Chapter 4

 চন্দ্রগুপ্ত
-----------------

২.১ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল ও সময় নির্দেশ করো।

উত্তর: প্রথমাংশ: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল হল সিন্ধু নদের তীর।

উত্তর দ্বিতীয়াংশ: সময় তখন সন্ধ্যা।

২.২ নাট্যাংশের উল্লেখিত 'হেলেন' চরিত্রের পরিচয় দাও।
 
উত্তর : 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশে উল্লিখিত হেলেন হলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের কন্যা। তিনি অসাধারণ সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী ছিলেন। পরবর্তীকালে চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে তিনি বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
 
২.৩ 'রাজার প্রতি রাজার আচরণ।'-উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে?
 
উত্তর: আলোচ্য এই উক্তিটির বক্তা হলেন ভারতীয় রাজা পুরু। তিনি নির্ভীক একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন।
 
২.৪ 'জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই'- বক্তা কীভাবে এই কীর্তি রেখে যেতে চান?
 
উত্তর: 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটক থেকে গৃহীত এই উক্তিটির বক্তা হলেন গ্রিক বীর সেকেন্দার। তিনি দিগ্বিজয়ের মাধ্যমে জগতে কীর্তি রেখে যেতে চান।
 
২.৫ সম্রাট, আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না।'-বক্তাকে 'বন্দি' করার প্রসঙ্গ এসেছে কেন?
 
উত্তর: কবি-নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশটিতে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন নির্ভীক বীর চন্দ্রগুপ্ত। সেকেন্দার তাঁকে 'গুপ্তচর' আখ্যা দিয়ে বন্দি করতে চাইলে সেই সময় এই মন্তব্যটি তিনি করেছেন।
 
নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:
 
৫.১ নাট্যাংশটি অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে নাট্যকারের দক্ষতার পরিচয় দাও।
 
উত্তর: ঐতিহাসিক নাটকে ইতিহাসের তথ্য ও সত্য রক্ষিত হয়। নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় গভীর ঐতিহাসিক নিষ্ঠায় 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশটিতে ঐতিহাসিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।
 
নাটকের শুরুতে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের মাধ্যমে প্রাচীন ভারতবর্ষের কিছু ঐতিহাসিক চিত্র তুলে ধরেছেন। পুরুর সাহসিকতা ও চন্দ্রগুপ্তের স্বাদেশিকতার মধ্য দিয়ে তৎকালীন ভারতবর্ষের অজেয় সম্রাটদের কাহিনি সূচিত করেছেন। 
 
ঐতিহাসিক নাটকে পরিবেশ সৃষ্টির উপযোগী কতগুলি তথ্য এই নাট্যাংশে এসেছে। যেমন-
 
ক। নাট্যাংশের কাহিনি ইতিহাসের পট থেকে গৃহীত হয়েছে।
 
খ। নাট্যাংশের প্রথমে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার, গ্রিক সৈন্যাধ্যক্ষ সেলুকস, তাঁর কন্যা হেলেন ও আন্টিগোনস চরিত্র এনে গ্রিক উপাদানকে তিনি বিশ্বস্ত করেছেন।
 
গ। মগধের রাজা মহাপদ্ম, রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত, অত্যাচারী নন্দ ইত্যাদি প্রসঙ্গ এনে তিনি মগধের ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন।
 
ঘ। সংলাপ, পরিবেশ, পরিস্থিতি ঐতিহাসিক নাটকের উপযোগী হয়েছে।
 
সবমিলিয়ে নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ চিত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
 
৫.২ নাট্যাংশে 'সেকেন্দার' 'সেলুকস'-এর পরিচয় দাও। সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করো।
 
উত্তর: প্রথমাংশ: উনিশ শতকের সফল নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশে 'সেকেন্দার' হলেন গ্রিক সম্রাট আর 'সেলুকস' সম্রাট সেকেন্দারের সেনাপতি।
 
