3. 'ঢাকা অনুশীলন সমিতি' প্রতিষ্ঠা করেন-
(a)কৃয়কুমার মিত্র
(b)পুলিনবিহারী বসু ✔
(c) শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু
(d) সতীশচন্দ্র বসু
4. বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রথম শহিদ হন-
(a) ক্ষুদিরাম বসু ✔
(b) বিনয় বসু
(c) দীনেশ গুপ্ত
(d) বাঘাযতীন
5. কোন্ মামলায় ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশ হয়?
(a) রেশমি রুমাল মামলা
(b) কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা
(c) আলিপুর বোমার মামলা
(d) মজফ্ফরপুর ষড়যন্ত্র মামলা ✔
6. সূর্য সেন প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবীদলের নাম ছিল-
(a) অনুশীলন সমিতি
(b) গদর দল
(c) ইন্ডিয়ান রিপাবলিক্যান আর্মি ✔
(d)বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স
7. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে নেতৃত্ব দেন-
(a) ভগৎ সিং
(b) বিনয় বসু
(c) সূর্য সেন ✔
(d) রাসবিহারী বসু
৪. 'মাস্টারদা' নামে পরিচিত ছিলেন-
(a) বেণীমাধব দাস
(b) সূর্য সেন ✔
(c) কৃষ্ণকুমার মিত্র
(d) হেমচন্দ্র ঘোষ
9. 'গদর পার্টি' প্রতিষ্ঠা করেন-
(a) লালা হরদয়াল ✔
(b) সুফি অম্বাপ্রসাদ
(c) অজিত সিং
(d) শ্যামজি কৃয়বর্মা
10. 'গদর' শব্দের অর্থ হল-
(a) পবিত্র
(b) বিপ্লব ✔
(c) দেশপ্রেম
(d) মাতৃভূমি
11. 'অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি' প্রতিষ্ঠা করেন-
(a) পুলিনবিহারী বসু
(b) কৃষ্ণকুমার মিত্র
(c) সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
(d) শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ✔
12. অলিন্দ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন-
(a) বিনয় বসু ✔
(b) বাদল গুপ্ত
(c) দীনেশ গুপ্ত
(d) সিম্পসন
13. ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে কে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন?
(a) বাঘাযতীন
(b) বসন্ত বিশ্বাস
(c) রাসবিহারী বসু ✔
(d) সুভাষচন্দ্র বসু
14. বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যা করার চেষ্টা করেন-
(a) বীণা দাস ✔
(b) কল্পনা দত্ত
(c) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
(d) সুনীতি চৌধুরি
15. ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে (১২ ফেব্রুয়ারি) 'রশিদ আলি দিবস' পালনের উদ্যোগ নেয়-
(a) জাতীয়তাবাদী ছাত্র পরিষদ
(b) মুসলিম ছাত্র লিগ ✔
(c) বামপন্থী ছাত্র সংগঠন
(d) কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ
16. 'রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ' প্রতিষ্ঠা করেন-
(a) নেলী সেনগুপ্তা
(b) বাসন্তী দেবী
(c) সরোজিনী নাইডু ✔
(d) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
17. 'বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা' রচনা করেন-
(a) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(b) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(c) রজনীকান্ত সেন
(d) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ✔
18. লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করেন-
(a) প্রভাবতী বসু
(b) সরলাদেবী চৌধুরানি ✔
(c) লীলা নাগ
(d) সরোজিনী নাইডু
19. আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল-
(a) বীরভূম
(b) মেদিনীপুর ✔
(c) মুরশিদাবাদ
(d) নদিয়া
20. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় গোপনে কংগ্রেসের বেতারকেন্দ্র পরিচালনা করেন-
(a) সুচেতা কৃপালনী
(b) সরোজিনী নাইডু
(c) অরুণা আসফ আলি
(d) ঊষা মেহতা ✔
21. বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়ে 'ফুলতার' ছদ্মনাম গ্রহণ করেন-
(a)প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ✔
(b) কল্পনা দত্ত
(c) বীণা দাস
(d) কল্যাণী দাস
1 * ব্রিটিশ আমলে ভারতের দলিত সম্প্রদায় কীরূপ অমর্যাদার শিকার ছিল?
উত্তর- ব্রিটিশ আমলে ভারতে দলিত সম্প্রদায়গুলি উচ্চবর্ণের শোষণ, অত্যাচার, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার ছিল। মন্দিরে প্রবেশ, পুকুর বা জলাধার ব্যবহার, বিদ্যালয়ে পড়াশোনা, সামাজিক মেলামেশা প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণের অর্থাৎ দলিত হিন্দু সম্প্রদায়কে বঞ্চিত করে রাখা হত।
2* সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিতে কী বলা হয়?
