Chapter 1
পৃথিবীর অন্দরমহল
-------------------
[MCQs]
1. পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ হল- (ব্যাঁটরা মধুসূদন পালচৌধুরী হাইস্কুল)
(a) 6,720 কিমি.
(b) 6,370 কিমি.
(c) 6,470 কিমি.
(d) 6,520 কিমি.
উত্তর: (b) 6,370 কিমি.।
2. পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা-
(a) 10° সে.
(b) 12° সে.
(c) 15° সে.
(d) 20° সে.
উত্তর: (c) 15° সে.।
3. ভূত্বকের গড় গভীরতা প্রায়-
(a) 5 কিমি.
(b) 30 কিমি.
(c) 40 কিমি.
(d) 60 কিমি.
উত্তর: (b) 30 কিমি.।
4. পৃথিবীর গড় ঘনত্ব- (অকুরমণি করোনেশন ইনস্টিটিউশন মালদা)
(a) 5.05 প্রতি ঘনসেমিতে
(b) 5.50 প্রতি ঘনসেমিতে
(c) 5.5 প্রতি ঘনসেমিতে
(d) 65.5 প্রতি ঘনসেমিতে
উত্তর: (b) 5.50 প্রতি ঘনসেমিতে।
5. পৃথিবীর বয়স প্রায়-
(a) 100 কোটি বছর
(b) 400 কোটি বছর
(c) 450 কোটি বছর
(d) 460 কোটি বছর
উত্তর: (d) 460 কোটি বছর।
6. সকল প্রকার মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গতিশীল ভূকম্পীয় তরঙ্গটি হল-
(a) 'P' তরঙ্গ
(b) 'S' তরঙ্গ
(c) 'L' তরঙ্গ
(d) 'A' তরঙ্গ
উত্তর: (a) 'P' তরঙ্গ।
7. গুরুমণ্ডলের গড় উদ্বুতা প্রায়-
(a) 2,000°-3,000° সে.
(b) 3,000°-4,000° সে.
(c) 1,000°-2,000° সে.
(d) 1,500°-2,000° সে.
উত্তর: (a) 2,000°-3,000° সে.।
৪. মহাদেশীয় ভূভাগের তলদেশের প্রায় সব অংশেই আছে-
(a) ব্যাসল্ট
(b) গ্রানাইট
(c) ডলোমাইট
(d) কয়লা
উত্তর: (b) গ্রানাইট।
9. পৃথিবীর গভীরতম খনি রবিনসন ডিপ অবস্থিত-
(a) দক্ষিণ আফ্রিকা
(b) উত্তর আমেরিকা
(c) এশিয়া
(d) অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থিত
উত্তর: (d) দক্ষিণ আফ্রিকাতে অবস্থিত।
10. পৃথিবীর মোট আয়তনের গুরুমণ্ডল অধিকার করে আছে প্রায়-
(a) 70%
(b) 80%
(c) 84%
(d) 94%
উত্তর: (c) 84%।
11. কেন্দ্রমণ্ডলের প্রধান উপাদানগুলি হল-
(a) সোনা ও লোহা
(b) লোহা ও নিকেল
(c) লোহা ও ক্রোমিয়াম
(d) লোহা ও ম্যাগনেশিয়াম
উত্তর: (b) লোহা ও নিকেল।
12. অক্সিজেন ভূত্বকের কত শতাংশ স্থান জুড়ে আছে?
