অধ্যায়.1

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র পাঠ ও ব্যাখ্যা

-----------------------------------------


Short Question Answer :

1. Topographical Map-এ কী কী বিষয় দেখানো হয়?

উত্তব়ঃ প্রাকৃতিক (যেমন-ভূপ্রকৃতি, নদনদী, উদ্ভিদের বণ্টন) ও সাংস্কৃতিক (যেমন-কৃষিজমি, যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা এবং জনবসতির বণ্টন) বিষয় দেখানো হয়।


2. 73 M/14 Toposheet-এর স্কেল কত হবে?

উত্তব়ঃ 73 M/14 Toposheet-এর স্কেল 1:50,000 বা 2 সেমিতে 1 কিমি হবে।


3. PF ও PS-এর অর্থ কী?

উত্তব়ঃ PF-এর অর্থ হল-Protected Forest (সুরক্ষিত অরণ্য) ও PS-এর অর্থ হল-Police Station (থানা)।


4. 73 ও 73M নম্বর টোপোশিটগুলির স্কেল কী কী?

উত্তব়ঃ 73 ও 73M নম্বর টোপোশিটগুলির স্কেল যথাক্রমে-1: 1,000,000 এবং 1: 2,50,000।


5. আন্তর্জাতিক সিরিজ অনুসারে কতগুলি Toposheet আছে?

উত্তব়ঃ আন্তর্জাতিক সিরিজ অনুসারে 2,222 টি Toposheet আছে।


6. স্পার কাকে বলে?

উত্তব়ঃ পাহাড় বা পর্বতের যে অংশ ক্রমান্বয়ে দুটি নদী-উপত্যকার মধ্যবর্তী অংশে ধীরে ধীরে নেমে যায় তাকে স্পার বলে।


7. কোনো টোপোশিটের সূচক নং পড়া যাচ্ছে না। তুমি কীভাবে এই টোপোশিটের সূচক সংখ্যা জানতে পারবে?

উত্তব়ঃ মানচিত্রের স্কেল, অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার বিস্তৃতির সাহায্যে টোপোশিটের সূচক সংখ্যা জানা যাবে।


8. সমোন্নতিরেখার কোন্ ধরনের বিন্যাস নদী-উপত্যকা বা স্পারকে বোঝায়?

উত্তব়ঃ নদী-উপত্যকার ক্ষেত্রে সমোন্নতিরেখার 'V'-এর তীক্ষ্ম বা সুচালো দিকটি উচ্চভূমির দিকে এবং স্পারের ক্ষেত্রে সমোন্নতিরেখার জিহ্বার অগ্রভাগ নিম্নভূমির দিকে বর্ধিত থাকে। 008


9. নোল (Knoll) ও কল্ (Col)-এর মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তব়ঃসমভূমির মধ্যে অবস্থিত এই উঁচু ঢিবিকে নোল বলে এবং পার্বত্য বা মালভূমি দুটি উচ্চ স্থানের মধ্যবর্তী নীচু স্থানকে কল্ বলে।


10. মোনাত্মক কীভাবে চিনবে?

উত্তব়ঃক্ষয়জাত সমভূমির মধ্যে গোলাকৃতি সমোন্নতিরেখার অবস্থান দেখে মোনাত্মক চেনা যায়।


11. শিলা দারণ ও ফাটলযুক্ত হলে কোন্ ধরনের নদী নকশা তৈরি হয়?

উত্তব়ঃশিলা দারণ ও ফাটলযুক্ত হলে জাফরিরূপী ও আয়তাকার নদী নকশা তৈরি হয়।


12. পাকা রাস্তা ও কাঁচা রাস্তা টোপোশিট থেকে বুঝবে কীভাবে?

উত্তব়ঃটোপোশিটে লাল রঙের দুটি সমান্তরাল নিরবচ্ছিন্ন রেখা দেখে পাকা রাস্তা এবং লাল রঙের দুটি সমান্তরাল বিচ্ছিন্ন রেখা দেখে কাঁচা রাস্তা চেনা যাবে।


13. NH-33 লেখা থাকলে কী বুঝবে?

উত্তব়ঃ NH-33 লেখা থাকলে বুঝতে হবে এটি 33 নং জাতীয় সড়ক।


14. গো-যান পথ কীভাবে চিনবে?

উত্তব়ঃ একটি নিরবচ্ছিন্ন লাল রেখা দ্বারা গো-যান পথ চেনা যাবে।


15. বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী কোন ধরনের ভূতাত্ত্বিক গঠনে দেখা যায়? •

উত্তব়ঃ সমপ্রকৃতির শিলা লক্ষণযুক্ত ভূতাত্ত্বিক গঠনে বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী দেখা যায়।


16. নদীবাঁক দেখে ভূমিরূপের কোন্ বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়?

