Lesson 7
অভিষেক
----------------
👉Paid Answer (For Membership User)
[MCQ]
১. মাইকেল মধুসুদন দত্তের জীবনকাল-
ক) ১৮০১-১৮৯১ খ্রিস্টাব্দ
খ) ১৮৪১-১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ
ঘ) ১৮০০-১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ
গ) ১৮২৪-১৮৭৩
উত্তর: গ) ১৮২৪-১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দ
২. মেঘনাদবধ কাব্য প্রকাশিত হয়-
ক) ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: ঘ) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে
৩. মেঘনাদবধ কাব্য-এর সর্গসংখ্যা-
ক) চারটি
খ) পাঁচটি
গ) আটটি
ঘ) নয়টি
উত্তর: ঘ) নয়টি
৪. 'অভিষেক' শীর্ষক কাব্যাংশটি মেঘনাদবধ কাব্য-এর-
ক) প্রথম সর্গের অন্তর্গত
খ) দ্বিতীয় সর্গের অন্তর্গত
গ) তৃতীয় সর্গের অন্তর্গত
ঘ) ষষ্ঠ সর্গের অন্তর্গত
উত্তর: ক) প্রথম সর্গের অন্তর্গত
৯. "কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি/এ ভবনে? কহ দাসে..."-ইন্দ্রজিৎ ধাত্রীর কাছে কী জানতে চেয়েছিলেন?
ক) বীরবাহুর কথা
খ) রাবণের নির্দেশ
গ) লঙ্কার কুশল সংবাদ
ঘ) প্রমীলার কুশল সংবাদ
উত্তর: গ) লঙ্কার কুশল সংবাদ
১০. "ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা/উত্তরিলা;" -'অম্বুরাশি-সুতা' যাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি হলেন-
ক) মায়াদেবী
খ) চিত্রাঙ্গদা
গ) লক্ষ্মী
ঘ) সীতা
উত্তর: গ) লক্ষ্মী
১১. "হায়! পুত্র, কি আর কহিব/কনক-লঙ্কার দশা!” বক্তা লঙ্কার কথা বলার ক্ষেত্রে হতাশা প্রকাশ করেছেন, কারণ ঘোরতর যুদ্ধে-
ক) কুম্ভকর্ণের মৃত্যু হয়েছে
খ) বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে
গ) রাবণরাজার মৃত্যু হয়েছে
ঘ) সারণের মৃত্যু হয়েছে
উত্তর: খ) বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে
১২. "ঘোরতর রণে,/হত প্রিয় ভাই তব..." - এই 'প্রিয় ভাই' হল-
ক) বীরবাহু
খ) লক্ষ্মণ
গ) কুম্ভকর্ণ
ঘ) নিশুন্ত
উত্তর: ক) বীরবাহু
১৩. "তার শোকে মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি" রাক্ষসাধিপতি রাবণ যার শোকে কাতর, তিনি হলেন-
ক) প্রমীলাঘ
খ) চিত্রাঙ্গদা
গ) মন্দোদরী
ঘ) বীরবাহু
উত্তর: ঘ) বীরবাহু
১৪. "সসৈন্য সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।"-কার কথা বলা হয়েছে?
ক) দেবরাজ ইন্দ্র
খ) ইন্দ্রজিৎ
গ) রাক্ষসরাজ রাবণ
ঘ) রাঘব
উত্তর: গ) রাক্ষসরাজ রাবণ
১৫. "জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;-"-এই 'মহাবাহু' হলেন-
ক) রাবণ
খ) ইন্দ্রজিৎ
গ) রামচন্দ্র
ঘ) বীরবাহুখ
উত্তর: খ) ইন্দ্রজিৎ
১৬. "জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;-"-'মহাবাহু'র বিস্ময়ের কারণ-
ক) তিনি তাঁর অনুজ বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনেছেন
খ) তিনি ধাত্রীর কাছে লঙ্কার পরাজয়ের কথা শুনেছেন
গ) তিনি ধাত্রীর কাছে তাঁর অভিষেকের কথা শুনেছেন
ঘ) তিনি ধাত্রীর কাছে রাবণের যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা শুনেছেন
উত্তর: ক) তিনি তাঁর অনুজ বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনেছেন
১৭. "কি কহিলা, ভগবতি?"-ভগবতি বলেছেন-
ক) ঘোরতর যুদ্ধে কুম্ভকর্ণ প্রয়াত হয়েছেন
খ) ঘোরতর যুদ্ধে বীরবাহুর মৃত্যু ঘটেছে
গ) রাবণ ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি হিসেবে বরণ করতে চলেছেন
ঘ) ইন্দ্রজিৎ যেন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে যজ্ঞ শেষ করে যুদ্ধে যান
উত্তর: খ) ঘোরতর যুদ্ধে বীরবাহুর মৃত্যু ঘটেছে
১৮. "নিশা-রণে সংহারিনু আমি..."-কাকে সংহার করার কথা বলা হয়েছে?
ক) বীরবাহুকে
খ) রঘুবরকে
গ) লক্ষ্মণকে
ঘ) কুম্ভকর্ণকে
উত্তর: খ) রঘুবরকে
১৯. "...ইন্দিরা সুন্দরী/উত্তরিলা;"-ইন্দিরা সম্পর্কে যে বিশেষণ এখানে প্রযুক্ত হয়েছে, তা হল-
ক) রত্নাকর রত্নোত্তমাক
খ) রত্নাকর প্রিয়তমা
গ) মিতভাষী হেমবতী
ঘ) রত্নাকর হেমলতা
উত্তর: ক) রত্নাকর রত্নোত্তমাক
২০. "হায়! পুত্র,.../সীতাপতি; তব শরে মরিয়া বাঁচিল।"-'সীতাপতি' সম্পর্কে যে বিশেষণটি প্রয়োগ করা হয়েছে-
ক) মায়াবী মান
খ) রঘুকুলমণি
গ) বীরবব
ঘ) মহাবলী
উত্তর: ক) মায়াবী মানব
২১. "যাও তুমি ত্বরা করি;"-কোথায় যাওয়ার কথা বলা হয়েছে?