(a) 84%
(b) 45%
(c) 46%
(d) 47%
উত্তর: (d) 47%।
13. ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত অর্ধতরল পদার্থসমূহকে বলে-
(a) লাভা
(b) ম্যাগমা
(c) অগ্ন্যুৎপাত
(d) উয় প্রস্রবণ
উত্তর: (b) ম্যাগমা।
14. পৃথিবীর চৌম্বকত্ব সৃষ্টিকারী ভূঅভ্যন্তরের স্তরটি-
(a) কেন্দ্রমণ্ডল
(b) গুরুমণ্ডল
(c) ভূত্বক
(d) শিলামণ্ডল
উত্তর: (a) কেন্দ্রমণ্ডল।
15. ভূমিকম্পের যে তরঙ্গের প্রভাব সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক হয়, তা হল-
(a) 'A' Wave
(b) 'P' Wave
(c) 'S' Wave
(d) 'L' Wave
উত্তর: (d) 'L' Wave
16. পৃথিবীর গভীরতম কৃত্রিম গর্ত অবস্থিত-
(a) রাশিয়াতে
(b) দক্ষিণ আফ্রিকাতে
(c) পাকিস্তানে
(d) ভারতে
উত্তর: (a) রাশিয়াতে।
17. ভূত্বকের সিলিকা ও অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ স্তরকে বলে-
(a) সিমা
(b) সিয়াল
(c) ক্লোফেসিমা
(d) নিফেসিমা
উত্তর: (b) সিয়াল।
18. চাপ বাড়লে পদার্থের ঘনত্ব (সালসাবাড়ি মডেল হাইস্কুল)
(a) বাড়ে
(b) কমে
(c) একই থাকে
(d) অল্প কমে
উত্তর: (a) বাড়ে।
19. ভৌমজল মূলত পাওয়া যায়-
(a) কেন্দ্রমণ্ডলে
(b) গুরুমণ্ডলে
(c) শিলামণ্ডলে
(d) বায়ুমণ্ডলে
উত্তর: (c) শিলামণ্ডলে।
20. 'P' তরঙ্গের গতিবেগ সর্বাধিক-
(a) ব্যাসল্ট শিলাস্তরে
(b) বেলেপাথর স্তরে
(c) কাদাপাথর স্তরে
(d) চুনাপাথর স্তরে
উত্তর: (a) ব্যাসল্ট শিলাস্তরে।
21. পৃথিবীর গুরুমণ্ডলের ঘনত্ব প্রায়-
(a) 2.5-2.7 গ্রাম/ঘন সেমি.
(b) 9.5-10 গ্রাম/ঘন সেমি.
(c) 6.5-7.0 গ্রাম/ঘন সেমি.
(d) 3.4-5.6 গ্রাম/ঘন সেমি.
উত্তর: (d) 3.4-5.6 গ্রাম/ঘন সেমি.।
22. ভূত্বকের সিয়াল স্তরের প্রধান শিলা-
(a) ব্যাসল্ট
(b) গ্রানাইট
(c) চুনাপাথর
(d) বেলেপাথর
উত্তর: (b) গ্রানাইট।
23. উয় প্রস্রবণের জল গরম হয়-
(a) ভূতাপ শক্তির জন্য
(b) সূর্যের আলোর থেকে তাপ গ্রহণ করে
(c) সরাসরি লাভার সংস্পর্শে
(d) ভূঅভ্যন্তরের চাপ বৃদ্ধির জন্য
উত্তর: (a) ভূতাপ শক্তির জন্য।
24. পৃথিবীর গভীরে মানুষ সশরীরে যতটা আজ অবধি পৌঁছোতে পেরেছে তা পৃথিবীর মোট গভীরতার
(a) দশ শতাংশ
(b) দুই শতাংশ
(c) পাঁচ শতাংশ
(d) এক শতাংশও নয়
উত্তর: (d) এক শতাংশও নয়।
25. এদের মধ্যে সবচেয়ে পুরু স্তরটি হল- (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)
(a) সিয়াল
(b) সিমা
(c) গুরুমণ্ডল
(d) কেন্দ্রমণ্ডল।
উত্তর: (d) কেন্দ্রমণ্ডল।
26. ভূত্বকের- শতাংশ জুড়ে আছে অক্সিজেন।
(a) 40
(b) 45
(c) 47
(d) 501
উত্তর: (c) 47।
Long Answer Question
প্রশ্ন 1: ভূত্বক কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: সংজ্ঞা: পৃথিবীর সবচেয়ে উপরের শক্ত, শিলাময়, কঠিন, ভার ও হালকা বহিরাবরণকে ভূত্বক (Earth's Crust) বলে।
