অধ্যায়-3



রাশিবিজ্ঞান
-----------------------------

Short Question Answer


1. রাশিবিজ্ঞান (Statistics) কাকে বলে?

উত্তব় : কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা উপাদান সম্পর্কে রাশিতথ্য সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন গাণিতিক পদ্ধতির মাধ্যমে সেই রাশিতথ্যের সংখ্যাগত মান নির্ণয় করে তার উপস্থাপনা, বিশ্লেষণ, তুলনা ও ব্যাখ্যা করা হয় যে বিজ্ঞানে তাকে রাশিবিজ্ঞান বলে।



2. রাশিতথ্য (Numeric Data) কাকে বলে?

উত্তব় : বিভিন্ন ব্যক্তি, বস্তু বা উপাদান সম্পর্কে সংগৃহীত, পরিমাপযোগ্য ও সংখ্যা দ্বারা প্রকাশিত যে-কোনো তথ্যকে রাশিতথ্য বলে।


3. পূর্ণক বা সমগ্রক (Population) কাকে বলে?

উত্তব় : রাশিতথ্য সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধান ক্ষেত্রের ব্যক্তি, বস্তু বা উপাদানের সমষ্টিকে পূর্ণক বা সমগ্রক বলে। যেমন- কোনো স্কুলের সব ছাত্রের সমষ্টি হল পূর্ণক বা সমগ্রক।


4. নমুনা (Sample) বলতে কী বোঝ?

 উত্তব় : নমুনা বলতে বোঝায় সমগ্রকের কিছু নির্বাচিত অংশকে। যেমন-কোনো স্কুলের ছাত্রদের গড় বয়স নির্ণয় করার জন্য সব ছাত্রের পরিবর্তে কয়েকটি ছাত্রকে নমুনা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।


5. চলক (Variable) কাকে বলে?

উত্তব় : সংখ্যার মাধ্যমে উপযুক্ত এককের দ্বারা অথবা পরিসংখ্যানে যেসব বৈশিষ্ট্যের মান সংখ্যায় গ্রহণ করা হয়, তাদের চলক বলে। যেমন-ওজন, বয়স, উচ্চতা, উয়তা ও বৃষ্টিপাত ইত্যাদির সংখ্যাগত মান এক-একটি চলক।


6. অবিচ্ছিন্ন চলক (Continuous Variable) কাকে বলে?

উত্তব় :যে চলকে পূর্ণসংখ্যায় অথবা ভগ্নাংশে মান গৃহীত হয় তাকে অবিচ্ছিন্ন চলক বলে। যেমন-দৈর্ঘ্য, ওজন, উচ্চতা, বয়স ইত্যাদি।


7. বিচ্ছিন্ন চলক (Discrete Variable) কাকে বলে?

উত্তব় : যে চলকে কতকগুলি বিচ্ছিন্ন মান কেবল পূর্ণসংখ্যায় গৃহীত হয়, ভগ্নাংশে কখনোই গৃহীত হয় না তাকে বিচ্ছিন্ন চলক বলে। যেমন-কোনো গ্রামের বাড়ির সংখ্যা, মানুষের সংখ্যা ইত্যাদি। এই মানগুলিকে ভগ্নাংশে গ্রহণ করা যায় না।


৪. ভারতে রাশিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে কে পরিচিত?

উত্তব় : অধ্যাপক প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ ভারতে রাশিবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত।


9. সংগ্রহের উৎস অনুযায়ী রাশিতথ্য কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তব় : সংগ্রহের উৎস অনুযায়ী রাশিতথ্য দুই প্রকার, যথা- (i) প্রাথমিক রাশিতথ্য (Primary Data) ও (ii) গৌণ বা অপ্রাথমিক রাশিতথ্য


10. প্রাথমিক রাশিতথ্য (Primary Data) কাকে বলে?

উত্তব় : তথ্য সংগ্রহকারী যখন সরাসরি অনুসন্ধান ক্ষেত্র (Field) থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে প্রাথমিক রাশিতথ্য বলে।



 11. মানুষের ভাষা, ধর্ম, জাতি, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি কোন্ জাতীয় তথ্য?

