Chapter 8
প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চার নানাদিক:
---------------------------------------------------------
[MCQs ]
1. সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো বৈদিক শিক্ষা ছিল-
(A) শিষ্যকেন্দ্রিক
(B) গুরুকেন্দ্রিক
(C) গুরু-শিষ্য সম্পর্ককেন্দ্রিক
উত্তর: (C) গুরু-শিষ্য সম্পর্ককেন্দ্রিক
2. নালন্দা ছিল একটি-
(A) বিহার
(B) গুরুকুল
(C) মহাবিহার
উত্তর: (C) মহাবিহার
3. বিদ্যারম্ভ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে অক্ষর পরিচয় হত যত বছর বয়সে-
(A) চার বছর
(B) পাঁচ বছর
(C) ছয় বছর
উত্তর: (B) পাঁচ বছর
4. পাণিনির লেখা ব্যাকরণ বই-এর নাম-
(A) অষ্টাধ্যায়ী
(B) ইন্ডিকা
(C) স্মৃতিশাস্ত্র
উত্তর: (A) অষ্টাধ্যায়ী
5. ব্রাহ্মী লিপির ব্যবহার করেন-
(A) সম্রাট অশোক
(B) চন্দ্রগুপ্ত
(C) চর
উত্তর: (A) সম্রাট অশোক
6. ভারতের দুটি মহাকাব্য হল-
(A) ইলিয়াড ও ওডিসি
(B) রামায়ণ ও মহাভারত
(C)কোরান ও হাদিস
উত্তর: (B) রামায়ণ ও মহাভারত
7. পঞ্চমবেদ বলা হয়-
(A) রামায়ণকে
(B) মহাভারতকে
(C) অর্থশাস্ত্রকে
উত্তর: (B) মহাভারতকে
৪. সঙ্গম সাহিত্য বলা হয়-
(A) তামিল সাহিত্যকে
(B) চিনা সাহিত্যকে
(C) উর্দু সাহিত্যকে
উত্তর: (A) তামিল সাহিত্যকে
9. শুশ্রুত ছিলেন একজন-
(A) কবি
(B) নাট্যকার
(C) চিকিৎসক
উত্তর: (C) চিকিৎসক
10. মৃচ্ছকটিকম নাটকটি রচনা করেন-
(A) শূদ্রক
(B) হর্ষবর্ধন
(C)বিশাখদত্ত
উত্তর: (A) শূদ্রক
11. দশকুমার চরিতের লেখক-
(A)দণ্ডী
(B) কালিদাস
(C) বাকপতিরাজ
উত্তর: (A)দণ্ডী
12. নাগানন্দ নাটক লেখেন-
(A) হর্ষবর্ধন
(B) বল্লাল সেনক
(C) দণ্ডীন
উত্তর: (A) হর্ষবর্ধন
13. পঞ্চতন্ত্র রচনা করেছিলেন-
কৌটিল্য
B) বিষুগুপ্ত
(C) বিষুশর্মা
উত্তর: (C) বিষুশর্মা
14. শুশ্রুত যে যুগের চিকিৎসক ছিলেন-
(A) কুষাণ
(B) গুপ্ত
(C) মৌর্য
উত্তর: (B) গুপ্ত
15. প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক ছিলেন-
(A) বিষুশর্মা
(B) কম্বন
(C) শুশ্রুত
উত্তর: (C) শুশ্রুত
16. বৌদ্ধ পণ্ডিত নাগার্জুন ছিলেন একজন-
(A) ব্যাকরণবিদ
(B) গণিতবিদ
(C) রসায়নবিদ
উত্তর: (B) গণিতবিদ
17. অজন্তা একটি-
(A) গুহাচিত্র
(B) স্তম্ভচিত্র
(C) গ্রন্থ
উত্তর: (A) গুহাচিত্র
Very Short Question Answer
1.বৌদ্ধদের শিক্ষাকেন্দ্র কী নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর: বৌদ্ধদের শিক্ষাকেন্দ্র মহাবিহার নামে পরিচিত ছিল।
2 প্রাচীন ভারতবর্ষের দুটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষাকেন্দ্রের নাম লেখো।
উত্তর:প্রাচীন ভারতের দুটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষাকেন্দ্র হল নালন্দা মহাবিহার ও তক্ষশিলা মহাবিহার।
3. অষ্টাধ্যায়ী কী? এর রচয়িতার নাম কী?
