Chapter 8
-----------
১.১ মধুসূদন দত্ত কোন্ কলেজের ছাত্র ছিলেন?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত হিন্দু কলেজের ছাত্র ছিলেন।
১.২ 'পদ্মাবতী' নাটকে তিনি কোন্ ছন্দ ব্যবহার করেছিলেন?
উত্তর: কবি মধুসূদন দত্ত তাঁর 'পদ্মাবতী' নাটকে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছিলেন।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:
২.১ মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর 'প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু' গৌরদাস বসাককে কোথা থেকে পাঠ্য চিঠিটি লিখেছিলেন? তাঁর যাত্রাপথের বিবরণ পত্রটিতে কীভাবে ধরা পড়েছে আলোচনা করো।
উত্তর: প্রথমাংশ: মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর 'প্রিয় ও পুরাতন বন্ধু' গৌরদাস বসাককে ইংল্যান্ড যাত্রাকালে 'সীলোন' নামক জাহাজ থেকে পাঠ্য চিঠিটি লিখেছিলেন।
দ্বিতীয়াংশ: 'সিলোন' নামক জাহাজটি অত্যন্ত বিলাসবহুল ও জাঁকজমকপূর্ণ। লেখক বাইশ দিন আগে কলকাতা থেকে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এই পত্র লেখার সময় তিনি ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে চলেছিলেন। দূরে উত্তর আফ্রিকার পর্বতাকীর্ণ উপকূল দেখা যাচ্ছিল। মধুসূদন জানিয়েছেন-
ক। তিনি যখন স্পেনের উপকূল ছাড়িয়ে জিব্রালটারের দিকে চলেছিলেন, তখন সমুদ্র ছিল শান্ত।
খ। চিঠিতে মধুসূদন জানিয়েছেন, গৌরদাস ধারণা করতে পারবেন না 'সমুদ্র আজ কতটা শান্ত'। মধুসূদনের মনে হয়েছে এই সমুদ্র যেন 'আমাদের হুগলি নদীটির মতো'।
মধুসূদনের ইচ্ছা ছিল এই যাত্রাপথের একটি অসাধারণ বিবরণ প্রকাশ করবেন 'ইন্ডিয়ান ফিল্ড' পত্রিকায়।
২.২ মধুসূদনের জীবনের উচ্চাশার স্বপ্ন কীভাবে পত্রটিতে প্রতিভাসিত হয়ে উঠেছে?
উত্তর: মধুসূদন জীবিকানির্বাহের জন্য পেশার খোঁজে ইংল্যান্ড পাড়ি দিয়েছিলেন। নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। তাই বন্ধুদের চিঠিলেখার মতো সামান্যতম সময়টুকুও নষ্ট করতে চাননি। বরং মনস্কামনা পূরণ ও সম্মান অর্জনের জন্য তিনি ছিলেন একাগ্রচিত্ত এবং দৃঢ়সংকল্প।
এভাবে সিলোন জাহাজে চেপে সুদূর ইংল্যান্ডে পাড়ি দেওয়ার সময় মধুসূদন তাঁর স্বপ্ন ও সাধনার কথা লিখেছেন গৌরদাস বসাককে। পড়াশোনায় মন দিতে গিয়ে প্রিয় বন্ধুকে বিস্তারিতভাবে চিঠি লিখতে না পারলেও মধুসূদন কথা দিয়েছেন সে বিষয়ে পড়ে তিনি লিখবেন। এখন তিনি জীবিকানির্বাহের জন্য মনোনিবেশ করবেন বলে দৃঢ়সংকল্প। আসলে মিলটনের মতো মহাকবি হওয়ার স্বপ্ন মনের মধ্যে লালন করেছিলেন বলে স্বজন-স্বজাতি-স্বদেশকে ত্যাগ করেছিলেন। গৌরদাস বসাককে লেখা এই চিঠিতে মধুসূদনের উচ্চাশার স্বপ্ন প্রতিভাসিত হয়ে উঠেছে।
২.৩ বিদেশে পাড়ি জমানোর সময়েও তাঁর নিজের দেশের কথা কীভাবে পত্রলেখকের মনে এসেছে?
