অধ্যায় ১

ইতিহাসের ধারণা


একনজরে বিষয় সংক্ষেপ :

১১ ইতিহাসের গল্প-সল্প :

• গল্পের ছলে ইতিহাস পড়া-ইতিহাস পড়ে– আমরা অতীত দিনের বিভিন্ন ঘটনা জানতে পারি। কিন্তু ইতিহাস পড়তে গেলে বিভিন্ন সাল, তারিখ,

রাজার নাম, যুদ্ধের নাম, বিভিন্ন ঘটনার কারণ, ফলাফল, গুরুত্ব প্রভৃতি মনে রাখা কষ্টকর হয়ে ওঠে।

তাই গল্পের মতো পড়ে এগুলি মনে রাখা খুবই দরকার।

• সময় কাল—ইতিহাসের ঘটনাগুলি কোন্ সময় ঘটেছিল সেগুলি সঠিকভাবে জানার জন্য তারিখ, মাস, সাল, শতাব্দী,

সহস্রাব্দ-এই সব নানা সময় মাপার হিসাব জানতে হবে।

• জটিল নামের সমস্যা—-প্রাচীন যুগের রাজারা বিভিন্ন উপাধি গ্রহণ করতেন, যেমন- 'গঙ্গাইকোন্ডচোল' বা 'সকলোত্তরপথনাথ'।

আবার বিভিন্ন রাজাদের নাম ছিল যেমন- 'ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি'। এগুলি মনে রাখা

খুবই কঠিন। কিন্তু এই নামগুলি পাল্টানো তো সম্ভব নয়। তাই মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। তবে বাবর,

আকবর প্রভৃতি নামগুলি ছোটোএবং সহজেই মনে রাখা যায়।

• সঠিক ধারণা- সাল-তারিখ, নাম-ধাম মুখস্থ করলেই ইতিহাসসম্পর্কে সঠিক ধারণা গড়ে ওঠে না। বিভিন্ন ঘটনার কারণ, ফলাফল সঠিকভাবে জানতে হবে।

সেই ধারণা তৈরির জন্যই ইতিহাস পড়া দরকার।

১২ ইতিহাস জানার রকমফের :

• পুরোনো জিনিসের গুরুত্ব- পুরোনো দিনের যে সব জিনিস

মানুষ ব্যবহার করত, সেগুলি থেকে আমরা এক একটা সময়ের মানুষের বিষয়ে জানতে পারি। এগুলিকেই বলা

হয় ইতিহাসের উপাদান।


• 'বিদেশি' ও 'দেশ' সম্পর্কে ধারণা-বর্তমানে আমরা 'বিদেশি' বলতে ভারতের বাইরে অন্য দেশের লোকেদের বুঝি। কিন্তু সুলতানি বা মুঘল যুগে

'বিদেশি' বলতে গ্রাম বা শহরের বাইরে থেকে আসা যে-কোনো লোককেই বোঝাতো। অনেক সময় অন্য শহর

বা গ্রাম থেকে আসা লোকেদের 'পরদেশি' বা 'আজনবি' বলা হত। আবার সুলতানি ও মুঘল যুগে 'দেশ' বলতে

বোঝাতো নিজেদের আদি বাড়িকে। অর্থাৎ একই রাজ্যের মধ্যে আলাদা কোনো অঞ্চলকে বলা হত দেশ।

বর্তমানে আমরা 'দেশ' বলতে বুঝি 'রাষ্ট্র'কে। যেমন-ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ইত্যাদি।

• আলোচ্য বিষয়-আমাদের- ইতিহাস বইতে প্রায় হাজার বছরের ভারতের ইতিহাসের কথা রয়েছে। মোটামুটি খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে

সপ্তদশ শতক পেরিয়ে অষ্টাদশ শতকের দোরগোড়া পর্যন্ত প্রায় হাজার বছরে ভারতবর্ষে যে ধারাবাহিক পরিবর্তন

হয়েছে, তার কথাই বইতে বলা হয়েছে।

• ভারতবর্ষের নাম হিন্দ, - হিন্দুস্থান, ইন্ডিয়া হওয়ার কারণ- খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ-পঞ্চম শতকে গ্রিক ঐতিহাসিক