উত্তর: দ্বিতীয়াংশ: প্রকৃতির অপরূপ শোভা দেখে অভিভূত সেকেন্দার সিন্ধু নদের তীরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন-
সত্য সেলুকস। কী বিচিত্র এই দেশ!
'বিচিত্র' শব্দটি বলার কারণ ভারত-প্রকৃতি এত অপূর্ব যে, এর সঙ্গে পৃথিবীর আর কোনো দেশের তুলনা হয় না। দিনে প্রখর সূর্যের তাপ, রাতে স্নিগ্ধ চাঁদের উজ্জ্বল আলো, আকাশে দীপ্তমান অগণিত তারার নাতি-উজ্জ্বল আলো প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের পরিচয় বহন করে। আবার অন্যদিকে বর্ষাস্নাত প্রকৃতি, হিমালয় পর্বতের অপূর্ব দৃশ্য, উদ্দাম নদী, সুবিশাল মরুভূমি-প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পরিচয় বহন করে। সম্রাট জানিয়েছেন-
 
এর বিশাল নদ-নদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে উদ্দাম বেগে ছুটেছে। 

এর মরুভূমি স্বেচ্ছাচারের মতো তপ্ত বালুরাশি নিয়ে খেলা করছে।

এভাবে সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ ধরা দিয়েছে।
 
৫.৩ 'চমকিত হলাম!'-বক্তা কে, সম্রাটের 'মহানুভবতা'-র কীরূপ পরিচয় নাট্যাংশে পাওয়া যায়?
 
উত্তর: প্রথমাংশ: বাংলা ঐতিহাসিক নাটকের সফল স্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকের প্রথম অঙ্ক, প্রথম দৃশ্য থেকে অংশটি গৃহীত হয়েছে। গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার অত্যন্ত সাহসী ও নির্ভীক পুরুর কথায় চমকিত হয়েছিলেন।
 
দ্বিতীয়াংশ: পুরুকে বন্দি করার পর সম্রাট সেকেন্দার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি সম্রাটের কাছে কেমন আচরণ প্রার্থনা করেন। প্রত্যুত্তরে নির্ভীক চিত্তে ও বলিষ্ঠ কণ্ঠে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন একজন রাজার প্রতি অন্য রাজা যেমন আচরণ করেন। পুরুর এই অপরিসীম সাহসিকতা দেখে সম্রাট চমকিত হয়েছিলেন। সুদূর ম্যাসিডন থেকে অপ্রতিরোধ্য যাত্রা করে তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন। এখানে
একের পর এক যুদ্ধে জয়লাভ করেও তিনি শতদ্রু নদীর তীরে এসে বাধাপ্রাপ্ত হন। অনুভব করেন পুরুর মতো বীর প্রকৃতই দেশকে ভালোবাসেন। তাঁর সেই অনুভূতি থেকে তিনি জানিয়েছেন, 'চমকিত হলাম!'
 
৫.৪ 'সম্রাট মহানুভব।'-বক্তা কে? সম্রাটের 'মহানুভবতা'-র কীরূপ পরিচয় নাট্যাংশে পাওয়া যায়?
 
উত্তর: প্রথমাংশ: উনিশ শতকের ঐতিহাসিক নাটকের সফল স্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশে এই উক্তিটির বস্তুা হলেন সম্রাট সেকেন্দারের সেনাপতি সেলুকস।
 
 দ্বিতীয়াংশ: পুরুকে বন্দি করার পর সম্রাট তার প্রতি কোনোরূপ বিরূপ আচরণ করেননি। বরং পুরুর সাহসিকতা ও শৌর্য, বীর্যে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট তাঁর রাজ্য প্রত্যর্পণ করেছেন। তিনি সেলুকসকে পুরুর প্রসঙ্গে জানিয়েছেন-
 
চমকিত হলাম! ভাবলাম-এ একটা জাতি বটে! আমি তৎক্ষণাৎ তাকে তার রাজ্য প্রত্যর্পণ করলাম।
সম্রাটের এই কথা শুনে অভিভূত হয়েছিলেন সেলুকস। কেননা, সম্রাট তাঁর মহানুভতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
 
৫.৫ ইতিহাসের নানান অনুষঙ্গ কীভাবে নাট্যকলেবরে বিধৃত রয়েছে তা ঘটনাধারা বিশ্লেষণ করে আলোচনা করো।
 
উত্তর: ঐতিহাসিক নাটকের মধ্যে ইতিহাসের সত্য পরিচয় অবশ্যই থাকবে; তার সঙ্গে প্রয়োজনমতো কল্পনার আভাস পাওয়া যাবে। 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় দুটি ইতিহাসের ঘটনাকে পাশাপাশি এনেছেন। যেমন-
 
১. ভারতের ইতিহাস চন্দ্রগুপ্ত, মহাপদ্ম, নন্দ-এই তিনটি চরিত্রকে সামনে রেখে চন্দ্রগুপ্তের সংকল্পকেই গ্রহণ করেছেন।
 
