মেঘ-চোর
১. স্থূলাক্ষর পদগুলির কারক বিভক্তি নির্ণয় করো:
১. আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ইতিহাস নিয়ে গবেণষা করে।
উত্তর: কর্তকারকে 'এ' বিভক্তি।
২. অসীমা ইতিহাসের ছাত্রী হলেও ভূগোলও বেশ ভালোই জানে।
উত্তর: কর্মকারকে 'শূন্য' বিভক্তি।
৩. তার মধ্যে আশি হাজার কিউবিক মাইলই যায় সমুদ্র থেকে।
উত্তর: অপাদানকারকে 'থেকে' অনুসর্গ।
৪. সাইবেরিয়ায় বড়জোর একই ইন্যি বেশি বরফ জমে।
উত্তর: অধিকরণকারকে 'য়' বিভক্তি।
৫. তাঁর নিজস্ব রকেটে তিনি অসীমাকে নিয়ে বহু জায়গায় বেড়াচ্ছেন।
উত্তর: করণকারকে 'এ' বিভক্তি।
৬. 'মেঘ-চোর' এর মতো তোমার পড়া দু-একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্পের নাম বলো।
উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত 'মেঘ-চোর' নামাঙ্কিত গল্পের মতো আমার পঠিত দুটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প হল-
১. 'বন্ধুবাবুর বন্ধু'
২. 'একশৃঙ্গ অভিযান'
৭. 'মেঘ-চোর' কাকে বলা হয়েছে?
উত্তর: প্রখ্যাত বৃষ্টি বিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরি অন্য দেশ থেকে মেঘ ধার করে এনে সাহারাতে বৃষ্টি ঘটিয়েছেন বলে তাঁকে 'মেঘ-চোর' বলা হয়েছে।
৮. পুরন্দরের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর: পুরন্দর চৌধুরির মুখখানা ফরসা ও একেবারে গোল, প্রায় চাঁদের মতোন। তাঁর চোখের মণি দুটো নীল। তাঁর বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। বৃষ্টি বিজ্ঞানী হিসেবে সারা পৃথিবীতে তাঁর নাম। সাহারা মরুভূমিতে এক মাসে একশো ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে তিনি সাংঘাতিক কাণ্ড করেছেন। এজন্য তাঁর প্রশংসা যত হয়েছে, নিন্দেও হয়েছে প্রায় ততটাই।
৯. অসীমা সম্বন্ধে দু-একটি বাক্য লেখো।
উত্তর: অসীমার বয়স সাতাশ। আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করেন। ভূগোল ও কম্পিউটারে রয়েছে তাঁর প্রবল আগ্রহ। বোস্টন শহরে আবহাওয়া বিষয়ে একটি আলোচনা-সভায় পুরন্দর চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
১০. পুরন্দর কী সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড করেছেন?
উত্তর: সাহারা মরুভূমিতে এক মাসে একশো ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে তিনি সাংঘাতিক কাণ্ড করেছেন। এই বৃষ্টিপাতের জন্যে তিনি সাইবেরিয়া
থেকে মেঘ চুরি করে এনেছিলেন সাহারায়।
১১. রাষ্ট্রসংঘে বিভিন্ন দেশ কী দাবি তুলেছে?
উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত 'মেঘ-চোর' গল্পে প্রধান চরিত্র হলেন আবহাওয়া বিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরী। তিনি সাইবেরিয়া থেকে মেঘ নিয়ে গিয়ে সাহারা মরুভূমিতে এক মাসে একশো ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিলেন। তাঁর এই অসম্ভব কান্ড করবার জন্যে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন দেশ দাবি তুলেছে যে, মেঘ-চুরি আইন করে বদলানো দরকার। কেননা-
ক।। এক দেশের মেঘকে অন্য দেশে নিয়ে গেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য
বিঘ্নিত হতে পারে।
খ।। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
তাই রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন দেশ বাদে-প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল।
১২. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কোথায়?