ক) প্রমীলা-সকাশে
খ) গহন-কাননে
গ) কালসমরে
ঘ) পবন-পথে
উত্তর: গ) কালসমরে
২২. "এ বারতা, এ অদ্ভুত বারতা, জননী/কোথায় পাইলে তুমি, শীঘ্র কহ দাসে।”-এই বার্তাকে 'অদ্ভুত' বলার কারণ-
ক) ইন্দ্রজিৎ বুঝতে পারছেন না, মৃত ব্যক্তি কীভাবে পুনর্জীবিত হতে পারেন
খ) বীরবাহুর মতো বীরের মৃত্যু কীভাবে হতে পারে তা ইন্দ্রজিতের অজানা
গ) বীরবাহু বহু আগেই মারা গেছেন
ঘ) বীরবাহু রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছেন-ইন্দ্রজিতের কাছে এমন খবর ছিল
উত্তর: ক) ইন্দ্রজিৎ বুঝতে পারছেন না, মৃত ব্যক্তি কীভাবে পুনর্জীবিত হতে পারেন
২৩. "রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী/উত্তরিলা;"-
ক) সীতাপতি রামচন্দ্র মায়াবী মানব, ইন্দ্রজিতের তিরে তাঁর মৃত্যু হলেও ক সীতাপতি তিনি পুনর্জীবন লাভ করেছেন
খ) প্রকৃতই বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে
গ) কনকলঙ্কা আজ শ্মশানে পরিণত হয়েছে।
ঘ) তিনি ছদ্মবেশে লঙ্কাপুরীর ভাগ্য নির্ধারণ করতে এসেছেন
উত্তর: ক) সীতাপতি রামচন্দ্র মায়াবী মানব, ইন্দ্রজিতের তিরে তাঁর মৃত্যু হলেও ক সীতাপতি তিনি
পুনর্জীবন লাভ করেছেন
২৪. "...তব শরে মরিয়া বাঁচিল।"-মরে বেঁচে উঠেছেন-
ক) সুগ্রীব
খ) রামচন্দ্র
গ) বিভীষণ
ঘ) কুম্ভকর্ণ
উত্তর: খ) রামচন্দ্র
২৫. "ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী”-কাকে 'মহাবলী' বলা হয়েছে?-
ক) বীরবাহু
খ) রাবণ
গ) বিরাটপুত্র
ঘ) মেঘনাদ
উত্তর: ঘ) মেঘনাদ
২৬. "...রোষে মহাবলী/মেঘনাদ; ফেলাইলা..."-কী ফেলার কথা বলা হয়েছে?
ক) কুসুমদাম
খ) কনক-বলয়
গ) শর
ঘ) রণসাজ
উত্তর: ঘ) রণসাজ
২৭. "যথা অশোকের ফুল অশোকের তলে/আভাময়।"-উদ্ধৃত অংশে অশোক ফুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে
ক) ইন্দ্রজিতের কনক বলয়ের
খ) ইন্দ্রজিতের কুণ্ডলের
গ) প্রমীলার অলংকারের
ঘ) শত্রুদলের
উত্তর: খ) ইন্দ্রজিতের কুণ্ডলের
২৮. "... শোভিল কুণ্ডল,"-কুণ্ডল কোথায় শোভা পাচ্ছিল?
ক) শিরোপরে
খ) পদতলে
গ) শৈলশিরে
ঘ) মেঘখণ্ডে
উত্তর: খ) পদতলে
২৯. "ধিক্ মোরে” বক্তার আত্মধিক্কারের কারণ-
ক) তিনি যুদ্ধে না গিয়ে প্রিয় ভাইকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন
খ) তিনি যুদ্ধে নাগ গিয়ে তাঁর বাবাকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন
গ) শত্রুদল লঙ্কাপুরীকে ঘিরে ফেলেছে, আর তিনি নারীদের মাঝে বিলাসে ব্যস্ত
ঘ) রাজপুরীতে থেকেও তিনি যুদ্ধে যাওয়ার স্পৃহা বোধ করেননি
উত্তর: গ) শত্রুদল লঙ্কাপুরীকে ঘিরে ফেলেছে, আর তিনি নারীদের মাঝে বিলাসে ব্যস্ত
৩০. "... বেড়ে/স্বর্ণলঙ্কা,"কারা স্বর্ণলঙ্কাকে বেষ্টন করে রয়েছে?
ক) পামরদল
খ) কপিদল
গ) বৈরিদল
ঘ) কর্তৃরদল
উত্তর: গ) বৈরিদল
৩১. "বৈরিদল বেড়ে/স্বর্ণলকা,..."-'বৈরিদল' বলতে বক্তা চিহ্নিত করেছেন-
ক) বৈরিদল সেনাদলক
খ) রামচন্দ্রের সেনাদলকে
গ) বিরাটপুত্রের সেনাদলক
ঘ) মহাসুর তারকের সেনাদলকে
উত্তর: খ) রামচন্দ্রের সেনাদলকে
৩২. "বৈরিদল বেড়ে/স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি মাঝে?”- শূন্যস্থানের সঠিক শব্দটি হ
ক) সখীদল
খ) বামাদল
গ) কর্তৃরদল
ঘ) কপিদল
উত্তর: খ) বামাদল
৩৩. "এই কি সাজে আমারে,"-বক্তার কী সাজে না?
ক) কালসমরের দিনে বামাদল মাঝে বিরাজ করা
খ) রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা
গ) বিভীষণকে নিদারুণ ভর্ৎসনা করা
ঘ) শুধু আত্মধিক্কার জানিয়ে কর্তব্য সমাধা হয়েছে মনে করা
উত্তর: ক) কালসমরের দিনে বামাদল মাঝে বিরাজ করা
৩৪. "আন রথ ত্বরা করি;"- বক্তা শীঘ্র রথ আনতে বলেছেন, কারণ-
ক) তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে শত্রুদের বধ করতে চান
খ) তিনি দ্রুত প্রমীলার কাছে যেতে চান
গ) তাঁর বাবা তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন
ঘ) নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে যজ্ঞের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে
উত্তর: ক) তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে শত্রুদের বধ করতে চান
৩৫. "ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।"-বক্তা যে 'অপবাদ' ঘোচাতে চান, তা হল-
ক) লঙ্কাপুরীতে সৈন্যদল রণসজ্জা খ করছে
খ) তিনি বিলাসব্যসনে দিনাতিপাত করছেন
গ) তাঁর প্রিয় অনুজ বীরবাহু মারা গেছেন
ঘ) তাঁর ছোড়া বাণে মারা গিয়েও রামচন্দ্র পুনর্জীবিত হয়ে উঠেছেন
উত্তর: খ) তিনি বিলাসব্যসনে দিনাতিপাত করছেন
৩৬. "ঘুচাব এ অপবাদ,”- কীভাবে ইন্দ্রজিৎ অপবাদ ঘুচাতে চেয়েছেন?
ক) রামচন্দ্রকে বধ করে
খ) লক্ষ্মণকে বধ করে রিপুকুলকে বধ করে
গ) রিপুকুলকে বধ করে
ঘ) আত্মবিসর্জন দিয়ে
উত্তর: গ) রিপুকুলকে বধ
৩৭. 'হৈমবতীসুত যথা'-'হৈমবতীসুত' বলতে বোঝানো হয়েছে-
ক) তারককে
খ) লক্ষণকে
গ) কার্তিককে
ঘ) মেঘনাদকে
উত্তর: ঘ) মেঘনাদকে
৩৮. 'হৈমবতীসুত' কাকে বধ করেছিলেন?
ক) বৃত্রাসুর
খ) তারকাসুরকে
গ) নিশুম্ভ
ঘ) বকাসুর
উত্তর: খ) তারকাসুরকে
৩৯. "সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর-আভরণে,"-'রথীন্দ্রর্ষভ' বা শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার বীরের সাজকে তুলনা করা হয়েছে-
ক) তারকাসুরকে বধ করতে কার্তিকেয়র কিংবা বিরাটপুত্র উত্তরের সঙ্গে গোধন উদ্ধারে অর্জুনের যোদ্ধাবেশের সঙ্গে
খ) অশোকের তলে অশোকের ফুলের সঙ্গে
গ) ইন্দ্রচাপের সঙ্গে
ঘ) মেঘের সঙ্গে
উত্তর: ক) তারকাসুরকে বধ করতে কার্তিকেয়র কিংবা বিরাটপুত্র উত্তরের
সঙ্গে গোধন উদ্ধারে অর্জুনের যোদ্ধাবেশের সঙ্গে
৪০. "উদ্ধারিতে/গোধন, সাজিলা শূর শমীবৃক্ষমূলে।"-কে সেজেছিলেন?