২. গ্রিকের ইতিহাস: গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার, দুই গ্রিক সেনাপতি সেলুকস ও আন্টিগোনস, সেলুকসের কন্যা হেলেন-এই চরিত্রগুলি ইতিহাসের পট থেকেই গৃহীত হয়েছে।
 
নাটকে দুটি যুদ্ধের প্রসঙ্গ এসেছে। একটি সেকেন্দার ও পুরুর যুদ্ধ এবং অপরটি ভাবী যুদ্ধ-চন্দ্রগুপ্ত ও নন্দের মধ্যে যা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে। নাটকের মধ্যে যে সংলাপ, চরিত্রের যে বক্তব্য, পরিবেশের যে বর্ণনা দ্বিজেন্দ্রলাল দিয়েছেন, তা নাট্যকলেবরে ইতিহাসকেই চিহ্নিত করেছে।
 
৫.৬ 'গুপ্তচর'। -কাকে 'গুপ্তচর' আখ্যা দেওয়া হয়েছে? সে কি প্রকৃতই গুপ্তচর?
 
উত্তর: প্রথমাংশ: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশে মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তকে 'গুপ্তচর' আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
 
 দ্বিতীয়াংশ: প্রকৃত অর্থে যুবরাজ চন্দ্রগুপ্ত 'গুপ্তচর' নন। কারণ তিনি হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য সেনাপতি সেলুকসের নিকট সেনা বাহিনী চালনা শিখতে চেয়েছেন। এমনকী ব্যূহ-রচনা, সামরিক নিয়ম-এসব শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
 
'গুপ্তচর' সেই যে শত্রুপক্ষের গোপন সংবাদ সংগ্রহ করে মিত্রপক্ষের নিকট প্রেরণ করে। তাই যুবরাজকে সত্যিকার অর্থে গুপ্তচর বলা যায় না। আসলে নির্জনে বসে চন্দ্রগুপ্ত ভবিষ্যৎকালের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর সেজন্যে অধীত বিদ্যার কথা শুকনো তালপত্রে লিখে রাখছিলেন। আন্টিগোনস তার সেই লেখার মর্মোদ্ধার করতে না পেরে গ্রিক সম্রাটের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে 'গুপ্তচর' রূপে চিহ্নিত করেছিলেন।
 
৫.৭ 'সেকেন্দার একবার সেলুকসের প্রতি চাহিলেন...'-তাঁর এই ক্ষণেক দৃষ্টিপাতের কারণ কী?
 
উত্তর: কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে অভিযুক্ত চন্দ্রগুপ্তের কথা শ্রবণ করেছিলেন গ্রিক বীর সেকেন্দার।
 
যুবরাজ চন্দ্রগুপ্ত সেনাপতি সেলুকসের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার নিকট পরিচয় আত্মগোপন করে রণনীতি শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন, কিন্তু সেলুকস কোনোদিনই তা বুঝতে পারেননি।
 
আসলে চন্দ্রগুপ্ত তাঁর হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার করবার কারণে সেলুকসের কাছে সেনা বাহিনী-পরিচালনা, ব্যূহ-রচনা-প্রণালী ও সামরিক নিয়ম-কানুন শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। গ্রিক সম্রাটের অজ্ঞাতে সেলুকস কেন চন্দ্রগুপ্তকে রণনীতি শিখিয়েছিলেন তা বুঝতে পারেননি তিনি। তাই অভিযুক্ত সেনাপতির দিকে তাকিয়ে চন্দ্রগুপ্তের বক্তব্যের সত্যাসত্য বুঝে নিতে চেয়েছিলেন।
 
৫.৮ চন্দ্রগুপ্ত ও সেলুকসের কীরূপ সম্বন্ধের পরিচয় নাট্যাংশে মেলে
 
উত্তর : রবীন্দ্র সমসাময়িক নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় লিখেছিলেন 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকটি। আমাদের পাঠ্য নাট্যাংশে চন্দ্রগুপ্ত সেলুকসের নিকট ছাত্র হিসাবে সেনা বাহিনী চালনা, ব্যূহ-রচনা ও সামরিক নিয়ম-এসব শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তাই বলা চলে যে, সেলুকস এখানে চন্দ্রগুপ্তের শিক্ষাগুরু আর চন্দ্রগুপ্ত তার শিষ্য বা ছাত্র।
 
