👉Online MCQs Test
Short Question Answer
1.সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কেন?
2.রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি কোন্ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: রাসবিহারী বসু ছিলেন একজন বিপ্লবী ও সংগঠক। তাঁর কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র বসু 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' গঠনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
1.অনধিক তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
1.তোমার পাঠ্য পত্রখানি কে, কোথা থেকে, কাকে লিখেছিলেন?
পত্রখানি তিনি মান্দালয় জেল থেকে লিখেছিলেন।
এই পত্র দ্বাজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র দিলীপকুমার রায়কে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন।
2.কোন্ ব্যাপারটিকে পত্রলেখক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন?
উত্তর: 'জেলখানার চিঠি' গদ্যে সুভাষচন্দ্র বসু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র কবি ও গায়ক দিলীপকুমারকে তাঁর কারাবরণের কথা বলতে গিয়ে এই উক্তি করেছেন।
১৯২৫, মে মাসের ২ তারিখে মান্দালয় জেল থেকে সুভাষচন্দ্র এই পত্র লেখেন। পত্রলেখক জানান, কারাবরণের ঘটনাকে তিনি
সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন যে, তাঁর কারাবাসের বিষয়টি দিলীপকুমারের কাছে দুঃখজনক বলে মনে হতে পারে। তাঁর 'প্রবৃত্তি ও মার্জিত রুচিতে আঘাত' করতে পারে।
3.বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয় কীভাবে?
উত্তর: সুভাষচন্দ্রের মধ্যে ছিল এক দার্শনিক মন। তিনি দর্শনশাস্ত্র মন দিয়ে পড়েছিলেন। সেই জ্ঞান, বিচারশক্তি ও গ্রহণশক্তি তাঁর কারাবরণের দিনগুলি অতিবাহিত করতে সাহস জুগিয়েছিল। সুভাষচন্দ্র এই চিঠিতে বারবার আধ্যাত্মিক শক্তি (Spritual Power)-র কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন-
4.মান্দালয় জেল কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: মান্দালয় জেল বার্মায় অবস্থিত। বার্মার বর্তমান নাম মায়ানমার। ব্রিটিশ শাসনাধীনে যাঁরা স্বাধীনতার জন্যে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের এই জেলে রেখে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালানো হতো। সুভাষচন্দ্র বসু ও বালগঙ্গাধরের মতো দেশপ্রেমিদের এখানে বন্দি রাখা হয়েছিল।
5.ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষচন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি কেন?
উত্তর: এইসব আলোচনা প্রসঙ্গে দিলীপকুমার রায়কে সুভাষচন্দ্র জানান, জেলের যে কষ্ট তা শারীরিক অপেক্ষা আরও বেশি মানসিক। তিনি কারাবরণের অভিজ্ঞতা নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখতে পারেন। কিন্তু পত্রে তা লেখা সম্ভব নয়। তিনি জানিয়েছেন- "আমার বেশি উদ্যম ও শক্তি থাকলে একখানা বই ফেলার চেষ্টা করতাম কিন্তু সে চেষ্টার উপযুক্ত সার্মথ্যও আমার নেই।" একজন লেখকের যে মন ও মানসিকতার প্রয়োজন হয়; একজন দেশপ্রেমিকের সেই সময়টুকু থাকে না। তাই লেখার জন্যে যে উদ্যমের প্রয়োজন, তা সুভাষচন্দ্রের ছিল না।
7.সুভাষচন্দ্র কেন দিলীপ রায়ের প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি?
উত্তর: কারাবরণের নিরানন্দ দিনগুলিতে বসে মন দিয়ে বই পড়েছিলেন দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র। বইগুলি পাঠিয়েছিলেন নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সুযোগ্য পুত্র দিলীপকুমার রায়।
বইগুলির প্রাপ্তি স্বীকার করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। অত্যন্ত খুশি হয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁর বইগুলি গুণে-মানে-বিবেচনায় সত্যিই অসাধারণ। তবে সেই মুহূর্তে তিনি ফেরত দিতে পারছেন না। কেননা, 'তাদের অনেক পাঠক জুটেছে।' তাছাড়া দিলীপকুমার ইচ্ছে হলে আরও তেমন সুন্দর বই পাঠাতে পারেন। সেগুলি 'সাদরে গৃহীত হবে।' এভাবে উৎসাহী পাঠক সুভাষচন্দ্র দিলীপ রায়ের প্রেরিত পুস্তক ফেরত পাঠাতে চাননি।
8.নেতাজি ভবিষ্যতের কোন্ কর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন? কেন এই কর্তব্য স্থির করেছেন? কারা-শাসন প্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে কাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন?