ক) মেঘনাদ
খ) বীরবাহু
গ) বিরাটপুত্র
ঘ) অর্জুন
উত্তর: ঘ) অর্জুন
Short Question Answer
১. "উঠিছে আকাশে/কাঞ্চন-কঞ্জুক-বিভা।” কাকে 'কাঞ্চন-কঞ্জুক- বিভা' বলা হয়েছে?
উত্তর: বীরবাহুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে লঙ্কেশ্বর রাবণ যুদ্ধসাজে সেজেছেন। রাক্ষসবাহিনীর রেশমি পতাকার ঔজ্জ্বল্যকে এখানে 'কাঞ্চন-কঞ্জুক- বিভা' বলা হয়েছে।
২. "নাদিলা কর্তৃরদল..."-কেন 'কর্তৃরদল' আওয়াজ করেছিল?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে সংগৃহীত উদ্ধৃতাংশে মেঘনাদকে দেখে উল্লসিত হয়ে মহাগর্বে সৈন্যদল আওয়াজ করেছিল।
৩. "নমি পুত্র পিতার চরণে,”-পিতা ও পুত্র কে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য অংশে পিতা হলেন লঙ্কার রাজা রাবণ এবং পুত্র হলেন রাজপুত্র মেঘনাদ।
৪. "এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!"-কোন্ মায়া বক্তা বুঝতে পারছেন না?
উত্তর: মৃত্যুর পরেও রামচন্দ্র আবার কীভাবে বেঁচে উঠলেন-সেই মায়ার ছলনা বক্তা মেঘনাদ বুঝতে পারছেন না।
৫. "সমূলে নির্মূল/করিব পামরে আজি!” কাকে 'পামর' বলা হয়েছে?
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। এখানে রামচন্দ্রকে 'পামর' অর্থাৎ পাপী বলা হয়েছে।
৬. "নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে।"-কে, কাকে রাজপদে এনে দিতে চেয়েছেন?
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। মেঘনাদ রামচন্দ্রকে হয় বধ করে, নইলে বেঁধে এনে রাজপদে অর্থাৎ রাবণের পায়ের কাছে দিতে চেয়েছেন।
৭. "নাহি চাহে প্রাণ মম”- বক্তার প্রাণ কী চায় না?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' পদ্যাংশে আমরা দেখি, প্রাণঘাতী যুদ্ধে বারবার মেঘনাদকে পাঠাতে লঙ্কেশ্বর রাবণের প্রাণ চায় না।
৮. "বিধি বাম মম প্রতি।”-বিধি কার প্রতি বাম?
উত্তর: 'অভিষেক' কাব্যাংশে রাবণের কথানুযায়ী বিধি তাঁর প্রতি বিরূপ।
৯. "কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে,”- কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে রামচন্দ্রের মৃত্যুর পরে পুনর্জীবন লাভ প্রসঙ্গে এ ধরণের অবাস্তব কথা বলা হয়েছে।
১০. "উত্তরিলা বীরদর্পে অসুরারি-রিপু,-"-
অসুরারি-রিপু' কে?
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। এখানে 'অসুরারি-রিপু' বলতে অসুরদের যারা শত্রু, তাদের শত্রু অর্থাৎ মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।
১১. "এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।"-এখানে কোন্ কলঙ্কের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে পুত্র ইন্দ্রজিৎ থাকতেও পিতা রাবণের যুদ্ধযাত্রাকেই বীরত্বের ক্ষেত্রে কলঙ্ক বলা হয়েছে।
১২. "হাসিবে মেঘবাহন;"-'মেঘবাহন' কে?
উত্তর: 'মেঘবাহন' হলেন দেবরাজ ইন্দ্র। উল্লেখ্য যে, দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন মেঘ, তাই তাঁকে 'মেঘবাহন' বলা হয়।
১৩. "হাসিবে মেঘবাহন;"-'মেঘবাহন'-এর হাসার কারণটি কী?
উত্তর: ইন্দ্রজিৎ জীবিত থাকতেও রাবণ যুদ্ধযাত্রা করলে তা 'মেঘবাহন' অর্থাৎ ইন্দ্রের হাসির কারণ হবে।
১৪. "আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে;"-এখানে কোন্ আদেশের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতিতে রামচন্দ্রকে বধ করার
জন্য রাবণের আদেশের কথা বলা হয়েছে।
১৫. "দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে!"-কার বাঁচার
কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসুদন দত্তের 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। এখানে রামচন্দ্রের বাঁচার অর্থাৎ রক্ষা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
১৬. "সিন্ধু-তীরে/ভূপতিত,”-এখানে কীসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে সিন্ধুতীরে কুম্ভকর্ণের দেহ পড়ে থাকার কথা বলা হয়েছে।
১৭. সিন্ধুতীরে কুম্ভকর্ণের দেহের পড়ে থাকাকে কীসের সঙ্গে
তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত 'অভিষেক' পদ্যাংশে সিন্ধুতীরে কুম্ভকর্ণের দেহের পড়ে থাকাকে বজ্রাঘাতে পড়ে থাকা গিরিশৃঙ্খ কিংবা তরুর পড়ে থাকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
১৮. "আগে পূজ ইষ্টদেবে,-"-কেন ইষ্টদেবতাকে পুজো করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: রামের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করতে চাইলে মেঘনাদের উচিত সবার আগে ইষ্টদেবতা অগ্নির পুজো করে তাঁর আশীর্বাদ নেওয়া-এ কথাই বলেছেন রাবণ।
১৯. "নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর,”-'নিকুম্ভিলা যজ্ঞ' কী?
উত্তর: রাক্ষসবংশের কুলদেবতার পূজাস্থান হল নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার। এখানে মেঘনাদকে ইষ্টদেবতা অগ্নির পুজোর যজ্ঞ করতে বলা হয়েছে।
২০. "সেনাপতি-পদে আমি বরিণু তোমারে।"-কে কাকে সেনাপতি পদে বরণ করেছিলেন?
উত্তর: লঙ্কার অধিপতি রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে বরণ করেছিলেন।
২১. "দেখ, অস্তাচলগামী দিননাথ এবে;"-এই উল্লেখের কারণ কী?
উত্তর: সূর্যের অস্ত যাওয়ার উল্লেখ করে রাবণ বোঝাতে চেয়েছিলেন যে দিনের সমাপ্তি ঘটেছে। পরদিন সকাল হলেই ইন্দ্রজিৎ যেন রাঘবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যায়।
২২. "প্রভাতে যুঝিও, বৎস,”-প্রভাতে যুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: ইন্দ্রজিৎ যখন যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। রাতের বেলা যুদ্ধ করে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে রাবণ তাঁকে প্রভাতে যুদ্ধে যেতে বলেছেন।
২৩. "অভিষেক করিলা কুমারে।"-কে, কার অভিষেক করলেন?