উত্তর: পত্রলেখক মাইকেল মধুসূদন দত্ত মাত্র বাইশ দিন আগে কলকাতা থেকে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের পথে পা বাড়িয়েও তিনি নিজ দেশের বন্ধুগোষ্ঠীর মধুর সাহচর্য ভুলতে পারেননি। তাই প্রিয় বন্ধু গৌরদাস বসাককে পত্র লিখেছেন। বন্ধু হরির সংবাদ জানতে চেয়েছেন, বন্ধুগোষ্ঠীর সাহচর্যহীনতায় ব্যথিত হয়ে দেশীয় লোকেদের নিয়ে জাহাজের মধ্যেই গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার মনস্কামনা ব্যক্ত করেছেন।
এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে-
ক। স্বদেশের জন্যে মধুসূদন কতখানি ব্যাকুল ছিলেন।
খ। স্বদেশবাসীর প্রতি ছিল তাঁর গভীর মমত্ববোধ।
গ। বিদেশে সমুদ্রের বুকে ভাসতে ভাসতে তাঁর বারবার মনে পড়েছে শান্ত, সুন্দর হুগলি নদীটির কথা।
ঘ। বিদেশে পরিবেশ প্রসঙ্গে তাঁর মনে পড়েছে নিজের দেশের নভেম্বর মাসের কথা।
আসলে বারবার কবির মানসলোকে স্বভূমি সশ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে এবং 'ইন্ডিয়ান ফিল্ড' পত্রিকায় সুদীর্ঘ ও বিস্তারিত একটি ভ্রমণ কাহিনি লেখার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।
২.৪ ...'একথা যেন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।'- কোন্ কথা? সে-কথাকে বক্তার অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে কেন?
উত্তর: প্রথমাংশ: কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'চিঠি'-তে ইংল্যান্ড সফরের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার কথা পত্রলেখক বিশ্বাস করতে পারছেন না।
দ্বিতীয়াংশ: মধুসূদন শৈশবকাল থেকে ইংল্যান্ড সফরের কথা চিন্তা করে এসেছেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার মতো চরম মূল্যও তিনি সেজন্য দিয়েছেন। সেই দীর্ঘদিনের মনস্কামনা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। তিনি 'সিলোন' জাহাজে চেপে ভূমধ্যসাগরের বিস্তীর্ণ জলের ওপর দিয়ে ইংল্যান্ডের দিকে চলেছেন। তাই বিচিত্র অভিজ্ঞতা এবং আবেগের আতিশয্যে কবি বাস্তবকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। এজন্য গৌরদাস বসাককে অত্যন্ত আপ্লুত হয়ে মধুসূদন এই বক্তব্যটি লিখেছেন।
২.৫ প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে হৃদ্যতার ছবি পত্রটিতে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতিসহ আলোচনা করো।
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংল্যান্ড সফরের স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও প্রিয় বন্ধু গৌরদাস বসাককে ভুলে যাননি। সুযোগ
পেতেই দুস্তর অভিজ্ঞতার সংবাদ জানিয়ে চিঠি লিখতে বসেছেন এবং ভবিষ্যতে ইংল্যান্ড অভিযানের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়ে চিঠি লেখার সংকল্পের কথাও জানিয়েছেন।
'ইন্ডিয়ান ফিল্ড'-এ যে ভ্রমণকাহিনি লিখবেন তা যাতে বন্ধুর কাছে পৌঁছায় সেজন্যও সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। গৌরদাসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এতটাই গভীর যে, তিনি নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভালোলাগা সমস্ত কিছুই ভাগ করে নিয়েছেন। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে হৃদ্যতার ভাবটি ফুটে উঠেছে এই ধরনের উক্তিতে- 'তখন তুমি তোমার প্রাণ উজাড় করে আমাকে অনবরত পত্রাঘাত করতে পারবে।' কিংবা এই ধরনের সম্বোধন- 'বৎস', 'ধৈর্য ধরো বন্ধু', 'ধারণ করো ধৈর্য', 'হে বন্ধু', 'তোমার অকৃত্রিম ও আন্তরিক ও চির স্নেহমুগ্ধ'।
এই নিবিড় বন্ধুসূচক সম্বোধনগুলি প্রমাণ করে গৌরদাস বসাক কতখানি তাঁর অন্তরঙ্গ ছিলেন।
২.৬ রাজনারায়ণ বসুকে লেখা পত্রে লেখক তাঁর এই প্রিয় বন্ধুটির কাছে কোন্ আবেদন জানিয়েছেন?
