Chapter-3 

রাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সংঘাত 

----------------------------------------------------------------

    👉Paid Answer (For Membership User)

 

MCQ

 

1. মেটারনিক ছিলেন-

a) ইতালির প্রধানমন্ত্রী

b) ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

c) অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী

D) সার্ডিনিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

উত্তর অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী



2. বিসমার্ক প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন-

a) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে

b) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে

c) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে

d)১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে



3. তিন সম্রাটের চুক্তি (১৮৭২ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়-

a) প্রাশিয়া, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে

b) জার্মানি, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে

c) ইংল্যান্ড, ইতালি ও ফ্রান্সের মধ্যে

d) জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে।

উত্তর জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে

 

4. কত খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব সংঘটিত হয়?

a) ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে

b) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে

c) ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে

d) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে

 

5. কত খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার করা হয়? ভূমিদাসদের মুক্তি ঘোষণা

a) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে

b) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে

c) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে

d) ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে।

 

6. ইউরোপের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব হয়েছিল-

a. ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে

b.১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে

c) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে।

d) ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে

 

7. ইউরোপে 'বিপ্লবের বছর' নামে পরিচিত সালটি হলো-

a) ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দ

b) ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দ

c) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ

d) ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দ।

উত্তর ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ

 

8. কে 'মুক্তিদাতা জার' নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন?

a)  প্রথম আলেকজান্ডার

b) দ্বিতীয় আলেকজান্ডার

c)  তৃতীয় আলেকজান্ডার 

d) পিটার দ্য গ্রেট।

উত্তর  দ্বিতীয় আলেকজান্ডাৰ

 

9. বিসমার্ক জার্মানির ঐক্য সম্পন্ন করেন-

a)  ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে

b) ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে

c) ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে

d) ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে

 

10. কে 'রক্ত ও লৌহ নীতি'র প্রবর্তক

a) মেটারনিক

b) বিসমার্ক

c) গ্যারিবল্ডি

d) মাৎসিনি।

উত্তর  বিসমার্ক

 

11. 'জেমস্তভো'-র অর্থ হলো-

a) গ্রামীণ ব্যবস্থা

b) আঞ্চলিক প্রতিনিধিমূলক সংস্থা 

c) বিচারসভা

d)  সরকারি শাসন ব্যবস্থা।

উত্তর আঞ্চলিক প্রতিনিধিমূলক সংস্থা

 

12. ভিয়েনা সম্মেলনের যেটি মূল উদ্দেশ্য ছিল-

a) ইউরোপের পুনর্গঠন

b) ইউরোপে শান্তি স্থাপন

c) নেপোলিয়নের দমন

d) ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব থেকে ইউরোপকে মুক্ত রাখা।

উত্তর  ইউরোপের পুনর্গঠন

 

13. জুলাই বিপ্লবের পর কোন সম্রাট ফ্রান্সের সিংহাসনে আরোহণ করেন

a) লুই ফিলিপ

b) লুই নেপোলিয়ন

c) শম চার্লস

d) অষ্টাদশ লুই।

উত্তর  লুই ফিলিপ

 

14. কত খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়?

a) ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে

b) ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে

c) ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে

d) ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে

 

15. কে প্রথম ভিয়েনা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন?

a) জার প্রথম আলেকজান্ডার 

b) ডেকার্ড

c)  ভিলিল

d) মেটারনিক।

উত্তর মোটারনিক

 

Short Question Answer

1. 'রিসর্জিমেন্টো' বলতে কী বোঝো?

উত্তর উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ইতালিতে ভাবজগতে ও বাস্তবে যে জাতীয় ঐক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তা সার্বিকভাবে 'রিসর্জিমেন্টো' নামে পরিচিত।

2. 'ইয়ং ইতালি' দলের প্রতিষ্ঠাতার নাম উল্লেখ করো।

উত্তর 'ইয়ং ইতালি' দলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জোশেফ মাৎসিনি।

3. কবে ভিল্লাফ্রাঙ্কার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভিল্লাফ্রাঙ্কার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

4. কত খ্রিস্টাব্দে স্যাডোয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তর ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে স্যাডোয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

5. কোন যুদ্ধের জন্য এমস টেলিগ্রাম দায়ী ছিল?

উত্তর সেডান যুদ্ধের জন্য এমস টেলিগ্রাম দায়ী ছিল।

6. কত খ্রিস্টাব্দে গ্রিস স্বাধীনতা লাভ করে?

উত্তর ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রিস স্বাধীনতা লাভ করে।

7. কত খ্রিস্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা হয়?

উত্তর ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা হয় ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে।

 8. মেটারনিক কে ছিলেন?

উত্তর মেটারনিক ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী।

9. জোলভেরাইন বলতে কী বোঝায়?

উত্তর জার্মানির অর্থনীতিবিদ ম্যাজেন-এর উদ্যোগে প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানিতে গঠিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় শুল্কসংঘ 'জোলভেরাইন' নামে পরিচিত।

10. কে কার্লসবাড ডিক্রি ঘোষণা করেন?

উত্তর কার্লসবাড ডিক্রি ঘোষণা করেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক।

11. কতখ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলন আহ্বান করা হয়?

উত্তর ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলন আহ্বান করা হয়।

12. ভিয়েনা সম্মেলনের মূল নীতি তিনটি কী ছিল তা উল্লেখ করো।

উত্তর ভিয়েনা সম্মেলনের তিনটি মূল নীতি ছিল ন্যায্য অধিকার নীতি, ক্ষতিপূরণ নীতি এবং শক্তিসাম্য নীতি।

13. ভিয়েনা সম্মেলনে কে ফ্রান্সের তরফে প্রতিনিধিত্ব করেন?

উত্তর ভিয়েনা সম্মেলনে ফ্রান্সের তরফে প্রতিনিধিত্ব করেন ট্যালিরান্ড।

14. ভিয়েনা সম্মেলনের মূল নিয়ন্ত্রক কে ছিলেন?

উত্তর ভিয়েনা সম্মেলনের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক।

15. কোন সময়কে মেটারনিকের যুগ বলে উল্লেখ করা হয়?

উত্তর ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দকে মেটারনিকের যুগ বলে উল্লেখ করা হয়।

16. কত খ্রিস্টাব্দে মেটারনিকতন্ত্রের পতন হয়?

