Chapter 8
মাটিদূষণ
-----------------
MCQ
1. মাটি সৃষ্টি হয়েছে-
(i) শিলা থেকে,
(ii)জল থেকে,
(iii) পাতা থেকে,
(iv) শিলা ও জৈব পদার্থ থেকে।
উত্তর: শিলা ও জৈব পদার্থ থেকে।
2. 2011 খ্রিস্টাব্দে পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটেছিল জাপানের-
(i) ফুকুশিমায়,
(ii) চেরনোবিলে,
(iii) হিরোশিমায়,
(iv) টোকিওতে।
উত্তর: ফুকুশিমায়।
3. একই শস্যের বহুবার চাষের ফলে মাটিতে-
(i) জৈব পদার্থের অভাব হয়,
(ii) উর্বরতা কমে যায়,
(iii) পোকামাকড় মারা যায়,
(iv) মাটির ক্ষয় হয়।
উত্তর: ৪ উর্বরতা কমে যায়।
4. ভূপৃষ্ঠের উপর 1 সেমি মাটি উৎপন্ন হতে সময় নেয়-
(i) 10 বছর,
(ii) 50 বছর,
(iii) 300 বছর,
(iv) 500 বছর।
উত্তর: 500 বছর।
5. পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার 90% মানুষ বসবাস করে মোট স্থলভাগের মাত্র-
(i) 10%,
(ii) 20%,
(iii) 30%,
(iv) 40% অঞ্চলে।
উত্তর: A 10% অঞ্চলে।
6. মাটি দূষণের শতকরা 90 শতাংশ হয়-
(i) কাষ্ঠশিল্প,
(ii) কাগজশিল্প,
(iii) কঠিন বর্জ্য,
(iv) দূষিত জল থেকে।
উত্তর: কঠিন বর্জ্য থেকে।
7. 'ভূপাল গ্যাস বিপর্যয়' হয়েছিল-
(i) ক্যাডমিয়াম,
(ii) পারদ,
(iii) জিঙ্ক,
(iv) MIC দূষণের কারণে।
উত্তর: D MIC-এর কারণে।
৪. রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দূষণ ঘটায়-
(i) জলের,
(ii) মাটির,
(iii) শব্দের,
(iv) জল ও মাটির।
উত্তর: D জল ও মাটির।
9. একটি অবিয়োজিত পদার্থ হল-
(i) প্লাস্টিক,
(ii) কাগজ,
(iii) কাঠ,
(iv) কাপড়।
উত্তর: A প্লাস্টিক।
10. কৃষিজমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করা কৃষিজমি-
(i) আম্লিক,
(ii) ক্ষারকীয়,
(iii) উর্বর,
(iv) অনুর্বর প্রকৃতির হয়ে যায়।
উত্তর: আম্লিক প্রকৃতির হয়ে যায়।
11. মাটি ক্ষয়ের কারণ হল-
(i) ইটভাটার ইট তৈরির জন্য অতিরিক্ত মাটি কাটা,
(ii) কলকারখানার ধোঁয়া,
(iii) যানবাহনের ধোঁয়া,
(iv) জলে আবর্জনা ফেলা।
উত্তর: ইটভাটার ইট তৈরির জন্য অতিরিক্ত মাটি কাটা।
প্রশ্ন-1 গঙ্গা নদীর দুই তীরের পলি মাটিতে প্রচুর ধান, পাট, শাকসবজি চাষ হয়। কিন্তু পুরুলিয়ার রুক্ষ মাটিতে তেমন ভালো ফসল হয় না। কেন বলো তো?
