Lesson 5

হারিয়ে যাওয়া কালি কলম

------------------

👉Paid Answer (For Membership User)


[MCQ]

 

1. 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনাটি যে গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে, সেটি হল-

ক) যখন ছাপাখানা এলো 

খ) কালিখ কালি আছে কাগজ আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই

গ) আজব নগরী

ঘ) বটতলা

উত্তর: খ) কালিখ কালি আছে কাগজ আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই 

 

2. শ্রীপান্থের আসল নাম

ক) অন্নদাশঙ্কর রায়

খ) নিখিলনাথ রায় 

গ) নিখিল সরকার 

ঘ) সুবোধ ঘোষ

উত্তর: খ) নিখিলনাথ রায় 

 

3. নিখিল সরকার ওরফে 'শ্রীপান্থ'র জন্ম হয়- 

ক) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে 

খ) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে 

গ) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে 

ঘ) ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: গ) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ

 

4. নিখিল সরকার রচিত একটি গ্রন্থ হল- 

ক) মেটিয়াবুরুজের নবাব 

খ) কঙ্কাবতী 

গ) আমরা বাঙালি 

ঘ) রামায়ণ

উত্তর: ক) মেটিয়াবুরুজের নবাব

 

5. কথায় আছে, কালি কলম মন, লেখে জন। 

ক) এক 

খ) দুই

গ) তিন 

ঘ) চার

উত্তর: গ) তিন

 

6. "কালি কলম মন, লেখে তিন জন।"-এটি হল-

ক) ধাঁধা 

খ) প্রবাদ 

গ) রূপকথা 

ঘ) উপকথা

উত্তর: খ) প্রবাদ

 

7. লেখক যেখানে কাজ করেন, সেটা হল- লেখার আসর

ক) ছাপাখানা

খ) পুথি লেখার কারখানা

গ) লেখালেখির অফিস 

ঘ) গল্প

উত্তর: গ) লেখালেখির অফিস 


8. লেখক যেখানে কাজ করেন সেখানে সবাই-

ক) লেখক 

খ) পুলিশ

গ) আড্ডাবাজ 

ঘ) চাকর

উত্তর: ক) লেখক


9. লেখকের হাতে কলম এবং বাকিদের সামনে কী?

ক) টাইপরাইটার 

খ) কম্পিউটার

গ) প্রচুর বই

ঘ) দোয়াত ও পেন

উত্তর: খ) কম্পিউটার

 

10. লেখক একদিন কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলেই বিপদ কেন

ক) কারও কলমে কালি নেই 

খ) কারও সঙ্গে কলম নেই 

গ) সবার সঙ্গে কথা বন্ধ 

ঘ) কলম চাওয়া নিষেধ

উত্তর: ঘ) সহকর্মীরা

 

11. তবে তাতে লিখে আমার সুখ নেই"- কেন?

ক) গলা শুকনো ভোঁতামুখের কলম 

খ) অনেক দামি পেন 

গ) দিয়ে কালি ঝরে না 

ঘ) ভালো মনে কেউ দেয় না

উত্তর: ক) গলা শুকনো ভোঁতামুখের কলম 

 

12. লেখকৰ কাছে তাঁর অফিছ তাঁর–

ক) জন্মস্থান 

খ) কারাখানা 

গ) মৃত্যুস্থান 

ঘ) রান্নাঘর 

উত্তর: খ) কারাখানা 

 

13. বাংলায় প্রচলিত কথা "কালি নেই, কলম নেই বলে আমি"। 

ক) কবি 

খ) লেখক 

গ) মুনশি 

ঘ) কলমবিদ

উত্তর: গ) মুনশি


14. কলম তৈরির সময় বড়োরা শিখিয়েছিলেন-

ক) কলমের মুখটা চিরে দিতে হবে 

খ) কলমের মাথাটা ভোঁতা হতে হবেক কলমের মুখটা

গ) কলমের মাথার দুটো অংশ থাকবে 

ঘ) কলমের মুখ চেরা চলবে না

উত্তর: ক) কলমের মুখটা চিরে দিতে হবে  

 

15. লেখার পাত বলতে শৈশবে লেখকদের কী ছিল?