উত্তর ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে মেটারনিকতন্ত্রের পতন হয়।

17. দশম চার্লস কে ছিলেন?

উত্তর দশম চার্লস ছিলেন ফ্রান্সের রাজা (১৮২৪-৩০ খ্রি.)

18. কত খ্রিস্টাব্দে জোলভেরাইন গঠন করা হয়?

উত্তর ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে জোলভেরাইন গঠন করা হয়।

19. কে, কবে জার্মানির প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ দেন?

উত্তর বিসমার্ক ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ দেন।

20. ফ্রান্সে অষ্টাদশ লুই-এর পরবর্তী কোন সম্রাট সিংহাসনে বসেন?

উত্তর ফ্রান্সে অষ্টাদশ লুই-এর পরে দশম চার্লস সিংহাসনে বসেন।

21. ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব চলাকালীন সম্রাট কে ছিলেন?

উত্তর ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লব চলাকালীন সম্রাট ছিলেন দশম চার্লস।

22. গিজো কে ছিলেন?

উত্তর গিজো ছিলেন ফরাসি রাজা লুই ফিলিপের প্রধানমন্ত্রী।

23. 'রক্ত ও লৌহ নীতি' বলতে কী বোঝো?

উত্তর প্রাশিয়ার চ্যান্সেলার বা প্রধানমন্ত্রী বিসমার্ক প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মান রাজ্যগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যে কঠোর যুদ্ধ বা সামরিক অভিযানের নীতি নেন সেটাই 'রক্ত ও লৌহ নীতি' বলে পরিচিত।

24. কোন কোন যুদ্ধের মাধ্যমে বিসমার্ক জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন?

উত্তর বিসমার্ক ৬ বছরে তিনটি যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। যথা -0 ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

25. কবে, কাদের মধ্যে প্রাগের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর অস্ট্রিয়া স্যাডোয়ার যুদ্ধে প্রাশিয়ার কাছে হেরে যাওয়ার পর ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট প্রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার মধ্যে প্রাগের সন্ধি হয়।

26. এমস টেলিগ্রাম বলতে কী বোঝো? 

উত্তর ভবিষ্যতে স্পেনের সিংহাসনে যাতে প্রাশিয়ার রাজপরিবারের কেউ না বসে এই প্রতিশ্রুতি আদায়ের উদ্দেশ্যে ফরাসি দূত কাউন্ট বেনেদেত্তি এমস নামক জায়গায় প্রাশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়ামের সঙ্গে দেখা করেন। প্রথম উইলিয়াম তাঁকে কোনো আশ্বাস না দিয়ে বরং সাক্ষাৎকারের বিষয়টি টেলিগ্রাম মারফত প্রাশিয়ার চ্যান্সেলার অটো ফন বিসমার্ককে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই জানান। বিসমার্ক টেলিগ্রামের কিছু শব্দ কায়দা করে বাদ দিয়ে সংবাদপত্রে তা এমনভাবে ছাপেন যাতে ফ্রান্সের মানুষ মনে করে যে প্রাশিয়ার রাজা ফ্রান্সের দূতকে অপমান করেছেন। এটিই 'এমস টেলিগ্রাম' বলে পরিচিত।

27. ভিয়েনা সম্মেলনের মূলনীতিগুলি কী?

উত্তর ভিয়েনা সম্মেলনের প্রধান নীতি ছিল তিনটি। যথা • ক্ষতিপূরণ নীতি, শক্তিসাম্য নীতি। • ন্যায্য অধিকার নীতি,


45. কোন সময়কে বলে 'মেটারনিকের যুগ'? 

উত্তর ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপীয় রাজনীতিতে ভাগ্যনিয়ন্তা ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিক। এই ৩৩ বছর অধিকাংশ ইউরোপীয় শাসক মেটারনিকের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ নিজ দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এই সময়কে বলা হয় 'মেটারনিকের যুগ'

28. ইউরোপীয় শক্তি-সমবায় বলতে কী বোঝো?


উত্তর ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা সম্মেলনের পর • ইউরোপে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখা, ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির বাস্তবায়ন, ফ্রান্সের ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা প্রভৃতি উদ্দেশ্য নিয়ে বৃহৎ ইউরোপীয় শক্তিগুলি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করে। এটিকেই বলা হয় 'ইউরোপীয় শক্তি-সমবায়'

 

29. কার্বোনারি আন্দোলন বলতে কী বোঝো?

 

উত্তর ভিয়েনা বন্দোবস্তের মাধ্যমে ইতালিকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টার বিরুদ্ধে সেই দেশে অনেক গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বোনারি সমিতি। এর নেতৃত্বে ইতালির ঐক্যের দাবিতে যে আন্দোলন প্রসারিত হয় তাকেই কার্বোনারি আন্দোলন বলা হয়।

 

30. 'রিসর্জিমেন্টো' বলতে কী বোঝো?

 

উত্তর উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ইতালি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পূর্বে ইতালির মানুষের মনে জাতীয় চেতনার সঞ্চার হয়। তারা দেশে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে। এটাই 'রিসর্জিমেন্টো' বা পুনর্জাগরণ বলে বিখ্যাত।

 

40. কবে ফ্রান্সে 'দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র' প্রতিষ্ঠিত হয়? এর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

 

উত্তর  ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র। এই প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন লা মার্টিন।

 

41. কবে ফ্রান্সে, কার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে 'দ্বিতীয় সাম্রাজ্য'? কবে এর পতন হয়?

 

উত্তর ফ্রান্সে তৃতীয় নেপোলিয়নের নেতৃত্বে ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে দ্বিতীয় সাম্রাজ্য। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় নেপোলিয়নের পতনের পরই এই সাম্রাজ্যের পতন হয়। গড়ে ওঠে তৃতীয় প্রজাতন্ত্র।

 

42. জুলাই অর্ডিন্যান্স কী?

 

উত্তর ১৮৩০ সালের ২৫ জুলাই ফরাসি সম্রাট দশম চার্লস 'অর্ডিন্যান্স অব সেন্ট ক্লড' নামে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। এটি 'জুলাই অর্ডিন্যান্স' নামে পরিচিত। এই অর্ডিন্যান্সের দ্বারা ফরাসি আইনসভা ভেঙে দেওয়া হয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়, বুর্জোয়াদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের সনদ বাতিল করা হয়।

 

43. ভিয়েনা সম্মেলনে যোগদানকারী মুখ্য ব্যক্তিত্ব কারা ছিলেন?