উত্তর: গঙ্গা নদীর সুবিস্তৃত অববাহিকা বা দুই তীর সংলগ্ন বিস্তীর্ণ সমতলভূমিতে প্রচুর পলি সঞ্চিত হয়। এই পলি খনিজ ও জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ। বর্ষার সময় মাঝে মাঝে প্লাবনের সৃষ্টিতে জলবাহিত পলিকণা সমভূমির উপর সঞ্চিত হয়ে জমির উর্বরতা এবং জলধারণ ক্ষমতাও অনেক বাড়িয়ে দেয়। এর ফল গঙ্গা নদীর উভয় তীরসংলগ্ন বিস্তীর্ণ সমভূমিতে প্রচুর পরিমাণে ধান, পাট, গম, ভুট্টা, সরিষা, ইক্ষু, আলু এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে, আমাদের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলাটি হল ছোটোনাগপুর মালভূমির একটি অংশ। তাছাড়া পুরুলিয়ার অধিকাংশ স্থান মালভূমির অন্তর্গত হওয়ার ফলে রুক্ষ, অনুর্বর, মোটা বালি ও কাঁকরে পরিপূর্ণ, জৈবপদার্থহীন, মাটির কম জলধারক্ষমতা এবং এবড়ো- খেবড়ো, অসমতল তরঙ্গায়িত, ভূপ্রাকৃতির জন্য খুব ভালোভাবে কৃষিকাজ করা ও ফসল উৎপন্ন করা সম্ভব হয় না।
প্রশ্ন-2 তোমাদের বাগান বা বাড়ির টবে যে ফুলগাছটা আছে, সেটাতে প্রত্যেক দিন খুব সুন্দর সুন্দর ফুল ফোটে। আচ্ছা ওই টবটাতে যদি দূষিত তেল জাতীয় কিছু পড়ে, তবে কী হবে বলতে পারো?
উত্তর: এই ঘটনার একমাত্র ফল হল-'ফুলগাছটা অকালে মারা যাবে'। কারণ ফুলগাছের গোড়ায় যে মাটি থেকে গাছ পুষ্টি সংগ্রহ করে, সেই মাটিটা তেলজাতীয় দূষিত পদার্থ মিশে গিয়ে মৃত্তিকা দূষণ ঘটেছে। মৃত্তিকা দূষণের ফলে যেসব ঘটনা ঘটে থাকে, সেগুলি হল-(i) তেল জাতীয় পদার্থ মাটির মধ্যেকার ছিদ্র বা রন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেবে। (ii) জল টবের ভিতরের সমস্ত মাটিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। (iii) মাটির মধ্যে বায়ু চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। (iv) তৈলাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে গাছের শিকড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। (v) মৃত্তিকার পুষ্টি নষ্ট করার মধ্যে দিয়ে মাটি উর্বরতাকে হ্রাস করে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করবে।
B.দু-এক কথায় উত্তর দাও:
1. 'বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস' কবে পালিত হয়?
উত্তর: 5 ডিসেম্বর।
2. ভারতে ভূপালের গ্যাস দুর্ঘটনা কত সালে ঘটেছিল?
উত্তর: 1984 সালে।
3. ইউক্রেনের চের্নোবিলে কত সালে পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল?
উত্তর: 1986 সালে।
4. জাপানের ফুকুশিমা ডাইচিতে কত খ্রিস্টাব্দে পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল?
উত্তর: 2011 সালে।
5. একটি জৈব ভঙ্গুর পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর: সবজির খোসা।
6. নাইট্রোজেন ঘটিত একটি রাসায়নিক সারের নাম লেখো।
উত্তর: ইউরিয়া।
7. একটি পেস্টিসাইডের উদাহরণ দাও।
উত্তর: DDT।
৪. মাটি দূষণকারী একটি ভারী ধাতুর নাম বলো।
উত্তর: পারদ।
9. কৃষকের বন্ধু কাকে বলে?
