১. নির্দেশ অনুসারে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. কবিতায় ভারতভূমিকে 'পুণ্যতীর্থ' বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: তীর্থক্ষেত্রে পুণ্যলাভের আশায় যেমন বহু মানুষের সমাবেশ ঘটে, ঠিক তেমনি ভারতভূমির অমোঘ আকর্ষণে যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষ পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে এখানে এসেছে। তাই ভারতভূমিকে 'পুণ্যতীর্থ' বলা হয়েছে।
২. 'মহামানবের সাগরতীরে' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: সাগরে যেমন নানা নদ-নদীর জলধারা এসে মিলিত হয়, ভারতবর্ষেও তেমনি বিভেদ ভুলে নানা জাতি-ধর্ম, নানা বর্ণ, নানা সম্প্রদায়ের মানুষ এসে মিলিত হয়েছে। তাই বলা হয়েছে 'মহামানবের সাগরতীরে।'
৩. ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে এমন একটি পঙ্ক্তি কবিতা থেকে উদ্ধার করো।
উত্তর: ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে এমন একটি পঙ্ক্তি হল-'ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর, নদী-জপমালা-ধৃত প্রান্তর।'
৪. 'ভারতবর্ষকে পদানত করতে কোন্ কোন্ বিদেশি শক্তি অতীতে এদেশে এসেছিল? তাদের পরিণতি কী ঘটল?
উত্তর: ভারতবর্ষকে পদানত করতে যে সব বিদেশি শক্তি অতীতে এদেশে এসেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-শক, হুন, পাঠান, মোগল ইত্যাদি। এদেশে এসে তারা সবাই এক দেহে লীন হয়ে গিয়েছিল।
৫. 'পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার'-উদ্ধৃতাংশে কোন্ পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে? এমন পরিস্থিতিতে কবির অন্বিষ্ট কী?
উত্তর: 'পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার'-উদ্ধৃতাংশটির মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে ইংরেজ, ফরাসি প্রভৃতি জাতির আগমনের কথা বলা হয়েছে। পশ্চিমী দুনিয়া তাদের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে ভারতবর্ষে উপনীত হয়েছে। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক জ্ঞান, ত্যাগের আদর্শ পাশ্চাত্যকে মুগ্ধ করেছে। এই দুইয়ের মিলনে ও দেওয়া নেওয়ার মাধ্যমে নতুন সভ্যতা গড়ে উঠবে বলে কবি মনে করেছেন।
৬. 'আমার শোণিতে রয়েছে ধ্বনিতে তার বিচিত্র সুর'- কোন্ সুরের কথা বলা হয়েছে? তাকে 'বিচিত্র' বলার কারণ কী? কেনই বা সে সুর কবির রক্তে ধ্বনিত হয়?
উত্তর: গিরি-মরুপথ অতিক্রম করে কলরব করতে করতে যারা ভারতবর্ষে এসেছিল এখানে তাদের সুরের কথা বলা হয়েছে।
এই সুরকে বিচিত্র বলা হয়েছে কারণ এই সুরের মধ্যে অনেক মানুষের অনেক ধ্বনি মিলিত হয়ে রয়েছে। যেহেতু কবি ভারতভূমির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে অনুভব করেছেন তাই সে সুর কবির রক্তে ধ্বনিত হয়।
৭. 'হে রুদ্রবীণা, বাজো, বাজো, বাজো...' -'রুদ্রবীণা' কী? কবি তার বেজে ওঠার প্রত্যাশী কেন?
উত্তর: ৭.১ 'রুদ্রবীণা' হলো শিবের বীণা। রুদ্রবীণা প্রলয়ের প্রতীক। ৭.২ রুদ্রবীণার ঝংকারে সভ্যতার সমস্ত জীর্ণতা, সংকীর্ণতা দূর হয়ে যাবে। সমস্ত অন্ধতা ও কুসংস্কারের বাঁধন ছিঁড়ে যাবে। এরফলে যারা দূরে আছে, তারাও ভারতবর্ষে ছুটে আসবে এবং সবার মিলন সম্ভব হবে।
৮. 'আছে সে ভাগ্যে লিখা'-ভাগ্যে কী লেখা আছে? সে লিখন পাঠ করে কবি তাঁর মনে কোন শপথ গ্রহণ করলেন?
উত্তর: ৮.১ বহু দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা ভোগ করার কথা ভাগ্যে লেখা আছে।
৮.২ সে লিখন পাঠ করে কবি ঠিক করেছেন যে তিনি সেই দুঃখ সহ্য করবেন; জীবনের সমস্ত লজ্জা ভয়কে জয় করবেন। আর এর মাধ্যমেই সমস্ত অপমান দূর হবে।
৯. 'পোহায় রজনী'-অন্ধকার রাত শেষে যে নতুন আশার আলোকোজ্জ্বল দিন আসবে তার চিত্রটি কীভাবে 'ভারততীর্থ' কবিতায় রূপায়িত হয়েছে?