 

উত্তর ভিয়েনা সম্মেলনের প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন- অস্ট্রীয় প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক, • রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার, ইংল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রী ক্যাসালরি এবং • ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তালির। ভিয়েনা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মেটারনিক।

 

Long Question Answer

44. ভিয়েনা সম্মেলনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

 

উত্তর এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল-

 

ইউরোপের রাজনৈতিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস,

 

নেপোলিয়ন দ্বারা বিতাড়িত রাজবংশগুলিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা,

 

ফরাসি শক্তির ভবিষ্যৎ শক্তিবৃদ্ধির সম্ভাবনা দূর করা,

 

নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান,

 

ইউরোপে শক্তিসাম্য গড়ে তোলা ইত্যাদি।

 

46. গ্যারিবল্ডি ইতালির ঐক্য আন্দোলনে কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?


উত্তর ইতালির ঐক্য আন্দোলনের অন্যতম সফল নায়ক ছিলেন জোসেফ মাৎসিনির শিষ্য গ্যারিবল্ডি। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালির নিস প্রদেশে এক কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। মাৎসিনির মতো গ্যারিবন্ডিও ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক।

 

সামরিক অভিযান: ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সিসিলি এবং নেপল্স গণবিদ্রোহ দেখা দিলে এই সুযোগে গ্যারিবল্ডি তাঁর 'লাল কোর্তা' বাহিনীর মাধ্যমে এই দু'টি রাজ্যকে বিদেশিদের হাত থেকে মুক্ত করেন। নেপল্স এবং সিসিলিকে তিনি পিয়েডমন্টের রাজা ভিক্টর ইমানুয়েলকে অর্পণ করেন। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে কাভুরের মৃত্যুর সময় রোম এবং ভেনিসিয়া বাদে ইতালি ঐক্যবদ্ধ হয়।

 

ভেনিস এবং রোম দখল ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে স্যাডোয়ার যুদ্ধে প্রাশিয়ার পক্ষ নেয় ইতালি। যুদ্ধের শেষে ভেনিসিয়া লাভ করে ইতালি। এরপর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্কো-প্রাশিয়া অর্থাৎ সেডানের যুদ্ধে ফ্রান্সের হেরে যাওয়ার সুযোগে সার্ডিনিয়ার রাজা ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই রোম দখল করেন। এভাবেই সম্পূর্ণ হয় ইতালির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়াস। ঐক্যবদ্ধ ইতালির রাজধানী হয় রোম।

 

47. ক্রিমিয়ার যুদ্ধের ফলাফল কী ছিল?

 

উত্তর বন্ধান অঞ্চলে সংঘটিত ক্রিমিয়ার যুদ্ধ (১৮৫৪-৫৬ খ্রি:) ছিল ইউরোপের রাষ্ট্রগুলির অন্তঃরাষ্ট্রীয় যুদ্ধ। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, ক্রিমিয়ার যুদ্ধ ছিল অনাবশ্যক এবং অপ্রয়োজনীয়।

 

যুদ্ধের ফলাফল

 

রুশ বিস্তার নীতি: কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে রুশ বিস্তার নীতি ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছিল।

 

তুরস্ক সাম্রাজ্যের লাভ: আরও কিছুকাল তুরস্ক নিরাপদে একটি সাম্রাজ্য হিসেবে টিকে থাকার সুযোগ লাভ করে।

 

মানবসম্পদ হ্রাস: এই যুদ্ধের ভয়াবহতা ছিল সত্যিই শোচনীয়। এই যুদ্ধে যোগদানকারী দেশগুলির ৫ লক্ষ লোকের জীবনহানি হয়। ১৮৯৫ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে আর কোনো যুদ্ধে এত জীবন নষ্ট হয়নি।

 

48. টীকা লেখো: বিপ্লবের বছর (১৮৪৮)

 

উত্তর ফ্রান্সের রাজা লুই ফিলিপের সিংহাসন ত্যাগ (১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ, ২৪ ফেব্রুয়ারি) এবং তাঁর ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরই বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্রে প্রচলিত রাজতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ শুরু হওয়ার কারণেই ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্ যথার্থভাবে হয়ে ওঠে 'বিপ্লবের বছর'

 

বিপ্লবের বছর: ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের দেখাদেখি ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল বিদ্রোহ। যথা-

 

ইতালি: ইতালির বিভিন্ন রাজ্যে (যেমন- মিলান, পার্মা, ভেনিস, মডেনা, টাস্কানি, রোম, সিসিলি, নেপল্স প্রভৃতি) বিদ্রোহ দেখা দেয়। ফলে পিডমন্ট-সার্ডিনিয়াতে প্রবর্তিত হয় উদারনৈতিক শাসনতন্ত্র এবং ভেনিসে গড়ে ওঠে প্রজাতন্ত্র।

 

নেদারল্যান্ড: ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডের বিদ্রোহের চাপে ডেনমার্করাজ সংবিধান সভার অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন।

 

ইংল্যান্ড: ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাব ইংল্যান্ডেও পড়েছিল। চার্টিস্ট ও সনদ আন্দোলন তীব্রতা পায় এবং ইয়ং আয়ারল্যান্ড দলের নেতৃত্বে সেখানে সশস্ত্র অভ্যুত্থান দেখা দেয়।

 

উপসংহার: শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহগুলি সফল না হলেও গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের বিজয়কে এটা ভবিষ্যতে নিশ্চিত করেছিল। ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন মনে করেন, ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব জনতার যুগ-এর সূচনা করেছিল।

 

49. মেটারনিকতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল কেন?

