Lesson- 3
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি
--------------------------------------------------------
1. জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়-
ক) ২০০২ খ্রিস্টাব্দে
খ) ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে
গ) ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: গ) ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে
2. জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা-
ক) ১৮টি
খ) ২৫টি
গ) ৩১টি
ঘ) ৩৫টি
উত্তর: গ) ৩১টি
3. 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতাটি জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থের-
ক) ১সংখ্যক কবিতা
খ) ১০ সংখ্যক কবিতা
গ) ২৫ সংখ্যক কবিতা
ঘ) ৩১ সংখ্যক কবিতা
উত্তর: ঘ) ৩১ সংখ্যক কবিতা
4. জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থটির রচনাকাল-
ক) ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ
খ) ২০০৪-২০০৬ খ্রিস্টাব্দ
গ) ২০০৭-০৮ খ্রিস্টাব্দ
ঘ) ২০০০-০৩ খ্রিস্টাব্দ
উত্তর: ঘ) ২০০০-০৩ খ্রিস্টাব্দ
5. জলই পাষাণ হয়ে আছে কাব্যগ্রন্থটি কবি শঙ্খ ঘোষ যাঁদের উৎসর্গ করেন, তাঁরা হলেন-
ক) জয়দেব আর সেবন্তী
খ) অভীক আর মালঞ্চ
গ) অরিজিৎ আর রীণা
ঘ) শ্রীজাত আর দূর্বা
উত্তর: গ) অরিজিৎ আর রীণা
6. "আমাদের ডান পাশে
ক) খাদ
খ) ধ্বস
গ) প্রান্তর
ঘ) বন
উত্তর: খ) ধ্বস
7. 'আমাদের বাঁয়ে' রয়েছে-
ক) গিরিখাত
খ) বোমারু বিমান
গ) পর্বত
ঘ) অরণ্য
উত্তর: ক) গিরিখাত
8. 'আমাদের মাথায়'
ক) গিরিখাদ
খ) বোমারু
গ) পর্বত
উত্তর: খ) বোমারু
9. আমাদের 'পায়ে পায়ে' রয়েছে-
ক) ভারী জুতো
খ) হিমানীর বাঁধ
গ) কাঁটা তার
ঘ) ভিক্ষুকের দল
উত্তর: খ) হিমানীর বাঁধ
10. "পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ"-'হিমানী' শব্দের আক্ষরিক অর্থ-
ক) জল
খ) আগুন
গ) তুষার
ঘ) পর্বত
উত্তর: গ) তুষার
11. 'আমাদের পথ'-
ক) নেই
খ) ফাঁকা পড়ে আছে
গ) তৈরি করতে হবে
ঘ) জনাকীর্ণ হয়ে আছে
উত্তর: ক) নেই
12. "আমাদের ঘর গেছে উড়ে"-কীসের দ্বারা উড়ে গেছে?
ক) বন্যার দ্বারাখ বোমাবুর দ্বারা
খ) বোমাবুর দ্বারা
গ) যুদ্ধের দ্বারা
ঘ) ভূমিকম্পের দ্বারা
উত্তর: খ) বোমাবুর দ্বারা
13. কাছে ও দূরে কী ছড়ানো আছে?
