Lesson 4
ঔপনিবেশিক
অর্থনীতির চরিত্র
--------------------
MCQs
1. কুলি কাহিনির লেখক
হলেন-(আড়িয়াপাড়া হাই স্কুল)
(a) দ্বারকানাথ ঠাকুর
(b) রামকুমার বিদ্যারত্ন
(c) রাজা রামমোহন
(d) অক্ষয় কুমার দত্ত
উত্তর: (b) রামকুমার বিদ্যারত্ন।
2. ব্রিটিশ আমলে একটি
বাণিজ্য ফসল হল-
(a) ধান
(b) নীল
(c) সরষে
(d) পাট
উত্তর: (b) নীল।
3. 'মহল' কথার অর্থ হল-
(a) গ্রামের সমষ্টি
(b) শহরের সমষ্টি
(c) জেলার সমষ্টি
(d) রাজ্যের সমষ্টি
উত্তর: (a) গ্রামের
সমষ্টি।
6. ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানির সনদ নবীকরণ করা হত-
(a) 10 বছর অন্তর
(b) 20 বছর অন্তর
(c) 30 বছর অন্তর
(d) 40 বছর অন্তর
উত্তর: (b) 20 বছর অন্তর।
7. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
ভারতে ব্যবসার একচেটিয়া অধিকার হারায়- (হাওড়া জিলা স্কুল)
(a) 1757 খ্রিস্টাব্দে
(b) 1813 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1857 খ্রিস্টাব্দে
(d) 1765 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (b)
1813 খ্রিস্টাব্দে।
Very Short Answer Question
7.13 মহাজনি কারবার বলতে
কী বোঝো?
উত্তর: সুদের
বিনিময়ে ঋণ দান এর কারবার মহাজনি কারবার নামে পরিচিত।
7.14 দুটি বাণিজ্যিক
ফসলের নাম লেখো।
উত্তর: নীল ও পাট হল দুটি বাণিজ্যিক ফসল।
7.15 কোন্ আইন অনুযায়ী
ইউরোপীয়রা ভারতে জমি ক্রয়ের অধিকার লাভ করে?
উত্তর: 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইন অনুযায়ী ভারতে জমি কেনার অধিকার লাভ করে।
7.16 নীল বিদ্রোহ কবে
শুরু হয়েছিল?
উত্তর: 1859-60 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ শুরু
হয়েছিল।
7.17 দাক্ষিণাত্যের
হাঙ্গামা কোন্ ভূমি রাজস্ব নীতির ফলশ্রুতি ছিল? (নরেন্দ্রপুর
মিশন বিদ্যালয়)
উত্তর: রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলশ্রুতি ছিল।
7.18 Bengal Tenancy Act কবে
চালু হয়?
উত্তর: 1885 খ্রিস্টাব্দে চালু হয়।
7.19 'দাদন' কথার অর্থ কী? (রায়গঞ্জ গার্লস হাইস্কুল)
উত্তর: 'দাদন' কথার অর্থ
হল-অগ্রিম অর্থ প্রদান করা।
7.20 বাগিচা শিল্প কোথায়
গড়ে উঠেছিল?
উত্তর: আসাম, বাংলা,
দক্ষিণভারত ও হিমাচল প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বাগিচা শিল্প গড়ে
উঠেছিল।
7.21 ভারতে রেলপথের জনক
কাকে বলা হয়? (রামপুরহাট জে এল, বিদ্যালয়)
উত্তর: লর্ড ডালহৌসিকে ভারতে রেলপথের জনক বলা হয়।
7.22 ভারতে ডাক ও তার
বিভাগের প্রচলন কে করেন?
উত্তর: লর্ড ডালহৌসি ভারতে ডাক ও তার বিভাগের প্রচলন প্রচলন করেন।
7.23 সম্পদের বহির্গমন
তত্ত্বের জনক কে ছিলেন?
উত্তর: দাদাভাই নৌরজি হলেন এই তত্ত্বের জনক।
7.24 কোন আইনকে চিরস্থায়ী
বন্দোবস্তের আইন ভিত্তি বলে ধরা হয়?
