Chapter 14
--------------------
১। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১.১। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম- ১. 'রামের সুমতি' ২. 'চরিত্রহীন'
১.২। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটোগল্পের নাম লেখো।
উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটোগল্প হল- ১. 'লালু' ২. 'অভাগীর স্বর্গ'।
২। নীচের প্রশ্নগুলির দু-একটি বাক্যে উত্তর লেখো:
২.১। গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ কী করছিল?
উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত উপন্যাসে রমেশ গোপাল সরকারের কাছে বসে জমিদারির হিসেবপত্র দেখছিল।
২.২। গ্রামের একমাত্র ভরসা কী ছিল?
উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় গ্রামের একমাত্র ভরসা ছিল একশো বিঘার মাঠটি। এর কারণ হল সমস্ত চাষিরই কিছু কিছু জমি মাঠটির অন্তর্ভুক্ত।
২.৩। 'বোধ করি এই কথাই হইতেছিল'- কোন্ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় দুইদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টির জন্য একশো বিঘের চাষের মাঠ ডুবে যাওয়ার ফলে গ্রামের প্রায় কুড়িজন চাষি রমেশের কাছে সেই বাঁধ কেটে জল বের করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। বাঁধ কাটলে তাঁর প্রায় দুশো টাকার মাছ ভেসে যাবে বলে গ্রামের জমিদার বেণীবাবু কৃষকদের কথায় রাজি হন না। স্বয়ং রমেশ বেণীবাবুর কাছে উপস্থিত হলে তিনি বুঝতে পারেন হালদার মশাই ও বেণীবাবু বাঁধ নিয়ে কথা বলছেন।
২.৪। রমা আকবরকে কোথায় পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল?
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় রমা আকবরকে একশো বিঘে জমির দক্ষিণ ধারের ঘোষাল ও মুখুজ্জেদের বাঁধ পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল যাতে রমেশ বাঁধ কেটে দিতে না পারে।
২.৫। 'পারবি নে কেন'? -উদ্দিষ্টব্যক্তি কোন্ কাজটি করতে পারবে না?
উত্তর: দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত রচনায় উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হল রমাদের পিরপুরের প্রজা এবং লাঠিয়াল আকবর। বাঁধ পাহারা দিতে গিয়ে রমেশের হাতে সে আহত হয়। কিন্তু রমেশকে সে শ্রদ্ধা করত বলে সেই আঘাতের কথা সে থানায় গিয়ে জানাতে পারবে না বলে জানিয়েছে।
৩। নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো:
৩.১। কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল কেন?
উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' রচনায় দেখা যায় চাষের জমি নষ্ট হওয়ার কারণে কুড়ি জন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়েছিল। কেননা, তারা বেণী ঘোষালের অনেক অনুনয়, প্রার্থনা করা সত্ত্বেও কোনো লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে কৃষকরা রমেশের শরণাপন্ন হয়েছিল।
৩.২। রমেশ বেণীর কাছে জল বার করে দেবার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল কেন?
উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত এই রচনায় দেখা যায় একশো বিঘা মাঠের দক্ষিণে যে বাঁধ আছে তা ঘোষাল ও মুখুজ্জ্যেদের। জল উপচে পড়া জমি যখন চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে তখন চাষিরা বেণী ঘোষালের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু বেণী ঘোষাল বাঁধ কাটতে রাজি ছিলেন না। রমেশের মনে হয়েছিল সামান্য ক্ষতি হলেও চাষিদের বিরাট বড়ো ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে বাঁধ কাটা উচিত। তাই সে বেণী ঘোষালের কাছে উপস্থিত হয়ে জল বের করে দেওয়ার হুকুম দিতে অনুরোধ করেছিল।
৩.৩। বেণী জল বার করতে চায়নি কেন?
