অধ্যায়  ১

বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সূষ্ট ভূমিরূপ

-----------------------------------------------------


1. মেসা আরও ক্ষয়ে গিয়ে তৈরি হয়-


(i) জিউগেন

(ii) বিউট

(iii) ইনসেলবার্জ

(iv) ইয়ারদাং


উত্তর: (ii) বিউট


2. 'মাশরুম রক' বলা হয়-


(i) গৌরকে

(ii) ইয়ারদাংকে

(iii) ইনসেলবার্জকে

(iv) জিউগেনকে


উত্তর: (i) গৌরকে


3. মরুভূমি অঞ্চলে শুষ্ক নদীখাতকে বলে-


(i) প্লায়া

(ii) ওয়াদি

(iii) বাজাদা

(iv) পেডিমেন্ট


উত্তর: (ii) ওয়াদি


4. ফ্রান্সে লোয়েস সমভূমিকে বলে-


(i) লিমন

(ii) অ্যাডোব

(iii) লস

(iv) হোয়াংতু


উত্তর: (i) লিমন


5. 'লোয়েস' কথাটির অর্থ হল-


(i) স্থানচ্যুত বস্তু

(ii) স্থানযুক্ত বস্তু

(iii) বালিয়াড়ি

(iv) বিস্তীর্ণ অঞ্চল


উত্তর:


6. মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলের নিম্নভূমিতে অবস্থিত লবণাক্ত জলের হ্রদকে বলে-


(i) ধান্দ

(ii) কাতারা

(iii) প্লায়া

(iv) ওয়াদি


উত্তর: (iii) প্লায়া


7. মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট পাহাড়গুলিকে বলে-


(i) বালিয়াড়ি

(ii) হিমশৈল

(iii) ইনসেলবার্জ

(iv) এসকার


উত্তর: (iii) ইনসেলবার্জ


8. প্রবহমান বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে বলে-


(i) তির্যক বালিয়াড়ি

(ii) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি

(iii) ভ্রাম্যমাণ বালিয়াড়ি

(iv) তিমিপৃষ্ঠ বালিয়াড়ি


উত্তর: (ii)অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি


9. বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট সমভূমিকে বলে-


(i) প্লাবনভূমি

(ii) লোয়েস সমভূমি

(iii) বহিঃবিধৌত সমভূমি

(iv) বদ্বীপ সমভূমি


উত্তর: (ii) লোয়েস সমভূমি


10. পেডিমেন্টের ওপর যে ক্ষয়জাত ও অবশিষ্ট পাহাড় সৃষ্টি হয় তাকে বলে-


(i) মোনাডনক

(ii) ইনসেলবার্জ

(iii) প্রিয়ানহগবুপ

(iv) হামাদা


উত্তর: (ii) ইনসেলবার্জ


11. চলমান বালিয়াড়িকে বলে-


(i) শটস

(ii) ওয়াদি

(iii) ধ্রিয়ান

(iv) প্লায়া


উত্তর: (iii) ধ্রিয়ান


12. তির্যক বালিয়াড়িকে বলে


(i) সিফ

(ii) বারখান

(iii) লোয়েস

(iv) ব্লো আউট


উত্তর: (ii) বারখান


13. বায়ু ও ক্ষণস্থায়ী নদীর যে কার্যের ফলে পেডিমেন্ট সৃষ্টি হয়-


(i) ক্ষয়কার্য

(ii) বহনকার্য

(iii) সঞ্চয়কার্য

(iv) উভয় কার্য


উত্তর: (i) ক্ষয়কার্য

Short Answer Question 

1. দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি উয় মরুভূমির নাম লেখো।

উত্তর: দক্ষিণ গোলার্ধের উয় মরুভূমি: দক্ষিণ গোলার্ধের দুটি উয় মরুভূমি হল-① আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমি এবং ② দক্ষিণ আমেরিকার আটাকামা মরুভূমি।


2. অবঘর্ষ ক্ষয় বলতে কী বোঝ? 