উত্তর: 1784 খ্রিস্টাব্দে প্রণীত পিটের ভারত শাসন
আইনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আইন ভিত্তি বলে।
7.25 দুটি বাগিচা ফসলের
নাম লেখো। (কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল)
উত্তর: চা ও কফি হল দুটি বাগিচা ফসল।
7.26 বাগিচা শিল্প কোথায়
গড়ে ওঠে?
উত্তর: দক্ষিণে কেরালা এবং বাংলার
দার্জিলিং ও আসামে বাগিচা শিল্প গড়ে ওঠে।
Short Answer Question
1. অর্থনীতির আধুনিকীকরণ
বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে নিজেদের স্বার্থে চিরাচরিত কৃষি পণ্যের পরিবর্তে চা, নীল, পাট, তুলার মতো অর্থনৈতিক ফসল চাষে চাষিদের বাধ্য করে। রেলপথ স্থাপন করে বিদেশি
পণ্যে বাজার ছেয়ে ফেলে। একেই অর্থনীতির আধুনিকীকরণ বলা হয়।
2. দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা
বলতে কী বোঝো? (রায়গঞ্জ গালর্স হাইস্কুল)
উত্তর: বহিরাগত ব্যবসায়ীদের উৎপীড়ন,
সাউকার বা মহাজনদের অত্যাচার, সরকারি রাজস্বের
উচ্চহার এবং তুলার দাম অত্যধিক হ্রাস পাওয়ার ফলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া
মহারাষ্ট্রের পুনা ও আহমদনগর এলাকার রায়তরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সরকার এই বিদ্রোহকে
দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা নামে অভিহিত করে। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস
পর্যন্ত এই বিদ্রোহ চলে। ইহাই দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা নামে পরিচিত।
3. পত্তনি প্রথা কী?
উত্তর: ঔপনিবেশিক শাসনে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য জমিদার তাঁর
বন্দোবস্ত নেওয়া জমিকে কয়েকটি ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করতেন। তারপর নির্দিষ্ট খাজনা
প্রদানের শর্তে সেই জমি অন্যের কাছে বন্দোবস্ত দিতেন। এই ব্যবস্থা, 'পত্তনি প্রথা' নামে
পরিচিত।
4. অবাধ বাণিজ্য বলতে কী
বোঝো? (সরিষা রামকৃষ্ণ মিশন)
উত্তর: 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইন অনুযায়ী
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পাশাপাশি ইংল্যান্ডের অন্যান্য বণিকেরাও ভারতে বাণিজ্য
করার অধিকার লাভ করে। একেই অবাধ বাণিজ্য বলা হয়।
5.প্রজাস্বত্ব আইন কী?
উত্তর: ১৮৮৫ খ্রি. ব্রিটিশ সরকার জমিদারদের অত্যাচারের হাত থেকে
কৃষকদের রক্ষা করার জন্য এক আইন পাস করে। যা প্রজাস্বত্ব আইন নামে পরিচিত। এই আইন
অনুসারে অস্থায়ী রায়ত বা কৃষকদের দখলি-স্বত্ব দেওয়া হয়।
6. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের
দুটি সুফল লেখো।
উত্তর: (i) সরকারি বাজেট তৈরি করা সুবিধাজনক হয়। (ii) জমিদারি
সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার ফলে জমিদারগণ রায়ত ও জমির উন্নতিতে সচেষ্ট হয়।
7. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের
দুটি কুফল লেখো।
উত্তর: চিরস্থায়ী
বন্দোবস্তের ফলে- (i) রায়ত বা কৃষকরা জমিদারের ভূমিদাসে পরিণত হয়। (ii) শহরকেন্দ্রিক
জমিদার শ্রেণির উৎপত্তির ফলে স্ব-নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়।
8. রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত
বলতে কী বোঝো? (বাঁকুড়া কলেজিয়েট স্কুল)
উত্তর: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মাদ্রাজ ও বোম্বাই
প্রেসিডেন্সিতে সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে জমি বন্দোবস্ত ও রাজস্ব নির্ধারণ-এর ব্যবস্থা
করে। এটি রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
9.সূর্যাস্ত আইন কাকে বলে?