উত্তর: দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় বাঁধ সংলগ্ন জলা জমিতে বেণী মাছ চাষ করেছিলেন বলে তিনি বাঁধ কাটতে রাজি হননি। কেননা, বৈষয়িক বিষয়বুদ্ধির অধিকারী বেণী জানতেন দুশো টাকা লোকসান করা তার পক্ষে বড়ো ক্ষতি; তিনি বৃহৎ স্বার্থে সেই ক্ষতি স্বীকার করতে চাননি। এজন্যে রমেশের অনুরোধ সত্ত্বেও বেণী জল বার করতে চাননি।
৩.৪ । 'ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল'- রমেশের এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?
উত্তর: দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় দেখা যায় স্নেহপ্রবণ ও মানবিক রমেশ বেণী ঘোষালের কাছে গিয়েছিল চাষিদের স্বার্থে। কিন্তু বেণী ঘোষাল অত্যন্ত স্বার্থপর। তিনি চাননি তার দুশো টাকার মাছ জলে ভেসে যাক। তাই তিনি রমেশকে জানিয়েছিলেন, চাষিদের ধান যদি জলে ডুবে যায় তবে ওই চাষিরা তাদের কাছে জমি বন্ধক দিয়ে টাকা ধার করবে। বেণী ঘোষালের এই অমানবিকতা, নীচ স্বার্থপরতা ও জঘন্য মনোবৃত্তির পরিচয় পেয়ে ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
৩.৫। 'রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল'- রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?
উত্তর: মরমী কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' রচনায় দেখা যায় রমেশ ভেবেছিল রমা নিঃসন্দেহে বেণী ঘোষালের মতো স্বার্থসর্বস্ব হবে না। রমার মানস প্রবণতা সম্পর্কে রমেশের উচ্চ ধারণা ছিল। তাই সে রমার শরণাপন্ন হয়েছিল। কিন্তু রমেশ হতবাক হয় এই কারণে যে, রমা নিজের ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি নয়। এমনকি দরিদ্র, অসহায়, বিপন্ন চাষিদের দুরবস্থার কথা জেনেও রমা তার কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি, রমার সেই মুহূর্তের বক্তব্য ছিল, 'না অত টাকা লোকসান আমি করতে পারব না।' এই কথা শুনে রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিল।
৩.৬। রমা রমেশের অনুরোধে রাজি হয়নি কেন?
উত্তর: কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় দেখা যায় রমেশের অনুরোধে রমা বাঁধ কাটতে রাজি হয়নি। কেননা, রমা কথাপ্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিল, 'মাছ আটকে রাখার কী বন্দোবস্ত করবেন?' কিন্তু অত জলে কোনো বন্দোবস্ত হওয়া সম্ভব নয় শুনে রমা রমেশের প্রস্তাবকে গ্রহণ করতে পারেনি। নাবালক ভাইয়ের সম্পত্তি ও জমিদারির অভিভাবিকা হিসেবে কোনো অর্থ ব্যয় করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
৩.৭। 'মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে'- কে, কার সম্পর্কে এ কথা বলেছিল? সে কেন এ কথা বলেছিল?
উত্তর: উত্তরের প্রথমাংশ: রবীন্দ্র-সমসাময়িক কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিল রমা সম্পর্কে রমেশ।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: অসহায় দরিদ্র চাষিদের সংকট মোচনের জন্য রমার শরণাপন্ন হয়েছিল 'পল্লীসমাজ'-এর রমেশ। কিন্তু রমা জানিয়েছিল 'না অত টাকা লোকসান আমি করতে পারব না।'
সামান্য কয়েকটি টাকার জন্যে রমা এতগুলি মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে-রমেশ তা কখনও কল্পনাই করতে পারেনি। কেননা, রমেশ জানত রমা সবার থেকে আলাদা। তাই সে বলেছিল, 'তুমি যে এত নিষ্ঠুর হতে পার, আমি তা স্বপ্নেও ভাবিনি।' আসলে শরৎচন্দ্র তাঁর জীবনদর্শন থেকে বুঝেছিলেন মানুষ খাঁটি কিনা, তা চেনা যায় টাকার সম্পর্কে।
৩.৮। 'রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল'- রমার এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?