উত্তর: আমেরিকায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।
১৩. পুরন্দরের মুখটা হাঁ হয়ে গেল কেন? উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত 'মেঘ-চোর' অসাধারণ একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প। এই গল্পের নায়ক হলেন আবহাওয়া বিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরী। তিনি যখন জানতে পারেন, আগে থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর কৌশল তৈরি করে রেখেছিলেন অসীমা। এই অসীমা তাঁদের রকেটটিকে বায়ুমণ্ডলের অনেক উপরে নিয়ে গিয়েছিলেন।
উত্তরঃ খানে পারদের সঙ্গে ১১টি ধাতু মিশিয়ে তাঁর ধাতব বলটি ক্রমে ক্রমে শীতল হয়ে আসছিল। এই বিষয় দেখে পুরন্দরের বিস্ময়ের শেষ ছিল না। যে সুন্দরী মেয়েটি তাঁর ভাইঝি পরিচয়ে তাঁর রকেট যাত্রার সহযাত্রী তিনি আসলে বিজ্ঞানী কারপভের মেয়ে।
পুরন্দরের পরীক্ষাকে ব্যর্থ প্রমাণিত করতে অসীমার এ কৌশল
জানতে পেরে এবং অসীমার মাথায় বুদ্ধি দেখে পুরন্দরের মুখ হাঁ হয়েগিয়েছিল।
১৪. জ্ঞান ফিরে পুরন্দর অবাক হয়েছিলেন কেন?
উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত 'মেঘ-চোর' নামাঙ্কিত গল্পে দেখা যায় বৃষ্টি বিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরিকে 'মেঘ-চোর' অপবাদ দিয়েছেন বিজ্ঞানী কারপভ।আমেরিকার বোস্টন শহরে তখন চলছিল আবহাওয়া সংক্রান্ত ■ আলোচনা চক্র। কারপভ যখন পুরন্দরকে অপবাদ দেন, তখন পুরন্দর - উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি চিৎকার করে নিজের অভিমত প্রকাশ - করতে গেলে উত্তেজনায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
পুরন্দর জ্ঞান ফিরে দেখেছিলেন যে, তাঁর মাথার কাছে একজন ■ সুন্দরী মেয়ে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। তখন পুরন্দর ভেবেছিলেন বিদেশে তাঁর আত্মীয় স্বজন কেউ নেই, নিজে বিয়েও করেননি। তাহলে এই মেয়েটি কে? এই ভেবেই তিনি অবাক হয়েছিলেন।
১৫. দিবিজয় কে ছিলেন?
উত্তর: দিবিজয় প্রখ্যাত বৃষ্টিবিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরির নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ভাই। তিনি ২৫ বছর আগেই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। পুরন্দর চৌধুরির ভায়ের নাম দিকবিজয়।
১৬. গল্পের ঘটনা যখন ঘটেছে তখন চরিত্রগুলি কোথায় ছিল?
উত্তর: গল্পের ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন চরিত্রগুলি ছিলেন রকেটের এ ভিতরে। আর রকেটটি ছিল আলাস্কার আকাশে।
১৭. ইগলু-র পরিবর্তে সেখানে তখন কী দেখা যাচ্ছিল?
উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত 'মেঘ-চোর' নামাঙ্কিত গল্পে দেখা ■ যায়, এস্কিমোদের বাসস্থান ইগলু-র পরিবর্তে আলাস্কা অঞ্চলে তখন
বড়ো বড়ো এয়ারকন্ডিশান বাড়ি দেখা যাচ্ছিল।
১৮. তুষারযুগ কাকে বলে?***
উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিশোরদের উপযোগী করে 'মেঘ-চোর' নামাঙ্কিত কল্পবিজ্ঞানের গল্প লিখেছিলেন। এই গল্পে কথা প্রসঙ্গে তুষার যুগ বিষয়টি এসেছে। যে যুগে পৃথিবীর পৃষ্ঠ তুষারের চাদর আবৃত করেছিল সব কিছুকে, সেই যুগকেই তুষার যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। পৃথিবীতে এরকম তুষার যুগ বেশ কয়েকবার এসেছে। আনুমানিক ১৩০০ বছর আগে পৃথিবীতে শেষ তুষার যুগ সম্পন্ন হয়েছে।
১৯. পৃথিবী থেকে কত জল সারাবছর বাষ্প হয়ে মেঘে উড়ে যায়?***
উত্তর: পঁচানব্বই হাজার কিউবিক মাইল জল পৃথিবী থেকে সারাবছর বাষ্প হয়ে মেঘে উড়ে যায়।
২০. মানুষের জন্য বেশি বৃষ্টি দরকার কেন?
উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'মেঘ-চোর' গল্পপাঠে জানা যায়, মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে বলে মানুষের জন্য বৃষ্টি বেশি দরকার। পৃথিবীতে মানুষ, গাছপালা, জীব-জন্তু বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজন হয় প্রতিবছর ১৫০০০ কিউবিক মাইল বৃষ্টি। কিন্তু বর্তমানে মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের জন্য বেশি বৃষ্টির প্রয়োজন।
২১. আটলান্টিস কী?***
উত্তর: আটলান্টিস একটি লুপ্ত সভ্যতা। এই সভ্যতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই অনেকে মনে করেন, এটি আসলে গ্রিক লেখকদের কল্পনার ফসল।
২২. পুরন্দরের মতে আটলান্টিসের অবস্থান কোথায়?
উত্তর: প্রখ্যাত বৃষ্টি বিজ্ঞানী পুরন্দরের মতে আটলান্টিসের অবস্থান আলাস্কার লেক শ্রেভারের তলাতে। মাউন্ট চেম্বারলিন পাহাড়ের বরফ গোলা জল দিয়ে এই লেক সৃষ্টি হয়েছিল। এই লেকের তলাতেই চাপা পড়েছিল আটলান্টিস।
২৩. সাইবেরিয়া কোথায়?
উত্তর: রাশিয়ায় সাইবেরিয়া অবস্থিত। রাশিয়ার ইউরোপীয় ও এশীয় অঞ্চল জুড়ে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন স্কোয়ার মাইলব্যাপী এই অঞ্চল। মস্কো থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়ে এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়েছে। সাইবেরিয়া পৃথিবীর অন্যতম শীতলতম স্থান। সারাবছর এখানে বরফের চাদর বিছিয়ে থাকে।
২৪. অসীমা কেন পুরন্দরকে ফেরিওয়ালা বলে ব্যঙ্গ করেছে?**
উত্তর: ফেরিওয়ালার কাজ হল বিভিন্ন জিনিসপত্র ফেরি করে বেড়ানো। বৃষ্টিবিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরী তেমন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মেঘ ফেরি করে বেড়াতেন। আলাস্কার লেক শ্রেভারের জলকে শুকিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন ৯৫০০০ কিউবিক মাইল আয়তনের এক বিশাল জলভরা মেঘ তৈরি করে তা বিভিন্ন দেশে ফেরি করতে। পুরন্দর বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টকে মেঘ বিক্রি করার কথা বলেছিল বলে অসীমা ফেরিওয়ালা বলেছিল।
২৫. অ্যালয় কী?***
উত্তর: অ্যালয় এক ধরনের ধাতু-সংকর, যা জলে দিলে উত্তপ্ত হয় এবং জলকে বাষ্পে পরিণত করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত 'মেঘ-চোর' গল্পে পুরন্দর চৌধুরীর নির্মিত অ্যালয় বা শংকর ধাতুটি মার্কারির সঙ্গে আরও ১১টি ধাতু মিশিয়ে তৈরি করা। এই ধাতুর বিশেষত্ব হল জলের ছোঁয়া লাগলেই তা গরম হতে শুরু করে।
২৬. পুরন্দরের তৈরি গোলকটিতে আছে এমন কোন ধাতুর নাম গল্পে পেলে।
উত্তর: বিশ্ববিখ্যাত বৃষ্টিবিজ্ঞানী পুরন্দরের তৈরি গোলকটিতে যে ধাতু আছে তা হল মার্কারি বা পারদ।
২৭. পুরন্দরের তৈরি গোলকটি এয়ারটাইট রাখতে হয় কেন?
