অধ্যায় ৮ 

উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭-১৯৬৪ খ্রি)
--------------------------------------------------------------------

বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

1 *১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগ ভারতে কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করেছিল?

উত্তর- দেশভাগের ফলে সৃষ্ট সমস্যা

ভূমিকা: 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' (১৯৪৭ খ্রি.) অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নাম দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। নবগঠিত ভারত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন হয়।

[1] দেশত্যাগ: দেশভাগের পর মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পৃথক পাকিস্তানের সৃষ্টি হলে সেখানে হিন্দু, শিখ প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, ধর্ম ও সম্পত্তি নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়। ফলে পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও শিখ দেশত্যাগ করে ভারতে চলে আসে।

[2] উদ্বাস্তু সমস্যা: পূর্ব পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও শিখ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা ভারত সরকারের সামনে কঠিন সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, পাঞ্জাব প্রভৃতি রাজ্যে উদ্বাস্তু সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

[3] সম্পদ হ্রাস: দেশভাগের ফলে ভারতের অর্থ, সম্পদ, সামরিক শক্তি প্রভৃতির একটি বড়ো অংশ পাকিস্তানে চলে যায়। ফলে ভারতের অর্থ ও সম্পদ যথেষ্ট হ্রাস পায় এবং দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।

[4] কৃষি উৎপাদন ব্যাহত: দেশভাগের ফলে ভারতের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি পাকিস্তানের ভাগে পড়ে যায়। ফলে স্বাধীনতার পর ভারতের কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয় এবং দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়।

[5] শিল্পের কাঁচামালের অভাব: ভারতের পাট, তুলো প্রভৃতি কাঁচামাল উৎপাদক অঞ্চলের একটি বড়ো অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে ভারতে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব দেখা যায়। ফলে শিল্প উৎপাদন যথেষ্ট ব্যাহত হয়।

উপসংহার: দেশভাগের ফলে যে তীব্র সংকটের সৃষ্টি হবে তা এদেশের হিন্দু ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের কল্পনার বাইরে ছিল না। তা সত্ত্বেও দেশভাগের বিষয়ে তাঁরা দ্রুত সম্মতি দেন। এর ফলে অনেকে অভিযোগ করেন যে, ক্ষমতালিপ্সাই দ্রুত দেশভাগে-র সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কারণ। ঐতিহাসিক সুচেতা মহাজন তাঁদের 'ইন্ডিয়াজ স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম' গ্রন্থে বলেছেন যে, "তাড়াতাড়ি ও সহজে ক্ষমতা পাওয়ার লালসা থেকেই নেহরু ও প্যাটেল দেশভাগ মেনে নিয়েছিলেন।

2 *ভারতে যোগদানের আগে দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল?

উত্তর - দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনাঞ্চল ছাড়াও ছোটোবড়ো মিলিয়ে অন্তত ৬০০টি দেশীয় রাজ্য অবস্থিত ছিল। রাজ্যগুলির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯ কোটি।

[1] মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব: 'মন্ত্রী মিশন' ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে (১৬ মে) ঘোষণা করে যে, [i] ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির ওপর ব্রিটিশ আধিপত্যের অবসান ঘটবে। [ii] স্বাধীনতার পর ব্রিটিশ-শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি 'ভারতীয় ইউনিয়ন' গঠন করা হবে। [iii] বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়গুলি ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দেশীয় রাজ্যগুলিতে নিজ নিজ শাসকদের অধিকার বজায় থাকবে।

[2] ভারতের স্বাধীনতা আইন: 'ভারতীয় স্বাধীনতা আইন' (৪ জুলাই, ১৯৪৭ খ্রি.)-এ দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিজ নিজ স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অথবা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো একটি রাষ্ট্রে ইচ্ছানুসারে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়।ঘোষণা করে যে, স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেস কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করবে না। জুলাই মাসে কংগ্রেস নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দায়িত্বে 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর' খোলা হয়। এই দপ্তরের মাধ্যমে ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়।

উপসংহার: ভারতীয় নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার পূর্বেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, ভারতের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্য পাকিস্তানে যোগ দিলে বা স্বাধীন থাকলে তা স্বাধীন ভারতে সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক হবে। তাই বলা যায়, এই রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ভারতের 'রক্ত ও লৌহ' নীতি একান্তই অপরিহার্য ছিল।

3 * ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

উত্তর- দেশীয় রাজ্যগুলির বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনাঞ্চল ছাড়াও ছোটোবড়ো মিলিয়ে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল-

[1] সংখ্যাধিক্য: স্বাধীনতা লাভের সময়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে অন্তত ৬০০টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থিত ছিল।

[2] আয়তন: দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকাংশই ছিল আয়তনে ক্ষুদ্র। কোনো কোনো রাজ্যকে শুধু জমিদারের শাসন এলাকা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। আবার কয়েকটি দেশীয় রাজ্যের আয়তন যথেষ্টই বড়ো ছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হায়দ্রাবাদ, জম্মু ও কাশ্মীর, মহীশূর ও বরোদা।

[3] স্বৈরশাসন: দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকরা ছিলেন রাজ্যের চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। আইনের ঊর্ধ্বে থাকা এই শাসকরা নিজ নিজ  রাজ্যে স্বৈরশাসন চালাতেন। একমাত্র ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্যকেই। তাঁরা প্রাধান্য দিতেন।

[4] প্রজাদের দুর্দশা: দেশীয় রাজ্যগুলির প্রজাদের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। তাদের ওপর করের বিপুল বোঝা চেপে বসেছিল।

[5] পশ্চাদগামিতা: বেশিরভাগ দেশীয় রাজ্যই ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সামরিক, শিক্ষাগত প্রভৃতি দিক থেকে পিছিয়ে- পড়া অঞ্চল। দারিদ্র্য আর অশিক্ষা এইসব রাজ্যকে গ্রাস করে রেখেছিল।

উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে 'ভারতীয় স্বাধীনতা আইন'-এ দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অথবা ভারত বা পাকিস্তানের যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগদানের অধিকার দেওয়া হয়। সেই অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্টের পরবর্তীকালে দেশীয় রাজ্যগুলি পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করে।

4 * স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে ভারত কীরূপ নীতি বা উদ্যোগ গ্রহণ করে?

উত্তর- দেশীয় রাজ্য সম্পর্কে ডারতের উদ্যোগ

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্- মুহূর্তে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় শাসকদের শাসনাধীনে অন্তত ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এ ছাড়া পোর্তুগাল, ফ্রান্স প্রভৃতি কয়েকটি রাষ্ট্রের উপনিবেশও ভারতে ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর স্বাধীন সরকার এসব স্থান ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করে।

[1] কংগ্রেসের ঘোষণা: স্বাধীনতা লাভের আগেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করেন। তাঁরা ১৫ জুন (১৯৪৭ খ্রি.) ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ শক্তি ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব কংগ্রেস স্বীকার করবে না। ফ্রান্স এবং পোর্তুগালের ভারতীয় উপনিবেশগুলির বিষয়েও কংগ্রেস একই নীতি গ্রহণ করে।

[2] বল্লভভাই প্যাটেলের সক্রিয়তা: স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভগ্নলা পঙ্গুন্নি সদায় মেনন (ভি পি মেনন) দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। প্যাটেল ভারতভুক্তির বিনিময়ে দেশীয় রাজ্যের শাসকদের বিপুল ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুবিধা দানের প্রলোভন দেখান।

[3] ভারতভুক্তি: বল্লভভাই প্যাটেলের কূটনৈতিক চাপ ও হুমকির ফলে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ দেশীয় ** রাজ্য 'ভারতভুক্তির দলিল'-এ স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথমদিকে, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর ভারতে যোগদানে অস্বীকার করলেও শেষপর্যন্ত ভারতের চাপে তারা যোগদানে বাধ্য হয়। বেশ কিছু বছর পরে সিকিমও ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেয়।

[4] অন্যান্য উপনিবেশ: ভারতের চাপে চন্দননগর, মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ এবং গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশও ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

উপসংহার: স্বাধীন ভারতের সার্বভৌমত্বের কথা ভেবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা, কূটনৈতিক চাপ, রক্ত ও লৌহ নীতি, সামরিক অভিযান প্রভৃতি নানান ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

5. ভারতের স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের কী মনোভাব ছিল?