হেরোডোটাস 'ইন্ডিয়া' নামটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। তিনি পারসিক উপাদান থেকে ভারত সম্পর্কে জানতে

পেরেছিলেন। পারসিক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সিন্ধু বিধৌত অঞ্চলগুলি 'হিদুষ' নামে পরিচিত ছিল। গ্রিক ভাষায়

'হ'-এর উচ্চারণ নেই। তাই গ্রিক বিবরণে তা বদলে গিয়ে হয়েছে 'ইন্ডিয়া'।আরবি-ফারসি ভাষায় সিন্ধু নদী সংলগ্ন অঞ্চলকে 'হিন্দুস্তান' বলা হত। ২৬২ খ্রিস্টাব্দে খোদিত ইরানের সাসানীয়

শাসকের একটি শিলালেখতে 'হিন্দুস্তান' শব্দটি পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে 'হিন্দুস্তান' বলতে সমগ্র ভারতবর্ষকে

বোঝানো হয়েছে।

৩ 'ইতিহাসের গুণ-ভাগ:

দীর্ঘ সময় ধরে মানবসমাজ ও সভ্যতার ইতিহাসে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। এই দীর্ঘ সময় কালকে ঐতিহাসিকরা

যুগ বলে চিহ্নিত করেছেন। সাধারণভাবে ইতিহাসের এই সময়কালকে ঐতিহাসিকরা তিনটি যুগে ভাগ

করেছেন-প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ।

• জীবনের বিভিন্ন দিক-কিছু ঐতিহাসিকের মতে, মধ্যযুগে ভারতের মানুষের জীবন অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে কিছু

ঐতিহাসিক মধ্যযুগে ভারতের মানুষের জীবনযাত্রার কিছু কিছু উন্নতির কথা উল্লেখ করেছেন।

• বিজ্ঞানের ব্যবহার-মধ্যযুগে ভারতীয়রা কুয়ো থেকে জল - তোলা, তাঁত বোনা ও যুদ্ধের অস্ত্র তৈরিতে বিজ্ঞানের ব্যবহার না। করেছিল।

• যেমন-পোর্তুগিজদের খাদ্য ও পানীয়- ভারতীয়রা এই সময় অনেক নতুন খাবার ও পানীয়ের কথা জানতে

পারে। কাছ থেকে এইদেশে প্রথম আলু খাওয়ার চল শুরু হয়।

• রাজনীতি-দেশশাসন ও রাজনীতির ক্ষেত্রে শুধু রাজ্যবিস্তার না করে জনগণের ভালো-মন্দের কথাও শাসকরা ভারতে

শুরু করেছিল।

• অর্থনীতি- কৃষি ও ব্যাবসাবাণিজ্যেও বিরাট পরিবর্তন এসেছিল।নতুন নতুন শহর গড়ে উঠেছিল। জঙ্গল কেটে চাষবাস শুরু হয়েছিল।

• ধর্ম-ধর্মের ক্ষেত্রে আচার-অনুষ্ঠান বা আড়ম্বরের বদলে ভক্তি দিয়ে ঈশ্বর আরাধনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।

• ভাষা- সাহিত্য-ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটেছিল।

• শিল্প- বিভিন্ন ধরনের শিল্পচর্চা শুরু হয়েছিল এই সময়ে। চোল রাজারা মন্দির বানিয়েছিলেন, সম্রাট শাহজাহান

তাজমহল বানিয়েছিলেন। কিন্তু গরীব শিল্পীদের সেরকম মর্যাদা দেওয়া হয়নি।

১.৪ ইতিহাসের গোয়েন্দা:

একজন ঐতিহাসিক গোয়েন্দার মতোই ইতিহাসের তথ্যাবলি খুঁজে বার করেন। সেগুলি যুক্তি দিয়ে বিচার করেন।

তারপর সেগুলি সুন্দরভাবে সাজিয়ে আমাদের সামনে তুলে ধরেন। ইতিহাসের গোয়েন্দা হতে পারলে ইতিহাস

পড়ার মজাটাও খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমান ঐতিহাসিকরা শুধুমাত্র রাজাদের কাহিনি নয়, সাধারণ মানুষদের

নিয়েও ইতিহাসচর্চা শুরু করেছেন।



    👉Download Books PDF

Paid Answer ( For Membership User )