উত্তর: বিশ্ব বিখ্যাত বৃষ্টিবিজ্ঞানী পুরন্দরের তৈরি গোলকটি জল পেলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে বায়ুমন্ডল থেকে জল শোষণ করে গোলকটি উত্তপ্ত হয়ে যাবে বলে সেটিকে এয়ারটাইট করে রাখতে হয়।
২৮. 'প্রকৃতিকে ধ্বংস করা একটা অপরাধ'-কে, কাকে, কখন
বলেছে?***
উত্তর: উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন, বিজ্ঞানী কারপভের যেয়ে অসীমা।
• বিশ্ববিখ্যাত বৃষ্টিবিজ্ঞানী পুরন্দর চৌধুরিকে উদ্দেশ্য করে এই বক্তব্য।
• কথা প্রসঙ্গে পুরন্দর চৌধুরী বলেছিলেন যে, তাঁর তৈরি ধাতব বলটি অনায়াসে লেক শ্রেভারের জলকে সম্পূর্ণ শুকিয়ে ফেলতে পারবে। এমনকি কৃত্রিমভাবে ৯৫০০০ কিউবিক মাইল আয়তনে এক বিশাল জলভরা মেঘ তৈরি করতে তিনি সক্ষম। পুরন্দর চৌধুরীকে এই প্রকৃতি বিনাশী ভয়ংকর পরীক্ষা থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন অসীমা।
অসীমা চেয়েছিলেন প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকুক। এজন্যে অসীমা জানিয়েছিলেন যে, 'প্রকৃতিকে ধ্বংস করা একটা অপরাধ।'
২৯. অসীমার প্রকৃত পরিচয় কী?
উত্তর: অসীমার প্রকৃত পরিচয় হল তিনি বিজ্ঞানী কারপভের মেয়ে যদিও নিজেকে প্রয়োজনে পুরন্দর চৌধুরির ভাইঝি বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
আট-দশটি বাক্যে উত্তর দাও :
১. এই গল্পে কাকে কেন 'মেঘ-চোর' বলা হয়েছে? তাঁর মেঘ চুরির কৌশলটি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রণীত 'মেঘ-চোর' নামাঙ্কিত গল্পে পুরন্দর চৌধুরিকে মেঘ চোর বলা হয়েছে। কারণ সাইবেরিয়া থেকে মেঘ চুরি করে এনে সাহারাতে একমাসে একশো ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছেন। এই জন্যে আমেরিকার বোস্টন শহরে আয়োজিত আবহাওয়া বিজ্ঞান বিষয়ক একটি আলোচনা চক্রে পুরন্দরকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন কারপভ।
• পুরন্দর চৌধুরি মার্কারির সঙ্গে এগারোটি ধাতু মিশিয়ে একটি অ্যালয় তৈরি করেছিলেন। সেই অ্যালয় জল পেলে উত্তপ্ত হতে শুরু করে এবং এতই দ্রুত গরম হয় যে, লেক শ্রেভারের জলকে পাঁচ মিনিটে বাষ্পে পরিণত করতে পারে। তারপর সেই বাষ্প থেকে মেঘ সৃষ্টি হয় এবং সেই মেঘকে চৌধুরি সাহেব যে দেশে ইচ্ছে পাঠাতে পারেন এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারেন।
এইভাবেই এক দেশের মেঘকে অন্য দেশে চৌধুরি সাহেব চুরি করে নিয়ে যেতে পারেন। লক্ষণীয় যে, পুরন্দর চৌধুরি চেয়েছিলেন ধাতব বল দিয়ে আলাস্কার লেক শুকিয়ে ফেলতে। বরফে আবৃত সেই হ্রদে ধাতব বলটি পতনের সঙ্গে সঙ্গে ৯৫০০০ কিউবিক আয়তনের এক বিরাট জলভরা মেঘ সৃষ্টি করবে। এটিই হল পুরন্দর চৌধুরির মেঘ চুরির কৌশল।
২. 'বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অমিত বল, কিন্তু অযোগ্য মানুষের হাতে সেই ক্ষমতা হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী'-পঠিত গল্প অবলম্বনে উপরের উদ্ধৃতিটি বিশ্লেষণ করো।***