উত্তর: রাজনারায়ণ বসুকে লেখা 'চিঠি' নামাঙ্কিত পত্রে মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর 'মেঘনাদবধ কাব্য'-এর মেঘনাদ সম্পর্কে নিজস্ব মতামত জানাবার জন্যে অন্তরঙ্গ এই বন্ধুর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মধুসূদনের জীবদ্দশায় এই কাব্য এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে অনেকে তাঁর কাব্যকে মিলটন, ভার্জিন, কালিদাস এমনকি তাসোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। হাজার হাজার মানুষের জয়ধ্বনি অপেক্ষা রাজনারায়ণ বসুর অভিমত যে কবির কাছে অধিক নির্ভরযোগ্য সেই আস্থাও তিনি পত্রে প্রকাশ করেছেন। মধুসূদন লিখেছেন-
তোমার যা মনে হয়েছে তুমি তা লিখে জানাবেই। এ রকম হাজার-হাজার মানুষের জয়ধ্বনির চেয়ে তোমার অভিমত অনেক নির্ভরযোগ্য।
অশেষ বিদ্যানুরাগী রাজনারায়ণ কাব্য আস্বাদন করে যে অনুভূতির কথা ব্যক্ত করতে পারবেন, সেটাই হবে 'মেঘনাদবধ কাব্য'-এর প্রকৃত পাঠপ্রতিক্রিয়া।
২.৭ 'এই কাব্য অদ্ভুতরকম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।'- কোন্ কাব্যের কথা বলা হয়েছে? সে কাব্যের জনপ্রিয়তার কথা বলতে গিয়ে লেখক কোন্ কোন্ প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন?
উত্তর: প্রথমাংশ: কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রণীত 'চিঠি' নামাঙ্কিত পত্রে মাইকেল মধুসূদন দত্ত রাজনারায়ণ বসুকে 'মেঘনাদবধ কাব্য'-এর কথা বলেছেন।
দ্বিতীয়াংশ: 'মেঘনাদবধ কাব্য'টি তৎকালীন পাঠক সমাজে অদ্ভুত রকম জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কেউ কাব্যটিকে মিলটনের 'প্যারাডাইস লস্ট' অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর বলে মন্তব্য করেছেন। আবার কেউ কবির কাব্যপ্রতিভাকে কালিদাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেক মহিলা পাঠক কাব্যটির করুণরসে বিগলিত হয়ে অশ্রুবিসর্জন করেছেন বলেও কবি জ্ঞাত হয়েছেন।
মধুসূদন অবশ্য মনে করেন, 'মিলটনের চেয়ে উৎকৃষ্টতর হতে পারে না কোনোকিছুই।' বরং তাঁর মনে হয়েছে 'মেঘনাদবধ কাব্য' অবশ্যই 'কালিদাসের কাছাকাছি'। তাঁর তৃতীয় অভিমত 'ভার্জিল, কালিদাস বা তাসো'র সমতুল্য হওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। এইভাবেই এই কাব্যের জনপ্রিয়তার কথা বলতে গিয়ে কবি নানা প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন।
২.৮ প্রিয় বন্ধুর প্রতি, সর্বোপরি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগের যে পরিচয় রাজনারায়ণ বসুর লেখা পত্রটিতে পাওয়া যায়, তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রণীত 'চিঠি' নামাঙ্কিত পত্রে একাধিকবার মধুসূদন তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু রাজনারায়ণের কাব্যচর্চাকে সম্মান দিয়েছেন। তাঁর মনে হয়েছে এই বন্ধুটিই পারবেন তাঁর নির্মাণের যথাযোগ্য কদর দিতে। আসলে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রাজনারায়ণ বসুর একজন শ্রেষ্ঠ অনুরাগী। রাজনারায়ণ বসুর কাব্যচর্চার প্রতি কবির গভীর আস্থা ছিল। সেই আস্থা থেকেই তিনি নিজের সবথেকে জনপ্রিয় 'মেঘনাদবধ কাব্য' সম্পর্কে তাঁর অভিমত জানতে চেয়েছেন এবং উত্তরের আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন হাজার হাজার মানুষের জয়ধ্বনি অপেক্ষা রাজনারায়ণবাবুর বিশ্লেষণ তাঁর কাছে অধিক নির্ভরযোগ্য। কেননা-