উত্তর- দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব

ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় থাকবে, না তারা ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেবে সে বিষয়ে স্বাধীনতা লাভের আগেই বিতর্ক দেখা দেয়। জাতীয় কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির পক্ষে মত প্রকাশ করে।

[1] হরিপুরা কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত: জাতীয় কংগ্রেস ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে জানায় যে, দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

[2] গান্ধিজির নীতি: কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধি মনে করতেন যে, ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কোনো দেশীয় রাজ্য স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তা হবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য।

[3] নেহরুর নীতি: কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু বলেন যে, ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব স্বীকার করা হবে না।

[4] কংগ্রেসের ঘোষণা: জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন ঘোষণা করে যে, ব্রিটিশ শক্তি ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব ভারত স্বীকার করবে না।

উপসংহার: স্বাধীনতা লাভের পূর্বে জাতীয় কংগ্রেস অখণ্ড ভারতের কথা ঘোষণা করেছিল। সেই অনুসারে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ভারতীয় ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করে। স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেস রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির চেষ্টা চালায়।

6 * দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির বিষয়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের কী ভূমিকা ছিল?

উত্তর- দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ভূমিকা

ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু এবং মহাত্মা গান্ধি ইঙ্গিত দেন যে, স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব ভারত সরকার মেনে নেবে না। স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।

[1] কঠোর মনোভাব: ভারতের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতে যোগদানে বাধ্য করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল কঠোর ও অনমনীয় মনোভাব গ্রহণ করেন।

[2] কূটনৈতিক চাপ: প্যাটেল বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে নানা কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি তাঁর সতি সচিব ভি পি মেননকে বলেন যে, আমরা দ্রুততার সঙ্গে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারলে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাবান রাজ্যগুলির দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।

[3] সামরিক হুমকি: সর্দার প্যাটেল কোনো কোনো দেশীয় রাজ্যকে সামরিক অভিযানের কথা বলে ভারতে যোগদানে বাধ্য করেন।

[4] অভিযান: সর্দার প্যাটেল শেষপর্যন্ত কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ, জুনাগড় প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় রাজ্যগুলির ওপর সামরিক অভিযান চালিয়ে রাজ্যগুলি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন।

উপসংহার: দেশীয় রাজ্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যে স্বাধীন ভারত গড়ে ওঠে তাতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অনমনীয় মনোভাব, প্রখর কূটনৈতিক বুদ্ধি, সামরিক অভিযান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর কঠোর 'রক্ত ও লৌহ' নীতির চাপেই বহু রাজ্য ভারতভুক্তির দলিলে সই করতে বাধ্য হয়।

7 * দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভারতের উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল? অথবা, ভারত কী কারণে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়?

উত্তর- দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য

ভূমিকা: স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় অন্তত ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এসব রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল। যেমন-

[1] জাতীয়তাবাদ: ব্রিটিশ শাসনকালে ব্রিটিশ-ভারত এবং দেশীয় রাজ্যগুলির জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ব্রিটিশ বিরোধিতায় শামিল হয়। অর্থাৎ তাঁরা ভারতবর্ষের মূল জাতীয়তাবাদী স্রোতের সঙ্গেই ছিলেন। অন্যদিকে ভারতের অখণ্ড ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী জাতীয় নেতৃবৃন্দও দেশীয় রাজ্যগুলির জনগণের এই স্বাধীনতার স্পৃহাকে সম্মান করতেন। তাঁরা বিচ্ছিন্ন স্বাধীন ভারতের কথা কল্পনা করতেন না। তাই তাঁরা চেয়েছিলেন দেশীয় রাজ্যগুলি মূল ভারত ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হোক।

[2] ঐতিহ্যের সংকট: ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত ব্রিটিশ-ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলি দীর্ঘদিন ধরে একই ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। তাই জাতীয় নেতৃবৃন্দ ভেবেছিলেন, দেশীয় রাজ্যগুলি স্বাধীন হলে তা ইতিহাস ও ঐতিহ্য-বিরোধী হবে।

[3] প্রজা আন্দোলন: বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার দাবিতে শক্তিশালী প্রজা আন্দোলন শুরু হয়। ফলে দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।

[4] পশ্চাদ্গামিতা: দেশীয় রাজ্যগুলির অধিকাংশই ছিল পশ্চাদ্গামি ও কুসংস্কারাচ্ছান্ন। স্বৈরাচারী শাসন ও মধ্যযুগীয় ভাবধারায় আচ্ছন্ন এসব রাজ্যের মানুষ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পশ্চাদ্গামিতা থেকে মুক্তি চাইছিল।

উপসংহার: অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ফলে একদিকে যেমন ভারতের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা পেয়েছে, অন্যদিকে তেমনি ভারতীয়দের মনে 'ভারতবোধ'-এর চেতনা জেগে উঠেছে।

৪ *ভারতের সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তিকরণের ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়?

উত্তর- ভারতের সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তিকরণের পদ্ধতি

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার সক্রিয় উদ্যোগ নেয়। এই সংযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত কয়েকটি পদ্ধতি গ্রহণ করে।

[1 ] প্রদেশগুলির সঙ্গে সংযুক্তি: কিছু কিছু দেশীয় রাজ্যকে তাদের সন্নিহিত ভারতীয় প্রদেশগুলির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেমন- মাদ্রাজের রাজ্যগুলিকে মাদ্রাজ প্রদেশের সঙ্গে, পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে উড়িষ্যা ও মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে, দাক্ষিণাত্য ও গুজরাটের রাজ্যগুলিকে বোম্বাই প্রদেশের সঙ্গে, গাড়োয়াল, রামপুর ও বেনারসকে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে, কোচবিহারকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে, খাসি পার্বত্য অঞ্চলকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এইভাবে ২১৬টি দেশীয় রাজ্য পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়।

[2] যুক্তরাজ্য গঠন: ২৭৮টি দেশীয় রাজ্যকে নিয়ে ৮টি প্রদেশ গঠন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল জম্মু-কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ ও মহীশূর। অবশিষ্ট ২৭৫টি দেশীয় রাজ্যকে অন্যান্য ৫টি প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করে বৃহৎ রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এই ৫টি প্রদেশ হল রাজস্থান, মধ্যভারত, সৌরাষ্ট্র, ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন ও পেপসু'।

[3] কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: হিমাচল প্রদেশ, বিলাসপুর, ভূপাল, কচ্ছ, ত্রিপুরা, মণিপুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করে সেগুলি কেন্দ্রীয় শাসনাধীনে রাখা হয়। এরূপ ৬১টি দেশীয় রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়।

উপসংহার: দেশীয় রাজ্যগুলিকে স্বাধীন ভারতে সংযুক্তিকরণের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। একাজে তাঁকে যোগ্য সহায়তা প্রদান করেন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি পি মেনন।

9*ভারত কবে স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয়? এই সময় ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলিকে কয় ভাগে ভাগ করা হয়?

