নোঙর
👉Paid Answer (For Membership User)
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো।
প্ৰশ্নঃ ভাটার শোষণ কী আহরণ করে?
(a) তটের বালি
(b) প্রাণ
© জীবন
(d) স্রোতের প্রবল প্রাণ।
উত্তরঃ (d) স্রোতের প্রবল প্রাণ
প্ৰশ্নঃ কবি তরিতে কী নিয়ে দূরে পাড়ি দিতে চান?
(a) যাত্রী
(b) বই
© পণ্য
(d) পাল।
উত্তরঃ © পণ্য
প্ৰশ্নঃ "জোয়ার-ভাটায় বাঁধা"
(a) নদী
(b) নৌকো
© তট
(d) ঢেউ।
উত্তরঃ © তট
প্ৰশ্নঃ 'নোঙর' কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া?
(a) সাদা মেঘ কালো পাহাড়
(b) কুসুমের মাস
© ছায়ার আলপনা
(d) নষ্টচাঁদ।
উত্তরঃ (a) সাদা মেঘ কালো পাহাড়
প্ৰশ্নঃ তারার দিকে চেয়ে কবি কীসের নিশানা করেন?
(a) দৃষ্টির
(b) দিকের
© ভবিষ্যতের
(d) কোনোটিই নয়।
উত্তরঃ (b) দিকের
প্ৰশ্নঃ প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে কে বিদ্রূপ করে?
(a) তরঙ্কা
(b) স্রোত
© নৌকা
(d) সমুদ্র।
উত্তরঃ (b) স্রোত
প্ৰশ্নঃ কবির কাছে সিন্ধু পার-
(a) দূরে
(b) কাছে
© অনেক দূরে
(d) কাছাকাছি।
উত্তরঃ (a) দূরে
প্ৰশ্নঃ পাল কোথায় বাঁধা হয়?
(a) বাঁশের মাথায়
(b) দাঁড়ের মাথায়
© মাস্তুলে
(d) খুঁটিতে।
উত্তরঃ © মাস্তুলে
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ "সাগর গর্জনে ওঠে কেঁপে" কী?
উত্তরঃ 'নোঙর' কবিতায় কবির নিজস্ব অনুভূতিতে মনে হয়েছে জীবনের খণ্ড অবকাশে নীরব মুহূর্তগুলি সাগর-গর্জনে কেঁপে ওঠে।
প্রশ্নঃ 'নোঙর' কবিতায় কবির জীবনের নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি আসলে কেমন?
উত্তরঃ কবির জীবনের নিস্তব্ধ মূহূর্তগুলি আসলে নিস্তব্ধ নয়। কারণ সমুদ্রের গর্জনে তা কেঁপে ওঠে ও প্রতিবার দাঁড় টানতে গিয়ে কবি স্রোতের বিদ্রুপ শোনেন।
প্রশ্নঃ "সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে" কারা, কেন সমুদ্রের দিকে ছোটে।
উত্তরঃ 'নোঙর' কবিতায় জোয়ারের ঢেউগুলি তীরে বাঁধা তরিতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে ছোটে। কারণ তারা নৌকাকে সমুদ্রের পানে টেনে নিয়ে যেতে পারে না।
প্রশ্নঃ 'সারারাত মিছে দাঁড়' টানার অর্থ কী?
উত্তরঃ কবি 'নোঙর' কবিতায় সারারাত মিছে দাঁড় টানার উল্লেখ করেছেন প্রচণ্ড হতাশায়। কারণ সারাজীবন পরিশ্রম করেও কোনো ফল লাভ না করার কথা এখানে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্নঃ কবি কেন 'নোঙর' কবিতায় সারারাত মিছে দাঁড় টানার কথা বলেছেন।
উত্তরঃ কবি 'নোঙর' কবিতায় সারারাত মিছে দাঁড় টানার কথা বলেছেন। কারণ অসাবধানতার বশে কখন তটের কিনারে নোঙর পড়ে গিয়েছে তা তিনি বুঝতে পারেননি।
ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ "সাগর গর্জনে ওঠে কেঁপে" কী সাগর-গর্জনে কেঁপে ওঠে? কেন?
উত্তরঃ সাগর-গর্জনে কেঁপে ওঠে জীবনের নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি। জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার মাঝে। একক খণ্ড অবকাশের মুহূর্তগুলি যেন সাগরের ঢেউয়ের গর্জনে কেঁপে ওঠে।
এই জীবনের ক্ষণিকের অবসরে থমকে যাওয়া নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি অনবরত আছড়ে পড়া সাগরের ঢেউয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠে। কারণ অন্য অর্থে এই সাগরের ঢেউ পারিপার্শ্বিক বাহ্যিক প্রতিকূলতার প্রতীক। জীবনের কোনো একক শান্তির মুহূর্তকে সে নিস্তব্ধ থাকতে দেয় না।
প্রশ্নঃ "আমার বাণিজ্যতরী বাঁধা পড়ে আছে"- 'আমার' বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তাঁর বাণিজ্যতরী কোথায়, কেন বাঁধা পড়ে আছে?