উত্তর: কেঁচো।
C.শূন্যস্থানে উপযুক্ত শব্দ বসাও:
1. মৃত্তিকা দূষণের পরোক্ষ কারণ হল।
উত্তর: অ্যাসিড বৃষ্টি।
2. নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে মাটি পায়।
উত্তর: ক্ষয়।
3. পারমাণবিক বর্জ্য থেকে বিকিরণ হয়।
উত্তর: তেজস্ক্রিয়।
4. পৃথিবীর মোট স্থলভাগের -শতাংশ ভারতের অন্তর্গত।
উত্তর: 2.4।
5. পারমাণবিক চুল্লি থেকে নির্গত হয়।
উত্তর: রেডিয়াম।
6. প্লাস্টিকের মধ্যে যৌগ থাকে।
উত্তর: পলিমার।
7. পৃথিবীপৃষ্ঠের - শতাংশ জমি কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।
উত্তর: 5-7।
৪. প্লাস্টিক হল মাটি দূষকের উদাহরণ।
উত্তর: অজৈব।
9. গ্যাস অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী।
উত্তর: কার্বন ডাইঅক্সাইড।
D.শুদ্ধ বা অশুদ্ধ লেখো:
1. ফসলের পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয় আগাছানাশক।
উত্তর: অশুদ্ধ (পেস্টিসাইড)
2. মাটি দূষণের ফলে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়।
উত্তর: শুদ্ধ
3. পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশ অবনমন এক।
উত্তর: অশুদ্ধ (নয়)
4. 'ঝুম চাষে'র ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়।
উত্তর: শুদ্ধ
5. আগ্নেয়গিরি থেকে সালফার ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়।
উত্তর: শুদ্ধ
6. জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে সৃষ্টি হয় অক্সিজেন।
উত্তর: অশুদ্ধ (কার্বন মনোক্সাইড)
7. কম্পোস্টিং পদ্ধতিতে মৃত্তিকা দূষণ প্রতিরোধ করা যায় না।
উত্তর: অশুদ্ধ (যায়)
৪. ভারতে ভূমিক্ষয়ের হার হল 20 শতাংশ।
উত্তর: অশুদ্ধ (18.5)
9. চেরনোবিল দুর্ঘটনা জাপানে ঘটেছিল।
উত্তর: অশুদ্ধ (ইউক্রেন)
E.বামদিকের সঙ্গে ডানদিক মেলাও:
F.বেমানান শব্দটি চিহ্নিত করো:
1. ফ্লাই অ্যাশ, পারদ, ইউরেনিয়াম, সিসা।
উত্তর: ফ্লাই অ্যাশ।
2. ভাইরাস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, সিসা।
উত্তর: সিসা।
3. রাসায়নিক সার, জৈব সার, কীটনাশক, আগাছানাশক।
উত্তর: জৈব সার।
4. সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তি, পারমাণবিক শক্তি।
উত্তর: পারমাণবিক শক্তি।
5. ফসফেট, সালফেট, প্রোটোজোয়া, নাইট্রেট।
উত্তর: প্রোটোজোয়া।
G.ভুল সংশোধন করে লেখো:
1. নগরায়ণের ফলে মৃত্তিকা দূষণ রোধ হয়।
উত্তর: নগরায়নের ফলে মৃত্তিকা দূষিত হয়।
2. চিপকো আন্দোলন জল সংরক্ষণের জন্য সংঘটিত হয়।
উত্তর: চিপকো আন্দোলন বনসংরক্ষণের জন্য সংঘটিত হয়।
3. মৃত্তিকায় নাইট্রেট জাতীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে করোনা রোগ ছড়ায়।
উত্তর: মৃত্তিকায় নাইট্রেট জাতীয় রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ক্যানসার ছড়ায়।
4. অম্লবৃষ্টি হলে মৃত্তিকা দূষিত হয় না।
উত্তর: অম্লবৃষ্টি হলে মৃত্তিকা দুষিত হয়।
5. কাঠ একটি পচনশীল অজৈব পদার্থ।
উত্তর: কাঠ একটি পচনশীল জৈব পদার্থ।
6. মাটির একটি সজীব দূষক হল প্লাস্টিক।
উত্তর: মাটির একটি অজৈব দূষক হল প্লাস্টিক।
7. আমি একটি মাটির সজীব দূষক। আমি কে?
উত্তর: ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া।
8. আমি একটি মাটির অজৈব দূষক। আমি কে?
উত্তর: সিসা/পারদ/ ফসফেট/ সালফেট।
9. আমি এমন দেশ যেখানে ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে। আমি কে?
উত্তর: জাপান।
10. আমি এমন দেশ যেখানে চেরনোবিল দুর্ঘটনা ঘটে। আমি কে?
উত্তর: ইউক্রেন।
11. আমি একপ্রকার মৃত্তিকা ক্ষয়ের ধরন বর্ষাকালে আমি বেশি মৃত্তিকা ক্ষয় করি। আমি কে?
'উত্তর: নালিক্ষয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-1 মাটির উর্বরতা বা গুণগত মান কীভাবে নষ্ট হয়?