উত্তর: চিরস্থায়ী
বন্দোবস্তের প্রধানতম শর্ত ছিল-বাংলা বছরের শেষ দিনে সূর্যাস্তের আগে জমিদারগণ
নিজেদের প্রদেয় রাজস্ব প্রদান না করলে তাদের জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এই আইন
সূর্যাস্ত আইন নামে পরিচিত।
10. কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ
বলতে কী বোঝো?
উত্তর: বাণিজ্যিক
উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত কৃষিকাজ পরিচালন পদ্ধতিকে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলা হয়।
এই ব্যবস্থার একটি
প্রধান বৈশিষ্ট্য হল খাদ্য ফসলের পরিবর্তে শিল্পের উপকরণমূলক ফসল চাষ। যেমন- তুলা, নীল, আখ, পাট, চা, কফি প্রভৃতি ফসল চাষে
গুরুত্ব দেওয়া।
11. দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা
কেন হয়েছিল?
উত্তর: 1875 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতে সংঘটিত দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার কারণগুলি হল- (i) রায়তওয়ারি
ব্যবস্থায় কৃষকদের প্রদত্ত উচ্চহারে কর। (ii) আমেরিকার গৃহযুদ্ধের অবসানের ফলে ইংল্যান্ডে
তুলার চাহিদা হ্রাস পাওয়া। (iii) তুলার দাম কমা সত্ত্বেও রাজস্বের হার না
কমানো প্রভৃতি।
12. সম্পদের বহির্গমন
কাকে বলে?
উত্তর: সম্পদের বহির্গমন কথার অর্থ হল প্রতিদানহীনভাবে একদেশের
সম্পদ অন্যদেশে চলে যাওয়া। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের টাকায় ভারতীয় পণ্য কিনে
অথবা নজরানা বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ইংল্যান্ডে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালান দেওয়ার ফলে
ভারত আর্থিক দিক দিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। একেই সম্পদের বহির্গমন বলে।
Long Answer Question
1.ভারতে কোম্পানির শাসন
বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে রেলপথের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হলেও যে কটি
বিষয় ভারতে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টিতে সাহায্য করেছিল রেলপথের স্থাপন তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য।
স্থাপয়িতা: ভারতে রেলপথের জনক হিসাবে পরিচিত হলেন লর্ড ডালহৌসি।
প্রথম রেলপথ: 1803 খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই থেকে থানে
পর্যন্ত 21 মাইল পথে প্রথম রেল চলাচল শুরু হয়।
উদ্দেশ্য: রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্যকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়।
যেমন
1. সামরিক উদ্দেশ্য: রেলপথ স্থাপনের সামরিক উদ্দেশ্যগুলি হল- (i) ব্রিটিশ
সাম্রাজ্যকে রক্ষা করা। (ii) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত সেনাবাহিনী
প্রেরণ করে যেকোনো বিদ্রোহ দমন করা। (iii) সেনাবাহিনীর জন্য দ্রুত খাদ্য ও
অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে দেওয়া। (iv) বিদেশি আক্রমণের দ্রুত মোকাবিলা করা।
2. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: রেলপথ স্থাপনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হল- (i) ভারতের
