Lesson 19
শহিদ যতীন্দ্রনাথ আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়
-----------------------------------------
১. অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:
1. শহিদ কাদের বলে?
উত্তরঃ নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ন্যায় বা সত্যের জন্য, দেশের জন্য, বা বৃহত্তর স্বার্থের জন্য যাঁরা প্রাণদান করেন, তাঁদের শহিদ বলে।
2. দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য শহিদ হয়েছেন এমন দু-জন ব্যক্তির নাম লেখো।
উত্তরঃ দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য শহীদ হয়েছেন এমন দু-জন বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন- ক্ষুদিরাম বসু এবং যতীন্দ্রনাথ দাশ।
3.'অনশন' বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ 'অনশন' বলতে বোঝানো হয় কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ স্বরূপ নির্জলা উপবাস।
4. 'লেবু' ও 'হাতা' শব্দ দুটির আগে উপসর্গ যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করে বাক্যরচনা করো।
উত্তরঃ লেবু = (পাতিলেবু) - পাতিলেবুর শরবৎ খেতে ভালো লাগে। হাতা = (ফুলহাতা) - শীতের সময় ফুলহাতা জামা পরা উচিত।
5. যতীন দাশ কার কাছ থেকে বোমা বানানোর শিক্ষা লাভ করেছিলেন?
উত্তরঃ যতীন দাশ বিপ্লবী শচীন সান্যাল-এর কাছ থেকে বোমা বানানোর শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
6. কত খ্রিস্টাব্দের, কত তারিখে যতীন দাশের জন্ম হয়েছিল?
উত্তরঃ ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ অক্টোবর যতীন দাশের জন্ম হয়েছিল।
7. যতীন দাশের পিতামহের নাম কী?
উত্তরঃ যতীন দাশের পিতামহের নাম মহেন্দ্রনাথ দাশ।
8. কত খ্রিস্টাব্দে কোন্ বিদ্যালয় থেকে যতীন দাশ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন?
উত্তরঃ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ভবানীপুরের মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে যতীন দাশ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
9. তিনি কোন্ কলেজে ভরতি হন?
উত্তরঃ তিনি ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবাসী কলেজে বিএ তৃতীয় বর্ষে-এ ভরতি হন।
10. "ওই দিনই উনি শপথ নেন সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দেবেন।" -'উনি' কে? তিনি কী চাকরি করতেন?
উত্তরঃ উনি হলেন যতীন্দ্রনাথ দাশের পিতা বঙ্কিমবিহারী দাশ।
তিনি কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে চাকরি করতেন।
11. "বিচারে তাঁর ছয় মাসের জেল হয়।" তাঁর কেন জেল হয়?
উত্তরঃ ১৯১৯-১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ১৫-১৬ বছর বয়সে যতীন দাশ বিলাতি কাপড়ের দোকানে পিকেটিং করতে গিয়ে ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ে যান।
12. ছয় মাস জেলে থাকাকালীন যতীন্দ্রনাথ দাশের অবস্থা কেমন হয়?
উত্তরঃ ছয় মাস জেলে থাকার সময় যতীন দাশকে জেলের অখাদ্য- কুখাদ্য খাবার খেতে দেওয়া হত। ফলে তাঁকে কঠিন আমাশয় রোগের দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়।
13. দক্ষিণেশ্বরের বাচস্পতিপাড়ায় বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাশ কী করতেন?
উত্তরঃ দক্ষিণেশ্বরের বাচস্পতিপাড়ায় বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাশ অন্যান্য দেশপ্রেমীদের বোমা তৈরির উন্নত প্রণালী শেখাতেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যান্য বেশ কিছু বিষয়েও ট্রেনিং দিতেন।
2. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও:
1. ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই অনশন শুরু হয় কেন?
উত্তরঃ লাহোর সেন্ট্রাল জেলে যতীন দাশ-সহ তাঁর পনেরো জন সহযোদ্ধার ওপর অমানুষিক পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে তাঁরা ১৩ জুলাই ১৯২৯ সকলে সমবেতভাবে অনশন শুরু করেন।
2. অনশন করার আগে যতীন তাঁর সহযোদ্ধাদের কী অঙ্গীকার করান? তিনি অনশন ভঙ্গ করবেন না-কেন?