অথবা, অবঘর্ষ ক্ষয় কীভাবে হয়?


উত্তর: ধারণা: মরু অঞ্চলে প্রবলবেগে প্রবাহিত বায়ুর মধ্যে ছোটো ছোটো পাথরখণ্ড, নানা আয়তনের বালি এবং শক্ত কোয়ার্টজ কণা থাকে। ফলে এই বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে যখন ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন শিলাস্তরের ঘর্ষণ লাগে, তখন শিলাস্তরের গায়ে কোথাও আঁচড় কাটার মতো দাগ, কোথাও বেশ গভীর দাগ, আবার কোথাও মৌচাকের মতো অসংখ্য ছোটো ছোটো গর্ত তৈরি হয়। এই ধরনের ক্ষয়কে বলে অবঘর্ষ ক্ষয়। বৈশিষ্ট্য: ① ভূমি থেকে সাধারণত এক মিটারের মধ্যে এই ধরনের ক্ষয় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ② অবঘর্ষের জন্য মরু অঞ্চলে টেলিগ্রাফ পোস্টের গোড়ার দিকটা খুব তাড়াতাড়ি ক্ষয় হয়ে ভেঙে পড়ে বা বৃহদাকৃতির শিলাখণ্ডে ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে ভূমিরূপ গৌর সৃষ্টি হয়।


3. সংজ্ঞাসহ ওজোন স্তরের ঘনত্বের একক কী উল্লেখ করো।


উত্তর:  ওজোন স্তরের ঘনত্বের একক হল 'ডবসন'। 0*C উন্নতা ও 760 mm Hg চাপে 0.01 mm পুরু ওজোন স্তরের ঘনত্বকে । ডবসন একক (IDU) বলে।


4. প্রিয়ান কাকে বলে?


উত্তর: সংজ্ঞা: মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের দিক বা গতি পরিবর্তনের কারণে বেশিরভাগ বালিয়াড়িই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে সরে যায়। এজন্য এদের নাম অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এই ধরনের অস্থায়ী বালিয়াড়িকে প্রিয়ান বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: ① এগুলি উন্মুক্ত মরুভূমিতে গঠিত হয়। ② বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এগুলির দিক ও বিস্তার পরিবর্তিত হয়।


5. সিফ বালিয়াড়ি কাকে বলে?


উত্তর: সংজ্ঞা: আরবি ভাষায় 'সিফ' শব্দটির অর্থ তলোয়ার। মরু অঞ্চলে যেসব বালিয়াড়ি খুব দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শৈলশিরা বা তলোয়ারের মতো বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে সমান্তরালে গড়ে ওঠে, সেগুলিকে বলে সিফ বালিয়াড়ি। এই প্রকার বালিয়াড়ি প্রায় 100 মি উঁচু, 600 মি প্রশস্ত এবং 100 কিমি দীর্ঘ হয়। গঠন প্রক্রিয়া: বিজ্ঞানী বাগনল্ডের মতে প্রবল বায়ুপ্রবাহে যখন বারখানের মাঝের অংশ ক্ষয়ে যায় তখন দু-পাশে শিঙের মতো শিরা দুটি ক্রমশ বড়ো হয়ে দুটি সিফ বালিয়াড়ি রূপে পাশাপাশি গড়ে ওঠে।


6. মরুখাত বা ব্লো আউট কাকে বলে?


উত্তর: সংজ্ঞা: মরু অঞ্চলে বায়ুর অপসারণ কার্যের ফলে আলগা বালিরাশি সরে গিয়ে গঠিত বিভিন্ন আকার ও আয়তনের ছোটো-বড়ো গর্ত বা অবনত ভূমিকে মরুখাত বা অপসারণ গর্ত বা ব্লো আউট বলে। বৈশিষ্ট্য: ① এগুলি সাধারণত বালিয়াড়ি অথবা বালির সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত অঞ্চলে দেখা যায়। ② বায়ুর অপসারণসৃষ্ট অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকার গর্তগুলিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বাফেলো গর্ত এবং বৃহৎ গর্তগুলিকে মঙ্গোলিয়ায় প্যাং কিয়াং গর্ত বলে।


7. প্লায়া কী?