উত্তর: অষ্টাধ্যায়ী হল একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ। এর রচয়িতার নাম হল পাণিনি।
4. অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি রচনা করেন কে?
উত্তর: কৌটিল্য বা চাণক্য অর্থশাস্ত্র গ্রন্থটি রচনা করেন।
5. খরোষ্ঠী লিপির উদ্ভব হয় কোন্ লিপি থেকে?
উত্তর: অ্যারামাইক লিপি থেকে খরোষ্ঠী লিপির উদ্ভব হয়।
6. পতঞ্জলি রচিত গ্রন্থটির নাম কী?
উত্তর: পতঞ্জলি রচিত গ্রন্থটির নাম মহাভাষ্য।
7. পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড়ো বৌদ্ধ বিহারটির নাম কী?
উত্তর:পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড়ো বৌদ্ধ বিহারটির নাম মোগলমারি (পশ্চিম মেদিনীপুর)।
৪. তোরণ কাকে বলে?
উত্তর:বৌদ্ধস্তূপের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য যে প্রবেশদ্বার নির্মিত হত, তাকেই বলা হয় তোরণ।
9. মুদ্রারাক্ষস কে রচনা করেন?
উত্তর:বিশাখদত্ত মুদ্রারাক্ষস রচনা করেন
10. হর্ষবর্ধনের লেখা একটি সংস্কৃত নাটকের নাম লেখো।
উত্তর: হর্ষবর্ধনের লেখা একটি সংস্কৃত নাটকের নাম নাগানন্দ।
11. একটি তামিল মহাকাব্যের নাম লেখো।
উত্তর: একটি তামিল মহাকাব্য হল মণিমেখলাই।
12. মেঘদূতম-এর রচয়িতা কে?
উত্তর: মহাকবি কালিদাস মেঘদূতম রচনা করেন।
13. শুশ্রুত কে ছিলেন?
উত্তর: গুপ্ত যুগের একজন বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক ছিলেন শুশ্রুত।
14. আর্যভট্টের পরবর্তীকালের একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানীর লেখো।
উত্তর: আর্যভট্টের পরবর্তীকালের একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন বরাহমিহির।
15. সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থটি রচনা করেন কে?
উত্তর:সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থটি রচনা করেন বরাহমিহির।
16. ব্রাসিদ্ধান্ত গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর:ব্রহ্মগুপ্ত ব্রাসিদ্ধান্ত গ্রন্থটি রচনা করেন।
17. অশোকস্তম্ভে ক-টি প্রাণীর কথা বলা হয়েছে।
উত্তর:অশোকস্তম্ভে চারটি প্রাণীর (সিংহ, হাতি, ষাঁড়, ঘোড়া) কথা বলা হয়েছে।
18. গন্ধার শিল্পরীতির মূল বিষয় কী ছিল?
উত্তর: গন্ধার শিল্পরীতির মূল বিষয় ছিল বুদ্ধের জীবন ও বৌদ্ধধর্ম।
19. পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনায় প্রাপ্ত প্রত্নস্থলটির নাম কী?