 

উত্তর অস্ট্রীয় প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক ইউরোপীয় রাজনীতিতে প্রায় তিন দশক সফলতার সঙ্গে রক্ষণশীল নীতি কার্যকর করলেও শেষ পর্যন্ত তাঁর নীতি ব্যর্থ হয়। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ধাক্কায় এর পতন হয়।

 

ব্যর্থতার কারণ: মেটারনিকের পতনের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন-

 

নেতিবাচক নীতি: মেটারনিকের নীতি ছিল নেতিবাচক এবং সংস্কারের বিরুদ্ধে। তিনি ফরাসি বিপ্লব এবং উদারতন্ত্রের ধ্বংসাত্মক দিকগুলি দেখলেও এর গঠনমূলক দিকে নজর দেননি।

 

নতুন যুগের উন্মেষ: ইউরোপে ঊনবিংশ শতকে শিল্পবিপ্লব, নাগরিক দ্ব সভ্যতার প্রসার, বুর্জোয়াদের আধিপত্য প্রভৃতি কারণে নতুন যুগের আগমন হয়। এর বি সঙ্গে মেটারনিকের রক্ষণশীল নীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।

 

যুগধর্মকে উপেক্ষা ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে ইউরোপে ক ফরাসি-বিপ্লবজাত আধুনিক ভাবাদর্শগুলি। দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যদিও মেটারনিক বি যুগধর্মকে উপেক্ষা করে পশ্চাদপদ পুরনো নীতিকেই আঁকড়ে ধরতে চান।

 

50. রাশিয়ায় কী কারণে ভূমিদাস প্রথার অবসান হয়েছিল?

 

উত্তর দেয় রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার (১৮৫৫-১৮৮১ খ্রি:) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি এক ঘোষণার দ্বারা ভূমিদাসদের মুক্তি দিলে রুশ ভূমিদাস প্রথার অবসান হয়। ভূমিদাস প্রথা অবসানের কারণ

 

কৃষিক্ষেত্রে ব্যর্থতা: কৃষিক্ষেত্রে রাশিয়ায় নতুন বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে অদক্ষ ভূমিদাসরা তা প্রয়োগে ব্যর্থ হয়। হতোদ্যম ভূমিদাসদের পরিবর্তে স্বাধীন মজুর নিয়োগের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়।

 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে পরাজয়: ভূমিদাসদের নিয়েই গড়ে ওঠা রুশ সেনাবাহিনী ক্রিমিয়ার যুদ্ধে (১৮৫৪-১৮৫৬) পরাজিত হয়। এর জেরে ভূমিদাস প্রথার ব্যর্থতা এবং অপ্রয়োজনীয়তা প্রকাশ হয়ে পড়ে।

 

কৃষক বিক্ষোভ: অত্যাচারিত এবং নিষ্পেষিত ভূমিদাসরা বারংবার বিদ্রোহে সামিল হয়ে রুশ জার সরকারকে বিব্রত করে তোলে। জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের শাসনকালের প্রথম ৬ বছরে অন্তত ৪০০টি কৃষক বিক্ষোভ সংঘটিত হয়।

 

51. কার্বোনারি আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ কেন?

 

উত্তর ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে কার্বোনারিরা দেশে ১৮২০ এবং ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে দু'টি বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়।

 

আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ কেন: কার্বোনারি আন্দোলন সফল না হলেও এর তাৎপর্য অস্বীকার করা যায় না। যেমন-

 

ভুলত্রুটির উপলব্ধি: এই আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় আন্দোলনের কর্মপদ্ধতির অসংগতিগুলি সুস্পষ্ট হয়। এর থেকে নেতারা শিক্ষা নেন যে ভবিষ্যতে আন্দোলনের নীতির পরিবর্তন দরকার।

 

রিসর্জিমেন্টো: কার্বোনারি আন্দোলনের ব্যর্থতার জেরে ইতালি জুড়ে তীব্র জাতীয়তাবাদী জাগরণ দেখা দেয়। এটাই 'রিসর্জিমেন্টো' বা পুনরুত্থান বলে পরিচিত।

 

গ্রন্থাদি প্রকাশ: আন্দোলনের সময় বিভিন্ন বই এবং পত্র-পত্রিকা প্রকাশের দ্বারা দেশবাসীর মনে শাসক বিরোধী তীব্র ঘৃণার মনোভাব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় কাভুর সম্পাদিত 'রিসর্জিমেন্টো' পত্রিকা, জিওবার্তি,আজেগলিয়ো-র নানা রচনা।

 

 • আসল শত্রু : অস্ট্রিয়া মূলত নিষ্ঠুরভাবে কার্বোনারি আন্দোলনগুলি দমন করে। তাই ইতালির মানুষ উপলব্ধি করল, তাদের প্রকৃত শত্রু হলো অস্ট্রিয়া। অস্ট্রিয়াকে বিতাড়িত করতে না পারলে ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব নয়। 

 

52. মেটারনিকতন্ত্র কাকে বলে? মেটারনিক ব্যবস্থা কাকে বলে?

 

উত্তর  টাঢ্য রক্ষণশীল ভাবধারার প্রতীক অস্ট্রীয় প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক ১৮১৫ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সারা ইউরোপে রক্ষণশীল শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ তিমি জানতেন, বহু ভাষাভাষীর দেশ অস্ট্রিয়াতে গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে পড়লে অস্ট্রীয় সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। সে কারণে মেটারনিক প্রাক্-ফরাসি বিপ্লব যুগ বা পুরাতন ব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনার নীতি ও পরিকল্পনা নেন। এটাকেই বলা হয় মেটারনিক ব্যবস্থা।

 

তবে মেটারনিক প্রসূত এই রক্ষণশীল নীতি জাতীয়তাবাদের প্রবাহকে রোধ করতে পারেনি। ঊনবিংশ শতকে নানা আন্দোলন বিশেষত ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ফ্রেব্রুয়ারি বিপ্লব-পরবর্তী গণজাগরণের জোয়ারে মেটারনিক এবং মেটারনিক ব্যবস্থার অবসান হয়। মাথা চাড়া দেয় গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ।

 

53. ভিয়েনা সম্মেলনের ফলে কী সমস্যা দেখা দিয়েছিল?