উত্তব়ঃ নদীবাঁক দেখে ভূমিরূপের অপ্রতিসম নদী উপত্যকার প্রকৃতি বোঝা যায়।


17. সংরক্ষিত (Reserved) বনভূমি কাকে বলে?

উত্তব়ঃ যে বনভূমির কিছু অংশ সরকারি অনুমতিসাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য সেই বনভূমিকে সংরক্ষিত বনভূমি বলে।


18. সুরক্ষিত (Protected) অরণ্য বলতে কী বোঝ? 

উত্তব়ঃ যে বনভূমির বাস্তুতন্ত্র উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের জন্য সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষিত বা নিয়ন্ত্রিত তাকে সুরক্ষিত বনভূমি বলে। এই বনভূমির কোনো অংশই সাধারণের ব্যবহারের জন্য নয়।


19. গম্বুজাকৃতি বা শঙ্কু আকৃতির পাহাড় থাকলে কোন্ নদী নকশা গড়ে ওঠে?

উত্তব়ঃ গম্বুজাকৃতি বা শঙ্কু আকৃতির পাহাড় থাকলে কেন্দ্রবিমুখ নদী নকশা গড়ে ওঠে।


20. জনবসতি বা মনুষ্যবসতি কয়প্রকার ও কী কী?

উত্তব়ঃ জনবসতি দুইপ্রকার-গ্রামীণ জনবসতি ও পৌর জনবসতি।


21. জনবসতির ধরন বা বিন্যাস বলতে কী বোঝ?

উত্তব়ঃ জনবসতির বাহ্যিক বা জ্যামিতিক রূপকে জনবসতির ধরন বা বিন্যাস বলে।


22. দণ্ডাকৃতি বা রৈখিক বসতি কখন গড়ে ওঠে?

উত্তব়ঃ যখন জনবসতিগুলি নদীর তীর বরাবর অথবা রাস্তার দুই পাশে বিন্যস্ত হয় তখন রৈখিক বা দণ্ডাকৃতি জনবসতি গড়ে ওঠে।


23. হ্যামলেট বসতি বলতে কী বোঝ?

উত্তব়ঃ অতি ক্ষুদ্র গ্রামীণ বসতিকে হ্যামলেট বসতি বলে। এটি সাধারণত প্রতিকূল পরিবেশে প্রায় যোগাযোগহীন অবস্থায় বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি বাড়ি নিয়ে গড়ে ওঠে।


24. খুবই বন্ধুর ভূপ্রকৃতি থাকলে কোন্ ধরনের বসতি গড়ে ওঠে? •

উত্তব়ঃ খুবই বন্ধুর ভূপ্রকৃতি থাকলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে।


25. রাস্তার ধার বরাবর কোন্ ধরনের বসতি দেখা যায়?

উত্তব়ঃ রাস্তার ধার বরাবর দণ্ডাকৃতি বা রৈখিক জনবসতি দেখা যায়।


26. রৈখিক দূরত্বের ভিত্তিতে গ্রামীণ বসতির প্রকারভেদ কী কী?

উত্তব়ঃ রৈখিক দূরত্বের ভিত্তিতে গ্রামীণ বসতি দুইপ্রকার-গোষ্ঠীবদ্ধ ও বিক্ষিপ্ত জনবসতি।


27. ভারতীয় জরিপ বিভাগ কবে স্থাপিত হয়?

উত্তব়ঃ ভারতীয় জরিপ বিভাগ 1967 সালে স্থাপিত হয়।


28. ভারতীয় জরিপ বিভাগের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?

উত্তব়ঃ ভারতীয় জরিপ বিভাগের সদর দপ্তর দেরাদুনে অবস্থিত।


29. ভারতীয় জরিপ বিভাগের একটি দপ্তর পশ্চিমবঙ্গের কোথায় অবস্থিত?

উত্তব়ঃ ভারতীয় জরিপ বিভাগের একটি দপ্তর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার উড স্ট্রিটে অবস্থিত।


30. কোনো টোপোশিটের সূচক নং পড়া যাচ্ছে না। তুমি কীভাবে এই টোপোশিটের সূচক সংখ্যা জানতে পারবে?


উত্তব় : মানচিত্রের স্কেল, অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার বিস্তৃতির সাহায্যে টোপোশিটের সূচক সংখ্যা জানা যাবে।


31. 1:50,000 স্কেলের টোপোশিটের সমোন্নতি রেখার ব্যবধান কত হয়?


