১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১.১ জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা একটি বইয়ের নাম হল 'অব্যক্ত'।
১.২ জগদীশচন্দ্র বসু কী আবিষ্কার করেছিলেন?
উত্তর : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল-'উদ্ভিদ উত্তেজনায় সাড়া দেয়', অর্থাৎ গাছেরও প্রাণ আছে। এছাড়া তিনি 'ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্র' আবিষ্কার করেছিলেন।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর একটি বাক্যে লেখো:
২.১ লেখক কবে থেকে গাছদের অনেক কথা বুঝতে পারেন?
উত্তর: রবীন্দ্র অনুরাগী বিজ্ঞানসাধক সাহিত্যিক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা 'গাছের কথা' গদ্যাংশে লেখক পাখি, নানান কীটপতঙ্গ ও গাছেদের যখন থেকে ভালোবাসতে শিখেছেন, তখন থেকেই তিনি তাদের কথা বুঝতে পেরেছেন।
২.২ 'ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।'-কী দেখা যায়?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গ বিজ্ঞানসাধক সাহিত্যিক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত 'গাছের কথা' গদ্যাংশে লেখক মনে করেন যে, মানুষের মধ্যে যেমন কিছু সদ্গুণ বা ভালো কাজ করার প্রবণতা রয়েছে, ঠিক তেমনই গাছেদের মধ্যেও কিছু কিছু সেই ক্ষমতা দেখা যায়।
২.৩ জীবিতের লক্ষণ কী তা লেখক অনুসরণে উল্লেখ করো।
উত্তর : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত 'গাছের কথা' গদ্যাংশে জীবিতের লক্ষণ বলতে তাদের 'গতি' ও 'বৃদ্ধি'র কথা বলা হয়েছে।
২.৪ 'বৃক্ষ শিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়।'- বৃক্ষশিশু কোথায় নিদ্রা যায়?
উত্তর: বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত 'গাছের কথা' গদ্যাংশে বীজের উপরের কঠিন ঢাকনার আড়ালে বৃক্ষশিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়।
২.৫ অঙ্কুর বের হবার জন্য কী কী প্রয়োজন?
উত্তর: বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত 'গাছের কথা' রচনাংশে আমরা দেখি অঙ্কুর বের হবার জন্য প্রয়োজন-উত্তাপ, জল এবং মাটির।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:
৩.১ 'আগে এসব কিছুই জানিতাম না'।- কোন্ বিষয়টি লেখকের কাছে অজানা ছিল?
উত্তর: লেখক জগদীশচন্দ্র বলেছেন, তিনি আগে জানতেন না গাছগুলি কথা বলতে পারে, তাদের জীবন আছে, মানুষের মতো আহার করে, দিন দিন বাড়তে থাকে ইত্যাদি বিষয়।
৩.২ 'ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।'-কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের মধ্যে কী লক্ষ করা যায়?
উত্তর: উত্তরের প্রথমাংশঃ এখানে গাছের কথা বলা হয়েছে।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণশক্তিতে উপলব্ধি করেছেন, মানুষের মধ্যে যেমন সদ্গুণ আছে, গাছের মধ্যেও তার কিছু কিছু দেখা যায়।
৩.৩ 'গাছের জীবন মানুষের ছায়ামাত্র।' -লেখকের এমন উক্তি অবতারণার কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসুর 'অব্যক্ত' গ্রন্থের অন্তর্গত 'গাছের কথা' রচনায় লেখক গাছের জীবনযাপন ও মানুষের জীবন-যাপনের মধ্যে তুলনা করে আলোচ্য এই উক্তিটি করেছেন।
মানুষের মতো গাছ খাওয়া দাওয়া করে, দিনে দিনে বেড়ে ওঠে। জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর গভীর বিজ্ঞাননিষ্ঠ মন নিয়ে উপলব্ধি করেছেন যে মানুষের মতো গাছেরও অভাব, দুঃখ, কষ্ট ইত্যাদি মানবিক অনুভূতিগুলি রয়েছে। জীবন ধারণের জন্যে তাকে ক্রমাগত সংগ্রাম করতে হয়। তিনি লিখেছেন-
মানুষের মধ্যে যেরূপ সদ্গুণ আছে, ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।
অর্থাৎ গাছেরা একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। এমনকি তারা মানুষের মতো স্বার্থত্যাগ করে। মানবী মা যেমন তার সন্তানের জন্যে প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেন না; গাছও তেমন নিজেকে উৎসর্গ করে।