অথবা, বোলসন কাকে বলে?


উত্তর: সংজ্ঞা: 'প্লায়া' একটি স্প্যানিশ শব্দ, এর অর্থ লবণাক্ত হ্রদ। মরু অঞ্চলের লবণাক্ত জলের হ্রদগুলিকে প্লায়া বলে। সাধারণত মরু অঞ্চলে হঠাৎ মুশলধারে বৃষ্টিপাত হলে চারপাশের উচ্চভূমি থেকে আসা অনেকগুলি জলধারা মধ্যভাগের উপত্যকা বা নিম্নভূমিতে মিলিত হলে সেখানে এই লবণাক্ত জলের অগভীর হ্রদ তথা প্লায়া সৃষ্টি হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমভাগে এবং মেক্সিকোতে এই প্লায়া হ্রদকে 'বোলসন' বলা হয়। (স্প্যানিশ ভাষায় বোলসন বা Bolson কথাটির অর্থ বড়ো থলি বা Large purse। এ ছাড়া প্লায়া অস্ট্রেলিয়ায় 'প্যান', আফ্রিকায় 'শটস' এবং সৌদি আরবে 'সবখা' নামে পরিচিত।


উদাহরণ: রাজস্থানের সম্বর বা পুষ্কর হ্রদ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের 'লা প্লায়া' পৃথিবীর বৃহত্তম প্লায়া হ্রদ।   


8. বাজাদা কী?


উত্তর: ধারণা: স্প্যানিশ শব্দ BAHADA থেকে ইংরেজিতে BAJADA শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ একাধিক পলল শঙ্কুযুক্ত সমতল ভূমি। সাধারণত মরু অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে যে সামান্য ঢালবিশিষ্ট শিলাময় ভূমি বা পেডিমেন্ট থাকে, তার নীচে বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে পলি সঞ্চিত এক সমতলক্ষেত্র গঠিত হয়, একেই বলে বাজাদা। বৈশিষ্ট্য: ① পর্বতের পাদদেশের একাধিক পলল শঙ্কু যুক্ত হয়ে এই বাজাদা গড়ে ওঠে। ② এর ঢাল 1° থেকে 10° পর্যন্ত হয়। ③ পলি, কাদা, নুড়ি ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে বাজাদা গঠিত হয়। উদাহরণ: সাহারা মরুভূমির উত্তর- পশ্চিমে আটলাস পর্বতের পাদদেশে বাজাদা আছে।


9. মরুভূমির সম্প্রসারণ রোধের দুটি উপায় লেখো।

উত্তর: মরুভূমির সম্প্রসারণ রোধের উপায়: মরুভূমির সম্প্রসারণ রোধের দুটি উপায় হল-


(i) বনসৃজ্জন: মরুভূমির প্রান্ত বরাবর নিবিড়ভাবে বনভূমি গড়ে তুলতে হবে। গাছ মরু প্রসারণ রোধ করে। তাই এমন উদ্ভিদ রোপণ করতে হবে, যা মরু জলবায়ুর উপযুক্ত অর্থাৎ খরা সহনশীল।


(ii) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ: মরুভূমির সম্প্রসারণ রোধে মাত্রাহীন পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।


10. কয়েকটি নিম্ন অক্ষাংশের মরুভূমির নাম লেখো।


উত্তর: নিম্ন অক্ষাংশের মরুভূমি: উভয় গোলার্ধে সাধারণভাবে 20°-30° অক্ষাংশের মধ্যে যেসব মরুভূমি আছে সেগুলিকে নিম্ন অক্ষাংশের মরুভূমি বলে। এই মরুভূমিগুলি বেশিরভাগই মহাদেশের পশ্চিমভাগে গড়ে উঠেছে। যেমন-উত্তর আমেরিকার সোনেরান, দক্ষিণ আমেরিকার আটাকামা, আফ্রিকার সাহারা ও কালাহারি, এশিয়ার থর ও আরবীয় মরুভূমি এবং অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম অস্ট্রেলীয় মরুভূমি।


11. ডেজার্ট পেভমেন্ট কী?