উত্তব় : 1:50,000 স্কেলের টোপোশিটের সমোন্নতিরেখার ব্যবধান 10 মিটার বা 20 মিটার হয়।


32. 4° × 4° ব্যবধানে আঁকা টোপোশিটের সূচক নম্বরের উদাহরণ দাও।


উত্তব় : 4° × 4° ব্যবধানে আঁকা টোপোশিটের সূচক নম্বরের উদাহরণ- 73,74 ইত্যাদি।


33. 1°×1° ব্যবধানে আঁকা কোনো একটি টোপোশিটের সূচক নং কত তার উদাহরণ দাও।


উত্তব় : 1°×1° ব্যবধানে আঁকা কোনো একটি টোপোশিটের সূচক নং- 73J, 73F, 75F ইত্যাদি।


34. 15' x 15' ব্যবধানে আঁকা একটি টোপোশিটের সূচক নং কত তার উদাহরণ দাও।


উত্তব় : 15' x 15' ব্যবধানে আঁকা একটি টোপোশিটের সুচক নং-73J/6, 73F/14, 75F/12 ইত্যাদি।



35. ভারতীয় জরিপ বিভাগের অন্যতম কাজ কী?


উত্তব় :  ভারতীয় জরিপ বিভাগের অন্যতম কাজ হল-জরিপ কাজের মাধ্যমে টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র প্রস্তুত করা।



36. ভূগুতট (Scarp) বা খাড়া ঢাল কী?


উত্তব় : পাহাড়, পর্বত বা মালভূমির অপেক্ষাকৃত খাড়া ঢালবিশিষ্ট অংশকে ভূগুতট বলে।



37. মানচিত্র থেকে গম্বুজাকৃতির পাহাড় চিহ্নিতকরণের উপায় কী?


উত্তব় : সমোন্নতিরেখাগুলি প্রায় বৃত্তাকার এবং এদের অন্তর্বর্তী দূরত্ব বেশি হয়। বৃত্তগুলি কেন্দ্রের দিকে ক্রমশ ছোটো হয় কিন্তু বিন্দুতে পরিণত হয় না। সমোন্নতি রেখার মান কেন্দ্রে বেশি থাকে এবং বাইরের দিকে কমতে থাকে।



38. মানচিত্রে সুষম ঢাল কীভাবে চিহ্নিত করবে?


উত্তব় : মানচিত্রের সমোন্নতিরেখাগুলির মধ্যবর্তী দূরত্ব সর্বত্র সমান হলে সুষম ঢাল চিহ্নিত করা যাবে।



39. মানচিত্রে তরঙ্গায়িত ঢাল চিহ্নিতকরণের উপায় কী?


উত্তব় : সমোন্নতিরেখাগুলির পর্যায়ক্রমিকভাবে ঘনঘন এবং দূরে দূরে অবস্থান দেখে তরঙ্গায়িত ঢাল চিহ্নিত করা যায়।



Long Question Answer


প্রশ্ন.1 ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র কাকে বলে? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। এই মানচিত্রের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো। 


ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র


যে মানচিত্রে ভূপৃষ্ঠের প্রাকৃতিক (যেমন-ভূমিরূপ, নদনদী, উদ্ভিদ ইত্যাদি) ও সাংস্কৃতিক (যেমন-জনবসতি, রাস্তা ইত্যাদি) উপাদানগুলি বিভিন্ন প্রতীক চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্কেলে চিত্রায়িত করা হয় তাকে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র বলে।


ডুবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ


সাধারণ মানচিত্র অপেক্ষা ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের বিশেষ কতকগুলি বৈশিষ্ট্য থাকে। এগুলি হল-


  1. এই ধরনের মানচিত্র একটি নির্দিষ্ট অভিক্ষেপে ও সুনির্দিষ্ট স্কেলে আঁকা হয়।


  1. সুনির্দিষ্ট স্কেলে আঁকা মানচিত্রগুলির অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত নির্দিষ্ট পরিসর বা বিস্তার থাকে।


  1. নিখুঁতভাবে জরিপ কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যের (Primary Data) ভিত্তিতে এই মানচিত্র আঁকা হয়। বর্তমানে উপগ্রহ চিত্র কিংবা আকাশ থেকে তোলা চিত্র (Satellite Imagery and Aerial Photo) থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে আরও নিখুঁতভাবে এই মানচিত্রকে পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হয়।


  1. কোনো একটি নির্দিষ্ট উপাদানের পরিবর্তে নির্বাচিত কিছু প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের সমাবেশ এই মানচিত্রে দেখানো হয়।


ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা


ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন-


  1. ভূপ্রকৃতি, নদনদী, হ্রদ, পুকুর, বনভূমি ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিষয়গুলির বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা যায়।


  1. রাস্তাঘাট ও যাতায়াত ব্যবস্থা, লোকবসতি ইত্যাদি সাংস্কৃতিক বিষয় সম্বন্ধে জানা যায়।


  1. প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক বা নির্ভরতা সম্বন্ধে জানা ও বিশ্লেষণ করা যায়।


  1. কোনো অঞ্চলের বিভিন্ন সম্পদ সম্পর্কে সমীক্ষা করা যায়।


  1. সামরিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা প্রভৃতি কারণেও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র পাঠ করা হয়।