বৈশিষ্ট্য:
1. গভীরতা: ভূত্বকের গভীরতা সর্বত্র সমান নয়। এর গড় গভীরতা প্রায় 30 কিমি.। মহাদেশীয় ভূত্বক অপেক্ষাকৃত পুরু, যার গড় গভীরতা 60 কিমি. এবং মহাসাগরীয় ভূত্বক পাতলা, যার গভীরতা 5-7 কিমি.।
2. ঘনত্ব: মহাদেশীয় ভূত্বকের ঘনত্ব প্রায় 2.65-2.85 গ্রাম/ঘন সেমি.। মহাসাগরীয় ভূত্বকের ঘনত্ব প্রায় 2.87 থেকে 3.0 গ্রাম/ঘন সেমি.।
3. উপস্তর: ভূত্বক প্রধানত দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত। যথা- (a) মহাদেশীয় ভূত্বক বা সায়াল এবং (b) মহাসাগরীয় ভূত্বক বা সাইমা।
4. উপাদান: ভূত্বকের মহাদেশীয় অংশ সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম (S + Al = SiAl) এবং মহাসাগরীয় অংশ সিলিকন ও ম্যাগনেশিয়াম) (Si + Ma = SiMa) দিয়ে গঠিত। ভূত্বক গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান হল অক্সিজেন (47%)।
5. শিলা: মহাদেশীয় ভূত্বক প্রধানত গ্রানাইট ও ডায়োরাইট (আম্লিক) এবং মহাসাগরীয় ভূত্বক ব্যাসল্ট ও গ্যাব্রো (ক্ষারীয়) দ্বারা গঠিত।
6. ওজন: মহাদেশীয় ভূত্বকের বা ভর অপেক্ষাকৃত বেশি।
7. বিযুক্তিতল: (a) সায়াল ও সাইমা একে অপরের থেকে কনরাড বিযুক্তিতল দ্বারা বিচ্ছিন্ন আছে। (চ) ভূত্বক ও গুরুমণ্ডল মোহোরোভিসিক বিযুক্তিতল দ্বারা বিচ্ছিন্ন আছে।
প্রশ্ন 2: ভূমিকম্পের 'P', 'S' ও 'L' তরঙ্গ বলতে কী বোঝো?
উত্তর : ভূমিকম্পের 'P', 'S' 'ও 'L' তরঙ্গ : (i) 'P' তরঙ্গ: যে ভূকম্পন-তরঙ্গ ভূমিকম্পের কেন্দ্রে (Focus) উৎপন্ন হয়ে ভূঅভ্যন্তরের সবধরনের (তরল, কঠিন, বায়বীয়) মাধ্যমের ভিতর দিয়ে বিভিন্ন গতিতে সর্বপ্রথম ভূপৃষ্ঠের উপকেন্দ্রে (Epicentre) এসে পৌঁছায়, তাকে 'P' তরঙ্গ বা Primal Wave বলে। এটি সর্বাধিক দ্রুতগতিসম্পন্ন তরঙ্গ। এর গতিবেগ প্রায় 5-14 কিমি./সেকেন্ড।
(ii) 'S' তরঙ্গ: P ভূকম্পীয় তরঙ্গের পর ভূমিকম্প কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন হয়ে ভূঅভ্যন্তরে কেবলমাত্র কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়, তাকে 'S' বা 'Secondary Wave' বা মাধ্যমিক তরঙ্গ বা গৌণ তরঙ্গ বলে। এর গতিবেগ প্রায় 3.5-7.2 কিমি./সেকেন্ড।
(iii) 'L' তরঙ্গ: যে ভূকম্পন-তরঙ্গ ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র থেকে কেবলমাত্র কঠিন ভূত্বকের মধ্য দিয়ে ধীর গতিতে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ দিয়ে প্রসারিত হয়, তাকে 'L' তরঙ্গ বা Lateral Wave বলে। উল্লেখ্য, 'L' তরঙ্গ সবচেয়ে ধীরগতিসম্পন্ন, তবে সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক তরঙ্গ। এর গতিবেগ প্রায় 3.5-5 কিমি./সেকেন্ড।
