Chapter 13
দুর্যোগ
১. ১. উত্তরটি লিখ।
(ক) তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম লেখ।
উত্তর: তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হল:
ভূমিকম্প
ঘূর্ণিঝড় বাতাস
বন্যা
(খ) কৃত্রিম বন্যায় কী ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে?
উত্তর: কৃত্রিম বন্যা বিভিন্ন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাদের কিছু নিচে উল্লেখ করা হল—
প্রাণহানি: রাস্তাঘাট এবং আবাসিক এলাকা প্লাবিত হতে পারে এবং মানুষ ও প্রাণী ডুবে যেতে পারে।
সম্পত্তির ক্ষতি: বাড়িঘর, দোকান, রাস্তাঘাট এবং বিভিন্ন কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বৈদ্যুতিক বিপদ: ডুবে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি বা তারের সংস্পর্শে বৈদ্যুতিক শক হতে পারে।
রোগ: নির্দিষ্ট জল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে দূষিত জল পান করার মাধ্যমে বিভিন্ন জলবাহিত রোগ (যেমন কলেরা, টাইফয়েড) সংক্রামিত হতে পারে।
যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যাহত: রাস্তাঘাট ও রেলপথ প্লাবিত হতে পারে, যার ফলে জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
এই সমস্যাগুলি সাধারণত নিষ্কাশন ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা, বাঁধ বা দেয়াল ধসে পড়া, জলাধার বা নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি করে।
(গ) বনে আগুন কীভাবে লাগে?
উত্তর: বনের আগুন বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ঘটতে পারে। নিচে তাদের কিছু দেওয়া হল:
প্রাকৃতিক কারণ:
বজ্রপাত: সবুজ বনাঞ্চলে, বজ্রপাতের ফলে শুকনো গাছে আগুন ধরে যেতে পারে।
উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরা: গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে গেলে এবং বাতাস শুষ্ক থাকলে গাছগুলি দ্রুত পুড়ে যায়।
উত্তপ্ত লাভা: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে উৎপন্ন লাভা বনে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
সতর্কতা: ক্যাম্পিং করার সময় আগুন, সিগারেটের ধোঁয়া বা পানি সঠিকভাবে না নেভালে বনে আগুন লাগতে পারে।
জঙ্গল পরিষ্কারের নামে আগুন: কখনও কখনও ফসল বা গাছপালা পরিষ্কার করার জন্য আগুন লাগানো হয়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং বড় আকারের বনে আগুন লাগতে পারে।
বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যা: বনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বৈদ্যুতিক তারের স্ফুলিঙ্গও আগুনের কারণ হতে পারে।
অপরাধমূলক কারণ: কখনও কখনও অবৈধ কার্যকলাপ (যেমন জমি অধিগ্রহণ, পাচার) বন্ধ করার জন্য বনে আগুন লাগানো হয়।
যদিও বনের আগুন প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক, তবুও কখনও কখনও এটি নতুন গাছ জন্মাতে সাহায্য করে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর পরিবেশ এবং প্রাণীদের উপর বিধ্বংসী প্রভাব পড়ে।
(ঘ) ভূমিধসের কারণগুলি লেখ।
উত্তর: ভূমিধসের প্রধান কারণগুলি নিম্নরূপ:
প্রাকৃতিক কারণ:
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত: অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত মাটির আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে, যার ফলে ঢালে ধীরে ধীরে মাটির ক্ষয় হয়।
ভূমিকম্প: ভূমিকম্পের কম্পন ঢাল বা পাহাড়ি এলাকার মাটিকে অস্থিতিশীল করে ভূমিধসের কারণ হতে পারে।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: আগ্নেয়গিরির লাভা এবং ছাই মাটির গঠনকে দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে ভূমিধস হতে পারে।
নদী বা সমুদ্রের স্রোত: জলের স্রোত মাটি ক্ষয় করতে পারে এবং ভূমিধসের কারণ হতে পারে।
মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
অবৈজ্ঞানিক বন উজাড়: বন উজাড় মাটির শক্তি হ্রাস করে, যার ফলে ভূমিধস সহজ হয়।
অনিয়ন্ত্রিত খনন: রাস্তা, ভূগর্ভস্থ টানেল বা বিভিন্ন নির্মাণ কাজের জন্য পাহাড় এবং ঢালে অতিরিক্ত খনন মাটিকে অস্থির করে তোলে।
অব্যবস্থাপিত কৃষি পদ্ধতি: পাহাড়ি অঞ্চলে, অনিয়ন্ত্রিত জুম চাষ বা বদ্ধ চাষের পরিবর্তে গাছ ধ্বংসের কারণে মাটির দৃঢ়তা হ্রাস পায়।
অতিরিক্ত লোডিং: অতিরিক্ত জনসংখ্যা, ভবন নির্মাণ বা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবসায়িক কার্যকলাপের কারণে জমি অতিরিক্ত চাপের সম্মুখীন হলে ভূমিধস ঘটতে পারে।
ভূমিধস রোধে বন সংরক্ষণ, সঠিক নিষ্কাশন, বৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ এবং নিয়ন্ত্রিত নির্মাণ প্রকল্প প্রয়োজন।
২. ২. অংশ ‘ক’-এর সাথে অংশ ‘খ’-এর মিল করো।
ভূমিধ্বসের জলাভূমি শুকিয়ে যায়।
শুষ্ক পৃথিবীর পৃষ্ঠ হঠাৎ কেঁপে ওঠে।
বনের আগুন জলাধারগুলিকে প্লাবিত করে।
ভূমিকম্পের ফলে মাটি, বালি এবং পাথরের ব্যাপক ধস ঘটে।
বন্যায় ভরা দাবানল।
উত্তর: অংশ A → অংশ B
ভূমিধস → মাটি, বালি এবং পাথরের বিস্তৃত জলপ্রপাত।
খরা → জলাভূমি শুকিয়ে যায়।
বনের আগুন → বনের আগুন।
ভূমিকম্প → পৃথিবীর পৃষ্ঠ হঠাৎ কেঁপে ওঠে।
বন্যা → জলাধার প্লাবিত।
৩. ৩. নিম্নলিখিত দুর্যোগগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন
(ক) খরা