উত্তর: উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' পদ্যাংশ থেকে গৃহীত। লঙ্কার রাজা রাবণ বীরশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতিপদে অভিষিক্ত করলেন।
২৪. সেনাপতিপদে ইন্দ্রজিতের অভিষেক হয়েছিল কীভাবে?
উত্তর: গঙ্গাজল ছিটিয়ে সেনাপতিপদে ইন্দ্রজিতের অভিষেক হয়েছিল।
Long Question Answer
১ "সাজিছে রাবণ রাজা,"-রাবণের এই যুদ্ধসজ্জার বর্ণনা দাও। [রামকৃয় বিবেকানন্দ মিশন;
উত্তর: পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে শোক কাটিয়ে রাবণ যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি এবং প্রতিশোধের প্রতিজ্ঞা নেন। যুদ্ধের সূচনা বোঝাতে বাজনা বেজে ওঠে। সেই সঙ্গে হাতিরা গর্জন করে, অশ্বেরা হ্রেষাধ্বনি করে, পদাতিক, রথী ইত্যাদি রাবণের সেনাবাহিনীও যুদ্ধের উত্তেজনায় হুংকারধ্বনি করে। রেশমবস্ত্রের রাজপতাকা আকাশে উড়তে থাকে, তার সঙ্গে দীপ্তি ছড়ায় স্বর্ণবর্মের আভা। সব মিলিয়ে রাবণের যুদ্ধসজ্জার কারণে চারিদিকে এক বীরভাবের পরিবেশ তৈরি হয়।
২. "নাদিলা কর্তৃরদল হেরি বীরবরে/মহাগর্বে।"-কাদের 'কর্তৃরদল' বলা হয়েছে? বীরবরকে দেখে তাদের গর্বের কারণ কী?
উত্তর: লঙ্কার রাক্ষসবাহিনীকে 'কর্তৃরদল' বলা হয়েছে।
▶ পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে লঙ্কেশ্বর রাবণ যুদ্ধের সাজে সেজেছেন। তাঁর সৈন্যবাহিনীও যুদ্ধের উন্মাদনায় মেতে উঠেছে। সেই সময় সহোদর বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে ইন্দ্রজিৎ সেখানে আসেন। ইন্দ্রজিৎকে দেখে সৈন্যরা উল্লসিত হয়। কারণ ইন্দ্রজিতের রণকৌশল এবং বীরত্ব সম্পর্কে তারা অবহিত। স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রকে তিনি পরাজিত করেছেন। লঙ্কার শ্রেষ্ঠতম যোদ্ধা তিনি। তাই তাঁকে পেয়ে রাক্ষসবাহিনী ভরসা পেয়েছে এবং উৎসাহ ও গর্ববোধ করেছে।
৩. "এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!"-বক্তা কে? কোন্ মায়া সে বুঝতে পারছে না?
উত্তর: রামচন্দ্রের হাতে বীরবাহুর মৃত্যু-এই সংবাদ ইন্দ্রজিতের কাছে ছিল অবিশ্বাস্য। কারণ এর আগেই রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রামচন্দ্রকে বধ করেছেন। মৃত্যুর পরে রামচন্দ্রের এই পুনর্জীবন লাভ ইন্দ্রজিতের কাছে ছিল স্বাভাবিক বুদ্ধির অতীত। তিনি বুঝতে পেরেছেন, দৈব সাহায্য ছাড়া এই অসম্ভব ঘটনা সম্ভব নয়। এর মধ্যে সম্ভবত রামচন্দ্রের প্রতি মায়াদেবীর যে আশীর্বাদ রয়েছে, সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৪. "এ কাল সমরে,/নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা/ বারম্বার।"- 'কাল সমরে' বলতে বক্তা কী বুঝিয়েছেন? সেখানে ইন্দ্রজিৎকে পাঠাতে বক্তা দ্বিধাগ্রস্ত কেন?
উত্তর: 'কাল সমরে' বলতে প্রাণঘাতী ভয়ংকর যুদ্ধকে বোঝানো হয়েছে, যে যুদ্ধে ইন্দ্রজিতের প্রতিপক্ষ রামচন্দ্র।বীরবাহুর মৃত্যুর পরে ইন্দ্রজিৎই ছিলেন 'রাক্ষস-কুল-ভরসা'। তাঁকে বাদ দিলে লঙ্কা একেবারেই বীরশূন্য। তা ছাড়া বিধিও রাবণের প্রতি বিরূপ। তা না হলে মৃত্যুর পরেও রামচন্দ্র পুনর্জীবন লাভ করতে পারেন না। তাই লঙ্কেশ্বর রাবণ চারদিকের এই প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁর একমাত্র জীবিত পুত্র ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠাতে দ্বিধাবোধ করছিলেন।
৫ "হায়, বিধি বাম মম প্রতি।"-বক্তা কে? তিনি এমন কথা বলেছেন কেন?
উত্তর: আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটির বক্তা লঙ্কারাজ রাবণ।
▶ ভাই বীরবাহুর
মৃত্যুসংবাদে বিচলিত ইন্দ্রজিৎ রাবণের কাছে আসেন এবং রামচন্দ্রকে 'সমূলে নির্মূল' করার জন্য অনুমতি চান। পুত্রশোকে কাতর রাবণ
নতুন করে পুত্রশোকের সামনে দাঁড়াতে চান না বলেই এ বিষয়ে
নিজের অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। "এ কাল সমরে, নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা/ বারম্বার।” ইন্দ্রজিতের
সঙ্গে যুদ্ধে নিহত রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভ তাঁকে হতাশ করে। সব কিছুর মধ্যে তিনি
নিয়তির বিরূপতাকেই লক্ষ করেন।
৬. "কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে"-বক্তা কে? তার এ কথা বলার কারণ কী?
▶ ইন্দ্রজিৎ পিতা রাবণের কাছে সহোদর বীরবাহু হত্যার প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি প্রার্থনা করলে রাবণ উল্লিখিত মন্তব্যটি করেন। মৃত রামচন্দ্র যেভাবে পুনর্জীবিত হয়ে বীরবাহুকে হত্যা করেছেন তা বাস্তবে একটি অসম্ভব ঘটনা। বিষয়টির অবাস্তবতাকে বোঝানোর জন্যই রাবণ শিলা জলে ভাসার মতো অসম্ভব ঘটনাটিকে তুলনা হিসেবে এনেছেন।
৭. "...এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।”-বক্তার এই মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: লঙ্কার রাজপুরীতে রামচন্দ্রের আক্রমণ এবং বীরবাহুর মৃত্যু
ইত্যাদি ঘটনায় রাক্ষস রাজবংশের মর্যাদার হানি হয়েছে বলে ইন্দ্রজিৎ মনে করেছেন। তিনি নিজে রামচন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব নিতে চান। আগে দু-বার যে রামচন্দ্রকে তিনি পরাজিত করেছেন, তাঁকে তৃতীয়বারের মতো পরাজিত করার জন্য ইন্দ্রজিৎ রাবণের অনুমতি চান। নিয়তির বিরূপতার কথা বলে রাবণ দ্বিধা দেখালে ইন্দ্রজিৎ বলেন যে তিনি জীবিত থাকতে পিতা রাবণ যদি যুদ্ধে যান তা লঙ্কার কলঙ্ক রচনা করবে এবং পৃথিবীতে তা প্রচারিত হবে।
৮. "হাসিবে মেঘবাহন।"- মেঘবাহন কে? সে হাসবে কেন?