প্রশ্ন.2 বিভিন্ন সিরিজের ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রগুলি কী কী? ভারতীয় জরিপ বিভাগ প্রদত্ত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের সূচক সংখ্যা কীভাবে নির্ণয়


বিভিন্ন সিরিজের ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র


ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দেশীয় স্তরে প্রস্তুত করা হয়। এরকম এক-একটি ভিন্ন স্তরে প্রস্তুত মানচিত্রকে এক-একটি সিরিজ ধরা হয়।


যেমন-


[1] আন্তর্জাতিক সিরিজ: আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী এই মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়। আন্তর্জাতিক অভিক্ষেপের (International Projection) ওপর 1: 1,000,000 স্কেলে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র অঙ্কন করা হয়।


[2] দক্ষিণ এশীয় সিরিজ: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং পূর্ব এশিয়ার চিন প্রভৃতি দেশের মানচিত্র এই সিরিজের অন্তর্গত। 1:2,00,000 স্কেলে এই মানচিত্রগুলি আঁকা হয়।


[3] ভারত ও প্রতিবেশী দেশসমূহের সিরিজ: ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য 1:1,000,000 স্কেল ধরে মানচিত্র আঁকা হয়। সমগ্র দেশটিকে 4° × 4° অনুসারে ভাগ করে বিভিন্ন মানচিত্র বা শিট প্রস্তুত করা হয়।


ভারতীয় জরিপ বিভাগের মানচিত্রের সূচক সংখ্যা নির্ণয়ের পদ্ধতি


জরিপের সুবিধার জন্য সার্ভে অব ইন্ডিয়া ভারতীয় উপমহাদেশের-44° পূর্ব থেকে 104° পূর্ব এবং 4° উত্তর থেকে 40° উত্তর পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে 4°×4° গ্রিডে ভাগ করেছে। যার মোট গ্রিড সংখ্যা 135। এর মধ্যে সার্ভে বা জরিপ করা হয় 106 টি গ্রিডের। ভারতের গ্রিডগুলি 40 থেকে 92 সংখ্যার


অন্তর্গত। এইরূপ 4° × 4° -র এক-একটি শিটের স্কেল 1 ইঞ্চিতে 16 মাইল বা 1 সেমিতে 10 কিমি নির্দেশ করে। এই ধরনের মানচিত্রের সূচক সংখ্যা হল- X 72, 73, 83 প্রভৃতি।

চিত্র 1.1 ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের সূচক সংখ্যা নির্ণয়


পুনরায় 4 degu * 4 dig -এর প্রতিটি গ্রিডকে 1 dig * 1 dig গ্রিডে 16টি অংশে ভাগ করা হয়। এই শিটের স্কেল ধরা হয় 1 ইঞ্চিতে 4 মাইল (কোয়ার্টার ইঞ্চ শিট) বা 1 সেমিতে । এই ধরনের শিটগুলির সংখ্যা-72A, 72B কিংবা 73M, 73P ইত্যাদি।


আবার শিটকে 15' * 15' গ্রিডে 16টি অংশে ভাগ করা হয়। যাদের স্কেল 1 ইঞ্চিতে 1 মাইল বা 2 সেমিতে 1 কিমি। এই শিটগুলির সূচক সংখ্যা হল A/1 72 * B/4 72 * M/16 প্রভৃতি।


হেবে 1° শিটকে 30' * 30' গ্রিডে 4টি অংশেও ভাগ করা হয়। এদের ইঞ্চ শিট বলা হয়, যাদের স্কেল 1 ইঞ্চিতে 2 মাইল বা 1 সেমিতে 1 কিমি। বর্তমানে এইসব শিটের কোনো প্রচলন নেই। 1/2


প্রশ্ন.3 প্রদত্ত মালভূমি অঞ্চলের টোপোশিট থেকে ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করো।


সূচনা


  1.  টোপোশিট রেফারেন্স নং-73J/8।


  1. ভৌগোলিক অবস্থান- (i) 22°0′ উত্তর-22°15′ উত্তর ও 86°15′ পূর্ব-86°30′ পূর্ব।


(ii) জেলা-ময়ূরভঞ্জ (ওডিশা)।


  1. মানচিত্রের স্কেল-1:50,000।


  1. মানচিত্রের ক্ষেত্রমান-প্রায় 708 বর্গকিমি।


  1. সমোন্নতিরেখার ব্যবধান-20 মি।


  1. চৌম্বক নতি-প্রায় 45′ পশ্চিম (1975)।


  1. জরিপ কাজের বছর-1979-80।


  1. মানচিত্রের প্রকাশনা-প্রথম সংস্করণ, 2003।


  1. তত্ত্বাবধায়ক-সার্ভেয়র জেনারেল অব ইন্ডিয়া।


ভূপ্রকৃতি


প্রদত্ত টোপোশিটের অঞ্চলটিকে ঢালের বিচ্যুতি অনুসারে প্রধান দুটি ভূপ্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায়। যথা- [1] ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি এবং [2] নদীগঠিত সমভূমি। এই দুই অঞ্চলের ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল।