উত্তর- সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারাㅡ[1] ভারতের মুসলিম, শিখ ভারতীয় খ্রিস্টান, ইউরোপীয় প্রভৃতি বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। [2] হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু ও দলিত হিন্দু-এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
3* দলিত কাদের বলা হয়?
উত্তর- হিন্দু বর্ণব্যবস্থায় জন্ম ও পেশাগত পরিচিতির বিচারে যেসব মানু সমাজের নিম্নস্তরে অবস্থান করে এবং বিভিন্ন সময়ে উচ্চবর্ণের দ্বার সামাজিক বঞ্ছনার শিকার হয়, তারা সাধারণভাবে দলিত নামে পরিচিত।
4. ব্রিটিশদের আমলে দলিতদের সপক্ষে গড়ে-ওঠা দুটি আন্দোলনে নাম লেখো।
উত্তর- দলিতদের সপক্ষে গড়ে-ওঠা দুটি আন্দোলন ছিল অকাি আন্দোলন এবং ভাইকম সত্যাগ্রহ।
5* কোন্ পরিস্থিতিতে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর- ব্রিটিশ সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেয়। এর প্রতিবাদে গান্ধিজি আমরণ অনশন শুরু করলে তাঁর প্রাণসংশয় দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকর পুনা চুক্তি স্বাক্ষর করে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এলে আপাতত সমস্যা মেটে।
6* পুনা চুক্তির (১৯৩২ খ্রি.) দ্বারা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়?
উত্তর- পুনা চুক্তির দ্বারা- [1] আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেন, [2] গান্ধিজি নির্বাচনে দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৭৮টি থেকে বাড়িয়ে ১৫১টি করার দাবি মেনে নেন।
7.গুরুচাঁদ ঠাকুর স্মরণীয় কেন?
উত্তর- বাংলার দলিত আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। পিতা হরিচাঁদ ঠাকুরের মতোই তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য নানান কাজ করেছেন। দলিতদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি বাংলার গ্রামে গ্রামে অংসখ্য বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের মতুয়া আন্দোলনের কান্ডারি ছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। তার প্রচেষ্টাতেই চণ্ডালের পরিবর্তে নমঃশূদ্র নাম সরকারি স্বীকৃতি পায়।
৪ *নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে কী জান?
উত্তর- ব্রিটিশ শাসনকালে নমঃশূদ্র নামে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত সম্প্রদায় তাদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পশ্চাদ্গামিতার বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ আন্দোলন গড়ে তোলে। এটি নমঃশূদ্র আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৮৭২ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়।
9* ব্রিটিশ আমলে বাংলার নমঃশূদ্রদের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর- ব্রিটিশ আমলে বাংলার নমঃশূদ্রদের অধিকাংশই ছিলেন খুব গরিব। অশিক্ষা, অচিকিৎসা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার অভাব ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। ব্রিটিশ সরকার এবং জমিদারশ্রেণি নমঃশূদ্রদের ওপর তীব্র শোষণ-পীড়ন চালাত। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের ঘৃণার চোখে দেখত এবং 'চণ্ডাল' বলত।
10* পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্রদের পেশা কী ছিল?
উত্তর- পূর্ববঙ্গের নমঃশূদ্রদের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ। এ ছাড়া তারা মাছ ধরা, তাঁত বোনা, অন্যের বাড়ি ও জমিতে দিনমজুরের কাজ প্রভৃতি করত।
11 * ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতার নাম লেখো।
উত্তর- ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরচাঁদ ঠাকুর, রাজেন্দ্রলাল মণ্ডল, মুকুন্দবিহারী মল্লিক, বিরাটচন্দ্র মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ।
12 * কবে, কোন্ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম নমঃশূদ্র আন্দোলন শুরু হয়?
উত্তর- ১৮৭২-৭৩ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর-বাখরগঞ্জ অঞ্চলে প্রথম নমঃশূদ্র আন্দোলন শুরু হয়। এই সময় এই অঞ্চলের এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্র নেতার মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের নিমন্ত্রিত হিন্দুরা আসতে অস্বীকার করলে নমঃশূদ্ররা সেই উচ্চবর্ণের সঙ্গে আর্থসামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। উচ্চবর্ণের কৃষিকাজ, ঘর ছাওয়া বা অন্যান্য কাজ করতে নমঃশূদ্ররা অস্বীকার করে।
13* ব্রিটিশ শাসনকালে গড়ে-ওঠা দুটি নমঃশূদ্র সংগঠনের নাম লেখো।
উত্তর- ব্রিটিশ শাসনকালে গড়ে-ওঠা দুটি উল্লেখযোগ্য নমঃশূদ্র সংগঠন ছিল নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন/উন্নয়নী সভা (১৯০২ খ্রি.)/ বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন (১৯১২ খ্রি.)/নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি (১৯২৬ খ্রি.)/বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি (১৯২৬ খ্রি.)।
14 * ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে নমঃশূদ্ররা কী নামে পরিচিত ছিল? কবে, কোন্ ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা 'নমঃশূদ্র' হিসেবে পরিচিত হয়?
