Chapter--9

প্রলয়োল্লাস

----------------

 

👉Paid Answer (For Membership User)


 MCQ

1. "জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে"-জগৎজুড়ে প্রলয় ঘনিয়ে এলে-

(ক) ঝড়-বৃষ্টি আসে

(খ) মুমূর্ষুদের প্রাণনাশখ  ঘটে 

(গ) সকালে নতুন সূর্যের আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে 

(ঘ) উল্কাবৃষ্টি হয়

উত্তর: (খ) মুমূর্ষুদের প্রাণনাশ ঘটে


2. "এবার মহানিশার শেষে"- 

(ক) প্রলয় আসবে 

(খ) মহাকাল চণ্ডরূপে আবির্ভূত হবেন 

(গ) নতুন সূর্য সমাজকে নতুনভাবে আলোকিত করে তুলবে

(ঘ) একটি নতুন রথ আকাশে দেখা দেবে

উত্তর: (গ) নতুন সূর্য সমাজকে নতুনভাবে আলোকিত করে তুলবে

 

3. 'করুণ বেশে' আসবে-

(ক) সত্য 

(খ) সুন্দর 

(গ) সূর্য 

(ঘ) চাঁদ

উত্তর: (গ) সূর্য

 

4. "আলো তার ভরবে এবার ঘর।"-ঘর যার আলোয় ভরে উঠবে- 

(ক) সূর্য 

(খ) চন্দ্র 

(গ) উল্কা 

(ঘ) ধূমকেতু

উত্তর: (খ) চন্দ্র

 

5. জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ লুকানো রয়েছে-

 (ক) প্রলয়ের মধ্যে 

(খ) ধ্বংসের মধ্যে

(গ) সৃষ্টির মধ্যে 

(ঘ) বিনাশের মধ্যে 

উত্তর: (ঘ) বিনাশের মধ্যে 

 

 

6. রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়,”-

(ক) সপ্ত 

(খ) দ্বাদশ 

(গ) উষাঘ 

(ঘ) খর

উত্তর: (খ) দ্বাদশ 

 

7. 'এস্ত জটা' যে বর্ণ-

(ক) লাল

(খ) নীলাভ

(গ) পিঙ্গল 

(ঘ) হরিদ্রা 

উত্তর: (গ) পিঙ্গল

 

8. “দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়।"- 'পিঙ্গল' শব্দের অর্থ-

(ক) পীত (হলুদ) রঙের আভাযুক্ত গাঢ় নীল 

(খ) সাদা 

(গ) রক্তবর্ণ

(ঘ) নীল

উত্তর:  (ক) পীত (হলু) রঙের আভম গাঢ় নীল

 

9. “সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে/কপোলতলে।"-'কপোল' শব্দের অর্থ-

(ক চিবুক 

(খ) কপাল 

(গ) গণ্ডদেশ বা গাল 

(ঘ) গলা

উত্তর: (গ গণ্ডদেশ বাং

 

10. "হাঁকে ওই-”-যিনি হাঁকছেন, তিনি- 

(ক) ঝড়ের দেবতা 

(খ) ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা 

(গ) অগ্নির দেবতা 

(ঘ) জলের দেবতা

উত্তর: (খ) ধ্বংস ও সশী বি দেবতা

  

11. "মাভৈঃ মাভৈঃ!”- 'মাভৈঃ' শব্দের অর্থ-

 (ক) ভয় কোরো না 

(খ) ভয়ংকর 

(গ) সাবধান 

(ঘ) ভয় দূর হয়ে গেছে

উত্তর: (ক) ভয় কোরোন

  

Short Question Answer


১. 'প্রলয়োল্লাস' কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?    

উত্তর: 'প্রলয়োল্লাস' কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

 

২. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?

 উত্তর:  অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর (কার্তিক, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত হয়।

 

৩. কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অগ্নিবীণা (প্রকাশ- অক্টোবর, ১৯২২)।

 

৪. কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করেন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করেন।

 

৫. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা কে করেন?

 উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা করেন 'চিত্রকর-সম্রাট' অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রচ্ছদটি আঁকেন চিত্রশিল্পী শ্রীবীরেশ্বর সেন।

 

৬. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল?

উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে মাসিক উপাসনা পত্রিকায় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।


৭. প্রলয়োল্লাস' অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?

উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা।


৮. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট ক-টি কবিতা রয়েছে?