উত্তর: ১ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু চেয়েছিলেন, তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত কারা-শাসন পদ্ধতির সংস্কার হোক। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কারা-সম্পর্কিত আইনের আমূল পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। ১১৯২৫, মে মাসের ২ তারিখে শ্রদ্ধেয় সুরকার দিলীপকুমার রায়কে সুভাষচন্দ্র লিখেছিলেন-
"তুমি ধারণাই করতে পারবে না, কেমন করে মানুষ দীর্ঘকাল কারাবাসের ফলে ধীরে ধীরে দেহে ও মনে অকালবৃদ্ধ হয়ে যেতে থাকে।"
ক। কারাবরণে থাকা মানুষের মানসিকতার অবনমন ঘটতে থাকে।
খ। কারাবাসকালে অপরাধীর মানসিক ও আধ্যাত্মিক কোনো উন্নতি হয় না।
গ। কারাবরণকারী ধীরে ধীরে মানসিক শক্তি, সতেজতা, আনন্দ হারিয়ে ফেলে।
ঘ। জেলের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক নয়। ফলে দ্রুত শরীর ভাঙতে থাকে।
এইসব কারণে সুভাষচন্দ্র কারা-শাসন প্রণালীর আমূল পরিবর্তন করতে চেয়েছেন।
• সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশ প্রবর্তিত কারা আইন প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন- কোনো ভদ্র বা সুশিক্ষিত ব্যক্তি কারাবাস পছন্দ করতেই পারে না। জেলখানার সমস্ত আবহাওয়াটা মানুষকে যেন বিকৃত অমানুষ করে তোলারই উপযোগী।
সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, ব্রিটিশ কারা-আইন পরিবর্তন করা উচিত। তার পরিবর্তে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেট্স-এর মতো সমৃদ্ধশালী দেশগুলির সংশোধনী আইনকে গ্রহণ করা উচিত।
9. 'সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি।'-বক্তা কে? তিনি কীজন্য খুশি হয়েছেন?
১।। প্রথমেই কারাকর্তৃপক্ষ জানতে চাইতেন চিঠির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি কী?
২। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ 'double distillation' বা দুবার পরীক্ষা করে নিতেন।
৩।। চিঠির মধ্যে গোপন কোনো তথ্য থাকলে তা বন্দিদের কাছে পৌঁছাত না।
ফলে কারও চিঠি পাওয়া-নাপাওয়া সব নির্ভর করতো কারাকর্তৃপক্ষের মানসিকতার উপরে। সভাষচন্দ্র লিখেছেন, দিলীপকুমার প্রেরিত পত্র বিনা বাধাতে ২৪/৩/২৫ তারিখে তাঁর হাতে পৌঁছায়। সুতরাং, সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন-
"মাঝে মাঝে যেমন ঘটে... এবার তা হয়নি। সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি।"
10. 'আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।'-কে, কাকে এ কথা বলেছেন? কীসের উত্তর দেবার কথা বলা হয়েছে?