উত্তর: রবীন্দ্র-সমসাময়িক কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় রমা চায়নি 'অত টাকা লোকসান' হোক। রমার কথা শুনে হতাশ রমেশ জানিয়েছিল, 'তুমি যে এত নিষ্ঠুর হতে পার, আমি তা স্বপ্নেও ভাবিনি।' চিরকাল রমা সম্পর্কে রমেশের ধারণা ছিল এই-রমা অত্যন্ত মানবিক এবং সবার থেকে আলাদা। কিন্তু রমেশের সেই ভুল ভেঙ্গেছে। রমেশের চোখে রমা এখন 'তুমি নীচ, অতি ছোটো'। রমার সম্পর্কে রমেশের এই মূল্যায়নের কথা শুনে রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল।
৩.৯। রমা আকবরকে ডেকে এনেছিল কেন?
উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' রচনায় পিরপুরের প্রজা আকবরকে রমা ডেকে এনেছিল যাতে রমেশের কাটা বাঁধ সে বাধা দিতে পারে। আসলে রমা চেয়েছিল রমেশ যেন বাঁধ কেটে তার লোকসান না ঘটায়।
৩.১০। 'মোরা নালিশ করতি পারব না'- কে এ কথা বলেছে? সে নালিশ করতে পারবে না কেন?
উত্তর: উত্তরের প্রথমাংশঃ দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় রমার পিরপুরের প্রজা ও দুর্ধর্ষ লাঠিয়াল আকবর এ কথা বলেছে।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: অত্যন্ত কুচক্রী বেণী পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রমেশের নামে মিথ্যা নালিশ করার কথা বলেছিল। কিন্তু আকবর তার সেই বক্তব্য ও নির্দেশ উপেক্ষা করেছিল। কারণ আকবর ছিল সৎ মুসলমান প্রজা। সে কখনও চায়নি রমেশের ক্ষতি হোক। রমেশের পৌরুষত্বের প্রশংসা করেছিল। যে কৃষকদের কথা ভেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা নালিশ করতে আকবরের বিবেকে বেঁধেছিল। তাই সে বেণী ঘোষালকে জানিয়েছিল, তার পক্ষে মিথ্যা নালিশ সম্ভব নয়।
৪। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:
৪.১। 'নইলে আর ব্যাটাদের ছোটোলোক বলেচে কেন?' - বক্তা কে? এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার চরিত্রের কী পরিচয় পাও?
উত্তর: উত্তরের প্রথমাংশ: প্রখ্যাত কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' রচনায় আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন জমিদার বেণী ঘোষাল।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বেণীর চরিত্রের কয়েকটি দিক উঠে আসে। যেমন-
১. বেণী ঘোষাল খুব অহংকারী। তিনি কোনোভাবেই কৃষকদের অনুরোধ-উপরোধে কর্ণপাত করেননি। দরিদ্র প্রজারা সকাল থেকে তার কাছে দরবার করেও ব্যর্থ হয়েছিল।
২. লাভ লোকসান সম্পর্কে বেণী ঘোষাল অত্যন্ত সচেতন। তার পক্ষে দুশো টাকা লোকসান করা সম্ভব নয়। তিনি জানিয়েছেন দরিদ্র কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জমি বন্ধক রেখে টাকা ধার নেবে।
৩. অত্যন্ত অবিবেচক বেণী ঘোষাল অসহায় দরিদ্র প্রজাদের 'ছোটলোক' বলে চিহ্নিত করেছেন। তার এই মন্তব্য প্রমাণ করে দরিদ্র মানুষ সম্পর্কে কতখানি তিনি অসহিষ্ণু ছিলেন।
আসলে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দেখিয়েছেন বেণী ঘোষালের মতো স্বার্থসর্বস্ব মানুষ শুধুমাত্র নিজের আখের গুছিয়ে নেবার জন্যে সচেষ্ট।
৪.২। বেণী, রমা ও রমেশ চরিত্র তিনটির তুলনামূলক আলোচনা করো। সেই সঙ্গে এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কোন চরিত্রটি তোমার সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন তা জানাও।