উত্তব় : মানুষের ভাষা, ধর্ম, জাতি, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি গুণগত তথ্য, কারণ এগুলিকে সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না।



12. বিন্যাসের প্রকৃতি অনুযায়ী রাশিতথ্য কত প্রকার ও কী কী?



উত্তব় : বিন্যাসের প্রকৃতি অনুযায়ী রাশিতথ্য দুই প্রকার, যথা- (i) অসজ্জিত (Raw) রাশিতথ্য, (ii) সজ্জিত (Array) রাশিতথ্য।



13. অসজ্জিত (Raw) রাশিতথ্য বলতে কী বোঝায়?


উত্তব় : যেসব রাশিতথ্যে চলকের মানসমূহ কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সাজানো থাকে না তাকে অসজ্জিত রাশিতথ্য বলে। প্রাথমিক রাশিতথ্যের ক্ষেত্রে এই প্রকার বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।



14. সজ্জিত (Array) রাশিতথ্য বলতে কী বোঝায়?


উত্তব় : যেসব রাশিতথ্যে চলকের মানসমূহ একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো থাকে তাকে সজ্জিত রাশিতথ্য বলে। এক্ষেত্রে সাধারণত চলকের মানগুলি ঊর্ধ্বক্রম অথবা অধঃক্রম অনুসারে সাজানো থাকে।



15. পরিসংখ্যা বিভাজন অনুযায়ী তথ্য কয়প্রকার ও কী কী?


উত্তব় : পরিসংখ্যা বিভাজন অনুযায়ী তথ্য দুই প্রকার যথা- (i) অশ্রেণিবদ্ধ তথ্য ও (ii) শ্রেণিবদ্ধ তথ্য।

রাশিবিজ্ঞান



16. অশ্রেণিবন্ধ তথ্য (Ungrouped Data) কাকে বলে?


উত্তব় : সংগৃহীত রাশিতথ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন প্রসারের মধ্যে অবস্থিত মানগুলিকে যখন কোনো শ্রেণি ব্যবধানের অন্তর্গত না করে অবিন্যস্ত অবস্থায় রাখা হয় তখন তাকে অশ্রেণিবন্ধ রাশিতথ্য বলে।



17. মধ্য বিন্দু (Mid Point) কী?


উত্তব় : কোনো শ্রেণির ঠিক মাঝখানের মানটিকে মধ্য বিন্দু বা মধ্য মান (Mid Point) বা শ্রেণি চিহ্ন (Class Mark) বলে।


মধ্য বিন্দু = নিম্ন শ্রেণি সীমানা + ঊর্ধ্ব শ্রেণি সীমানা 2



18. শ্রেণি প্রসার বা শ্রেণি ব্যবধান (Class Width or Class Interval) কী?


উত্তব় : কোনো শ্রেণির নিম্ন সীমানা এবং ঊর্ধ্ব সীমানার মধ্যে পার্থক্যকে শ্রেণি প্রসার বা ব্যবধান বলা হয়।


শ্রেণি প্রসার = ঊর্ধ্ব শ্রেণি সীমানা - নিম্ন শ্রেণি সীমানা



19. আয়তলেখ (Histogram) কাকে বলে?


উত্তব় : অনুভূমিক সরলরেখার ওপর অঙ্কিত পরস্পর সংলগ্ন একগুচ্ছ আয়তক্ষেত্র যাদের অনুভূমিক বিস্তার শ্রেণি ব্যবধানকে এবং উল্লম্ব

উচ্চতা পরিসংখ্যানকে নির্দেশ করে, তাকে আয়তলেখ বলে।



20. আয়তলেখের উল্লম্ব অক্ষে কী প্রকাশ করা হয়?


উত্তব় : আয়তলেখের উল্লম্ব অক্ষে পরিসংখ্যানকে প্রকাশ করা হয়।



21. আয়তলেখের অনুভূমিক অক্ষে কী প্রকাশ করা হয়?



উত্তব় : আয়তলেখের অনুভূমিক অক্ষে শ্রেণি ব্যবধান বা শ্রেণি প্রসার প্রকাশ করা হয়।



22. কেন্দ্রীয় প্রবণতা (Central Tendency) কী?