• দিলীপকুমার রায়ের পত্র পেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দিলীপকুমারকে লিখেছেন-
তোমার চিঠি হৃদয়তন্ত্রীকে এমনই কোমলভাবে স্পর্শ করে চিন্তা ও অনুভূতিকে অনুপ্রাণিত করেছে যে, আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।
সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন, তাঁর মনের কথা সম্পূর্ণ অনাবৃত করা সম্ভব নয়। কেননা-
প্রথমত।। এই চিঠি সেন্সরের (Censor) হাত অতিক্রম করে তবে দিলীপকুমার রায়ের হাতে পৌঁছাবে।
দ্বিতীয়ত ।। সুভাষচন্দ্র তাঁর মনের গভীরতম আবেগ ও চিন্তাকে উন্মুক্ত করতে পারেননি।
ফলে সুভাষচন্দ্রের মনের অব্যক্ত কথা কোনোদিন ভবিষ্যৎকালের কাছে হয়তো পৌঁছাবে না।
11. 'পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যেজন ভুক্তভোগী।'- উদ্ধৃতির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো। সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন্ মানসিকতার পরিচয় পাও?
• সুভাষচন্দ্র বসু প্রশ্নোদ্ভূত যে মন্তব্য করেছেন, তা প্রমাণ করে তৎকালীন কারা আইন কতখানি অমানবিক ও অনৈতিক ছিল। কেননা তিনি লিখেছেন-মানুষ দীর্ঘকাল কারাবাসের ফলে ধীরে ধীরে দেহে ও মনে অকালবৃদ্ধ হয়ে যেতে থাকে। সুভাষচন্দ্র চেয়েছিলেন, কারা-শাসন প্রণালীর সংশোধন হোক। অপরাধীদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিকোণ ও সহানুভূতি বর্ষিত হোক। তাই দিলীপকুমার রায়কে পত্রে জানিয়েছেন, 'ভবিষ্যতে কারা-সংস্কার আমার একটা কর্তব্য হবে।'
• দিলীপকুমার রায়কে সুভাষচন্দ্র পত্রে লিখেছেন- জেলের মধ্যে যে নির্জনতায় মানুষকে বাধ্য হয়ে দিন কাটাতে হয় সেই নির্জনতাই তাঁকে জীবনের চরম সমস্যাগুলি তলিয়ে বুঝবার সুযোগ দেয়।
সুভাষচন্দ্র জানিয়েছিলেন, যে সব জটিল প্রশ্নের উত্তর তিনি পাচ্ছিলেন না; কারাকক্ষে বসে তার উত্তর তিনি পেয়েছেন। যে সমস্ত - আগে ছিল দুর্বল ও অস্পষ্ট ধোঁয়াশাচ্ছন্ন: এখন সেগুলির অর্থ স্পষ্ট হয়েছে। এমনকি আধ্যাত্মিক জগৎ সম্পর্কে তিনি বহু তথ্য জানতে পেরেছেন; যা তাঁর উপলব্ধিকে আরও গভীরতা দান করেছে।
13. 'Martyrdom' শব্দটির অর্থ কী? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন?
দেশের মঙ্গলের জন্যে ও পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার জন্যে সুভাষচন্দ্র বিপ্লবী কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর কারাবাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিলীপকুমার রায় 'Martyrdom' শব্দটির প্রয়োগ করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র জানান-
১. এই কথাটি বলে সুভাষচন্দ্র গভীর অনুভূতি ও প্রাণের মহত্ত্বেরই পরিচয় দিয়েছেন।
২. সুভাষচন্দ্রের মধ্যে সামান্য কিছু হলেও 'Humour' বা রসবোধ অবশিষ্ট আছে। 'Martyrdom' বা 'শহিদত্ব' বিশেষণকে তিনি গ্রহণ করতে পারছেন না।
৩. কেননা Martydom বিষয়টি তাঁর কাছে 'বড়োজোর একটা আদর্শই হতে পারে।'
সুভাষচন্দ্রের এই বক্তব্য আমাদের অভিভূত করে। তিনি কতখানি বিনয়ী, আত্মত্যাগী ও বিপ্লবী চিন্তার দ্বারা অনুরক্ত ছিলেন; এই উদ্ধৃতি তারই প্রমাণ।
14. 'যখন আমাদিগকে জোর করে বন্দি করে রাখা হয় তখনই তাদের মূল্য বুঝতে পারা যায়।'- কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? 'তাদের মূল্য' বিষয়ে লেখকের বক্তব্য আলোচনা করো।