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণায় প্রাপ্ত প্রত্নস্থলটির নাম চন্দ্রকেতুগড়।
Short Question Answer
1. নালন্দার শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত সম্রাট কুমারগুপ্ত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতীয় উপমহাদেশের 'অক্সফোর্ড' বলা হত। এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়নের প্রাণকেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্মের ছাত্ররা পড়াশোনা করত। কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখানে ভরতি হতে হত। এই মহাবিহারে পরীক্ষার সুবন্দোবস্ত ছিল। চিন, তিব্বত, কোরিয়া, সুমাত্রা, জাভা থেকে ছাত্ররা নালন্দায় পড়তে আসত। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ছাত্রদের কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হত।
2. 'বিদ্যারম্ভ' অনুষ্ঠান বলতে কী বোঝো?
> গুপ্ত যুগের পরবর্তীকালে এখানকার হাতেখড়ির মতো শিশুর অক্ষর পরিচয়ের অনুষ্ঠান হত। একেই বলা হয় বিদ্যারম্ভ। এটি সাধারণত শিশুর পাঁচবছর বয়সে হত।
3. তামিল সাহিত্যকে 'সঙ্গম সাহিত্য' বলা হয় কেন?
> খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থেকে খ্রিস্টীয়, ৩০০ অব্দের মধ্যে দক্ষিণ ভারতের মাদুরাই নগরীতে তিনটি সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল। এই সম্মেলনগুলি সঙ্গম নামে পরিচিত। তাই তামিল সাহিত্যকে 'সঙ্গম সাহিত্য' বলা হয়।
4. বিশাখদত্তের লেখা দুটি বিখ্যাত নাটকের নাম লেখো।
> বিশাখদত্তের লেখা দুটি বিখ্যাত নাটকের নাম হল- মুদ্রারাক্ষস ও দেবীচন্দ্রগুপ্তম। নন্দরাজ ধননন্দকে পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসন আরোহন মুদ্রারাক্ষস-এর বিষয়বস্তু। অন্যদিকে দেবীচন্দ্রগুপ্তম নাটকে গুপ্তবংশীয় রাজা রামগুপ্ত ও চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে শকরাজার যুদ্ধ সম্পর্কিত আলোচনা রয়েছে।
5. তামিল সাহিত্যে মহাকাব্য কাকে বলা হত? দুটি তামিল মহাকাব্যের নাম লেখো।
> তামিল ভাষাতে লেখা দীর্ঘ কবিতাগুলিকে তামিল সাহিত্যে মহাকাব্য বলা হত। দুটি তামিল মহাকাব্যের নাম শিলপ্পাদিকারম ও মণিমেখলাই।
6. মহাকবি কালিদাসের লেখা দুটি কাব্য এবং দুটি নাটকের নাম লেখো।
উত্তর:গুপ্ত যুগের মহাকবি কালিদাসের লেখা দুটি কাব্য হল - মেঘদূতম ও কুমারসম্ভবম এবং দুটি নাটকের নাম অভিজ্ঞান শকুন্তলম ও মালবিকাগ্নিমিত্রম।
7. সংখ্যায়ন কী? সূর্য সিদ্ধান্ত বইটি কার লেখা?
> পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি মিলিয়ে বৌদ্ধদের গণিতবিজ্ঞান তৈরি হয়েছিল। সেই গণিতবিজ্ঞানকে জৈনরা সংখ্যায়ন বলত। সূর্য সিদ্ধান্ত বইটি বরাহমিহিরের লেখা।
8. গুহাবাস কাকে বলে?
অথবা, অশোক ও তাঁর পরবর্তী মৌর্য সম্রাটরা আজীবিকদের থাকার কোন্ ব্যবস্থা করেছিলেন?
> অশোক ও তাঁর পরবর্তী মৌর্য সম্রাটরা আজীবিকদের জন্য পাহাড় কেটে কৃত্রিম গুহা বানাত। সেই গুহাগুলির ভিতরে সন্ন্যাসীরা থাকতেন বলে তাকেই গুহাবাস বলা হত।
9. গন্ধার শিল্প বলতে কী বোঝো?