ক। ইতিমধ্যে পাঠক-পাঠকেরা তাঁকে মিলটনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি নিজে অবশ্য মনে করেন 'মিলটনের চেয়ে উৎকৃষ্টতর হতে পারে না কোনোকিছুই'।
খ। অনেকে বলেছেন এই কাব্য কালিদাসের কাছাকাছি, কবি একথায় আপত্তি করেননি।
গ। অনেকে আবার কবিকে ভার্জিল, তাসো প্রমুখের সমতুল্য মনে করায় কবি তাঁদের বক্তব্যকে অস্বীকার করেননি।
তবু তাঁর মনে হয়েছিল রাজনারায়ণই তাঁর সম্পর্কে সঠিক কথা বলতে পারবেন। কেননা, কবি আন্তরিকভাবে রাজনারায়ণের 'সর্বশ্রেষ্ঠ অনুরাগী'।
২.৯ 'ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ৩ নভেম্বর ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে লেখা মধুসূদনের চিঠিটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: মাইকেল মধুসদন দত্ত ১৮৬৪, নভেম্বর মাসের ৩ তারিখে ফ্রান্সের ভার্সাই থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে চিঠিটি লিখেছেন।
বিদ্যাসাগরের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা, তাই নিজ সম্পত্তির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তিনি তাঁর উপর অর্পণ করে বিদেশে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছেন। বিদ্যাসাগরের প্রতি তাঁর ভক্তির পরিচয় পাওয়া যায় যখন তিনি বাধ্য ছাত্রের ন্যায় জানান- 'আপনি মনে করবেন না যে, আমি এখানে অলসভাবে দিন কাটাচ্ছি।' কবি যে ফ্রেঞ্চ, ইটালিয়ান প্রায় রপ্ত করে ফেলেছেন এবং শিক্ষক ছাড়াই জার্মান ভাষা চর্চা শুরু করেছেন সেই তথ্য অবহিত করেন। ভারতবর্ষ অপেক্ষা ইউরোপে শীতের প্রাবল্য সম্পর্কেও নানা তথ্য প্রদান করেন।
মধুসূদন বিশেষ বিশ্বাস রাখতেন বিদ্যাসাগরের ওপরে। কেননা, বিদ্যাসাগরের অফুরন্ত দানেই তিনি বাংলা সাহিত্য জগতে নিজের প্রতিষ্ঠাকে সুনিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। এজন্যে আমরা দেখি বিদ্যাসাগরকে লেখা পত্রটিতে মধুসূদন বারবার তাঁর বিদ্যাচর্চার প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন।
২.১০ বিদ্যাসাগরকে লেখা পত্রটিতে মধুসূদনের জীবনে তাঁর ভূমিকার যে আভাস মেলে, তা বিশদভাবে আলোচনা করো।
উত্তর: কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রণীত 'চিঠি' নামাঙ্কিত পত্রে সুস্পষ্টভাবে না হলেও মধুসূদন যে বিদ্যাসাগরের কাছে বিশেষভাবে ঋণী তার আভাস ৩ নভেম্বর ১৮৬৪ সালে ফ্রান্সের ভার্সাই থেকে - লেখা চিঠিটি তারই প্রমাণ। একদা মধুসূদনের বিষয়-সম্পত্তি সমস্তই বেদখল হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। বিদ্যাসাগর উদ্যোগী হয়ে - মধুসূদনকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন। পুনরায় যাতে ঝঞ্ঝা উপস্থিত না হয় তাই বিষয়-আশয় তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তিনি বিদ্যাসাগরকেই - দিতে চেয়েছেন এবং তিনি যাতে ভুল না বোঝেন তাই লন্ডন - অভিযানের কারণ পূর্ব চিঠিতে মাইকেল বিস্তৃতভাবে জানিয়েছেন।
এই চিঠির শেষাংশে মধুসূদন লিখেছেন-
হে প্রিয় বন্ধু, আপনি মনে করবেন না যে, আমি এখানে অলসভাবে দিন কাটাচ্ছি।
তিনি যে অলসভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন না তার প্রমাণ-
ক। তিনি ফ্রেঞ্চ, ইটালিয়ান প্রায় রপ্ত করে ফেলেছিলেন।
খ। মাইনে করা কোনো শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই জার্মানি ভাষা চর্চা করেছিলেন।
বিদ্যাসাগরকে লেখা এই পত্রটিতে মধুসূদনের জীবনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা যে আভাস পাওয়া যায় তা আমাদের মুগ্ধ করে।
উত্তর পেতে সদস্যপদ প্রয়োজন