উত্তর:  অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে- 'প্রলয়োল্লাস', 'বিদ্রোহী', 'রক্তাম্বরধারিণী মা', 'আগমনী', 'ধূমকেতু', 'কামালপাসা', 'আনোয়ার', 'রণভেরী', 'শাত-ইল-আরব', 'খেয়াপারের তরণী', 'কোরবাণী', 'মোহররম'

 

৯. "তোরা সব জয়ধ্বনি কর।"-পঙক্তিটিতে কাদের জয়ধ্বনি করতেবলা হয়েছে? অথবা, "তোরা সব জয়ধ্বনি কর!" কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?

উত্তর:  কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় কবি দেশের স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ তরুণ বিপ্লবীদের জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে।

 

১০. "তোরা সব জয়ধ্বনি কর।"-কার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা 'প্রলয়োল্লাস'-এ ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে।

 

১১. "ওই নূতনের কেতন ওড়ে—"-নূতনের কেতন ওড়ার সংবাদ কে বহন করে এনেছে?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের লেখা 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় 'নূতনের কেতন' ওড়ার সংবাদ কালবৈশাখীর ঝড় বহন করে এনেছে।

 

১২. 'নূতনের কেতন' ওড়া বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?     

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় 'নূতনের কেতন' ওড়া বলতে বোঝাতে চেয়েছেন যে, পরাধীনতার বন্ধন থেকে, ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির দিন আসন্ন।

 

১৩. "আসছে এবার..."-কে, কীভাবে আসছেন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় প্রলয়ের নেশায় নৃত্যপাগল শিব সিন্ধুপারে সিংহ-দরজায় আঘাত করে আসছেন।

 

১৪."সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল"-'সিন্ধুপারের সিংহদ্বার' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?    

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের 'প্রলয়োল্লাস' কবিতার আলোচ্য অংশে 'সিন্ধুপারের সিংহদ্বার' বলতে সমুদ্রপারের আন্দামানের সেলুলার জেলের প্রবেশপথকে বোঝানো হয়েছে।

 

১৫. "মহাকালের চণ্ড-রূপে"--'চণ্ড-রূপ' বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতার আলোচ্য অংশে 'চণ্ড-রূপ' বলতে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ, ভীষণ, ভয়ানক, ভয়ংকর, উদ্ধত রূপকে বোঝায়।

 

১৬. "... আসছে ভয়ংকর।"-'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ভয়ংকরের রূপটি কেমন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ভয়ংকরের রূপটি অত্যন্ত ভীষণ ও উদ্ধত। তিনি বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে অবতীর্ণ হন।

 

১৭. "... গগন দুলায়” গগন কীভাবে দুলে ওঠে?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ধ্বংসের দেবতা শিবের কেশরাশির ঝাপটায় গগন অর্থাৎ সারা আকাশ দুলে ওঠে বলে কবি কল্পনা করেছেন।

 

১৮. “... ধূমকেতু তার চামর চুলায়!"-'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় 'ধূমকেতু' র কী কী বিশেষণ প্রযুক্ত হয়েছে?      

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ধূমকেতুর ক্ষেত্রে 'সর্বনাশী' 'জ্বালামুখী' বিশেষণ দুটি প্রযুক্ত হয়েছে।

 

১৯. "বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে/রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে/ দোদুল দোলে!"-পঙ্ক্তিগুলোর অর্থ বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: আলোচ্য পঙ্ক্তিগুলোর অর্থ হল-সর্বনাশী রূপ ধরে যে ধ্বংসের দেবতার আগমন ঘটে, তা বিশ্বপিতার বক্ষকে রক্তাক্ত করে পৃথিবীকে আন্দোলিত করে তোলে।

 

20 ওই নূতনের কেতন ওড়ে"-'নূতনের কেতন' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?                         

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সত্য ও সুন্দরের পূজারি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বাংলায় নেমে এসেছিল অবক্ষয়ের কালো ছায়া। পরাধীনতার যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে বাঙালি সমাজ। কুসংস্কার, দাসত্ব, জড়তা এবং পরাধীনতার অবসানে কবি কালবৈশাখীরূপ নটরাজের আগমন কামনা করেছেন। ধ্বংসের মধ্য দিয়েই হবে সৃষ্টির নব-উত্থান। 'নূতনের কেতন' বলতে কবি তাই পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থায় পরাধীনতার অবসান এবং শুভদিনের আগমনকেই ইঙ্গিতবাহী করে তুলেছেন।

 

21"সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!"-'সিন্ধুপারের সিংহদ্বার' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? সেখানকার আগল ভাঙার কথা বলা হয়েছে কেন?                                                                                                                                                                         