উত্তর: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন 'মেঘ-চোর' নামাঙ্কিত অসাধারণ একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প। এই গল্পে লেখক মূলত তাঁর প্রকৃতি প্রেম সম্পর্কিত বক্তব্যকেই বেশ মজা করে পরিবেশন করেছেন।
এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। মানুষ তার বুদ্ধির মাধ্যমে শক্তিশালী প্রাণী তথা প্রকৃতিকেও নিজের বশে আনতে পেরেছে। যদিও তা বিজ্ঞানের দান। কিন্তু সকলে এই শক্তির সঠিক ব্যবহার করে না। এই শক্তিকে মানবজীবনের উন্নতিতে কাজে লাগায় না। বরঞ্চ মানব সমাজ তথা সৃষ্টিকে ধ্বংসের তান্ডবলীলায় মত্ত হয়ে ওঠে। পৃথিবী ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। নেমে আসে মহা বিপর্যয়।
'মেঘ-চোর' গল্পের পুরন্দর চৌধুরি এমনই একজন চরিত্র; যার কাছে রয়েছে বিজ্ঞানের অসীম দান, মেঘ তৈরি ও বৃষ্টি ঘটানোর ক্ষমতা। কিন্তু তার মনে দানা বেঁধেছিল কারপভের প্রতি দুর্জয় হিংসা। ফলে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে উঠেছিল তাঁর মনে; যেটা বাঞ্ছনীয় নয়। তাই এমন মানুষের হাতে যদি বিজ্ঞানের ক্ষমতা এসে পড়ে তবে তো তা বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতীর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এই গল্পের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন, বিজ্ঞানকে নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে শেষপর্যন্ত প্রকৃতির ভারসাম্যকেই নষ্ট করা হয়। এরফলে কোথায় দেখা যায় অতিবৃষ্টি; কোথাও আবার অনাবৃষ্টি। লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে, বিজ্ঞানের প্রভূত শক্তি ক্ষমতা লোভী ব্যক্তির হাতে পড়লে তা হয়ে ওঠে বিপজ্জনক।
৩. পুরন্দর চৌধুরির চরিত্রটি তোমার কেমন বলে মনে
হয়েছে-বিশ্লেষণ করো।***
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে অবিসংবাদিত লেখক হলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অসাধারণ একটি চরিত্র হলেন পুরন্দর চৌধুরি। তিনি একজন প্রতিভাধর বিজ্ঞানী। তাঁর চরিত্র বিশ্লেষণ করলে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য উঠে আসে। যেমন-
১. বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী: পুরন্দর চৌধুরি অত্যন্ত মেধাবী। বিশ্বজোড়া তাঁর খ্যাতি। তিনি নিজের ইচ্ছেমতো মেঘ সৃষ্টি করতে পারেন এবং ইচ্ছেমতো মেঘ উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বৃষ্টি ঘটাতে পারেন বিভিন্ন দেশে।
২. অহংকারী ব্যক্তি: কিন্তু তিনি খুব অহংকারী ব্যক্তি। তিনি বিজ্ঞানের অপরিমেয় শক্তিকে নিজের ইচ্ছামতো কাজে লাগিয়েছিলেন। তাই দেখা যায় সাইবেরিয়া থেকে মেঘ চুরি করে এনে সাহারায়। একমাসে ১০০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিলেন।
৩. প্রতিশোধস্পৃহা: পুরন্দরের মধ্যে রয়েছে প্রতিশোধস্পৃহা। তিনি চান মানুষ তাঁর কাছে বৃষ্টি ভিক্ষা করুক। তিনি নিজেকে ভগবানের পরবর্তী স্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।