চন্দ্রগুপ্তকে 'গুপ্তচর'রূপে চিহ্নিত করা হয়েছিল। চন্দ্রগুপ্ত অবশ্য নিজের আত্মপরিচয় প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন-
 
আমার বৈমাত্র ভাই নন্দ সিংহাসন অধিকার করে আমায় নির্বাসিত করেছে। আমি তারই প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছি।
 
অর্থাৎ চন্দ্রগুপ্তের মধ্যে গুপ্তচর বা এই জাতীয় গোপন সংবাদ আদানপ্রদানের কোনো বিষয় ছিল না। তিনি সেলুকসের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেছেন-
 
এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্র ছাত্রহিসাবে তাঁর কাছে উপস্থিত, তাতেই তিনি ত্রস্ত।
 
সম্রাট অবশ্য খেয়াল করেছেন সেলুকসের কাছে তিনি ঠিকমতো শিক্ষা লাভ করেছেন। কারণ দুর্বিনীত আন্টিগোনস সেলুকসের মাথা লক্ষ্য করে তরবারি চালালে ক্ষিপ্র গতিতে চন্দ্রগুপ্ত তা প্রতিহত করেছেন। অর্থাৎ তিনি যেন গুরু ঋণ পরিশোধ করতে চেয়েছেন। দেখিয়েছেন তিনি শিক্ষার যথাযথ মর্যাদা রেখেছেন।
 
৫.৯ 'তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম।' কার উক্তি? সে কী লিখে নিচ্ছিল? তাঁর এই লিখে নেওয়ার উদ্দেশ্য কী?
 
উত্তর: প্রথমাংশ: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশ থেকে গৃহীত এই অংশে মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
 দ্বিতীয়াংশ: তিনি গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের নিকট এতকাল ধরে যে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন, তা লিখে নিচ্ছিলেন। তিনি যে প্রসঙ্গগুলি লিখেছিলেন, তা হল-
 
ক। গ্রিক সম্রাটের সেনা বাহিনী চালনা।
খ। ব্যূহ রচনা-প্রণালী।
গ। সামরিক নিয়ম।
 
তৃতীয়াংশ: গ্রিক সৈন্য কাল সিন্ধুতট পরিত্যাগ করে
চলে যাবে শুনে তিনি সেগুলি লিখে রাখছিলেন। বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ তাঁকে সিংহাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধারের সংকল্পে সেলুকস কর্তৃক প্রদত্ত অস্ত্রবিদ্যা লিখে রাখছিলেন।
 
৫.১০ আন্টিগোনস নাটকের এই দৃশ্যে সেলুকসকে 'বিশ্বাসঘাতক' বলেছে। তোমার কি সেলুকসকে সত্যিই 'বিশ্বাসঘাতক' বলে মনে হয়? যুক্তিসহ আলোচনা করো।
 
উত্তর: প্রথমাংশ: রবীন্দ্র সমসাময়িক নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশে আন্টিগোনস সেলুকসকে 'বিশ্বাসঘাতক' বলেছে। কিন্তু সেলুকস কোনো বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করেননি। তাই আমি সেলুকসকে 'বিশ্বাসঘাতক' বলে মনে করি না।
 
 দ্বিতীয়াংশ: সেলুকস চন্দ্রগুপ্তকে দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত তাঁর কাছে সেনাবাহিনী চালনা, ব্যূহ রচনা প্রণালী ও সামরিক নিয়ম-কানুন মনোযোগ সহকারে শিখেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত শুধুমাত্র তাঁর হৃত রাজ্য উদ্ধারের সংকল্পে সেলুকসের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। সেলুকস তাঁকে নিজের শিষ্যের মতোই গুরুপ্রদত্ত বিদ্যা দান করেছিলেন।
 
আর এজন্য তিনি সাময়িকভাবে সম্রাটের বিরাগভাজন হলেও একজন যোগ্য ও সাহসী বীরকে শিষ্য হিসাবে পেয়েছেন। তাকে শুধুমাত্র তিনি ছাত্র হিসাবে দেখেছেন। তাই প্রকৃত বিচারে সেলুকস বিশ্বাসঘাতক নন; তিনি একজন যোগ্য গুরুর আসনে অধিষ্ঠিত।
 
৫.১১ 'নিরস্ত হও।'-কে এই নির্দেশ দিয়েছেন? কোন্ পরিস্থিতিতে তিনি এমন নির্দেশ দানে বাধ্য হলেন?
 