ক) বোমারু বিমানের ভগ্নাংশ
খ) যুদ্ধে মৃত মানুষের দেহ
গ) শিশুদের শব
ঘ) কবির আত্মীয়স্বজনের মৃতদেহ
উত্তর: গ) শিশুদের শব
14. "আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?"-কবির মনে এই প্রশ্ন জেগেছে, কারণ-
ক) তাঁর ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, আত্মজদের মৃত্যু ঘটেছে
খ) তাঁর আর কোনো পথ নেই
গ) তাঁর চারিদিকে অজস্র বাধা
ঘ) সবকটিই সঠিক
উত্তর: ঘ) সবকটিই সঠিক
15. "আমাদের পথ নেই আর"-উদ্ধৃতাংশে পথ না থাকার অর্থ হল-
ক) কোনো উপায় নেই
খ) কোনো খাদ্য নেই
গ) বাসস্থান নেই
ঘ) কোনো ইতিহাস নেই
উত্তর: ক) কোনো উপায় নেই
16. "আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি"-কবির আরও বেঁধে বেঁধে থাকার ডাক দেওয়ার কারণ-
ক) তিনি চান না গিরিখাতে তলিয়ে যেতে
খ) তিনি চান না নিজেদের ধ্বংস করতে
গ) তিনি চান না আর কোনো শিশুর মৃত্যু হোক
ঘ) সবকটিই সত্য
উত্তর: ঘ) সবকটিই সত্য
17. "আমাদের পথ নেই আর।"- 'পথ' শব্দটি কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে-
ক) দু-বার
খ) একবার
গ) চারবার
ঘ) তিনবার
উত্তর: ক) দু-বার
18. "আমাদের ইতিহাস নেই/অথবা এমনই ইতিহাস-" হয়তো আমাদের ইতিহাসটা এমনই যে-
ক) আমরা চিরকালের ভিখারি হিসেবে চিহ্নিত
খ) আমাদের কথা কেউ জানে না
গ) আমাদের কথা সকলেই জানে
ঘ) আমরা মিলেমিশে থাকতেই অভ্যস্ত
উত্তর: ক) আমরা চিরকালের ভিখারি হিসেবে চিহ্নিত
19. "আমাদের চোখমুখ ঢাকা"-পঙ্ক্তিটির মর্মার্থ হল-
ক) আমাদের পরিচয় কোনোদিনই প্রকাশ পায় না
খ) আমরাক পরিচয় দিতে লজ্জা পাই
গ) আমরা পরিচয় দিতে ঘৃণা বোধ করি
ঘ) আমাদের পরিচয়ের কেউ তোয়াক্কা করে না
উত্তর: ক) আমাদের পরিচয় কোনোদিনই প্রকাশ পায় না
20. "আমরা ভিখারি বারোমাস" কবির এমন মনে হওয়ার কারণ-
ক) মানুষের দারিদ্র্য দেখে তিনি কুণ্ঠিত
খ) মানুষের চাহিদা দেখে তিনি লজ্জিত
গ) মানুষের হতাশা দেখে তিনি ক্ষুদ্ধ
ঘ) মানুষের দুঃখে তিনি কাতর
উত্তর: খ) মানুষের চাহিদা দেখে তিনি লজ্জিত
21. "আমরা ভিখারি
ক) সারামাস
খ) আটমাস
গ) দশমাস
ঘ) বারোমাস
উত্তর: ঘ) বারোমাস
22. "আমাদের কথা কে-বা জানে"-এ কথা তাদের মনে হয়, যারা-
ক) ভিখারিখ সাধারণ মানুষ
খ) সাধারণ মানুষ
গ) উদ্বাস্তু ঘ কবি
ঘ) কবি
উত্তর: খ) সাধারণ মানুষ
23. "আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।"-আমাদের 'দোরে দোরে' ফেরার অর্থ-
ক) ভিক্ষা করা
খ) মানুষের পাশে দাঁড়ানো
গ) মানুষের সাহায্যের প্রত্যাশা
ঘ) ভ্রমণের নেশা আমাদের পেয়ে বসেছে
উত্তর: গ) মানুষের সাহায্যের প্রত্যাশা
২৪. "কিছুই কোথাও যদি নেই", তবু-
ক) ভিক্ষুকের মতো দ্বারে দ্বারে ঘোরা শেষ হবে না
খ) এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা পরস্পর হাতে হাত রেখে বাঁচতে চান
গ) মানুষের মন থেকে সব কিছু হারানোর ভয় দূর হবে না
ঘ) মানুষ মনে করে, জীবন থেকে কিছুই হারিয়ে যায়নি
উত্তর: খ) এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা পরস্পর হাতে হাত রেখে বাঁচতে চান
Very Short Question Answer
1. "আমাদের কথা কে-বা জানে"-কাদের কথা কেউ জানে না?
