনি এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন
 
2. "গোপাল মুখ তুলে সন্দিগ্ধভাবে বাবার মুখের দিকে তাকাল।" -তার এই সন্দেহের কারণ কী?
উত্তর:  গোপালের বাবা গোপালকে জানান যে, এক টুকরো জমির সেই বাগানে তিনি আমগাছ লাগাতে চান। তিনি নিজের হাতে কলম বানিয়েছিলেন। কলমটি ছিল ভাগলপুর থেকে আনা ভালো জাতের ল্যাংড়া আমের চারা। বাবার তৈরি করা কলমে কেমন গাছ হবে, সেই সন্দেহ মনে উঁকি দেওয়াতেই গোপাল সন্ধিগ্ধভাবে বাবার দিকে তাকায়
 
3. "তুই করবি বাগান!"-বাবা কেন এমন মন্তব্য করেন?
উত্তর:  গোপাল নিজের হাতে জল তুলে স্নানটুকুও নিজে করতে পারত না। অথচ বাগান করতে গেলে নিয়মমতো তার পরিচর্যা করা প্রয়োজন। গোপালের পক্ষে এ কাজ কখনই সম্ভব নয় ভেবে তার বাবা এমন মন্তব্য করেন
 
4. "গাছটাকে আর দু-হাত ভিতরে লাগালে কত ভালো হত"-কোন্ গাছ? কেন বক্তার এমন মনে হয়েছে?
উত্তর: রাজকিশোর পট্টনায়ক-এর লেখা 'ফাঁকি' গল্পে গোপালের বাবার বাগানে বসানো আমগাছটির কথা বোঝানো হয়েছে
 
উত্তর: বক্তা এখানে গোপাল। তার এমন মনে হওয়ার কারণ হল-আমগাছটি যখন বড়ো হবে, তখন তার ডালপালা পাঁচিল ডিঙিয়ে বাইরে চলে যাবে। রাস্তার ছেলেরাও হয়তো উৎপাত করবে। এমনকি ওই গাছের জন্যে ঝগড়াও হবে। বাইরের ঝগড়া বাড়ির মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলবে। এই কারণেই গোপাল ভেবেছিল, গাছটিকে আরও দু-হাত ভিতরে লাগাতে পারলে ভালো হত
 
5. আমগাছটি কীভাবে গোপালদের বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছিল?
উত্তর: কেউ গোপালের থেকে তার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে সে বাড়ির চিহ্নিতকরণের নিশানা হিসেবে বোঝাত যে, কাঠজোড়ি নদীর ধার বরাবর পুরীঘাট পুলিশের ফাঁড়ির পশ্চিমে যেখানে পাঁচিলের মধ্যে আম গাছ দেখা যাবে, ঠিক সেইখানে তাদের বাড়ি। এইভাবে আমগাছটি গোপালদের বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছিল
 
6. গাছটি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছিল বুঝিয়ে লেখো। 
উত্তর: মানুষের জীবনে নানাভাবেই গাছ উপকার করে থাকে।  আলোচ্য 'ফাঁকি' গল্পের আমগাছটি নানাভাবে গোপাল ও তার পরিবারকে সাহায্য করেছিল। প্রথমত, আমগাছটি তিন বছরে একবার ভালো ফলন দিত। সমস্ত আম যত্ন করে ঘরে তুলে গোনাগুনতি দু-চারটে করে আম বিলোনো হত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে। গাছটি এভাবে পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিল। অন্যদিকে, কাঠবেড়ালি আর বাদুড়রাও সে গাছের আম খেত। এরই পাশাপাশি গাছটি গোপালবাবুদের বাড়ির নিশানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে অতিথিদের ঠিকানা পেতে সাহায্য করত। বাইরের লোককে পথ দেখানোর জন্যে বাইরের বিজলি আলো জ্বালিয়ে দিলে গাছ তা আড়াল করে দিত। শুধু তাই নয়, ওই গাছই বাড়ির ভিতরের কথা লুকিয়ে রাখত বাইরের লোকের কাছে। বছরের পর বছর সে ফল, পাতা দিত, আশ্রয়ও দিত। তার ডালে শিশুরাও দোলনা টাঙিয়ে দোল খেত
 