উত্তর: 'সিন্ধুপারের সিংহদ্বার' বলতে কবি আন্দামানের সেলুলার জেলের প্রধান ফটকের কথা বলেছেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। আর ইংরেজদের অত্যাচারও তীব্র হয়। ইংরেজরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিনাবিচারে আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দি করে রাখত। এই জেল ছিল ভারতীয়দের কাছে অত্যাচারের প্রতীক। এই কারণে ধ্বংসরূপী মহাকালই প্রলয়নেশায় মত্ত হয়ে সেই বন্দিশালার আগল ভাঙবেন বলে কবির বিশ্বাস।

 

22 "আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল”-কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা? কথাটি তার সম্পর্কে বলা হয়েছে কেন?                                                                                                    

উত্তর: উল্লিখিত অংশে যে তরুণ সম্প্রদায় ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উদ্যত তাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে।

পরাধীনতার যন্ত্রণা, সামাজিক শোষণ-বঞ্চনা-এসব থেকে মুক্তির জন্য মানুষের সংগ্রাম ক্রমশই তীব্রতর হতে থাকে। সেই সংগ্রাম ধ্বংসকে নিশ্চিতকরে। নতুন দিনের স্বপ্নে বিভোর তরুণ বিপ্লবী-প্রাণদের দেখলে মনে হয় তারা যেন 'প্রলয় নেশার নৃত্য পাগল'। কারণ, জীবনকে বাজি রেখে তারা বিপ্লবের পথে এগিয়ে চলে। সমুদ্রপারে সিংহদরজার আগল ভাঙাই তাদের লক্ষ্য।

 

23"বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!"-কাদের কথা বলা হয়েছে? এই ভয়ংকরের আগমনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।                                                                                                

উত্তর: 'প্রলয়োল্লাস' কবিতার আলোচ্য অংশে ভয়ংকরের বেশে নতুনের আগমনের কথা বলা হয়েছে। এই নতুন আসলে তরুণ বিদ্রোহী শক্তি। 

প্রলয় নেশায় মত্ত হয়ে নৃত্যরত পাগলের মতো বিদ্রোহী শক্তির আগমন ঘটছে। তাকে প্রতিহত করার শক্তি, তার সামনে দাঁড়াবার শক্তি কারও নেই। মহাকালের ভয়ংকর মূর্তিতে অর্থাৎ শিবের ধ্বংসমূর্তিতে যেন মুক্তিদূত অর্থাৎ বিপ্লবী শক্তির আগমন ঘটছে। কালবৈশাখীর ঝড়ে উড়ছে নতুনের পতাকা, ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি। ভয়ংকরের পথেই এভাবে স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখেছেন কবি।

 

"ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!"- ভয়ংকর কে? তাঁর হাসির কারণ কী?                                  

 

উত্তর: 'ভয়ংকর' বলতে ধ্বংসরূপী মহাকাল বা শিবকেই বোঝানো হয়েছে, যা আসলে তরুণ বিপ্লবী শক্তির প্রতীক।

 

শিব একাধারে ধ্বংস ও সৃষ্টির প্রতীক। ধ্বংসরূপী শিব সংহারক। ভয়ংকর তাঁর রুদ্ররূপ। বিকট অট্টহাসি হেসে তিনি জীর্ণ-পুরাতন এবং যা-কিছু অসুন্দর, তা বিনাশ করেন। তাঁর আগমনে প্রলয় ঘটে, সৃষ্টি হয় নতুনের। একইভাবে তরুণ বিপ্লবী শক্তিও স্বাধীনতার লক্ষ্যে ধ্বংসের উন্মাদনায় মেতে ওঠে। তাদের মুখে থাকে ভয়ংকরের হাসি যা কোনো কিছুকেই ভয় পায় না।

 

৬ "ঝাপটা মেরে গগন দুলায়।”-কে ঝাপটা মেরে গগন দুলায়? গগন দোলানোর নেপথ্যে তার কী উদ্দেশ্য নিহিত?                                                                                                               

 

উত্তর: মহাকালরূপী শিব ঝাপটা মেরে গগন দুলিয়ে দেন।

 

ধ্বংসের দেবতা শিব বড়ো ভয়ংকর। তাঁর আগমন পৃথিবীতে প্রলয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাঁর জটাভার দুলে উঠলে আকাশ-বাতাস-সহ সমগ্র পৃথিবী কেঁপে ওঠে। যাবতীয় জীর্ণতা দূর হয় তাঁর আগমনে। তারপরই নতুন সৃষ্টির প্রকাশ ঘটে পৃথিবীতে। এই ঝাপটা আসলে পুরাতন অচলায়তনকে ভাঙার আঘাত। শক্তি ও সাহসের প্রচণ্ডতা নিয়ে তরুণ বিপ্লবী শক্তি পুরোনো ব্যবস্থাকে ভাঙার লক্ষ্যে এই আঘাত করে।