 

উত্তর নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবিস্তার নীতির কারণে ইউরোপে নানা জটিল সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য নেপোলিয়ন-বিজয়ী চতুর্থ শক্তিজোটের নেতৃত্বে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় ভিয়েনা বৈঠক।

 

ভিয়েনা সম্মেলনের মূল সমস্যাগুলি ছিল:

 

ইউরোপের পুনর্বিন্যাস: নেপোলিয়নের নগ্ন সাম্রাজ্যবিস্তার নীতির কারণে ইউরোপের রাজনৈতিক কাঠামোর যে বড়োমাপের পরিবর্তন হয়েছিল তাকে পুনর্বিন্যস্ত করা।

 

রাজবংশের পুনঃপ্রতিষ্ঠা: ইউরোপের যেসব রাজবংশকে নেপোলিয়ন ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন তাদের পুনরায় ক্ষম তা ফিরিয়ে দেওয়া।

 

ক্ষতিপূরণ প্রদান: নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য ক্ষতিপূরণের বন্দোবস্ত করা।

 

শক্তিসাম্য: ভবিষ্যতে ইউরোপে শক্তিসাম্য ধরে রাখার ব্যবস্থা করা।

 

ফ্রান্সকে প্রতিরোধ: ভবিষ্যতে যাতে নতুন করে ফ্রান্স ইউরোপের শান্তি নষ্ট না করতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

 

54. কী কারণে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ হয়েছিল?

 

উত্তর ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের সুবিশাল এবং ক্ষমতাশালী তুরস্ক সাম্রাজ্য ঊনবিংশ শতকে দুর্বল হয়ে যায়। অত্যাচারী, অক্ষম এবং অযোগ্য তুর্কি সুলতানদের নির্যাতনে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক জাতি ও ধর্মের মানুষ অসন্তুষ্ট হয়। ফরাসি বিপ্লবের জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তুরস্কের অধীনস্থ সার্ব, প্ল্যাভ, বুলগার, গ্রিক ইত্যাদি জাতির জনগণ 

জাতীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। অন্যদিকে, ইউরোপের জরাগ্রস্ত তুরস্ককে দখলের যে প্রবণতা তার কারণে পূর্বাঞ্চল সমস্যা ঘনীভূত হয়। তুরস্কের ক্ষমতাহীনতা এবং অভ্যন্তরীণ কলহের সুযোগে রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর, বসফরাস এবং দার্দানেলিস প্রণালীর উপর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউরোপে যে জটিলতা দেখা দেয়, তারই ফলে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা ঘটে। প্রধানত ধর্মকে ভিত্তি করে এই যুদ্ধ শুরু হলেও বুশ সাম্রাজ্য বিস্তার নীতিই ক্রিমিয়ার যুদ্ধের অন্যতম কারণ।

 

55. মেটারনিক পদ্ধতির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

 

উিত্তর ইউরোপের রাজনৈতিক আকাশে ঊনবিংশ শতকের প্রথম অর্ধে সবথেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন অস্ট্রীয় প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিক। ১৮১৫-১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপীয় রাজনীতিতে মেটারনিকই ছিলেন মুখ্য চালিকাশক্তি। একারণে এই সময়কে বলা হয় 'মেটারনিকের যুগ'

 

মেটারনিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য: প্রধানত ২টি কারণে অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিপ্লব এবং উদারতন্ত্রের বিরোধিতা করেন-

 

প্রথমত, বিপ্লব মধ্যবিত্ত শ্রেণির চেতনাকে জাগ্রত করে। এই নবজাগ্রত মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল সামন্তপ্রথার বিরুদ্ধে। এরা স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের পরিবর্তে প্রজাতান্ত্রিক উদার ভাবধারার আদর্শ প্রচার করে। অভিজাত পরিবারের সন্তান এবং রাজতন্ত্রের গোঁড়া সমর্থক মেটারনিকের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল।

 

দ্বিতীয়ত, ফরাসি বিপ্লব প্রত্যেক জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাস্তববাদী মেটারনিক উপলব্ধি করেন, বিপ্লবের এই উদার ভাবাদর্শ শুধু ফ্রান্সের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না। ক্রমে এটি অস্ট্রিয়াতেও ছড়িয়ে পড়বে। জার্মান, চেকশ্লোভাক, ম্যাগিয়ার, ক্রোট, সার্ব, ইতালীয় ইত্যাদি জাতির সমন্বয়ে গঠিত অস্ট্রিয়াতে 'জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণ'-এর ভাবাদর্শ ঢুকে পড়লে দেশ খণ্ড-বিখণ্ড হতে বাধ্য। তাই মেটারনিক যেনতেন প্রকারে বিপ্লবকে ধ্বংস করতে উদ্যোগ নেন।

 

56. ১৮৪৮ সালে ফ্রান্সের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণগুলি আলাচনা করো।

 

উত্তর ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জুলাই বিপ্লবের ফলে বুরবোঁ রাজবংশ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ফ্রান্সে ক্ষমতায় আসেন অর্লিয়েন্স বংশীয় লুই ফিলিপ। কিন্তু ১৮ বছরের মধ্যে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে অন্য একটি অভ্যুত্থানে জুলাই রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র।

 

ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের কারণ -

 

রাজনৈতিক দলগুলির অসহযোগিতা: রাজতন্ত্রে নারাজ প্রজাতন্ত্রীরা ছাড়াও সে সময় ফ্রান্সে বিক্ষুব্ধ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নানা কারণে জুলাই রাজতন্ত্রের বিরোধিতায় নেমেছিল। যথা-

 

ন্যায্য অধিকারবাদী দলের বিরোধিতা: বুরবোঁপন্থীদের ধারণা ছিল জুলাই রাজতন্ত্র ছিল অবৈধ এবং লুই ফিলিপ ছিলেন বেআইনি শাসক। বুরবোঁপন্থীরা দশম চার্লসের পৌত্র কাউন্ট অব চ্যামবোর্ডকেই বৈধ শাসক বলে মনে করত।

 

বোনাপার্টিস্ট দলের বিরোধিতা: মধ্যপন্থী বোনাপার্টিস্টরা ফিলিপ-এর হতাশাজনক পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে নেপোলিয়নের গৌরবোজ্জ্বল পররাষ্ট্র নীতির তুলনা করে ফিলিপের দুর্বল শাসনের অবসান চায়। তারা নেপোলিয়নের ভ্রাতুষ্পুত্র লুই নেপোলিয়নকে ফ্রান্সের সিংহাসনে বসাতে উৎসাহী হয়ে ওঠে।

 

সমাজতন্ত্রী দলের বিরোধিতা: লুই ব্ল্যাঙ্ক, সেন্ট সাইমন, চার্লস ফ্ররিয়ার প্রমুখের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রীরা লুই ফিলিপের অর্থনীতির তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতা শুরু করে।