[1] ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি: এই মালভূমিটি সিমলিপাল উচ্চভূমির অংশ-বিশেষ। মালভূমিটি সর্বোচ্চ 933 মিটার (দরবারমেলা পর্বত, A3) থেকে সর্বনিম্ন 200 মিটার (বুড়াবালঙ্গা সমভূমি) উচ্চতাবিশিষ্ট। এটি মানচিত্রের অধিকাংশ স্থান জুড়ে বিস্তৃত। ভূমিরূপগত দিক থেকে মালভূমিটি দুটি অংশে বিভক্ত- (i) দক্ষিণের খাড়া ভূগু-সমন্বিত পর্বতময় উচ্চভূমি এবং (ii) উত্তরের ক্ষয়প্রাপ্ত নাতি-উচ্চ মালভূমি।


(i) দক্ষিণের খাড়া তৃণু-সমন্বিত পর্বতময় উচ্চভূমি: দক্ষিণভাগের এই উচ্চভূমি বুড়াবালঙ্গা ও তার উপনদী দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পৃথক হয়েছে। এই নদী দুটি শৈলশিরার মাঝে একটি সংকীর্ণ উপত্যকা গঠন করেছে।


এই অংশে উচ্চভূমিটি প্রায় 900 মিটার থেকে 200 মিটার পর্যন্ত খাড়া ঢালযুক্ত। কিন্তু উচ্চভূমির উত্তরাংশের ঢাল মোটামুটি 600 মিটার থেকে 300 মিটারের মধ্যে। উচ্চভূমিটির দক্ষিণভাগ অসংখ্য ভৃগুতে পরিপূর্ণ। ভৃগুগুলি 100 মিটার থেকে 200 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত খাড়াভাবে বিস্তৃত এবং অধিকাংশ স্থানে পর্বতের ভৃগুঢাল 800-400 মিটার পর্যন্ত প্রসারিত। ভৃগু ঢালকে অনুসরণ করে অসংখ্য নদী প্রবাহিত হয়েছে। নদীগুলি এই অংশে খাড়া 'T' আকৃতির গিরিখাত সৃষ্টি করেছে। সবচেয়ে বড়ো গিরিখাত তৈরি করেছে সানাকাছা নদী। এই ভূমিরূপ সম্ভবত এ অঞ্চলের ডাইক ও চ্যুতি সমন্বিত ভূতাত্ত্বিক গঠন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মালভূমির এই অংশের শৈলশিরা অসংখ্য শকু আকৃতির পর্বতচূড়ায় পরিপূর্ণ।


(ii) উত্তরের ক্ষয়প্রাপ্ত নাতি-উচ্চ মালভূমি: উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশ জুড়ে বিস্তৃত হয়েছে এই মালভূমি একটি বক্ররৈখিক শৈলশিরার অংশ-বিশেষ। এর প্রান্তদেশ খাড়া ঢালযুক্ত সমভূমির সঙ্গে মিশেছে। এই অংশের সর্বোচ্চ উচ্চতা হল 744 মিটার (টুংরু পাহাড়, B1) এবং সর্বনিম্ন উচ্চতা হল 300 মিটার। এই অঞ্চলটি নদীর দ্বারা অতিমাত্রায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। মালভূমির মাঝে মাঝে স্বল্প পরিসরে সমতল ভূভাগ তৈরি হয়েছে। 400 মিটার থেকে 600 মিটার উচ্চতায় ছোটো ছোটো অনেক শঙ্কু আকৃতির পর্বতচূড়া অবস্থিত। এ ছাড়া এই অঞ্চলে কিছু কিছু ক্ষয়প্রাপ্ত পাহাড়েরও উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এদের উচ্চতা 400 মিটার থেকে 500 মিটার।


[2] নদীগঠিত সমভূমি: মানচিত্রে দুটি সমভূমি রয়েছে। একটি হল দক্ষিণের সমভূমি ও অন্যটি হল উত্তরের সমভূমি।


(ⅰ) দক্ষিণের সমভূমি: দক্ষিণভাগের সমভূমিটি লম্বা সরু ফালির আকারে সিমলিপাল উচ্চভূমির অন্তর্বর্তী অংশে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি বুড়াবালঙ্গা নদী ও এর প্রধান উপনদী সানাকাছা ও কুয়াম নদী দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। সমভূমিটি দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে ঢালু। সমগ্র সমভূমিটির উচ্চতা 1200 মিটার থেকে 200 মিটারের মধ্যে। বুড়াবালঙ্গা ও এর উপনদীর ক্ষয়কাজের ফলে এই সমভূমি সৃষ্টি হয়েছে।