উত্তর: প্রসঙ্গ: কারাগারের দিনগুলিতে বসে সুভাষচন্দ্রের মনে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মনে হয়েছিল দীর্ঘদিন কারাবাসের ফলে মানুষ দেহ-মনে একেবারেই অকালবৃদ্ধ হয়ে পড়ে। কারাগারের পরিবেশ মোটেই সুখকর নয়। সেখানে আনন্দ নেই। দেহের উপযোগী কোনো খাদ্য নেই। মানসিক অবকাশের মতো কোনো পরিবেশ নেই। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি।
লেখকের বক্তব্য: কোনো মানুষ যখন অনেকের মধ্যে থাকেন তখন তিনি যে আনন্দ লাভ করেন, সেই আনন্দ কখনও কারাকক্ষের মধ্যে পাওয়া যায় না। কারাকক্ষের পরিবেশ কখনোই মানুষের বেঁচে থাকার মতো সুখকর অনুভূতি নিয়ে হাজির হয় না। সুভাষচন্দ্র বসু জানিয়েছেন যাঁদের কারাকক্ষে বন্দি রাখা হয়, তাঁদের সারাটা জীবন বিষণ্ণতায় কাটাতে হয়। সুতরাং তাঁর মনে হয়েছে জেলের শাসন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে পরিবর্তন করা সম্ভব হলে তবেই বন্দিরা সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার পাবে।
15. 'মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর ও নিরানন্দময়।'- যে ঘটনায় লেখকের মনে এই উপলব্ধি ঘটে তার পরিচয় দাও। (জে.এন. একাডেমি)
ব্রিটিশ শাসিত কারাগারে বন্দি মানুষদের ওপরে শারীরিক-মানসিক যেসব কষ্ট দেওয়া হতো; তাতে হতাশ হয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসু। বন্দিরা যেভাবে মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়, তা নিঃসন্দেহে অমানবিক। সুভাষচন্দ্রের মনে হয়েছে-জেলের মধ্যে দৈহিক কষ্ট অপেক্ষা মানসিক কষ্ট অনেক বেশি। এখানে অত্যাচার ও অপমানের আঘাত অনেক বেশি। ফলে বন্দি-জীবনটা অনেকটা যন্ত্রণাদায়ক।
সংশোধিত হওয়ার সুযোগ না দিয়ে মানসিক আঘাত হানার ফলে কয়েদিরা নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন থেকে ভ্রষ্ট হয়। সুতরাং, সুভাষচন্দ্র চেয়েছেন, বন্দি মানুষের জীবনে অন্তত আনন্দ ও পরিতৃপ্তি পাওয়ার মতো ব্যবস্থা হোক।
কিন্তু ব্রিটিশ-শাসিত কারাগারে থেকে বন্দিরা মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছে; তাদের নৈতিক অবনতি ঘটেছে। তাই সুভাষচন্দ্রের এই বক্তব্য।
উত্তর: কারাকক্ষের নিরানন্দময় দিনগুলিতে সুভাষচন্দ্র একের পর এক বই পড়েছেন। কারার লৌহপ্রাচীর তাঁর মনের গতিকে রুদ্ধ করতে পারেনি। তবে ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে বন্দিরা কীভাবে শারীরিক-মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছেন', সেই বিষয়ের প্রতিও তিনি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। তিনি লিখেছেন-
জেলখানার সমস্ত আবহাওয়াটা মানুষকে যেন বিকৃত অমানুষ করে তোলারই উপযোগী।
তবু সুভাষচন্দ্র সেই নিরানন্দময় কারাবাসের দিনগুলিতেও দেশমাতার কথা ভেবেছেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন কবি নজরুল, বিপ্লবী বালগঙ্গাধর তিলকের মতো দেশপ্রেমীদের। জেলের নির্জনতায় বসে তিনি দার্শনিক চিন্তা-চেতনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শক্তি অর্জন করেছেন।
জেলখানায় মানুষ এমনভাবে মানসিক-শারীরিক-আত্মিক সংকটের শিকার হতো যার ফলে তার জীবনে অকালবার্ধক্য এসে হাজির হতো। সুভাষচন্দ্র কারাগারের মধ্যে মানুষের উপরে এই পীড়নকে মেনে নেননি। তিনি সমাধানের পথ খুঁজেছেন।
সুভাষচন্দ্র মনে করেন, দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে মানুষ শিক্ষালাভ করবে। তিনি লিখেছেন- "দুঃখ-যন্ত্রণা উন্নততর কর্ম ও উচ্চতর সফলতার অনুপ্রেরণা এনে দেবে।" এভাবে আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী সুভাষচন্দ্রের জীবনদর্শন আলোকিত হয়েছে এই পত্রের মধ্যে।
17. কারাগারে বসে নেতাজির যে ভাবনা, যে অনুভব, তার অনেকখানি কেন অকথিত রাখতে হবে?