অথবা, রেগ ও সেরির কাকে বলে?


উত্তর: ধারণা: মরু অঞ্চলে গোলাকার শিলা, নুড়ি এবং কোণাকার শিলাখণ্ড দিয়ে গঠিত ভূমিকে ডেজার্ট পেভমেন্ট বা ডেজার্ট ফ্লোর বলে। দীর্ঘদিন ধরে বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় ভূমি থেকে বালি সরে গেলে ডেজার্ট পেভমেন্ট গঠিত হয়। এই জাতীয় ভূমিরূপকে পশ্চিম সাহারায় রেগ, পূর্ব সাহারায় সেরির, মধ্য এশিয়ায় সাই এবং অস্ট্রেলিয়ায় গিবার বলে।


12. বালিয়াড়ি কাকে বলে?


উত্তর: সংজ্ঞা: বালিপূর্ণ বায়ুর গতিপথে গাছপালা, প্রস্তরখণ্ড, ঝোপঝাড় বা অন্য কোনো বাধা থাকলে বায়ুবাহিত বালির কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হয়ে উঁচু ঢিবি বা স্তূপের মতো অবস্থান করে। এই ধরনের বালির স্তূপকে বালিয়াড়ি (sand dune) বলা হয়।


13. বারখান বলতে কী বোঝ?


উত্তর: ধারণা: প্রবহমান বায়ুর গতিপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে একেবারে চন্দ্রকলার আকারে যেসব বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে, সেগুলিকে বারখান (barchan) বলা হয়। বৈশিষ্ট্য: ① বারখান প্রকৃতপক্ষে তির্যক বালিয়াড়ির একটি রূপ। ② এগুলি সাধারণত চলমান বা ভ্রাম্যমাণ হয়। ③ উচ্চতা 15 থেকে 30 মিটার পর্যন্ত হতে পারে।


14. ওজোন স্তরে ওজোনের বিয়োজনে NO-এর ভূমিকা কী?


উত্তর: NO, O3 -এর সাথে বিক্রিয়া করে NO₂ ও ০₂ গঠনের মাধ্যমে ০₃-কে বিয়োজিত করে। এর ফলে ওজোন স্তরের ক্ষয় ঘটে।


14.বায়ুতে উপস্থিত একটি গ্যাসের নাম করো, যেটির পরিমাণ বাড়লে বিশ্বউয়ায়ন ঘটে? অনুরূপ প্রশ্ন, বায়ুমণ্ডলের উয়তা বৃদ্ধি করে এমন একটি গ্যাসের নামলেখো।


উত্তর:  বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) গ্যাসের পরিমাণ বাড়লে বিশ্বউয়ায়ন ঘটে বা বায়ুমণ্ডলের উয়তা বৃদ্ধি পায়।


15.  বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির উপস্থিতির একটি সুবিধা উল্লেখ করো।


উত্তর:  বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির উপস্থিতির জন্য পৃথিবীতে জীবনধারণের উপযুক্ত উয়তার সৃষ্টি হয়েছে।


17. U-আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি বলতে কী বোঝ?


উত্তর: ধারণা: সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় সেখানে হিমবাহের পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় সমানভাবে হয় বলে ওই উপত্যকাটির আকৃতি ইংরেজি অক্ষর 'U'-এর মতো দেখতে হয়। তাই একে U-আকৃতির উপত্যকা বলা হয়। এই U আকৃতির উপত্যকাটিই হিমদ্রোণি নামে পরিচিত।