> কুষাণ যুগে গ্রিক, রোম ও ভারতীয় শিল্পরীতির সংমিশ্রণে এক নতুন ভাস্কর্য শিল্পরীতির জন্ম হয়। বুদ্ধের জীবন ও বৌদ্ধধর্ম এই দুই শিল্পরীতির সংমিশ্রণ হল গন্ধার শিল্পরীতি। এই শিল্প গড়ে ওঠে গন্ধার অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। এজন্য এই নতুন শিল্প তথা শিল্পরীতিকে বলা হয় গন্ধার শিল্প।
10. প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার পরিচয় দাও।
> বেদের যুগের শিক্ষা ছিল ব্যক্তিগত। গুরু-শিষ্য সম্পর্ককেন্দ্রিক শিক্ষা মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। গুরু ছান্দস্ ভাষায় তাঁর শিষ্যকে পাঠ দিতেন।
Long Question Answer
1. প্রাচীন ভারতে গুরুকুল বা গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থা কেমন ছিল?
> প্রাচীন ভারতে বিশেষত বৈদিক যুগে গুরুকুল শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। প্রথম জীবনে ব্রাহ্মণ সন্তানরা গুরুগৃহে থেকে শিক্ষালাভ করত। এই অধ্যায়কে বলা হয় ব্রহ্মচর্যাশ্রম। ছাত্ররা গুরুর কাছে বেদ অধ্যয়ন করত। তবে এই বেদ শুনে শুনে মুখস্থ করতে হত। বেদ ছাড়া ব্যাকরণ, ছন্দ, জ্যোতির্বিদ্যাও অধ্যয়ন করতে হত। এ ছাড়া ছাত্ররা অস্ত্রচালনা ও শরীরচর্চার পাঠও নিত।
এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল গুরু-শিষ্য সম্পর্ককেন্দ্রিক। শিক্ষালাভের জন্য ছাত্রদের কোনো অর্থ দিতে হত না। তবে অন্যভাবে গুরুদক্ষিণা দেওয়ার প্রথা ছিল। ছাত্ররা গুরুকে ভীষণভাবে শ্রদ্ধা করত। গুরুগৃহের অনেক কাজ ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত।
2. প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার পরিচয় দাও।
> বেদের যুগের শিক্ষা ছিল ব্যক্তিগত। গুরু-শিষ্য সম্পর্ককেন্দ্রিক শিক্ষা মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। গুরু ছান্দস্ ভাষায় তাঁর শিষ্যকে পাঠ দিতেন।
(A) বৌদ্ধ শিক্ষা: বৌদ্ধ শ্রমণ ও ভিক্ষুরা বিহার বা সংঘে লেখাপড়া শিখত। বিহারগুলিতে ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও কৃষি, চিকিৎসা, রাজ্যশাসন, তির ও তরবারি চালানো,
কুস্তি, সুতোকাটা, কাপড়বোনা ইত্যাদি তাদের শিখতে হত।
(B) ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা: সমাজে বর্ণভেদপ্রথার সৃষ্টি হলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের জন্য পৃথক পৃথক বিষয়গুলির। চর্চা হত।
(C) গুপ্ত যুগের শিক্ষা: গুরুকুল এবং আশ্রমের শিক্ষা এই সময় থাকলেও রাজাদের চেষ্টায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রচলিত হয়। পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে লিপি, ভাষা, কাব্য, প্রচলিত, জ্যোতিষ, রাজনীতি বিষয়ে শিক্ষাচর্চা চলত।
3.টীকা লেখো: তক্ষশিলা মহাবিহার।