উত্তব় : যে-কোনো রাশিতথ্যের বণ্টনগত কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। দেখা যায় যে, বণ্টনের মধ্যে মানগুলির তারতম্য থাকা সত্ত্বেও কোনো একটি মানকে ঘিরে অন্য মানগুলির কেন্দ্রীভবনের প্রবণতা আছে। রাশিতথ্যের এই প্রবণতাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।



23. কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক কাকে বলা হয়?


উত্তব় : যে কেন্দ্রীয় মানের চতুর্দিকে রাশিতথ্যের অন্যান্য মানগুলির কেন্দ্রীভবনের প্রবণতা থাকে সেই মানকে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক বলা হয়।



24. কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপকগুলি কী?


উত্তব় : কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপকগুলি হল গড় (Mean), মধ্যমা (Median) ও ভূয়িষ্টক (Mode)।



25. গড় (Mean) কাকে বলে?


উত্তব় : কতকগুলি সমজাতীয় রাশির যোগফলকে রাশিগুলির মোট সংখ্যার দ্বারা ভাগ করে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে রাশিগুলির গড় মান বলে।



26. গড় বা মধ্যক (Mean) কত প্রকার ও কী কী? 


উত্তব় : গড় বা মধ্যক তিন প্রকারের। (i) যৌগিক গড় (Arithmetic Mean),


(ii) গুণোত্তর গড় (Geometric Mean) ও (iii) বিবর্ত যৌগিক গড় (Harmonic Mean)।



27. মধ্যমা বা মধ্যমান (Median) বলতে কী বোঝায়?


উত্তব় : কোনো রাশিতথ্যকে যদি মানের ঊর্ধ্বক্রম বা অধঃক্রমে সাজানো হয়, তখন এর ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত মানকে মধ্যমা বলা হয়।



28. ভূয়িষ্টক বা সংখ্যাগুরু মান (Mode) কাকে বলে?


উত্তব় : যে-কোনো রাশিতথ্যে চলকের সর্বাধিক পরিসংখ্যাবিশিষ্ট মানকে ভূয়িষ্টক বা সংখ্যাগুরু মান বলে।



29. গড় বিচ্যুতি (Mean Deviation) কী?


উত্তব় : বণ্টনের সব মান থেকে গাণিতিক গড় চিহ্ন ব্যতিরেকে অন্তরফলের সমষ্টিকে মোট পরিসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায় তাকে গাণিতিক গড়ের সাপেক্ষে গড় বিচ্যুতি বলে।



30. প্রমাণ বিচ্যুতি (Standard Deviation) কী?


উত্তব় : বিচ্যুতির বর্গসমষ্টির গড়ের বর্গমূলকে প্রমাণ বিচ্যুতি বলে।



31. বিচ্যুতির গুণাঙ্ক বা আপেক্ষিক প্রমাণ বিচ্যুতি (Coefficient of Variation) কাকে বলে?


উত্তব় : প্রমাণ বিচ্যুতি ও যৌগিক গড়ের মধ্যে সম্পর্ককে শতকরায় প্রকাশ করা হলে সেই সম্পর্ককে বলা হয় বিচ্যুতির গুণাঙ্ক বা আপেক্ষিক প্রমাণ বিচ্যুতি।



Long Question Answer


প্ৰশ্ন.1 রাশিওথোর (Data) সংজ্ঞা দাও এবং এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো। প্রাথমিক (Primary) ও গৌণ (Secondary) রাশিতথ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।


রাশিতথ্য

কোনো বস্তু সম্পর্কে সংগৃহীত যে-কোনো পরিমাপযোগ্য ও সংখ্যা দ্বারা প্রকাশিত তথ্যকে রাশিতথ্য (Data) বলা হয়।


রাশিতথ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ


রাশিতথ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-


1. কোনো রাশিতথ্য পরিমাপযোগ্য ও অপরিমাপযোগ্য উভয়ই হতে পারে। যেমন- কোনো ব্যক্তির জীবনপঞ্জির (Biodata) মধ্যে উল্লেখিত তাঁর নাম, ঠিকানা, শিক্ষাগত মান ইত্যাদিকে পরিমাপ করা যায় না। কিন্তু তাঁর বয়স, ওজন, উচ্চতা প্রভৃতিকে সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায়।