ক) কলাপাতা

খ) লাউ পাতা চিরে দিতে হবে

গ) তাল পাতা

ঘ) শাল পাতা

উত্তর: ক) কলাপাতা

 

16. "আমরা তাতে হোম-টাস্ক করতাম।"-'তাতে' বলতে- 

ক) বড়ো খাতায় 

খ) ব্ল‍্যাকবোর্ডে 

গ) কলাপাতায় 

ঘ) লাউ পাতায়

উত্তর: গ) কলাপাতায়

 

17. কলাপাতায় হোমটাস্ক করে লেখক কোথায় নিয়ে যেতেন

ক) অফিসে 

খ) স্কুলে 

গ) গুরুমশায়ের কাছে

ঘ) বাবার কাছে

উত্তর: খ) স্কুলে

 

18. বাইরে না ফেলে লেখক হোমটাস্কের কলাপাতাগুলি পুকুরেই ফেলতেন, কারণ বাইরে ফেললে-

ক) গোরু খেলে ক গোরু খেলে অমঙ্গল হবে 

খ) রাস্তার লোকে পা দিলে পাপ হবে

গ) বাইরের লোকে দেখে ফেলবে

ঘ) সরস্বতী খুশি হবেন

উত্তর: ক) গোরু খেলে ক গোরু খেলে অমঙ্গল হবে 

 

19. লেখকের ছোটোবেলায় লেখালেখির প্রথম সঙ্গী হিসেবে ছিল-

ক) বাঁশের কলম 

খ) মাটির দোয়াত 

গ) ঘরে তৈরি কালি

ঘ) সবগুলি

উত্তর: ঘ) সবগুলি


20. নীল নদের তীর থেকে লেখক কী নিয়ে আসতেন

ক) নলখাগড়া 

খ) স্টাইলাস 

গ) জ্ঞানাঞ্জন শলাকা 

ঘ) ব্রোঞ্জের ক শলাকা

উত্তর: ক) নলখাগড়া

 

21. "আমি যদি রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হতাম"- কোন্ অধীশ্বরের কথা বলা হয়েছে?

ক) জুলিয়াস সিজার

খ) আলেকজান্ডার 

গ) ফ্রেডারিক 

ঘ) নেপোলিয়ন

উত্তর: ক) জুলিয়াস সিজার

 

22. ব্রোঞ্জের শলাকার পোশাকি নাম হল- 

ক) স্কাইলাস 

খ) স্টাইলাস 

গ) স্টাইলিস 

ঘ) স্কাইলস

উত্তর: খ) স্টাইলাস

 

23. সিজার স্টাইলাস দিয়ে কাকে আঘাত করেছিলেন

ক) কাসকাকে 

খ) মুনশিকে 

গ) ওয়াটারম্যানকে 

ঘ) ম্যাকলানকে

উত্তর: ক) কাসকাকে

 

24. সিজার যে কলমটি দিয়ে কাসকাকে আঘাত করেছিলেন, তার পোশাকি নাম- 

ক) রিজার্ভার 

খ) স্টাইলাস 

গ) পার্কার

ঘ) পাইলট

উত্তর: খ) স্টাইলাস



25. গ্রামাঞ্চলেও আজ আর কীসের কলম খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে লেখক ভেবেছেন

ক) বাঁশের কঞ্চির কলম 

খ) খাগের কলম 

গ) পার্কার পেন

ঘ) ফাউন্টেন পেন

উত্তর: ক) বাঁশের কঞ্চির কলম


Short Question Answer


1. পাঠ্য 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনাটি কোন্ গ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তর: পাঠ্য 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনাটি নিখিল সরকার রচিত কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই গ্রন্থের অন্তর্গত


 2. কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই গ্রন্থটি ছাড়া নিখিল সরকার রচিত অপর দুটি গ্রন্থের নাম লেখো

উত্তর:  কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই গ্রন্থটি ছাড়া নিখিল সরকার রচিত অপর দুটি গ্রন্থ হল যখন ছাপাখানা এলো, মেটিয়াবুরুজের নবাব

 

3. "লেখে তিন জন।”- এই 'তিন জন' বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: শ্রীপান্থ রচিত 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতাংশে তিন জন বলতে কালি, কলম এবং মনকে বোঝানো হয়েছে

 

4. লেখক যেখানে কাজ করেন সেটা কীসের অফিস এবং সবাই সেখানে কী?