উত্তর: দরিদ্র, ঘরহারা, নিপীড়িত মানুষের কথা কেউ জানে না, কেউ তাদের খবর রাখে না।
2. আমাদের ডান পাশে ধ্বস/আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ।
উত্তর: বাঁয়ে-অধিকরণকারক, 'এ' বিভক্তি।
3.আমাদের ঘর গেছে উড়ে।
উত্তর: আমাদের-সম্বন্ধপদ, 'এর' বিভক্তি।
4.আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।
উত্তর: শব-কর্মকারক, 'শূন্য' বিভক্তি।
5.পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে/পৃথিবী হয়তো গেছে মরে।
উত্তর: পৃথিবী-কর্তৃকারক, 'শূন্য' বিভক্তি।
6.আমাদের পথ নেই কোনো।
উত্তর: আমাদের কি আর কোনো পথ আছে?
7. আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।
উত্তর: আমাদের শিশুদের যে শব আছে সেগুলি ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।
8.এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?
উত্তর: এ-মুহূর্তে মরে যেতে পারি।
9.আমাদের ঘর গেছে উড়ে।
উত্তর: আমাদের ঘরের উড়ে যাওয়া হয়েছে।
10.পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে। (ভাববাচ্যে)
উত্তর: পৃথিবীর হয়তো বেঁচে থাকা হয়েছে।
11.আমরা ফিরেছি দোরে দোরে। (কর্মবাচ্যে)
উত্তর: আমাদের দ্বারা দোরে দোরে ফেরা হয়েছে।
Short Question Answer
1. আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ।
উত্তর: গিরিখাদ-গিরির মধ্যবর্তী খাদ (আকাদেমি বানান অভিধান অনুযায়ী 'খাত') (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়)।
2. "আমাদের ইতিহাস নেই-" এ কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় "আমাদের ইতিহাস নেই” বলার কারণ হল বক্তা যাদের প্রতিনিধি, সেই সাধারণ মানুষ কোনোদিনই ইতিহাসে ঠাঁই পায় না।
3. "অথবা এমনই ইতিহাস"-ইতিহাস থেকে থাকলে তার স্বরূপটি কেমন?
উত্তর: শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতার কথকের সমাজের ইতিহাস থেকে থাকলেও সেখানে সকলেরই চোেখ-মুখ ঢাকা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য দিয়ে সেখানে কেউই ইতিহাসে ঠাঁই পায়নি।
4. "আমরা ভিখারি বারোমাস"-এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর: সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও বিপুল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করে কবি শঙ্খ ঘোষ 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
5. “পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে/পৃথিবী হয়তো গেছে মরে”-এমন কথা মনে হয়েছে কেন?
উত্তর: শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষ যেন অন্য কোনো গ্রহের জীব। তারা এতটাই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যে পৃথিবীর বাঁচা-মরার খবর যেন তাদের কাছে নেই।
6. "আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।"-এর কারণ কী?
উত্তর: দুর্যোগে সব-হারানো অসহায় মানুষ সাহায্যের আশায় মানুষেরই দরজায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছে, কিন্তু কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকায়নি। জীবনযাপনের গ্লানি নিয়ে তাদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হয়েছে সাহায্যের আশায়।
7. "কিছুই কোথাও যদি নেই”-কোথাও কিছু না থাকার মতো অবস্থা যখন, তখন কী করণীয়?