2. অপরিমেয় রাশিতথ্যের ক্ষেত্রে সংখ্যায় মান প্রকাশ করা যায় না। এগুলি ব্যক্তি বা বস্তুর গুণকে বোঝায়।


3. পরিমেয় রাশিতথ্যে সংখ্যায় মান প্রকাশ করা হয়। এদের চলক বলা হয়।


4. পরিমাপযোগ্য রাশিতথ্য বিচ্ছিন্ন বা অবিচ্ছিন্ন চলকরূপে পাওয়া যায়।


5. রাশিবিজ্ঞানে পরিমেয় রাশিতথ্যের গ্রহণযোগ্যতা সর্বাপেক্ষা বেশি।


প্রাথমিক রাশিগুথ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ


প্রাথমিক রাশিতথ্যের প্রধান বৈশিষ্টগুলি হল-


1.  অনুসন্ধান ক্ষেত্র (Field) থেকে সরাসরি প্রাথমিক রাশিতথ্য সংগ্রহ করা হয়। যেমন- জনগণনার সময় (Census) বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ।


2. প্রাথমিক রাশিতথ্য মৌলিক প্রকৃতির হয়।


3. নতুন তথ্য এই রাশিতথ্যে যোগ করা হয়।


4. প্রাথমিক রাশিতথ্য এলোমেলো ও অসংবন্ধ অবস্থায় থাকে। তাই একে অসংগঠিত রাশিতথ্য (Raw Data) বলা হয়।


গৌণ রাশিতথ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ


গৌণ রাশিতথ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-


1. অনুসন্ধান ক্ষেত্র (Field) থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করার পরিবর্তে প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যেমন জনগণনার বই থেকে প্রাপ্ত কোনো রাজ্যের জনসংখ্যা সম্পর্কিত তথ্য।


2. সাম্প্রতিকতম তথ্য গৌণ রাশিতথ্যে পাওয়া যায় না।


3. রাশিতথ্য সুসংবদ্ধ এবং সারণির আকারে পাওয়া যায়।


4. গৌণ রাশিতথ্যকে সংশোধিত রূপে পাওয়া যায়।



প্রশ্ন.2 রাশিতথ্যের (Data) শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।


রাশিতথ্যের শ্রেণিবিভাগ


বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে রাশিতথ্যের যে শ্রেণিবিভাগ করা হয় তা আলোচনা করা হল-


(1) সংগ্রহের উৎস অনুযায়ী


(i) প্রাথমিক রাশিতথ্য (Primary Data): তথ্য সংগ্রহকারী সরাসরি অনুসন্ধান ক্ষেত্র (Field) থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করে, তাকে প্রাথমিক রাশিতথ্য বলে।


(ii) গৌণ বা অপ্রাথমিক রাশিতথ্য (Secondary Data): যেসব তথ্য অনুসন্ধান ক্ষেত্র (Field) থেকে সরাসরি সংগ্রহ না করে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত উৎস (পত্রপত্রিকা, বই, অফিস ইত্যাদি) থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাকে গৌণ রাশিতথ্য বলে।


[2] পরিমাপের পদ্ধতি অনুযায়ী


(1) স্থিতিমাপক রাশিতধ্য (Parametric Data): যেসব রাশিতথ্য পরিমাপের সংখ্যাগত মান দ্বারা প্রকাশ করা হয়, তাদের রাশিবিজ্ঞানে স্থিতিমাপক রাশিতথ্য বলে। এটি দু-ধরনের হয়① ব্যবধান রাশিতথ্য (Internal Data) এবং ② অনুপাত রাশিতথ্য (Ratio Data)।


(II) অস্থিতিমাপক রাশিতথ্য (Non-Parametric Data): যেসব রাশিতথ্য কোনো সংখ্যাগত মান দ্বারা প্রকাশিত হয় না কেবল গুণগত মান দ্বারা প্রকাশিত হয়, তাদের একত্রে অস্থিতিস্থাপক রাশিতথ্য বলা হয়। এই প্রকার রাশিতথ্য দু-ধরনের হয়① নমিনাল রাশিতথ্য (Nominal Data) ও অর্ডিনাল রাশিতথ্য (Ordinal Data)।


[3] বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী


(1) গুণগত রাশিতধ্য (Qualitative Data): এসব রাশিতথ্যকে সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। যেমন-কোনো ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের আচরণ বিশ্লেষণ।