> তক্ষশিলা প্রকৃতপক্ষে ছিল গন্ধার মহাজনপদের রাজধানী। বিভিন্ন বিদেশি শক্তি নানা সময়ে তক্ষশিলা দখল করায় প্রথম থেকেই বহু মানুষ ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের আসা-যাওয়া ছিল তক্ষশিলায়। এই সূত্র ধরেই বৌদ্ধ ধর্ম তক্ষশিলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ষোলো থেকে কুড়ি বছর বয়সের ছাত্ররা উচ্চশিক্ষার জন্য মেধা পরীক্ষা দিয়ে এখানে ভরতি হতে পারত। শিক্ষার্থীরা আট বছর এখানে লেখাপড়ার চর্চা করত। রাজা, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ এই মহাবিহার পরিচালনায় সাহায্য করতেন। পরীক্ষা পদ্ধতি ছিল সহজ। তবে এখানে লিখিত পরীক্ষা দিতে হত না। জীবক, পাণিনি, চাণক্য ছিলেন এই মহাবিহারের ছাত্র।
4.গুপ্ত যুগে সাহিত্যচর্চার পরিচয় দাও।
> গুপ্ত যুগে সাহিত্যচর্চার মান ছিল খুব উন্নত। এ যুগে নাটক, অভিধান ও বিজ্ঞান বিষয়ের কথা জানা যায় বিভিন্ন লেখা পত্রে। কালিদাসের মতো বিখ্যাত কবির আবির্ভাব এ যুগে ঘটে। তাঁর লেখা মেঘদূতম, কুমারসম্ভবম বিখ্যাত দুটি কাব্য এবং অভিজ্ঞান শকুন্তলম, মালবিকাগ্নিমিত্রম দুটি বিখ্যাত নাটক। তাঁর রচনার মধ্যে তৎকালীন সমাজ ও প্রকৃতির নানা দিক ফুটে উঠেছে। শূদ্রকের মৃচ্ছকটিকম নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল চরিত্রগুলিতে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, যন্ত্রণাগুলি ফুটে উঠেছে। বিশাখদত্তের মুদ্রারাক্ষস ও দেবীচন্দ্রগুপ্তম নাটকের বিষয়বস্তু ছিল গুপ্তদের সঙ্গে শকরাজাদের যুদ্ধ, অমর সিংহের সংকলিত অমরকোশ নামে অভিধান এই সময়েই রচিত হয়েছিল।
5. রামায়ণ কী? এ সম্পর্কে কী জান?
> রামায়ণ হল ভারতের একটি প্রাচীন মহাকাব্য। মহাকবি বাল্মীকি সংস্কৃত ভাষায় এই মহাকাব্যটি রচনা করেন। খুব সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে রামের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে রামায়ণ রচিত হয়। এই গ্রন্থে মোট ২৪ হাজার শ্লোক আছে। এর 'কান্ড' সংখ্যা ৭টি। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন লেখক রামায়ণ রচনা করেন। যেমন-কাশীরাম দাস বাংলা ভাষায় রামায়ণ লেখেন। এই মহাকাব্যের মূল চরিত্রে আছেন রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, রাবণ, হনুমান প্রমুখ। রামের বনবাস, সীতাহরণ, জটায়ু বধ, হনুমানের লঙ্কাদহন, রাম-রাবণের যুদ্ধ প্রভৃতি ঘটনা এই মহাকাব্যে স্থান পেয়েছে।
6. মহাভারত কী? এ সম্পর্কে কী জানা যায়?
> ভারতের একটি প্রাচীন মহাকাব্য হল মহাভারত। খুব সম্ভবত মহাভারত রচিত হয় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের মধ্যে। সংস্কৃত ভাষায় রচিত এই গ্রন্থটির মূল রচনাকার ছিলেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেব। এই মহাকাব্যের আদি নাম ছিল জয়কাব্য। পরে বৈশম্পায়ন এতে আরও কিছু শ্লোক জুড়ে এর নাম রাখেন ভারত। পরে সৌতি এর সঙ্গে আরও অনেক শ্লোক জুড়ে নাম দেন মহাভারত। বর্তমানে মহাভারতের শ্লোকসংখ্যা এক লাখ এবং এটি ১৮টি সর্গ বা ভাগে বিভক্ত।
মহাভারত হল কৌরব এবং পাণ্ডবদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ। এই যুদ্ধ 'মহাভারতের যুদ্ধ' নামে পরিচিত। এই গ্রন্থ থেকে সমকালীন ভারতবর্ষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।
7. পুরাণ কী? পুরাণ সাহিত্য থেকে কী জানতে পারা যায়?
> পুরাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল প্রাচীন। পুরাণের সংখ্যা ১৮টি। পুরাণে রয়েছে গল্প এবং সামান্য ইতিহাস। মোটামুটিভাবে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম বা চতুর্থ শতকের আগেই কয়েকটি পুরাণ রচিত হয়েছিল। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের মধ্যে বাকি পুরাণগুলি রচিত হয়েছিল। প্রাচীন ভারতের লিখিত ইতিহাস যখন খুব বেশি পাওয়া যায়নি তখন পুরাণ কাহিনি থেকে আমরা রাজবংশগুলির ইতিহাস জানতে পারি। এ ছাড়াও কৃষি, পশুপালন, বাণিজ্য, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ে জানতে পারি। প্রাচীন পুরাণ রচিত হয় বিন্নু, শিব, দুর্গা প্রভৃতি দেবদেবীদের কাহিনি নিয়ে। পুরাণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-শিবপুরাণ বিষ্ণুপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ।
8. টীকা লেখো: আর্যভট্ট।
> গুপ্ত যুগের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ ছিলেন আর্যভট্ট। চারটি খণ্ডে এবং ১১৮টি স্তোত্রে বিভক্ত আর্যভট্টীয় নামক গ্রন্থে তিনি গণিত, সময় ও গ্রহ-নক্ষত্র বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনিই প্রথম সংখ্যা হিসেবে শূন্যের ব্যবহার করেন। আর্যভট্টের মতে, পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার এবং নিজ অক্ষের ওপর পৃথিবী সর্বদা ঘুরছে। চন্দ্রগ্রহণ বিষয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর ছায়া চাঁদের ওপর পড়লেই চন্দ্রগ্রহণ হয়। আর্যভট্টের লেখা অপর একটি গ্রন্থ হল সূর্য সিদ্ধান্ত। জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতে তাঁর বিশেষ কৃতিত্বের কারণে ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নাম রাখা হয় আর্যভট্ট।
9. প্রাচীন ভারতে কারিগরি শিক্ষাচর্চা বিজ্ঞানচর্চা থেকে আলাদা হয়ে গেল কেন?
> সুপ্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সমাজে কৃষিকাজ ছিল সাধারণ মানুষের প্রধান জীবিকা। পাশাপাশি ইট, পাথর ও ধাতুর ব্যবহারও অব্যাহত ছিল। সেকালে ইট, পাথর ও ধাতুর সাহায্যে নানারকম যন্ত্র তৈরি হত। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চিকিৎসকরা নিজেরা তৈরি করতেন না। ফলে দক্ষ কারিগরদের প্রয়োজনীয়তা সবসময়েই ছিল। প্রয়োজনীয় যন্ত্র কেমন হবে তা চিকিৎসক - কারিগরকে বুঝিয়ে দিতেন। কারিগর সেইমতো যন্ত্র তৈরি - করতেন। শুশ্রুত সংহিতায় কারিগরদের প্রশংসা করা হলেও ধর্মশাস্ত্রে কারিগরদের কাজকে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। - এইসব কারণেই প্রাচীন ভারতে কারিগরি শিক্ষাচর্চা ক্রমে বিজ্ঞানচর্চা থেকে আলাদা হয়ে যায়।
10. প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চা সম্পর্কে কী জান তা বিবৃত করো।