উত্তর: চারিদিকে অসীম শূন্যতার হাহাকারের দিনে যে ক-জন 'মানুষ' রয়েছেন, তাঁরা যেন হাতে হাত রেখে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন, সংঘবদ্ধভাবে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে নেন।
Long Question Answer
1"আমাদের ইতিহাস নেই"-এই ইতিহাস না থাকার কথা বলে কবি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন সমগ্র কবিতা অবলম্বনে লেখো।
উত্তর: 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় সাধারণত মানুষের ইতিহাসহীনতার দুটি পরিপ্রেক্ষিত
রয়েছে। ইতিহাস হল প্রকৃতপক্ষে কোনো জাতির এবং সভ্যতার আত্মবিকাশের কাহিনি। তাই
অতীতের ওপরে দাঁড়িয়ে যখন বর্তমানকে তৈরি করা যায় তখনই তা যথাযথ হয়। একেই বলা যায়
ঐতিহ্যের বিস্তার, যা ভবিষ্যৎকে
সুদৃঢ় ও সুনিশ্চিত করে তোলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমাদের প্রকৃত ইতিহাস থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়েছি বা
বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য করা হয়েছে। শঙ্খ ঘোষ যখন তাঁর 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় আমাদের ইতিহাস না থাকার কথা বলেন, তখন তা আসলে দেশ এবং জাতির এই শিকড় থেকে বিচ্ছিন্নতার দিকেই
ইঙ্গিত করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যারাই যখন ক্ষমতায় থেকেছে ইতিহাসকে তারা তখন নিজেদের
মতো করে, নিজেদের স্বার্থে
পরিচালিত করেছে। সাধারণ মানুষের নিজেদের ইতিহাস কোনো দাম পায়নি। সে ইতিহাসে তাই
"আমাদের চোখমুখ ঢাকা/আমরা ভিখারি বারোমাস।” প্রথাগত ইতিহাস মানুষকে অন্ধ করে
তোলে, চাপিয়ে দেওয়া
ইতিহাসকে নিজেদের ইতিহাস বলে মেনে নিতে হয়।
2. "আমরা ভিখারি বারোমাস।"-'আমরা' কারা? তারা নিজেদের ভিখারি বলেছে কেন কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর: শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতার উল্লিখিত অংশে 'আমরা' বলতে সাধারণ মানুষদের বোঝানো হয়েছে।
▶ আমাদের
সমাজব্যবস্থা পরিচালিত হয় বিত্তবান ও ক্ষমতাবান মানুষদের দ্বারা। সমাজের অধিকাংশ
যে সাধারণ মানুষ তারা সব দিক দিয়েই উপেক্ষিত থাকে। ইতিহাসে তাদের কোনো স্বীকৃতি
ঘটে না। যে ইতিহাস তাদের দেওয়া হয় তা বিকৃত ইতিহাস। সাধারণ মানুষ এখানে সমস্তরকম
অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দিন কাটায়। "আমাদের চোখমুখ ঢাকা” অর্থাৎ মানুষ নিজের
মতো করে সব কিছু দেখতে পায় না কিংবা নিজেদের কথা বলতে পারে না। ক্ষমতাশালীদের
অনুগ্রহের উপরে নির্ভর করে তাদের জীবন কাটাতে হয়। এই মানুষদের কথা কেউ জানে না, তারা খ্যাতিহীন, প্রচারের আলো তাদের থেকে অনেক দূরে থাকে। কিন্তু এরাই
সভ্যতার ধারক। তাই এদের দুরবস্থায় পৃথিবীর অস্তিত্বও বিপন্ন হয়। বারোমাস 'ভিখারি' হয়ে থাকা বলতে এই অন্যের দয়ার ওপরে নির্ভর করে বেঁচে
থাকাকেই বোঝানো হয়েছে। "আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।”-যুদ্ধ কিংবা রাষ্ট্রীয়
বিপর্যয়ের পাশাপাশি এই মানবিক লাঞ্ছনা যেন মানবসভ্যতার এক অসহায় অবস্থাকেই স্পষ্ট
করে দেয়।
3. “তবু তো কজন আছি বাকি”-এই 'কজন' কারা? তাদের থাকার গুরুত্ব সমগ্র কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর: শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় 'কজন' বলতে সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের বোঝানো হয়েছে।