বৈশিষ্ট্য: অনেকসময় এরকম গভীর উপত্যকায় জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়। এই হ্রদগুলিকে প্যাটারনস্টার হ্রদ বলে। হিমদ্রোণিতে হিমসিঁড়ি বা হিমসোপান দেখতে পাওয়া যায়। উদাহরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োসেমিতি উপত্যকা।


Long Answer Question


1. মরুভূমিতে ও উপকূল অঞ্চলে বালুকাকণা কীভাবে সৃষ্টি হয়?


উত্তর: মরুভূমিতে বালুকাকণা সৃষ্টির পদ্ধতি: মরুভূমি বলেত সাধারণভাবে বোঝায় দিগন্তবিস্তৃত বালি ঢাকা ভূমি। মরুভূমিতে এত বিপুল পরিমাণ বালি সৃষ্টির কারণগুলি হল-


(i) বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ: মরুভূমির প্রায় বৃষ্টিহীন শুষ্ক পরিবেশ, যার ফলে ওখানকার শিলাস্তর তথা ভূমি শুকনো খটখটে অবস্থায় থাকে।


(ii) দিন ও রাতের মধ্যে উন্নতার অত্যধিক পার্থক্য: দিন ও রাতের মধ্যেউয়তার পার্থক্য বেশি হওয়ার ফলে ওখানকার শিলাস্তরে ব্যাপকহারে যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটে। কারণ দিনের বেলা উন্নতা প্রায় 45°-50° সে বা তার বেশি উঠে গেলেও রাতে তা ৪°-10° সে-এর কাছাকাছি নেমে আসে। এতে শিলার খনিজগুলি ক্রমাগত ভিন্ন ভিন্ন হারে প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। এর ফলে যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলাসমূহ ক্রমান্বয়ে খণ্ডবিখণ্ড বা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে শেষে বালুকণায় পরিণত হয়।


(iii) অবঘর্ষ ও ঘর্ষণ: চূর্ণবিচূর্ণ শিলাসমূহ বায়ুর মাধ্যমে বাহিত হওয়ার সময় পরস্পর ঠোকাঠুকি ও ঘর্ষণেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণায় পরিণত হয়।    


(iv) কোয়ার্টজ কণা সমৃদ্ধ শিলার উপস্থিতি: বেলেপাথর, গ্র্যানাইট, নিস প্রভৃতি শিলাখণ্ডগুলি ভেঙে বালুকণার সৃষ্টি হয়। এইসব কণার মধ্যে অতি কঠিন কোয়ার্টজ কণা থাকে, সেগুলিও শিলাকে ক্ষয় করে বালুকণা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।


(v)উপকূল অঞ্চলে বালুকাকণা সৃষ্টির পদ্ধতি: উপকূল অঞ্চলে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকার এবং বায়ুপ্রবাহের সহায়তা নিয়ে প্রধানত সমুদ্রতরঙ্গ অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, দ্রবণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় প্রভৃতি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তটভূমির শিলাসমূহকে ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ করে অবশেষে বালিতে পরিণত করে। উপকূল অঞ্চলে সংঘটিত রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে আর্দ্র বিশ্লেষণ, অঙ্গারযোজন ও জারণ উল্লেখযোগ্য। এর ফলে শিলা বিয়োজিত ও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে বালুকণা সৃষ্টি করে।

2. বায়ুর অপসারণের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি কী কী?