> ভারতীয় উপমহাদেশে সুপ্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞানচর্চা অব্যাহত। পরবর্তী বৈদিক ও বৌদ্ধ সাহিত্যে বিভিন্ন ঔষধ ও অস্ত্রপ্রচারের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রায় সাতশো ঔষধি গাছপালার কথা এবং রোগের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা আছে চরক সংহিতায়। প্রাচীনকালের বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক ছিলেন শুশ্রুত। তিনি হাড় ভেঙে গেলে বা কান, নাক কেটে গেলে তা জোড়া লাগানোর কাজে দক্ষ ছিলেন। প্রাচীনকালে শারীরবিদ্যা ও শল্যচিকিৎসার ধারা অব্যাহত ছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতিষচর্চা প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। জৈন ও বৌদ্ধরা যেমন গণিতের চর্চা করতেন তেমনই গুপ্ত যুগে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। কৃষিকাজ, গাছপালা ও পশুপাখি নিয়েও বৈজ্ঞানিক আলোচনা প্রাচীন ভারতে হত। ইট, পাথর ও ধাতুর ব্যবহারও প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেকালে কারিগরি বিজ্ঞানের উন্নতি ছিল অভাবনীয়।
11. মৌর্য আমলের শিল্পচর্চার বিবরণ দাও।
> প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকলার প্রকৃত সূচনা ঘটেছিল মৌর্য যুগে।
(A) স্তূপ: মৌর্য স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল স্তূপ। প্রথম দিকের স্তূপগুলি মাটি দিয়ে তৈরি হত। সম্রাট অশোকের আমলে প্রায় অসংখ্য স্তূপ নির্মিত হয়। অশোকের সময় থেকে স্তূপ নির্মাণে ইটের ব্যবহার শুরু হয়। মৌর্য আমলে নির্মিত স্তূপগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সাঁচি স্তূপ।
(B) চৈত্য: অশোকের আমলে সাঁচি ও সারনাথে দুটি বিশাল চৈত্য নির্মিত হয়।
(C) স্তম্ভ: মৌর্য যুগে বহু স্তম্ভ নির্মিত হয়। অশোকের 'আমলেই সাঁচি, সারনাথ, এলাহাবাদ, নন্দনগড় প্রভৃতি স্থানে ৩৭টি স্তম্ভ প্রতিষ্ঠিত হয়। সারনাথের সিংহস্তম্ভটি প্রাচীন ভারতের শিল্পচেতনার এক অনন্য নমুনা। স্তম্ভগুলিতে প্রতীক হিসেবে সিংহ, বৃষ, হস্তি, অশ্ব ও চক্রের ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি স্তম্ভের উচ্চতা ছিল ৩০-৫০ ফুটের মধ্যে। এর দুটি ভাগ ছিল দণ্ড ও বোধিকা (শীর্ষ)। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, মৌর্যযুগের শিল্পকলায় মানুষের মূর্তি তেমন দেখা যায় না।
(6) গুপ্ত আমলের শিল্পচর্চার পরিচয় দাও।
> গুপ্ত যুগকে 'প্রাচীন ভারতের সুবর্ণযুগ' বলা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুপ্ত যুগ উৎকর্ষতার চরম শিখরে পৌঁছায়। শিল্পচর্চাও তার ব্যতিক্রম নয়। শিল্পচর্চার প্রধান মাধ্যম স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা। গুপ্ত আমলে শিল্পচর্চার সঙ্গে ধর্মীয় ধ্যানধারণার যোগাযোগ ছিল স্পষ্ট। পাথরের পাশাপাশি গুপ্ত ভাস্কর্যে পোড়ামাটির ব্যবহার ছিল অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
