Lesson 8
সিরাজদ্দৌলা
-----------------
👉Paid Answer (For Membership User)
Very Short Question Answer
১.১ সুতরাং কলকাতা জয়ের ইতিহাস তুমি জান।
উত্তর: জয়ের সম্বন্ধপদ, 'এর' বিভক্তি।
ইতিহাস-কর্মকারক, 'শূন্য' বিভক্তি।
১.২ আমি জানিলাম না আমাদের অপরাধ।
উত্তর: আমাদের সম্বন্ধপদ, 'এর' বিভক্তি।
১.৩ শুধু শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় আমি এতদিন তোমাদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করে এসেছি।
উত্তর: আশঙ্কায়-করণকারক, 'য়' বিভক্তি। আমি-কর্তৃকারক, 'শূন্য' বিভক্তি।
১.৪ আপনিই পড়ুন, ওর হাতে দেবেন না।
উত্তর: ওর-সম্বন্ধপদ, 'র' বিভক্তি।
হাতে-অধিকরণকারক, 'এ' বিভক্তি।
১.৫ ভবিষ্যতে আর কখনো এদের ঘরে তুমি স্থান পাবে না।
উত্তর: ভবিষ্যতে-অধিকরণকারক, 'এ' বিভক্তি। তুমি-কর্মকারক, 'শূন্য' বিভক্তি।
১.৬ তোমাদের কাছে আমি লাঞ্ছিত।
উত্তর: তোমাদের-সম্বন্ধপদ, 'এর' বিভক্তি।
১.৭ আমার মন্ত্রীমণ্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতী নন।
উত্তর: মন্ত্রীমণ্ডলও-কর্তৃকারক, 'শূন্য' বিভক্তি।
১.৮ তখন যেন আমাকে ভুলো না বন্ধু।
উত্তর: বন্ধু-সম্বোধন পদ, 'শূন্য' বিভক্তি। ওয়াটস সাহেবকে ওরকম করে বিদায়
১.১০ ভাবা যখন উচিত ছিল, তখন যে কিছুই ভাবেননি জাঁহাপনা।
উত্তর: জাঁহাপনা-সম্বোধন পদ, 'শূন্য' বিভক্তি।
১.১১ তা হলে বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন।
উত্তর: সিংহাসনে-অধিকরণকারক, 'এ' বিভক্তি। নবাব-কর্তৃকারক, 'শূন্য' বিভক্তি।
১.১২ নবাবের কাজের সমালোচনাও সব সময়ে শোভন নয়।
উত্তর: নবাবের সম্বন্ধপদ, 'এর' বিভক্তি।
সব সময়ে-অধিকরণকারক, 'এ' বিভক্তি।
১.১৩ দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা।
উত্তর: আমরা-কর্তৃকারক, 'শূন্য' বিভক্তি।
১.১৪ বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।
উত্তর: দুর্দিনে-অধিকরণকারক, 'এ' বিভক্তি।
১.১৫ মোহের বশে, মানুষ অনেক সময় অনেক অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হয়।
উত্তর: মোহের-সম্বন্ধপদ, 'এর' বিভক্তি। বশে-করণকারক, 'এ' বিভক্তি।
১.১৬ বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা।
উত্তর: ভাগ্যাকাশে-অধিকরণকারক, 'এ' বিভক্তি।
১.১৭ জনাব, পলাশির কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছিলেন।
উত্তর: জনাব-সম্বোধন পদ, 'শূন্য' বিভক্তি। আমাকে-কর্মকারক, 'কে' বিভক্তি।
১.১৮ অন্তরে যে কথা দিনরাত গুমরে মরচে, তাই আজ ভাষায় প্রকাশ করচি।
উত্তর: অন্তরে-অধিকরণকারক, 'এ' বিভক্তি। ভাষায়-করণকারক, 'য়' বিভক্তি।
২.১ কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা।