 

"সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু তার চামর চুলায়!”-কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে লেখো।

 

উত্তর: সংগ্রামের পথ কখনও ফুলে ঢাকা নয়। স্বাধীনতার জন্য মানুষের যে সংগ্রাম, তার পথ তৈরি হয় মৃত্যু আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে। যে কারণে কবি তাঁর কল্পনায় বিশ্বপিতার কোলে রক্তমাখা তরবার দেখেছেন। সুন্দরের বা নতুনের কোনো শান্ত, সৌম্য মূর্তি এখানে বর্ণিত হয়নি। নতুনের প্রলয় রূপইবর্ণিত হয়েছে। সর্বনাশের রূপ ধরে সুন্দরের সেই আগমনকে বর্ণনা করতে গিয়েই কবি বলেছেন, ধূমকেতু যেন তার 'চামর ঢুলায়' অর্থাৎ পুচ্ছ নাচায়।

 

"অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর।” -সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।

 

উত্তর: মহাকালের আগমনে প্রলয়-বিক্ষুব্ধ পৃথিবীর কথা উল্লেখ প্রসঙ্গে 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় কবি আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।

 

মহাকালরূপী শিব ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছেন। তাঁর প্রলয়-তাণ্ডবে সমগ্র বিশ্ব কেঁপে ওঠে। বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। কালবৈশাখী ঝড়ের রূপ ধরে তিনি আসেন নবসৃষ্টির বার্তা নিয়ে। তাঁর আওয়াজে মুখরিত আকাশ-বাতাস। ঠিক সেভাবেই যৌবনের উদ্দীপনায় চারপাশকে চমকে দিয়ে বিপ্লবীশক্তির আগমন ঘটে।

 

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

                 

"ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়।"-'নূতনের কেতন' কী? 'প্রলয়োল্লাস' কবিতার বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।                                           

 

উত্তর: 'কেতন' শব্দের অর্থ পতাকা। 'নূতনের কেতন' অর্থাৎ স্বাধীনতার ভিত্তিতে যে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, তার প্রতীক পতাকার কথা বলা হয়েছে।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অগ্নিগর্ভ সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস' কবিতাটি রচিত হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী-জুড়ে নানাভাবে মুক্তি আন্দোলনের যে ঘটনাগুলি ঘটছিল কবি সেগুলি সম্পর্কেও সজাগ ছিলেন। এসব থেকেই তাঁর মনে হয়েছিল যে, নতুন দিনের আগমন সুনিশ্চিত হতে লেছে। তার আগমন 'কালবোশেখির ঝড়'-এর মতো। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সর্বনাশের পথ ধরে এই পরিবর্তন আসবে- "বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর।" সর্বনাশী ধূমকেতুর মতো তার আবির্ভাব ঘটবে। সশস্ত্র সেই আবির্ভাবে স্থিতাবস্থার আসন টলে যাবে। মধ্যাহ্ন সূর্যের প্রখরতা কিংবা মেঘগর্জনের মতো প্রবলভাবে ঘটবে বিপ্লবীশক্তির আগমন। মহাসমুদ্র দুলে উঠবে সেই ভয়ংকরের আগমনে। আবার এই ভয়ংকরের আড়ালেই রয়েছে সুন্দরের প্রতিশ্রুতি। প্রলয়ের রূপ ধরে এ হল 'চিরসুন্দর'-এর আগমন- ভাঙনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিই তাঁর লক্ষ্য। তাই ভয়ংকরকে ভয় না পেয়ে তার জয়ধ্বনি করতে বলেছেন কবি। কারণ 'কালবোশেখির ঝড়'-এই ওড়ে নূতনের কেতন'- "কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর।"

"বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!"-এখানে 'ভয়ংকর' বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের কীভাবে আগমন ঘটছে নিজের ভাষায় লেখো।                                             

 

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় 'ভয়ংকর' বলতে মহাকালের মতো চণ্ড মূর্তিতে যে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন ঘটছে তাদের কথা বলা হয়েছে।

 

