দশম পাথ
পথেব় দাবী
1."বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন।"-'এঁর' বলতে বোঝানো হয়েছে-
(ক) রামদাসকে
(খ) জগদীশবাবুকে
(গ) নিমাইবাবুকে
(ঘ) তেওয়ারিকে
উওব়: (গ) নিমাইবাবুকে
2. "আপনাকেই হয়তো আর একদিন তার প্রয়াশ্চিত্ত করতে হবে।"-প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে-
(ক) নিমাইবাবুকে
(খ)) অপূর্বকে
(গ) সব্যসাচীকে
(ঘ) রামদাসকে
উওব়: (খ) অপূর্বকে
3. "এসব কথা বলার দুঃখ আছে"- 'এসব কথা' বলতে বোঝানো হয়েছে-
(ক) সব্যসাচীর প্রতি ভালোবাসার কথা
(খ) সব্যসাচীর লুকিয়ে থাকার কথা
(গ) সব্যসাচীর গতিবিধির কথা
(ঘ অপূর্বর বাড়িতে চুরির কথা
উওব়: (ক) সব্যসাচীর প্রতি ভালোবাসার কথা
১৫. "বুনো হাঁস ধরাই এদের কাজ।"-'বুনোহাঁস' বলা হয়েছে
(ক) ভারতীয়দের
(খ) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের
(গ) কালো মানুষদের
(ঘ) চোর-ডাকাতদের
উওব়: (খ) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের
4. অপূর্বর পিতার বন্ধু ছিলেন-
(ক) গিরীশ মহাপাত্র
(খ) নিমাইবাবু
(গ) রামদাস
(ঘ) জগদীশবাবু
উওব়: (ঘ) নিমাইবাবু
5. তলওয়ারকর হল-
(ক) রামদাস
(খ) রামদাসের পিতা
(গ) ইংরেজ পুলিশ অফিসার
(ঘ) একজন ফিরিঙ্গি
উওব়: (ক) রামদাস
6. “তেওয়ারী ঘরে ছিল না,”- তেওয়ারি গিয়েছিল-
(ক) রেঙ্গুনে
(খ) ফয়ায়
(গ) ভামোয়
(ঘ) নিজের দেশে
উওব়: (খ) ফয়ায়
7. অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল-
(ক) স্টেশনমাস্টার
(খ) রেলপুলিশ
(গ) ফিরিঙ্গি ছোঁড়ারা
(ঘ) টিকিট পরীক্ষক
উওব়: (গ) ফিরিঙ্গি ছোঁড়ারা
8. ফিরিঙ্গি ছোঁড়ারা লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল-
(ক) অপূর্বকে
(খ) রামদাসকে
(গ) গিরীশকে
(ঘ) তলওয়ারকরকে
উওব়: (ক) অপূর্বকে
9. অপূর্বর অন্যমনস্কতা লক্ষ করেছিল-
(ক) রামদাস তলওয়ারকর
(খ) তেওয়ারি
(গ) নিমাইবাবু
(ঘ) জগদীশবাবু
উওব়: (ক) রামদাস তলওয়ারকর
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. তেলের খনির কারখানার মিস্ত্রিরা কেন রেঙ্গুন চলে এসেছিল?
উওব়: বর্মা অয়েল কোম্পানিতে, তেলের খনির কারখানায় মিস্ত্রিরা কাজ করত। সেখানকার জলহাওয়া তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তাই চাকরির উদ্দেশ্যে তারা রেঙ্গুনে চলে এসেছিল।
২. কে পুলিশ স্টেশনে বসে থাকা বাঙালিদের তদন্ত করেছিলেন?
উওব়: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' রচনাংশে জগদীশবাবু পুলিশ স্টেশনে বসে থাকা বাঙালিদের টিনের তোরঙ্গ ও ছোটো-বড়ো পুঁটুলি খুলে তদন্ত করছিলেন।
৩. কাকে, কী সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছিল?
উওব়: 'পথের দাবী' রচনাংশে পুলিশ স্টেশনের একটি ঘরে একজনকে পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছিল। সে তার নাম বলেছিল গিরীশ মহাপাত্র।
৪. পলিটিকাল সাসপেক্ট বলতে কী বোঝায়?
উওব়: রাজনৈতিক দিক থেকে সন্দেহভাজন এবং ব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক ব্যক্তিকেই পলিটিকাল সাসপেক্ট বলা হয়। আলোচ্য 'পথের দাবী' রচনাংশে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ইংরেজ সরকারের চোখে ছিল পলিটিকাল সাসপেক্ট।
৫. সব্যসাচীর চোখের দৃষ্টি দেখে কী মনে হয়েছিল?