সর্বত্র দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। (ii) প্রশাসনিক কাজের দ্রুত তদারকি করা, এবং (iii) ভারতের সর্বত্র রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায়
রাখা।
3. অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য: রেলপথ
বিস্তারের পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল অর্থনৈতিক। যেমন- (i) শিল্পবিপ্লবের
ফলে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত পণ্য সম্ভার ভারতের সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া। (ii) ব্রিটিশ
বণিকদের উদ্বৃত্ত মূলধন বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং (iii) ভারতে
কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করা।
পদ্ধতি: সরকারি ও বেসরকারি উভয় পদ্ধতিতেই ভারতে রেলপথের বিস্তার
ঘটানো হয়। বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানানো ও তাদের নির্ভরতা প্রদানের জন্য 99 বছরের লীজ-এর ব্যবস্থা করা হয় এবং বিনিয়োগ
করা মূলধনের উপর 5 শতাংশ নিশ্চিত লাভের গ্যারান্টি দেওয়া হয়।
প্রভাব: ভারতে
রেলপথ স্থাপনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায়।
সুফল: রেলপথ স্থাপনের সুফলগুলি হল-
(i) যোগাযোগ ব্যবস্থার
উন্নতি: গ্রামগুলির সাথে
বন্দর ও বাজারের যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
(ii) কর্মসংস্থান: রেল ব্যবস্থা প্রবর্তন এর ফলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান
হয়েছিল।
(iii) বাণিজ্যের উন্নতি: গ্রামীণ পণ্য সম্ভার অতি সহজেই বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে বা
দেশের অন্যত্র পাঠানো যেত বলে বাণিজ্যের অভাবনীয় উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।
(iv) শহর ও বন্দরের
উত্থান: রেলপথের বিস্তার ভারতে নতুন নতুন নগর ও বন্দর গড়ে তুলেছিল।
(v) জাতীয় চেতনার বিকাশ: রেলপথের মাধ্যমে
দ্রুত যাতায়াতের ফলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
তারা নিজেদের ভারতীয় বলে ভাবতে থাকে। সৃষ্টি হয় জাগ্রত জাতীয়তাবাদের। মুক্তি
আন্দোলনের সূচনা হয়।
কুফল: রেলপথের
বিস্তারের কিছু কুফল পরিলক্ষিত হয়েছিল। যেমন-
(i) সম্পদের নির্গমন: রেলপথের মাধ্যমে ভারতের সম্পদ বিদেশে অতিসহজেই চলে যেতে
থাকে।
(ii) কুটির শিল্পের
ধ্বংস: ইংল্যান্ডের দাম ও গুণগত মানের দিক
দিয়ে ভালো পণ্যসম্ভার ভারতের গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে যাওয়ায় কুটির শিল্পের ধ্বংসসাধন হয়।
(iii) দেশীয় বাণিজ্যের
ক্ষতি: সস্তায় বিদেশি পণ্য ভারতের বাজারে
ভর্তি হয়ে যাওয়া দেশীয় বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(iv) জলপথের গুরুত্ব
হ্রাস: রেল ব্যবস্থা সড়কপথে যোগাযোগকে এতো
দ্রুত করেছিল যে জলপথের গুরুত্ব ক্রমশ কমে যায়। বহুমানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে।
(v) খাদ্যাভাব: রেলপথের মাধ্যমে চাল, ডাল, গম প্রভৃতি খাদ্য ফসল ইংল্যান্ডে চলে যাওয়ায়
ভারতের খাদ্যের অভাব দেখা দেয়।
মূল্যায়ন: রেলপথের বিস্তার