উত্তর: 'ভারততীর্থ' কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন যে, ভারতীয় সভ্যতার গহন অন্ধকার একদিন দূর হবেই। ভারতের আকাশে সুখের সূর্যালোক দেখা দেবে। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন এদেশে আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান বিভেদ, বিদ্বেষ ভুলে এক হয়ে যাবে। ব্রাহ্মণ তার অহমিকা ভুলে পতিতের হাত ধরে যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাবে তখনই ভারতীয় সভ্যতার সমস্ত অপমান দূর হবে। ভারতবর্ষ হয়ে উঠবে মহামানবের মহামিলনক্ষেত্র।
১০. ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসের কথা কবিতায় কীভাবে বিধৃত হয়েছে?
উত্তর: ভারতবর্ষের বিপুল ঐশ্বর্যের আকর্ষণে বহু বিদেশি শক্তি বারবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছে। শক, হুন, পাঠান, মোগল ভারতবর্ষ আক্রমণকারী এমনই কতকগুলি শক্তি। এরা কখনও শুধুমাত্র ভারতীয় সম্পদ লুঠ করেই ফিরে গেছে, আবার কখনও দীর্ঘস্থায়ী সাম্রাজ্য স্থাপন করেছে। তারপর একদিন কালের অমোঘ নিয়মে তারা বিলীন হয়ে গেছে। এরপর ভারতবর্ষে এসেছে প্রবল পরাক্রমশালী ইংরেজ। তারাও একদিন কালগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
১১. কবির দৃষ্টিতে ভবিষ্যত ভারতের যে স্বপ্নিল ছবি ধরা পড়েছে, তার পরিচয় দাও।
উত্তর: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বপ্ন দেখেছেন অনাগত ভবিষ্যতে ভারতবর্ষ থেকে সমস্ত জাতিভেদ, সমস্ত সংকীর্ণতা দূর হয়ে যাবে। সেই নতুন ভারতবর্ষে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক ঐক্যবদ্ধ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে। পারস্পরিক বিদ্বেষ ভুলে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। আর তখনই ভারতবর্ষ হয়ে উঠবে মহামানবের মহামিলনক্ষেত্র।
২. নীচের পঙ্ক্তিগুলি গদ্যবাক্যে লেখো:
১. দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা।
উত্তর: দুর্বার স্রোতে কোথা থেকে এল এবং সমুদ্রে হারিয়ে গেল।
২. উদার ছন্দে পরমানন্দে বন্দন করি তাঁরে।
উত্তর: উদার ছন্দে এবং পরম আনন্দে তাঁর বন্দনা করি।
৩. হৃদয়তন্ত্রে উঠেছিল রণরণি।
উত্তর: হৃদয়ের মাঝে রণরণিয়ে উঠেছিল।
৪. হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে।
উত্তর: এখানে পবিত্র পৃথিবীকে প্রতিদিন দেখো।
৫. হেথায় সবারে হবে মিলিবারে আনত শিরে।
উত্তর: এখানে সবাইকে মাথানত করে মিলতে হবে।
৩. একটি বাক্যে উত্তর দাও:
১. "এক দেহে হল লীন"-কারা লীন হয়েছে?
উত্তর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'ভারততীর্থ' নামাঙ্কিত কবিতায় আর্য-অনার্য, দ্রাবিড়-চিন, শক-হুন, পাঠান-মোগল সব একদেহে লীন হয়েছে।
২. "পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার"-পশ্চিম বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন?
উত্তর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'ভারততীর্থ' নামাঙ্কিত কবিতায় পশ্চিম বলতে পাশ্চাত্য সভ্যতার কথা বুঝিয়েছেন।
৩. "কেহ নহে দূর"-এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'ভারততীর্থ' নামাঙ্কিত কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মরুপথ, গিরি-পর্বত পেরিয়ে যারা এদেশে এসেছিলেন এবং এখানে যারা স্থায়ী বসবাস শুরু করেছিলেন, তারা কেউ আমাদের থেকে দূরে নন।
৪. ভারতের হৃদয়তন্ত্রে কোন্ ধ্বনি বিরামহীনভাবে বেজেছিল?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'ভারততীর্থ' নামাঙ্কিত কবিতায় কবি জানিয়েছেন, ভারতের হৃদয়তন্ত্রে মহা-ওংকারধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে।
৫. "বিভেদ ভুলিল”-কারা কীভাবে বিভেদ ভুলেছিল?