(ii) সংখ্যাগত রাশিতধ্য (Quantitative Data): এই ধরনের তথ্যকে সংখ্যার মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়। যেমন-মানুষের বয়স, উচ্চতা, ওজন, দৈর্ঘ্য ইত্যাদি।


(iii) সময়ভিত্তিক রাশিতধ্য (Temporal Data): এক্ষেত্রে সংগৃহীত তথ্যসমূহকে সময়ের নিরিখে প্রকাশ করা হয়। যেমন-প্রতি দশ বছর অন্তর দেশের জনসংখ্যার পরিমাণ।


(iv) দৈশিক রাশিতধ্য (Spatial Data): গ্রাম, শহর, রাজ্য বা দেশ ইত্যাদি ভৌগোলিক স্থানের সংগৃহীত রাশিতথ্যকে বলে দৈশিক রাশিতথ্য। যেমন-রাজ্যভিত্তিক খাদ্যশস্য উৎপাদন।


[4] বিন্যাসের প্রকৃতি অনুযায়ী


(i) অসজ্জিত রাশিতথ্য (Raw Data): যেসব রাশিতথ্যে চলকের মানসমূহ কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সাজানো থাকে না, তাকে অসজ্জিত রাশিতথ্য বলে। প্রাথমিক রাশিতথ্যের ক্ষেত্রে এই প্রকার বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।


(ii) সজ্জিত রাশিতথ্য (Array Data): যেসব রাশিতথ্যে চলকের মানসমূহ একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো থাকে, তাদের সজ্জিত রাশিতথ্য বলে। এক্ষেত্রে সাধারণত চলকের মানগুলি ঊর্ধ্বক্রম অথবা অধঃক্রম অনুসারে সাজানো থাকে।


[5] পরিসংখ্যা বিভাজন অনুযায়ী


(i) অশ্রেণিবদ্ধ রাশিতথ্য (Ungrouped Data): যখন সংগৃহীত রাশিতথ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন প্রসারের মধ্যে অবস্থিত মানগুলিকে কোনো শ্রেণি ব্যবধানের অন্তর্গত না করে অবিন্যস্ত অবস্থায় রাখা হয়, তখন তাকে অশ্রেণিবদ্ধ রাশিতথ্য বলে।


(ii) শ্রেণিবদ্ধ রাশিতথ্য (Grouped Data): যখন সংগৃহীত প্রাথমিক রাশিতথ্যকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য ও হিসাবের সুবিধার জন্য সারণির আকারে অনেকগুলি দলে ভাগ হয়, তখন তাকে শ্রেণিবদ্ধ রাশিতথ্য বলে।



প্ৰশ্ন.3 শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয়ের অন্তর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতি (Inclusive Method) কী? নীচে প্রদত্ত 30 জন ছাত্রের ভূগোলে প্রাপ্ত নম্বরগুলির অন্তর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে ৪টি শ্রেণিতে পরিসংখ্যা বিভাজন করো। নম্বর-38, 10, 30, 58, 49, 6, 31, 55, 41, 48, 37, 40, 17, 36, 47, 16, 40, 31, 49, 37, 44, 35, 39, 51, 33, 20, 32, 60, 34, 11


শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয়ের অন্তর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতি


এই পদ্ধতিতে শ্রেণির বিস্তারের নিম্নসীমা ও ঊর্ধ্বসীমার মান দুটিকে শ্রেণি ব্যবধানে অন্তর্ভুক্ত বা সংযোজন করা হয়। শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয়ের এই পদ্ধতিতে কোনো একটি শ্রেণির ঊর্ধ্বসীমার মান ও ঠিক তার পরবর্তী শ্রেণির নিম্নসীমার মান আলাদা হয়। বস্তুত, এক্ষেত্রে শ্রেণি সীমা (Class Limit) দিয়ে শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয় করা হয় এবং এ ধরনের শ্রেণি সীমাকে ব্যক্ত শ্রেণি সীমা (Stated Class Limit) আখ্যা দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয়ের পর প্রত্যেক শ্রেণি সীমাকে শ্রেণি সীমানায় (Class Boundary) পরিবর্তিত করে অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্ন শ্রেণিতে (Continuous Series) পরিণত করে পরিসংখ্যা বিভাজন করা হয়।