আজ যা ভাবছি ও যা অনুভব করছি, তার অনেকখানিই কোনো এক ভবিষ্যৎকাল পর্যন্ত অকথিত রাখতে হবে।
সুতরাং, সুভাষচন্দ্র বলেছেন, যতদিন তিনি কারাগারে অবস্থান করবেন, ততদিন তাঁর মনের অনেক কথাই অপ্রকাশিত থাকবে।
2. নীচের বাক্যগুলির তথ্যগত অশুদ্ধি সংশোধন করো:
১. নেতাজি মনে করতেন না যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।
উত্তর: নেতাজি মনে করতেন যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তের একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।
২. কারাগারে বন্দি অবস্থায় নেতাজি সুভাষ গীতার আলোচনা লিখেছিলেন।
উত্তর: কারাগারে বন্দি অবস্থায় লোকমান্য তিলক গীতার আলোচনা লিখেছিলেন।
৩. জেলজীবনের কষ্ট মানসিক অপেক্ষা দৈহিক বলে নেতাজি মনে করতেন।
উত্তর: জেলজীবনের কষ্ট দৈহিক অপেক্ষা মানসিক বলে নেতাজি মনে করতেন।
৩. নীচের বাক্যগুলির থেকে সমাসবদ্ধ পদ বেছে নিয়ে ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো:
১. তোমার চিঠি হৃদয়তন্ত্রীকে কোমলভাবে স্পর্শ করেছে।
উত্তর: হৃদয়তন্ত্রী হৃদয়রূপ তন্ত্রী = রূপক কর্মধারয় সমাস।
বিশ্লেষণ: 'হৃদয়' হলো পূর্বপদ এবং 'তন্ত্রী' হলো উত্তরপদ। এর মাঝখানে 'রূপ' হলো ব্যাসবাক্য। দুটি পদের মাঝখানে অভেদ আরোপ হেতু 'রূপ' বসায়, সমাস হয়েছে রূপক কর্মধারয়।
২. সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে জেলে আছি।
উত্তর: অজ্ঞাত নয় জ্ঞাত = না-তৎপুরুষ সমাস।
বিশ্লেষণ: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে নিষেধমূলক অব্যয়পদ যুক্ত থাকে, তাকে বলে না-তৎপুরুষ সমাস।
৩. তখন আমার নিঃসংশয় ধারণা জন্মে।
উত্তর: নিঃসংশয় নেই সংশয় যার = না বহুব্রীহি।
৪. নূতন দণ্ডবিধির জন্যে পথ ছেড়ে দিতে হবে।
উত্তর: দণ্ডবিধি দণ্ডের নিমিত্ত বিধি = নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস।
৫. লোকমান্য তিলক কারাবাস-কালে গীতার আলোচনা লেখেন।
উত্তর: লোকমান্য লোক দ্বারা মান্য = করণ তৎপুরুষ সমাস।
বিশ্লেষণ: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সঙ্গে করণ কারকে ব্যবহৃত অনুসর্গ অর্থাৎ দ্বারা/দিয়া/কর্তৃক থাকে, তাকে করণ তৎপুরুষ সমাস বলে।
১. আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর: আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া খুব সহজ নয়।
২. সেইজন্যই সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে সে লজ্জা পায়। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর: সেইজন্যই সে সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে লজ্জা পায় না কি?