৩.৪ জীবনের ধর্ম কীভাবে রচনাংশটিতে আলোচিত ও ব্যাখ্যাত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: প্রখ্যাত গবেষক ও লেখক জগদীশচন্দ্র বসু গভীর পর্যবেক্ষণশক্তি ও সংবেদনশীল হৃদয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন যে, 'গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়ামাত্র।' লেখকের এমন উক্তি অবতারণার কারণ হল-
মানুষের মধ্যে যেরূপ সদ্গুণ আছে, ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।
জগদীশচন্দ্র বসু জানিয়েছেন, বৃক্ষদের মধ্যে একে অন্যকে সাহায্য করে। এদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব হয়। এরাও মানুষের মতো স্বার্থত্যাগ করে। মা যেমন সন্তানের জন্যে নিজের জীবন দান করেন, উদ্ভিদও তেমনই সন্তানের জন্যে সর্বস্ব বিসর্জন দেয়। তাই লেখকজগদীশচন্দ্র বসুর মনে হয়েছে, গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়ামাত্র। লেখক প্রমাণ করতে চেয়েছেন মানব-হৃদয়ের সমস্ত গুণ এদের মধ্যেও রয়েছে।
৩.৫ 'নানা উপায়ে গাছের বীজ ছড়াইয়া যায়।'- উপায়গুলি পাঠ্যাংশ অনুসরণে আলোচনা করো।
উত্তর: বিজ্ঞান সাধক জগদীশচন্দ্র বসুর 'গাছের কথা' গদ্যে লেখক দেখিয়েছেন নানা উপায়ে গাছের বীজ দূরে ছড়িয়ে পড়ে।
কৃষকেরা নিজের হাতে কর্ষিত জমিতে বীজ ছড়িয়ে দেয় ফলে সেই বীজ থেকে অসংখ্য প্রাণের সৃষ্টি হয়। তবে আমাদের চারপাশে যত গাছপালা দেখা যায় তা সবই মানুষের রোপিত বীজ থেকে জন্ম নেয়নি। কেননা অনেকসময় দেখা যায়-
ক। পাখিরা ফল খেয়ে যত্রতত্র বীজ ছড়িয়ে দেয়। সেই বীজ অনেক সময় দূর দেশে বাহিত হয় ফলে দূরদূরান্তে বাহিত সেই বীজ থেকে চারার জন্ম হয়।
খ। অনেক বীজ বাতাসে উড়ে দূর থেকে দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তুলোর বীজ হাওয়ার সঙ্গে ভাসতে ভাসতে বহুদূরে ছড়িয়ে যায়।
এভাবে বিচিত্র উপায়ে গাছের বীজ ছড়িয়ে পড়ে।
৩.৬ লেখক তাঁর ছেলেবেলার কথা পাঠ্যাংশে কীভাবে স্মরণ করেছেন, তা আলোচনা করো।
উত্তর: গাছের কথা' গদ্যে জগদীশচন্দ্র বসু প্রথমেই বলে নিয়েছেন একা একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়ানোর সময় তিনি গাছ-পালা, পাখ-পাখালির, কীট-পতঙ্গকে ভালোবেসে ফেলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পারেন মানুষের মতো গাছেরও অনুভূতি আছে। তারাও কথা বলতে পারে। আমাদের মতো বিভিন্ন বিষয় উপলব্ধি করতে পারে। জগদীশচন্দ্র বসু লিখেছেন-
এখন ইহাদের মধ্যেও আমাদের মতো অভাব, দুঃখ কষ্ট দেখিতে পাই।
মানুষের মতো বৃক্ষেরও নানা সদ্গুণ আছে। এরাও স্বার্থত্যাগ করে। মানবী মায়ের মতো বৃক্ষ তার সন্তানের জন্যে জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে। গাছের মনের কথা, তাদের সংগ্রামের কথা জগদীশচন্দ্র ছোটোবেলা থেকেই উপলব্ধি করেছেন।
৩.৭ 'পৃথিবী মাতার ন্যায় তাহাকে কোলে লইলেন।' -বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে লেখকের গভীর উপলব্ধি উদ্ধৃতিটিতে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
উত্তর : জগদীশচন্দ্র বসুর 'গাছের কথা' গদ্যে লেখক বৃক্ষশিশুকে তুলনা করেছেন মানবশিশুর সঙ্গে। আশ্বিন মাসের শেষে যখন প্রবল ঝড় হয়; তখন সেই ঝড়ে গাছের বীজ বহুদূরে উড়ে যায়। কখনো একখানা ভাঙা ইট কিংবা মাটির ডেলার নীচে আশ্রয় নেয়। ক্রমে ক্রমে ধুলো-মাটিতে বীজটি ঢাকা পড়ে যায়। সচরাচর বীজটিকে আর দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু জগদীশচন্দ্রের মনে হয়েছে, বীজটি 'কিন্তু বিধাতার দৃষ্টির বাহিরে যায় নাই।' কেননা, পৃথিবী মাতার ন্যায় তাহাকে কোলে তুলিয়া লইলেন।'
বিশ্বপ্রকৃতিকে জগদীশচন্দ্র মায়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে লেখকের গভীর এই উপলব্ধি প্রমাণ করে প্রকৃতি মায়ের মতো স্নেহশীলা।
