অধ্যায়-৮
জাতীয় শিক্ষানীতি
MCQs
1. জনার্দন রেড্ডি কমিটির সুপারিশকে মোট ক-টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে?
(a) 7টি ভাগে
(b) ৪টি ভাগে
(c) 6টি ভাগে
(d) ৭টি ভাগে
উত্তর: (b) ৪টি ভাগে
2. জনার্দন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নিম্নপ্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়-ছুটদের সংখ্যা কত শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে?
(a) 15%
(b) 20%
(c) 10%
(d) 25%
উত্তর: (b) 20%
3. শিখনের ন্যূনতম মাত্রা (Minimum Level of Learning) কাকে বলে?
(a) শ্রেণিভিত্তিক ন্যূনতম শিখনের মাত্রা
(b) শিক্ষাস্তরভিত্তিক ন্যূনতম শিখনের মাত্রা
(c) শ্রেণিভিত্তিক গড় শিক্ষার্থীদের মান
(d) শিক্ষাস্তরভিত্তিক গড় শিক্ষার্থীদের মান
উত্তর:(a) শ্রেণিভিত্তিক ন্যূনতম শিখনের মাত্রা
4. 'অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড' কী?
(a) একটি কর্মসূচি
(b) শিক্ষাসহায়ক উপকরণ সরবরাহ করা
(c) বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো নিশ্চিত করা
(d) প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সাহায্য করা
উত্তর:(a) একটি কর্মসূচি
5. স্থানীয় ভিত্তিতে স্বল্প পরিধির পরিকল্পনাকে কী বলা হয়?
(a) স্বল্প সময়ের পরিকল্পনা
(b) ম্যাক্রো পরিকল্পনা
(c) মাইক্রো পরিকল্পনা
(d) অন্তর্বর্তী পরিকল্পনা
উত্তর:(c) মাইক্রো পরিকল্পনা
6. রামমূর্তি কমিটি গঠিত হয়-
(a) 1989 সালে
(b) 1990 সালে
(c) 1991 সালে
(d) 1992 সালে
উত্তর: (b) 1990 সালে
7. 'প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন' গঠিত হয়-
(a)1992 সালে
(b) 1990 সালে
(c) 1986 সালে
(d) 1982 সালে
উত্তর:(a)1992 সালে
8. পরিবর্তিত জাতীয় শিক্ষানীতির একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব হলেন-
(a) রাজীব গান্ধি
(b) জনার্দন রেড্ডি
(c) অর্জুন সিং
(d) ডি এস কোঠারি
উত্তর:(b) জনার্দন রেড্ডি
9. অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড হল মূলত যে শিক্ষাস্তরের কর্মসূচি-
(a) প্রাথমিক
(b) মাধ্যমিক
(c) চিকিৎসা শিক্ষা
(d) ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা
উত্তর:(a) প্রাথমিক
10. রেড্ডি কমিটির সুপারিশ হয়েছিল-
(a) 1968 খ্রিস্টাব্দ
(b) 1986 খ্রিস্টাব্দ seer
(c) 1990 খ্রিস্টাব্দ
(d) 1992 খ্রিস্টাব্দ
উত্তর:(d) 1992 খ্রিস্টাব্দ
11. Pace-Setting School হল-
(a) মডেল স্কুল
(b) একলব্য বিদ্যালয়
(c) কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়
(d) নবোদয় বিদ্যালয়
উত্তর:(d) নবোদয় বিদ্যালয়
Short Answer Question
1. 'NIEPA'র পুরো কথাটি কী?
উত্তর: 'NIEPA'র পুরো কথাটি হল National Institute of Educational Planning and Administration |
2.'AICTE'-র পুরো কথাটি কী?
উত্তর: 'AICTE'র পুরো কথাটি হল All India Council of Technical Education
3. 'ECCE'র পুরো কথাটি কী?
উত্তর: 'ECCE'র পুরো কথাটি হল Early Childhood Care and Education |
5. 'সুসংহত শিশু বিকাশ কর্মসূচি'র লক্ষ্য কী?
উত্তর: 'সুসংহত শিশু বিকাশ কর্মসূচি'র লক্ষ্য হল প্রাক্-শৈশব শিশুদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ, আবেগ ও ইচ্ছার বিকাশ ইত্যাদির দিকে লক্ষ রেখে লেখা, পড়া ও হিসেব দেখানোর জন্য প্রথাগত আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির পরিবর্তে খেলার মাধ্যমে শিক্ষা দান।
6.জাতীয় শিক্ষানীতিতে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে কী কী বিষয়ের ওপর আলোচনা করা হয়েছে?