উত্তর:  'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনায় লেখক শ্রীপান্থ যেখানে কাজ করেন সেটা লেখালেখির অফিস এবং সেখানে সবাই লেখক

 

5. লেখকের অফিসে লেখক ছাড়া সকলের সামনে কী থাকে?

উত্তর: লেখকের অফিসে লেখক ছাড়া সকলের সামনে চৌকো আয়নার মতো একটা কাচের স্ক্রিন বা পরদা অর্থাৎ কম্পিউটার থাকে

 

6. "লেখকরা অনবরত তা দিয়ে লিখে চলেছেন”- 'তা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর:  শ্রীপান্থ রচিত 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনায় আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে 'তা' বলতে ছাপা হরফ-সহ কম্পিউটারের কি-বোর্ডকে বোঝানো হয়েছে

 

7. লেখক একদিন অফিসে কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলে 'তবেই বিপদ' কেন বলেছেন?

উত্তর: এক্ষেত্রে বিপদ হল লেখক ছাড়া তাঁর অফিসে কেউ লেখার কাজে কলম ব্যবহার করেন না। এমনকি কারও কাছে কলম পাওয়া গেলেও সেই ভোঁতা মুখের কলমে লিখে লেখক সুখ পান না

 

8. "দায়সারা ভাবে কোনও মতে সেদিনকার মতো কাজ সারতে হয়।" 'দায়সারা' কথাটি ব্যবহার করেছেন কেন?

উত্তর: অফিসে লেখকই একমাত্র কলম ব্যবহার করতেন। তাই কোনোদিন অফিসে কলম নিয়ে যেতে ভুলে গেলে কারও ভোঁতা মুখের কলমেই অগত্যা কাজ চালাতে হত তাঁকে

 

9. “বাংলায় একটা কথা চালু ছিল।"-কোন্ কথা চালু ছিল?

উত্তর: বাংলায় চালু কথাটি ছিল- "কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি।"

 

10. "কালগুণে বুঝিবা আজ আমরাও তা-ই।"-'আমরাও তা-ই' বলতে লেখক কী বলেছেন?

উত্তর: বাংলার এক প্রচলিত প্রবাদ ছিল 'কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি'কম্পিউটারের বহুল ব্যবহারের ফলে লেখক বলেছেন কালি ও কলম ছাড়া এখন সবাই মুনশি বা লেখক হয়ে উঠেছে

 

11. বড়োরা শিখিয়ে দিয়েছিলেন" বড়োরা কী শিখিয়েছিলেন?

উত্তর: ছোটোবেলায় কলম তৈরি করার সময় বড়োরা শিখিয়েছিলেন বাঁশের কঞ্চির ছুঁচোলো মুখটা চিরে দিতে, তবেই কালি একসঙ্গে না গড়িয়ে ধীরে ধীরে পড়বে

 

12. লেখকদের শৈশবে লেখার পাত কেমন ছিল?

উত্তর: শৈশবে লেখকদের লেখার পাত বলতে ছিল কলাপাতা। এটিকে কাগজের মতো ব্যবহার করে তাতে লেখক ও তাঁর সহপাঠীরা হোমটাস্ক করতেন

 

13. কলাপাতায় হোমটাস্ক করার পর সেগুলি নিয়ে শৈশবে লেখকরা কী করতেন?

উত্তর: লেখকরা কলাপাতায় হোমটাস্ক করে সেগুলি বান্ডিল বেঁধে স্কুলে নিয়ে গিয়ে মাস্টারমশাইকে দেখাতেন। মাস্টারমশাই সেগুলো দেখার পর আড়াআড়িভাবে ছিঁড়ে ফেরত দিলে তাঁরা সেটা পুকুরে ফেলে দিতেন

 

14. "গোরুকে অক্ষর খাওয়ানোও নাকি পাপ।”- তাই লেখকরা শৈশবে কী করতেন?