ভারতের আর্থসামাজিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। জাতীয়তাবাদ সৃষ্টিতেও
রেলপথের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।
2. সম্পদের নির্গমন বলতে
কী বোঝো? এবিষয়ে কারা আলোকপাত করেন? সম্পদের
নির্গমনের মাধ্যমে আলোচনা করো।
অথবা, পলাশির যুদ্ধের পর কীভাবে সম্পদের নির্গমন ঘটেছিল। (হেয়ার
স্কুল)
উত্তর: সংজ্ঞা: যখন
কোনো একটি দেশ নিরবিচ্ছিন্নভাবে অন্যদেশে স্থানান্তরিত হতে থাকে, তখন তাকে সম্পদের নির্গমন বলা হয়।
প্রবক্তা: ঐতিহাসিক
রমেশচন্দ্র দত্ত তাঁর 'ইকোনমিক হিস্ট্রি অব
ইন্ডিয়া' গ্রন্থে এবং দাদাভাই নৌরজি তাঁর 'পভার্টি অ্যান্ড আন-ব্রিটিশ রুল' গ্রন্থে এ বিষয়ে
আলোকপাত করেছিলেন।
মাধ্যম: কোম্পানির শাসনের সূচনা লগ্ন থেকে ব্রিটিশ শাসনের
সমাপ্তিকাল পর্যন্ত নানাভাবে সম্পদের নির্গমন ঘটেছিল। যেমন-
(i) বেতন, ভাতা, উপহারস্বরূপ: কোম্পানির
কর্মচারীরা নানাভাবে দেশীয় রাজন্যবর্গের কাছ থেকে উপহার আদায় করত। তাছাড়া তাদের
বেতন, ভাতা, পেনশন এর মাধ্যমেও সম্পদের নির্গমন ঘটে।
(ii) উন্নয়নের আড়ালে: ভারতে রেলপথের প্রবর্তন, টেলিগ্রাফ স্থাপন ব্রিটেনের স্বার্থেই করা হয়েছিল। কিন্তু তার ব্যয়ভার বহন
করতে হয়েছিল ভারতীয়দের।
(iii) ভূমি রাজস্ব: ইংরেজ কোম্পানি এদেশে উচ্চ হারে ভূমি রাজস্ব আরোপ করে
প্রাপ্ত টাকায় এদেশের সম্পদ কিনে নিয়ে ইংল্যান্ডে পাঠাতে থাকে। শুরু হয়
প্রতিদানহীন চালান।
(iv) ব্যক্তিগত বাণিজ্য: কোম্পানির
কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যের মাধ্যমেও এদেশের প্রচুর সম্পদ ইংল্যান্ডে
পাঠিয়ে দেয়।
মূল্যায়ন: সম্পদ নির্গমনের প্রকৃত মূল্য নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে
মতভেদ এর অন্ত নেই। তবে একথা ঠিক যে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এদেশের জাতীয় আয়ের ছয়
শতাংশ অর্থ প্রতিদানহীন চালান হিসাবে ইংল্যান্ডে চলে যেত।
3. উনিশ শতকের ব্রিটিশ
ভূমি রাজস্ব নীতি গ্রামীণ অর্থনীতির উপর কী প্রভাব ফেলেছিল? অথবা,
ঔপনিবেশিক ভারতীয় সমাজে ব্রিটিশ ভূমি রাজস্বনীতির প্রভাব আলোচনা
করো।
উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসিত
ভারতে মূলত তিন ধরনের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। প্রতিটি ব্যবস্থাই ছিল
কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করার হাতিয়ার স্বরূপ। ফলে ভারতে গ্রামীণ অর্থনীতি যথেষ্ট
আন্দোলিত হয়েছিল।
প্রভাব: ব্রিটিশ রাজস্ব নীতির প্রভাব ভারতীয় গ্রামীণ অর্থনীতিকে
যথেষ্ট প্রভাবিত করে। যেমন-
(i) চিরাচরিত অর্থনৈতিক
সম্পকের অবসান: এর ফলে ভারতের চিরাচরিত অর্থনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘটে।
মুঘল আমলে জমিদারগণ জমির মালিক ছিলেন না। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে কৃষক সম্প্রদায়
জমিদারদের ভাড়াটে চাষিতে পরিণত হয়।
(ii) কৃষক শ্রেণির
দুর্দশা: নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ফলে কৃষক সমাজের দুর্দশা বহুগুণ
বৃদ্ধি পায়। জমিদাররা ইচ্ছামতো অতিরিক্ত কর আদায় করত। রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত বা