(ii) উত্তরের সমভূমি: দ্বিতীয় সমভূমিটি দক্ষিণে সিমলিপাল উচ্চভূমির উত্তরে অবস্থিত। এটি বাঁকবল নদী ও এর অসংখ্য উপনদী দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এই সমভূমি 300 মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এর প্রধান ঢাল দক্ষিণ থেকে উত্তরে। তবে পূর্বাংশে এটি পশ্চিম দিকে এবং উত্তরাংশে এটি দক্ষিণ দিকে ঢালু। সমস্ত ঢাল নদী-উপত্যকায় এসে মিশেছে। এই অংশে ভূমিরূপের যেসব বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় সেগুলি হল—


  1. ভূমিভাগটি পুনর্যৌবন লাভের ঘটনাকে নির্দেশ করে। 300 মিটার উচ্চতায় বিস্তৃত পুরাতন উপত্যকার মধ্যে বাঁকবল নদীর নিম্ন প্রবাহে সংকীর্ণ নদী-উপত্যকা গড়ে উঠেছে যা ভূমিভাগের পুনর্যৌবন লাভের সাক্ষ্য বহন করেছে।


  1. উপনদীগুলির মস্তক ক্ষয় অতি স্পষ্ট। জলবিভাজিকাগুলির শীর্ষদেশ অত্যন্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। দু-পাশের নদীগোষ্ঠীর মধ্যে নদীগ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। শীর্ষদেশে দু-পাশের নদীগুলি পরস্পরের খুব কাছে চলে এসেছে।


  1. মস্তক ক্ষয়ের ফলে কিছু কিছু নদী সরু ফালির আকারে তার উপত্যকাকে মালভূমির অভ্যন্তরভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে।


  1. মানচিত্রের উত্তর-পশ্চিমাংশে পুরাতন উপত্যকায় সর্বাধিক 600 মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট কতকগুলি অবশিষ্ট পাহাড় আছে যা প্রথমা ক্ষয়চক্রের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।


(iii) দেও নদীর নিম্নপ্রবাহে নালিক্ষয়জনিত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়েছে।


(iv) মানচিত্রের উত্তর-পশ্চিমাংশে বাঁকবল নদীর পশ্চিমে কঠিন শিলার উদ্বেধ (Outcrop) রয়েছে। এ ছাড়া নুড়ি, বোল্ডার প্রভৃতিতে পরিপূর্ণ Stony Waste রয়েছে।



প্রশ্ন.4 প্রদত্ত টোপোশিট থেকে চিত্র-সহ জনবসতি ও পরিবহণের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো।


সূচনা


  1. টোপোশিট রেফারেন্স নং-73J/8।


  1. ভৌগোলিক অবস্থান- (i) 22°0′-22°15′ উত্তর এবং 86°15′-86°30′ পূর্ব। (ii) জেলা-ময়ূরভঞ্জ (ওডিশা)।


  1. মানচিত্রের স্কেল-1:50,000।


  1. মানচিত্রের ক্ষেত্রমান-প্রায় 708 বর্গকিমি।


  1. সমোন্নতি রেখার ব্যবধান-20 মি।


  1. চৌম্বক নতি-প্রায় 45′ পশ্চিম (1975)।


  1. জরিপ কাজের বছর-1979-80।


  1. মানচিত্রের প্রকাশনা- প্রথম সংস্করণ, 2003।


  1. তত্ত্বাবধায়ক-সার্ভেয়র জেনারেল অব ইন্ডিয়া।


জনবসতি ও পরিবহণের মধ্যে সম্পর্ক


কোনো অঞ্চলের জনবসতি, সেই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির মধ্যে পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে জনবসতির সম্পর্ক খুব নিবিড় হয়। প্রদত্ত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে দেখা যায় যে কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে গ্রামীণ জনবসতিগুলি গড়ে উঠেছে। আর কৃষিজমির মধ্য দিয়ে মূলত কাঁচা পথ, পায়ে চলার পথ, গো-যান পথ বিস্তৃত। তাই এই অঞ্চলের সমস্ত গ্রাম্যবসতি


[1] সড়কপথ ও জনবসতি: মানচিত্রের পশ্চিম-মধ্য প্রান্ত থেকে উত্তর-পূর্ব সীমানা পর্যন্ত প্রায় 29 কিমি 6নং জাতীয় সড়ক বিস্তৃত এবং বিশল নামক


স্থানে প্রায় 21 কিমি দীর্ঘ একটি রাজ্য সড়কপথ উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে এসে মিলিত হয়েছে। এইসব সড়কপথের স্থানে স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে উঠেছে। জাতীয় সড়ককে কেন্দ্র করে পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে সাগোজালি, লুহাঘুটু, বিশল, দুধকুন্ডি হল একমাত্র জনবসতি। অন্যদিকে, রাজ্য সড়কপথের সঙ্গে কৃষিজমির সংযোগকারী বহু কাঁচা পথ, গো-যান পথ ও পায়ে চলার পথের মিলন ঘটেছে। ফলে জাতীয় সড়কপথের তুলনায় এই সড়কপথ বরাবর অনেক বেশি বসতি দেখা যায়, যেমন-পশ্চিম দিক থেকে জুডিয়া, ভালুজদি, বাকি, মধুপুর, ভুলবেদা, লুহাকানি, কুন্দুলিয়া ও পানপশি।