৪. সংবেদনশীল: পুরন্দর জানেন, জলভরা মেঘ যদি কোনোক্রমে কলকাতায় ভেঙে পড়ে তাহলে কলকাতার অধিকাংশ বাড়িঘর বিপর্যস্ত হবে। পুরন্দর অবশ্য তা চান না। কেননা, তিনি জানিয়েছেন, 'মানুষের ক্ষতি করতেও চাই না।' তবে যদি ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা থাকে, তবে তিনি কী করবেন, সেই আলোচনায় বলেন-
কিন্তু সেরকম অবস্থা আমি হতেই দেবো না। মেঘটা এদিক-ওদিক গেলেই আমি ফাটিয়ে দেবো কোনো নির্জন জায়গায়।
৫. খ্যাতিমান পুরুষ: পুরন্দর চৌধুরী বেশ খ্যাতিমান পুরুষ। সারা পৃথিবীতে তাঁর নামডাক হয়েছে। তিনি নিজেও চান সারা বিশ্ব তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকুক। অর্থ, ক্ষমতা, যশ ও প্রতিপত্তির জন্যে তিনি আকুল। তাই যে কোনো মূল্যে বিজ্ঞানকে হাতের মুঠোয় আনতে চেয়েছিলেন পুরন্দর চৌধুরি।
৪. গল্পটি অবলম্বনে অসীমা চরিত্রটি সম্বন্ধে তোমার মতামত জানাও।***
উত্তর: বর্তমান কথাসাহিত্যে যাঁদের নির্মাণ বৈচিত্র্য বিস্ময়ের উদ্রেক করে, তাঁদের অন্যতম হলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর লেখা একটি কল্পবিজ্ঞার কাহিনি হল 'মেঘ-চোর' গল্পটি। এ গল্পে অন্যতম উল্লেখযোগ্য চরিত্র অসীমা। এই চরিত্র বিশ্লেষণে যে বৈশিষ্ট্যগুলি উঠে আসে, তা হল এমন-
১. সুশিক্ষিতা: অসীমা একজন সুশিক্ষিতা ও সুন্দরী মহিলা। তাঁর বয়স ২৭। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। অত্যন্ত শান্ত ও বুদ্ধিমতী। ভূগোল সম্পর্কেও যথেষ্ট জানেন। কম্পিউটারে তাঁর দখল প্রশ্নাতীত।
২. উপস্থিত বুদ্ধি: অসীমার উপস্থিত বুদ্ধি প্রবল। তাই আগে থেকেই তিনি রকেটে এমন প্রোগ্রামিং করে রেখেছিলেন যাতে রকেটটি বায়ুমন্ডলের উপরে উঠে যেতে পারে। অসীমা কখনও চাননি বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ ঘটাতে।
৩. সুকৌশলী: বোস্টন শহরে আবহাওয়া সম্পর্কিত একটি আলোচনা চক্রে পুরন্দর চৌধুরির সঙ্গে অসীমার আলাপ হয়। অসীমা সুকৌশলী। তাই তিনি পুরন্দর চৌধুরির সঙ্গে আলাপের সময় নিজেকে ভাইঝি বলে পরিচয় দেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী কারপভের
কন্যা।
৪. বুদ্ধিমতী: একটা সময়ে অসীমা নিজের বুদ্ধির কৌশলে পুরন্দর চৌধুরিকে নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুরন্দরের বিশ্বাস অর্জন করে তাঁর সমস্ত গবেষণার তথ্য হস্তগত করেন। তিনি জানতে পারেন, এই বৃষ্টি বিজ্ঞানী কারপভের উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে মাউন্ট চেম্বারলিন পাহাড়ের পাশে বরফে আবৃত লেকের জল শুকিয়ে দেবেন পুরন্দরের এই ধ্বংসাত্মক কাজ যাতে বাস্তবায়িত না হয় তার ব্যবস্থা করেন অসীমা।
৫. নীতিবোধ: নীতিবোধের কারণেই অসীমা চেয়েছিলেন, একজন বিজ্ঞানী হয়ে উঠুন মানব দরদী ও সত্যনিষ্ঠ। এরজন্যে তিনি নানা কৌশল আয়ত্ত করেছিলেন। এককথায় অসীমা এক অনবদ্য চরিত্র।
Paid Answer ( For Membership User)
Editing By:- Lipi Medhi
উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সদস্যপদ প্রয়োজন।