▶ আমাদের চারপাশের
এক অস্থির সময়কে কবি প্রত্যক্ষ করেছেন। সেখানে মানুষের চলার পথে অজস্র বাধা।
সাম্রাজ্যবাদীদের লোভ যুদ্ধকে ডেকে আনছে। মানুষ নিরাশ্রয় হচ্ছে। মৃত্যু ও মৃত্যুর
আতঙ্ক তাড়া করছে সকলকে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবন আরও বেশি করে বিপন্ন
হয়ে পড়ছে ক্ষমতাবানদের অত্যাচারে। তাদের ইতিহাসকে স্বীকার করা হয় না। ক্ষমতাবানদের
অনুগ্রহের উপরে নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয় এই সব মানুষদের। সব মিলিয়ে সভ্যতা এবং
পৃথিবীর বিপন্নতাকে কবি লক্ষ করেছেন তার অভিজ্ঞতায়। কিন্তু আশাবাদী কবি মনে করেছেন
এই ধ্বংস- যুদ্ধ-লাঞ্ছনা কখনও সভ্যতার শেষকথা হতে পারে না। সমাজে এখনও
শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আছে। স্বার্থপরতা, আদর্শহীনতা যুদ্ধ উন্মত্ততা কিংবা লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে এই
মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ হলে সভ্যতাকে রক্ষা করা সম্ভব। তাদের উদ্দেশ্য করেই তাই কবির
আন্তরিক আহ্বান "আয় আরো হাতে হাত রেখে-আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।” অশুভ শক্তির
বিরুদ্ধে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সম্প্রীতিই সভ্যতাকে রক্ষা করতে পারে।
4. "আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।" কবি কাদের উদ্দেশ্যে এ কথাবলেছেন? এভাবে থাকার প্রয়োজন কেন?
উত্তর: শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কবি সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন।
▶ অস্থির সময়ে পৃথিবী জুড়ে অনিশ্চয়তা, ধ্বংস আর মৃত্যুর ছবি প্রত্যক্ষ করেছেন কবি। সেখানে নানা বাধার কারণে চলার গতি রুদ্ধ, পথ দুর্গম। মাথার উপরে বোমারু বিমানের আনাগোনা। ধ্বংস ও মৃত্যুর নিশ্চিত আগমন। যুদ্ধের কারণে মানুষ আশ্রয়হীন হচ্ছে, চারপাশে পড়ে আছে মৃত শিশুদের দেহ। এদিকে যারা ক্ষমতাবান তাদের ইচ্ছায় সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অবদানের ইতিহাসকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের অধিকারকেও স্বীকার করা হচ্ছে না। এককথায় সাধারণ মানুষেরা, সমাজে যারা সংখ্যায় বেশি, তারাই দয়া ভিক্ষা করে বেঁচে আছে। এভাবে মনুষ্যত্বের এই বিপর্যয়ের পরেও পৃথিবী টিকে আছে-এমন কথা বলা যায় কি না, তা নিয়ে কবির মনে সংশয় তৈরি হয়েছে। কিন্তু আশাবাদী কবি শেষপর্যন্ত বিশ্বাস করেন যে এই যুদ্ধ-হত্যা-বঞ্চনা কখনও চূড়ান্ত সত্য হতে পারে না। সমাজে এখনও অনেক শুভবোধসম্পন্ন মানুষ আছে। তারা যদি একত্রিত হয় তাহলে অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ করতে পারবে। তার জন্যই দরকার একসঙ্গে থাকা, সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করা, হাতে হাত রাখা।
5. "আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।"কবির এই আহ্বানের প্রয়োজনীয়তা কবিতা অবলম্বনে লেখো।