উত্তর- স্বাধীন ভারত ও তার অঙ্গরাজ্য

ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের নিজস্ব সংবিধান চালু হয়। এই সময় থেকে ভারত একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই সময় ভারতের রাজ্যগুলিকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। যথা-

[1] 'ক' শ্রেণি: গভর্নরশাসিত রাজ্য: এই শ্রেণিতে মোট ৯টি রাজ্য ছিল। যথা- [i] পশ্চিমবঙ্গ, [ii] আসাম, [iii] বিহার, [iv] উড়িষ্যা, [v] উত্তরপ্রদেশ, [vi] মধ্যপ্রদেশ, [vii] বোম্বাই, [viii] মাদ্রাজ ও [ix] পাঞ্জাব।
[2] 'খ' শ্রেণি: রাজা বা ওই ধরনের শাসক দ্বারা শাসিত রাজ্য: এই শ্রেণিতে মোট ৮টি রাজ্য ছিল। যথা-[i] হায়দ্রাবাদ, [ii] মধ্যভারত, [iii] মহীশূর, [iv] পাতিয়ালা ও পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়ন (PEPSU), [v] জম্মু ও কাশ্মীর, [vi] রাজস্থান, [vii] সৌরাষ্ট্র, [viii] ত্রিবাঙ্কুর-কোচিন।

[3] 'গ' শ্রেণি: কমিশনারশাসিত রাজ্য: এই শ্রেণিতে মোট ১০টি রাজ্য ছিল। যথা- [i] আজমীর, [ii] ভূপাল, [iii] বিলাসপুর, [iv] হিমাচল প্রদেশ, [v] কচ্ছ, [vi] কুর্গ, [vii] দিল্লি, [viii] মণিপুর, [ix] ত্রিপুরা ও [x] বিন্ধ্য প্রদেশ।

[4] 'ঘ' শ্রেণি: কেন্দ্রশাসিত রাজ্য: এই শ্রেণিতে ছিল দুটি কেন্দ্রশাসিত রাজ্য। যথা-[i] আন্দামান ও [ii] নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

উপসংহার: ভারত স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর এদেশে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনকাঠামো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগের অঙ্গরাজ্যগুলি স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার পায়।

10 *স্বাধীন ভারত সরকার দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে?

উত্তর- দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির পদক্ষেপ

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনের বাইরে অন্তত ৫৬৫টি রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলি দেশীয় রাজ্য নামে পরিচিত।

'ভারতের স্বাধীনতা আইন' (১৯৪৭ খ্রি.) অনুসারে এই রাজ্যগুলি স্বাধীন থাকার অথবা ভারত ও পাকিস্তানের যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার অধিকার পায়।

[1] ভারতের উদ্যোগ: ভারতের অখণ্ডতা, জাতীয় সংহতি, নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ প্রভৃতির প্রয়োজনে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারত নিজের অন্তর্ভুক্ত করার বলিষ্ঠ উদ্যোগ গ্রহণ করে। 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর'-এর দায়িত্বে থাকা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এই বিষয়ে কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।

[2] সাফল্য ও সমস্যা: ভারতের সক্রিয় উদ্যোগের ফলে স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগ দেয়। তবে জুনাগড়, কাশ্মীর ও হায়দ্রাবাদ ভারতে যোগদানে অনাগ্রহ দেখালে ভারতের অখণ্ডতা ও ঐক্য সমস্যার সম্মুখীন হয়।

[3] জুনাগড়ের অন্তর্ভুক্তি: হিন্দু-অধ্যুষিত দেশীয় রাজ্য জুনাগড় পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে প্রজাবিদ্রোহের চাপে সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশ করে এবং সেখানকার মানুষের গণভোটের সম্মতির দ্বারা জুনাগড় ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

[4] কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি: মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মীরের হিন্দু মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীনতা রক্ষায় তৎপর হলে পাক সেনা ও হানাদারবাহিনী কাশ্মীরে ঢুকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় হরি সিং 'ভারতভুক্তির দলিল'-এ স্বাক্ষর করলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

[5] হায়দ্রাবাদের অন্তর্ভুক্তি: হায়দ্রাবাদ নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আমদানি করে এবং রাজ্যের অভ্যন্তরে ও সীমান্ত এলাকায় হিন্দুদের ওপর তীব্র নির্যাতন শুরু করে। ফলে হায়দ্রাবাদে ভারতীয় সেনার অভিযান শুরু হয়। হায়দ্রাবাদ আত্মসমর্পণে বাধ্য হলে রাজ্যটি ভারতের দখলে আসে।

উপসংহার: স্বাধীনতা লাভের পর অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ভারত রাষ্ট্রের ভৌগোলিক আয়তন, জনবল, প্রাকৃতিক সম্পদ প্রভৃতি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এসবের ওপর ভর করে ভারত শীঘ্রই এশিয়ার অন্যতম শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

11 ভারত সরকার কীভাবে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতীয় ইউনিয়নে সংযুক্ত করার প্রশ্নটি সমাধান করেছিল?

উত্তর- দেশীয় রাজ্য সম্পর্কে ভারতের উদ্যোগ

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রাক্- মুহূর্তে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় শাসকদের শাসনাধীনে ৫০০-রও বেশি দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এ ছাড়া পোর্তুগাল, ফ্রান্স প্রভৃতি কয়েকটি রাষ্ট্রের উপনিবেশও ভারতে ছিল। স্বাধীনতা লাভের পর এসব স্থানকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

[1] কংগ্রেসের ঘোষণা: স্বাধীনতা লাভের আগেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কথা ঘোষণা করে। তারা ১৫ জুন (১৯৪৭ খ্রি.) ঘোষণা করে যে, ব্রিটিশ শক্তি ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব কংগ্রেস স্বীকার করবে না। ফ্রান্স এবং পোর্তুগালের ভারতীয় উপনিবেশগুলি সম্পর্কেও কংগ্রেস একই নীতি গ্রহণ করে।

[2] বল্লভভাই প্যাটেলের সক্রিয়তা: স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ভি পি মেনন দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। প্যাটেল ভারতভুক্তির বিনিময়ে দেশীয় রাজ্যের শাসকদের বিপুল ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুবিধা দানের প্রলোভন দেখান।

[3] ভারতভুক্তি: বল্লভভাই প্যাটেলের কূটনৈতিক চাপ ও হুমকির ফলে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী ৩ সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য 'ভারতভুক্তির দলিল'-এ স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথমদিকে, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর ভারতে যোগদানে অস্বীকার করলেও শেষপর্যন্ত ভারতের চাপে তারা যোগদানে বাধ্য হয়। সিকিমও ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে যোগ দেয়।

[4] অন্যান্য উপনিবেশ: ভারতের চাপে চন্দননগর, মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ এবং গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশও ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

12. জুনাগড় রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত অন্তর্ভুক্ত হয়?