▶ ইন্দ্রজিৎ একবার যুদ্ধে ইন্দ্রকে পরাজিত করেছিলেন। সেই ইন্দ্রজিৎ বেঁচে থাকতে বীরবাহুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে রাবণ যদি যুদ্ধে যান তবে তা ইন্দ্রজিতের ভীরুতাকেই প্রতিষ্ঠিত করবে। রাবণ একের পর এক প্রিয়জনকে হারানোর কারণে ভীত হয়ে ইন্দ্রজিৎ-কে যুদ্ধে আর পাঠাতে চান না। অন্যদিকে ইন্দ্রজিৎ মনে করেন যে তিনি থাকা সত্ত্বেও পিতা রাবণ যুদ্ধে গেলে তাঁর কাপুরুষতাই প্রতিষ্ঠা পাবে। আর সে জন্যই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দ্র ব্যঙ্গের হাসি হাসবে।
৯. "দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে!"-'এবার' শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী? বক্তার এমন আত্মবিশ্বাসের কারণই বা কী?
▶ দ্বিতীয়বার যুদ্ধে ইন্দ্রজিৎ মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করে রামচন্দ্রকে বধ করেন। কিন্তু মায়াবলে রামচন্দ্র মৃত্যুর পরও বেঁচে উঠেছেন। ইন্দ্রজিৎ এ কথা জানেন তবুও তৃতীয়বারেও তিনি রামচন্দ্রকে বধ করবেন বলে বদ্ধপরিকর। তবুও রাবণ তাঁকে যুদ্ধে পাঠাতে দ্বিধা করেছেন। পুত্রশোকে কাতর পিতার দুর্বল মনে সাহসের সঞ্চার করতেই ইন্দ্রজিৎ নিজের আত্মবিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন।
১০ "তায় আমি জাগানু অকালে/ভয়ে;"-কে, কাকে জাগিয়েছিলেন? তাঁকে কেন জাগিয়ে তোলা হয়েছিল?
উত্তর: লঙ্কার রাজা রাবণ তাঁর মধ্যম ভ্রাতা কুম্ভকর্ণকে জাগিয়েছিলেন।
▶ ব্রহ্মার বরে কুম্ভকর্ণ ছ-মাস ঘুমোনোর পর একদিন জাগতেন এবং ওই দিন প্রচুর পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করতেন। কুম্ভকর্ণ ছিলেন খুবই শক্তিশালী। মেঘনাদবধ কাব্য-এ তাঁকে 'শূলিশম্ভুনিভ' বলা হয়েছে। রামের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার প্রয়োজনে রাবণ অনুচর পাঠিয়ে কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙান। প্রবল প্রতিপক্ষকে ভয় পাওয়ার কারণেই কুম্ভকর্ণকে জাগানোর প্রয়োজন হয়েছিল।
১১ "আগে পূজ ইষ্টদেবে,-"- 'ইষ্টদেব' কে? তাঁকে পুজো করার কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: ইন্দ্রজিতের ইষ্টদেব হলেন বিভাবসু বা অগ্নিদেব।
▶ ইন্দ্রজিৎ ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন যে, অগ্নির উপাসনা সমাপ্ত করে যুদ্ধযাত্রা করলে তিনি অজেয় থাকবেন। তাই রাবণ মনে করেন ইষ্টদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারলে যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হবে। ভ্রাতৃহত্যার
প্রতিশোধ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মেঘনাদ যখন যুদ্ধে যাবেনই, তখন ইষ্টদেবের পুজো করা খুবই প্রয়োজনীয়। রাবণ বিশ্বাস করেন, এর ফলে ইন্দ্রজিতের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না।
১২ "এতেক কহিয়া রাজা, যথাবিধি লয়ে/গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে।”-রাজা ও 'কুমার' বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? রাজা অভিষেকের আগে কুমারকে কী আদেশ দিয়েছিলেন?
উত্তর: উল্লিখিত অংশে 'রাজা' বলতে লঙ্কাধিপতি রাবণ এবং 'কুমার' বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
▶ রাবণ গঙ্গাজলের সাহায্যে ইন্দ্রজিতের অভিষেকের আগে তাকে সেনাপতি পদে বরণের ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই সঙ্গে নির্দেশ দেন যুদ্ধযাত্রার আগে ইন্দ্রজিৎ যেন ইষ্টদেবতা অগ্নির পুজো করেন এবং নিকুন্তিলা যজ্ঞ সমাপ্ত করেন। তারপরে প্রভাতে সূর্যোদয় ঘটলে ইন্দ্রজিৎ যেন যুদ্ধযাত্রা করেন। পুত্র ইন্দ্রজিৎকে অভিষেকের আগে রাবণ এই আদেশই দিয়েছিলেন।
১৩ "নমি পুত্র পিতার চরণে,/করজোড়ে কহিলা;-"-পুত্র কে? তিনি পিতার চরণে প্রণাম করে কী বলেছিলেন? পিতা কী প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন?
উত্তর: 'অভিষেক' কাব্যাংশের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে 'পুত্র' বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
▶ প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে উত্তেজিত ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন ত্যাগ করে পিতা রাবণের কাছে পৌঁছন। শোকগ্রস্ত রাবণ তখন যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পিতার চরণে প্রণাম করে ইন্দ্রজিৎ প্রথমেই মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভের বিষয়টি জানতে চান। রামচন্দ্রের এই মায়া যে তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি তা-ও তিনি বলেন। তারপরেই তিনি রামচন্দ্রকে সমূলে নির্মূল করার জন্য পিতার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তীব্র ক্রোধে বলেন যে শরানলে রামচন্দ্রকে ভস্ম করে বায়ু-অস্ত্রে তাঁকে উড়িয়ে দেবেন, অথবা বেঁধে এনে রাজপদে উপহার দেবেন। এইভাবে তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা আর বীরের মতো মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে ইন্দ্রজিতের উচ্চারণে।
▶ ইন্দ্রজিতের শিরঃচুম্বন করে রাবণ তাঁকে 'রাক্ষসকুল-শেখর' এবং 'রাক্ষসকুল-ভরসা' বলে উল্লেখ করেন এবং তারপরে গভীর বিষাদের সঙ্গে জানান যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে তাঁকে বারবার পাঠাতে রাবণের ভয় হয়। নিয়তি তাঁর প্রতি নিষ্ঠুর। তা না হলে মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভ ঘটত না। শিলা জলে ভাসার মতোই এ অসম্ভব কাজ। এইভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাবণের উচ্চারণে অসহায়তা এবং পিতার স্নেহকাতরতাই যেন লক্ষ করা যায়।
14. "নমি পুত্র পিতার চরণে, করজোড় কহিলা;”-পিতা ও পুত্রের পরিচয় দাও। পাঠ্যাংশ অবলম্বনে পিতা ও পুত্রের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে 'পিতা' হলেন রাবণ এবং 'পুত্র' হলেন তাঁর পুত্র ইন্দ্রজিৎ।
▶ প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে উত্তেজিত ইন্দ্রজিৎ প্রমোদকানন ত্যাগ করে পিতা রাবণের কাছে পৌঁছন। শোকগ্রস্ত রাবণ তখন যুদ্ধসজ্জার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পিতার চরণে প্রণাম করে ইন্দ্রজিৎ প্রথমেই মৃত রামচন্দ্রের
| পুনর্জীবনলাভের বিষয়টি জানতে চান। রামচন্দ্রের এই মায়া যে
তাঁর পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি তা-ও তিনি বলেন। তারপরেই তিনি রামচন্দ্রকে সমূলে
নির্মূল করার জন্য পিতার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তীব্র ক্রোধে বলেন যে শরানলে