উত্তর: অস্থির সংকটকালের ছবি: শঙ্খ ঘোষ তাঁর 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় অস্থির সময়ে মানুষের সংকটের ছবিকে তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক আদর্শহীনতা যেমন মানুষকে ঠিক পথ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে তেমনই সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মান্ধতার মতো অসুখ সমাজকে রক্তাক্ত করছে। অস্তিত্বের সংকটে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। "আমাদের পথ নেই কোনো/আমাদের ঘর গেছে উড়ে/আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!” প্রকৃত ইতিহাসহীনতা: এই সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রেরণা সংগ্রহ করার মতো কোনো ইতিহাসও আমাদের নেই। কারণ ক্ষমতাবান শাসকেরা যে ইতিহাস আমাদের উপহার দিয়েছে তা বিকৃত এবং তাদের মতো করে গড়ে তোলা। এখানে 'ভিখারি' হয়ে বেঁচে থাকাটাই মানুষের নিয়তি। মুক্তির পথ সন্ধান: এই হতাশার মধ্যেই মুক্তির পথ খুঁজেছেন কবি। তাঁর মনে হয়েছে, কোথাও কিছু না থাকলেও এমন কিছু মানুষ এখনও সমাজে রয়েছে যারা তৈরি করবে সম্প্রীতির এবং সৌভ্রাতৃত্বের পথ। সেকারণেই দরকার পরস্পরের হাত ধরা। কোনো পথ দেখতে না পাওয়ার সময়ে হাতে হাত রেখে বেঁধে থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।
6. শঙ্খ ঘোষের 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা,
'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায় কবির সমাজভাবনার যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখো। [সারদা প্রসাদ ইন্সটিটিউশন] অথবা, 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: আর্দশহীনতা: কবিকে ব্যথিত করেছে রাজনৈতিক আদর্শহীনতা। ডান দিকে ধস আর বাম দিকে গিরিখাত জীবনের চলার পথকেই দুর্গম করে তোলে। মাথার ওপরে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাণ্ডব, চারপাশে ধর্মান্ধতা, মধ্যযুগীয় বর্বরতা ইত্যাদি যেন ক্রমশই পথকে ধূসর করে দেয়। মৃত্যুর আতঙ্ক তাড়া করে সব মানুষকেই। প্রকৃত ইতিহাসের অভাব: যে জাতীয়তার ধারণা মানুষের সঙ্গে মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধতে পারত তা-ও বিরল। কারণ, "আমাদের ইতিহাস নেই"। তাই ইতিহাসের সত্যকে মানুষ পায় না, যা তাদের পথ দেখাতে পারে। ক্ষমতাবান শাসকেরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের মতো করে ইতিহাস তৈরি করে নেয়। সাধারণ মানুষ সেখানে উপেক্ষিত হয়।-“আমাদের কথা কে-বা জানে/ আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।” মানব মৈত্রীর সেতুবন্ধন: তবুও কিছু মানুষ থেকে যায়, মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তার সেতুবন্ধ তৈরি করাই যাদের কাজ। শঙ্খ ঘোষ তাঁর 'এ আমরা কী করছি' গদ্যরচনায় লিখেছিলেন- "আমাদের রাষ্ট্রনায়কেরা এমন এক মূঢ় অহমিকা প্রকট করে তুলতে চাইছেন দেশবাসীর মনে, ফ্যাসিবাদ যার সুনিশ্চিত পরিণাম। অথচ আজও মানুষের মনে এক স্বাভাবিক মিলনক্ষুধা আছে, এক দেশের মানুষকে আর- এক দেশের মানুষ অন্তরঙ্গ ভালোবাসাতেই জড়িয়ে নিতে চায় আজও …"। এই ভালোবাসা আর মানবমৈত্রীর কথাই কবি উচ্চারণ করেছেন 'আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি' কবিতায়।
Paid Answer Link (Membership User)
1. উত্তরহীন প্রশ্ন ও উত্তর সেখানে দেখা যাবে
2 বিনামূল্যে উত্তর পান থেকে এটি প্রয়োগ করুন
3. এটি পণ্য কোড (Product Code) ব্যবহার
করুন : DAM000059
EDITING BY--Liza Mahanta