যে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন কবি প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা। ইংরেজের দুর্গে আঘাত হানাই তাদের লক্ষ্য। কালবৈশাখির ঝড়ের প্রচণ্ডতা নিয়ে তাদের আগমন ঘটে। তারা 'নূতনের কেতন' ওড়ায়। পুরোনো ব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে তারা এক মানুষের বাসযোগ্য সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে চায়, যেখানে অত্যাচার অন্যায়ের অবসান ঘটবে। কিন্তু তার জন্য সকলের আগে প্রয়োজন পুরোনো ব্যবস্থার বদল। তাই ধ্বংসের উন্মত্ততা নিয়ে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন ঘটে। কবি তাদেরকে বলেছেন- "অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল।"শিব যেমন তাঁর রুদ্র মূর্তিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিল এই তরুণদলও চায় সত্য, ন্যায় এবং সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করতে। 'সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে' অর্থাৎ সমুদ্রপারে আন্দামানের সেলুলার জেলের দরজা ভাঙতে চায় তারা। কারণ এই কারাগার ইংরেজের অত্যাচার ও দমনের প্রতীক। এই মৃত্যুপুরীতে মহাকালের চণ্ড-মূর্তিতে এভাবেই ভয়ংকরের আগমন ঘটে।

 

অতিসক্ষিপ্ত উওব় প্ৰপ্ন ও উওব়

 

১"বজ্রগানে ঝড়-তুফানে...”- কীসের শব্দ নিনাদিত হয়?

 

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় ঝড়- তুফানের সাথে বজ্রপাতে মহাকালের রথের ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি নিনাদিত হয়।

 

. "উল্কা ছুটায় নীল খিলানে!"-উল্কা কোথায় কীভাবে এসে পড়ে?

 

উত্তর: মহাকালের রথের ঘোড়ার খুরের দাপটে আকাশ থেকে জ্বলন্ত পাথর বা উল্কা এসে পড়েছে অন্ধ কারাগারের বন্ধ ঘরগুলিতে, দেবতার উদ্দেশে নিবেদিত যজ্ঞের হাড়িকাঠে এবং পাথরের স্তূপে।

 

. "এই তো রে তার আসার সময়" কীভাবে তা বোঝা যাচ্ছে?

 

উত্তর: প্রলয়ংকর মেঘের ঘর্ঘর শব্দে কবির মনে হয়েছে যেন মহাকালের রথের শব্দ তাঁর কানে আসছে। ধ্বংসের দেবতার আসার সম্ভাবনা এভাবেই কবিতায় সূচিত হয়েছে।

 

. "ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর?"-ধ্বংস দেখে কেন ভয় করা উচিত নয় বলে কবি মনে করেন?

 

উত্তর: ধ্বংসের মধ্যেই নিহিত থাকে নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা। তাই প্রলয় বা ধ্বংসকে কবি 'সৃজন-বেদন' বা নতুন সৃষ্টির যন্ত্রণারূপে দেখেছেন।

 

. "প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন” কথাটির অর্থ কী?

 

উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় আলোচ্য অংশটির অর্থ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে যে নবীনের আগমন ঘটে তা আসলে নতুন সৃষ্টির জন্য যন্ত্রণা।

 

. "আসছে নবীন।"-নবীনের আসার উদ্দেশ্য কী?

 

উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় জীবনহারা, প্রাণহীন, জড়, অসুন্দরকে ধ্বংস করতেই যে নবীনের শুভাগমন, তা ব্যক্ত করেছেন।

 

. "ওই ভাঙা-গড়া খেলা যে তার কিসের তবে ডর?"- 'ভাঙা-গড়া খেলা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

 

উত্তর: 'ভাঙা-গড়া খেলা' বলতে মহাকালের রুদ্ররূপে জীর্ণ পুরাতন সৃষ্টিকে ধ্বংস করা ও শুভংকররূপে নতুন জগৎ সৃষ্টি করাকে বোঝানো হয়েছে।

 

.ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর।"-কী ভেঙে আবার নতুন করে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে?

 

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় জীর্ণ, পুরাতন গতানুগতিকতাকে ভেঙে, যাবতীয় প্রাণহীনতা, নিশ্চলতার অবসানা ঘটিয়ে নতুন সম্ভাবনাময় জীবন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

 

.বধূরা প্রদীপ তুলে ধর”-বধূরা কার উদ্দেশে প্রদীপ তুলে ধরনে কেন?   

 

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় বধূদের প্রদীপ তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ তুলে ধরে বধূরা কাল ভয়ংকরের রূপে আসা সুন্দরকে বরণ করে নেবে।

 

১০. "ওই আসে সুন্দর।”-সুন্দর কীভাবে আসে?

                                                                     

উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় সুন্দর আসে কাল-ভয়ংকরের বেশ ধারণ করে।

 

 

 

Editing By- Lipi Medhi