7. আমগাছটি নানা উপকার ও সাহায্যে আসত। ১৩ আমগাছটিকে ঘিরে বাড়ির সকলের অনুভূতির প্রকাশ গল্পে কীভাবে লক্ষ্য করা যায়?
উত্তর: রাজকিশোর পট্টনায়ক-এর 'ফাঁকি' গল্পের কাহিনিবৃত্ত আবর্তিত হয়েছে একটি আমগাছকে কেন্দ্র করে। সেই আমগাছটির পরিচর্যায় ছিল গোটা একটি পরিবারের তিনজন সদস্য-গোপাল এবং তার বাবা ও মা। আমগাছটির চারা লাগানো থেকে ভরন্ত যৌবনে গাছটির অকালমৃত্যু পর্যন্ত তাকে ঘিরেই নানা সদস্যের বিচিত্র অনুভূতি গল্পে প্রকাশ পেয়েছে। কাহিনির শুরুতে গাছটি বাগানের ঠিক কোথায় লাগানো হবে, এ নিয়ে বাবা এবং ছেলে-মায়ের মতভেদ থাকলেও, শেষে বাবা গাছটিকে ছেলে ও স্ত্রীর পরামর্শ মেনে পাঁচিল ছেড়ে হাত দুয়েক মাত্র ভিতরে লাগান। গাছটিকে ঘিরে ছেলে-মায়ের আগ্রহের কোনো অন্ত ছিলনা। গাছ বসানোর পরের দিনই সকালে তারা বাগানে যায় এবং চারা গাছটি কেমন আছে তা দেখতে থাকে। কলমটি যে ঠিকমতো করা হয়নি-এ কথা বাবাকে জানাতে গিয়ে গোপাল বকুনি খায়
 
বাড়ির পাহারাদারের মতো গাছটি তাদের বাগানে দাঁড়িয়ে ছিল। গরমের সময় গোপাল তার বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে গাছের তলায় আরামে বসত এবং বলত সেটি তাদের পোষা গাছ। এই 'পোষা' শব্দের মধ্যে পরিবারের সকলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠার বার্তাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, শহরের মধ্যস্থলে সাধারণ মানুষ নানা প্রয়োজনে, বিশেষত পুজোতে, গোপালদের আম গাছের পাতা কিংবা ডালের জন্যে এলে গোপাল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেগুলি দিত। যারা নিতে আসত তাদের বলত-“কচি পাতা নিও না। ওই থাক, এত পাতা গেলে গাছে কি আর ফল ধরবে?” এই উচ্চারণেই বোঝা যায়, একদিকে তারা পরহিত মানসিকতাসম্পন্ন, অন্যদিকে গাছটিকে ঘিরে প্রকাশ পেয়েছে তাদের সূক্ষ্ম অনুভূতির কথা
 
গাছটিকে ঘিরে সকলের ভালোবাসার প্রকাশ আরও স্বচ্ছ রাখে, গাছে বোল ধরলে, ফল ধরলে। গাছে আম ধরলে বাড়ির সকলে মিলে গুনতে শুরু করত। এমনকি নজর রাখে পাড়ার ছেলেরা ঢিল ছুড়ে যাতে আম নষ্ট না-করে। খুন্টুনি দিয়ে সবাই মিলে আম পাড়ার ঘটনায় গাছটিকে নিয়ে তাদের আনন্দ-অনুভূতিই প্রকাশিত হয়। আবার গোনাগুনতি করে আত্মীয়স্বজনদের আম বিলোনোয় যে আনন্দ, তারও মূলে ওই আমগাছটি। ফি-বছর সকলে উদ্বেগে  থাকে-'কত আম ফলবে'-এই ভাবনায়। এমনকি বলেও ফেলে, "এ বছর কাউকে পাতা দেওয়া হবে না।"
আমগাছটিকে নিয়ে অনুভূতির প্রকাশ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন ডাল কাটার প্রসঙ্গে গোপালের মা বলেন-“দ্যাখ গোপাল, আম গাছে হাত দিলে ঝগড়া হবে তোতে আমাতে।" কিন্তু অসুবিধা সৃষ্টিকারী কয়েকটি ডাল কাটার পরে গোপাল গাছটির ক্ষতস্থানে যখন হাত বুলিয়ে দেয়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে, গাছটিকে নিয়ে তার কী অপরিসীম সমব্যথা!
 