উত্তর: শৈশবে লেখকরা মাস্টারমশাইয়ের ফেরত দেওয়া ছেঁড়াখোঁড়া কলাপাতার টুকরোগুলি পুকুরে ফেলে দিতেন। কারণ সেযুগে মনে করা হত ওগুলো গোরু খেলে অমঙ্গল হবে

 

15. "বলতে গেলে তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি।”- কী কী নিয়ে প্রথম লেখালেখি ছিল?

উত্তর: বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি এবং লেখার জন্য কলাপাতা-এগুলি নিয়েই শৈশবে লেখকের প্রথম লেখালেখি ছিল

 

16. "তখন মনে কষ্ট হয় বইকী!"- কী কারণে মনে কষ্ট হয়েছে?

উত্তর:  হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনার লেখক শ্রীপান্থ কলম ক্রমশ উধাও হয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় মনে কষ্ট পেয়েছেন

 

17. লেখকের জন্ম মিশরে হলে লেখক কী করতেন বলেছেন?

উত্তর: মিশরে জন্ম হলে লেখক নীল নদের তীর থেকে নলখাগড়া ভেঙে নিয়ে কলম হিসেবে ব্যবহার করতেন

 

18. প্রাচীন সুমেরীয়রা কীভাবে কলম বানাত?

উত্তর: প্রাচীন সুমেরীয়রা নীল নদের তীর থেকে নলখাগড়া ভেঙে নিয়ে এসে সেটাকে ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে লিখত

 

19. ফিনিসীয় হলে লেখক কী করতেন?

উত্তর:  'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনায় লেখক জানিয়েছেন, তিনি ফিনিসীয় হলে বনপ্রান্ত থেকে হাড় কুড়িয়ে তাকে কলম হিসেবে ব্যবহার করতেন

 

20. "এমনকী আমি যদি রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হতাম।"- কোন্ রোমান অধীশ্বরের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: শ্রীপান্থ রচিত 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনার আলোচ্য অংশে রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হিসেবে জুলিয়াস সিজারের কথা বলা হয়েছে

 

Long Question Answer


1. "কথায় বলে-কালি কলম মন, লেখে তিন জন।"-উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

উত্তর:  শ্রীপান্থ রচিত 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধে স্বয়ং লেখক অতিপ্রচলিত উদ্ধৃত প্রবাদটি উল্লেখ করেছেন। হারিয়ে যাওয়া কালি কলম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়েই লেখকের এরূপ মনে হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে এই মন্তব্যটির একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। মানুষের মনের ভাব ও ভাবনা কলমের সাহায্যে কালির রেখায় সাদা কাগজের ওপর জীবন্তরূপ লাভ করে। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ তার মনের কথাকে ভবিষ্যতের মানুষের জন্য রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লেখার সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে। এই পথ ধরেই কালি আর কলম এসেছে আমাদের সভ্য জগতে। কলম মানুষের আবেগকে প্রকাশ করে। তাকে হাতে নিয়ে মানুষ মনের নানা ভাবনাকে প্রকাশ্য করে তোলে। কলম হল তুলি, কালি হল রং আর মন হল শিল্পী। এই তিনের মিলনে মনের গোপনে জন্ম নেওয়া ভাবনা মূর্ত হয়ে ওঠে। এমনিভাবেই লেখা হয়েছে অজস্র গ্রন্থ। অর্থাৎ সাহিত্যের যে সর্বজনীন হয়ে ওঠা, তা কালি, কলম আর মন-এই তিনের মিলনের দ্বারা সম্ভব। কলমের সাহায্যে লেখার মাহাত্ম্যকে তুলে ধরতেই লেখকের এই মন্তব্যটির অবতারণা

 

2 "সবাই এখানে লেখক। কিন্তু আমি ছাড়া করও হাতে কলম নেই।"-'এখানে' বলতে কোথাকার কথা বলা হয়েছে? লেখক হওয়া সত্ত্বেও কারও হাতে কলম নেই কেন

উত্তর:  শ্রীপান্থের লেখা 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনার উল্লিখিত অংশে 'এখানে' বলতে যে সংবাদপত্রের অফিসে লেখক কাজ করতেন সেখানকার কথা বলা হয়েছে