৩.৮ 'প্রত্যেক বীজ হইতে গাছ জন্মে কিনা, কেহ বলিতে পারে না।'-বীজ থেকে গাছের জন্মের জন্য অত্যাবশ্যকীয় শর্তগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: 'অব্যক্ত' গ্রন্থের অন্তর্গত 'গাছের কথা' রচনা থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।
জগদীশচন্দ্র বসু এই গদ্যে জানিয়েছেন মানব শিশুর মতো বৃক্ষ শিশুরও বেঁচে থাকার কতকগুলি শর্ত রয়েছে। বীজ থেকে অঙ্কুর বের হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হল-
ক। পরিমিত জল, খ। উন্নতা, গ। মাটির সংস্পর্শ
বীজের কঠিন আবরণের ভিতরে নিরাপদে ঘুমিয়ে থাকে গাছের শিশুপ্রাণটি। পরিবেশের প্রতিকূলতায় সব সময় রসালো মাটির উপরে সে পড়ে না। অনেক সময় কঠিন পাথরের উপরে কোনো বীজ এসে পড়ে ফলে সে অঙ্কুরিত হতে পারে না। আসলে উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে, বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করতে না পারলে বীজের ভিতরে গাছ সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সুতরাং, প্রত্যেক বীজ থেকে গাছ জন্মগ্রহণ করে কিনা তা বলা সম্ভব নয়।
৩.৯ 'তখন সব খালি-খালি লাগিত।'- কখনকার অনুভূতির কথা বলা হল? কেন তখন সব খালি-খালি লাগত? ক্রমশ তা কীভাবে অন্য চেহারা পেল তা পাঠ্যাংশ অনুসরণে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: উত্তরের প্রথমাংশ: বিশ্বখ্যাত জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত গাছের কথা নামাঙ্কিত গদ্য থেকে উদ্ধৃত হয়েছে আলোচ্য এই উক্তিটি। 'তখন' বলতে জগদীশচন্দ্র এখানে তাঁর বালককালের কথা বুঝিয়েছেন। উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: জগদীশচন্দ্র জানিয়েছেন, 'আগে' অর্থাৎ অল্পবয়সে যখন একা একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে ঘুরতেন তখন প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর প্রকৃত আত্মীয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাই মূক প্রকৃতির অনেককিছুই তাঁর অজানা থাকায় 'তখন সব খালি-খালি লাগত'।
উত্তরের তৃতীয়াংশ: প্রকৃতি মানুষকে নিজের করে নেয়। জগদীশচন্দ্র পরবর্তী জীবনে গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি, কীট-পতঙ্গকে নিবিড় অন্তরঙ্গতায় ভালোবাসতে শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন আমাদের মতো গাছেরা জীবন ধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করে। তাদেরও বৃদ্ধি-বিকাশ রয়েছে। নানারকম সগুণাবলী রয়েছে। তারা একে অপরকে সাহায্য করে। এমনকী একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। সবথেকে বড় কথা মানবী মায়ের মতো বৃক্ষ মা সন্তানের জন্যে প্রাণ পর্যন্ত দান করে। জীব জগতের এই প্রাণবন্ত রূপ ধীরে ধীরে অনুভব করেন লেখক।
৪. নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো :
৪.১ আগে যখন একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে যাইতাম, তখন সব খালি-খালি লাগিত। (সরল বাক্যে)
উত্তর: আগে একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে গেলে সব খালি-খালি লাগিত।
৪.২ তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, আগে যাহা পারিতাম না। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উত্তর: তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, আগে যাহা অসম্ভব। ছিল।
৪.৩ ইহাদের মধ্যেও আমাদের মতো অভাব, দুঃখকষ্ট দেখিতে পাই। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: আমাদের যেমন অভাব, দুঃখ-কষ্ট আছে, ইহাদের মধ্যে তেমন অভাব, দুঃখ-কষ্ট দেখিতে পাই।
৪.৪ তোমরা শুষ্ক গাছের ডাল সকলেই দেখিয়াছ। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর: শুষ্ক গাছের ডাল দেখ নাই এমন তোমাদের মধ্যে কেহ নাই।
৪.৫ প্রবল বাতাসের বেগে কোথায় উড়িয়া যায়, কে বলিতে পারে? (প্রশ্ন পরিহার করো)
উত্তর: প্রবল বাতাসের বেগে কোথায় উড়িয়া যায়, কেউ বলিতে পারে না।