উওব়: সব্যসাচীর গভীর জলাশয়ের মতো দৃষ্টির সামনে কোনোরকম খেলা বা চালাকি চলবে না। এই দৃষ্টির গভীরে যে ক্ষীণ প্রাণশক্তি লুকোনো আছে, মৃত্যুও সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায়।
৬. নিমাইবাবু কীসের প্রতি অপূর্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন?
উওব়: 'পথের দাবী' রচনাংশে নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষার বাহার ও পারিপাট্যের প্রতি অপূর্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।
৭. গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষার বাহার ও পারিপাট্য দেখে নিমাইবাবু কী বলেছিলেন?
উওব়: গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে নিমাইবাবু বলেছিলেন, বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে লোকটির স্বাস্থ্য গেলেও, তার শখ ষোলো আনাই বজায় আছে।
৮. পলিটিকাল সাসপেক্ট ব্যক্তিটি তার কী নাম বলেছিল?
উওব়: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' রচনাংশে নিমাইবাবু পলিটিকাল সাসপেক্ট ব্যক্তিটির নাম জিজ্ঞাসা করায়, সে তার নাম বলেছিল গিরীশ মহাপাত্র।
৯. গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক ও পকেট থেকে কী বার হয়েছিল?
উওব়: গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক থেকে একটি টাকা আর গন্ডা-ছয়েক পয়সা এবং পকেট থেকে একটা লোহার কম্পাস, একটা কাঠের ফুটবুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই ও গাঁজার একটা কলকে বার হয়েছিল।
১০. গিরীশ মহাপাত্রকে গাঁজা খাওয়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে, সে কী বলে?
উওব়: গিরীশ মহাপাত্রকে গাঁজা খাওয়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, সে নিজে খায় না। কারোর কাজে লাগতে পারে এই ভেবে সে কুড়িয়ে পাওয়া কলকেটা নিজের কাছে রেখেছে।
১১. "নিমাইবাবু হাসিয়া কহিলেন"-নিমাইবাবু হেসে কী বললেন?
উওব়: গিরীশ মহাপাত্র কতটা সদাশয় ব্যক্তি যে অন্যের কাজে লাগবে বলে গাঁজার কলকেটা কুড়িয়ে পকেটে রেখেছেন-নিমাইবাবু হেসে এ কথাই বলতে চেয়েছিলেন।
১২. অপূর্ব পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে কী দেখল?
উওব়: পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে অপূর্ব দেখল গিরীশ মহাপাত্র একটা ভাঙা টিনের তোরঙ্গ আর বিছানার বান্ডিল সঙ্গে নিয়ে রাস্তা ধরে চলে যাচ্ছে।.
১৩. "তুমি গাঁজা খাও?”-কে, কাকে, কেন এই প্রশ্ন করেছিলেন?
উওব়: গিরীশ মহাপাত্রের পকেট থেকে একটি গাঁজার কলকে পাওয়া গিয়েছিল। তাই নিমাইবাবু তাকে উক্ত প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করেছিলেন ।
১৪. "বুড়ো মানুষের কথাটা শুনো।" বুড়ো মানুষটি কী বলেছিলেনও
উওব়: 'বুড়ো মানুষ' অর্থাৎ নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রকে বলেছিলেন অস্বীকার করলেও তার মধ্যে গাঁজা খাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। কিন্তু নিয়ে জীর্ণ শরীরের কথা ভেবে তার গাঁজা খাওয়া উচিত নয়।
১৫. "সে যে বর্মায় এসেছে এ খবর সত্য।" কার বর্মায় আসার কথার হয়েছে?
▶ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' রচনাংশে ভারাংয়ে মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের বৰ্মায় আসার কথা বলা হয়েছে।
১৬. "বড়োবাবু হাসিতে লাগিলেন।” বড়োবাবুর হাসির কারণ কী?
উওব়: গিরীশ মহাপাত্র মাথায় লেবুর তেল সমস্ত লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়। কথা বললে বড়োবাবু হেসে ওঠেন। জগদীশবাবু বড়োবাবুকে সে
১৭.“এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করার দরকার নেই, বড়োবাবু।" বক্তার এমন উক্তির কারণ কী?
উওব়: বক্তা জগদীশবাবু আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন কারণ গিরী মহাপাত্রের মাথার চুলে লাগানো লেবুর তেলের গন্ধে থানাস লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়েছিল। তাঁর ধারণায় এমন লোক সব্যসাচী মল্লিক হতে পারেন না।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
১. "পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করিয়া দেখা গেল”-পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করে কে কী দেখল?