উত্তর: কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'ভারততীর্থ' নামাঙ্কিত কবিতায় দেখা যায় ভারতবর্ষের মানুষ তার তপস্যাবলে একের অনলে বহুকে আহুতি দিয়ে বিভেদ ভুলেছিল।
৪. সংক্ষেপে উত্তর দাও:
১. "হেথায় দাঁড়ায়ে দু বাহু বাড়ায়ে নমি নরদেবতারে"- 'নরদেবতা' বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন? এই বক্তব্যের নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'ভারততীর্থ' নামাঙ্কিত কবিতায় 'নরদেবতা' বলতে নররূপ দেবতা তথা এই ভারতবর্ষের সমস্ত পতিত মানুষকে বুঝিয়েছেন।
• এই ভারতবর্ষের মহামানবের সাগরতীরে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ এখানকার নরদেবতাদের বিনম্র নমস্কার জানিয়েছেন। তিনি দেখেছেন, ভারতবর্ষ এমন এক দেশ যেখানে আর্য-অনার্য, দ্রাবিড়-চিন, শক-হুন, পাঠান-মোগল প্রভৃতি মানুষ দলে দলে এসে বসতি স্থাপন করেছেন। এই দেশ আমাদের শিখিয়েছে 'দিবে আর নিবে' এবং 'মিলাবে মিলিবে'। এই দেশ কাউকে দূরে ঠেলে দেয়নি। কাউকে ঘৃণা করেনি। কোনো ভেদ-বৈষম্য রাখেনি। ব্রাহ্মণ-পতিতের মধ্যে পার্থক্য দেখেনি এই দেশ। তাই এমন দেশের আপামর মানুষকে নরদেবতারূপে জ্ঞান করে কবি তাদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
২. "এক দেহে হলো লীন"-কারা কীভাবে একদেহে লীন হয়েছে তা পাঠ্যকবিতা অনুসারে লেখো।
উত্তর: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'ভারততীর্থ' নামাঙ্কিত কবিতায় দেখি ভারতবর্ষ এমন এক দেশ যেখানে বহু বিচিত্র জাতি-বর্ণ-ধর্মের সহাবস্থান ঘটেছে। যুগ-যুগ ধরে এই দেশে শক-হুন, পাঠান-মোগল, আর্য-অনার্য বসবাস করেছেন। কেউ লুণ্ঠন করে চলে গিয়েছেন, কেউবা এদেশের মাটিকে নিজেদের মাতৃভূমি রূপে দেখেছেন। বহু বিচিত্র সংস্কৃতির মিলনভূমি হয়ে উঠেছে এই দেশ। তাই রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, বহুজাতি এখানে 'এক দেহে হলো লীন'।
৩. "জাগিছে জননী বিপুল নীড়ে"- 'জননী' বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কীভাবে জেগেছেন তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।
উত্তর: বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'ভারততীর্থ' নামাঙ্কিত কবিতায় 'জননী' বলতে ভারতবর্ষকে বোঝানো হয়েছে।
• ভারতবর্ষকে জননীরূপে সম্বোধন করে কবি জানিয়েছেন এই দেশ এমন এক পবিত্রভূমি যেখানে বিভিন্ন বর্ণ-জাতি-ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষ 'এক দেহে হল লীন'। এই দেশ বহুকে এক করে নিয়েছে। এই দেশ প্রমাণ করেছে যে যেখান থেকে আসুক না কেন, 'কেহ নহে নহে দূর'। তাই এ দেশের প্রতিটি মানুষের বিচিত্র অনুভূতি আমাদের রক্তের মধ্যে অনুরণিত হয়। এখানে সবাই একসূত্রে মিলিত হয়ে একই মর্মে কথা বলে। ভারতজননীর বিপুল নীড়ে বিচিত্র মানুষের মহাসম্মিলন দেখে অভিভূত কবি উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
সংযোজিত প্রশ্ন
১. সঠিক উত্তরটি বেছে নাও:
১.১ ভারতবর্ষ কবির কাছে (পুণ্যতীর্থ/মহাতীর্থ/পুণ্যভূমি)
উত্তর: পুণ্যতীর্থ।
১.২ মহামানবের সাগরতীরে দাঁড়িয়ে দু বাহু বাড়িতে কবি নমস্কার করেছেন (গুরুজনদের/ঈশ্বরকে/নরদেবতাকে)।
উত্তর: নরদেবতাকে।
১.৩ ভূধরকে কবি কীভাবে দেখেছেন (ধ্যান-গম্ভীর/বজ্রকঠিন/ উদার)।
উত্তর: ধ্যানগম্ভীর।
১.৪ মহামানবের সাগরতীরে কবি যাদের দেখেছেন তাদের অন্যতম (দ্রাবিড়/তুর্কি/পারসিকে)।
উত্তর: দ্রাবিড়।
১.৫ কবি এর মধ্যে কোন্ বাজনাটির কথা বলেছেন?
উত্তর: (মোহনবীণা/রুদ্রবীণা/চিত্রবীণা)।
১.৬ মহামানবের সাগরতীরে কবি যাদের দেখেছেন তাদের অন্যতম (সামগান/হরিনাম/ওংকারধ্বনি)
উত্তর: সামগান।
১.৭ হোমানলে কবি জ্বলতে দেখেছেন (রক্তশিখা/দৃপ্ত প্রতিজ্ঞা/অশুভ চিন্তা)।
উত্তর: দুখের রক্তশিখা
১.৮ কবি সবাইকে শীঘ্র আসতে বলেছেন (মার অভিষেকে× স্বাধীনতার যুদ্ধে/দেবতার পুজোয়)
উত্তর: মার অভিষেক।
Editing BY:- Lipi Medhi
উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সদস্যপদ প্রয়োজন।