প্রশ্ন 3: গুরুমণ্ডল কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: সংজ্ঞা: ভূঅভ্যন্তরে অবস্থিত মোহোরোভিসিক বিযুক্তিরেখা থেকে গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা পর্যন্ত অংশটিকে গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য:
1. অবস্থান: শিলামণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যবর্তী অংশ।
2. বিস্তার: প্রায় 2,900 কিমি.।
3. ঘনত্ব: 3.4-5.6 গ্রাম/ঘন সেমি.।
4. উন্নতা: 2000° সে.-3000° সে.।
5. উপাদান: লোহা, নিকেল, ক্রোমিয়াম, ম্য়াগনেশিয়াম, সিলিকন প্রভৃতি।
6. উপস্তর বা শ্রেণিবিভাগ: ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের ভিত্তিত্বে গুরুমণ্ডলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) বহিঃগুরুমণ্ডল এবং (খ) অন্তঃগুরুমণ্ডল।
(ক) বহিঃগুরুমণ্ডল: (a) গভীরতা = 30/33 কিমি. থেকে 700 কিমি., (b) উপাদান = ক্রোমিয়াম (Cr), লোহা (Fe), সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেশিয়াম (Mg)। একে বলে ক্লোফেসিমা।
(খ) অন্তঃগুরুমণ্ডল: (a) গভীরতা = 700 কিমি. থেকে 2,900 কিমি., (b) উপাদান = নিকেল (Ni), লোহা (Fe), সিলিকন (S) ও ম্যাগনেশিয়াম (Mg)। একে বলে নিফেসিমা।
7. বহিরাবরণ: গুরুমণ্ডলের চারপাশে অর্ধতরল স্তর বেষ্টন করে আছে, তাকে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার বলে।
৪. বিযুক্তিরেখা: (a) শিলামণ্ডল ও গুরুমণ্ডলের মাঝে মোহোরোভিসিক বিযুক্তিরেখা, (৮) গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের মাঝে গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা এবং বহিঃগুরুমণ্ডল ও অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলের মাঝে রেপিত্তি বিযুক্তিরেখা অবস্থান করছে।
প্রশ্ন 4: পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল (Core) সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। অথবা, কেন্দ্রমণ্ডলের উপাদান লেখো।
উত্তর: সংজ্ঞা: পৃথিবীর কেন্দ্রের চারপাশে প্রবল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে লোহা, নিকেল, পারদ, সীসা প্রভৃতি ভারী ও অধিক ঘনত্বযুক্ত পদার্থ সঞ্চিত হয়ে যে সর্বাধিক উন্নতম ভূস্তরটি সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কেন্দ্রমণ্ডল (Core) বলে।
বৈশিষ্ট্য:
1. অবস্থান: পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল।
2. বিস্তার: প্রায় 3470 কিমি.।
3. শ্রেণিবিভাগ: (a) অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল (5,100 কিমি.-6,370 কিমি.) (b) বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল (2,900 কিমি.-5,100 কিমি.)