উত্তর: কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, গৃহস্থালীর, আবর্জনা, কৃষিক্ষত্রের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, প্লাস্টিক প্রভৃতি পদার্থ মিশলে বা থাকলে মাটির উর্বরতা বা গুণগত মান নষ্ট হয়।
প্রশ্ন-2 মাটির সজীব দূষকগুলির নাম লেখো।
উত্তর: মাটির সজীব দূষকগুলি হলো-ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, ভাইরাস, কৃষি প্রভৃতি। এইসব রোগ-সৃষ্টিকারী সজীব দূষকগুলির উৎস হলো বর্জ্য, নোংরা, আবর্জনা, মলমূত্র, চিকিৎসা-সংক্রান্ত বর্জ্য প্রভৃতি।
প্রশ্ন-3 মাটির অজৈব দূষকগুলির নাম লেখো।
উত্তর: মাটির অজৈব দূষকগুলির হল-সিসা, পারদ, ফসফেট, সালফেট, লবণ, ক্যাডমিয়াম, অ্যাসিড, প্যারাথিয়ন, অন্যান্য ভারী ধাতু প্রভৃতি। এগুলি প্রধানত বিভিন্ন কারখানা (সার ও প্লাস্টিক), তাপবিদ্যুৎ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও লৌহ ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র থেকে নির্গত হয়।
প্রশ্ন-4 পরিপোষক দূষণ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: একই জমিতে বারবার কৃষিজ ফসল উৎপাদন করার ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এর ফলে মাটিতে বসবাসকারী ছোটো ছোটো প্রাণী, কীটপতঙ্গ বা পোকামাকড় মরে যায়। এই কারণে মাটির মধ্যস্থ জৈব পদার্থ, পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। মাটির গুণগত মান হ্রাসকে পরিপোষক দূষণ বলে।
প্রশ্ন-5 মাটিতে কীভাবে তেজস্ক্রিয় দূষণ ঘটে?
উত্তর: পারমাণবিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম ইত্যাদি পারমাণবিক বিস্ফোরণ জাত পদার্থ ও যুদ্ধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় পদার্থসমূহ যেমন-রেডিয়াম-140, বেরিয়াম-140, কার্বন-14 প্রভৃতি। মৃত্তিকায় মিশে গিয়ে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে। তেজস্ক্রিয় দূষণ ঘটায়।
প্রশ্ন-6 মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান কয়েকটি কারণ লেখো।
উত্তর: মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান কারণগুলি হলো- বৃক্ষচ্ছেদন। বন্যা। অ্যাসিড বৃষ্টি। ঝুমচাষ। মানুষের অন্যান্য অবিবেচক কার্যাবলি, যেমন-অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ, যত্রতত্র বাড়ি ঘর নির্মাণ প্রভৃতি।
প্রশ্ন-7 ইটভাটা কীভাবে মাটিদূষণ ঘটায়?
উত্তর: ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য অতিরিক্ত মাটি কাটার ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়। ইট পোড়ানোর জন্য কয়লা অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, যা বায়ুদূষণ ঘটায়। পরোক্ষভাবে, অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে মাটি দূষণ হয়। ছাই ও ভাঙা ইটের টুকরো স্তূপাকারে জমা করে রাখলেও মাটি দূষণ হয়। এছাড়া ইটভাটার ছাই বায়ু থেকে মাটিতে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে মাটির উবরতা হ্রাস করে।
প্রশ্ন-৪ গৃহস্থালীর আবর্জনা কীভাবে মাটি দূষণ ঘটায়?
উত্তর: গৃহস্থালীর রান্নাঘরের বর্জ্য পদার্থ, গবাদি পশুর মলমূত্র, মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ প্রভৃতি মাটিতে মিশে মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। গৃহস্থালীর কঠিন বর্জ্য পদার্থ, যেমন-প্লাস্টিকের বস্তু, পলিথিনের প্যাকেট, আসবাবপত্রের টুকরো, প্লাস্টিকের ও কাচের বোতল, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়ে মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়।
প্রশ্ন-9 পরিবেশের অবনমন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বিভিন্ন দূষকের উপস্থিতির কারণে পরিবেশের সামগ্রিক গুণমানের হ্রাসই হল পরিবেশের অবনমন। প্রকৃতির নেতিবাচক ক্রিয়াকলাপ ও মানুষের অবিজ্ঞানসম্মত, অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপের ফলে পরিবেশের গুণগতমান হ্রাস পেয়ে পরিবেশগত অবনমন ঘটায়।
সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-1 মাটিকে জীবজগতের ধারক ও বাহক বলার কারণ কী?