উত্তর- জুনাগড়ের ভারতভুক্তি

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ দেশীয় রাজ্য ভারতে যোগদান করলেও কয়েকটি রাজ্য ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে। এগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কাথিয়াবাড় উপদ্বীপে অবস্থিত জুনাগড়।

[1] সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি: দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশই ছিল হিন্দু। কিন্তু সেখানকার মুসলিম নবাব জুনাগড়কে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেন। জুনাগড়ের দেওয়ান শাহনওয়াজ ভুট্টো-ও ছিলেন মুসলিম লিগের উগ্র সমর্থক।

[2] প্রজাবিদ্রোহ: জুনাগড়ের নবাব রাজ্যটিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করতে চাইলে সেখানকার অ-মুসলিম প্রজাদের মধ্যে প্রবল গণবিক্ষোভ ও ব্যাপক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। 

[3] সেনা অভিযান: জুনাগড়ে তীব্র প্রজাবিদ্রোহের ফলে সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সেনাবাহিনী জুনাগড়ে প্রবেশ করে।

[4] গণভোট: জুনাগড়ের বাসিন্দারা ভারত, না পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে আগ্রহী তা জানার জন্য সেখানে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গণভোট নেওয়া হয়। গণভোটে সেখানকার মানুষ ভারতে যোগদানের পক্ষে মত দেয়।

[5] ভারতে যোগদান: গণভোটের পর জুনাগড় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে (জানুয়ারি) ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উপসংহার: জুনাগড়ের ভারতে অন্তর্ভুক্তির ফলে দেশীয় রাজ্য দখলে এনে পাকিস্তানের শক্তিবৃদ্ধির প্রয়াস ধাক্কা খায়। এতে ভারতের সুবিধা হয়।

13 * কাশ্মীর সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, কাশ্মীর কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়? অথবা, কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়?

উত্তর- কাশ্মীর সমস্যা/কাশ্মীরের ভারতভুক্তি

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতীয় ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য দেশীয় রাজ্য ছিল কাশ্মীর। ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে উদ্যোগী হন।

[1] জটিলতা: কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং হিন্দু হলেও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা ছিল মুসলিম। এই অবস্থায় মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করলে পাকিস্তান ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজ রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে, ফলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

[2] পাক হানা: পাক মদতপুষ্ট হানাদারবাহিনী ও পাক সেনাদল কাশ্মীরে প্রবেশ করে (২২ অক্টোবর, ১৯৪৭ খ্রি.) সেখানে ব্যাপক হত্যালীলা, লুণ্ঠন ও নির্যাতন শুরু করে। ফলে মহারাজা হরি সিং ভারত সরকারের কাছে সামরিক সহায়তা প্রার্থনা করে।

[3] ভারতভুক্তির দলিল স্বাক্ষর: কাশ্মীরের সামরিক সহায়তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার জানিয়ে দেয় যে, মহারাজা 'ভারতভুক্তির দলিল'-এ স্বাক্ষর করলে তবেই তারা কাশ্মীরে সেনা পাঠাবে। এদিকে পাকবাহিনী কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থান দ্রুত দখল করতে থাকলে মহারাজা হরি সিং 'ভারতভুক্তির দলিল'-এ স্বাক্ষর করেন।

[4] ভারতের অভিযান: হরি সিং 'ভারতভুক্তির দলিল'-এ স্বাক্ষর করার পরের দিন ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে দ্রুত কাশ্মীরের ২/৩ অংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয়। এই বাহিনীর সহায়তায় ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরের শাসনক্ষমতা দখল করেন।
উপসংহার: পাকিস্তান মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মীরকে নিজেদের দখলে আনার নাপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতের 'রক্ত ও লৌহ' নীতি ও কাশ্মীরের হারাজা হরি সিং-এর উদ্যোগের ফলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু কাশ্মীর না পাওয়ার হতাশা থেকে পাকিস্তান আজও ভারতে বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ ভালিয়ে যাচ্ছে।

14. ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদ রাজ্যের পরিচয় দাও।

উত্তর- হায়দ্রাবাদ রাজ্যের পরিচয়

ভূমিকা: দিল্লির মুঘল দরবারের তুরানি গোষ্ঠীর নেতা মির করমউদ্দিন চিন কিলিচ খাঁ ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় হায়দ্রাবাদের প্রধান কয়েকটি পরিচয় নীচে উল্লেখ করা হল-

[1] সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য: হায়দ্রাবাদ ছিল ভারতীয় ভূখণ্ডের সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য। এর আয়তন ছিল ২১২ হাজার বর্গকিলোমিটার।

[2] জনসংখ্যা: স্বাধীনতার প্রাক্কালে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১.৭ কোটি। এর মধ্যে অন্তত ৮৭ শতাংশই ছিল হিন্দু অথচ এখানকার শাসক অর্থাৎ নিজাম ওসমান আলি খান ছিলেন মুসলিম।

[3] স্বাধীনতা রক্ষার প্রচেষ্টা: নিজাম ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে এক ঘোষণার দ্বারা জানান যে, ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তরের পর স্বাধীন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। সেই অনুসারে, ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর হায়দ্রাবাদের নিজাম এবং অভিজাত মুসলিমরা ভারত বা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রে যোগ দিতে অস্বীকার করে।

উপসংহার: হায়দ্রাবাদের ভৌগোলিক অবস্থান এমনই ছিল যে হায়দ্রাবাদ ভারতের দখলে না এলে ভারতের সার্বভৌমত্ব, যোগাযোগ প্রভৃতি ব্যাহত হত। তাই হায়দ্রাবাদ পাকিস্তানে যোগদানের চেষ্টা করলে ভারত সামরিক অভিযান চালিয়ে রাজ্যটি ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে।

15 *ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদ সম্পর্কে ভারত সরকার ও হায়দ্রাবাদের নিজামের মধ্যে কী ধরনের নীতিগত সম্পর্ক দেখা যায়?

উত্তর- হায়দ্রাবাদ সম্পর্কে নীতি

ভূমিকা: ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করার সময় ভারতীয় ভূখণ্ডে যে অসংখ্য | দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল সেগুলির মধ্যে আয়তনে সর্ববৃহৎ ছিল হায়দ্রাবাদ। এখানকার শাসক মুসলিম হলেও জনসংখ্যার অন্তত ৮৭ শতাংশই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদ সম্পর্কে ভারত সরকার ও হায়দ্রাবাদের নিজামের নীতি পরস্পর থেকে পৃথক ছিল। 

 [1] হায়দ্রাবাদের নীতি: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদের নিজাম এবং সেখানকার অভিজাত মুসলিম সম্প্রদায় হায়দ্রাবাদকে ভারত বা পাকিস্তান-কোনো রাষ্ট্রেরই অন্তর্ভুক্ত না করে হায়দ্রাবাদকে একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। নিজাম ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর হায়দ্রাবাদ একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

[2] ভারতের নীতি: ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের পৃথক ও স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। কেননা, [i] হায়দ্রাবাদ ছিল ভারতের মধ্যভাগে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। [ii] হায়দ্রাবাদের মধ্য দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ও সড়কপথ ছিল। [iii] হায়দ্রাবাদের মানুষ ও ইতিহাস রাজ্যটির ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দেয়। এসব কারণে হায়দ্রাবাদ রাজ্যটির স্বাধীন অস্তিত্বের বিরোধিতা করে ভারত সরকার রাজ্যটিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়।

উপসংহার: হায়দ্রাবাদের নিজাম মুসলিম হলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজা • ছিল হিন্দু। তাই নিজাম হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে চাইলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রজারা চেয়েছিল হায়দ্রাবাদ ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হোক। সামরিক অভিযান চালিয়ে ভারতে হায়দ্রাবাদের প্রজাদের ইচ্ছাকেই পূর্ণতা দিয়েছিল।

16 *ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি উল্লেখ করো।

উত্তর- হায়দ্রাবাদ রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি

ভূমিকা: 'ভারতীয় স্বাধীনতা আইন'-এর দ্বারা ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের ইচ্ছানুসারে ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের অথবা নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অধিকার পায়। এই অবস্থায় ভারতের সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই ভারত ও হায়দ্রাবাদের মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকে।

[1] তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ: হায়দ্রাবাদ রাজ্যের তেলেঙ্গানা অঞ্চলের কৃষকরা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ শুরু করলে কাশিম রিজভি-র নেতৃত্বে মুসলিম রাজাকার বাহিনী তেলেঙ্গানার গ্রামে গ্রামে চরম অত্যাচার চালাতে থাকে।