প্রশ্ন.4 শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয়ের বর্জন পদ্ধতি (Exclusive Method) কী? নীচে প্রদত্ত 50 জন ছাত্রের ভূগোলে প্রাপ্ত নম্বরগুলির বর্জন পদ্ধতির মাধ্যমে পরিসংখ্যা বিভাজন করো। নম্বর-39, 47, 17, 40, 38, 57, 48, 45, 0, 9, 13, 24, 33, 38, 34, 22, 23, 22, 14, 11, 17, 12, 19, 20, 18, 25, 36, 28, 24, 46, 31, 19, 16, 42, 23, 32, 24, 37, 29, 39, 35, 21, 27, 25, 20, 37, 26, 44, 34, 36 | 


শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয়ের বর্জন পদ্ধতি


এটি প্রকৃতপক্ষে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রকৃতির শ্রেণি ব্যবধান নির্ণয় পদ্ধতি। এক্ষেত্রে একটি শ্রেণির ঊর্ধ্বসীমার মান ঠিক তার পরবর্তী শ্রেণির নিম্নসীমার মানের সমান হয়, অর্থাৎ শ্রেণি সীমানা গঠিত হয়। প্রতিটি শ্রেণির ঊর্ধ্বসীমার মান প্রকৃত শ্রেণি সীমা (Actual Class Limit) নির্দেশ করে। এখানে যেটি প্রকৃত শ্রেণি সীমা সেটিই শ্রেণি সীমানা। এ ধরনের শ্রেণি ব্যবধানের ক্ষেত্রে কোনো শ্রেণির ঊর্ধ্বসীমার মানকে পরিসংখ্যা বিভাজনের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। যদি কোনো চলকের মান কোনো শ্রেণির ঊর্ধ্বসীমায় অবস্থান করে তাহলে পরিসংখ্যা বিভাজনে তাকে পরবর্তী শ্রেণির মধ্যে ধরা হয়।



প্রশ্ন .5 নীচের রাশিগুলিকে শ্রেণি ব্যবধানে পরিসংখ্যা বিভাজন করে প্রমাণ বিচ্যুতি ও বিচ্যুতির গুণাঙ্ক নির্ণয় করো। তাপমাত্রা (°F)-68, 84, 75, 82, 68, 90, 62, 88, 76, 93, 73, 79, 88, 73, 60, 95, 71, 59, 85, 75, 61, 65, 75, 87, 74, 62, 95, 78, 63, 72, 66, 78, 82, 75, 94, 77, 69, 74, 68, 60, 66, 78, 89, 61, 75, 95, 60, 79, 71, 71, 96, 62, 67, 97, 78, 65, 76, 65, 83, 76 


পরিসংখ্যা বণ্টন ও SD নির্ণয়ের হিসাব



শ্রেণি সীমানা (তাপমাত্রা °F)

মধ্য মান (x)

দিনের সংখ্যা (f)

fx


  X

d = ( x-x )

d2

f d2

59-64

61.5

10

615.0

75.92

-14.42

207.94

2079.36

64-69

66.5

9

598.5

-9.42

88.74

798.63

67-74

71.5

7

500.5

-4.42

19.54

136.75

74-79

76.5

15

1147.5

0.58

0.34

5.05

79-84

81.5

5

407.5

5.58

31.14

155.68

84-89

86.5

5

432.5

10.58

111.94

559.68

89-94

91.5

3

274.5

15.58

242.74

728.21

94-99

96.5

6

579.0

20.58

423.54

2541.22




N = 60

fx=4555




fd2=7004.58


এখানে,x=fang=455560=75.92f


এতেকে, SD =f(x-x)2N


= 7004.5860=116.743=10.80 F

 

… প্রমাণ বিচ্যুতি 10.80°F


বিচ্যুতির গুণাঙ্ক (Coefficient of Variation)


বিচ্যুতির গুণাঙ্ক (CV) = প্রমাণ বিচ্যুতি (SD) গড় (Mean) 100 %=10.8075.92100 %=14.22 %