উত্তর: সমগ্র পৃথিবীর একভাগ স্থল (29%) ও তিনভাগ জল (71%)। স্থলভাগের উপরিস্তরে আছে মাটি, যা প্রকৃতির সবচেয়ে বড়ো দান। কারণ- (i) মাটির উপর উদ্ভিদজগৎ জন্মায় ও বড়ো হয়। এই উদ্ভিদই বায়ুমণ্ডলে প্রাণীজগতের বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান অক্সিজেন প্রদান করে। (ii) সমস্ত জীবজগৎ এর খাদ্যসংস্থান, বাসস্থান, জীবনধারণ মাটিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। (iii) মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সবই মাটির উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন-2 নগরায়ণ কীভাবে মাটিকে দূষিত করে?
উত্তর: শহরাঞ্চলে বহুতল বাড়ি নির্মাণ, রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ, খাল ও পরিখা খনন, জলনিকাশি ও পয়ঃপ্রণালী প্রভৃতি নির্মাণ কাজের সময় যন্ত্রের আঘাতে মাটিতে ফাটল সৃষ্টি হয়। নির্মাণ কাজ চলাকালীন মাটিতে সিমেন্ট, বালি মিশেও মাটিকে দ্রুতক্ষয় করে মৃত্তিকা দূষিত করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থানের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে মাটি ক্ষয় পাচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে মৃত্তিকা দূষণ ঘটাচ্ছে। শহরাঞ্চলে মৃত্তিকা দূষণের মাধ্যমগুলি হল-(ⅰ) জৈব ও অজৈব মাধ্যম: শহর ও শিল্পাঞ্চলে হাজার হাজার টন জৈব আবর্জনা মাটিতে জমে মাটি দূষণ করছে।
(ii) গৃহস্থালির আবর্জনা: পলিথিন, প্লাস্টিক ও অন্যান্য গৃহস্থালির আবর্জনা কৃষিজমিকে দূষিত করে তোলে।
প্রশ্ন-3 যানবাহন কীভাবে মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়?
উত্তর: নগরায়ণের ফলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে বাতাসে নাইট্রোজেন ও সালফার ডাইঅক্সাইড মিশছে। এই ধরনের রাসায়নিক পদার্থগুলি বাতাসে ভাসমান জলকণার সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে, বৃষ্টির জলের সঙ্গে অ্যাসিড বৃষ্টিরূপে মাটিতে পড়ে। অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে মাটি দূষিত হয় ও মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন-4 কৃষিজমির মাধ্যমে কীভাবে মাটি দূষিত হয়?
উত্তর: পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিদিন খাদ্যের প্রয়োজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অল্প পরিমাণ অত্যধিক কৃষিকাজ করার জন্য ব্যাপক পরিমাণে মাটি দূষিত হচ্ছে। যেমন-
(i) লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি: জমিতে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার ও অধিক পরিমাণ জলসেচ করার কারণে মাটিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ছে।
(ii) স্বাভাবিক উর্বরতার নাশ: কৃষিজ ফসলকে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা ও আগাছা বিনাশ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়। ফলে মাটিতে বসবাসকারী উপকারী কেঁচো ও অন্যান্য। প্রাণীরা মারা গিয়ে মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা নষ্ট করে।
(iii) মৃত্তিকা ক্ষয়: কৃষিজমির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে গিয়ে বৃক্ষচ্ছেদন ঘটে। গাছপালার শিকড় মাটিকে আঁকড়ে ধরে রেখে ভূমিক্ষয় হ্রাস করে। উদ্ভিদমুক্ত জমি মৃত্তিকার ক্ষয় ও অধিক জলসেচের কারণে কর্ষিত জমির উপরিস্তর থেকে আলগা মাটি ধুয়ে অন্যত্র যাওয়ায় মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন-5 শিল্প ও কারখানা কীভাবে মাটিকে দূষিত করে?