মহলওয়ারি বন্দোবস্তেও রাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি ছিল।
(iii) মহাজন সম্প্রদায়ের
সৃষ্টি: ফসলের পরিবর্তে নগদে অর্থ প্রদান করতে হতো বলে চাষিরা ফসল
বিক্রি করে সেই অর্থে রাজস্ব প্রদান করতো। অনেক সময় তারা ঋণ করতো। ফসল কেনা বা ঋণ
দেওয়ার জন্য মহাজন সম্প্রদায় নামে এক নতুন শ্রেণির সৃষ্টি হয়। এরা ঋণের বিনিময়ে
চাষিদের সর্বস্বান্ত করে দিতো।
(iv) মধ্যবিত্ত শ্রেণির
উদ্ভব: নতুন ভূমিরাজস্ব নীতি জমিদার, তালুকদার প্রভৃতি ধনী বিত্তশালী শ্রেণির জন্ম দেয়। এরা মধ্যবিত্ত
সম্প্রদায় নামে পরিচিত ছিল। সাধারণত এরা সরকারের অনুগত সম্প্রদায়ে পরিণত হয়।
মূল্যায়ন: নতুন
ভূমি রাজস্ব নীতির ফলে ভারতে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। ধনী বিত্তশালী সম্প্রদায়
সমাজের অন্যান্য শ্রেণির সঙ্গে পারস্পরিক মেলামেশা থেকে নিজেদের বিরত রাখতো।
4. লর্ড কর্নওয়ালিস কেন
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলেন? (তমলুক হ্যামিল্টন
হাই স্কুল)
উত্তর: ভূমিকা: 1793 খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলা,
বিহার ও উড়িষ্যায় যে ভূমি বন্দোবস্ত চালু করেন তা চিরস্থায়ী
বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
উদ্দেশ্য: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পিছনে লর্ড কর্নওয়ালিসের
যে ভাবনাগুলি কাজ করেছিল সেগুলি হল- (ⅰ) আয় সুনিশ্চিত করা: চিরস্থায়ী
বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে কোম্পানির বাৎসরিক আয় সুনিশ্চিত করা ছিল তাঁর প্রধান
উদ্দেশ্য।
(ii) বাজেট তৈরির সুবিধা: রাজস্বের পরিমাণ পূর্ব থেকে জানা সম্ভব হলে বাৎসরিক বাজেট
তৈরির কাজ সহজ হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
(iii) খাজনা আদায়ের
সুবিধা: জমিদারদের উপর
রাজস্ব আদায়ের ভার দিলে রায়তদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করা অনেক সুবিধা হবে বলে মনে
করা হয়েছিল।
(iv) অনুগত সম্প্রদায়
সৃষ্টি: চিরস্থায়ী
বন্দোবস্তের মাধ্যমে একদল ব্রিটিশ অনুগ্রহভাজন প্রভাবশালী সম্প্রদায় সৃষ্টি করা।
(v) কৃষির উন্নতি: জমিদারি সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়ে জমিদারগণ কৃষি ও কৃষকের
উন্নতির প্রতি সচেষ্ট হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল।
(vi) গণবিক্ষোভ থেকে
রক্ষা পাওয়া: খাজনা আদায় করতে
গিয়ে নানা সময় বিক্ষোভের সম্ভাবনা দেখা দিত। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা দূর করা
সম্ভব হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
মূল্যায়ন: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কোম্পানির রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে সুরক্ষিত
করা হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন।
5. বাংলার বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে কোম্পানির বাণিজ্য নীতির কী ধরনের সম্পর্ক ছিল? কেন দেশীয় ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি তৈরি করেন ভারতীয়রা?