উত্তরঃ এখানে 'আমার' বলতে কবি নিজেকেই বুঝিয়েছেন।
কবি বলতে চেয়েছেন জোয়ার-ভাটা যেমন নদীর নিত্যকর্মের মধ্যে পড়ে তেমনি মানুষের জীবনেও সুখ-দুঃখ নিত্য প্রবহমাণ সত্তা। এই সত্তা ঢেউ-এর দ্বারা লালিত আর জীবন-কটের কাছে বাঁধা পড়ে আছে কবির জীবনের বাণিজ্যতরী।
প্রশ্নঃ "সারারাত মিছে দাঁড় টানি" কে দাঁড় টানেন? তা তাঁর কাছে মিছে বলে মনে হয়েছে কেন?
উত্তরঃ 'নোঙর' কবিতায় কবি স্বয়ং মিছে দাঁড় টানেন।
'তাঁর কাছে এই দাঁড় টানা আর জীবনতরণিকে বয়ে নিয়ে যাওয়া সমার্থক। কল্পনায় এই নৌকা নিয়ে দূর দেশে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন জীবনের সার্থকতা অন্বেষণের জন্য। কিন্তু হাজার বার দাঁড় বাইলেও জীবনের নৌকা কিছুতেই এগোবে না। তাই দাঁড় টানা বৃথা।
প্রশ্নঃ "স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ"- কী স্রোতের প্রাণ আহরণ করে? কেন করে?
উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের 'নোঙর' কবিতায় জোয়ারের পরই আসে ভাটার শোষণ, যা স্রোতের প্রবল প্রাণকে দুর্বল করে।
জাগতিক নিয়ম অনুসারে জোয়ারের পর ভাটা এবং ভাটার পর আসে জোয়ার। জোয়ারের প্রবল জলোচ্ছ্বাসকে ভাটার শোষণ হরণ করে নেয়। কবি মনে করেন মানুষের চাওয়া-আশা-আকাঙ্ক্ষার ঢেউগুলিকে বাস্তবরূপী ভাটা শুষে নেয়, না পাওয়ার হতাশাই এখানে ভাটার স্রোতের শোষণ।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ 'নোঙর' কবিতার মর্মার্থ নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের অন্যতম প্রতিনিধি অজিত দত্ত মূলত রোমান্টিক কবি। কিন্তু 'সাদা মেঘ কালো পাহাড়' নামক কাব্যের অন্তর্গত 'নোঙর' কবিতাটি একটি রূপকধর্মী গীতিকবিতা। এই কবিতায় তিনি নোঙর-নৌকা-তট-মাস্তুল ইত্যাদির রূপকে জীবনের এক পরম অতৃপ্তিকে প্রকাশ করেছেন। কবিতায় তিনি সাত সাগর পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশে নৌকা ছেড়েছেন। দাঁড় বেয়েছেন সারারাত। কিন্তু একটুও এগোতে পারেননি। কারণ তিনি জানেন না তাঁর অজান্তেই কখন নৌকার নোঙর পড়ে গেছে তটের কিনারে। জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে উঠে তরীর গায়ে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে যায় মাঝসমুদ্রের পানে। এরপর জাগতিক নিয়মে শুরু হয় ভাটার টান। জোয়ার-ভাটা চলতেই থাকে। কবি দাঁড় টানতেই থাকেন। এমনকী মাস্তুলেও পাল বাঁধেন, তবুও নৌকা অনড়। কারণ নোঙরের কাছিতে নৌকা বাঁধা আছে। আর তার প্রতিবাদে দাঁড়ের নিক্ষেপে স্রোত বিদ্রুপ করে ওঠে নিশ্চিত ব্যর্থতা জেনে।
আমরা দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমিতে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত। বৈচিত্র্যহীন জীবনে মুক্তির স্বাদ পেতে আমরা পাড়ি জমাতে চাই দূরতর দেশে বা প্রদেশে। আর সেখানে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় কখনো অর্থ, কখনো-বা সুযোগসুবিধার অভাব, কখনো-বা পারিপার্শ্বিক অন্য অসুবিধা। ভঙ্গুর অর্থনীতি আর মানুষের মধ্যেকার পারস্পরিক অবিশ্বাস এই যাত্রাপথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও আমরা আশায় বুক বাঁধি। বেয়ে চলি জীবনের পরিশ্রমের দাঁড় সারাদিন বা সারারাত, সাফল্য কবে আসবে তা না জেনেও।