সংবাদপত্রে অফিস আসলে 'লেখালেখির' অফিস। সবাই সেখানে লেখার কাজই করে থাকেন। কিন্তু 'কালি কলম মন, লেখে তিন জন'-এ কথা বলা হলেও নিজের কর্মক্ষেত্রে কলমের উপস্থিতি লেখক দেখতে পাচ্ছিলেন না। একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউই কলমের ব্যবহার করতেন না। কম্পিউটারই ছিল সকলের অবলম্বন। সকলের সামনে ছিল চৌকো আয়নার মতো একটা কাচের পর্দা, তার নীচে একটা কি-বোর্ড। এই বোর্ডের প্রত্যেকটি বোতামে ছাপা আছে একটি হরফ। আর লেখকের সহকর্মীরা অনবরত তার সাহায্যে লিখে চলেছেন। মাঝে মাঝে লেখা থামিয়ে সেই পর্দার দিকে তাকাচ্ছেন। যা লেখা হয়ে গিয়েছে তা সেই পর্দায় দেখা যাচ্ছে। এ এক নতুন লেখালেখির পদ্ধতি। কলম সেখানে প্রয়োজনহীন। কম্পিউটারের এই ব্যবহার এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, কোনোদিন কলম না নিয়ে গেলে একটা কলম জোগাড় করাই সমস্যার হয়ে যেত। নতুন যুগের এই লেখার পদ্ধতিকে সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সকলে গ্রহণ করে নেওয়াতেই কলম অপ্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে পড়েছিল

 

3. "তাই কেটে কাগজের মতো সাইজ করে নিয়ে আমরা তাতে 'হোম টাস্ক' করতাম।"-কীসে 'হোম টাস্ক' করা হতো? 'হোম টাস্ক' করার সম্পূর্ণ বিবরণ দাও। 

উত্তর:  'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কলাপাতা কেটে তাতে হোমটাস্ক করার কথা বলেছেন

'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনায় লেখক তাঁর শৈশবজীবনের লেখালেখির সূচনার এক চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। গ্রামজীবনের সঙ্গে যাঁদের শৈশব যুক্ত, লেখকের সমবয়সি সেইসব মানুষ তাঁর এই বর্ণনার সঙ্গে একমত এবং একাত্ম হতে পারবেন-এই আশা প্রকাশ করে লেখক তাঁর বর্ণনাটি করেছেন। শৈশবে লেখক সরু বাঁশের কঞ্চি কেটে কলম তৈরি করতেন। বড়োদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি কলমের মাথাটা একটু চিরে দিতেন, ফলে কালি আস্তে আস্তে গড়িয়ে পড়ত। লেখা হত কলাপাতায়। কাগজের আকৃতিতে কলাপাতা কেটে তাতে হোমটাস্ক করে মাস্টারমশাইকে দেখিয়ে তা পুকুরে ফেলে দেওয়া হত। কলম তৈরির পাশাপাশি কালিও লেখকরা নিজেরাই তৈরি করতেন। এক্ষেত্রেও তাঁরা বড়োদের সাহায্য নিতেন। কোনোরকম আয়োজন ছাড়াই এক সহজ পদ্ধতিতে তাঁরা কালি তৈরি করতেন। কাঠের উনুনে কড়াই বসিয়ে তার তলায় জমে যাওয়া কালি তাঁরা লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে জলে গুলে নিতেন। কখনো-কখনো তার সঙ্গে হরীতকীও মেশাতেন। আবার কখনও আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তা বেটে ওই জলের সঙ্গে মেশানো হত। তারপর ওই জলে একটা খুন্ডির গোড়ার দিক পুড়িয়ে লাল টকটকে করে ছ্যাঁকা দেওয়া হত। সবশেষে ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে কালি ভরা হত। এইভাবেই লেখকের শৈশবজীবনে 'লেখালেখি'র সূচনা হয়

 

4. "আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।"-লেখকরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন তা প্রবন্ধ অনুসরণে লেখো। [রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুল; বর্ধমান টাউন স্কুল; হাওড়া যোগেশচন্দ্র গার্লস স্কুল; পাঠভবন]