৩. লজ্জায় তারা বাড়িতে কোনো সংবাদ দেয়নি। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: তারা লজ্জা পেয়েছে তাই বাড়িতে কোনো সংবাদ দেয়নি।
৪. কতকগুলি অভাব আছে যা মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে। (সরল বাক্য)
উত্তর: কতকগুলি অভাবকে মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে।
৫. বিনা দুঃখকষ্টে যা লাভ করা যায় তার কোনো মূল্য আছে? (নির্দেশক বাক্যে)
৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:
১. 'শুধু শাস্তি দেওয়া নয়, সংশোধনই হওয়া উচিত জেলের প্রকৃত উদ্দেশ্য।'-তুমি কি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। (Open Ended Question)
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে কারা-সংস্কার না করে কয়েদির উপরে শারীরিক-মানসিক অত্যাচার করায় তাদের জীবন থেকে আনন্দ-স্বস্তি-শান্তিটুকু হারিয়ে গিয়েছিল। সুভাষচন্দ্র মনে করেন- জেলের দৈহিক কষ্ট অপেক্ষা মানসিক কষ্ট অনেক বেশি।
কারাগারের কাজ হল বন্দির মনে উন্নত মার্জিত চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটানো। এর ফলে একজন বন্দি তার ভুলগুলি শুধরে নিতে পারে। গান, ছবি আঁকা, নাটক, খেলাধূলা ইত্যাদির মাধ্যমে বন্দির জীবনে আনন্দের বার্তা আনা সম্ভব।
শুধু কঠোর অনুশাসন, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন নয়, একজন বন্দিকে যথার্থেই সংশোধিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়াই হল কারাগারের নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং সুভাষচন্দ্র বসুর এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করি।
২. 'আমাদের দেশের আর্টিস্ট বা সাহিত্যিকগণের যদি কিছু কিছু কারাজীবনের অভিজ্ঞতা থাকত তাহলে আমাদের শিল্প ও সাহিত্য অনেকাংশে সমৃদ্ধ হতো।'-এ প্রসঙ্গে কারাজীবন যাপন করা কয়েকজন সাহিত্যিকের নাম এবং তাঁদের রচিত গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো।
কারাজীবনযাপন করেছেন এমন কয়েকজন লেখক হলেন নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ী। এঁদের উল্লেখযোগ্য লেখাগুলি হল-
১. নজরুল ইসলাম: ফণিমনসা, বিষের বাঁশী, সর্বহারা
২. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়: পাষাণপুরী
৩. সতীনাথ ভাদুড়ী: জাগরী
৬. নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করো
১. তার মধ্যে করুণা ও প্রেমবিন্দু আছে। (সরল বাক্যে)
২. কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা যে তাঁর জেলের অভিজ্ঞতার নিকট কতখানি ঋণী সে কথা বোধ হয় ভেবে দেখা হয় (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাও তাঁর জেলের অভিজ্ঞতার নিকট অনেকখানি ঋণী এবং সে কথা বোধ হয় ভেবে দেখা হয় না।
৩. মান্দালয় জেলে ছ'বছর বন্দি হয়ে থাকাটাই তাঁর অকাল মৃত্যুর কারণ।
উত্তর: মান্দালয় জেলে ছ'বছর বন্দি হয়ে থাকাটাই তাঁর অকাল মৃত্যুর কারণ নয় কি?
উত্তর: একটা চিঠিতো অশেষ নয়।
৫. এগুলির উদ্দেশ্য ব্যর্থ।
উত্তর: এগুলির উদ্দেশ্য সার্থক নয়।
৬. সহানুভূতি কেন দেখাবেন না?
৭. এই ভাব কিছুতেই কম বাস্তব নয়। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর: এই ভাব অনেকখানি বাস্তব।
৮. ভোলা উচিত নয়। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর: মনে রাখা উচিত।
৯. মানুষের অন্তরে শক্তির সঞ্চার করে। (না-বাচক বাক্যে)
১০. সুশিক্ষিত ব্যক্তি কারাবাস পছন্দ করতেই পারে না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উত্তর পেতে সদস্যপদ প্রয়োজন
Paid Answer Link (Membership User)
Editing By:- Lipi Medhi