উত্তর: সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার সাংবিধানিক দায়িত্ব শিশুকেন্দ্রিকতা, বিদ্যালয়ের সুযোগ, বিধিমুক্ত শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর জাতীয় শিক্ষানীতিতে আলোচনা করা হয়েছে।
7. শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা কাকে বলে?
উত্তর:যে শিক্ষাব্যবস্থায় লক্ষ্য নির্ধারণ, পাঠক্রম রচনা, শিক্ষা-শিক্ষণ প্রক্রিয়া, শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, মূল্যায়ন প্রভৃতি শিশুর চাহিদা, আগ্রহ, বৈশিষ্ট্যকে ভিত্তি করেই পরিকল্পিত এবং বাস্তবায়িত হয়, তাকেই শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা বলে।
8. জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসঙ্গে কী কী বিষয়ের ওপর আলোচনা করা হয়েছে?
উত্তর: জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, প্রসার এবং গুণগত মানের ওপর আলোচনা করা হয়েছে।
9. মাধ্যমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা, মধ্যস্তরের নেতৃত্বদানে উপযোগী করে তোলা এবং জাতীয় বিকাশকে ত্বরান্বিত করা প্রভৃতির কথা জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে।
10. নবোদয় বা 'পেসসেটিং' বিদ্যালয় কাকে বলে?
উত্তর: যেসব অবৈতনিক এবং আবাসিক বিদ্যালয় আর্থিক সংগতি এবং সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে শহর ও গ্রামাঞ্চল থেকে বিশেষ প্রতিভাসম্পন্ন শিশুদের আবিষ্কার ও পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ দিয়ে তাদের প্রতিভা বা সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশে সাহায্য করে, তাকেই নবোদয় বা পেসসেটিং বিদ্যালয় বলে।
11. বৃত্তিশিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতিতে কী বলা হয়েছে?
উত্তর: জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী বৃত্তিশিক্ষার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির বৃত্তিযোগ্যতা বৃদ্ধি করা, দক্ষ মানবশক্তির চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য দূর করা এবং যেসব ব্যক্তি উৎসাহ ব্যতিরেকে ও উদ্দেশ্যহীনভাবে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে তার বিকল্প ব্যবস্থা করা।
12. জাতীয় শিক্ষানীতিতে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কত শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তিমুখী শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়?
উত্তর: জাতীয় শিক্ষানীতিতে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে 1990 ও 1995 সালের মধ্যে *যথাক্রমে 10% এবং 25% শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমুখী কোর্সের ব্যবস্থা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
13. উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব কী?
উত্তর: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হল, এই শিক্ষার অস্বাস্থ্যকর প্রসারকে প্রতিরোধ করা এবং এর গুণগত মান বজায় রাখা।
14. উচ্চশিক্ষার গুণগত মান হ্রাস পাওয়ার কারণ সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতি কী বলেছে?
উত্তর:জাতীয় শিক্ষানীতির মতে, উচ্চশিক্ষার গুণগত মানের হ্রাসের কারণগুলি হল জাতিভেদ, আঞ্চলিকতা, শিক্ষাক্ষেত্রে অসুস্থ রাজনীতি, পরীক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি, গবেষণার মানের অবনতি ইত্যাদি।
15. স্নাতকোত্তর শিক্ষায় ভরতির ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির শর্ত কী?
উত্তর: স্নাতকোত্তর শিক্ষায় ভরতির ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতির শর্ত হল, কেবল যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর শিক্ষায় ভরতি হওয়ার সুযোগ পাবে এবং যোগ্যতা বিচার হবে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে।
16. নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাব উল্লেখ করো।
উত্তর: জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাব অনুযায়ী, বিশেষ কারণ ছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে না, তবে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সংস্কার করা প্রয়োজন।
17. জাতীয় শিক্ষানীতি কী উদ্দেশ্যে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে উদার মনোভাব দেখিয়েছে?
উত্তর: শিক্ষায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও উচ্চশিক্ষা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে উদার মনোভাব দেখিয়েছে।
18. জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কী ধরনের সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য কোর্স মেটিরিয়াল সরবরাহ, কাউন্সেলিং-এর জন্য স্টাডি সেন্টার যেখানে অধ্যাপকদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ আছে এবং টিভি, টেপ, কম্পিউটার প্রভৃতি উন্নত প্রযুক্তির সহযোগিতার ব্যবস্থা করার কথা জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে।
19. কী কারণে জাতীয় শিক্ষানীতিতে ডিগ্রিকে চাকরি থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলেছে?