গাছটিকে নিয়ে পরিবারের উপলব্ধির প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়, সবাই যেদিন সকালে দ্যাখে গাছটি ঝড়ে পড়ে গিয়েছে। বাড়িতে হইচই পড়ে যায়- "আরে গোপাল, ওঠ! আম গাছের দশা দেখেছিস?” গোপাল গাছটির চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখে। দূরে ঘোরাফেরা করা কাঠবিড়ালিকে উদ্দেশ্য করে তখন ব্যথিত গোপাল বলে-"আর কী খাবি রে, কাঠবিড়ালি? আমগাছ মরে গেছে।”-এমনকি খবর প্রকাশের দু-দিন পরেও গোপাল কাউকে বাড়ির নিশানা নির্দেশ করে ভুল করে গাছের কথাই বলে দেয়। এইভাবে গোপাল-সহ পরিবারের সকলের সত্তার সঙ্গে আম গাছটি একাত্ম হয়ে গিয়েছিল
 
8. "সেইদিন থেকে গাছ হেলে পড়েছে পুবদিকে।”- কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? গাছটি হেলে পড়ার কারণ কী?
উত্তর: যুদ্ধের সময় উড়োজাহাজ থেকে যদি বোমা পড়ে, তবে তার
হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে সরকারের লোক যেদিন আমগাছের গোড়া পর্যন্ত ট্রেঞ্চ (গর্ত) খোঁড়ে, উদ্ধৃতাংশে সেই দিনের কথা গল্পে বলা হয়েছে। আমগাছের গোড়া পর্যন্ত ট্রেঞ্চ (গর্ত) খোঁড়ার কারণে আম গাছ কমজোরি হয়ে হেলে পড়েছিল
 
9. "ঠিক বন্ধুর মতই গাছ সব কথা লুকিয়ে রেখেছে।” -গাছটি কীভাবে গোপালের 'বন্ধু' হয়ে উঠেছিল? কোন্ সব কথা সে লুকিয়ে রেখেছিল?
উত্তর: রাজকিশোর পট্টনায়কের 'ফাঁকি' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আমগাছ ঠিক বন্ধুর মতো সব কথা লুকিয়ে রেখেছিল। তাদের সাধের আমগাছটি রাস্তার ওপর এমনভাবে ঝুঁকে পড়েছিল যে, যেতে-আসতে মাথায় লাগত। বৃষ্টির সময় পাতার জলে ভিজে যেত পথিকের গা। তাই মায়ের নিষেধ অগ্রাহ্য করে গোপাল সেই গাছের কয়েকটি সরু ডাল চুপিসারে কেটে ফেলেছিল। এরপরই কাটা ডালগুলিকে একেবারে বাইরে ফেলে দিয়ে এসেছিল যাতে তার মা টের না-পায়। গাছটিও তার ক্ষতচিহ্ন সব পাতার আড়ালে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল গোপালকে বকুনির হাত থেকে বাঁচাবার জন্যে। গোপালের জন্যেও গাছটির গভীর মায়া ছিল। বন্ধু যেমন বিপদে-আপদে বন্ধুর সঙ্গে থাকে, গাছটিও চেয়েছিল যাতে গোপাল মায়ের কাছে সে বকুনি না-খায়। এইভাবে গাছটি গোপালের 'বন্ধু' হয়ে উঠেছিল
 
বাড়ির সদস্যদের পরিচর্যায় আমগাছটি ক্রমশ বাড়ির একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। বাইরের লোককে পথ দেখানোর জন্যে বাইরের বিজলি আলো জ্বালিয়ে রাখলে, গাছ তা আড়াল করে দিত। আবার বাইরের লোকের কাছে ভিতরের কথা লুকিয়েও রাখত। এভাবেই বাইরের লোককে নিজের আড়ালের ওপাশে রাখত। এমনকি সে তার শরীরে উই ধরার যন্ত্রণা চেপে রেখে ভিতরে ভিতরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে গিয়েছিল তাও হয়েছিল সকলের অজান্তেই
 