[2] কাঁচাপথ ও জনবসতি: কৃষিজমির মধ্য দিয়ে বহু কাঁচাপথ বিস্তৃত হয়েছে। এই অঞ্চলের পশ্চিম-মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেসব কাঁচাপথ গিয়েছে তাদের কেন্দ্র করে রৈখিকভাবে বিন্যস্ত বহু গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-দামুদিবেদা, বীজতলা, কাঘিয়া, একতলি, জোদাপাথারি, বানাকতি, আতনাবেদা, চরপানি, রাঙামাটিয়া, মশামারি, আশানা, ভাতছাতরা প্রভৃতি। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বের কাঁচাপথ বরাবর প্রধান জনপদগুলি হল-কিটোবেদা, ব্রাহ্মণগাঁও, সরিষাপল, বেতাঝরণ, কুসুমবান্ধা প্রভৃতি।


[3] অন্যান্য কাঁচাপথ ও জনবসতি: কৃষিজমির মধ্য দিয়ে অসংখ্য পায়ে চলার পথ ও গো-যান পথের জালিকা তৈরি হয়েছে। এদেরকে কেন্দ্র করে অবিন্যস্ত বহু রৈখিক বসতি ও পিণ্ডাকৃতি বসতি গড়ে উঠেছে। তবে মালভূমির বন্ধুর ও খাড়া ঢালের উঁচু অংশে পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায় ওইসব অঞ্চলে জনবসতি গড়ে ওঠেনি। ট্রানজেক্ট চার্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ পথ ও জনবসতির একটি সম্পর্ক দেখানো হল।



প্রশ্ন.5 প্রদত্ত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র অনুসারে জনবসতির বিবরণ দাও।


সূচনা


  1. টোপোশিট রেফারেন্স নং-73J/8।


  1. ভৌগোলিক অবস্থান- (i) 22°0′ উত্তর 22°15′ উত্তর এবং 86°15′ পূর্ব-86°30′ পূর্ব।


(ii) জেলা-ময়ূরভঞ্জ (ওডিশা)।


  1. মানচিত্রের স্কেল-1:50,000।


  1. মানচিত্রের ক্ষেত্রমান- প্রায় 708 বর্গকিমি।


  1. সমোন্নতি রেখার ব্যবধান-20 মি।


  1. চৌম্বক নতি-প্রায় 45′ পশ্চিম (1975)।


  1. জরিপ কাজের বছর-1979-80।


  1. মানচিত্রের প্রকাশনা-প্রথম সংস্করণ, 2003।


  1. তত্ত্বাবধায়ক সার্ভেয়র জেনারেল অব ইন্ডিয়া।


জনবসতির বণ্টন


প্রদত্ত মালভূমি অঞ্চলের সর্বত্র গ্রামীণ বসতি গড়ে উঠেছে। জনবসতিগুলি বন্ধুর পাহাড়ি এলাকা ছাড়া নদীবিধৌত সমভূমির কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মানচিত্রের দক্ষিণভাগ সুউচ্চ পর্বতময় হওয়ায় জনবসতির পরিমাণ কম। তবে পাহাড়ের স্থানে স্থানে নদীগঠিত সংকীর্ণ উপত্যকার দু-পাশে জনবসতির কেন্দ্রীভবন লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে, মানচিত্রের উত্তর-পূর্বাংশের নাতি-উচ্চ বন্ধুর মালভূমির অংশ ছাড়া সমভূমির সর্বত্র গোষ্ঠীবদ্ধ ও বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে উঠেছে। এই অংশে উর্বর কৃষিজমির সহজলভ্যতা, উর্বর সমভূমি ও উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার কারণে অধিকাংশ স্থানে গোষ্ঠীবদ্ধ ও সামান্য কিছু স্থানে বিক্ষিপ্ত জনবসতির প্রাধান্য দেখা যায়। জনবসতির ঘনত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এই মালভূমিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা-


[1] অতি-নিবিড় জনবসতি অঞ্চল: অতি-নিবিড় জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি দুটি অংশে বিভক্ত। প্রথমত, সবচেয়ে বিস্তৃত অংশটি সিমলিপাল উচ্চভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশের নিম্ন সমপ্রায়ভূমিতে বিস্তৃত। উর্বর কৃষিজমি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় এই অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিশল (B2) নামক গ্রামটি একটি বড়ো গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতির উদাহরণ। তিন রাস্তার মিলনস্থলে এটি অবস্থিত। বাজার, পশু হাসপাতাল, পোস্ট অফিস, হাসপাতাল, বাংলো (PWD) ইত্যাদি সুবিধা এখানে লক্ষ করা যায়।