উত্তর: জাতীয় শিক্ষানীতিতে ডিগ্রিকে চাকরি থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছে, কারণ উচ্চশিক্ষায় প্রাপ্ত ডিগ্রি থেকে ব্যক্তির সঠিক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় না। তাই নিয়োগকর্তারা ডিগ্রির পরিবর্তে প্রয়োজনমতো পরীক্ষার ব্যবস্থা করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করে নেবেন।
20. National Testing Service কী?
উত্তর: যোগ্য ব্যক্তিকে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে নির্বাচনি পরীক্ষা ব্যবস্থাকে National Testing Service বলে। যেমন- National Eligibility Test, Central Eligibility Test ইত্যাদি।
Long Answer Question
উত্তর: 1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির পশ্চাৎপট
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি, জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর প্রথম ভাষণে একটি নতুন ও গতিশীল শিক্ষানীতির কথা উল্লেখ করেন। এই নীতিতে মানব এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে সর্বোৎকৃষ্টভাবে ব্যবহার করে জাতির পুনর্গঠন ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার কথা বলা হয়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণের পর ভারত সরকারের শিক্ষামন্ত্রক বিভিন্ন দিকে পুনরুজ্জীবন এবং উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মোকাবিলার জন্য, নতুন শিক্ষাব্যবস্থার একটি রূপরেখা প্রস্তুত করেন। তার ভিত্তিতে শিক্ষামন্ত্রক 'চ্যালেঞ্জ অব এডুকেশন-এ পলিসি পারসপেকটিভ' নামে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবনায় 1968 সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে সাফল্য দেখা গেছে এবং বিভিন্ন কারণে যে নীতিগুলি কার্যকরণে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তার সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর প্রস্তাবনাটি বিভিন্ন স্তরে পর্যালোচনা করার পর সংশোধিত আকারে পার্লামেন্টে উপস্থাপিত করা হয় এবং বিস্তারিত আলোচনার পর গৃহীত হয়। এটিই জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) বা National Policy of Education (1986) হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং 1986-এর শিক্ষাবর্ষ থেকেই কার্যকর হয়।
জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-র মূল বিচার্য বিষয়
1985 খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী 1986 সালের 21 এপ্রিল একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রকাশিত হয়। 12টি অধ্যায় সমন্বিত এই শিক্ষানীতির প্রথম ও শেষ অধ্যায় বাদে বাকি দশটি অধ্যায়েy
ভারতের শিক্ষার গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নীচে এই শিক্ষানীতির প্রধান বিষয়গুলি উল্লেখিত হল-
[1] শিক্ষার উপাদান ও ভূমিকা: শিক্ষা হবে সকলের জন্য। শিক্ষা হবে সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের সূত্র।
[2] জাতীয় ব্যবস্থায় শিক্ষা: একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে জাতিধর্মবর্ণ, স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সমান সুযোগ থাকবে।
[3] সাম্যের জন্য শিক্ষা: দেশের অনুন্নত সম্প্রদায়, যেমন- তপশিলি জাতি ও উপজাতি, সংখ্যালঘু, মহিলা এবং প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
[4] বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন
i. প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাকে সঠিক ও সুষ্ঠু উপায়ে রূপায়িত করা হবে।
ii. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো, সমস্ত ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে ভরতি করা ও অন্তত 14 বছর বয়স পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী রাখা, সর্বোপরি শিক্ষার গুণগত মানের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানো।
iii. মেধাবী এবং প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত সুযোগসুবিধা দিতে সারা দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে 'মডেল স্কুল' বা নবোদয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
iv. বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারের এবং কারিগরি শিক্ষায় এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের অবাধ সঞ্চরণের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
vi. নির্বাচিত ক্ষেত্রে চাকরির সঙ্গে ডিগ্রির বিচ্ছেদ ঘটানোর সূচনা করা হবে।
[5] সর্বস্তরের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি: সর্বস্তরের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য গতানুগতিকতার অবসান ঘটিয়ে আধুনিকতার ওপর জোর দেওয়া হবে।
[6] শিক্ষাব্যবস্থার সক্রিয়করণ: বিশৃঙ্খলার মধ্যে নতুন বা পুরোনো শিক্ষামূলক কোনো কাজই সম্পাদিত হতে পারে না। তাই প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে যত শীঘ্র সম্ভব শৃঙ্খলাবিধানের প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