এতেকে বচ্যুতিব় গুণাঙ্ক 14.22 %



প্রশ্ন.6 প্রমাণ বিচ্যুতির (Standard Deviation) গুণাগুণ উল্লেখ করো। প্রমাণ বিচ্যুতির ব্যবহার লেখো। বিচ্যুতির গুণাঙ্ক (Coefficient of Variation)-এর ব্যবহার লেখো


প্রমান বিচ্যুতির গুণাগুণ


গুণ


প্রমাণ বিচ্যুতির গুণগুলি হল-


1. এটি একটি সর্বোত্তম বিচ্যুতি পরিমাপক, কারণ এটি কাঙ্ক্ষিত গাণিতিক ধর্ম বহন করে।


2. যৌগিক গড়ের সমস্ত গুণ এর মধ্যে রয়েছে, কারণ এটি যৌগিক গড়ের ওপর ভিত্তি করে নির্ণিত হয়।


3. এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত পরিমাপক। রাশিবিজ্ঞানের বিভিন্ন পরিমাপ নির্ণয়ে SD-কে ব্যবহার করা হয়।


4. নমুনার বিচ্যুতি ঘটলে এটি বিশেষ প্রভাবিত হয় না। ফলে এই পরিমাপটি দৃঢ় বা অটল প্রকৃতির। এ ছাড়া, নমুনার আয়তন বাড়লে SD হ্রাস পায়।

দোষ


প্রমাণ বিচ্যুতির দোষগুলি হল-


1. একে সহজে বোঝা যায় না। কারণ, বিচ্যুতির বর্গের গড় ও তাকে বর্গমূল করার পিছনে যে যুক্তি আছে তা বোঝা কঠিন এবং এর মান নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য।


2. এটি অধিকতর চরম মানকে গুরুত্ব দেয়, কারণ চরম মানের জন্য বিচ্যুতি বেশি হয় এবং তাকে বর্গ করলে মান আরও বেড়ে যায়। ফলে বণ্টনে চরম মান একে খুবই প্রভাবিত করে।


3. বণ্টনের সব নিরীক্ষণ দ্বারা একে প্রভাবিত করা যায়।


4. পরিসংখ্যা বণ্টনে মুক্ত প্রান্তীয় শ্রেণিবিভাজনের ক্ষেত্রে এটি নির্ণয় করা যায় না।


প্রমাণ বিচ্যুতির ব্যবহার


প্রমাণ বিচ্যুতি বিস্তৃতির সর্বোত্তম পরিমাপ হওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর অত্যধিক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন- Co-efficient of Co-relation, Sampling Theory, Statistical Inference, Normal Distribution-এর জন্য পরিমাপ, Standard Distance পরিমাপ, Specialization বা Distinctiveness পরিমাপ, দুই বা ততোধিক ব্যক্তি, উপাদান বা বস্তুর মধ্যে তুলনা করার জন্য একে রাশিবিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে এবং নানা সংখ্যাবাচক বিশ্লেষণে (Quantitative Analysis) ব্যবহার করা হয়।


বিচ্যুতির গুণাঙ্কের ব্যবহার


দুই বা ততোধিক সিরিজের বা বণ্টনের মধ্যে পরিবর্তনশীলতার তুলনা করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যে বণ্টনে CV-র মান বেশি সেটি অধিকতর পরিবর্তনশীল অর্থাৎ এর নির্ভরযোগ্যতা, স্থায়িত্ব, ধারাবাহিকতা, দক্ষতা, সদৃশ্যতা, সাম্যতা ইত্যাদি গুণগত বিষয়গুলির মাত্রা অনেক কম। অন্যদিকে, CV-র মান কম হলে উল্লিখিত গুণগুলির মাত্রাও অধিকতর বেশি হয়। যেমন-দুই বা ততোধিক স্থানের বৃষ্টিপাতের বণ্টন তুলনা করতে, ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে পড়াশোনার ধারাবাহিকতা মাপতে, খেলোয়াড়দের দক্ষতা বা ধারাবাহিকতা জানতে, দ্রব্য বা মূল্য সূচকের স্থায়িত্ব জানতে এবং এ ধরনের নানা বিষয়ের বিশ্লেষণ বা তুলনার জন্য CV-কে ব্যবহার করা হয়।


Editing by : Liza Mahanta