4. অপর নাম: 'নিফে' (NiFe)। উপাদানে গঠিত। নিকেল (NL), ফেরাস (Fe)
5. ঘনত্ব: 9.1-13.1 গ্রাম/ঘন সেমি.। সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত স্তর।
6. উদ্বুতা: প্রায় 5,000°-6,000° সে.।
7. আয়তন ও ভর: পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় 15% এবং ভরের প্রায় 32% অধিকার করে আছে। প্রচন্ড চাপে পদার্থগুলি কঠিন অবস্থায় আছে।
৪. গঠনকারী পদার্থ: ঘন ও ভারী খনিজ অর্ধতরল পদার্থ [নিকেল (Ni) ও লোহা (Fe) বা নিফে (NIFE)] দ্বারা গঠিত।
9.বিযুক্তিরেখা: (a) কেন্দ্রমণ্ডলকে গুরুমণ্ডল থেকে আলাদা করেছে গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা। (b) বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল ও অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলকে পৃথক করে রেখেছে লেহম্যান বিযুক্তিরেখা।
প্রশ্ন 5: শিলামণ্ডল বা অশ্মমণ্ডলের (Lithosphere) সংজ্ঞা দাও। এবং এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: সংজ্ঞা: গুরুমণ্ডলের উপরিভাগে পৃথিবীর সবচেয়ে কম ঘনত্বের লঘু শিলা দ্বারা গঠিত শক্ত অথচ ভঙ্গুর স্তরটিকে শিলামণ্ডল বা অশ্মমণ্ডল বলা হয়। এককথায়, ভূত্বক থেকে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত অংশটি হল শিলামণ্ডল বা অশ্মমণ্ডল।
> বৈশিষ্ট্য:
1. বিস্তার: গড় বিস্তার প্রায় 130-150 কিমি.।
2. শ্রেণিবিভাগ: প্রকৃতিগত দিক থেকে শিলামণ্ডল বা অশ্মমণ্ডলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল- (i) ভূত্বক (Earth's Crust) ও (ii) ক্ষুব্ধমণ্ডল (Asthenosphere)। উল্লেখ্য, ভূত্বক আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা-(a) সিয়াল/সায়াল ও (b) সিমা বা সাইমা।
3. খনিজ উপাদান: সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সামান্য পরিমাণে লোহা, ক্যালশিয়াম প্রভৃতি।
4. শিলা: গ্রানাইট, গ্যাব্রো, ব্যাসল্ট ও ডোলেরাইট প্রভৃতি।
5. ঘনত্ব: গড় ঘনত্ব প্রায় 2.9 গ্রাম/ঘন সে.মি.।
6. প্রভাব: শিলা থেকে তৈরি ইট দিয়ে বাড়ি নির্মাণ, পাললিক শিলাজাত মাটিতে কৃষিকাজ করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন 6: পৃথিবী পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যদি 15° সে. হয় তাহলে অঙ্কের হিসেবে রবিনসন ডীপের সোনার খনির শ্রমিকদের কত গরম সহ্য করতে হয়?
উত্তর: আমরা জানি, ভূ অভ্যন্তরে প্রতি 33 মিটার গভীরতা বৃদ্ধি পেলে 1 deg সে. উন্নতা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় উয়তা 15 deg সে.। আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত পৃথিবীর গভীরতম স্বর্ণখনি রবিনসন ডীপের গভীরতা 3-4 কিমি.। সেজন্য অঙ্কের হিসেবে রবিনসন ডীপের স্বর্ণখনিতে কর্মরত শ্রমিকদের 106°-136 সে. উদ্বুতার গরম সহ্য করতে হয়।
(সূত্র: ঐকিক নিয়ম)
33 মিটার গভীরতা বৃদ্ধি পেলে তাপমাত্রা 1° সে. বৃদ্ধি পায়।
1 মিটার গভীরতা বৃদ্ধি পেলে তাপমাত্রাসে. বৃদ্ধি পায়। 133° সে. বৃদ্ধি পায়।
3 কিমি বা 3০০০ মি. গভীরতা বৃদ্ধি পেলে তাপমাত্রা
133 3০০০ সে. বৃদ্ধি পায়
= 90.9° সে. + 15° (ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা) সে.
= 105.9° সে. + 15° সে.