উত্তর: অযোগ্য-অ (নয়) যোগ্য (নঞতৎপুরুষ)।
২.২ নবাবের উপর নির্ভর করা অসম্ভব।
উত্তর: অসম্ভব-অ (নয়) সম্ভব (নঞতৎপুরুষ)।
২.৩ আমি নির্বোধ, অত্যাচারী, বিলাস-সর্বস্ব।
উত্তর: নির্বোধ নেই বোধ যার (নঞবহুব্রীহি)। অত্যাচারী-অত্যাচার করে যে (উপপদ তৎপুরুষ)।
২.৪ এখন সে কথা নিরর্থক।
উত্তর: নিরর্থক-নেই অর্থ যার (নঞবহুব্রীহি)।
২.৫ কখনো কোনো কটূক্তির প্রতিবাদ করিনি।
উত্তর: কটূক্তির-কটু যে উক্তি (কর্মধারয়), তার।
২.৬ তা হলে বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন।
উত্তর: সিংহাসনে-সিংহ চিহ্নিত আসন (মধ্যপদলোপী কর্মধারয়), তাতে।
২.৭ সত্যাশ্রয়ী রাজা।
উত্তর: সত্যাশ্রয়ী-সত্যকে আশ্রয় করেন যিনি (উপপদ তৎপুরুষ)।
২.৮ সকলে মিলে আপনারাই কি আমার কম অপমান করেছেন।
উত্তর: অপমান-মানের অভাব (অব্যয়ীভাব)।
২.১ কী অনাচার আমি করেছি।
উত্তর: অনাচার-অন (নয়) আচার (নঞতৎপুরুষ)।
২.১০ আত্মরক্ষার শক্তিও তাঁর নেই।
উত্তর: আত্মরক্ষার-আত্মকে রক্ষা (কর্ম তৎপুরুষ), তার।
২.১১ নবাবের অনুগ্রহ!
উত্তর: অনুগ্রহ-গ্রহের পশ্চাৎ (অব্যয়ীভাব সমাস)।
২.১২ বাংলা অরাজক ছিল না।
উত্তর: অরাজক-নেই রাজা যেখানে (নঞবহুব্রীহি)।
২.১৩ আমি মুসলমান বলে আমার প্রতি আপনারা বিরূপ হবেন না।
উত্তর: বিরূপ-বি (বিশেষ) যে রূপ (উপসর্গ তৎপুরুষ)।
২.১৪ একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েচি।
উত্তর: দিশেহারা দিশে হারিয়েছে যে (উপপদ তৎপুরুষ)।
২.১৫ কোম্পানির ফৌজ কাশিমবাজার অভিমুখে অভিযান করেছে।
উত্তর: অভিমুখে-মুখের অনুকূলে (অব্যয়ীভাব), তাতে।
২.১৬ অকারণে অভাগাকে আর তিরস্কার করবেন না।
উত্তর: অকারণে-নেই কারণ (নঞতৎপুরুষ), তাতে। অভাগাকে-ভাগ্য নেই যার (নঞবহুব্রীহি), তাকে।
২.১৭ রাজনীতি কারণে।
উত্তর: রাজনীতি-রাজার নীতি (সম্বন্ধ তৎপুরুষ)।
২.১৮ ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত এই বাক্যজ্বালা আমি আর সইতে পারি না লুৎফা।
উত্তর: ঘরে-বাইরে-ঘরে এবং বাইরে (দ্বন্দ্ব)।
২.১৯ বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে।
উত্তর: আজীবন-জীবন পর্যন্ত (অব্যয়ীভাব)।
২.২০ ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন।
উত্তর: নিশ্বাসে-নির্গত যে শ্বাস (কর্মধারয়), তার দ্বারা।
৩.১ তোমাদের অপরাধ, সভ্যতার, শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে।
উত্তর: তোমরা যা অপরাধ করেছ তা সভ্যতার, শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে।
৩.২ আপনার অভিযোগ বুঝিতে পারিলাম না!
উত্তর: আপনার অভিযোগ বুঝিতে অপারগ হইলাম।
৩.৩ এই পত্র সম্বন্ধে তুমি কিছু জান?