উত্তর: উদ্ধৃতাংশে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে।
▶ পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করে অপূর্ব দেখল, হলঘরের মধ্যে জনা-ছয়েক বাঙালি নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছে। তারা ছিল বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানায় কাজ করা মিস্ত্রি। সেখানের জলহাওয়া সহ্য না হওয়ায় রেঙ্গুনে চলে এসেছিল। অপূর্ব দেখল তাদের সঙ্গে থাকা টিনের তোরঙ্গ ও পুটলি খুলে তদন্ত করা হচ্ছে। পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে অন্য আরেকটি ঘরে একজনকে আটকে রাখা হয়েছে। আর উপস্থিত যাত্রীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের বিবরণ নিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে।
২. "লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল”- লোকটি কে? তাকে দেখে অপূর্বর কী মনে হয়েছিল?
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' রচনাংশের আলোচ্য অংশে লোকটি নিজেকে গিরীশ মহাপাত্র বলে পরিচয় দিয়েছিল।
▶ লোকটি কাশতে কাশতে নিমাইবাবুর সামনে হাজির হয়েছিল। কাশি ১+২ পরিশ্রমে সে এমনভাবে হাঁপাচ্ছিল যে তাকে দেখে অপূর্বর মনে হয়েছিল তার আয়ু বোধহয় আর বেশিদিন নেই। কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল গভী জলাশয়ের মতো। এই দৃষ্টির গভীরে যে প্রাণশক্তি লুকোনো ছিল সেখানে মৃত্যুও যেন প্রবেশ করতে সাহস পায় না।
৩. "সাবধানে দূরে দাঁড়ানোই প্রয়োজন।"-কোথা থেকে, কেন সাবধানে দূরে দাঁড়ানো প্রয়োজন?
উত্তর: আলোচ্য অংশে গিরীশ মহাপাত্রের দৃষ্টি থেকে দূরে থাকার কথ বলা হয়েছে। কৌতূহলী অপূর্ব সব্যসাচী সন্দেহে আটক করা গিরীশ মহাপাত্রকে লক্ষ করছিল।
▶ লোকটি একটুখানি কাশির পরিশ্রমেই হাঁপাচ্ছিল অপূর্বর মনে হচ্ছিল একটা ক্ষয়রোগ দ্রুত তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে চলেছে। কিন্তু লোকটির চোখের দৃষ্টি ছিল অদ্ভুত। তার চোখ দুটি ছিল গভর জলাশয়ের মতো রহস্যময়। বিচক্ষণ অপূর্ব বুঝেছিল, গভীর জলাশয়ে খেলা যেমন বিপজ্জনক, তেমনই গিরীশ মহাপাত্রের রহস্যময় দৃষ্টি থেকে দূর দাঁড়ানোই শ্রেয়।
৪“কেবল এই জন্যই যেন সে আজও বাঁচিয়া আছে।"—এখানে কার কথা বলা হয়েছে? কীজন্য সে আজ ও বেঁচআছে?
উত্তর: সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের কথাই এখানে বলা ক পাও হয়েছে।
▶ অত্যন্ত বুণ চেহারা হওয়া সত্ত্বেও গিরীশ মহাপাত্রের দুটি চোখের অদ্ভুত দৃষ্টিতে এক অজানা রহস্যময়তার ছাপ ছিল। তার অতল দৃষ্টির গভীরে যেন ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকুই লুকানো আছে। মৃত্যু সেখানে পৌঁছাতে পারে না। সেইজন্যই সে আজও বেঁচে আছে।
৫. "... অপূর্ব তাহার পরিচ্ছেদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল।" কার কথা বলা হয়েছে? তার পোশাক- কথা বল পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও।
উত্তর: উল্লিখিত অংশে গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।
▶ গিরীশ মহাপাত্রের গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার- পাঞ্জাবি। তার বুক-পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে ছিল সবুজ রঙের ফুল মোজা এবং বার্নিশ করা পাম্পশু। আর হাতে স্কুল ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি।
৬. "বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে”-কে কার সম্পর্কে এ কথা বলেছেন? তার সম্পর্কে বক্তার এরূপ উক্তির কারণ কী?