রামচন্দ্রকে ভস্ম করে বায়ু-অস্ত্রে তাঁকে উড়িয়ে দেবেন, অথবা বেঁধে এনে রাজপদে উপহার দেবেন। এইভাবে তীব্র
প্রতিশোধস্পৃহা আর বীরের মতো মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে ইন্দ্রজিতের উচ্চারণে।
▶ইন্দ্রজিতের শিরঃচুম্বন করে রাবণ তাঁকে 'রাক্ষসকুল-শেখর' এবং 'রাক্ষসকুল-ভরসা' বলে উল্লেখ করেন এবং তারপরে গভীর বিষাদের সঙ্গে জানান যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে তাঁকে বারবার পাঠাতে রাবণের ভয় হয়। নিয়তি তাঁর প্রতি নিষ্ঠুর। তা না হলে মৃত রামচন্দ্রের পুনর্জীবনলাভ ঘটত না। শিলা জলে ভাসার মতোই এ অসম্ভব কাজ। এইভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রাবণের উচ্চারণে অসহায়তা এবং পিতার স্নেহকাতরতাই যেন লক্ষ করা যায়।
15 "আলিঙ্গি কুমারে, চুম্বি শিরঃ, মৃদুস্বরে/উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ- লঙ্কাপতি;”-কে কাকে আলিঙ্গন করেছে? আলিঙ্গন করে বক্তা যা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে রাবণ ইন্দ্রজিৎকে আলিঙ্গন করেছেন।
▶ সহোদর বীরবাহুর মৃত্যুর পরে রামচন্দ্রের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য ইন্দ্রজিৎ এসেছিলেন পিতার অনুমতি নিতে। যুদ্ধ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রাবণ প্রিয় পুত্রকে আলিঙ্গন করেন। রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎকে 'রাক্ষস-কুল-শেখর' ও 'রাক্ষস-কুল-ভরসা' বলে উল্লেখ করে বলেন যে, সেই ভয়ংকর যুদ্ধে প্রিয় পুত্রকে পাঠাতে তাঁর প্রাণ চায় না। কারণ, নিয়তি তাঁর প্রতি বিরূপ, "হায়, বিধি বাম মম প্রতি”। এই বিরূপতার দৃষ্টান্ত হিসেবে রাবণ বলেন যে, শিলা যেমন জলে ভাসা অসম্ভব সেরকমই মরে গিয়ে পুনর্জীবন লাভের ঘটনাও একটি অসম্ভব বিষয়। এখানে রাবণ ইন্দ্রজিতের দ্বারা নিহত রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভ করে বীরবাহুকে হত্যার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। নিয়তির ভূমিকা ছাড়া যে এরকম অসম্ভব বিষয় হওয়া সম্ভব নয় এটাই রাবণের বলার দ্দেশ্য ছিল। আর এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রিয় পুত্রকে যুদ্ধে পাঠাতে রাবণের ইচ্ছা ছিল না। পুত্র-স্নেহে আকুল একজন পিতার মানসিকতাই এখানে রাবণের মন্তব্যে প্রকাশিত হয়েছে।
16 "হায়, বিধি বাম মম প্রতি।"-কখন বক্তা এ কথা বলেছেন? বক্তার এ কথা বলার কারণ কী? ৩+২
অথবা,
"হায় বিধি বাম মম প্রতি”-বক্তা কে? তার এরূপ বক্তব্যের কারণ কী?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যর প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত 'অভিষেক' কাব্যাংশে রাক্ষসরাজ রাবণ আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন। বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে শোকে কাতর রাবণ রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতি নেন। সেজে ওঠে তাঁর চতুরঙ্গ বাহিনী। এই সময় সেখানে এসে উপস্থিত হন পুত্র ইন্দ্রজিৎ। রামচন্দ্রকে 'সমূলে নির্মূল' করার জন্য তিনি পিতা রাবণের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন- "ঘোর শরানলে/করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে; /নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে।” পুত্রকে আলিঙ্গন করে রাবণ জানান যে, সেই 'কাল-সমরে'ইন্দ্রজিৎকে পাঠাতে তাঁর মন সায় দেয় না। এই সময়েই রাক্ষসরাজ তাঁর প্রতি নিয়তির নিষ্ঠুরতার প্রসঙ্গে আলোচ্য উক্তিটি করেন।
▶নিয়তির নিষ্ঠুরতাকে রাবণ তাঁর জীবনে বারবার উপলব্ধি করেছেন। কুম্ভকর্ণের মৃত্যু ছিল একটি আঘাত। একইভাবে বীরবাহুর মৃত্যুতে রাবণের প্রতি নিয়তির বিরূপতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মেঘনাদের হাতে যুদ্ধে নিহত হওয়ার পরেও যেভাবে রামচন্দ্র পুনর্জীবন লাভ করেছে ও বীরবাহুকে যুদ্ধে হত্যা করেছে তা রাবণকে বিস্মিত ও হতাশ করে তুলেছে।- “কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে,/কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে?" এ কথা বলার সময়ে মহাবীর রাবণকে যথেষ্ট হতাশ মনে হয়েছে।
17. "তারে ডরাও আপনি,"-কে, কাকে ভয় পান? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির ভয় পাওয়ার কারণ কী? বক্তা কীভাবে সেই ভয় দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন?
▶ রামচন্দ্র মায়াবী।
দেবতারা তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করে চলেছেন। তাই নিশা-রণে মারা গিয়েও রামচন্দ্র
পুনরায় বেঁচে উঠেছেন। স্বয়ং বিধাতাই রাবণের প্রতি বিরূপ। রামচন্দ্র সামান্য মানুষ
হলেও তাই তাকে তিনি ভয় পান। রাক্ষসকুলের ভরসা প্রিয়পুত্র ইন্দ্রজিৎকে তাই যুদ্ধে
পাঠাতে তাঁর মন শঙ্কিত হয়ে থাকে-'এ কাল সমরে,/নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা/বারংবার।'
18. "আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে;"-বক্তা কার কাছে, কোন্ আজ্ঞা প্রার্থনা করেছেন? এমন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কোন্ দিক ধরা পড়েছে লেখো।
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত 'অভিষেক' কাব্যাংশের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে 'রাক্ষস-কুল-ভরসা' ইন্দ্রজিৎ পিতা রাবণের কাছে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি প্রার্থনা করেছেন।
▶ অন্যায় যুদ্ধে মেঘনাদের অনুজ বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে। রামচন্দ্র তাকে ছলনার মাধ্যমে হত্যা করেছে।
এরপরই তাঁর মধ্যে বীরসত্তা জেগে ওঠে। পিতা রাবণের কাছে এই
বলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন- “সমূলে নির্মূল করিব পামরে আজি।" এর জন্য
ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতিও নিয়েছেন। পিতার যাবতীয় ভয় ও শঙ্কা দূর করে তিনি
বলেছেন- "আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে।" পিতার কাছে আজ্ঞা চাওয়ার মধ্যে দিয়ে
ইন্দ্রজিতের বীরভাবের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। স্বদেশ ও স্বজনের গৌরব রক্ষায় তিনি
শত্রুকে বধ করবেনই। এই ভাবনায় ইন্দ্রজিতের প্রতিশোধস্পৃহারই প্রকাশ ঘটেছে। নিজের
যুদ্ধবিদ্যায় দক্ষতার ওপর ইন্দ্রজিতের অগাধ বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের প্রতিফলনই
এখানে দেখতে পাওয়া যায়।
19 "আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে;"-কোন্ আদেশের কথা বলা হয়েছে? 'আর একবার' কথাটির তাৎপর্য কী? কোন্ আদেশ সে লাভ করেছিল?