[2] রাজনৈতিক দলের ভূমিকা: ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের হায়দ্রাবাদ শাখা হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। অবশ্য কমিউনিস্ট দলগুলি প্রথমদিকে কংগ্রেসের পক্ষে থাকলেও হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির বিষয়ে তারা কংগ্রেসের বিরোধিতা করে।

[3] স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা: হায়দ্রাবাদ নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে রাজ্যের ভেতরে এবং ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে হিন্দুদের ওপর ক্রমাগত অত্যাচার চালাতে থাকে। নিজাম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আমদানি করে এবং ভারতের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জে অভিযোগ জানিয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলেন।

[4] পারস্পরিক অভিযোগ: অবশেষে ভারত ও হায়দ্রাবাদের মধ্যে স্থিতাবস্থা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু হায়দ্রাবাদ বারংবার এই চুক্তি লঙ্ঘন করে বলে ভারত অভিযোগ জানায়। অন্যদিকে ভারতের বিরুদ্ধে হায়দ্রাবাদও অর্থনৈতিক অবরোধের অভিযোগ তোলে।

[5]ভারতের অভিযান: ভারত ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে (১৩ সেপ্টেম্বর) হায়দ্রাবাদে অভিযান শুরু করে। পরাজিত হায়দ্রাবাদ ভারতে যোগদানে বাধ্য হয়।

উপসংহার: স্বাধীনতার প্রাকমুহূর্তে হায়দ্রাবাদের কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ, হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির দাবিতে কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ নান্দোলন, নিজামের উদ্যোগে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার চষ্টা প্রভৃতি বহুমুখী ধারা হায়দ্রাবাদের পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছিল। ভারত সামরিক অভিযান চালিয়ে হায়দ্রাবাদকে ভারতভুক্ত করলে সেই জটিলতার নিরসন হয়।

17 * হায়দ্রাবাদ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

উত্তর- হায়দ্রাবাদ সমস্যা/ হায়দ্রাবাদের অন্তর্ভুক্তি

ভূমিকা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ ছিল সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্য। হায়দ্রাবাদের প্রধান শাসক নিজাম নামে পরিচিত ছিলেন।

[1] জনবিন্যাস: ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন ওসমান আলি খান। তবে শাসক মুসলিম হলেও রাজ্যের অন্তত ৮৭ শতাংশ জনগণই ছিল হিন্দু।

[2] ভারত-বিদ্বেষ: ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর হায়দ্রাবাদের ভারত-বিদ্বেষী নিজাম ভারত বা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে নিজ রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করেন। সাম্প্রদায়িক নেতা কাশিম রিজভি-র নেতৃত্বে 'রাজাকার' নামে হায়দ্রাবাদের দাঙ্গাবাহিনী সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখন্ডের হিন্দুদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু করতে থাকে। তখন তারা ভারতের ত্রাণশিবিরগুলিতে আশ্রয় নেয়।

[3] জটিলতা বৃদ্ধি: হায়দ্রাবাদের নিজাম সেখানকার মুসলিমদের ভারতের বিরুদ্ধে 'জেহাদ' ঘোষণার আহ্বান জানান। হায়দ্রাবাদ পাকিস্তান থেকে অস্ত্রশস্ত্র এনে এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলে।

[4] অপারেশন পোলো: এইরকম জটিল পরিস্থিতিতে ভারত হায়দ্রাবাদকে একটি চরমপত্র পাঠালে নিজাম তা উপেক্ষা করেন। এই পরিস্থিতিতে জেনারেল জে এন চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে অভিযান শুরু করে (১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে) যা 'অপারেশন পোলো' নামে পরিচিত।

[5] আত্মসমর্পণ: ভারতীয় আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে হায়দ্রাবাদের বাহিনী শীঘ্রই পরাজিত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে (১৮ সেপ্টেম্বর)। ফলে হায়দ্রাবাদ ভারতের দখলে আসে।

উপসংহার: ভারতের সামরিক অভিযানে হায়দ্রাবাদের প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। নিজাম 'ভারতভুক্তির দলিল'-এ স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। হায়দ্রাবাদ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

18. ভারতীয় ফরাসি ও পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলির ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করো।

উত্তর- ফরাসি ও পোর্তুগিজ উপনিবেশের ভারতভুক্তি

ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের পরে দেশীয় রাজ্যগুলি ছাড়াও ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় অবস্থিত চন্দননগর, মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ ও গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। এগুলি ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার বিশেষ প্রয়োজন ছিল।

[1] ফরাসি উপনিবেশগুলির সংযুক্তি: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে বলা হয় যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে কি না তা গণভোটের মাধ্যমে স্থির হবে। [i] চুক্তি অনুসারে গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চন্দননগর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। [ii] ভারতভুক্তির পক্ষে ইয়ানাম ও মাহে-র আন্দোলনকারীরা ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে এক রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেখানকার ক্ষমতা দখল করলে তা কার্যত ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। [iii] ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে পন্ডিচেরী ও কারিকল গণভোটের মাধ্যমে ভারতে যোগ দেয়।

[2] পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলির সংযুক্তি: [i] ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে গোমন্তক দল বিদ্রোহের মাধ্যমে পোর্তুগিজ উপনিবেশ দাদরা ও নগর হাভেলির ক্ষমতা দখল করে। ভারত ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে এই স্থানকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে। [ii] গোয়ার ভারতভুক্তির দাবিতে আন্দোলন পোর্তুগাল কঠোর হস্তে দমন করে। জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাদল ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে গোয়া আক্রমণ করলে পরাজিত গোয়ার পোর্তুগিজ শাসকরা ভারতভুক্তির চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। [iii] ওই বছর দমন ও দিউ-ও ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উপসংহার: স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সহজেই এদেশের ফরাসি উপনিবেশগুলি ফিরে পায়। কিন্তু পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলি সংযুক্ত করতে ভারত সরকারকে বেগ পেতে হয়। অনেক লড়াইয়ের পর পোর্তুগিজ উপনিবেশে গোয়া ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।

19. ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলি কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

উত্তর- পোর্তুগিজ উপনিবেশগুলির ভারতভুক্তি

ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরও পোর্তুগাল ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত গোয়া, দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি প্রভৃতি পোর্তুগিজ উপনিবেশের অস্তিত্ব ছিল। পোর্তুগাল তাদের উপনিবেশগুলির ওপর নিজেদের অধিকার বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত তাদের উপনিবেশগুলিকে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে নিজেদের রাজ্যে পরিণত করে।

[1] দাদরা ও নগর হাভেলি দখল: দাদরা ও নগর হাভেলির গোমন্তক দল পোর্তুগিজ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ করে সেখানকার ক্ষমতা দখল করে নেয়। পোর্তুগাল সরকার স্থানটি পুনরায় দখল করার চেষ্টা করলে ভারত তাতে বাধা দেয়। ভারত এই স্থানটিকে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে।

[2] গোয়ায় আন্দোলন: ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ১৫ আগস্ট ৫ হাজার শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহী গোয়ায় পোর্তুগিজ শাসনের অবসানের দাবিতে মিছিল করলে পোর্তুগিজ সেনার গুলিতে ২২ জনের মৃত্যু হয়। পোর্তুগিজ সরকার বিদ্রোহী নেতৃবৃন্দকে হত্যা বা কারারুদ্ধ করে কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমনের চেষ্টা করে।

[3] ভারতের উদ্যোগ: গোয়ায় পোর্তুগালের দমননীতির প্রতিবাদে ভারত সরকার গোয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ ছাড়া ভারতের হাতে গোয়াকে হস্তান্তরের জন্য ভারত বেশ কয়েকবার পোর্তুগালের কাছে আবেদন জানায় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিষয়টি উত্থাপন করে।

[4] গোয়ার ভারতভুক্তি: ভারতের সেনাপ্রধান জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে (ডিসেম্বর) গোয়ায় সামরিক অভিযান শুরু হয়। গোয়ার পোর্তুগিজবাহিনী শীঘ্রই পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ফলে গোয়া ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

উপসংহার: পোর্তুগিজরা ভারতীয় উপনিবেশগুলি ত্যাগ করতে অস্বীকার করলে, ভারত সরকার উপনিবেশগুলিতে গণ-আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সেগুলি দখল করে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের সবগুলি পোর্তুগিজ উপনিবেশ ভারতের দখলে আসে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি 

1 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' কবে, কোথায় পাস হয়?