উত্তর: এই পত্র সম্বন্ধে কিছু জানা থাকলে বলতে পারো।
৩.৪ তার সামান্য পরিচয় আজ দিয়ে রাখলাম।
উত্তর: তার সামান্য পরিচয় আজ না দিয়ে পারলাম না। (নির্দেশক বাক্যে)
৩.৫ জান এর শাস্তি কী?
উত্তর: এর শাস্তি কী তোমার তা জানা নেই।
৩.৬ তোমরা প্রতিকারের আশায় আমার কাছে উপস্থিত হয়েছ?
উত্তর: তোমরা কি প্রতিকারের আশা কর এবং তাই আমার কাছে উপস্থিত হয়েছ?
৩.৭ আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো।
উত্তর: আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা কি আমাকে ক্ষমা করতে পার না?
৩.৮ আমার মন্ত্রীমণ্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতী নন।
উত্তর: আমার মন্ত্রীমন্ডলও যুদ্ধের বিপক্ষে।
৩.৯ তোমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে।
উত্তর: আমার চিরদিনই যা মনে থাকবে তা হল তোমার কথা।
৩.১০ শ এখন সে কথা নিরর্থক।
উত্তর: এখন সে কথার কোনো অর্থ নেই।
৩.১১ নিজেদের কথা বলুন রাজা, নিজেদের কথা ভাবুন।
উত্তর: রাজা, নিজেদের কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কথাও ভাবুন।
৩.১২ আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করে আমাদের লাভ?
উত্তর: আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করে আমাদের কোনো লাভ নেই।
৩.১৩ আমরা কেউ মিথ্যা কলঙ্ক রটাইনি।
উত্তর: আমরা কেউ মিথ্যা কলঙ্ক রটিয়েছি কি?
৩.১৪ পাপ যে চাপা থাকে না, হোসেনকুলী প্রাণ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে।
উত্তর: হোসেনকুলী প্রাণ দিয়ে পাপ চাপা না থাকার কথা বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
৩.১৫ আজ পর্যন্ত কদিন তা ধারণ করেছেন, সিপাহসালার? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর: সিপাহসালারের আজ পর্যন্ত একদিনও তা ধারণ করা হয়নি।
Long Question Answer
1. "কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা!"-কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর রাজসভায় উপস্থিত ইংরে জদের প্রতিনিধি ওয়াটসের উদ্দেশে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।
▶ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নবাব সিরাজের মধ্যে স্বাক্ষরিত 'আলিনগরের সন্ধি' অনুযায়ী, ইংরেজরা কোনোমতেই নবাবের বিরুদ্ধে কোনোরকম যুদ্ধযাত্রা বা যুদ্ধের আয়োজন করবে না। কিন্তু, সিরাজের হাতে কলকাতার অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের একটি পত্র এসে পৌঁছোয়। এই পত্রের মাধ্যমে সিরাজ জানতে পারেন যে, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে তাঁর বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইতিমধ্যেই সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আরও সৈন্য ও নৌবহরের কথা ভাবছে। তিনি এও জানতে পারেন, বহুদিন আগে থেকেই স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধযাত্রার ছক কষেছিলেন এবং পরিকল্পনামাফিকই আলিনগরের সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করতে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন। সর্বোপরি, নবাবের রাজসভায় উপস্থিত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসও এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার। তাই ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ সিরাজ ওয়াটসকে প্রকাশ্য রাজসভায় এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।
2. "জান এর শাস্তি কী?"-কে, কেন এ কথা বলেছেন?