উত্তর: উত্তরের প্রথমাংশ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'পল্লীসমাজ' উপন্যাসে একাধিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তৎকালীন পল্লীমানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি বিষয়গুলি তিনি তুলে ধরেছেন। আমাদের পাঠ্যাংশ 'পল্লীসমাজ' রচনায় আমরা
প্রধান তিনটি চরিত্রকে পাই। যথা- ১. বেণী ঘোষাল, ২. রমা, ৩. রমেশ।
চরিত্র ১: বেণী ঘোষাল।
বেণী ঘোষাল অত্যন্ত স্বার্থপর। নিজের সংকীর্ণ স্বার্থের জন্যে প্রজাদের সুবিধা-অসুবিধা তিনি দেখতে চাননি। বরং প্রজাদেরকে অপমান করে তিনি তাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদেরকে ছোটোলোক বলে ধিক্কার দিয়েছেন। প্রয়োজনে দরিদ্র প্রজারা তার কাছে জমি বন্ধক রেখে টাকা নিক-এমনটিও তিনি ঘোষণা করেছেন। এতটাই তিনি নীচ, রমেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা নালিশের জন্যে আকবরকে উৎসাহিত করেছেন।
চরিত্র ২: রমা।
রমা চরিত্রটি আপাত বিচারে স্বার্থসর্বস্ব মনে হলেও গভীর বিচারে রমা মানবিক। রমেশের সম্পর্কে তার গভীর শ্রদ্ধা ছিল। তাই লাঠিয়াল আকবরকে পাঠিয়েও তিনি মনে মনে চেয়েছিলেন রমেশের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। রমেশের কাছে পরাজিত হয়ে আকবর যখন জানিয়েছিল 'মায়ের দুধ খেয়েছিল বটে ছোটোবাবু।' তখন মনে মনে খুশি হয়েছিল রমা। এমনকি 'মোরা নালিশ করতি পারব না', এ কথা
শুনে রমা অনেকখানি হালকা হয়েছিল।
চরিত্র ৩ : রমেশ ।।
পল্লির স্বার্থসর্বস্ব জীবনে রমেশ যেন মরুভূমির মধ্যে একটুকরো মরুদ্যান বা ওয়েসিস। জমিদার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে রমেশ দরিদ্র, অসহায় প্রজাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। যখন বেণী ঘোষাল ও রমা নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ ত্যাগ করতে চাইছিল না তখন বাধ্য হয়ে নিজেই বাঁধ কাটার উদ্যোগ নিয়েছিল। সে রমাকে জানিয়েছিল, 'রমা, মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে।' রমেশ মহৎ ও উদার চরিত্র।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: 'পল্লীসমাজ' নামাঙ্কিত রচনায় এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে রমেশ চরিত্রটি আমার ভালো লেগেছে। জমিদাররা সাধারণত অত্যন্ত হিসেবি এবং স্বার্থপর হয়। কিন্তু রমেশ তার ব্যতিক্রম। সে বিনয়ী, পরোপকারী এবং প্রজাদের সম্পর্কে মানবিক ও উদার। তাই এই চরিত্রটি আমার কাছে সম্মান ও শ্রদ্ধা পেয়েছে। এই চরিত্রটি আমাকে সব থেকে টেনেছে।
৪.৩। উপন্যাসের নামে পাঠ্যাংশটির নামকরণও 'পল্লীসমাজ'-ই করা হয়েছে। নামকরণটি সুপ্রযুক্ত হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে মতামত জানাও।
উত্তর: দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'পল্লীসমাজ' রচনার নামকরণটি হয়েছে বিষয়কেন্দ্রিক। শরৎচন্দ্র তাঁর একাধিক উপন্যাসের নামকরণ করেছেন প্রধান চরিত্রের দিকে তাকিয়ে। যেমন- 'দেবদাস', 'শ্রীকান্ত' ইত্যাদি। কিন্তু 'চরিত্রহীন', 'পথের দাবী', 'পল্লীসমাজ' ইত্যাদি উপন্যাসগুলি মূলত বিষয়কেন্দ্রিক।