উত্তর- ভারতের স্বাধীনতা আইন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হয়। ১৮ জুলাই তা রাজকীয় সম্মতি লাভ করে।

2* 'ভারতের স্বাধীনতা আইন'-এর দ্বারা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়?

উত্তর- 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' (১৯৪৭ খ্রি.)-এর দ্বারা-[1] ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। [2] ঐক্যবদ্ধ ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সিন্ধু। বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ব বাংলা ও আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়। [3] অবশিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয় ভারত।

3'মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব' বা 'মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ' কী?

উত্তর- ভারতের বড়োলাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন ভারত বিভাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা 'মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব' বা 'মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ' নামে পরিচিত।

4 *’দেশীয় রাজ্য' বলতে কী বোঝ?

উত্তর- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ শাসনের বাইরে ছোটোবড়ো মিলিয়ে প্রায় ৫৬৫টি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এগুলি 'দেশীয় রাজ্য' নামে পরিচিত ছিল।

5 *'ভারতের স্বাধীনতা আইন' (১৯৪৭ খ্রি.)-এ দেশীয় রাজ্যগুলি কী অধিকার পায়?

উত্তর- 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' (১৯৪৭ খ্রি.)-এ বলা হয়-[1] দেশীয় রাজ্যগুলি ইচ্ছা করলে তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে। অথবা, [2] ভারত ও পাকিস্তান-যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দিতে পারবে।

6 * 'ভারতের স্বাধীনতা আইন'-এ দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে কী বলা হয়?

উত্তর- 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' (১৮ জুলাই, ১৯৪৭ খ্রি.)-এ বলা হয় যে, [1] দেশীয় রাজ্যগুলি ইচ্ছা করলে নিজ নিজ রাষ্ট্রের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে। অথবা, [2] তারা ভারত ও পাকিস্তান যে-কোনো একটি রাষ্ট্রে যোগ দিতে পারবে।

7. ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সর্দার বল্লভাই প্যাটেল ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতার দাবিকে অগ্রাহ্য করেছিলেন কেন? 

উত্তর- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতার দাবিকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। তার কারণ হল দেশীয় রাজ্যগুলি স্বাধীন থাকলে ভারতের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দেবে।

৪ * ব্রিটিশ ভারতের বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্যের নাম লেখো।

উত্তর- ব্রিটিশ ভারতের সর্বাধিক বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্য ছিল- [1] হায়দ্রাবাদ, [2] মহীশূর, [3] বরোদা ও [4] জম্মু-কাশ্মীর।

9 * দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কোন্ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সর্বাধিক ভূমিকা ছিল?

উত্তর- দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের (১৮৭৫-১৯৫০ খ্রি.) সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই বিষয়ে তাঁর কঠোর নীতির জন্য তিনি 'লৌহমানব' নামে পরিচিত হন।

10 জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে চলে যান কেন?

উত্তর- দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশই ছিল হিন্দু। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর সেখানকার মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানে প্রজাবিদ্রোহ শুরু হয়। এদিকে ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশের জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান।

11 *জুনাগড় কীভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়?

উত্তর- হিন্দু-অধ্যুষিত জুনাগড়ের মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানে তীব্র প্রজাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশ করে। গণভোটের (১৯৪৮ খ্রি.) মাধ্যমে জুনাগড় ভারতের অন্তর্ভুক্ত (১৯৪৯ খ্রি.) হয়।

12 * ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের কোন্ কোন্ স্থানে ফ্রান্স ও পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল?

উত্তর- ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরও চন্দননগর, পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারিকল প্রভৃতি স্থানে ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল এবং গোয়ায় পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল।

13 * কোন্ কোন্ ফরাসি উপনিবেশ কবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

উত্তর- ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। তা ছাড়া ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে, কারিকল প্রভৃতি ফরাসি উপনিবেশ ভারতের সঙ্গে এক চুক্তির দ্বারা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

14* 'লাইন অব কন্ট্রোল' (LOC) কী?

উত্তর- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের আত্মপ্রকাশের পর কাশ্মীরের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। অবশেষে জাতিপুঞ্জ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে (৩১ ডিসেম্বর) কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। জাাতিপুঞ্জ নির্ধারিত যুদ্ধবিরতি সীমারেখা 'নিয়ন্ত্রণ রেখা' বা 'Line of Control' (LOC) নামে পরিচিত।

15 * ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না কেন?

উত্তর- ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, হায়দ্রাবাদের মধ্য দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের সংযোগকারী রেল ও সড়ক যোগাযোগ, হায়দ্রাবাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মনোভাব প্রভৃতি কারণে ভারতের পক্ষে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।

16 * ভারত হায়দ্রাবাদ দখলের পরবর্তীকালে এই ভূখণ্ড কোন্ কোন্ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়?

উত্তর- ভারত হায়দ্রাবাদ দখলের পর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে হায়দ্রাবাদকে তিনটি অংশে বিভক্ত করে সেগুলিকে অন্ধ্রপ্রদেশ, বোম্বাই ও মহীশূরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

17 * কে, কবে 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর' স্থাপন করেন? এর সেক্রেটারি কে ছিলেন?

উত্তর- [- ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (জুলাই) 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর' প্রতিষ্ঠা করেন।

[- দেশীয় রাজ্য দপ্তরের সেক্রেটারি ছিলেন ভি পি মেনন।

18. সর্দার প্যাটেলকে 'ভারতের লৌহমানব' বলা হয় কেন?

উত্তর- ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার প্যাটেলকে ভারতের লৌহমানব বলা হয়, কারণ- [1] তিনি ছিলেন সর্বদা নীতি ও আদর্শে অটল। [2] তিনিঅনমনীয় দৃঢ়তার সঙ্গে স্বাধীন ভারতে অধিকাংশ দেশীয় রাজ্যের ভারতভুক্তি ঘটান।

19 *'ভারতভুক্তির দলিল' বা 'ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন' কী?

উত্তর- ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ভারতে যোগদান করে তা 'ভারতভুক্তির দলিল' বা 'ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন' নামে পরিচিত।

20. কী পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন?

উত্তর- কাশ্মীর রাজ্য ভারতভুক্তির দলিলে নানা কারণে স্বাক্ষর করে- [1] কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। [2] পাক-মদতপুষ্ট হানাদাররা কাশ্মীর আক্রমণ করলে হরি সিং ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার সামরিক সাহায্য করলে হরি সিং ভারতের সঙ্গে যোগ দেন এবং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।

21 *'ভারতের স্বাধীনতা আইন' কবে পাস হয়? এই আইনের দুটি ধারা উল্লেখ করো।

উত্তর- [- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে 'ভারতীয় স্বাধীনতা আইন' পাস হয় এবং ১৮ জুলাই আইনটি রাজকীয় সম্মতি লাভ করে। [- এই আইনের দ্বারা- [1] ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে 'ভারত' ও 'পাকিস্তান' নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। [2] ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের ইচ্ছানুসারে ভারত বা পাকিস্তানে যোগদানের অথবা নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখার অধিকার পায়।

22 *ভারতীয় ভূখণ্ডের ফরাসি উপনিবেশগুলির ভবিষ্যত কীভাবে নির্ধারিত হয়?