উত্তর: বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রের শখ সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।
▶ গিরীশ মহাপাত্রের মাথার সামনে দিকে বড়ো বড়ো চুল ছিল কিন্তু ঘাড় ও কানের চুল ছিলে একেবারে ছোটো করে ছাঁটা। তার গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার-পাঞ্জাবি। তার বুক-পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা এবং বার্নিশ করা পাম্পশু। গিরীশ মহাপাত্রের হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। রোগা, ক্ষীণদেহী মানুষটার এই পোশাকের বাহার দেখেই নিমাইবাবু আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
৭. "কেবল আশ্চর্য সেই রোগা মুখের, অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি"-কার চোখের কথা বলা হয়েছে? সেই চোখের বর্ণনা দাও।
উত্তর: এখানে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের চোখের কথা বলা হয়েছে।
▶ গিরীশ মহাপাত্রের রুগ্ম এবং ক্ষয়ে যাওয়া চেহারার মধ্যে সবথেকে আকর্ষণীয় ছিল তার চোখ দুটো। সে চোখের আয়তন, দীপ্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। গিরীশ মহাপাত্রের চোখ দুটো ছিল অত্যন্ত গভীর জলাশয়ের মতো। সেই চোখ দুটো থেকে দূরে দাঁড়ানোটাই শ্রেয়। আর এই চোখের অতলেই তার প্রাণশক্তিটুকু লুকানো ছিল, মৃত্যুও সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায়।
৮. "কীরূপ সদাশয় ব্যক্তি ইনি”- বক্তা কে? কী কারণে তিনি এ কথা বলেছিলেন?
উত্তর: উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা নিমাইবাবু।
▶ গিরীশ মহাপাত্রের কাছে গাঁজার কলকে পেয়ে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে সে গাঁজা খায় কি না, তার উত্তরে গিরীশ বলেছিল সে নিজে খায় না। গাঁজার কলকেটি সে পথে কুড়িয়ে পেয়েছে এবং যদি কখনও কারোর কাজে লাগে ভেবে সেটিকে কাছে রেখেছে। তার এই অদ্ভুত পরোপকারের ইচ্ছের জন্য নিমাইবাবু তাকে 'সদাশয় ব্যক্তি' বলেছিলেন।
৯."যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচরের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।"- কে, কাকে খুঁজছিলেন? তাঁর কালচারের কথা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিককে খুঁজছিলেন।
▶ গিরীশ মহাপাত্রের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চেহারা ছিল খুবই হাস্যকর। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সংসারে তাঁর মেয়াদ আর বেশি দিন নেই। একজন ডাক্তারি পড়া উচ্চশিক্ষিত রাজবিদ্রোহী কখনও এ রকম ক্ষীণদেহী এবং রোগগ্রস্ত হতে পারেন না। তাঁর পোশাকের মধ্যেও থাকবে রুচির ছাপ। এই প্রসঙ্গেই গিরীশ মহাপাত্র ও সব্যসাচী মল্লিকের কালচারের পার্থক্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১০. "কিন্তু এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করবার দরকার নেই বড়োবাবু।” কাকে 'জানোয়ার' বলা হয়েছে? তাকে জানোয়ার বলার কারণ কী?
উত্তর: এখানে সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রকে 'জানোয়ার' বলা হয়েছে।
▶ গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা ও চেহারাটা ছিল বেশ হাস্যকর। তার মাথার সামনের দিকে ছিল বড়ো বড়ো চুল, কিন্তু ঘাড় ও কানের দিকে চুল নেই বললেই চলে। সামান্য চুলেও সে এত লেবুর তেল মেখেছিল যে তার গন্ধে থানাসুদ্ধ লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়েছিল। এই অবাঞ্ছিত লোকটি কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না ভেবেই বিব্রত জগদীশবাবু তাকে 'জানোয়ার' বলেছিলেন।
১১. 'পথের দাবী' রচনায় গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার যে বর্ণনা আছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: 'পথের দাবী' রচনায় গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হল, তার ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে। একটু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপিয়ে উঠেছে। তার শীর্ণ দেহ দেখে মনে হচ্ছে সে যেন কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত। তার মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল, কিন্তু ঘাড় ও কানের দিকের চুল অত্যন্ত ছোটো করে ছাঁটা। মাথায় চেরা সিঁথি, অতিরিক্ত লেবুর তেলে চুলগুলি সিক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু তার চোখ দুটি ছিল গভীর জলাশয়ের মতো। তার অতল দৃষ্টির গভীরে যেন ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকুই লুকানো আছে।
১২. "তুমি এখন যেতে পারো মহাপাত্র।”- বক্তা কে? মহাপাত্রকে যেতে বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'পথের দাবী' রচনাংশের আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু।
▶ রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে থানায় আটক করা হয়েছিল। তার কাছে থাকা বাক্স-তোরঙ্গ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পরীক্ষা করে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামী সব্যসাচীর কালচারের সঙ্গে গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা ও বেশভূষার কোনো মিল ছিল না। সেই কারণে নিমাইবাবু তাকে চলে যেতে বলেছিলেন।