পল্লীর স্বার্থপরতা, নীচতা, দলাদলি, রেষারেষি ইত্যাদি বিষয় 'পল্লীসমাজ' রচনাংশে উঠে এসেছে। পল্লির সাধারণ মানুষজন অনেকসময় সামান্য স্বার্থটুকু ত্যাগ করতে পারে না। এ রচনায় দেখা যায় বেণী ঘোষাল, রমা, রমার মাসিমা প্রত্যেকেই কোনো একটি স্বার্থ নিয়ে ভাবিত। কিন্তু তারা কেউ রমেশের মতো পল্লির মঙ্গলের চিন্তায় উদ্দীপ্ত নয়।
এই রচনাংশে শরৎচন্দ্র দেখাতে চেয়েছেন কিছু কিছু ভালো জমিদার ছিলেন যারা প্রজাদের মঙ্গলের কথাই ভেবেছেন। রমেশ তেমনই একজন জমিদার। বয়সের দিক থেকে তরুণ, শিক্ষিত, মার্জিত এবং প্রজা সম্পর্কে সচেতন রমেশকেও পল্লীসমাজের নানা চক্রান্তের সামনাসামনি হতে হয়েছিল।
কিন্তু পল্লীসমাজের মধ্যেও যে আকবরের মতো বলিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ থাকে সেদিকেও শরৎচন্দ্র দৃষ্টিপাত করেছেন। সবমিলিয়ে পল্লিকেন্দ্রিক জীবন ও সংস্কৃতির চিত্র চিত্র এই রচনাংশে উপস্থাপিত হওয়ায় এর নামকরণ 'পল্লীসমাজ' যথাযথ হয়েছে বলেই মনে করি।
৪.৪। 'পল্লীসমাজ' পাঠ্যাংশে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো নিদর্শন পেয়ে থাকলে সে সম্পর্কে আলোচনা করো। এ ধরনের ব্যবস্থার সুফল ও কুফল সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: উত্তরের প্রথমাংশ: দরদী কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত 'পল্লীসমাজ' রচনায় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর উপর আলোকপাত করেছেন। সামন্ততান্ত্রিক সমাজের মানুষ কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করে। চাষবাস এবং গায়ে-গতরে খেটে এই মানুষজন অতি দারিদ্র্যে দিন অতিবাহিত করে।
'পল্লীসমাজ' রচনার শুরুতেই লেখক দেখিয়েছেন জনা কুড়ি চাষি বেণী ঘোষালের কাছে দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের মাঠের একশো বিঘে ধানের জমি জলের তলায় নিমজ্জিত হওয়ায় তারা বিপন্ন, ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এমন নিষ্ঠুর যে এদের কোনো কথাই শোনেনি বেণী ঘোষাল। বরং নিজের আর্থিক সুযোগ-সুবিধার কথা ভেবেছেন। শরৎচন্দ্র তাই লিখেছেন- 'চাষিরা আজ... এইমাত্র কাঁদিতে কাঁদিতে উঠিয়া এখানে আসিয়াছে।'
চাষিদের কান্নায় সামন্ততন্ত্রের কোনো যায় আসেনা। কেননা, প্রজা শাসনে-শোষণে তাদের নগ্ন চরিত্র উঠে আসে। যে রমাকে রমেশ উদার ও মহৎ বলে ভেবেছিল সেই রমাও শেষপর্যন্ত বেণী ঘোষালের মতো জানায়-'না অত টাকা লোকসান আমি করতে পারিবে না।'
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: আসলে সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কিছু সুফল ও কিছু কুফল রয়েছে।
১. সুফল: সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় রমেশের মতো সৎ, মানবিক, উদার জমিদারদের অভাব ছিল না। যদিও তারা সংখ্যায় কম ছিলেন। তবু তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল প্রজাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলসাধন করা। রবীন্দ্রনাথ এমন একজন উদারপন্থী জমিদার ছিলেন। তিনি শিলাইদহে প্রজাদের মঙ্গলের জন্যে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। সুতরাং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার সুফল যে ছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