[7] শিক্ষার বিষয়বস্তু ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার পুনর্বিন্যাস
i. শিক্ষার বিষয়সূচি ও পদ্ধতির সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত কত করতে হবে।
ii. মূল্যবোধের শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে হবে।
iii. 1968 খ্রিস্টাব্দের ত্রিভাষাসূত্র অনুসরণ করতে হবে।
iv. পুস্তকের গুণগত মানের উন্নতি, শিক্ষাপ্রযুক্তির ব্যবহার, অঙ্ক ও বিজ্ঞানশিক্ষা, দৈহিক শিক্ষা ও খেলাধুলো ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
v. বহিঃপরীক্ষার প্রাধান্য হ্রাস করে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রেডপ্রথা চালু করতে হবে।
[৪] শিক্ষক: শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষকের বেতন ও চাকরির শর্তাবলি তাদের সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে সংগতি রেখেই নির্ধারণ করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষণ হবে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। প্রতিটি জেলায় DIET প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
[9] শিক্ষা পরিচালনা: জাতীয় স্তরে শিক্ষা পরিচালনায় CABE গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সর্বভারতীয় সার্ভিস হিসেবে ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠিত হবে। CABE-এর মতো রাজ্যস্তরে SABE গঠিত হবে। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তর পর্যন্ত শিক্ষা পরিচালনার জন্য জেলা স্কুল বোর্ড গঠিত হবে।
[10] আর্থিক সংস্থান: ধীরে ধীরে শিক্ষার জন্য অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই বরাদ্দ যাতে ছয় শতাংশ ছাড়িয়ে যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি (1986 খ্রি.) ভারতের শিক্ষার ইতিহাসে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ-এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কেন-না এই শিক্ষানীতিতে শিক্ষার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য নানান প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়। তবে এ কথাও ঠিক যে, এই শিক্ষানীতিতে ঘোষিত প্রস্তাবগুলি সম্পূর্ণভাবে সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়।
2.জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) ক-টি অধ্যায়ে বিভক্ত? প্রতিটি অধ্যায়ে মূল আলোচ্য বিষয়গুলি উল্লেখ করো। 1+7 অথবা, জাতীয় শিক্ষানীতি 1986-এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-র অধ্যায়সমূহ
1986 সালের 21 এপ্রিল প্রকাশিত জাতীয় শিক্ষানীতিটি মোট বারোটি অধ্যায়ে বিভক্ত।
জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-র অধ্যায়ভিত্তিক আলোচ্য বিষয়
1986 সালের জাতীয় শিক্ষানীতির প্রথম থেকে দ্বাদশ অধ্যায় পর্যন্ত প্রধান আলোচিত বিষয়গুলি সম্পর্কে নীচে উল্লেখ করা হল।
[1] প্রথম অধ্যায়: প্রথম অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে 'ভূমিকা'। এই অংশে শিক্ষানীতি বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার নীতি নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। 1968 সালের শিক্ষানীতি ও তার ফলশ্রুতি সম্পর্কে এই অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে। আলোচনার বিষয়গুলি হল-ⅰ. 1968 সালের শিক্ষানীতির সাফল্য,
ii. 1968 সালের শিক্ষানীতি রূপায়ণে ব্যর্থতা, iii. আগামী দিনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং নতুন শিক্ষানীতি গ্রহণ।
[2] দ্বিতীয় অধ্যায়: দ্বিতীয় অধ্যায়ে শিক্ষার উপাদান ও ভূমিকা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-।. শিক্ষা হবে সকলের জন্য, ii. শিক্ষা হবে সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নের হাতিয়ার, iii. শিক্ষার কাজ হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় সংহতি গড়ে তোলা এবং বিজ্ঞানমনস্ক হতে সাহায্য করা, iv. শিক্ষার্থীদের মনের স্বাধীনতা আনতে এবং সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক লক্ষ্যকে ত্বরান্বিত করতে শিক্ষা সহায়ক হবে, v. শিক্ষা মানবশক্তির বিকাশ ঘটিয়ে জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সচেষ্ট হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির মূল ভিত্তি হল শিক্ষাকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য এক বিশেষ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা।
[3] তৃতীয় অধ্যায়: তৃতীয় অধ্যায়ে জাতীয় ব্যবস্থায় শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ হল একটা নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত জাতিধর্মবর্ণ, স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীর সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আলোচিত বিষয়গুলি হল-ⅰ. সাধারণ শিক্ষা কাঠামো, ii. কোর পাঠক্রম-সহ জাতীয় পাঠক্রম, iii. ভাষানীতি, iv. উচ্চশিক্ষার সর্বজনীনতা, v. সম্পদের জোগান, vi. মুক্তশিক্ষা ও দূরশিক্ষার বিকাশসাধন, vii. জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করা, viii. অসম্পূর্ণ অংশীদারিত্ব।