বিশ্লেষধৰ্মী ও ব়চনাধৰ্মী প্ৰশ্ন ও উওব়
১ "পলিটিক্যাল সাসপেঞ্জ সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল"-'পলিটিক্যাল সাসপেক্ট' কথাটির অর্থ কী? এরপরে পুলিশ স্টেশনে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা পাঠ্যাংশ অনুসরণে আলোচনা করো।
উত্তর: 'পলিটিক্যাল সাসপেক্ট' কথাটির অর্থ রাজনৈতিকভাবে সন্দেহভাজন।
▶ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' গল্পাংশে পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে পুলিশ স্টেশনে পুলিশের বড়োকর্তার সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাকে দেখে মনে হয়েছিল তার আয়ু যেন আর বেশিদিন নেই। তার ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গিয়েছিল। অল্প কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপাতে শুরু করেছিল। পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে সে নিজের নাম গিরীশ মহাপাত্র বলেছিল। সে তেলের খনিতে কাজ করত বলে জানায়। বর্মা থেকে সে রেঙ্গুনে এসেছিল। তার ট্যাঁক থেকে একটা টাকা, লোহার কম্পাস, মাপ করার জন্য কাঠের ফুটবুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই আর-একটা গাঁজার কলকে বার করা হয়। পুলিশের কর্তা নিমাইবাবু তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, সে গাঁজা খায় কি না। তার উত্তরে গিরীশ মহাপাত্র বলে, গাঁজার কলকেটা সে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে। কারোর যদি কাজে লাগে সে দিয়ে দেবে। গিরীশ মহাপাত্রের কথাবার্তা শুনে, তার সাজপোশাক, আচার-ব্যবহার দেখে সকলেই নিশ্চিত হয় যে, এই গিরীশ মহাপাত্র কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, খানিকক্ষণ তার সঙ্গে তামাশা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
২ "তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল।"-কে হাসি গোপন করল? তার হাসি পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: অপূর্ব তার হাসি গোপন করেছিল।
▶ গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা এবং পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অপূর্বর হাসির কারণ। গিরীশ মহাপাত্রের বয়স ত্রিশ-বত্রিশের বেশি নয়। বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে তাকে থানায় ধরে আনা হয়। রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া লোকটি কাশতে কাশতে ভিতরে প্রবেশ করে। কাশির দমক দেখে মনে হয়েছিল তার আয়ু আর বেশিদিন নেই। মাথার সামনে বড়ো বড়ো চুল থাকলেও ঘাড় ও কানের কাছে চুল প্রায় ছিল না। আর চুল থেকে বেরোচ্ছিল লেবুর তেলের উগ্র গন্ধ। এর সঙ্গে মানানসই ছিল তার পোশাকও। গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। তার বুকপকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে সবুজ রঙের ফুলমোজা যেটা হাঁটুর ওপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা। পায়ে ছিল বার্নিশ করা পাম্পশু, যার তলাটা আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো। আর হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া একগাছি বেতের ছড়ি।
৩.“কাকাবাবু এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করে ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে নয়, তার আমি জামিন হতে পারি। বক্তা কে? তার সম্পর্কে এ কথা কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' গল্পাংশে উল্লিখিত মন্তব্যাটস বক্তা অপূর্ব।
▶ রেঙ্গুন পুলিশ স্টেশনে বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানার কয়েকজন মিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছিল। তাদেল মধ্যে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে একটি লোককে রেখে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তিরিশ-বত্রিশ বছর বয়সি লোকটি কাশতে কাশতে আসে। কিন্তু লোকটি ছিল ভীষণ রোগা। একটু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপিয়ে উঠছিল দেখে মনে হচ্ছিল, সংসারে তার মেয়াদ বোধহয় আর বেশি নেই। কোনো দুরারোগ্য অসুখ তার শরীরে যেন বাসা বেঁধেছে। এ ছাড়াও তার পোশাক- পরিচ্ছদ ছিল অদ্ভুত ধরনের। গায়ে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার- পাঞ্জাবি, তার বুক-পকেট থেকে একটা রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে বিলিতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, হাঁটুর ওপরে লাল ফিতা বাঁধা। হয়তো সব্যসাচী বলে সন্দেহ হলেও অপূর্ব মন থেকে চাইছিল ওই লোকটি যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়ে। এই কারণেই অপূর্ব নিমাইবাবুকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল।