উত্তরঃ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই, অমানুষিক পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে অনশন শুরু করার দু-একদিন আগে যতীন দাশ তাঁর সহযোদ্ধাদের দিয়ে অঙ্গীকার করিয়ে নেন যে, তাঁদের যে দাবিগুলি আছে, সেগুলির যথাযথ মীমাংসা হয়ে গেলে তাঁরা অবশ্যই অনশন ভঙ্গ করবেন।
যতীন দাশ তাঁর সহযোদ্ধাদের জানিয়ে দেন, তিনি অনশন ভঙ্গ করবেন না। কারণ, তাঁর পক্ষে এই অনশনই হবে মাতৃভূমির শৃঙ্খল মোচনের এক অভাবনীয় সুযোগ। ছেলেবেলা থেকেই তিনি একটি স্বপ্ন লালনপালন করে আসছেন মনে মনে। তা হল- পলাশির প্রান্তরে মিরজাফরকৃত বিশ্বাসঘাতকতার প্রায়শ্চিত্ত করা। এটাই ছিল তাঁর সেই সুযোগ। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর পিতার অনুমতি আগেই নিয়ে রেখেছিলেন।
3. জেলে অনশনের সময় যতীন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কেন?
উত্তরঃ জেলে অনশনরত অবস্থায় নিরুপদ্রবে সাতদিন কেটে যাওয়ার পর, অষ্টম দিনের দিন ভোরবেলা জেল-সুপার, জেল- ডাক্তার ও আটজন মোটা-সোটা পাঠানকে সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে সেই সুযোগে ডাক্তার হঠাৎ করে অভুক্ত দুর্বল যতীন দাশকে জোর করে ধরে-বেঁধে নাকে নল ঢুকিয়ে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। অন্য কোনো উপায় না-দেখে যতীন দাশ ইচ্ছাকৃতভাবে জোরে জোরে কাশতে থাকেন। এর ফলে ওই নলটির মুখ খাদ্যনালি থেকে সরে গিয়ে শ্বাসনালির মধ্যে ঢুকে যায় এবং কিছুটা দুধ তাঁর ফুসফুসে ঢুকে যাওয়ায় যতীন দাশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, টানা আটচল্লিশ ঘণ্টা অজ্ঞান অবস্থায় থাকেন।
4. হাড় জেলে যতীন দাশের পাশে স্লেট পেনসিল রাখা হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ জেলে যতীন্দ্রনাথ দাশকে জোর করে দুধ খাওয়াতে গেলে ফুসফুসে দুধ ঢুকে গিয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। আটচল্লিশ ঘণ্টা পর তাঁর জ্ঞান ফিরলে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর গলা দিয়ে আর আওয়াজ বেরোচ্ছে না। এ ছাড়াও, যতীন দাশ লক্ষ্য করেন, তাঁর পাশে রাখা আছে, একটি স্লেট ও একটি পেনসিল। তাঁর বুঝতে বাকি থাকে না যে, জীবনে আর কোনোদিন তিনি কথা বলতে পারবেন না। এরপর যতীন দাশ যাতে তাঁর মনের ভাব, ইচ্ছা- অনিচ্ছা অন্যকে জানাতে পারেন, তার জন্য তাঁর পাশে স্লেট ও পেনসিল রাখা হয়েছিল।
5. কিরণ দাশকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আনা হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ একটানা কয়েকদিন অনশন করার ফলে যতীন দাশ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে একসময়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাঁর এই সংকটজনক অবস্থা উপলব্ধি করে স্বয়ং বড়োলাট লর্ড আরউইন তাঁর বিশেষ ক্ষমতাবলে যতীন দাশকে দেখাশোনা করার জন্যই তাঁর ভাই কিরণ দাশকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আনানোর ব্যবস্থা করেন।
6. যতীন দাশের সহযোদ্ধারা পথ অবরোধ করে শুয়েছিলেন কেন?