 

প্রজাতন্ত্রী দলের বিরোধিতা: সম্পত্তিকে ফিলিপ ভোটাধিকারের মানদণ্ড স্থির করলে বহু দরিদ্র মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাই প্রজাতন্ত্রীরা জুলাই রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে।

 

যাজকপন্থী দলের বিরোধিতা: শিক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্ব যাজক সম্প্রদায়ের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার ফলে যাজক শ্রেণি লুই ফিলিপের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সমালোচনা করে জুলাই রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ দাবি করে।

 

শ্রমিক অসন্তোষ: শিল্পবিপ্লবের প্রথম পর্বে ফ্রান্সে শ্রমিকদের অবস্থা ছিল খুব করুণ। শিল্পবিপ্লবের ফলে সেখানে গড়ে ওঠে কলকারখানা, কিন্তু তৈরি হয়নি কোনো সুষ্ঠু শিল্পনীতি। একারণে অল্প মজুরিতে শ্রমিকদের বেশি সময় খাটতে বাধ্য করা হতো।

 

অর্থনৈতিক সংকট: লুই ফিলিপের আমলে ফ্রান্সে দেখা দেয় তীব্র অর্থ সংকট। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ বিভিন্ন কারণে শস্যহানির ফলে বাণিজ্য এবং শিল্পক্ষেত্রেও মন্দা বেকার সমস্যা বৃদ্ধি করে। এই সব সমস্যা সমাধানে অক্ষম সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ফ্রান্সবাসী তৎপর হয়ে ওঠে। বোলন, লিও, স্টাম্বুর্গ প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহের, প্রকৃত কারণ ছিল এই আর্থিক সংকট।

 

ফিলিপের মধ্যপন্থা নীতি: বিপ্লবের আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলেও ফিলিপ মধ্যপন্থা নীতি অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। ফলে ফ্রান্সে তিনি রক্ষণশীল বা উদারপন্থী কোনো দলেরই আস্থাভাজন হতে পারেননি। তাঁর এই ব্যর্থতা বিপ্লবের পথ সুগম করেছিল।

 

জনতার উপর গুলিবর্ষণ: লুই ফিলিপের দমনমূলক আচরণে হতাশ হয়ে উদারতন্ত্রী দল ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি প্যারিসের ময়দানে এক জনসভার আয়োজন করে। কিন্তু সরকার ওই সভাকে অনুমতি না দিলে জনগণ গিজোর পদত্যাগ দাবি করে এবং তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখায়। ওই সময় গিজোর দেহরক্ষীরা উত্তাল জনতাকে লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করলে ২৩ জন নিহত এবং ৩০ জন জখম হয়। ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত নীতিগুলির পরিচয় দাও।

 

দিঘায় ভূমিকা: ১৮১৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে ১৮১৫-এর জুন পর্যন্ত ভিয়েনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জর লোয়ি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স ১৮১৪-১৮১৭ বইতে মন্তব্য করেছেন, "ভিয়েনা সম্মেলন ছিল তিনটি চুক্তির সমষ্টি মাত্র।"

 

ন্যায্য অধিকার নীতি: ফরাসি বিপ্লব শুরুর আগে যে রাজবংশগুলি রাজত্ব করছিল তাদের নিজ রাজ্যে পুনঃস্থাপিত করাই ছিল ন্যায্য অধিকার নীতির উদ্দেশ্য। ফরাসি বিপ্লবের কালে বুরবোঁ রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলেও এই নীতির দ্বারা তাদের আবার প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক গর্ডন ক্রেইগ বলেছেন, "নেপোলিয়নের দ্বারা কোনো রাজা বা রাজবংশ সিংহাসন হারালে তাকে ন্যায্য অধিকার নীতির দ্বারা রাজ্য ও সিংহাসন ফিরিয়ে দেওয়া হবে।" ন্যায্য অধিকার নীতির মাধ্যমে হল্যান্ডে অরেঞ্জ রাজপরিবার, সার্ডিনিয়ায় পিডমন্ট স্যাভয় রাজবংশ, পোপকে ইতালি রাজ্য, স্পেনে ও দক্ষিণ ইতালির নেপল্স এবং সিসিলিতে বুরবোঁ বংশের শাখাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

 

ক্ষতিপূরণ নীতি: নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে যে সমস্ত দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা হেরে গিয়ে ক্ষতি স্বীকার করেছে তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়াই ছিল এই নীতির মুখ্য উদ্দেশ্য। ইংল্যান্ড পেয়েছিল মাল্টা, আইওনীয় দ্বীপপুঞ্জ, শ্রীলঙ্কা, কেপকলোনি, সুইডেন ও নরওয়ে; রাশিয়া পেয়েছিল ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য অঞ্চল; প্রাশিয়া পশ্চিম পোমিরানিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চল; অস্ট্রিয়া পূর্ব সাইলেসিয়া ও ব্যাভেরিয়া ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেয়েছিল।

 

শক্তিসাম্য নীতি : ফ্রান্স যাতে ভবিষ্যতে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে  ইউরোপের শাস্তি বিন্নিত না করতে পারে সে জন্য ফ্রান্সের প্রতিবেশী দেশগুলির ক্ষমতাবৃদ্ধি করাই ছিল এই নীতির উদ্দেশ্য। ফ্রান্সের চতুর্দিকে শক্তিশালী রাজ্যের যে বেষ্টনী তৈরি করা হয় তাকে একটা দেশ মেনে সমতা বজায় রাখার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। আবার অন্য দেশগুলির পারস্পরিক শক্তির মধ্যে সমতা রক্ষার নীতি নেওয়া হয়। ভিয়েনা সম্মেলনে অনুমোদিত ব্যবস্থা এই তিনটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তা ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। সীম্যান বলেন, "ভাসাই ও ইউট্রেক্ট থেকে ভিয়েনা তুলনামূলকভাবে ভালো নিষ্পত্তি ছিল।"

 

57. মাৎসিনি এবং কাভুর ইতালির ঐক্য আন্দোলনে কী ভূমিকা নেন?