উত্তর: খরা হলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত বা পানির অভাব থাকে না। এই অবস্থা মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে, নদী ও জলাশয় শুকিয়ে যায়, যার ফলে ফসলের ক্ষতি হয়, পানীয় জলের অভাব হয় এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। উষ্ণ এবং শুষ্ক অঞ্চলে খরা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
(খ) ভূমিধ্বস
উত্তর: ভূমিধ্বস হলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন মাটি, বালি বা পাথর ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে ঢালু জমিতে পড়ে। এটি সাধারণত ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিকম্প, বন উজাড় বা অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণের কারণে ঘটে। ভূমিধসের ফলে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় এবং কখনও কখনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এই বিপদ বিশেষ করে পাহাড়ি এবং খাড়া এলাকায় সাধারণ।
(গ) ভূমিকম্প
উত্তর: ভূমিকম্প হল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্ট কম্পনের ফলে পৃথিবীর পৃষ্ঠকে কাঁপিয়ে তোলে। এটি সাধারণত প্লেটের নড়াচড়া, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, অথবা ভূত্বকের ভিতরে চাপ নির্গত হওয়ার কারণে ঘটে। ভূমিকম্পের তীব্রতার উপর নির্ভর করে, এটি ভবন ধস, ভূমিধস এবং সুনামির মতো ধ্বংসাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। বড় ভূমিকম্পের ফলে প্রাণহানি ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।
৪. পার্থক্যগুলো লিখুন
(ক) খরা এবং বন্যা।
উত্তর: খরা এবং বন্যার মধ্যে পার্থক্য
পরামিতি | খরা | বন্যা |
---|---|---|
অর্থ | দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাতের অভাব বা জলের অভাবের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ | অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা জলস্তর বৃদ্ধির কারণে জলাধারগুলি প্লাবিত হওয়া |
কারণ | বৃষ্টিপাতের অভাব, উচ্চ তাপমাত্রা, খরাপ্রবণ জলবায়ু | অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, নদীর তলদেশ ফুলে ওঠা, নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব |
প্রভাব | জলাধারগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে, ফসল ধ্বংস হচ্ছে, এবং খাদ্য ও পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। | বসতি প্লাবিত হয়, সম্পত্তি ধ্বংস হয় এবং জলবাহিত রোগ বৃদ্ধি পায় |
প্রধান এলাকা | উষ্ণ এবং কম আর্দ্রতাযুক্ত এলাকা | বৃষ্টিনির্ভর এবং নদীতীরবর্তী এলাকা |
প্রতিকার | জল সংরক্ষণ, উন্নত সেচ ব্যবস্থা, বন সংরক্ষণ | নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নদীর বাঁশ নির্মাণ, বন সংরক্ষণ |
(খ) প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ।
উত্তর: প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে পার্থক্য
পরামিতি | প্ৰাকৃতিক দুৰ্যোগ | মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ |
---|---|---|
অর্থ | সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ | মানুষের কার্যকলাপের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ |
কারণ | ভৌগোলিক পরিবর্তন, আবহাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন | অব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, প্রযুক্তিগত ত্রুটি |
উদাহরণ | ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত | বন উজাড়, পরিবেশ দূষণ, যুদ্ধ-ধ্বংস, আগুন, পারমাণবিক বিস্ফোরণ |
প্ৰভাব | এটি মানুষের জীবন, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। | তারা প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে, স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে এবং অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনে। |
প্ৰতিকার | সতর্কতা ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, দুর্যোগ প্রস্তুতি | সঠিক পরিকল্পনা, পরিবেশ সংরক্ষণ, মানবসৃষ্ট ত্রুটি দূরীকরণ |
যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তবুও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে এর প্রভাব কমানো যেতে পারে। অন্যদিকে, আমাদের সচেতনতা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৫. ৫. শূন্যস্থান পূরণ করুন
(ক) ১৯৫০ সালে আসামে একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল।
(খ) বনায়নের মাধ্যমে ভূমিধস রোধ করা যেতে পারে।
(গ) বজ্রপাতের ফলে প্রাকৃতিকভাবে বনে আগুন লাগে।
(ঘ) বাগজান তেলক্ষেত্রের বিস্ফোরণ একটি মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা
৬. ৬. দুর্যোগ কী?
উত্তর: দুর্যোগ হলো প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট ঘটনা যা মানুষের জীবন, পরিবেশ এবং সম্পত্তির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এটি সাধারণত হঠাৎ ঘটে এবং ব্যাপক ক্ষতি করে।
দুর্যোগ দুই ধরণের হয়-
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বনের আগুন ইত্যাদি।
মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ: পরিবেশ দূষণ, আগুন, যুদ্ধ, তেল বা গ্যাস লিক, পারমাণবিক বিস্ফোরণ ইত্যাদি।
দুর্যোগের প্রভাব প্রশমনের জন্য সচেতনতা, প্রস্তুতি এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।