উত্তর- ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে নমঃশূদ্ররা 'চণ্ডাল' নামে পরিচিত ছিল।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি রিপোর্টে 'চণ্ডাল' নামের পরিবর্তে তারা 'নমঃশূদ্র' নামে পরিচিত হয়।
1. * বিংশ শতকে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করো।
অথবা,
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ
ভূমিকা: বিংশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে বিভিন্ন নারীও যুক্ত হয়ে পড়েন। দীপালি সংঘের বিভিন্ন সদস্যা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, সুহাসিনী গাঙ্গুলী, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী, বীণা দাস প্রমুখ বঙ্গনারী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
[1] দীপালি সংঘ: বাংলার নারীদের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে শামিল করার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী লীলা নাগ (রায়) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় 'দীপালি সংঘ' প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংঘের সদস্যাদের লাঠি খেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হত।
[2 ] চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন: সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের (১৯৩০ খ্রি.) ঘটনায় বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর পর তিনি টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিস ধ্বংসের কাজে অংশ নেন এবং জালালাবাদের পাহাড়ের যুদ্ধে (১৯৩০ খ্রি.) প্রবল বিক্রমে লড়াই করে পালাতে সক্ষম হন।
[3] ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ: প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালীকিঙ্কর দে প্রমুখ বিপ্লবী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে। এই লড়াইয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে প্রীতিলতা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
[4] কল্পনা দত্তের বিভিন্ন কার্যকলাপ: সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠন 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি'র সদস্য বিপ্লবী কল্পনা দত্ত জেলের অন্যান্য বিপ্লবীদের পালানোর সুযোগ করে দিতে কলকাতা থেকে বিস্ফোরক নিয়ে আসেন। পরে প্রীতিলতার সঙ্গে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব পান। কিন্তু আক্রমণের আগেই তিনি ধরা পড়ে যান।
[5 ] জ্যাকসনকে গুলি: বিপ্লবী বীণা দাস ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন বয়কট আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে (১৯৩২ খ্রি.) গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে বীণা গুলি চালালে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।
[6 ] ঝাঁসি বাহিনীর বীরত্ব: চিকিৎসক ড. লক্ষ্মী সায়গল নিজের উজ্জ্বল কর্মজীবন ছেড়ে সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের ব্রিটিশ শক্তিকে আক্রমণ করে পরাজিত হলে লক্ষ্মী ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেফতার হন।
উপসংহার: ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণে কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায়। যেমন- [1] মূলত বাংলার নারীরাই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি সংখ্যায় অংশ নিয়েছিল। এই কাজে ভারতের অন্যত্র নারীদের অংশগ্রহণ তেমনভাবে লক্ষ করা যায় না। [2] মূলত উচ্চস্তরের শিক্ষিত নারীরা এই কাজে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সমাজের নিম্নস্তরের নারীদের মধ্যে এর বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি।
2.*দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক সম্পর্কে কী জান?