উত্তর: নিখিল সরকার ওরফে 'শ্রীপান্থ' রচিত 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধে উদ্ধৃতাংশটি ব্যবহৃত হয়েছে

আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক তাঁর ছেলেবেলায় কালি তৈরি নিয়ে প্রচলিত ছড়ার কথা বলেছেন। ছড়াটি হল- "তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ছাগ দুগ্ধে করি মেলা/লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি/ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।" ছড়াটিতে তিল, ত্রিফলা, শিমুল গাছের ছাল, ছাগলের দুধ ইত্যাদি উপকরণের কথা আছে। এতগুলি উপকরণ জোগাড় করে কালি তৈরি করা খুব সহজ কাজ ছিল না। তাই লেখক অন্য সহজ পথ ধরেন। লেখকের বাড়িতে কাঠের আগুনে রান্না হত। তাতে কড়াইয়ের তলায় প্রচুর কালি জমত। লাউ পাতা দিয়ে তা ঘষে তুলে, পাথরের বাটিতে জলে গুলে রাখা হত। যারা কালি তৈরিতে ওস্তাদ তারা এই কালো জলে হরীতকী ঘষত। কখনো-কখনো আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে এবং তা বেটে সেই জলে মেশানো হত। এইসব ভালো করে মিশিয়ে একটা খুন্তির গোড়ার দিক পুড়িয়ে লাল করে সেই জলে স্পর্শ করালে তা টগবগ করে ফুটত। তারপর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরে নিলেই তৈরি হয়ে যেত কালি

 

5. "বলতে গেলে তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি।"-শৈশবের কোন্ বর্ণনা লেখক দিয়েছেন?

অথবা,

 "তাই দিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি”-লেখকের প্রথম লেখালেখির আয়োজনের পরিচয় দাও

উত্তর: 'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' রচনায় লেখক তাঁর শৈশবজীবনের লেখালেখির সূচনার এক চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন। গ্রামজীবনের সঙ্গে যাঁদের শৈশব যুক্ত, লেখকের সমবয়সি সেইসব মানুষ তাঁর এই বর্ণনার সঙ্গে একমত এবং একাত্ম হতে পারবেন-এই আশা প্রকাশ করে লেখক তাঁর বর্ণনাটি করেছেন। শৈশবে লেখক সরু বাঁশের কঞ্চি কেটে কলম তৈরি করতেন। বড়োদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি কলমের মাথাটা একটু চিরে দিতেন, ফলে কালি আস্তে আস্তে গড়িয়ে পড়ত। লেখা হত কলাপাতায়

কাগজের আকৃতিতে কলাপাতা কেটে তাতে হোমটাস্ক করে মাস্টারমশাইকে দেখিয়ে তা পুকুরে ফেলে দেওয়া হত। কলম তৈরির পাশাপাশি কালিও লেখকরা নিজেরাই তৈরি করতেন। এক্ষেত্রেও তাঁরা বড়োদের সাহায্য নিতেন। কোনোরকম আয়োজন ছাড়াই এক সহজ পদ্ধতিতে তাঁরা কালি তৈরি করতেন। কাঠের উনুনে কড়াই বসিয়ে তার তলায় জমে যাওয়া কালি তাঁরা লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে জলে গুলে নিতেন। কখনো-কখনো তার সঙ্গে হরীতকীও মেশাতেন। আবার কখনও আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তা বেটে ওই জলের সঙ্গে মেশানো হত। তারপর ওই জলে একটা খুন্তির গোড়ার দিক পুড়িয়ে লাল টকটকে করে ছ্যাঁকা দেওয়া হত। সবশেষে ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে কালি ভরা হত। এইভাবেই লেখকের শৈশবজীবনে 'লেখালেখি'র সূচনা হয়

 

6. "ভাবি, আচ্ছা, আমি যদি জিশু খ্রিস্টের আগে জন্মাতাম!”- কোন্ প্রসঙ্গে লেখকের এই ভাবনা? জিশু খ্রিস্টের আগে জন্মালে তিনি কী করতেন?