= 121° সে. (প্রায়) বৃদ্ধি পায়।
Short Answer Question
প্রশ্ন 1: ঘনত্ব (Density) বলতে কী বোঝো?
উত্তর: একক আয়তনে পদার্থের যতটুকু ভর আছে, তার পরিমাপকে সেই পদার্থের ঘনত্ব বলে। অর্থাৎ প্রতি ঘনসেমি. জায়গায় কোনো পদার্থের ভর কতটা সেটাই হল সেই পদার্থের ঘনত্ব। উল্লেখ্য, পদার্থের ঘনত্বের মাধ্যমে পদার্থের অণু পরমাণুগুলির মধ্যে ব্যবধানের ধারণা করা যায়। যেমন-অণু পরমাণুগুলি কাছাকাছি থাকলে ঘনত্ব বেশি হয়, উদাহরণ-লোহা। আর পদার্থটির অণু পরমাণুগুলি দূরে দূরে থাকলে আর ঘনত্ব কম হবে, উদাহরণ-অভ্র।
প্রশ্ন 2: লাভা (Lava) কী?
উত্তর: ভূঅভ্যন্তর থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসা উত্তপ্ত ও গলিত অর্ধতরল সিলিকেট পূর্ণ পদার্থকে লাভা বলে। উল্লেখ্য, লাভার মধ্যে উদ্বায়ী পদার্থ ও জলীয় বাষ্প থাকে না।
প্রশ্ন 3: ভূতাপ (Geo-thermal) কী? (বর্ধমান রাজ কলেজিয়েট স্কুল)
উত্তর: ভূগর্ভের সুবিশাল ম্যাগমা চেম্বার থেকে ভূপৃষ্ঠের দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরের দিকে যে তাপ প্রাকৃতিক নিয়মে বেরিয়ে আসে, তাকে ভূতাপ বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূঅভ্যন্তরের দিকে প্রতি 33 মিটার গভীরতায় প্রায় 1° সে. হারে উয়তা বৃদ্ধি পায়।
প্রশ্ন 4: পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত দেখতে গেলে কত গভীর গর্ত খুঁড়তে হবে?
উত্তর: পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত দেখতে গেলে 6,370 কিমি. গভীর গর্ত খুঁড়তে হবে। কারণ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল 6,370 কিমি.। অধিক উদ্বুতা, চাপ ও সান্দ্র পদার্থের উপস্থিতির কারণে এই কাজ করা বাস্তবে একেবারেই সম্ভব নয়।
প্রশ্ন 5: উয় প্রস্রবণ (Hot Spring) কাকে বলে?
উত্তর: ফাটল বা চ্যুতি বা ছিদ্রপথের মাধ্যমে ভূঅভ্যন্তরের সংযোগে উত্তপ্ত ভৌমজল যখন স্রোতরূপে ভূপৃষ্ঠের উপর আপনাআপনি কিছুটা বেগে বেরিয়ে আসে, তখন সেই উয় জল নির্গত হওয়ার মাধ্যমকে উদ্বু প্রস্রবণ বলে। উয় প্রস্রবণ থেকে বেরিয়ে আসা জলের উয়তা স্থানীয় ভৌমজলের স্বাভাবিক উন্নতা থেকে বেশি হয়। উয় প্রস্রবণের জলের সাধারণ উয়তা 36.7° সে./98° ফারেনহাইট বা তার বেশি হয়। যেমন: পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর, হিমাচল প্রদেশের মণিকরণ প্রভৃতি উয় প্রস্রবণের উদাহরণ।
প্রশ্ন 6: বিযুক্তিরেখা (Discontinuity Line) কাকে বলে?