উত্তর- ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে বলা হয় যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলি গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারণ করতে পারবে।

23 *ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলির ওপর ফ্রান্সের অধিকার কবে এবং কীভাবে বিলুপ্ত হয়?

উত্তর- ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্স ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত ফরাসি উপনিবেশগুলির ওপর তাদের অধিকার ত্যাগ করে। এর সঙ্গে সঙ্গে এই উপনিবেশগুলির ওপর ফ্রান্সের অধিকার বিলুপ্ত হয়।

24 *চন্দননগর কবে, কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

উত্তর- ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সেখানকার অধিবাসীরা ভারতের সঙ্গে চন্দননগরের সংযুক্তির পক্ষে ভোট দেয়। এরই ফলস্বরূপ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২ মে ভারতে চন্দননগরের নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় তবে কার্যকরী ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুন।

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি

একটি বাক্যে উত্তর দাও—

1. স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে কতগুলি দেশীয় রাজ্য ছিল?

>> স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতে দেশীয় রাজ্যের সংখ্যা ছিল ৬০১টি।

2. গোয়া কাদের উপনিবেশ ছিল?

>> গোয়া পোর্তুগালের উপনিবেশ ছিল।

3. গোয়া কবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

>> ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে গোয়া ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

4. মেহেরচাঁদ মহাজন কে ছিলেন?

>> মেহেরচাঁদ মহাজন ছিলেন দেশীয় রাজ্য কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী।

5. হায়দ্রাবাদ অভিযানে কে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেন?

>> হায়দ্রাবাদ অভিযানে জেনারেল জে এন চৌধুরী ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।

6. কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?

>> কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শেখ আবদুল্লাহ।

7. কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নির্ধারিত সীমারেখার নাম কী?

>> কাশ্মীরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নির্ধারিত সীমারেখার নাম লাইন অব কন্ট্রোল (LOC) বা নিয়ন্ত্রণ রেখা।

৪. কবে স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়?

>> ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।

9. দিল্লির মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে চিন কিলিচ খাঁ কী উপাধি লাভ করেন?

>> চিন কিলিচ খাঁ দিল্লির মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে 'আসফ ঝা' উপাধি লাভ করেন।

10. দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের রাজাকার দলের নাম কী ছিল?

>> দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদের রাজাকার দলের নাম ছিল 'ইত্তেহাদ-উল- মুসলিমিন'।

11. কে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন?

>> মির করমউদ্দিন চিন কিলিচ খাঁ হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।

12. মুসলিম লিগ কবে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে প্রস্তাব গ্রহণ করে?

>> মুসলিম লিগ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে 'লাহোর প্রস্তাব' বা 'পাকিস্তান প্রস্তাব' গ্রহণ করে।

13. ভারতবর্ষ কবে স্বাধীনতা লাভ করে?

>> ভারতবর্ষ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে।

14. স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে ছিলেন?

>> স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল।

15. ভারতীয় ভূখণ্ডের বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্যের নাম লেখো।

>> ভারতীয় ভূখণ্ডের বৃহৎ চারটি দেশীয় রাজ্য ছিল হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, বরোদা ও কাশ্মীর।

16. দেশীয় রাজ্যগুলি কোন্ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল?

>> দেশীয় রাজ্যগুলি 'ভারতভুক্তির দলিল' (ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন) নামক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

17. ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর কীভাবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

>> ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর গণভোটের মাধ্যমে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়।

18. কবে, কার দায়িত্বে 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর' গঠিত হয়?

>> ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দায়িত্বে 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর' গঠিত হয়।

19. ভারত কবে হায়দ্রাবাদে সেনা অভিযান শুরু করে?

>> ভারত জেনারেল জে এন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সেপ্টেম্বর (১৯৪৮ খ্রি.) হায়দ্রাবাদে সেনা অভিযান শুরু করে।

20. 'অপারেশন পোলো' কী?

>> ভারত ১৩ সেপ্টেম্বর (১৯৪৮ খ্রি.) হায়দ্রাবাদে সেনা অভিযান শুরু করে। এই অভিযান 'অপারেশন পোলো' নামে পরিচিত।

21. কাকে 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর'-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়?

>> সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে 'দেশীয় রাজ্য দপ্তর'-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

22. কোন্ স্বরাষ্ট্রসচিব দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন?

>> স্বরাষ্ট্রসচিব ভি পি মেনন দেশীয় রাজ্যগুলির সংযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।

23. ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত ডোমিনিয়নে যোগদানকারী দুটি রাজ্যের নাম লেখো।

>> জুনাগড় ও হায়দ্রাবাদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত ডোমিনিয়নে যোগদান করে।

24. ভারতের হায়দ্রাবাদ অভিযানের সময় কে হায়দ্রাবাদের বাহিনীর নেতৃত্ব দেন?

>> ভারতের হায়দ্রাবাদ অভিযানের সময় হায়দ্রাবাদের বাহিনীর নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল সৈয়দ আহমেদ এল এদুস।

24. পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সাধারণত কোন্ সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা ভারতে আসে?

>> পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সাধারণত হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা ভারতে আসে।

25. পূর্ব পাকিস্তান থেকে সাধারণত কোন্ সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা ভারতে আসে?

>> পূর্ব পাকিস্তান থেকে সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা ভারতে আসে।

26. ভারতের কোন্ দুটি রাজ্যে উদ্বাস্তু সমস্যা সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করে?

>> ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবে উদ্বাস্তু সমস্যা সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করে।

27. উদ্‌দ্বাস্তু স্রোত বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন্ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

>> উদ্‌দ্বাস্তু স্রোত বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি বা দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

28. কে, কবে মহাত্মা গান্ধিকে হত্যা করেন?

>> নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধিকে হত্যা করে।

29. 'স্বাধীনতার স্বাদ' গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> 'স্বাধীনতার স্বাদ' গ্রন্থটি রচনা করেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

30. 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' গ্রন্থটি কার লেখা?

>> 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' গ্রন্থটি আবু ইসহাক-এর লেখা।

31. দেশভাগের পরিণাম সম্পর্কে কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা গ্রন্থটির নাম কী?

>> দেশভাগের পরিণাম সম্পর্কে কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা গ্রন্থটির নাম 'শিকড়ের সন্ধানে'।

32. দেশভাগের প্রেক্ষাপটে প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ীর লেখা আত্মজীবনী-মূলক গ্রন্থটির নাম কী?

>> দেশভাগের প্রেক্ষাপটে প্রভাসচন্দ্র লাহিড়ীর লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির নাম 'পাক-ভারতের রূপরেখা'।

33. 'দ্য শ্যাডো লাইন্স' গ্রন্থটির লেখক কে?

>> 'দ্য শ্যাডো লাইন্স' গ্রন্থটির লেখক অমিতাভ ঘোষ।

34. 'পদচিহ্ন' গ্রন্থটি কার লেখা?

>> 'পদচিহ্ন' গ্রন্থটি সত্যেন সেনের লেখা।

35. 'পেশোয়ার এক্সপ্রেস' গ্রন্থটি কার লেখা?

>> 'পেশোয়ার এক্সপ্রেস' গ্রন্থটি কৃষণ চন্দর-এর লেখা।

36. 'মিডনাইট্স চিলড্রেন' গ্রন্থটি কার লেখা?