সিফ বালিয়াড়ির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।


উত্তর: সিফ বালিয়াড়ির বৈশিষ্ট্য: প্রবহমান বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠা খুব দীর্ঘ কিন্তু সংকীর্ণ বালিয়াড়িকে বলা হয় সিফ। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল-


(i) বিস্তার ও উচ্চতা: সিফ বালিয়াড়ি 100 কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এর উচ্চতা 100 মিটার পর্যন্ত হতে পারে।


(ii) সমান্তরাল অবস্থান: অনেকসময় পরস্পর সমান্তরালভাবে অনেকগুলি সিফ বালিয়াড়ি গড়ে উঠতে দেখা যায়।


(iii) শিঙের অবস্থান: কখনো-কখনো প্রবল বায়ুপ্রবাহে অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি বা বারখানের মাঝের অংশ ক্ষয় হয়ে যায় এবং দুই পাশে শিঙের মতো শিরা দুটি ক্রমশ বড়ো হয়ে অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ বালিয়াড়িরূপে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠে।


(iv) করিডোর: দুটি সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অংশকে করিডোের বলে। এর মধ্য দিয়ে বায়ু প্রবলবেগে সোজাসুজি প্রবাহিত হয়।


(v) আকৃতি: বালিয়াড়ির শীর্ষদেশ তীক্ষ্ণ করাত আকৃতির হয়।


3. পরিবেশের স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে শক্তির উৎস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজ কী কী উপায় অবলম্বন করতে পারে?


উত্তর: ছাত্র সমাজ প্রদত্ত উপায়গুলি অবলম্বন করতে পারে-


(i) জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত যানবাহনের ব্যবহার কমিয়ে সাইকেলের মতো পরিবেশবান্ধব যান বেশি ব্যবহার করা।


(ii) বিদ্যুতের অপচয় রোধ করার জন্য বাড়িতে কিংবা স্কুলে যাতে বিনা কারণে বৈদ্যুতিক আলো, পাখা প্রভৃতি না চালানো হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা এবং অন্যদেরকেও এই ব্যাপারে সতর্ক করা।


(iii) যেসব ক্ষেত্রে বিকল্পশক্তির উৎসগুলি ব্যবহার করা সম্ভব হবে, সেইসব ক্ষেত্রে এইসব শক্তি-চালিত যন্ত্রগুলি (যেমন- সোলার কুকার, সোলার ক্যালকুলেটর) ব্যবহার করা এবং সমাজের বাকিদেরও এই ব্যাপারে সচেতন করা।

5. উদাহরণ ও চিত্র-সহ বায়ুর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপগুলি বর্ণনা করো।
অথবা, বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপের বর্ণনা দাও।


উত্তর: বায়ুর সঞ্চয়জাত ভূমিরূপসমূহ: বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপগুলি হল-


বালিয়াড়ি


বালিপূর্ণ বায়ুর গতিপথে গাছপালা, বড়ো প্রস্তরখণ্ড, ঝোপঝাড় বা অন্য কোনোরকম বাধা থাকলে বায়ুবাহিত বালির কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হয়ে ক্রমশ ঢিবির মতো উঁচু হয়ে যায়। স্তূপাকারে সঞ্চিত এই বালির ঢিপিগুলিকে বলা হয় বালিয়াড়ি (sand dune)।


উপবিভাগ: বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড বালিয়াড়িকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন তির্যক বালিয়াড়ি এবং ② অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি।


(i) তির্যক বালিয়াড়ি: যেসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতির সঙ্গে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠে, তাদের বলে তির্যক বালিয়াড়ি। এদের আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়- [i] বারখান, [ii] অ্যাকলে বালিয়াড়ি এবং [iii] রোর্ডস বালিয়াড়ি।


(i) বারখান: যেসব বালিয়াড়ি একেবারে চন্দ্রকলার আকারে গড়ে ওঠে, সেই বালিয়াড়িগুলিকে বলে বারখান (barchan)।


উদাহরণ: সাহারা মরুভূমিতে অনেক বারখান দেখা যায়।


(ii) অ্যাকলে বালিয়াড়ি: একাধিক বারখান পরপর পাশাপাশি গঠিত হওয়ার ফলে যে আঁকাবাঁকা ও সারিবদ্ধ শৈলশিরার মতো বালিয়াড়িশ্রেণির সৃষ্টি হয়, তাদের একত্রে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলা হয়। এই বালিয়াড়ির বাঁকের সামনের অংশকে লিংগুঅয়েড এবং পিছনের অংশকে বারখানয়েড বলে।