৪ "বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে।"- বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও। অথবা, "বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে।"- বাবুটি কে? তাঁর স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় দাও।
উত্তর: এখানে বাবুটি বলতে শরৎচন্দ্রের 'পথের দাবী' রচনাংশের অন্যতম চরিত্র গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।
▶ গিরীশ মহাপাত্রের বয়স ত্রিশ-বত্রিশের বেশি নয়। বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে তাকে থানায় ধরে আনা হয়। রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া লোকটি কাশতে কাশতে ভিতরে প্রবেশ করে। কাশির দমক
দেখে মনে হয়েছিল তার আয়ু আর বেশিদিন নেই। মাথার সামনে বড়ো বড়ো চুল থাকলেও ঘাড় ও কানের কাছে চুল প্রায় ছিল না। আর চুল থেকে বেরোচ্ছিল লেবুর তেলের উগ্র গন্ধ। এর সঙ্গে মানানসই ছিল তার পোশাকও। গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। তার বুকপকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে সবুজ রঙের ফুলমোজা যেটা হাঁটুর ওপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা। পায়ে ছিল বার্নিশ করা পাম্পশু, যার তলাটা আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো। আর হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া একগাছি বেতের ছড়ি।
৫. 'মহা হুঁশিয়ার পুলিশের দলকে আজকের মতো নির্বোধ আহম্মক হতে বোধ করি কেউ কখনো দেখেনি।"-পুলিশের দলকে 'নির্বোধ আহম্মক' বলা হয়েছে কেন? পুলিশ সম্পর্কে বক্তার এমন উক্তির পিছনে তার কোন্ মানসিকতা সক্রিয় লেখো।
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' গল্পাংশে গিরীশ মহাপাত্র নামে এক ব্যক্তিকে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ভেবে পুলিশ নানাভাবে জিজ্ঞাসা ও তল্লাশি চালায়। শেষপর্যন্ত তার চেহারা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাংলা দেশের অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবুও ব্যর্থ হন সব্যসাচীকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু অপূর্ব বুঝেছিল গিরীশ মহাপাত্রই ছদ্মবেশী সব্যসাচী। এই কারণেই সে পুলিশের দলকে 'নির্বোধ আহম্মক' বলেছে।
▶ পুলিশের দল সম্পর্কে অপূর্বর এই মন্তব্যের পিছনে তার সুপ্ত দেশপ্রেম সক্রিয় ছিল। কেন-না, সে মনেপ্রাণে চাইছিল সব্যসাচী যেন ধরা না পড়েন। তার এমনও বিশ্বাস ছিল যে, সব্যসাচী এত সাধারণ রাজবিদ্রোহী নন। তাঁর ছদ্মবেশ, এতই অকৃত্রিম ছিল যে, বোঝাই মুশকিল হত তিনি কোন্ দেশের মানুষ। দশ-বারোটা ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলতে পারতেন। সুতরাং তাঁকে ধরা সহজ কাজ নয়। অপূর্ব নিজেই বিস্মিত হয়েছিল সব্যসাচীর পোশাক ও চেহারা দেখে। পুলিশকে 'নির্বোধ আহম্মক' বলার মধ্য দিয়ে
অপূর্ব একদিকে যেমন পুলিশের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেছে, অন্যদিকে তেমনই পরোক্ষে সব্যসাচীর দক্ষতা আর কৌশলকে নীরবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
৬. "পৃথিবীর যে-কোনো দেশে, যে-কোনো যুগে যে-কেউ জন্মভূমিকে তার স্বাধীন করবার চেষ্টা করেচে, তাকে আপনার নয় বলবার সাধ্য আর মার থাক, আমার নেই।”-এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাব ব্যক্ত করো।
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' গল্পাংশে অপূর্বই মন্তব্যটি করেছে। অপূর্ব বাংলা দেশের ছেলে। সে স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাস করত। ভাই সব্যসাচীর মতো দেশভক্তরা তার কাছে পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। শুধু দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে এঁরা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। জীবনমৃত্যু এঁদের কাছে পায়ের ভৃত্য। দেশের মুক্তিপথের অগ্রদূত এই বীর য়কদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের ছিল দমনমূলক মনোভাব। যে-কোনো উপায়ে এঁদের গ্রেফতার করাই ছিল ব্রিটিশ পুলিশের লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যেই পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রেঙ্গুনে এসেছেন। তাঁরই শিকার হলেন সব্যসাচী মল্লিক। অপূর্ব নিমাইবাবুকে কাকা বলে ডাকে। কিন্তু নিমাইবাবুর কার্যকলাপকে অপূর্ব সমর্থন করে না। স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীকে গ্রেফতার করা মানেই দেশদ্রোহ করা। অপূর্ব চায় না যে, সব্যসাচী মল্লিক গ্রেফতার হোক। এই মনোভাব অপূর্বর দেশপ্রেমকেই তুলে ধরে। নিমাইবাবু ভার কর্তব্য পালন করতে এলেও অপূর্বর কাছে কর্তব্যের চেয়ে স্বদেশ বড়ো। পরের দাসত্ব করে আপন জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জনে বাধাদানকে অপূর্ব সমর্থন করতে পারে না। তাই যত বিপদই আসুক, অপূর্ব সব্যসাচীকে একান্ত নিজের জন বলে স্বীকার করতে পিছপা হয় না। আলোচ্য উক্তির মধ্য দিয়ে অপূর্বর এই স্বদেশপ্রেমই বড়ো হয়ে উঠেছে।
৭. "... তিনি ঢের বেশি আমার আপনার"- অপূর্ব কেন এ কথা বলেছিল?
