খেয়া
👉Paid Answer (For Membership User)
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো।
প্ৰশ্নঃ 'হলাহল' শব্দের অর্থ-
(a) অমৃত
(b) সরবত
© কাস্তে
(d) বিষ।
উত্তরঃ (d) বিষ
প্ৰশ্নঃ 'খেয়া' কবিতায় যে গ্রাম্য নদীর প্রসঙ্গ আছে
(a) করতোয়া নদী
(b) পদ্মা নদী
© নাগর নদী
(d) আত্রেয়ী নদী।
উত্তরঃ © নাগর নদী
প্ৰশ্নঃ "রক্তপ্রবাহের মধ্যে ফেনাইয়া উঠে"-
(a) ইতিহাস চেতনা
(b) জিঘাংসা
© কৌতূহল
(d) নতুন সাম্রাজ্য।
উত্তরঃ (a) ইতিহাস চেতনা
প্ৰশ্নঃ খেয়ানৌকার যাত্রীরা কোথা থেকে আসে?
(a) ঘর
(b) গ্রাম
© বিদেশ
(d)স্বর্গলোক।
উত্তরঃ (a) ঘর
প্ৰশ্নঃ 'আনাগোনা' বলতে বোঝায়
(a) আসা-যাওয়া
(b) আসা
© ফেরা
(d) পূর্বোক্ত কোনোটিই নয়।
উত্তরঃ (a) আসা-যাওয়া
প্ৰশ্নঃ "সকাল হইতে করে আনাগোনা"
(a) বিকেল
(b) রাত্রি
© দুপুর
(d) সন্ধ্যা।
উত্তরঃ (d) সন্ধ্যা।
প্ৰশ্নঃ কীসের মুকুট 'ফুটে আর টুটে'?
(a) সোনার
(b) রূপার
© তামার
(d) হিরের।
উত্তরঃ (a) সোনার
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্ৰশ্নঃ কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে 'খেয়া' কবিতাটি গৃহীত?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পর্বের কাব্যগ্রন্থ 'চৈতালি' থেকে পাঠ্য 'খেয়া' কবিতাটি গৃহীত। এটির প্রকাশকাল ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ।
প্ৰশ্নঃ খেয়ানৌকা নদীস্রোতে কী করে?
উত্তরঃ নদীর দুই পারের মানুষকে নানা প্রয়োজনে নদীস্রোতে পারাপার করে খেয়ানৌকা।
প্ৰশ্নঃ নব নব তৃয়া ক্ষুধায় কী পাওয়া যায়?
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের 'খেয়া' কবিতা থেকে জানা যায়- নব নব তৃষ্ণা ক্ষুধায় হলাহল ও সুধা অর্থাৎ বিষ ও অমৃত উঠে আসে।
প্ৰশ্নঃ পৃথিবীতে কখন সর্বনাশ নেমে আসে? উত্তোর
উত্তরঃ হিংসায় উন্মত্ত হয়ে, ক্রোধে অন্ধ হয়ে, প্রলোভনে মত্ত হয়ে দিগ্বিদিক শূন্য মানুষ হানাহানি, রক্তপাতে মেতে ওঠে। এটাই পৃথিবীর বুকে নিজেদের মধ্যে ভয়ংকর সর্বনাশ ডেকে আনে।
প্ৰশ্ন 'খেয়া' কবিতায় কবি পৃথিবীতে নতুন নতুন কী গড়ে ওঠে বলেছেন?
উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, পৃথিবীতে নতুন নতুন ইতিহাস গড়ে ওঠে। কবির মতে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে পৃথিবীতে।
ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
প্ৰশ্নঃ "সভ্যতার নব নব কত তৃয়া ক্ষুধা"- উক্তিটির তাৎপর্য বর্ণনা করো।
উত্তরঃ মানবসভ্যতার ইতিহাসে বরাবরই প্রাধান্য পেয়েছে উন্নতির লাগামছাড়া নেশা। এই নেশা আসলে মানুষের, প্রকৃতি ও পরিবেশের সর্বনাশ ডেকে আনে। যুগে যুগে মানুষ এই ক্ষতির কথা না ভেবে সভ্যতার উন্নতির চেষ্টা করে গেছে। কবি একেই সভ্যতার নব নব তৃয়া ক্ষুধা বলেছেন। আর এর পরিণতিতে মানুষ ভালো-মন্দ, অমৃত-বিষ দুই-ই পেয়েছে।
প্ৰশ্নঃ "কেহ যায় ঘরে"- কবি এখানে কী বলতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে খেয়াতরির যাত্রীদলের এক অংশের কথা এখানে বলা হয়েছে। 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'খেয়া' কবিতায় 'ঘরে ফেরা'-কে গভীর তাৎপর্যে ব্যবহার করেছেন। এক অর্থে তারা খেয়াতরি করে দিনের শেষে নিজ ঘরে ফেরে; এর পাশাপাশি আদি, অকৃত্রিম জীবনধারায় তাদের শুভাগমনকেও কবি বোঝালেন 'ঘরে ফেরা' কথাটি উল্লেখের মাধ্যমে।
প্ৰশ্নঃ খেয়ানৌকা কী? সেটি কাদের পারাপার করে?
উত্তরঃ নদী বা খালে ছোটো নৌকা বা ডিঙি কড়ির বিনিময়ে যাত্রী পারাপার করে, তাকে খেয়ানৌকা বলে।
'খেয়া' কবিতায় চিত্রিত নদীর দুই পারে অবস্থিত গ্রাম দু'টির মানুষগুলোকে এই খেয়ানৌকাই পারাপার করে। যাত্রীরা কেউ আপন ঘরে ফেরে, কেউ-বা নিজের ঘর হতো অন্যত্র যায়- এই পারাপার চলে নিরন্তর। একাকী নদীতটে বসে উদাস কবি রবীন্দ্রনাথ এই চিত্র অবলোকন করলেন।
প্ৰশ্নঃ কবিতায় 'ঘর' কোন তাৎপর্য বহন করে?
উত্তরঃ কবিগুরু 'খেয়া' কবিতায় খেয়ানৌকায় যাত্রীদের গমনাগমন প্রসঙ্গে ঘরের কথা উল্লেখ করেছেন। নবীন আর প্রবীণে ভিড় করা খেয়ানৌকার যাত্রীদের একদল ঘর থেকে কাজে যায়, আবার অন্য দল কাজ সেরে বাসায় ফেরে; ঘর এখানে একই সঙ্গে জগৎসংসারকেও বোঝায়।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্ৰশ্নঃ "পৃথিবীতে কত দ্বন্দু, কত সর্বনাশ"-'দ্বন্দু' ও 'সর্বনাশ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? এই দ্বন্দু ও সর্বনাশ পৃথিবীতে কীসের ভূমিকা পালন করেছে? তার সঙ্গে খেয়ানৌকার যোগ কোথায়?