দ্বিতীয়ত, অতি-নিবিড় জনবসতিপূর্ণ এলাকা সরু লম্বা ফালির আকারে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে দুটি উচ্চভূমির মাঝে গঠিত উপত্যকার ওপর বিস্তৃত। বুড়াবালঙ্গা নদীর জল ও কৃষিজমির সুবিধা এই অংশে জনবসতি গড়ে তোলার সহায়ক হয়েছে। পোস্ট অফিস ও বড়ো জলাশয়কে কেন্দ্র করে কুসুমবান্ধা (C2) নামে একটি বড়ো গোষ্ঠীবদ্ধ গ্রাম গড়ে উঠেছে। রাস্তাঘাট ও পরিবহণ ব্যবস্থা বিশেষ উন্নত না হওয়ায় স্থানে স্থানে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে উঠেছে। 


[2] নিবিড় জনবসতি অঞ্চল: এই অঞ্চলটি একটানা বিস্তৃত নয়। সিমলিপাল উচ্চভূমির পাদদেশীয় সমতল এলাকার নানা স্থানে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। কৃষিজমির প্রাপ্যতা, জলের উৎস ও পায়ে চলার পথের সুবিধা অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসতিগুলি গড়ে উঠেছে। জারাকি (C1), মাণিকপুর (B1), মুন্ডাঠাকুরা (A1), সরজামডিহি (B3), পলাশডিহি (C2) প্রভৃতি প্রধান বসতিপূর্ণ গ্রাম।


[3] বিরল জনবসতি অঞ্চল: বিরল জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলটি একটানা কোথাও দেখা যায় না। এ ধরনের অঞ্চল মূলত উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি এলাকার মধ্যে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে স্থানে স্থানে দেখা যায়। পাহাড়ের অপেক্ষাকৃত নীচু সমতল স্থানগুলির বনভূমি পরিষ্কার করে খুবই বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বসতি গড়ে উঠেছে। এই পাহাড়ি এলাকার পূর্বাংশে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি হ্যামলেট দেখা যায়, যেমন-ভিজিদিহি, তারনা, দুয়ারশুনি, বাচ্চুরিবান্ধা প্রভৃতি। এ ছাড়া, দক্ষিণভাগে সিমলিপাল উচ্চভূমির খাড়াঢালের প্রান্তদেশ বরাবর স্থানে স্থানে কম বসতি গড়ে উঠেছে।


[4] জনবসতিহীন অঞ্চল: টোপোশিটের পূর্ব-পশ্চিমে কোনাকুনিভাবে বিস্তৃত এবং প্রায় দু-ভাগে বিভক্ত উচ্চ সিমলিপাল পাহাড়ি অঞ্চল সম্পূর্ণ জনবসতিহীন। খাড়া ভৃগুতে পরিপূর্ণ ও অত্যধিক বন্ধুরতার জন্য এখানে কোনো জনবসতি গড়ে উঠতে পারেনি।


জনবসতির শ্রেণিবিভাগ ও নকশা


নদীগঠিত সমপ্রায়ভূমি অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি রয়েছে। গোষ্ঠীবদ্ধ বসতিগুলির মধ্যে রৈখিক দূরত্ব বা স্থানিক দূরত্ব বেশি নয়। বসতিগুলি পাকা

পথ, পায়ে চলার পথ, গো-যান পথ ধরে রৈখিক নকশা যেমন গঠন করেছে তেমনই কৃষিজমি, জলাশয় বা পুকুর ও অন্যান্য দৈনন্দিন নাগরিক সুবিধার জন্য


(ডাকঘর, হাটবাজার) এখানে এককেন্দ্রিক বা বহুকেন্দ্রিক গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতিও গঠন করেছে। বিশল, বুধি-খামারি, নুয়াডিহি, ছাতনি, ভাতছাতরা, বৌটিবেদা, কুসুমবান্ধা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি এখানে দেখা যায়।


তরঙ্গায়িত পাদদেশীয় মালভূমির স্থানে স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বসতি গড়ে উঠেছে। মহুভাণ্ডার পর্বতের দক্ষিণে আশাদলা, পাখি, একতালি, মাখপো, তোলকবাদি, অলকবাদি প্রভৃতি অসংখ্য বিক্ষিপ্ত জনবসতি দেখা যায়। এমনকি উচ্চ-পাহাড়ি এলাকার মধ্যে কোনোরূপ যোগাযোগহীন স্থানে কিছু হ্যামলেট বসতিও গড়ে উঠেছে। যেমন- রাঙামাটিয়া, তরনা, ভিজিডিহি, বাচ্চুরিবান্ধা, ডুয়ারসুমি, হাতিচ্ছাদ প্রভৃতি।


Editing by: Liza Mahanta