উত্তর: নবাব সিরাজদ্দৌলা মন্তব্যটি করেছেন।
▶ অ্যাডমিরাল ওয়াটসন কর্তৃক ওয়াটসকে লেখা একটি চিঠি কোনোভাবে নবাবের হাতে এলে তিনি বুঝতে পারেন, ওয়াটস বহুদিন ধরেই সিরাজবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশীদার। লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের উদ্যোগে ইংরেজরা বাংলায় সিরাজের বিরুদ্ধে সৈন্যদল পাঠাতে চলেছে। এই যুদ্ধে ওয়াটস যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে, তা-ও সিরাজ জানতে পারেন ওয়াটসের নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি থেকে। সেই চিঠিতে ওয়াটস সরাসরি অ্যাডমিরাল ওয়াটসনকে জানিয়েছেন, সিরাজের ওপরে ভরসা করা অসম্ভব এবং অর্থহীন। ফলে ফরাসি ঘাঁটি চন্দননগর আক্রমণ করাই হবে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া, সিরাজ ক্রমশ বুঝতে পেরেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর দরবারে জায়গা পেয়ে ওয়াটস তাঁর বিরুদ্ধে সভাসদদের উত্তেজিত করেছেন। ওয়াটসই কলকাতার ইংরেজদের উপদেশ দিয়েছেন নবাবের আদেশ লঙ্ঘন করতে। তাই সিরাজ ওয়াটসকে এর যথোচিত শাস্তি দিতে চেয়ে প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি করেছেন।
3. "আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো।”-কে, কেন এই মন্তব্য করেছেন? যাঁকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা তাঁর মধ্যে এই মন্তব্যের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
উত্তর: সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।
▶ ইংরেজরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর অধিকার করলে নবাবের সাহায্যের আশায় মঁসিয়ে লা সিরাজের রাজসভায় আসেন। সিরাজ ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও জানান যে, কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে তাঁর বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে। তাই তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলও আর নতুন যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। এই অবস্থায় ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও তাদের। সাহায্য করা অসম্ভব জানিয়ে সিরাজ মন্তব্যটি করেন।
▶ উদ্ধৃত মন্তব্যটির উত্তরে মঁসিয়ে লা বলেছিলেন যে, সিরাজের সমস্যার কথা বুঝতে পেরেছেন এবং নবাবের জন্য তিনি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। একইসঙ্গে নিজেদের অবস্থাও তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে। ভালোবাসার এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। একইসঙ্গে তিনি নবাবকে তাঁর ভাবী বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করে দেন। তিনি জানান, তাঁরা বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্তিমিত আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে, আর তাতেই নবাবের সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
4. "তোমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে।” কার কথা বলা হয়েছে? কেন তাঁর কথা মনে থাকবে?
উত্তর: 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে নবাব সিরাজের দরবারে উপস্থিত ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লার কথা বলা হয়েছে।
▶ ফরাসিদের প্রতি নবাব সিরাজের বিশেষ দুর্বলতা ছিল। মঁসিয়ে লা-র কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে সিরাজ তা স্বীকারও করেছেন। ফরাসিদের সঙ্গে বাংলা দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা তিনি স্মরণ করেছেন। তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, ফরাসিরা কখনোই নবাবের সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করেননি। ইংরেজরা চন্দননগর দখল করে নেওয়ার পরে ফরাসিরা নবাবের কাছে নিরাপত্তা চাইলেও অসহায় নবাব তাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু এরজন্যে নবাবের মনে গ্লানি তৈরি হয়। মঁসিয়ে লার কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাও করেন। মঁসিয়ে লা-ও এই বন্ধুত্বের খাতিরেই এ-দেশ ছেড়ে তাঁদের চলে যাওয়া অনিবার্য জানিয়ে নবাবকে তাঁর বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দেন। সিরাজ এর মধ্যে মঁসিয়ে লা-র 'অন্তরের প্রীতি'র পরিচয় দেখতে পান। তাই চিরবিচ্ছেদের মুহূর্তে দাঁড়িয়েও, ফরাসিদের প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা- কে সিরাজ জানিয়েছেন যে, তাঁর কথা নবাবের চিরকাল মনে থাকবে।
5."I know we shall never meet"-কে, কাকে এ কথা বলেছেন? এই বক্তব্যের পূর্বপ্রসঙ্গ কী ছিল?
উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা বাংলার নবাব
সিরাজদ্দৌলার উদ্দেশে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিলেন।
▶ইংরেজরা বাংলায় ফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন শুরু করলে ফরাসিদের পক্ষে তা ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ, এর আগে ফরাসিরা ইংরেজ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দুর্গনির্মাণের চেষ্টা করলে নবাবই তাতে আপত্তি জানান। নবাবের আদেশ ফরাসিরা শিরোধার্য করলেও ইংরেজরা তা মানেনি। তারা ফরাসিদের চন্দননগর কুঠি অধিকার করে নেয় এবং সমস্ত বাণিজ্যকুঠির অধিকার দাবি করে। বিপন্ন ফরাসিদের পক্ষ থেকে মঁসিয়ে লা সামরিক সাহায্যের আশায় নবাবের কাছে আসেন। কিন্তু সিরাজের পক্ষে সেই মুহূর্তে এই প্রত্যাশা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, কলকাতা জয়ে এবং পূর্ণিয়ার যুদ্ধে তাঁর লোকবল ও অর্থবল যথেষ্ট কমে যায়। ফলে নবাবের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে ফরাসিদের বাংলা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই বিদায়গ্রহণের মুহূর্তে ব্যথিত মঁসিয়ে লা এ কথা বলেন।
6. "এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো।”- বক্তা কাকে, কেন দরবার ত্যাগ করার আদেশ দিয়েছিলেন?
অথবা, “এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো।”-বক্তা কাকে দরবার ত্যাগ করতে বলেছেন? তাকে দরবার ত্যাগ করতে বলার কারণ কী?
উত্তর: সিরাজদ্দৌলা তাঁর দরবারে উপস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির
প্রতিনিধি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নে উদ্ধৃত আদেশটি দিয়েছিলেন।
▶ একাধিক ঘটনায় ইংরেজদের অপরাধ যে সভ্যতা এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে, তা স্পষ্ট করে দেন সিরাজদ্দৌলা। অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্রটিকে সামনে এনে তিনি দেখান যে, সেখানে কর্নেল ক্লাইভের কথামতো কলকাতায় সৈন্যসমাবেশের কথা আছে। চিঠির শেষে লেখা ছিল- "বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানো যাইবে না।” ওয়াটস এই চিঠির দায় নিতে অস্বীকার করলে নবাব ওয়াটসের লেখা চিঠিটিও বের করেন। সেই চিঠিতে লেখা ছিল যে, নবাবের ওপর নির্ভর করা অসম্ভব এবং অর্থহীন। তাই, চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সিরাজ ওয়াটসের বিরুদ্ধে নবাবের সভাসদদের উত্তেজিত করার এবং কলকাতার ইংরেজ প্রশাসনকে নবাবের আদেশ লঙ্ঘনে প্ররোচিত করার অভিযোগও আনেন। আর এসবেরই শাস্তি হিসেবে নবাব সিরাজ ওয়াটসকে দরবার ত্যাগ করার নির্দেশ দেন।
৭. "তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত।"-বক্তা কাদের কাছে কেন লজ্জিত?
উত্তর:'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে জানিয়েছেন যে তিনি ফরাসিদের কাছে লজ্জিত।
▶ মঁসিয়ে লা সিরাজের দরবারে এসেছিলেন ইংরেজদের কাছ থেকে
চন্দননগর রক্ষার জন্য নবাবের সাহায্য প্রার্থনা করতে। নবাব ফরাসিদের সঙ্গে বাংলার
দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। নবাবের সঙ্গে তারা যে কখনও
অসদ্ব্যবহার করেননি সে-কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেন। আলোচনায় সিরাজ তাঁকে
জানান ইংরেজরা যে তাঁর সম্মতি না নিয়ে চন্দননগর অধিকার করেছে, ফরাসিদের সমস্ত বাণিজ্যকুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে-তিনি
এসব বিষয়ে অবহিত। কিন্তু কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে
লড়াইয়ে তাঁর প্রচুর লোকক্ষয় এবং অর্থব্যয় হয়েছে। তা ছাড়া নবাবের মন্ত্রীমণ্ডলও
নতুন করে কোনো যুদ্ধে আগ্রহী নন। সেই কারণে ফরাসিদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি
থাকলেও তাঁর পক্ষে যে ইংরেজদের সঙ্গে
যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এই অক্ষমতার জন্য মঁসিয়ে লা-র কাছে
নবাব সিরাজদ্দৌলা ক্ষমাপ্রার্থনা ও লজ্জা প্রকাশ করেছেন।
8. "মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।”-কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল?
উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য উক্তিটিতে অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্রের কথা বলা হয়েছে। ওয়াটসন সিরাজদ্দৌলার দরবারে ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে এই পত্রটি লিখেছিলেন।
▶ ইংরেজদের অপরাধ যে সভ্যতা এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে, তা উল্লেখ করতে গিয়ে নবাব সিরাজদ্দৌলা ওয়াটসনের পত্রটির কথা উত্থাপন করেন। তিনি মুনশিকে পত্রটি বের করতে বলেন এবং মুনশি পত্রটি ওয়াটসকে দেন। ওয়াটসকে দিয়ে প্রথমে পত্রটির শেষ অংশ পড়ান, তারপরে সভাসদদের বোঝানোর জন্য মুনশিকে তার তরজমা করতে বলেন। সেই অনুবাদের বক্তব্য হল-কর্নেল ক্লাইভের প্রত্যাশামতো সৈন্যদল শীঘ্রই কলকাতায় এসে পৌঁছোবে। তিনি অতি দ্রুত আর-একটি জাহাজ মাদ্রাজে পাঠিয়ে সংবাদ দেবেন যে, আরও সৈন্য এবং জাহাজ বাংলায় আবশ্যক। সবশেষে প্রায় হুমকির সুরে ওয়াটসন বলেন যে বাংলায় তিনি এমন আগুন জ্বালাবেন যা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানো যাবে না।
9. "আমার এই অক্ষমতার জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো”-বক্তা কাদের কাছে কোন্ অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন?
উত্তর শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে উদ্দেশ্য করে
কথাটি বলেছেন।
▶ ইংরেজরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর অধিকার করে নিলে নবাবের সাহায্য পাওয়ার আশায় মঁসিয়ে লা সিরাজের রাজসভায় আসেন। ফরাসিদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা সিরাজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন- “তোমরা, ফরাসিরা, বহুদিন থেকেই বাংলা দেশে বাণিজ্য করচ। আমার সঙ্গে কখনো তোমরা অসদ্ব্যবহার করনি।” তিনি বলেন, ইউরোপে ইংরেজ আর ফরাসিদের লড়াইয়ের প্রভাবে এখানেও ইংরেজরা চন্দননগর অধিকার করে ফরাসিদের কুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এরপর নবাব সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধিকে তাঁর অক্ষমতার কথা জানিয়ে বলেন যে, কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে। তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলও এই সময় নতুন কোনো যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। এই অবস্থায় সহানুভূতি থাকলেও ফরাসিদের সাহায্য করা বা ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদ করা সম্ভব নয়।
১০. “ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো!” - উদ্ধৃতাংশের বক্তা কাকে 'মূর্খ' বলে সম্বোধন করেছেন? তাঁর এরূপ বিরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
অথবা, 'ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো!” বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনোভাব লক্ষ করা যায়?