উত্তর: ভূমিকা: একসময় বাংলার বস্ত্র শিল্প ছিল পৃথিবী বিখ্যাত। ইউরোপের বাজারে তার আলাদা কদর ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের প্রথমার্ধে এই বস্ত্রশিল্পের অবক্ষয় ঘটে।
বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে কোম্পানির বাণিজ্য নীতির সম্পর্ক: নানাবিধ বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও 1813 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার বস্ত্রশিল্প নিজ ঐতিহ্য বজায় রেখেছিল। কিন্তু 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন অনুযায়ী এদেশে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি বাণিজ করার অধিকার লাভ করে। ব্রিটিশ সরকার ইংল্যান্ডের শিল্পজার বস্ত্রের উপর নামমাত্র আমদানি শুল্ক আরোপ করার পাশাপাশি বাংলার বস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপ করে।
এই বাণিজ্য নীতির ফলে বাংলা তথা ভারতের বাজারে ইংল্যান্ডের পণ্য সম্ভার ছেয়ে যায়। তুলনামূলকভাবে ভালো কাপড় ও দাম কমের ফলে ভারতীয় তথা বাংলার বস্ত্রের চাহিদাও ভীষণ ভাবে কমে যায়। ফলে বাংলার বস্ত্র শিল্পের অবক্ষয় তথা ধ্বংসের সূচনা হয়।
দেশীয় ব্যাংক ও বীমা শিল্প: নানা কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ও বীমা শিল্পে অর্থ লগ্নিতে এগিয়ে আসে। যেমন-
(i) বিত্তশালী সম্প্রদায়ের উদ্ভব: বাংলার জমিদার ও নীল চাষের সঙ্গে যুক্ত বিত্তশালী ব্যক্তি ও দক্ষিণ ভারতে তুলা চাষের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত হলে তারা ব্যাংক ও বিমা ব্যবসায় তা বিনিয়োগ করে।
(ii) ঋণ দানে বৈষম্যনীতি: ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে চাইত না বলে ভারতীয়রা বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ঋণদানকারী সংস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল।
(iii) সুদের বৈষম্য: একই ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়া হলেও ইউরোপীয়দের তুলনায় ভারতীয়দের কাছ থেকে অধিক হারে সুদ আদায় করা হত।
(iv) স্বাদেশিকতাবোধ: উনবিংশ শতকের নবজাগরণ যে স্বাদেশিকতাবোধের জন্ম দিয়েছিল, ব্যাংক ও বিমা শিল্পে অর্থ লগ্নির ক্ষেত্রে সেটিও একটি কারণ ছিল।
মূল্যায়ন: দেশীয় বস্ত্রশিল্পের পতন বাংলার কারিগর সম্প্রদায়কে
কৃষিজীবীতে পরিণত করেছিল। ব্যাংক ও বিমা শিল্পে অর্থলগ্নি করলেও অল্প সংখ্যক
ভারতীয়রা এক্ষেত্রে সাফল্যলাভ করেছিল।
4 বেমানান শব্দটি খুঁজে
বের করো :
1. ওয়ারেন হেস্টিংস,
কর্নওয়ালিস, ডালহৌসি, থমাস
মনরো।
উত্তর: থমাস মনরো।
2. বাংলা, বিহার, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা।
(বাওয়ালী হাই স্কুল)
উত্তর: মাদ্রাজ।
3. নীল, পাট, তুলা, ধান।
উত্তর: ধান।
ও শূন্যস্থান পূরণ করো :
1. ইজারাদারি ব্যবস্থা
প্রবর্তন করেন ।
উত্তর: ওয়ারেন হেস্টিংস
3.2 কে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন বলা হতো। (আড়িয়াপাড়া হাইস্কুল)
উত্তর: ভারতকে
3.3 হুগলির প্রথম পাটের কারখানা চালু হয় ।
উত্তর: রিষড়াতে
3.6 'অবশিল্পায়ন' কথাটির অর্থ হল ।
উত্তর: শিল্পের অবনমন।
3.7 ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রতীক ছিল ।
উত্তর: রেল ব্যবস্থা
3.৪ ভারতে রেলপথ নির্মাণে অর্থ বিনিয়োগ করে ।
উত্তর: ব্রিটিশ বেসরকারি কোম্পানিগণ।
3.9 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ দমনে খুবই এর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর: টেলিগ্রাফ
3.10 টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ভারতে প্রথম চালু হয় থেকে ডায়মন্ড হারবার।
উত্তর: কলকাতা
উত্তর পেতে সদস্যপদ প্রয়োজন
👉Paid Answer (For Membership User)
Editing by- Rita Moni Bora
1. উত্তরহীন প্রশ্ন ও উত্তর সেখানে দেখা যাবে
2 বিনামূল্যে উত্তর পান থেকে এটি প্রয়োগ করুন