উত্তরঃ সভ্যতার বিবর্তনের বিস্তৃত ইতিহাস লক্ষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যুগ-যুগান্তরের মানুষের বিচিত্র কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন; দেখেছেন হিংসায় মত্ত মানুষ দ্বন্দু-সংঘাতে জড়িয়ে বারবার ডেকে এনেছে সর্বনাশ। ইতিহাসের ধূসর অতীতে পদচারণায় কবিমন খুঁজে পেয়েছে বিস্তৃত অতীত জুড়ে হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বীতলকে জনপদের পর জনপদ শূন্য, সর্বহারা। সর্বনাশের সে আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হয়েছে মানবসভ্যতা। জীবনের প্রসাদে আহ্লাদিত কবি সেই অমরত্বের বাসনাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। দুই তীরে দুইখানি গ্রাম নিয়ে নদী বয়ে চলেছে যুগ-যুগান্তর ধরে। খেয়াতরিতে পারাপার করে যাত্রীদল গ্রাম দু'টির মধ্যে যোগসূত্র রচনা করেছে। তাদের সম্বন্ধ নিবিড়, গভীর সেই খেয়াঘাটের কূলে নেই কোনো দ্বন্দু, নেই ঈর্ষা, হানাহানি। নাগরিক জীবনের রক্তক্ষয়ী সর্বনাশ-ধ্বংসের ঢেউ আছড়ে পড়ে না দুর নদীতটের এই শাশ্বত জীবনের উঠোনে। ইতিহাসের ওঠাপড়া দোলায় না সে সভ্যতাকে। ইতিহাসের দোলাচলে উদাসীন থেকে গ্রাম দু'টির মাঝে এই খেয়া পারাপার চলে নীরবে। দ্বন্দু-বিক্ষুব্ধ জীবন থেকে শান্ত, নিরীহ, নিস্তরঙ্গ জীবনকে আগলে রাখে খেয়াতরি, মানবসভ্যতার যাত্রাপথকে সুনিশ্চিত করে, জুড়ে দেয় দু'পাড়কে।
প্ৰশ্নঃ "উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা।" 'হলাহল' ও 'সুধা' কী? তারা কোথা থেকে ওঠে? তারা কীভাবে পৃথিবীর ইতিহাস রচনা করে?
উত্তরঃ মানবসভ্যতার শাশ্বত প্রবাহের যথার্থ স্বরুপটি উদ্ঘাটিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত 'খেয়া' কবিতার ছোটো পরিসরে। ইতিহাস সচেতন কবি সভ্যতার বিবর্তন ধারাটি অনুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করেছেন, হিংসার উন্মত্ততায় এই ধরণীতল কখনো রক্তাক্ত হয়েছে, আবার মানবেরই পুণ্যকর্মে জীবনের পাত্রখানি ভরে উঠেছে। শুভ চেতনায় ভর করে মানুষ এ জগৎসংসারকে ভরিয়ে দিয়েছে সুধারসে। আবার এই মানুষই ক্রোধাচ্ছন্ন হয়ে, ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে হলাহল উত্তোলন করেছে- ইতিহাসের অধ্যায় ভরে উঠেছে জীবনের গ্লানিতে।
সংস্কৃত কথাসাহিত্যের ভাণ্ডার থেকে আহূত বলে পৌরাণিক প্রসঙ্গঙ্গকে কবি সাবলীলভাবে কবিতায় ব্যবহার করেছেন। সমুদ্রমন্থনে 'হলাহল' ও 'সুধা' দুই-ই উঠেছিল। 'হলাহল' হলো বিষ, আর 'সুধা' হলো অমৃত- দেবকূলের অস্তিত্ব যেমন সংকটে আর সেই সংকট মর্ত্যমানবের ক্ষেত্রেও সমরূপে প্রযোজ্য। রবীন্দ্রনাথ সভ্যতার সংকট থেকে মানবের পরিত্রাণের পথরেখা নির্দেশ করে দিয়েছেন।
অধ্যাত্ম সাধনায় জারিত হয়ে রবীন্দ্রহৃদয় খুঁজে পেয়েছে অনন্তকালের মানবপ্রবাহের স্বরূপটিকে; সেখানে তিনি দেখেছেন সভ্যতার দুই বিপ্রতীপ রূপকে, দেখেছেন ধ্বংস আর সৃষ্টির সম্ভারকে। সেই অমৃত আর হলাহল ধারণ করে নির্বিকার চিত্তে অবিচল থেকে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে। নবীনের বোধন ঘটেছে, বিসর্জিত হয়েছে পুরাতন: জীবনের ঘর থেকে কেউ ছুটি নিয়েছে চিরকালের তরে আবার কেউ সদ্য ফিরেছে আপনার ঘরে- নিত্য এই চলাচলই হলো মানবসভ্যতার সারকথা।