উত্তর: দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক
ভূমিকা: ভারতের সাংবিধানিক সংস্কার প্রবর্তনের জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লন্ডনে তিনটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এগুলির মধ্যে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল।
[1] বৈঠক: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক বসে। এই বৈঠকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে মহাত্মা গান্ধি, মুসলিম লিগের প্রতিনিধি হিসেবে মহম্মদ আলি জিন্না এবং দলিত প্রতিনিধি ড. ভীমরাও আম্বেদকর এই বৈঠকে যোগ দেন।
[2] গান্ধিজির দাবি: বৈঠকে গান্ধিজি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন- [i] একমাত্র কংগ্রেস সারা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। [ii] অস্পৃশ্যরা সংখ্যালঘু নয়, তারাও হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। [iii] মুসলিম বা সংখ্যালঘুদের পৃথক নির্বাচনের নীতি বাতিল করতে হবে। গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকর-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরা একমত ছিলেন না।
[3] বিতর্ক: দলিত শ্রেণির অধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব লাভের বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকরের তীব্র মতপার্থক্য দেখা যায়। এই সুযোগে হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি (১৯৩২ খ্রি.) ঘোষণা করেন।
[4] ব্যর্থতা: সরকার সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা দলিত-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিকে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দিলে আম্বেদকর তা সমর্থন করেন। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজি মুসলিম ও শিখদের পৃথক নির্বাচন মেনে নিলেও দলিতদের পৃথক নির্বাচনের নীতির বিরোধিতা করে আমরণ অনশন শুরু করেন। এভাবে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
উপসংহার: ইংরেজদের 'বিভাজন ও শাসননীতি' এই সময় ভারতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছিল। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মতভেদ বাড়ছিল। ফলে এই বৈঠকের ব্যর্থতা একপ্রকার অনিবার্য ছিল।
3. *দলিত শ্রেণির অধিকারের বিষয়ে গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকরের বিতর্ক সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টাকা লেখো।
অথবা, দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি ও আম্বেদকর বিতর্কের মূল প্রসঙ্গটি আলোচনা করো।
উত্তর: দলিতদের অধিকার সম্পর্কে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক
ভূমিকা: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি মহাত্মা গান্ধি এবং দলিত শ্রেণির প্রতিনিধি ড. ভীমরাও আম্বেদকর। দলিতদের অধিকার নিয়ে বৈঠকে গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে তীব্র মতভেদ ও বিতর্ক দেখা দেয়।
[1] মতভেদের কেন্দ্রবিন্দু: গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে মতভেদের
মূল বিষয় ছিল উচ্চবর্ণের হাত থেকে দলিতদের অধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব আদায়। এই অধিকার আম্বেদকর যেভাবে বা যতটা চাইছিলেন তার সঙ্গে গান্ধিজি একমত ছিলেন না।
[2] আম্বেদকরের পৃথক নির্বাচনের দাবি: আম্বেদকর লক্ষ করেছিলেন যে, দলিতরা ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে এবং এজন্য তারা নির্বাচনে নিজেদের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধিকে জেতাতে ব্যর্থ হয়। তাই আম্বেদকর দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচন, তথা রাজনৈতিক অধিকার দাবি করেন।
[3] পৃথক নির্বাচনে গান্ধিজির আপত্তি: গান্ধিজি দাবি করেন যে, দলিতরা সংখ্যালঘু নয়, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই তিনি দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দাবির বিরোধিতা করেন।
[4] সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা: এই অবস্থায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি (১৯৩২ খ্রি.) ঘোষণার মাধ্যমে দলিত- সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেন। আম্বেদকর তা সমর্থন করেন।
[5] গান্ধিজির অনশন: গান্ধিজি মুসলিম ও শিখদের পৃথক নির্বাচন মেনে নিলেও দলিতদের পৃথক নির্বাচনের নীতির বিরোধিতা করে আমরণ অনশন শুরু করেন।
উপসংহার: দলিতদের অধিকারের প্রশ্নে গান্ধিজির উদ্যোগকে আম্বেদকর পর্যাপ্ত নয় মনে করে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ অনশনে গান্ধিজির প্রাণসংশয় দেখা দিলে আম্বেদকর গান্ধিজির সঙ্গে পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করেন।
4. *কোন্ প্রেক্ষাপটে পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়? এই চুক্তিতে কী বলা হয়েছিল?
উত্তর: পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.)
ভূমিকা: ভারতের দলিতশ্রেণির অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের বিষয়কে কেন্দ্র করে কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধি ও দলিত সম্প্রদায়ের নেতা ড. ভীমরাও আম্বেদকরের মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা যায়।
[1] সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা: গান্ধি-আম্বেদকর মতভেদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের অনৈক্যের সুযোগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা (১৯৩২ খ্রি.) নীতি ঘোষণা করেন। এর দ্বারা দলিত-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়।
[2] গান্ধিজির অনশন: গান্ধিজি মুসলিম এবং শিখদের পৃথক নির্বাচন মেনে নিলেও দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে যারবেদা জেলে আমরণ অনশন শুরু করেন।
[3] চুক্তি স্বাক্ষর: অনশনের ফলে গান্ধিজির প্রাণ সংশয় হলে পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজির সঙ্গে ড. আম্বেদকর পুনা চুক্তি (২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষর করে পরিস্থিতি সামাল দেন। ফলে দলিতদের পৃথক নির্বাচন রোধ করা সম্ভব হয়
পূনা চুক্তির শর্তাবলি
পুনা চুক্তির দ্বারা- [1] আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করে হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেন, [2] গান্ধিজি নির্বাচনে দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৭৮টি থেকে বাড়িয়ে ১৫১টি করার দাবি মেনে নেন।
উপসংহার: ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করে রাখতে চাইত। পুনা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের সেই চেষ্টা আপাতত ব্যর্থ হয়। দলিত হিন্দু সম্প্রদায় পৃথক নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
Editing By- Lipi Medhi