উত্তর: ভূঅভ্যন্তরে ভূকম্পন তরঙ্গের গতিবেগ যেখানে পরিবর্তিত হয়, সেখানে যে কাল্পনিক সীমারেখা দ্বারা ভূস্তরগুলি পৃথক আছে। তাকে বিযুক্তিরেখা বা বিযুক্তিতল (Discontinuity) বলে। এটি আসলে দুটি ভিন্ন শিলাস্তরের সংযোগ অঞ্চল।
ভূঅভ্যন্তরের গঠন, শিলার কাঠিন্য, দৃঢ়তা সর্বত্র সমান নয়। কঠিন পদার্থের মতো ভূঅভ্যন্তরের সান্দ্র বা অর্ধগলিত পদার্থের ভিতর দিয়ে ওই গতিবেগে প্রসারিত হতে পারে না। তাই ভূস্তরের উপাদানের ঘনত্ব, দৃঢ়তার হেরফের ঘটলেই তরঙ্গের গতিবেগের পরিবর্তন ঘটে।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিযুক্তিরেখা হল-
প্রশ্ন 7: ভূকম্পীয় তরঙ্গ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ভূঅভ্যন্তরে ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে সৃষ্ট কম্পন যখন তরঙ্গ আকারে ভূপৃষ্ঠের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেই তরঙ্গকে ভূকম্পীয় তরঙ্গ বলা হয়।
প্রশ্ন 8: ম্যাগমা (Magma) কী?
উত্তর: পৃথিবীর অভ্যন্তরে সঞ্চিত উত্তপ্ত গলিত বা অর্ধগলিত তরল পদার্থকে ম্যাগমা বলে। ভূগর্ভে তাপ, চাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটলে ভূগর্ভের পদার্থের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় এবং এইসব পদার্থসমূহ গলে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাস, বাষ্প ও নানান ধরনের রাসায়নিক, ধাতব ও অধাতব অর্ধতরল পদার্থের মিশ্রণ ম্যাগমার সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন 9: সিমা বা সাইমা (SIMA) কাকে বলে?
উত্তর: সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেশিয়াম (Mg) দিয়ে গঠিত অপেক্ষাকৃত ভারী মহাসাগরীয় ভূত্বককে সিমা বা সাইমা (SIMA) বলে। স্তরটি সিয়াল এর ঠিক নীচে অবস্থান করছে। এই স্তরটির গড় গভীরতা প্রায় 5 কিমি. এবং গড় ঘনত্ব প্রায় 2.9-3 গ্রাম/ঘন সেমি প্রধানত ব্যাসল্ট, রায়োলাইট, অ্যান্ডিসাইট প্রভৃতি শিলা দ্বারা স্তরটি গঠিত হয়েছে।
প্রশ্ন 10: পৃথিবীর অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ঘনত্বের পার্থক্য লক্ষ করা যায় কেন?
উত্তর: ঘনত্ব: কোনো পদার্থের একক আয়তনে (প্রতি ঘন সেমি.) ভরের পরিমাপকে ওই পদার্থের ঘনত্ব বলা হয়। ত্রিস্তরীয় পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ঘনত্বের পার্থক্য লক্ষ করা যায়, যেমন-
(i) ভূত্বকের গড় ঘনত্ব 2.6-3.3 গ্রাম/ঘন সেমি.
(ii) গুরুমণ্ডলের গড় ঘনত্ব 3.4-5.6 গ্রাম/ঘন সেমি.
(iii) কেন্দ্রমণ্ডলের গড় ঘনত্ব 9.1-13.1 গ্রাম/ঘন সেমি.
• পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরের ঘনত্বের তারতম্য বা পার্থক্যের কারণ-
(i) মাধ্যাকর্ষণ শক্তি: পৃথিবী তার জন্মের পর উত্তপ্ত গলিত তরল অবস্থা থেকে অতি ধীরে ধীরে শীতল হওয়ার সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ঘন ও ভারী উপাদানগুলি (লোহা, নিকেল) নীচের দিকে তথা কেন্দ্রের চারপাশে সঞ্চিত হয়। ভূপৃষ্ঠের দিকে ক্রমশ কম ঘনত্বযুক্ত ও হালকা পদার্থগুলি (ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি) ভেসে জমা হয়।
(ii) বিক্ষিপ্ততা ও সংঘবদ্ধতা: কোনো পদার্থের অণু ও পরমাণুগুলি যখন বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে, তখন সেই পদার্থের ঘনত্ব অত্যন্ত ঘন সন্নিবিষ্টভাবে সজ্জিত কোনো পদার্থের অণু ও পরমাণুগুলি অপেক্ষা কম হয়।
প্রশ্ন 11: পৃথিবীর কেন্দ্রের কাছে থাকা পদার্থগুলির ঘনত্ব বেশি হয় কেন?
উত্তর: পৃথিবীর সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে পৃথিবী ছিল গলিত ও জ্বলন্ত একটি গ্যাসীয় পিণ্ড। এই সময় পৃথিবী তরল অবস্থায় থাকায় পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে অপেক্ষাকৃত ভার পদার্থসমূহ (লোহা ও নিকেল) পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে থিতিয়ে পড়ে। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত হালকা পদার্থসমূহ (সিলিকা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম) উপরের দিকে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের দিকে ভেসে ওঠে। প্রধানত এই কারণের জন্যই পৃথিবীর কেন্দ্রের চারপাশে অবস্থিত পদার্থসমূহের ঘনত্ব বেশি হয়।
প্রশ্ন 12: ভারতের কোথায় কোথায় ভূ-তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে জানার চেষ্টা করো।
উত্তর: ভারতের প্রধান প্রধান ভূতাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি হল- (i) হিমাচল প্রদেশের মণিকরণ, কাসোল, (ii) লাদাখের পুগা (iii) মহারাষ্ট্রের জলগাঁও, উনাই, (iv) উত্তরাখণ্ডের তপোবন (v) গুজরাটের কাম্বে, তুয়া; (vi) ঝাড়খণ্ডের সুরজকুন্ড, রাজগীর (vii) মধ্যপ্রদেশের তাতাপানি, (viii) পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর (ix) ওড়িশার তপ্তপানি।
G. ভুল সংশোধন করো লেখো।
1. ভূত্বক প্রধানত অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা গঠিত হয়েছে।
উত্তর: ভূত্বক প্রধানত সিলিকন দ্বারা গঠিত হয়েছে।
2. সিমার গড় ঘনত্ব প্রায় 2.6 গ্রাম/ঘন সেমি.।
উত্তর: সিমার গড় ঘনত্ব প্রায় 2.9 গ্রাম/ ঘন সেমি.।
3. পৃথিবীর কেন্দ্রের উন্নতা প্রায় 4000° সে. - 4,500°সে.।
উত্তর: পৃথিবীর কেন্দ্রের উন্নতা প্রায় 5000° সে. - 6,000° সে.।
4. বহিঃগুরুমণ্ডলের অপর নাম নিফেসিমা।
উত্তর: বহি: গুরুমণ্ডলের অপর নাম ক্লোফেসিমা।
C. শূন্যস্থানে উপযুক্ত শব্দ বসাও:
1. পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডলের গড় ঘনত্ব গ্রাম/ ঘনসেমি।
উত্তর: 13-14 ।
2. ভূপৃষ্ঠে গলিত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে এলে একে বলে।
উত্তর: লাভা।
3. মহাদেশীয় ভূত্বক প্রধানত শিলা দ্বারা গঠিত।
উত্তর: গ্রানাইট।
4. অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উপাদানগুলি অবস্থায় আছে।
উত্তর: সান্দ্র।
5. সিয়াল ও সিমা স্তরের মধ্যবর্তী বিযুক্তিরেখা হল ।
উত্তর: কনরাড।
Editing by- Lipi Medhi
1. উত্তরহীন প্রশ্ন ও উত্তর সেখানে দেখা যাবে
2 বিনামূল্যে উত্তর পান থেকে এটি প্রয়োগ করুন