উত্তর: প্রথমাংশ: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশ থেকে গৃহীত অংশে সম্রাট সেকেন্দার এই নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: সেলুকস কথাপ্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন- যুবকের চেহারা, কথাবার্তা আমার মিষ্ট লাগত।... বুঝি নাই যে এ বিশ্বাসঘাতক?
 
আন্টিগোনস সেলুকসকেই বিশ্বাসঘাতক বলে চিহ্নিত করলে অবাক সেলুকস তরবারি বার করেন। আন্টিগোনস ক্ষিপ্রতর হস্তে তরবারি বের করে সেলুকসের শির লক্ষ্য করে তরবারি ক্ষেপণ করেন। ততোধিক ক্ষিপ্র হস্তে চন্দ্রগুপ্ত নিজ তরবারি বের করে সেই আঘাত প্রতিহত করেন। আন্টিগোনস তখন সেলুকসকে ছেড়ে চন্দ্রগুপ্তকে আক্রমণ করলে আন্টিগোনসের এই উদ্ধত আচরণ দেখে সম্রাট উদ্ধৃত নির্দেশ দিয়েছিলেন>
 
৫.১২ 'আন্টিগোনস লজ্জায় শির অবনত করিলেন।'- তাঁর এহেন লজ্জিত হওয়ার কারণ কী?
 
উত্তর: প্রশ্নোক্ত অংশটি গৃহীত হয়েছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রণীত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশ থেকে। আন্টিগোনস সম্রাট সেকেন্দারের সামনে একজন সামান্য সেনাধ্যক্ষ হয়ে সেনাপতির প্রতি ঔদ্ধত্য আচরণ করেছিলেন। ঠিক সেই সময় সম্রাট সেকেন্দারের নির্দেশে আন্টিগোনসের শির লজ্জায় অবনত হয়েছিল। আন্টিগোনস যেভাবে সেলুকসের দিকে তরবারি নিক্ষেপ করেন তা থেকে প্রমাণিত হয়- 

ক। তিনি সেলুকসের অধীনস্ত হয়েও তাঁর প্রতি বিরূপ আচরণ করেছিলেন।
 
খ। আন্টিগোনসের মধ্যে দুর্বিনীত ঔদ্ধত্যকে দেখেছিলেন সেকেন্দার।
 
গ। আন্টিগোনসকে তিনি নির্বাসিত করেছিলেন।
 
আন্টিগোনস যে অন্যায় করেছিলেন তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বলে লজ্জায় শির অবনত করেছিলেন।
 
৫.১৩ নাট্যাংশ অবলম্বনে গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের পরিচয় দাও।
 
উত্তর: রবীন্দ্র সমসাময়িক নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকে সেকেন্দার চরিত্রটির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন-
 
১. প্রকৃতিপ্রেমিক: সেকেন্দার ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমিক মানুষ, তাই সিন্ধু নদের তীরে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যাবেলা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের কথা জানিয়েছেন। তিনি সেলুকসকে বলেছেন-
 
সত্য সেলুকস! কী বিচিত্র এই দেশ।
 
২. দুঃসাহসী যোদ্ধা: সুদূর ম্যাসিডন থেকে ঝড়ের গতিতে তিনি অর্ধেক এশিয়া জয় করে নিয়েছিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় গ্রিক বীর সেকেন্দার ছিলেন অপরাজেয়।
 
৩. যোগ্যকে সম্মান: গ্রিক বীর সেকেন্দার পুরুর বীরত্ব দেখে চমকে উঠেছিলেন। তিনি সেলুকসকে বলেছেন-
 
আমি তৎক্ষণাৎ তাঁকে তাঁর রাজ্য প্রত্যর্পণ করলাম। অনুরূপে তিনি চন্দ্রগুপ্তের বীরত্ব দেখেও মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁকেও আশীর্বাদ করেছিলেন।
 
৪. ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা: গ্রিক বীর সেকেন্দার অনুভব করেছিলেন ভারতবর্ষে যোগ্য বীরের অভাব নেই। তার প্রমাণ-চন্দ্রগুপ্ত পরবর্তীকালে প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষের অধীশ্বর হয়েছিলেন। এভাবে সেকেন্দার চরিত্রটি আমাদের অভিভূত করে।
 
👉Online MCQs Test
👉Download Books PDF
👉Paid Answer (For Membership User)

উত্তর পেতে সদস্যপদ প্রয়োজন

Editing by:- Lipi Medhi