 

উত্তর মাৎসিনির অবদান: জোসেফ মাৎসিনি ছিলেন ইতালির ঐক্য আন্দোলনের প্রাণপুরুষ এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নিবেদিত প্রাণ। ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালির জেনোয়াতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন কার্বোনারি দলের সদস্য। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে মাৎসিনি গড়ে তোলেন ইয়ং ইতালি নামে একটি গোষ্ঠী। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল-(ক) দেশের যুব সম্প্রদায়কে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা।

 

(খ) ভবিষ্যত আন্দোলনের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দান। এই দলের লক্ষ্য ছিল ইতালির আপন শক্তি দ্বারা অস্ট্রিয়াকে সে দেশ থেকে হঠিয়ে দেওয়া।

 

অস্ট্রিয়া-বিরোধী অভ্যুত্থান: ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মাৎসিনির 'ইয়ং ইতালি' দল ইতালির লম্বার্ডি, ভেনিস এবং রোমে বিদ্রোহ শুরু করে। মাৎসিনির উৎসাহে টাস্কানি ও রোমে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রজাতন্ত্র। পিয়েডমন্টের রাজা চার্লস এলবার্ট বিদ্রোহীদের পক্ষে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অবশ্য ফ্রান্স এবং অস্ট্রিয়ার হস্তক্ষেপে বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মাৎসিনি বাধ্য হয়ে ইংল্যান্ডে আশ্রয় নেন।

 

কাভুরের অবদান: যাঁর বাস্তবধর্মী নেতৃত্বে ইতালির ঐক্য আন্দোলন অনেকাংশে সফল হয়েছিল তিনি হলেন কাউন্ট ক্যামিলো বেনসো ডি কাভুর। ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে পিয়েডমন্টের এক অভিজাত পরিবারে কাভুরের জন্ম হয়। তাঁকে বলা হয় ইতালির ঐক্য আন্দোলনের মস্তিষ্ক।

 

কাভুরের নীতি: মাৎসিনির প্রজাতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না কাউন্ট কাভুর।

 

প্রথমত, ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে পিয়েডমন্টের রাজা ভিক্টর ইমানুয়েলের প্রধানমন্ত্রী হন কাভুর। তিনি চেয়েছিলেন পিয়েডমন্টরাজের নেতৃত্বে ইতালির ঐক্যসাধন।

 

দ্বিতীয়ত, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, বৈদেশিক শক্তির সাহায্য ছাড়া অস্ট্রিয়ার কবল থেকে ইতালিকে স্বাধীন করা সম্ভব নয়।

 

তৃতীয়ত, কাভুর ইতালির সমস্যাকে আন্তর্জাতিক সমস্যা করে তুলতে চেয়েছিলেন তাঁর মতে সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় শক্তিগুলির সাহায্য পাওয়া সম্ভব।

 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ: ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ক্রিমিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে কাভুর বুদ্ধি করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের পক্ষ নেন। যুদ্ধের পর ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস সম্মেলনে কান্ডুর ইতালির সমস্যার প্রতি ইউরোপীয় শক্তিগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এভাবে তিনি ফ্রান্সের কৃতজ্ঞতা অর্জনে সমর্থ হন।

 

প্লমবিয়ার্সের চুক্তি: ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে কাউন্ট কাভুর ও ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের মধ্যে প্লমবিয়ার্সের চুক্তি হয়। এই সন্ধিতে তৃতীয় নেপোলিয়ন ইতালির ঐক্য আন্দোলনে পিয়েডমন্টকে সামরিক সহায়তা দিতে রাজি হন।

 

সামরিক অভিযান: ফরাসি সম্রাটের সাহায্যে কাভুর অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে দেন। জুরিখের সন্ধি অনুযায়ী অস্ট্রিয়ার কাছ থেকে লম্বার্ডি লাভ করেন। এর মধ্যে গণবিদ্রোহের জেরে পার্মা, মডেনা, টাসকানি এবং রোম থেকে বিদেশি শাসকরা বিতাড়িত হয়। পরে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে গণভোটের ভিত্তিতে রাজ্যগুলি পিয়েডমন্টের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এভাবে নেপল্স, ভেনিসিয়া, সিসিলি এবং পোপের রাজ্য ছাড়া প্রায় সারা ইতালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

 

58. জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিসমার্কের কী ভূমিকা ছিল?

 

উত্তর বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানির ঐক্যসাধন: প্রথম উইলিয়াম ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রাশিয়ার রাজা হন। সামরিক শক্তিতে বিশ্বাসী উইলিয়াম প্রাশিয়ার নেতৃত্বে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার পক্ষপাতী ছিলেন। এমতাবস্থায় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে অটো ফন বিসমার্ক নামক এক তুখোড় রাজনীতিবিদ প্রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বা চ্যান্সেলার হলে জার্মান ঐক্য আন্দোলনে নতুন যুগ শুরু হয়।

 

 বিসমার্কের রাষ্ট্রভাবনা: ব্রান্ডেনবার্গের এক জমিদার পরিবারে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে বিসমার্কের জন্ম হয়। কাভুরের মতো বিসমার্কও ছিলেন রাজতন্ত্রের অন্ধ সমর্থক। তিনি রাজতন্ত্রের অধীনে প্রাশিয়ার নেতৃত্বেই জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে বিসমার্ক যুদ্ধনীতি গ্রহণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন। 'রক্ত ও লৌহ' নীতির মাধ্যমে তিনটি যুদ্ধের দ্বারা তিনি জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেন।

 

ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ (১৮৬৪ খ্রি:) : ডেনমার্ক এবং প্রাশিয়ার সীমান্তে অবস্থিত দু'টি অঞ্চল স্লেজভিগ ও হলস্টেন ডেনমার্কের দখলে ছিল। এই দু'টি রাজ্য পাওয়ার আশায় অস্ট্রিয়াকে পক্ষে নিয়ে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে বিসমার্ক ডেনমার্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যুদ্ধে হেরে গিয়ে গ্যাস্টিনের সন্ধিতে স্বাক্ষর করে ডেনমার্ক। সন্ধির শর্তানুসারে হলস্টেনের দায়িত্ব দেওয়া হলো অস্ট্রিয়াকে ও প্রাশিয়া পেল স্লেজভিগের কর্তৃত্ব।

 

অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ (১৮৬৬ খ্রি:): 'কূটনীতির জাদুকর' বিসমার্ক শুরু থেকেই জানতেন যে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে অস্ট্রিয়ার কিছু অঞ্চল ছিনিয়ে আনা প্রয়োজন। এজন্য বিসমার্ক গোপনে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইতালিকে পক্ষে এনে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে স্যাডোয়ার যুদ্ধে অস্ট্রিয়া শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। প্রাগের সন্ধির মাধ্যমে রাইন নদীর উত্তর দিকের সমস্ত অঞ্চলে অস্ট্রিয়া প্রাশিয়ার কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।

 

ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ (১৮৭০ খ্রি:): বিসমার্ক ভালোভাবে জানতেন যে দক্ষিণ জার্মানির ফরাসি আওতাধীন অঞ্চলগুলিকে ফ্রান্সের দখলমুক্ত না করতে পারলে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করা অসম্ভব। এজন্য ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য। স্পেনের সিংহাসনের উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রাশিয়া-ফ্রান্স বিরোধিতার সূত্রপাত। বিসমার্ক তাঁর কূটনীতির সাহায্যে ফ্রান্সের শাসক তৃতীয় নেপোলিয়নকে প্রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্দ ঘোষণা করতে বাধ্য করেন। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও প্রাশিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সেডান যুদ্ধ। যুদ্ধে তৃতীয় নেপোলিয়ন পরাজিত হন এবং ফ্রাঙ্কফোর্টের সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হন। সন্ধির শর্ত অনুসারে দক্ষিণ জার্মানির রাজ্যগুলি প্রাশিয়ার দখলে আসে। ফ্রান্স এই সংযুক্তি মেনে নেয়।

 

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি ভার্সাই শহরে প্রাশিয়ার রাজা উইলিয়াম 'জার্মান সম্রাট' উপাধি গ্রহণ করে জার্মানির সিংহাসনে বসেন। এভাবে জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

 

59. ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই বিপ্লবের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

 

উত্তর নেপোলিয়নের পতনের পর ভিয়েনা বৈঠকে গৃহীত ন্যায্য অধিকার নীতি অনুসারে ফ্রান্সের রাজা হন বুরবোঁবংশীয় অষ্টাদশ লুই। কিন্তু লুই রাজতন্ত্রকে পুরো আগের অবস্থায় তিনি ফেরাননি। কারণ অষ্টাদশ লুই বুঝেছিলেন যে বিগত ২৫ বছর ধরে ফ্রান্সে যেসব পরিবর্তন হয়েছে তাকে পুরোপুরি মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি বিপ্লবী ভাবাদর্শের সঙ্গে পুনঃস্থাপিত রাজতন্ত্রের সমতা রক্ষার চেষ্টা করেন। অবশ্য শেষপর্যন্ত তাঁর চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

 

বিপ্লবের কারণ: জুলাই বিপ্লবের মূল কারণ ছিল জাতীয়তাবাদ বনাম রাজতন্ত্রের দ্বন্দু। বিপ্লবের উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হলো

 

প্রতিক্রিয়াশীল নীতি: ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে অষ্টাদশ লুইয়ের মৃত্যুর পর ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন দশম চার্লস। এসময় দেশে চরম প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ভিলল এবং মার্টিনাক নামে চার্লসের দুই মন্ত্রী প্রতিক্রিয়াশীল নীতি অনুসরণ করেন। 

 

উদারপন্থীদের সাফল্যে দশম চার্লসের প্রতিক্রিয়া: আইনসভার ভোটে উদারপন্থীদের প্রভাব বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে দশম চার্লস যাজক এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের সমর্থক প্রিন্স পলিগন্যাক নামক এক প্রতিক্রিয়াশীল ধুরন্ধর ব্যক্তিকে মন্ত্রীপদে নিয়োগ করেন এবং উদারনৈতিক শাসন ব্যবস্থাকে পুরো পাল্টে স্বৈরতন্ত্র স্থাপনের ষড়যন্ত্র করতে থাকেন।

 

 জুলাই অর্ডিন্যান্স : ফ্রান্সের আর্থিক সংকট দূরীকরণ এবং উদারপন্থীদের সব বিরোধিতা আটকাবার জন্য পলিগন্যাক চারটি অর্ডিন্যান্স বা অতিরিক্ত আইন জারি করেন ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই। আদেশ অনুযায়ী – (ক) প্রতিনিধি সভা বেআইনি ঘোষিত হয়। (খ) ভোটদাতাদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়। (গ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয় এবং (ঘ) জাতীয় সভার নতুন নির্বাচনের আদেশ দেওয়া হয়।

 

প্যারিস বিদ্রোহ: ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই জুলাই অর্ডিন্যান্স ঘোষণার পরের দিনই প্যারিসে বিদ্রোহ দেখা দেয়। উদারপন্থী নেতা অ্যাডলফ থিয়ার্সের নেতৃত্বে উদারপন্থীরা একটি স্মারকলিপি দিয়ে সরকারের বেআইনি কার্যকলাপ প্রত্যাহার করার ডাক দেন। কিন্তু সম্রাট দশম চার্লস এই বিদ্রোহ প্রতিরোধের চেষ্টা করলে রাজার সৈন্যদের অধিকাংশই বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতি দেখায় এবং শেষ মুহূর্তে তিনি ঘোষণাগুলি বাতিল করে মিটমাটের চেষ্টা করেন, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়।

 

মূল্যায়ন : দশম চার্লস এই অর্ডিন্যান্স দ্বারা অষ্টাদশ লুই-এর চার্টার-এর আদর্শকে ভেস্তে দিয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের রাজতন্ত্রকে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। বিরোধীদের কাছেও এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার প্র। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে অর্ডিন্যান্স ঘোষণার পরই সংবাদপত্রগুলিতে ধর্মঘট ডাকা হয়। প্যারিস সহ সারা দেশে দেখা দেয় বিক্ষোভ। দশম চার্লস এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তাই রাজকীয় বাহিনী অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। অগত্যা দশম চার্লস নিজের পৌত্র ডিউক-ডি বর্দো-র অনুকূলে সিংহাসন ত্যাগ করেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা অর্লিয়েন্সবংশীয় লুই ফিলিপকে ফ্রান্সের সিংহাসনে বসিয়ে দেয় (১৮৩০ খ্রি:)। এভাবেই জুলাই বিপ্লব শেষ হয়।

 

Paid Answer Link (Membership User)