গুপ্ত আমলে প্রথম স্থাপত্য হিসেবে ইট বা পাথরের মন্দির বানানোর রীতির প্রচলন হয়। একই সঙ্গে পাহাড় বা পাথর কেটে মন্দির তৈরির চল চালু হয়। মন্দিরগুলির দেয়ালে নানা দেবদেবীর মূর্তি খোদিত থাকত। উদাহরণস্বরূপ দেওঘরের দশাবতার মন্দিরের কথা উল্লেখনীয়।
গুপ্ত যুগে চিত্রশিল্প বিশেষত গুহাচিত্রের বিকাশ সাধিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে মধ্য ভারতের অজন্তা গুহার চিত্রগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন গাছপালা ও মানুষের ছবি এই গুহাচিত্রগুলিতে অঙ্কিত হয়েছে। গুহাচিত্রগুলিতে ব্যবহৃত রং পাথর, মাটি ও গাছপালার উপাদান দিয়ে তৈরি হত। অজন্তা ছাড়াও ইলোরা এবং বাঘ গুহাচিত্রগুলির কথাও এক্ষেত্রে প্রশংসনীয়।
Fill in The Blanks
1. ডানদিক থেকে বামদিকে লেখা হত _________ লিপি।
(A) সংস্কৃত (B) ব্রাহ্মী
(C)খরোষ্ঠী ✔
2. বামদিক থেকে ডানদিকে লেখা হত _________ লিপি।
(A) সংস্কৃত (B) খরোষ্ঠী
(C) ব্রাহ্মী ✔
3. ব্রাহ্মী লিপি থেকেই তৈরি হয় ________লিপি।
(A) সংস্কৃত (B) প্রাকৃত
(C) দেবনাগরী ✔
4. রামায়ণ রচয়িতা হলেন _________ |
(A) ব্যাসদেব (B) বাল্মীকি ✔
(C) পাণিনি
5. রামায়ণ মহাকাব্যটি _________ কান্ডে বিভক্ত।
(A) দশটি (B) সাতটি ✔
(C)পাঁচটি
6. মহাভারতের আদিনাম ছিল ________ |
(A) গাথা সপ্তশতী (B) জয়কাব্য ✔
(C) মণিমেখলাই
7. চরক সংহিতায় প্রায় _________ ঔষধি গাছপালার কথা জানা যায়।
(A)তিনশো (B) পাঁচশো
(C) সাতশো ✔
৪. প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে চিকিৎসাশাস্ত্রকে ___________ বলা হত।
(A)উপবেদ ✔ (B) মহাভারত
(C) পুরাণ
9. অশ্বঘোষ রচনা করেছিলেন __________ গ্রন্থ।
(A) মেঘদূতম (B)মুদ্রারাক্ষস
(C) বুদ্ধচরিত ✔
10. ___________কথাটির মানে হল মাটির তৈরি ছোটো গাড়ি।
(A) স্মৃতিশাস্ত্র (B) প্রিয়দর্শিকা
(C) মৃচ্ছকটিকম ✔
11. দেবীচন্দ্রগুপ্তম নাটকটি রচনা করেন __________ |
(A) বিশাখদত্ত ✔ (B) অমর সিংহ
(C) চরক
12. প্রিয়দর্শিকা নাটক লিখেছিলেন রাজা __________ |
(A) অশোক (B) হর্ষবর্ধন ✔
(C) বাণভট্ট
True And False
1. বৌদ্ধরা লেখাপড়া শিখত বিহার বা সংঘে। ✔
2. নালন্দা মহাবিহারে শুধুমাত্র বৌদ্ধধর্মের ছাত্ররাই পড়তে পারত। ✘
3. ছান্দস্ ভেঙে তৈরি হয়েছিল প্রাকৃত ভাষা। ✘
4. দন্ডীর লেখা দশকুমার চরিত সংস্কৃত গদ্যে লেখা একটি বিখ্যাত বই। ✔
5. কম্বনের রামায়ণে রামকেই বড়ো করে দেখানো হয়েছে। ✘
6. বিশল্যকরণী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। ✔
7. বৌদ্ধ পণ্ডিত নাগার্জুন ছিলেন একজন গণিতবিদ। ✔
৪. মথুরা শিল্পরীতিতে লাল চুনাপাথর ব্যবহৃত হয়। ✔
👉Paid Answer (For Membership User)
Editing By- Lipi Medhi