উত্তর: শিল্প ও কলকারখানা নিম্নোক্তভাবে মাটি দূষণ করে থাকে-(i) সালফারের মিশ্রণে মাটির pH-এব মান হ্রাস করে অম্লতা বৃদ্ধি করে। (ii) নাইট্রোজেন অক্সাইড মিশ্রিত হয়ে ভূমিতে পতিত হলে মাটি দূষিত হয়। (iii) কাগজ, চামড়া, রং, প্লাস্টিক, ধাতু, তেলশোধন প্রভৃতি শিল্পের কঠিন ও তরল বর্জ্য পদার্থ মৃত্তিকায় জমা হয়। (iv)
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে নির্গত উড়ন্ত ছাই (Fly Ash), রাসায়নিক কারখানার চুল্লি থেকে নির্গত কঠিন পদার্থ মৃত্তিকার উপর আস্তরণ সৃষ্টি করে উর্বরতা হ্রাস করে। (v) সিসা, তামা, পারদ, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি ধাতু মৃত্তিকায় মিশে গিয়ে ধাতব দূষণ ঘটায়।
4 রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1.প্ররণ মাটি দূষণের উৎসগুলি কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর: মাটি দূষণের উৎসগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল-(ক) প্রাকৃতিক উৎস ও (খ) অপ্রাকৃতিক উৎস।
(ক) প্রাকৃতিক উৎস: (i) আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ছাই, লাভা ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, (ii) অ্যাসিড বৃষ্টি, (iii) সামুদ্রিক লবণাক্ত জল মাটিতে প্রবেশ করে মাটি দূষণ ঘটায়।
(খ) অপ্রাকৃতিক উৎস: (i) শিল্প কেন্দ্র ও পৌরসংস্থা কর্তৃক নিঃসৃত কঠিন ও তরল বর্জ্য পদার্থ, (ii) রাসায়নিক সার, কীটনাশক আগাছানাশক, (iii) তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রভৃতি। আবার মাটি দূষণের উৎসগুলিকে আরও দুটি ভাগে ভাগ করা যায়-(ক) অজৈব উৎস ও (খ) জৈব উৎস।
① অজৈব উৎস: (i) আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ছাই, লাভা, ভস্ম ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, (ii) রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক প্রভৃতি।
② জৈব উৎস: (i) বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া ও শৈবালের অবস্থানের কারণে মাটি দূষিত হয়। (ii) মানুষ, প্রাণী ও পাখির মল, মূত্র প্রভৃতি বর্জ্য ও রেচন পদার্থ জীব সম্পর্কীয় মৃত্তিকা দূষণের প্রধান উৎস।
প্রশ্ন-২ পরিবেশের উপর মাটি দূষণের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো। অথবা, মাটি দূষণের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: মৃত্তিকা দূষণের প্রভাব বা ফলাফলগুলি হল-
(ক) মানুষের স্বাস্থ্যের উপর মাটি দূষণের প্রভাব: (i) রোগ জীবাণু সংক্রমিত মাটি মানুষের শরীরে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড, বিভিন্ন ধরনের জ্বর প্রভৃতি মাটি দূষণ থেকেই সৃষ্টি হয়। (ii) ভারী ধাতু, যথা পারদ, সিসা, ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি মাটি দূষকগুলি খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মস্তিষ্ক কোশের বিনাশ, রক্তচাপ বৃদ্ধি, দৃষ্টিহীনতা, বধিরতা, রক্তাল্পতা প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে।
(খ) উদ্ভিদ জগতের উপর মাটি দূষণের প্রভাব: (i) গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ায় ও গুণগত মান হ্রাস পায়।
(গ) কৃষিকাজের উপর মাটি দূষণের প্রভাব: (i) কৃষিজমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে ফসলের গুণগত ও পরিমাণগত মানের অবনতি ঘটে। (ii) দুষিত পদার্থগুলি মাটির সঙ্গে মিশে মাটির ক্ষারকীয়তা, অম্লত্ব ও লবণতা বৃদ্ধি করে মাটিকে অনুর্বর ও শক্ত করে তোলে।
প্রশ্ন. ও মাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। (ন্যূনতম যে-কোনো তিনটি উপায় লিখতে হবে।) অথবা, মাটি দূষণ প্রতিরোধের উপায়গুলি কী কী?
উত্তর:
👉Paid Answer (For Membership User)
Editing by- Rita Moni Bora