10. বিভিন্ন ঋতুতে আম গাছটির যে-ছবি গল্পে ফুটে উঠেছে, তা আলোচনা করো
উত্তর: রাজকিশোর পট্টনায়ক-এর 'ফাঁকি' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল একটি আমগাছ। আমগাছটিকে বাড়ির বাগানে লাগানোর পর থেকে বিভিন্ন ঋতুতে আমগাছকে কেন্দ্র করে নানা ছবি গল্পে উদ্ভাসিত হয়েছে। শিশু আম গাছটিকে যেদিন বসানো হয়, তার পরের দিনই সকালে দেখা যায়, গাছটিকে সতেজ থাকতে। গ্রীষ্মে নদীর ধারের গরম বাতাস সে বুক দিয়ে ঠেকায়। কাঠজোড়া নদীর দিক থেকে ছুটে আসা গরম বালির ঝাপটা নিজের দেহ দিয়ে সে আটকে রাখে। গ্রীষ্মকালে আমগাছটি এমন শীতল ছায়াময় আশ্রয় জোগান দেয়, যেন মনে হয় তার তলায় বসে ইচ্ছেমতো বই লেখা যায়। শীতকালে যখন খুব কুয়াশা প্রকৃতিকে ঢেকে ফেলে, সেই কুয়াশার কারণে মটর দানার মতো আমের বোল তার শরীর থেকে ঝরে পড়ে। গ্রীষ্মকালে আবার আমগাছটি নিজের শাখাপ্রশাখায় আম ভরিয়ে নিয়ে উপহার দেওয়ার প্রতীক্ষা করে। যুদ্ধের সময় ট্রেঞ্চ খোড়ার কারণে আমগাছটি কিছুটা কমজোরি হয়ে পুবদিকে হেলে পড়ে। আবার বর্ষার সময় বৃষ্টিস্নাত আমগাছটি বিন্দু বিন্দু জলকণা তার পাতার শরীর থেকে পথচারীদের গায়ে-মাথায় ঝরিয়ে দেয়। এমনকি, রাতের বেলাতেও বিজলিবাতির আলোক ধারণ করে পথিককে পথ দেখানোর ভূমিকা নেয় সেই গাছ। ঝড়বৃষ্টির সময় সে ঝরিয়ে দেয় ফুল, ফল, কুঁড়ি ও পাতা। পাখি, পিঁপড়ে, কাঠবিড়ালি-মানবেতর প্রাণীদের সে সময়ে-অসময়ে আশ্রয় দেয়। নানা ঋতুতে আম গাছটির উপকারী নানা ছবিই এভাবে গল্পে ফুটে উঠেছে
 
11. গাছটি কীভাবে পরিবারের সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল?
উত্তর: রাজকিশোর পট্টনায়ক-এর 'ফাঁকি' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হল একটি আমগাছ। সেই গাছটিকে কেন্দ্র করে গোপাল, তার বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও পথচারীদের নানা অনুভূতি নিয়েই গল্পটি গড়ে উঠেছিল। সকলের অজান্তে ক্রমশ গাছটির সঙ্গে পরিবারের সকলের একটি সখ্য তৈরি হয়েছিল, গড়ে উঠেছিল নিবিড় মায়ার সম্পর্ক। শেষে একদিন সকলকে ফাঁকি দিয়ে গাছটি চলে যায়
 
সমস্যাটি শুরু হয় ঠিক যুদ্ধের সময়। উড়োজাহাজ থেকে বোমা পড়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে সরকারের লোক আম গাছটির গোড়া পর্যন্ত ট্রেঞ্চ খুঁড়ে গেলে, গাছটি ক্রমশ পুবদিকে হেলে পড়ে। আবার গাছটিকে পিঁপড়ে-মুক্ত করার জন্য গোপাল ডিডিটি দিলে পিঁপড়ে মরলেও উইপোকা বংশবিস্তার করে গাছের ভিতরের অনেকটা অংশ খেয়ে ফেলে। তারপর আষাঢ়ের সন্ধের প্রবল ঝড়ের দাপট সহ্য করতে না-পেরে গাছটি এই পৃথিবীর সকল মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে, সকলকে ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে নীরবে চলে যায়
 