>> 'মিডনাইটস চিলড্রেন' গ্রন্থটি সলমন রুশদির লেখা।

37. 'পাকিস্তান অর পার্টিশন অব ইন্ডিয়া' গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> 'পাকিস্তান অর পার্টিশন অব ইন্ডিয়া' গ্রন্থটি রচনা করেন ড. ভীমরাও আম্বেদকর।

38. পশ্চিমবঙ্গে আগত নিঃস্ব উদ্বাস্তুরা সর্বাধিক কোন্ রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিল?

>> পশ্চিমবঙ্গে আগত নিঃস্ব উদ্বাস্তুরা সর্বাধিক শিয়ালদহ রেলস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিল।

39. পশ্চিমবঙ্গের কিছু উদ্বাস্তুকে দূরে কোথায় পুনর্বাসন দিয়ে পাঠানো হয়েছে?

>> পশ্চিমবঙ্গের কিছু উদ্বাস্তুকে দণ্ডকারণ্য ও আন্দামানে পুনর্বাসন দিয়ে পাঠানো হয়েছে।

ঠিক বা ভুল নিৰ্ধারণ করো---------

1. দেশীয় রাজ্যগুলি যে দলিলে স্বাক্ষরের দ্বারা ভারত থেকে বেরিয়ে যেতে পারত তার নাম ছিল 'ইন্সট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন' বা 'ভারতভুক্তির দলিল'।

উত্তর- ভুল

2. ভারতে স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদের নিজাম ভারতে যোগদানের কথা ঘোষণা করেন।

উত্তর- ভুল

3. ৬১টি দেশীয় রাজ্যকে নিয়ে ভারতের ৫টি বড়ো প্রদেশ গড়ে ওঠে।

উত্তর - ভুল

4. কমিউনিস্ট পার্টি হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তির বিরোধিতা করেছিল

উত্তর- ঠিক

5. তিনটি দেশীয় রাজ্য জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ ও কাশ্মীর ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে।

উত্তর- ঠিক

6. জুনাগড়ের শাসক ছিলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো। 

উত্তর-  ভুল

7. প্রথমদিকে কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চেয়েছিলেন।

উত্তর-  ভুল

৪. পোর্তুগাল তাদের ভারতীয় ভূখণ্ডের উপনিবেশগুলি প্রথমেই ছেড়ে দিতে রাজি ছিল।

উত্তর-  ভুল

শূন্যস্থান পূরণ করো--------

1. স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন_______

উত্তর-   বাবু  রাজেন্দ্রপ্রসাদ

2. স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন_______

উত্তর-  জওহরলাল

3. স্বাধীনতা লাভের পূর্বে অন্তত_______ শতাংশ ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল।

উত্তর-  ৪০

4. ভারতের কয়েকটি প্রদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়_______ দেশীয় রাজ্য।

উত্তর-   ২১৬টি

5. হায়দ্রাবাদ ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্গত হয় _______খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর-  ১৯৪৮

6. _______দেশীয় রাজ্য সংযুক্ত করে গড়ে তোলা হয় ৫টি প্রদেশ।

উত্তর-  ২৭৫টি

7. স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব________ দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। 

উত্তর-   ভি পি মেনন

৪. শেখ আবদুল্লাহ ছিলেন________ দলের প্রধান নেতা।

উত্তর-   ন্যাশনাল

9. ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় পন্ডিচেরী, ইয়ানাম, মাহে ও কারিকল ছিল_______ উপনিবেশ।

উত্তর-  কনফারেন্স

10. দমন, দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি ________উপনিবেশ ছিল।

উত্তর-  পোর্তুগালের

11. মাহে, কারিকল, পন্ডিচেরী ও ইয়ানাম________ উপনিবেশ ছিল।

উত্তর-  ফ্রান্সের

12. হরি সিং ছিলেন _______--এর রাজা।

উত্তর-  কাশ্মীর

13. ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট গোয়ার পোর্তুগিজ বাহিনীর গুলিতে________ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়।

উত্তর-  ২২

14. পোর্তুগিজ উপনিবেশ ________১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়। 

উত্তর-  গোয়া

বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা MCQ

সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো-

1. স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল ছিলেন-

(a) লর্ড মাউন্টব্যাটেন  ✔

(b) জওহরলাল নহরু 

(c) বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ

(d) চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী

2. স্বাধীন ভারতের প্রথম ভারতীয় গভর্নর-জেনারেল ছিলেন-

(a) বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ

(b) জওহরলাল নেহরু  

(c) লর্ড মাউন্টব্যাটেন 

(d) চক্রবর্ত রাজাগোপালাচারী  ✔

3. দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিতে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন-

(a) জওহরলাল নেহরু  

(b) সুভাষচন্দ্র বসু 

(c) চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী 

(d) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল  ✔

4. স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতের সবচেয়ে বড়ো দেশীয় রাজ্য ছিল-

(a) কাশ্মীর

(b) জুনাগড় 

(c) হায়দ্রাবাদ ✔

(d) জয়পুর 

5. গণভোটের মাধ্যমে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়-

(a) কাশ্মীর

(b) হায়দ্রাবাদ 

(c) জুনাগড়  ✔

(d) গোয়ালিয়র

6. সিকিম কবে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়?

(a) ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে 

(b) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে

(c) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে

(d) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে  ✔

7. কাশ্মীরের মহারাজা ছিলেন-

(a) হরি সিং   ✔

(b) মেহেরচাঁদ

(c) ওমর আবদুল্লাহ 

(d) শেখ আবদুল্লাহ

৪. হায়দ্রাবাদের নিজামকে চরমপত্র পাঠায়-

(a) জুনাগড়

(b) কাশ্মীর

(c) ভারত    ✔

(d) পাকিস্তান

9. যে দেশীয় রাজ্যটি গণভোটের মাধ্যমে ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়-

(a) কাশ্মীর 

(b) হায়দ্রাবাদ

(c) জুনাগড়   ✔

(d) জয়পুর

10. জুনাগড় রাজ্য ভারতভুক্ত হয়-

(a) ১৯৪৭ খ্রি.

(b) ১৯৪৮ খ্রি.

(c) ১৯৪৯ খ্রি.   ✔

(d) ১৯৫০ খ্রি.

11. হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের-

(a) ১ জানুয়ারি 

(b) ১২ জানুয়ারি

(b) ২৩ জানুয়ারি

(d) ২৬ জানুয়ারি  ✔

12. গোয়া ভারতভুক্ত হয়-

(a) ১৯৪৭ খ্রি.

(b) ১৯৫৬ খ্রি.

(c) ১৯৬১ খ্রি.  ✔

(d) ১৯৭১ খ্রি.

13. তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়-

(a) হায়দ্রাবাদে  ✔

(b) জুনাগড়ে 

(c) কাশ্মীরে 

(d) বরোদায়

14. এদের মধ্যে কোন্টি দেশীয় রাজ্য ছিল না-

(a) বোম্বে  ✔

(b) ভোপাল 

(c) হায়দ্রাবাদ 

(d) জয়পুর

15. স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় ভূখণ্ডে দেশীয় রাজ্যের সংখ্যা ছিল |

(a) প্রায় ৫৬৫টি  ✔

(b) প্রায় ৫৭৫টি

(d) প্রায় ৫৯৫টি 

(d) প্রায় ৬০৫টি

16. ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় চন্দননগর কাদের উপনিবেশ ছিল?

(a) ব্রিটিশ 

(b) পোর্তুগিজ  ✔

(c) ফরাসি

(d) স্পেনীয়

    👉Paid Answer (for Membership User)

Editing By- Lipi Medhi