২. কুফল: সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় জমিদাররা ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের অনুপাত নিয়ে ভাবেন। ফলে তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিগত মালিকানা। ফলে প্রজারা নিঃস্ব, রিক্ত ও শোষিত হতে থাকে। জমিদারের অত্যাচারে, অবিচারে, প্রতাপে বাধ্য হতো প্রজারা ভিটেমাটি ত্যাগ অন্যত্র পালিয়ে যেতে। অর্থাৎ সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কুফল ছিল। তাই মধ্যযুগে একাধিক কৃষক-বিদ্রোহের কথা জানা যায়।
৬। নীচের শব্দগুলি কীভাবে গঠিত হয়েছে দেখাও :
১। কথাটা রমেশ বুঝিতে পারিল না। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: কথাটা রমেশ শুনিল কিন্তু বুঝিতে পারিল না।
২। এ বাড়িতে আসিয়া যখন প্রবেশ করিল তখন সন্ধ্যা হয় হয়। (সরল বাক্যে)
উত্তর: প্রায় সন্ধ্যার সময়ে বাড়িতে আসিয়া প্রবেশ করিল।
৩। ওরা যাবে কি? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর: ওরা যাবে না।
৪। বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিবারও তাহার প্রবৃত্তি হইল না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর : বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিতে তাহার প্রবৃত্তিতে বাধিল।
৫। তুমি নীচ, অতি ছোটো। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: তুমি নীচ এবং তুমি অতি ছোটো।
৬। পথে আর এতটুকু কাদা পাবার জো নেই দিদিমা। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর: পথে আর এতটুকু কাদা পাবার কি জো আছে দিদিমা?
৭। মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ থাকায় ও সকলের কিছুই জানিতে। পারেন নাই। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ ছিলেন বলে এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই।
৮। এত অপমানের পরেও আমার আপনার সঙ্গে বিবাদ করতে ইচ্ছে করে না। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: এত অপমানিত হলাম তবুও আপনার সঙ্গে বিবাদ করতে ইচ্ছে করে না।
৯। নিরুত্তরে বাহির হইয়া গেল। (না-বাচক বাক্যে)
উত্তর: উত্তর না দিয়া বাহির হইয়া গেল।
১০। নিজেই না হয় ক্ষতিপূরণ করে দিন না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর: পারেন তো নিজেই ক্ষতিপূরণ করে দিন।
১১। রমা তুমি একবার বলো না, চুপ করে রইলে কেন? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর: চুপ করে না থেকে রমাকে একবার বলতে বলা হল।
১২। বেণী ধমক দিয়া কহিল, পারবি নে কেন? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর: বেণী ধমক দিয়া না পারার কারণ জানিতে চাহিল।
১৩। মোরা নালিশ করতি পারব না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর: মোরা নালিশ করতি অপারগ।
১৪। ইহার কোনো হেতুই সে খুঁজিয়া পাইল না। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর: ইহার কোনো হেতুই সে কী খুঁজিয়া পাইয়াছিল।
১৫। তাহার চোখের জলে সমস্ত মুখ ভাসিয়া যাইতে লাগিল। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: তাহার যে চোখের জল তাহাতে তাহার সমস্ত মুখ ভাসিয়া যাইতে লাগিল।
উত্তর পেতে সদস্যপদ প্রয়োজন
Editing By:- Lipi Medhi