উত্তর: লেখক শ্রীপান্থ ছেলেবেলায় বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি আর কলাপাতা নিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। ফেলে আসা দিনের কথা মনে করতে গিয়ে তিনি আলোচ্য প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছেন। কম্পিউটারের ব্যবহার অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলমের ব্যবহার কমতে থাকে। কলমের এই দুরবস্থায় লেখকের মন ব্যথিত হয়েছে। শৈশবের লেখালেখির দিনগুলোর কথা তাঁর মনে পড়েছে। সেই সঙ্গে ইতিহাসের পথ ধরে তিনি পরিক্রমা করেছেন। এই প্রসঙ্গেই তাঁর মনে উল্লিখিত ভাবনাটি এসেছে

লেখক ভেবেছেন, তাঁর যদি প্রাচীন মিশরে জন্ম হত, তাহলে তিনি নীল নদের তীর থেকে নলখাগড়া ভেঙে নিয়ে এসে সেটিকে ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে লিখতেন। আবার বাঙালি না হয়ে তিনি যদি হতেন প্রাচীন সুমেরীয় বা ফিনিসীয় তাহলে তাঁকে অন্যভাবে কলম বানাতে হত। ফিনিসীয় হলে হয়তো বন থেকে একটা হাড় কুড়িয়ে এনে তা-ই দিয়েই একটা কলম বানিয়ে নিতেন। লেখক ভেবেছেন, রোম সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হলে তিনি জুলিয়াস সিজারের মতো ব্রোঞ্জের শলাকা বা স্টাইলাস ব্যবহার করতেন। সিজার যে কলমটি দিয়ে কাসকাকে আঘাত করেছিলেন, সেটি আসলে ছিল ব্রোঞ্জের ধারালো শলাকা। চিনাদের কলম অবশ্য তুলি। এইভাবে লেখক কলম আবিষ্কারের প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফিরে যেতে চেয়েছেন

 

7. "কাল গুণে বুঝি বা আজ আমরাও তা-ই।"-এখানে কোন্ বিশেষ অবস্থার কথা বলা হয়েছে? এহেন অবস্থার কারণ কী? 

উত্তর:  'হারিয়ে যাওয়া কালি কলম' প্রবন্ধে লেখক শ্রীপান্থ বলেছেন- "কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি!" আধুনিক যুগেও কম্পিউটার নির্ভরতার কারণে কলম তার গুরুত্ব হারিয়েছে। কলমের সঙ্গে সংযোগহীন এই অবস্থার কথাই লেখক এখানে বলেছেন

'কালি কলম মন, লেখে তিন জন'-লেখক এ কথাকে মন থেকে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু বাস্তবে কলমের অভাব তাঁকে কষ্ট দিয়েছে। সংবাদপত্র অফিসে তাঁর কাজ। কিন্তু একমাত্র প্রবন্ধকার ছাড়া আর কারও কাছেই কলম নেই। সকলের সামনেই রয়েছে কম্পিউটারের মনিটর, আর হাতের কাছে কি-বোর্ড। সেখানে বোতামে ছাপা রয়েছে একটি করে হরফ, যাতে লেখকের সহকর্মীরা হাত লাগিয়ে টাইপ করে চলেছেন আর পর্দার দিকে তাকাচ্ছেন। এরকম অবস্থায় প্রবন্ধকার যদি কোনোদিন কোনো কারণে কলম নিয়ে যেতে ভুলে যান তাহলে বিপদ, কারণ কারও কাছেই কলম চেয়ে পাওয়া যায় না। যদিও বা পাওয়া যায়, তা ব্যবহার-অযোগ্য-কোনোভাবে কাজ সারতে

হয়। অথচ তাঁদের অফিস 'লেখালেখির অফিস' হিসেবেই পরিচিত। অন্যভাবে এ হল 'লেখকের কারখানা'এই পরিবেশে লেখক নিজেকে 'কলম ছাড়া মুনশি'র সঙ্গে তুলনা করেছেন। আজকাল মানুষের যন্ত্রনির্ভরতা তাকে তার পুরোনো অভ্যাস ও গৌরব থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। তাই যথেষ্ট চিন্তিত এবং হতাশ হয়েই প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি করেছেন


Paid Answer Link (Membership User)

EDITING BY--Liza Mahanta