(iii) রোর্ডস বালিয়াড়ি: যেসব তির্যক বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা পিরামিডের মতো সেই বালিয়াড়িগুলিকে বলে রোর্ডস বালিয়াড়ি। বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে বারখানগুলিই রোর্ডস বালিয়াড়িতে পরিণত হয়।

(3) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি: যেসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠে, সেইসব বালিয়াড়িকে বলা হয় অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি। এদের মধ্যে যেগুলি খুব দীর্ঘ কিন্তু সংকীর্ণ, একেবারে তরবারির মতো দেখতে, সেগুলিকে বলে সিফ (seif) বালিয়াড়ি।


উদাহরণ: থর মরুভূমিতে সিফ দেখা যায়।


(3) অন্যান্য বালিয়াড়ি: উল্লিখিত প্রধান দুই বালিয়াড়ি ছাড়াও উৎপত্তি, আকার ও অবস্থান অনুসারে আরও কয়েক ধরনের বালিয়াড়ি মরুভূমিতে দেখা যায়। তবে এগুলি অপ্রধান বালিয়াড়ি, যেমন-


(i) মস্তক বালিয়াড়ি: ঝোপঝাড়, প্রস্তরখণ্ড প্রভৃতির যে দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, সেই দিকেই বালিয়াড়ি সৃষ্টি হলে তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বলে।


(ii) পুচ্ছ বালিয়াড়ি: প্রস্তরখণ্ড, গাছপালা প্রভৃতির যে দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, ঠিক তার বিপরীত দিকে সরু ল্যাজের মতো গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে বলে পুচ্ছ বালিয়াড়ি।


(iii) পার্শ্বস্থ বালিয়াড়ি: প্রস্তরখণ্ড, ঝোপঝাড় প্রভৃতির উভয়দিকে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হলে তাকে পার্শ্বস্থ বালিয়াড়ি বলে।


(iv) অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি: মস্তক বালিয়াড়ির সামনে ঘূর্ণি বাতাসের প্রভাবে সৃষ্ট বালিয়াড়ি অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি নামে পরিচিত।


(v) নক্ষত্র বালিয়াড়ি: বিভিন্ন দিক থেকে আসা বাতাসের মাধ্যমে প্রস্তরখণ্ড, গাছপালা প্রভৃতির বিভিন্ন দিকে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হলে তাকে নক্ষত্র বা তারা বালিয়াড়ি বলে।


(vi) অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি: বেশিরভাগ বালিয়াড়িই বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে সরে যায়। এদের বলে অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে 

এই চলমান বালিয়াড়িকে বলে প্রিয়ান।


লোয়েস সমভূমি


উৎপত্তি: মরুভূমির বালুকামিশ্রিত হলুদ রঙের শিথিল অতিসূক্ষ্ম পলিকণা বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত উড়ে গিয়ে সঞ্চিত হয়। একে লোয়েস (loess) বলে। এভাবে বায়ুবাহিত সূক্ষ্ম বালুকণা ও পলিকণা দীর্ঘপথ অতিক্রম করে সেখানকার বিস্তৃত এলাকায় সঞ্চিত হয়ে যখন সমভূমি সৃষ্টি করে, তখন তাকে লোয়েস সমভূমি বলে। উদাহরণ: উত্তর চিনের হোয়াংহো নদীর উপত্যকায় এই লোয়েস সমভূমি দেখা যায়। মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বালুকারাশি উড়ে এসে চিনের হোয়াংহো নদীর উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে এই সমভূমি গঠন করেছে।




    👉Paid Answer (For Membership User)


Editing By:- Lipi Medhi