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী উপন্যাসটি মূলত স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল। পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য, ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য অনেকেই লড়াই করছিলেন, সব্যসাচী তাঁদেরই একজন। দেশের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। 'পথের দাবী' পাঠ্যাংশে দেখা যায় সব্যসাচী গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশ ধারণ করে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সব্যসাচী এমন ছদ্মবেশ ধারণ করতেন যাতে পুলিশ তাঁকে ধরতে না পারে। স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাসী অপূর্ব সব্যসাচীকে মনেপ্রাণে সমর্থন করত। অপূর্ব জানত যে দেশকে সব্যসাচী ভালোবাসেন, সেই দেশকে স্বাধীন করার জন্যই তিনি লড়াই করছেন। পুলিশরা সব্যসাচীকে ধরার জন্য অনেক চেষ্টা করছিল। দেশের টাকায় দেশের লোক দিয়েই শিকারের মতো তারা সব্যসাচীকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। আবার পুলিশকর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়, অপূর্ব তাঁকে কাকা বলে ডাকত। অপূর্ব এই কারণে নিজেও যথেষ্ট লজ্জিত ছিল। তাই সে বলেছে, দেশকে তথা দেশবাসীকে এই লজ্জা, অপমান, লাঞ্ছনা থেকে যে মুক্তি দিতে চায় সেই সব্যসাচী অপূর্বর কাছে আত্মীয় পুলিশকর্তার থেকেও অনেক বেশি আপনার এবং নিকটজন।
৮. "আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না, রামদাস।"-প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' রচনাংশ থেকে উদ্ধৃতিটি গৃহীত। বাংলা দেশের ছেলে অপূর্ব রেঙ্গুনে থাকার সময় ফিরিঙ্গি ও অন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত ও অপমানিত হয়েছিল। সেই লাঞ্ছনার কথা বলতে গিয়েই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
▶ সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের বাঙালি সন্তান অপূর্ব চাকরির সূত্রে রেঙ্গুনে এসেছিল। কিন্তু রেল স্টেশনে একদিন বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেয়। স্টেশনে থাকা কোনো ভারতীয়ই এই ঘটনার প্রতিবাদ করেনি; বরং অপূর্বর হাড়-পাঁজরা খুব একটা ভাঙেনি জেনে তারা খুশি হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে স্টেশনমাস্টার তাকে ভারতীয় বলে কুকুরের মতো বের করে দিয়েছিল। বিনা দোষে এই অত্যাচার সহ্য করায় এক না-বলা কষ্ট তার বুকের মধ্যে গুমরে ওঠে। তাই রামদাসের কাছে সে বলেছে, "তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না তলওয়ারকর।" অপূর্ব শিক্ষিত, সভ্য, বিচক্ষণ যুবক। শাসকের এই অকারণ অত্যাচারকে সে সমর্থন করতে পারে না। ইংরেজদের এই বর্বরের মতো আচরণ সমস্ত স্তরের দেশবাসীকেই সহ্য করতে হচ্ছে বুঝে অপূর্ব যন্ত্রণা অনুভব করেছে। আলোচ্য উক্তিটি তার সেই বেদনাকেই প্রকাশ করেছে।
৯. "বাস্তবিক, এমন তৎপর, এতবড়ো কার্যকুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে মনে হয় না, হে তলওয়ারকর! তা-ছাড়া এত বড়ো বন্ধু!”- মেয়েটির সম্পর্কে অপূর্বর এই মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' গল্পাংশে অপূর্ব এই মন্তব্যটি করেছে। অপূর্বর বাড়ির ওপরের তলায় যে ক্রিশ্চান মেয়েটি থাকত তার সম্বন্ধে এই কথাটি বলা হয়েছে। অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে একদিন চুরি হয়ে গিয়েছিল। ক্রিশ্চান মেয়েটির জন্যই টাকাকড়ি ছাড়া বাকি সমস্ত কিছু চুরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ক্রিশ্চান মেয়েটি নিজে চোরকে তাড়িয়ে অপূর্বর ঘর তালাবন্ধ করে দেয়। অপূর্ব না-ফেরা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে। অপূর্ব ফেরার পর সে নিজে চাবি দিয়ে সেই ঘর খুলে যা কিছু ছড়ানো জিনিসপত্র ছিল সেগুলো সব নিজের হাতে গুছিয়ে দেয়। যা চুরি গেছে আর যা যা চুরি যায়নি তার একটা নিখুঁত হিসাব সে বানিয়েছিল। সেই হিসেব দেখে অপূর্বর মনে হয়েছিল, একজন পাস করা অ্যাকাউন্ট্যান্টের পক্ষেও এমনটা সম্ভব নয়। অন্যের জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা এই মেয়েটিকে না দেখলে অপূর্ব বুঝতেও পারত না। সব কিছু দেখে অপূর্বর তাকে একজন প্রকৃত বন্ধু বলেই মনে হয়েছিল। মেয়েটির প্রখর বুদ্ধি আর সবদিকে অদ্ভুত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে অপূর্ব আশ্চর্য হয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।