উত্তরঃ যতীন দাশের সহযোদ্ধারা তাঁর সেলের চারপাশে ব্যারিকেড রচনা করে পথ অবরোধ করে শুয়েছিলেন, যাতে ডাক্তার ও জেল-সুপার যতীনের দেহকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে কোথাও নিয়ে না-যেতে পারে।
3. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর দাও:
1. যতীন দাশের মতো ভারতের অন্য কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবনকথা জানা থাকলে খাতায় লেখো।
উত্তরঃ দেশপ্রেমের যদি কোনো সার্থক নাম থাকে, সেই নাম হল- নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটক শহরে। পড়াশোনায় তিনি ছোটো থেকেই ছিলেন খুব মেধাবী ছাত্র। স্বদেশপ্রেম ও পরাধীনতার জ্বালা সুভাষের মনে এতটাই তীব্র ছিল যে, তিনি দেশের সেরা চাকরি হাতের মুঠোয় পেয়েও ইংরেজদের গোলামি করবেন না-বলে চাকরি করেননি। জ্বলন্ত একটি গোলার মতো তিনি ইংরেজ শাসকদের ভীতির অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিলেন। প্রতিটি আন্দোলনের অগ্রভাগেই তাঁকে দেখা গিয়েছিল। স্বদেশী আন্দোলন থেকে ইংরেজ ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সর্বশক্তি দিয়ে নেতৃত্ব দিতে থাকেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র ছদ্মবেশে, গোপনে এলগিন রোডের বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ইতিহাসে এ ধরনের নাটকীয় ঘটনা আজও বিরল। জার্মানি, জাপান, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে গিয়ে সেখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে তিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য ইংরেজ-বিরোধী লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তৈরি করেন 'ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি'। যদিও, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভ তিনি দেখে যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যু ও অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে নানা মতভেদ আছে।
4. শূন্যস্থান পূরণ করো:
২.১ পিতামহ জাতীয় কংগ্রেসের চরমপন্থী দলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
উত্তরঃ মহেন্দ্রনাথ দাশ।
২.২ দিনে বঙ্কিমবাবু সপরিবারে গঙ্গাস্নান করে একটা ফিটন গাড়িতে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন।
উত্তরঃ দশহরার দিনে।
২.৩ যতীন দাশ -এর অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে।
উত্তরঃ সাউথ ক্যালকাটা ন্যাশনাল স্কুল।
২.৪ ভগৎ সিং পাঞ্জাবে নামে একটি বিপ্লবী দল প্রতিষ্ঠা করেন।
উত্তরঃ হিন্দ নওজোয়ান সভা।
২.৫ সরকারি হিসেবেই মানুষ হাওড়া থেকে কেওড়াতলা পর্যন্ত শবানুগমন করেছিলেন।
উত্তরঃ পাঁচ লক্ষ।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
১. সঠিক উত্তর নির্বাচন করো:
১.১ যতীন দাশ জন্মগ্রহণ করেন (শিকদার বাগান / সরকার বাগান / বাগনান) অঞ্চলে।
উত্তরঃ শিকদার বাগান
১.২ তাঁরা ভাই-বোন সবমিলিয়ে (দশ / নয়/এগারো) জন।
উত্তরঃ দশ
১.৩ যতীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় ছদ্মনাম (কালীবাবু / রবিন/ শচীন)।
উত্তরঃ কালীবাবু
১.৪ যতীন্দ্রনাথ দাশের একমাত্র বোন লাবণ্যপ্রভা দেবীর মৃত্যু হয় (১৯২৮ / ১৯২৯ / ১৯২৭) খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ ১৯২৮
১.৫ (পাঞ্জাব / গুজরাট / মহারাষ্ট্র)-এর প্রখ্যাত বিপ্লবী ভগৎ সিং।
উত্তরঃ পাঞ্জাব
১.৬ 'Indian Struggle' বইটি লিখেছেন (সুভাষচন্দ্র/যতীন দাশ / জওহরলাল নেহরু)।
উত্তরঃ সুভাষচন্দ্র
১.৭ ভগৎ সিং হত্যা করেন - (মি স্যান্ডার্সকে / মি স্কটকে/ মি প্যাট্রিককে)।
উত্তরঃ মি স্যান্ডার্সকে
১.৮ যতীন দাশ অনশন করেন (৬৩ দিন / ৫৩ দিন/৫০ দিন)।
উত্তরঃ ৬৩ দিন
Editing By:- Lipi Medhi