উত্তর: পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পরে রাক্ষসরাজ রাবণ নিয়তির বিরূপতায় হতাশ হয়ে পড়েন। তখন ইন্দ্রজিৎ রাবণকে তুচ্ছ মানব রামচন্দ্রকে ভয় না পেতে বলেন। একই সঙ্গে নিজে লঙ্কার সেনাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে চান। ইন্দ্রজিতের কথায়, তিনি থাকতে রাবণ যদি যুদ্ধক্ষেত্রে যান তাহলে তা লঙ্কার কলঙ্ক বলে সমগ্র জগতে প্রচারিত হবে। তখনই ইন্দ্রজিৎ পিতার কাছে আরও একবার রামচন্দ্রকে পরাজিত করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন।
▶ 'আর একবার' কথাটির দ্বারা ইন্দ্রজিৎ বোঝাতে চেয়েছেন যে এর আগেও তিনি রামচন্দ্রকে ভয়ংকর যুদ্ধে দু-বার পরাজিত করেছেন। একবার রাত্রিকালীন যুদ্ধে তিনি রাম-লক্ষণকে নাগপাশে বেঁধে ফেলেন (যদিও কাব্যাংশে শরবিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে), দ্বিতীয়বারে মেঘনাদ মেঘের আড়াল থেকে লড়াই করে রাম-লক্ষণকে এতটাই বিপর্যস্ত করেন যে মৃতের মতো পড়ে থেকে তাঁরা নিজেদের রক্ষা করেন।
▶ রাবণ বলেছিলেন যে, যদি ইন্দ্রজিত যুদ্ধে যাবেন বলে একান্তই স্থির করেন, তাহলে আগে যেন তিনি ইষ্টদেবতা অগ্নিকে পুজো করে নিকুন্তিলা যজ্ঞগৃহে যজ্ঞ সমাপ্ত করেন এবং পরদিন প্রভাতে যুদ্ধক্ষেত্রে যান।
20. "অভিষেক করিলা কুমারে।"-'কুমার' কে? তাঁর অভিষেক কে করালেন? অভিষেকের কারণ কী?
উত্তর: 'অভিষেক' কাব্যাংশে 'কুমার' বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
▶ তাঁর অভিষেক করিয়েছিলেন পিতা রাবণ।
▶ রামচন্দ্র অন্যায়
যুদ্ধে বীরবাহুকে হত্যা করলে রাবণ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। ছোটো ভাইয়ের মৃত্যসংবাদ
ও পিতার যুদ্ধে যাত্রার প্রস্তুতির কথা জানতে পারেন ইন্দ্রজিৎ। তিনি তখনই যুদ্ধে
যাবেন বলে প্রয়োজনীয় সাজসজ্জা করে নেন। এই উদ্দেশ্যসাধনে পিতার অনুমতি চাইতে
ইন্দ্রজিৎ রাবণের রাজসভায় উপস্থিত হয়ে জানান- "অনুমতি দেহ; সমূলে নির্মূল/করিব পামরে আজি!
دو রাবণ বিধির
বিরূপতার কথা বলেন এবং বারবার ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠানোর বিষয়ে নিজের অনিচ্ছার
কথা বলেন। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পুত্র থাকতে পিতা যুদ্ধযাত্রা করলে
যে লঙ্কার কলঙ্কের শেষ থাকবে না সে কথাও রাবণকে ইন্দ্রজিৎ বোঝাতে চেষ্টা করেন।
কুম্ভকর্ণের মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলে রাবণ নিজের দুর্ভাগ্যের কথা বলেন, কিন্তু তারপরেও ইন্দ্রজিতের ইচ্ছাকে তিনি মর্যাদা দেন। তিনি
তাঁকে গঙ্গাজল দিয়ে নিয়মমতো অভিষেক করান এবং নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে যজ্ঞ করে পরদিন
সকালে যুদ্ধযাত্রা করতে বলেন।
21 "অভিষেক করিলা কুমারে"-'কুমার' কে? পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে কুমারের চরিত্র আলোচনা করো।
উত্তর: 'অভিষেক' কাব্যাংশের উল্লিখিত অংশে 'কুমার' বলতে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎকে বোঝানো হয়েছে।
▶ মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' কাব্যাংশের প্রধান চরিত্র ইন্দ্রজিৎ। তাকে আশ্রয় করেই কাহিনির বিকাশ। সেখানে ইন্দ্রজিতের বেশ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়-
ছদ্মবেশী দেবী লক্ষ্মীর কাছে লঙ্কার সর্বনাশ এবং বীরবাহুর মৃত্যুর খবর শুনে ইন্দ্রজিৎ বলে উঠেছিলেন, "ঘুচাব ও অপবাদ, বধি রিপুকুলে।” দু-দুবার রামচন্দ্রকে যুদ্ধে হারিয়েছেন ইন্দ্রজিৎ। তৃতীয় বারও পরাজিত করতে আত্মবিশ্বাসী ইন্দ্রজিৎ রাবণকে বলেছেন- “সমূলে নির্মূল করিব পামরে আজি।”
ইন্দ্রজিৎ শুধু পিতৃভক্তই নন, নিজের কর্তব্য সম্পর্কেও তিনি অত্যন্ত সচেতন। তাই তিনি বলেন-“থাকিতে দাস, যদি যাও রণে/তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।” ইন্দ্রজিৎ স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি একনিষ্ঠ। তাই তিনি বলে ওঠেন-“হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা...।" লঙ্কার দুর্দশা এবং বীরবাহুর মৃত্যুর পরে তিনি নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন- “হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে/স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে?” এই আত্মসমালোচনা চরিত্রটিকে মহান করে তুলেছে। প্রমীলার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের দাম্পত্য সম্পর্কটিও ছিল অত্যন্ত মধুর। প্রমীলা ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে ছাড়তে না চাইলে ইন্দ্রজিৎ বলেছেন যে তাঁকে প্রমীলার ভালোবাসার দৃঢ়বন্ধন থেকে আলাদা করার ক্ষমতা কারোরই নেই।
মধুসূদনের কাছে ইন্দ্রজিৎ ছিলেন 'favourite
Indrajit'। সেই পক্ষপাত এবং সহানুভূতিই এখানে ইন্দ্রজিৎ চরিত্রে দেখা
যায়।
22. 'অভিষেক' কাব্যাংশে ইন্দ্রজিতের চরিত্রবৈশিষ্ট্য যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা আলোচনা করো।