১০. "আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এই-সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম।"-কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? এর মধ্যে বক্তার কোন্ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'পথের দাবী' গল্পাংশ থেকে উদ্ধৃত এই উক্তিটি করেছিল অপূর্ব। ফিরিঙ্গিদের হাতে একদিন অপূর্ব নিজে কীভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিল সেই যন্ত্রণার কথা বর্মা
অফিসের সহকর্মী ব়মদাস তলওয়ারকরের কাছে বলতে গিয়ে সে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।
▶ অপূর্বকে বিনা দোষেই ফিরিঙ্গি যুবকেরা লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের এর দিয়েছিল। অপূর্ব এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব টশনমাস্টার তাকে কেবল 'দেশি লোক' এই অজুহাতে কুকুরের মতো দূর করে দিয়েছিল। এ অপমান পরাধীন দেশে প্রতিদিনই ঘটছে। অপূর্ব ও ঘটনায় খুব কষ্ট পায়; তার খুব রাগও হয়। সেই সঙ্গে সে স্থির সিদ্ধা আসে যে, দেশের মা-ভাই-বোনকে যারা সমস্ত অত্যাচার থেকে উদ্ধদ করতে চায়, তারাই তার সত্যকার আপনার লোক। আর সেই মানুষগুলোদে কাছের মানুষ হিসেবে গ্রহণ করার সমস্ত দুঃখই সে মাথা পেতে নিতে চায়।
এ কথায় অপূর্বর দেশপ্রেমিক সত্তাটি যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনই সাহস এবং সহমর্মিতার প্রকাশ ঘটেছে। সে কেবল নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত নয়। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার এক প্রবল ইচ্ছে ধরা পড়েছে তার কথায়। পাশাপাশি এক অনিশ্চিত জীবনকে গ্রহণ করার কঠিন প্রতিজ্ঞাও অপূর্বর কথায় ফুটে উঠেছে।
১১. আমাদেব় তিনি আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষ, কিন্তু তাই বলে আমাব় চেয়ে তো আপনাব়।”-কে, কাব় সম্পৰ্কে এই মন্তব্য কব়েছে এই উক্তিব় আলোকে বক্তাব় মনোভাবটি ব্যক্ত কব়ো।
উত্তর: অপূর্ব নিমাইবাবু সম্পর্কে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে।
▶ নিমাইবাবুর সঙ্গে অপূর্ব পুলিশ স্টেশনে গেলে সেখানে তার সঙ্গে পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের দেখা হয়। সেখানে পুলিশ গিরীশ মহাপাত্র এবং তার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র তদন্ত করতে গেলে এক হাস্যকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। তলওয়ারকরের সঙ্গে এই নিয়ে কথোপকথন প্রসঙ্গে অপূর্বর মনোভাবের কয়েকটি দিক ধরা পড়েছে-
অপূর্ব সাধারণ চাকুরিজীবী হলেও পরাধীন দেশকে বিদেশি শাসনমুক্ত দেখতে চায়। দেশের কল্যাণের জন্যই আন্তরিকভাবে সে চায়, সব্যসাচী মল্লিক যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়েন। নিমাইবাবু অপূর্বর বাবার বন্ধু, পরম আত্মীয়। কিন্তু তিনি সুদূর বাংলা দেশ থেকে বর্মায় এসেছেন যে সব্যসাচী মল্লিককে হাজতে পুরতে, তিনি আসলে দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা। তাই নিমাইবাবুর চেয়ে সব্যসাচী মল্লিকই অপূর্বর আত্মার আত্মীয়।
রামদাস অফিসের সহকর্মীমাত্র হলেও তার কাছে অপূর্ব নিজের আত্মীয় সম্পর্কে যে ভাবনা মেলে ধরেছে-তাতে সহজেই অপূর্বকে স্পষ্টবক্তা বলা যায়।
এ কথাও ঠিক, অপূর্ব আবেগপ্রবণ। তাই রামদাস যখন নিমাইবাবুর কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্তের জন্য অপূর্বর প্রতি দিনির্দেশ করেন, তখনই অপূর্ব জোর করে অনেকটা আবেগের বশে, প্রশ্নে উল্লিখিত কথাগুলো বলেছলি।
Editing By- Lipi Medhi