প্রশ্নঃ অজিত দত্তের 'নোঙর' একটি প্রতীকী কবিতা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ রোমান্টিক কবি অজিত দত্তের 'নোঙর' কবিতায় রয়েছে ভাবের ব্যঞ্জনা। তিনি বেশ সুচারুভাবে নানা প্রতীকের ব্যবহার করেছেন এই কবিতায়। কবিতাটি তাই হয়ে উঠেছে রূপকধর্মী জীবনবাদী গীতিকবিতা। কবি এখানে 'নোঙর'কে বন্ধনের প্রতীকরূপে অন্যদিকে চারপাশের বাস্তব জগৎকে নদীর তটের প্রতীকরূপে গ্রহণ করেন। অসীমের প্রতীক বাইরের জগৎকে তিনি 'দূর সিন্ধুপার' বলেছেন। কিন্তু সেই অসীমের সন্ধানে পাড়ি দিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন করি। নোঙর জলে পড়ে যাওয়ায় তাঁর নৌকা আর এগুতে পারেনি। এদিকে, নৌকার প্রতীকের সাথে এসে গেছে কাছি, দাঁড়, নোঙর, নদী, জোয়ার-ভাটা, পাল-মাস্তুল ইত্যাদি। এগুলি কবির ভাবের ব্যঞ্জনা প্রকাশে সহায়ক।
জোয়ারের ঢেউ সম্ভাবনাময়। কবির সব স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক এগুলি। ঢেউ নৌকায় মাথা ঠুকেও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় ভাটার টানে। আসলে জোয়ার-ভাটা হলো মানবজীবনের উত্থান-পতন, আশা-নিরাশার প্রতীক। কবির জীবন স্থিতিশীল অর্থাৎ নোঙরের মতো। অন্যদিকে, নৌকা গতিশীল- ঢেউয়ের মতো, স্রোতের মতো। দূর সমুদ্রে কবি নৌকাভরতি পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। এটাও আসলে জীবন-জীবিকা, লাভ-ক্ষতির প্রতীক। এইসব প্রতীকের মাধ্যমেই 'নোঙর' কবিতায় কবি তাঁর মনের ভাব প্রকাশ করেছেন। ফলে 'নোঙর' কবিতাটি একটি প্রতীকী কবিতা একথা বলা যেতেই পারে।
প্রশ্নঃ "স্রোতের বিদ্রূপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।"- 'স্রোতের বিদ্রূপ' কবিকে কীভাবে ব্যথিত করেছে আলোচনা করো।
উত্তরঃ 'নোঙর' কবিতার আলোচ্য পঙ্ক্তিতে কবি অজিত দত্ত তাঁর রোমান্টিক মন নিয়ে অসীমের সন্ধানে পাড়ি দিতে চান। অজানা-অদেখা স্বপ্নয় জীবন-জগৎ আর দশটা মানুষের মতো কবিচিত্ত কেও চঞ্চল করে। কিন্তু কবির নৌকা আর এগোয় না। আসলে তাঁর অজান্তেই কখন নোঙর পড়ে গিয়েছে খেয়াল করেননি কবি।
কবি সংসারের মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ। রোমান্টিক মন নিয়ে সুদূরে পাড়ি দিতে চাইলেও কর্মের বন্ধনে বাঁধা তিনি। নৌকা এগুচ্ছে না দেখে সারারাত দাঁড় বেয়েছেন, পাল তুলে দিয়েছেন। বৃথা চেষ্টা করেও নিজের হৃদয়কে শান্ত করতে পারেন না কবি। নদীর স্রোত এসে আছড়ে পড়ে নৌকায়, নদীপারে। এটা কবির কাছে মনে হয়েছে স্রোতের ঠাট্টা-পরিহাস। কবির জীবন স্থিতিশীল আর নৌকা গতিশীল হলেও কবি বসে থাকায় নোঙর পড়ে গেছে। তাই গতিশীল স্রোত স্থিতিশীল নৌকা ও তার আরোহীকে বিদ্রুপ, উপহাস করে বলে কবির মনে হয়েছে। সংসারের বালুকাবেলায় বাঁধা পড়ে আছেন কবি। এ থেকে তাঁর মুক্তি নেই। ফলে স্রোতের বিষ্ণুপ ঠাট্টা শুনেও কবি নিরুপায়। আর তাই শেষ পর্যন্ত কবিচিত্ত ব্যথিত হয়ে উঠেছে।