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
 
3. অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:
 
1. বাড়ি করার জন্যে কত টাকা দরে জমি কেনা হয়েছিল
উত্তর:বাড়ি করার জন্য আটশো টাকা গুষ্ঠ দরে জমি কেনা হয়েছিল
 
2. গোপালের বাবা কোথায় কলমির গাছ করেছিল?
উত্তর: গোপালের বাবা বিরিবাটির বাগানে কলমির গাছ করেছিল
 
3. কীসে করে আমের চারা এসেছিল?
উত্তর:ছোটো একটি হাঁড়ির মধ্যে করে আমের চারা এসেছিল
 
4. আমগাছ রক্ষণের জন্যে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল
উত্তর:আমগাছ রক্ষণের জন্যে কঞ্চি দিয়ে বেড়া দেওয়া হল
 
5. গোপালের বাড়ির নিশানা ঠিক করা হয় কী দিয়ে?
উত্তর: গোপালের বাড়ির নিশানা ঠিক করা হয় আমগাছ দিয়ে
 
6. পিঁপড়ে মারার জন্য কী ব্যবহার করা হয়েছিল?
উত্তর: পিঁপড়ে মারার জন্য ডিডিটি ব্যবহার করা হয়েছিল
 
7. ২র খুন্টুনি দিয়ে আম পাড়া হবে কেন?
উত্তর:গাছ থেকে আম নীচে পড়লে থেঁতলে যাবে, সেই ভয়ে খুন্টুনি দিয়ে পাড়ার কথা বলা হয়েছে
 
8.  আমগাছে কোন্ কোন্ পাখি এসে বসে?
উত্তর: আমগাছে কাক, বেনেবউ, কালোপেঁচা প্রভৃতি পাখি এসে বসে
 
9. খবরের কাগজে কী ছাপা হয়েছিল?
উত্তর:খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল কটকে অর্ধরাত্রে ভীষণ ঝড়- বৃষ্টির ফলে, শহরের ভিতরে পুরীঘাটে আম গাছ উপড়ে পড়েছে
 
10. কোন্ ঝড় পুরীঘাটের আমগাছ ফেলার পরাক্রম দেখিয়েছিল?
উত্তর:আষাঢ়ের ঝড় পুরীঘাটের আম গাছ ফেলার পরাক্রম দেখিয়েছিল
 
11. ফল ছাড়া আমগাছ আর কী কী কাজে লাগে?
উত্তর:আমগাছের আঠা, ছাল নানারকম ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। কচিপাতা ডালসমেত পূজার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া আমের আঁটি দিয়ে ভেঁপু তৈরি হয়
 
12. পুজো, বিবাহবাড়ি-সব কাজে গোপালের কাছে কীসের অনুরোধ আসে?
উত্তর: শহরে সব জায়গায় আমগাছ পাওয়া যায় না। তাই সব কাজে গোপালবাবুর কাছে আমের পাতা, আমের ডাল পুজো বা অনুষ্ঠানবাড়ির ইত্যাদির জন্য অনুরোধ আসে
 
13. সকালে সকলের মুখে উদ্বেগ কেন?
উত্তর: সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে দেখে, চারদিক কুয়াশায় আচ্ছন্ন। ফলে ঠান্ডা বাতাসে মটরদানার মতো আমের বোেল ঝরে পড়ছে এবং আগুন লাগানো পিঁপড়েগুলি সব বোল খেয়ে ফেলছে
 
14. 'ট্রেঞ্চ' বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: 'ট্রেঞ্চ' কথার অর্থ হল গর্ত বা সুড়ঙ্গ বা নালা। গল্পে সরকারের লোকেরা বোমার ভয়ে আমগাছের গোড়া পর্যন্ত নালা কেটে গিয়েছিল
 
Editing By:- Lipi Medhi