উত্তর: চরিত্র বৈশিষ্ট্য: মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'অভিষেক' কাব্যাংশের প্রধান চরিত্র ইন্দ্রজিৎ। তাকে আশ্রয় করেই কাহিনির বিকাশ। সেখানে ইন্দ্রজিতের বেশ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়-
কর্তব্য সচেতনতা: ইন্দ্রজিৎ শুধু পিতৃভক্তই নন, নিজের কর্তব্য সম্পর্কেও তিনি অত্যন্ত সচেতন। তাই তিনি বলেন-“থাকিতে দাস, যদি যাও রণে/তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।”
স্বদেশপ্রেম: ইন্দ্রজিৎ স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি একনিষ্ঠ। তাই তিনি বলে ওঠেন-“হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা ...।” আত্মমূল্যায়নের মানসিকতা: লঙ্কার দুর্দশা এবং বীরবাহুর মৃত্যুর পর তিনি নিজেকে ধিক্কার দিয়েছেন-“হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে/ স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে?” এই আত্মসমালোচনা চরিত্রটিকে মহান করে তুলেছে। পত্নীর প্রতি গভীর অনুরাগ: প্রমীলার সঙ্গে ইন্দ্রজিতের দাম্পত্য সম্পর্কটিও ছিল অত্যন্ত মধুর। প্রমীলা ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে ছাড়তে না চাইলে ইন্দ্রজিৎ বলেছেন যে তাঁকে প্রমীলার ভালোবাসার দৃঢ় বন্ধন থেকে আলাদা করার ক্ষমতা কারোরই নেই।
উপসংহাব: মধুসূদনের কাছে ইন্দ্রজিৎ ছিলেন 'favourite
Indrajit' \ সেই পক্ষপাত এবং সহানুভূতিই এখানে
ইন্দ্রজিৎ চরিত্রে দেখা যায়।
23 'অভিষেক' কাব্যাংশে যে বীরভাবের প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তর: কথামুখ: মেঘনাদবধ কাব্য-এর প্রথম সর্গের সূচনাতেই মধুসূদন
লিখেছিলেন- "গাইব, মা বীররসে ভাসি, মহাগীত।” 'অভিষেক' কাব্যাংশেও এই বীররসের প্রকাশই প্রধান হয়ে উঠেছে।
হয়ে উঠেছেন। চতুরঙ্গ সেনায় সজ্জিত হয়ে রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে
যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কুম্ভকর্ণের মৃত্যু, বীরবাহুর অকালমৃত্যু প্রতিটি ঘটনাতেই নিয়তির বিরূপতাকে তিনি
উপলব্ধি করেছেন। তবুও পিতৃহৃদয়ের শঙ্কাকে দূরে সরিয়ে রেখে ইন্দ্রজিতের ইচ্ছাকে
সম্মান জানিয়েছেন ও তাঁকেই সেনাপতি পদে তিনি বরণ করে নিয়েছেন।
24. 'অভিষেক' কাব্যাংশে কবির রচনারীতির দক্ষতা আলোচনা করো।
উত্তর: মহাকাব্যিক রচনারীতির দক্ষতা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত মেঘনাদবধ কাব্যর প্রথম সর্গ থেকে সংকলিত 'অভিষেক' নামক কাব্যাংশে কবি এক মহাকাব্যিক রচনারীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
শব্দের ব্যবহার: তৎসম এবং যুক্তব্যঞ্জন বহুল শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ভাষায় ধ্বনিময়তা সৃষ্টি কবির প্রিয় চর্চা ছিল। এখানে তার যথেষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যেমন-কুণ্ডল, তুরঙ্গম, কর্বুরদল ইত্যাদি।
শব্দগুচ্ছ প্রয়োগ: দুই বা ততোধিক শব্দকে যুক্ত করে ভাবপ্রকাশক শব্দগুচ্ছ তৈরি করাও মধুসূদনের আর একটি প্রিয় কৌশল, যেমন-কনক-আসন, রত্নাকর-রত্নোত্তমা, পতি-কর-যুগ ইত্যাদি। সন্ধিবদ্ধ ও সমাসবদ্ধ পদের ব্যবহার: সমগ্র কাব্যে সন্ধিবদ্ধ এবং সমাসবদ্ধ পদের অনায়াস ও স্বচ্ছন্দ ব্যবহার করেছেন কবি। অলংকার প্রয়োগ: অনুপ্রাস, উপমা, রূপক ইত্যাদি অলংকারের ব্যবহারেও কবির সহজাত দক্ষতা প্রকাশিত হয়েছে।- “শিঞ্জিনী আকর্ষি রোষে, টঙ্কারিলা ধনুঃ/বীরেন্দ্র, পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে/ভৈরবে।" অলংকারসৃষ্টির এই দক্ষতা নিঃসন্দেহে কাব্যসৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
ছন্দে নতুনত্ব: অমিত্রাক্ষর ছন্দের অন্ত্যমিলহীনতা ভাষাকে করে তুলেছে বীরভাব প্রকাশের উপযুক্ত।
শেষের কথা: সবমিলিয়ে ভাষা-ছন্দ-অলংকার এবং রসসৃষ্টির
দক্ষতায় 'অভিষেক' কাব্যাংশটি মধুসূদনের কবি প্রতিভার এক সার্থক প্রকাশ।
26. 'অভিষেক' কাব্যাংশ অবলম্বনে রাবণ চরিত্রটির পরিচয় দাও।
উত্তর: কথামুখ: 'অভিষেক' কাব্যাংশে মেঘনাদ প্রধান চরিত্র হলেও পার্শ্বচরিত্র হিসেবে রাবণের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
পিতৃসত্তা ও বাৎসল্য রস: রাবণের পিতৃসত্তা ও বাৎসল্য এখানে
সক্রিয়। ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধ থেকে বিরত করা যাবে না জেনে তিনি বলেছেন, “তবে যদি একান্ত সমরে/ইচ্ছা তব, বৎস,/পূজ
ইষ্টদেবে।" এই উপদেশ পুত্রের কল্যাণ কামনায় পিতার আত্মতুষ্টি ছাড়া আর কিছুই
নয়।
নিয়তি লাঞ্ছনা: রাবণ এখানে নিয়তিলাঞ্ছিত, ভাগ্যবিপর্যস্ত এক নায়ক। তাঁর উক্তিতেও তা ধরা পড়েছে- "হায়, বিধি বাম মম প্রতি।"কাব্যে কখনো- কখনো তাঁর শূন্যহৃদয়ের হাহাকারও ধ্বনিত হয়েছে। 'মায়ার মায়া' রাবণও বুঝতে অক্ষম। তাই তাঁকে বলতে শুনি- "কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে,/কে কবে শুনেছে, লোেক মরি পুনঃ বাঁচে?” শেষের কথা: সম্রাট ও পিতৃসত্তার টানাপোড়েনে রাবণ চরিত্রটি 'অভিষেক' কাব্যাংশে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
Paid
Answer Link (Membership U -
EDITING BY--Liza Mahanta