[4] চতুর্থ অধ্যায়: চতুর্থ অধ্যায়ে সাম্যের জন্য শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এখানে আলোচ্য বিষয়টি হল তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি, নারী, সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের শিক্ষা।
[5] পঞ্চম অধ্যায়: পঞ্চম অধ্যায়ে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। যেমন-
i. শিশুর সামাজিক বিকাশের দিকে লক্ষ রেখে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, সামাজিক, মানসিক, শারীরিক, নৈতিক, প্রাক্ষোভিক উন্নয়ন ইত্যাদি। মৌলিক বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাক্-শৈশব শিশুকল্যাণ ও শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ii. জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে আলোচনায় সর্বজনীন শিক্ষা, শিশুকেন্দ্রিকতা, বিদ্যালয়ের সুযোগ ও বিধিমুক্ত শিক্ষার কথা বলা হয়েছে।
iii. মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে আলোচনায় মাধ্যমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, প্রসার এবং গুণগত মানের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার বৃত্তিমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বৃত্তিমুখী কোর্স এমনভাবে করা হবে যাতে করে অষ্টম শ্রেণির পরেই এগুলি গ্রহণ করা যায়।
iv. জাতীয় শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষার প্রসার অপেক্ষা গুণগত মানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেবল যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাই এই শিক্ষায় ভরতি হওয়ার সুযোগ পাবে। ডিগ্রি থেকে চাকরিকে বিচ্ছিন্ন করে নির্বাচনি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থা উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করবে।
[6] ষষ্ঠ অধ্যায়: ষষ্ঠ অধ্যায়ে কারিগরি ও পরিচালনা শিক্ষার ওপর আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নতুন শতাব্দীর অর্থনীতি, সামাজিক পরিবেশ, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞানের বিস্ফোরণের সঙ্গে সংগতি রেখে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা পুনর্গঠিত করা প্রয়োজন।
[7] সপ্তম অধ্যায়: সপ্তম অধ্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থার সক্রিয়করণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। শিক্ষার জন্য প্রয়োজন বিধিবদ্ধ পরিবেশ, আন্তরিকতা, উদ্ভাবন ও সৃষ্টিমূলক কাজে স্বাধীনতা। শিক্ষার গুণগত ও ধারণাগত পর্যায়ে পরিবর্তনের জন্য প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলাবিধানের প্রক্রিয়া চালু করা।
[৪] অষ্টম অধ্যায়: অষ্টম অধ্যায়ে বিষয়বস্তু ও শিক্ষা প্রক্রিয়ার পুনর্বিন্যাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়বস্তু ও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে ভারতের সংস্কৃতি, মূল্যবোধের শিক্ষা, সঠিক ভাষানীতি, পুস্তক ও গ্রন্থাগারের সুব্যবস্থা, শিক্ষামাধ্যম হিসেবে শিক্ষাপ্রযুক্তির ব্যবহার, কর্ম-অভিজ্ঞতা, পরিবেশশিক্ষা, গণিত ও বিজ্ঞানশিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলো, যুবসমাজের ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীদের নির্ভরযোগ্য এবং নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়ন।
[9] নবম অধ্যায়: নবম অধ্যায়ে শিক্ষকগণের প্রতি মর্যাদাদানের কথা বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সমগ্র দেশে শিক্ষকদের একই বেতন ও চাকুরির শর্তাবলি স্থির করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির প্রসার এবং গুণমান বজায় রাখার ক্ষেত্রে NCTE-র ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।
[10] দশম অধ্যায়: দশম অধ্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় স্তর এবং রাজ্য স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থাপনার উন্নতির দায়িত্ব থাকবে যথাক্রমে CABE এবং SABE-এর ওপর। উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা স্কুল বোর্ড গঠিত হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজকর্মী, বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রয়াসকেও উৎসাহিত করা হবে।
[11] একাদশ অধ্যায়: একাদশ অধ্যায়ে শিক্ষার সার্থক রূপদানের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে 1968-এর জাতীয় শিক্ষানীতিতে জাতীয় আয়ের 6 শতাংশ ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে।
[12] দ্বাদশ অধ্যায়: দ্বাদশ অধ্যায় বা শেষ অধ্যায়ে ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মজবুত শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলাই হবে প্রধান কাজ।