উত্তর: নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখিত 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজকে 'মূর্খ' বলে সম্বোধন করেছেন।
▶ ঘসেটি বেগম বা মেহেরুন্নিসা নবাব আলিবর্দি খাঁর বড়ো মেয়ে, সম্পর্কে সিরাজের মাসি। ঘসেটির বিয়ে হয় ঢাকার শাসনকর্তা শাহমৎ জঙ্গের সঙ্গে। দত্তক পুত্র ইকরমের মৃত্যু হলে তার শোকে শাহমৎ জঙ্গও মারা যান। বিধবা + ঘসেটি বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। এদিকে আলিবর্দি খাঁ সিরাজদ্দৌলাকে বাংলার শাসনকর্তা মনোনীত করেন। এই ঘটনা ঘসেটি বেগমের ঈর্ষার কারণ হয়। তিনি আলিবর্দির মেজো মেয়ের ছেলে শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। রাজবল্লভ এবং অন্যদেরও নিজের দলে টানেন। এসব জানতে পেরে ক্ষিপ্ত সিরাজ ঘসেটির মতিঝিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। অবশেষে তাঁকে নিজের রাজপ্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন। সিরাজের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় শওকত জঙ্গ। এইসব ঘটনার ফলে ঘসেটি বেগম হয়ে ওঠেন প্রতিহিংসাপরায়ণ। তারই প্রকাশ ঘটেছে উল্লিখিত মন্তব্যে।
১১. “ঘসেটির বন্ধন মোচন হবে সিরাজের পতন হবে, সুদিন নয়?”- বক্তা কে? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কোন্ মনোভাব ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের 'সিরাজদ্দৌলা' নাটকে উল্লিখিত অংশটির বক্তা ঘসেটি বেগম।
▶ নবাববিরোধী
ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার জন্য সিরাজ ঘসেটিকে তাঁর মতিঝিল প্রাসাদ থেকে মুরশিদাবাদে
নিজের প্রাসাদে এনে বন্দি করে রাখেন। এরফলে সিরাজের প্রতি ঘসেটির বিদ্বেষ আরও
তীব্রতর হয়ে ওঠে। শওকত জঙ্গের মৃত্যুও সিরাজের জন্যই হয়েছে, তাই নবাবের পতনই ঘসেটির একমাত্র বিবেচ্য হয়ে দাঁড়ায়।
"মাসিকে তুমি গৃহ-হারা করেচ, মাসির সর্বস্ব লুটে নিয়েচ, মাসিকে দাসী করে রেখেচ।”-সিরাজের প্রতি ঘসেটির এই অভিযোগ
তীব্রতর হয়। মতিঝিল অধিকার করা, তাঁর সঞ্চিত সম্পদ হস্তগত করা, তাঁর পালিত পুত্রকে সিংহাসন থেকে দূরে রাখা-এরকম অজস্র
অভিযোগ সিরাজের বিরুদ্ধে করা হয়। আর এইসব কারণেই সিরাজের সর্বনাশ ঘসেটি বেগমের
কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনী কাশিমবাজার কুঠির দিকে আসছে
শুনে ঘসেটি আশা প্রকাশ করে যে তারা মুরশিদাবাদের দিকেও আসবে। আর সেটাই হবে তাঁর 'সুদিন'। সিরাজের সিংহাসন যেদিন অন্য কেউ অধিকার করবে সেদিনই তাঁর
প্রতিহিংসা চরিতার্থ হবে। এইভাবে ঘসেটির তীব্র সিরাজ-বিদ্বেষ প্রকাশিত হয়েছে।
১২. "আছে শুধু প্রতিহিংসা”- মন্তব্যটি কার? কী কারণে তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েছেন?
অথবা, "আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই-আছে শুধু প্রতিহিংসা।”-কে কাকে এ কথা বলেছে? এই উক্তিতে বক্তার কোন্ মানসিকতা ধরা পড়েছে?
উত্তর: 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি করেছেন ঘসেটি বেগম।
▶ নবাব আলিবর্দি
খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগম তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাশার কারণে বাংলার সিংহাসনের
উত্তরাধিকার প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু আলিবর্দি মনোনীত সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাব
হলে ঘসেটি তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি আলিবর্দির আর-এক দৌহিত্র শওকত জঙ্গকে
সিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। ফলস্বরূপ ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদ হয়ে ওঠে
সিরাজবিরোধী চক্রান্তের কেন্দ্রস্থল। নবাব সিরাজ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে মতিঝিল
প্রাসাদের দখল নেন এবং ঘসেটিকে নিজের মুরশিদাবাদের প্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন।
ঘসেটি পরিণত হন সিরাজের প্রত্যক্ষ বিরোধীতে। ইংরেজদের কাশিমবাজারের দিকে আসার খবর
পেয়ে তিনি প্রত্যাশা করেন মুরশিদাবাদেও তারা আসবে এবং বাংলার সুদিন ফিরবে-
"ঘসেটির বন্ধন মোচন হবে, সিরাজের পতন হবে...।" সিরাজ তাঁকে গৃহহারা করেছে, তাঁর সর্বস্ব লুঠ করেছে, তাঁকে দাসী করে রেখেছে। তাঁর এই অভিযোগ অস্বীকার করতে চেয়ে
সিরাজ বলেন যে রাজনীতির কারণে মতিঝিল প্রাসাদে তাঁকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এই
পরিপ্রেক্ষিতেই ঘসেটি প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেন।
১৩. "বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে।"-'বেগম' কে? 'আমার মতো' বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার কেঁদে কাটানোর কারণ কী?
উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশের উল্লিখিত অংশে 'বেগম' বলতে নবাব সিরাজদ্দৌলার পত্নী লুৎফা-র কথা বলা হয়েছে।
▶ 'আমার মতো' বলতে এখানে ঘসেটির কথা বলা হয়েছে।
▶নবাব আলিবর্দি খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগমের রাজনৈতিক উচ্চাশা ছিল যে, আলিবর্দির পরে তিনি বাংলার শাসনক্ষমতার অধিকারী হবেন। তাই সিরাজকে বাংলার শাসনকর্তা হিসেবে তিনি কখনোই মেনে নিতে পারেননি। পূর্ণিয়ার নবাব শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করেন তিনি। যদিও নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁকে পরাজিত ও নিহত করেন। ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদ একসময় হয়ে ওঠে নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র। সিরাজ এসব বুঝতে পেরে ঘসেটিকে মতিঝিল থেকে উৎখাত করেন এবং মুরশিদাবাদে নিজের প্রাসাদে গৃহবন্দি করে রাখেন। তাঁর ওপর ঘটে-চলা ঘটনার প্রতিকার করার মতো কোনো ক্ষমতা তাঁর না থাকায় নিজের কান্নাতেই ঘসেটি সান্ত্বনা পেতেন। তবে এই কান্নাই সিরাজ ও লুৎফার প্রতি প্রতিহিংসা হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
১৪. "মনে হয়, ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ-সঞ্চালনে ভূমিকম্প।”-কে, কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে? তার সম্পর্কে বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের 'সিরাজদ্দৌলা' নাট্যাংশে, নবাব সিরাজদ্দৌলার পত্নী লুৎফাউন্নিসা ঘসেটি বেগম সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।
▶ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সিরাজ যখন বিচলিত, সেই সময় নবাবের মাসি ঘসেটি রাজদরবারে প্রবেশ করেন। তারপর একের পর এক তীব্র বাক্যবাণে তিনি সিরাজকে জর্জরিত করতে থাকেন। ঘসেটির প্রতিটি বাক্যই বিষ-মাখানো তিরের মতো যেমন সিরাজের হৃদয়ে বিঁধে যায়, তেমনই সেখানে উপস্থিত সিরাজের পত্নী লুৎফার অন্তরকেও ক্ষতবিক্ষত করে। তিনি বুঝতে পারেন ঘসেটি সাক্ষাৎ প্রতিহিংসার প্রতিমূর্তি, যিনি লুৎফার স্বামী সিরাজেরও শওকত জঙ্গের মতোই নির্মম পরিণতি চান। ঘসেটি বলেন, "চোখের জলে নবাব পথ দেখতে পাবেন না। বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে।” লুৎফা উপলব্ধি করেন ঘসেটির সর্বাঙ্গে অতৃপ্তির জ্বালা, নিশ্বাসে বিষ, দৃষ্টিতে আগুন আর অঙ্গসঞ্চালনে ভূমিকম্পের অনুরণন। ঘসেটিকে সহ্য করতে না পেরে লুৎফাউন্নিসা তাঁকে অবিলম্বে মতিঝিলে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন। উক্তিটির মধ্যে ঘসেটি সম্পর্কে লুৎফার ভীতি এবং আশঙ্কাই প্রকাশ পেয়েছে।
Paid Answer Link (Membership User)
EDITING BY--Liza Mahanta