অধ্যায় 6
মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন 1952-'53
------------------------------------------
MCQ
1. 'মুদালিয়র কমিশন' অপর যে নামে পরিচিত তা হল-
(i) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন
(ii) মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন
(iii) কোঠারি কমিশন
(iv) জাতীয় শিক্ষানীতি
উত্তর: (ii) মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন
2. মুদালিয়র কমিশন কবে গঠন করা হয়?
(i) 1948 খ্রিস্টাব্দে
(ii) 1949 খ্রিস্টাব্দে
(iii) 1951 খ্রিস্টাব্দে
(iv) 1952 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (iv) 1952 খ্রিস্টাব্দে
3. মুদালিয়র কমিশনের সদস্যসংখ্যা কত ছিল?
(i) 4 জন
(ii) 6 জন
(iii) 7 জন
(iv) 9 জন
উত্তর: (iv) 9 জন
4. কত খ্রিস্টাব্দে মুদালিয়র কমিশনের রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করা হয়?
(i) 1952 খ্রিস্টাব্দে
(ii) 1953 খ্রিস্টাব্দে
(iii) 1954 খ্রিস্টাব্দে
(iv) 1964 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (ii) 1953 খ্রিস্টাব্দে
5. মুদালিয়র কমিশনের রিপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা কত ছিল?
(i) 212টি
(ii) 311টি
(iii) 402টি
(iv) 474টি
উত্তর: (ii) 311টি
6. মুদালিয়র কমিশনে ক-জন ভারতীয় সদস্য ছিলেন?
(i) 2 জন
(ii) 5 জন
(iii) 7 জন
(iv) 9 জন
উত্তর: (iii) 7 জন
7. মুদালিয়র কমিশনে বিদেশি সদস্যসংখ্যা কত ছিল?
(i) 2
(ii) 5
(iii) 7
(iv) 9
উত্তর: (i) 2
৪. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য-সম্পাদক কে ছিলেন?
(i) শ্রী কে জি সায়েদিন
(ii) জাকির হোসেন
(iii) শ্রী এস টি ব্যাস
(iv) শ্রী অনাথ বসু
উত্তর: (iv) শ্রী অনাথ বসু
9. নীচের কোন্ ব্যক্তি মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের একজন বিদেশি সদস্য ছিলেন?
(i) ড. কিনেথ রাস্ট উইলিয়াম
(ii) ড. জেমস এম ডাফ
(iii) ড. আর্থার ই মরগ্যান
(iv) ড. আর্থার উইলসন
উত্তর: (i) ড. কিনেথ রাস্ট উইলিয়াম
10. নীচের কোন্ ব্যক্তি মুদালিয়র কমিশনের একজন অন্যতম বিদেশি সদস্য?
(i) ড. জেমস এম ডাফ
(ii) ড. আর্থার ই মরগ্যান
(iii) ড. আর্থার উইলসন
(iv) জন ক্রিস্টি
উত্তর: (iv) জন ক্রিস্টি
11. "আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা লক্ষ্যহীনতার শিক্ষা”-কোন্ কমিশন এই মন্তব্যটি করেছেন?
(i) কোঠারি কমিশন
(ii) মুদালিয়র কমিশন
(iii) রাধাকৃষ্ণণ কমিশন
(iv) স্যাডলার কমিশন
উত্তর: (ii) মুদালিয়র কমিশন
12. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য কী?
(i) গণতান্ত্রিক ভারতীয় সমাজব্যবস্থার জন্য যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি করা
(ii) শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটানো
(iii) শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক উপযুক্ত মনোভাব ও প্রাথমিক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা
(iv) উপরোক্ত সবকটিই
উত্তর: (iv) উপরোক্ত সবকটিই
13. খ্রিস্টাব্দের 23 সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়রের নেতৃত্বে 'মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন' নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়।
(i) 1948
(ii) 1949
(iii) 1951
(iv) 1952
উত্তর: (iv) 1952
14. মুদালিয়র কমিশনের বিদেশি সদস্যদের মধ্যে একজন হলেন অক্সফোর্ডের জেমস কলেজের অধ্যক্ষ
(i) জন হেনরি
(ii) জন কেনি
(iii) জন বিলার্ড
(iv) জন ক্রিস্টি
উত্তর: (iv) জন ক্রিস্টি
15. মুদালিয়র কমিশনের ভারতীয় সদস্যদের মধ্যে যাঁকে সম্পাদক পদে বসানো হয়েছিল, তিনি হলেন 1
(i) শ্রী অনাথ বসু
(ii) শ্রী এস টি ব্যাস
(iii) শ্রী কে জি সায়েদিন
(iv) ডক্টর কে এস শ্রীমালী
উত্তর: (i) শ্রী অনাথ বসু
16. মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো সম্পর্কে সুপারিশ করতে গিয়ে সম্পূর্ণ বিদ্যালয় শিক্ষার সময়-কালকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বছর করার পক্ষে
(i) 8
(ii) 10
(iii) 12
(iv) 16
উত্তর: (iii) 12
17. 1948 খ্রিস্টাব্দে নিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের অভিমত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম পূর্বশর্ত কী?
(i) প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠন
(ii) মাধ্যমিক শিক্ষার পুনর্গঠন
(iii) মহাবিদ্যালয় শিক্ষার পুনর্গঠন
(iv) প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠন
উত্তর: (i) প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠন
18. কোন্ কমিটি 1948 খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক শিক্ষা পুনর্গঠনের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়?
(i) রায় চাঁদ কমিটি
(ii) যশপাল কমিটি
(iii) তারা চাঁদ কমিটি
(iv) জনার্দন রেড্ডি কমিটি
উত্তর: (iii) তারা চাঁদ কমিটি
19. নীচের কোন্ সংস্থাটি 1948 খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক শিক্ষার পুনর্গঠনের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়?
(i) কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ
(ii) রাজ্য শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ
(iii) কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন পর্ষদ
(iv) রাজ্য শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদ
উত্তর: (i) কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ
20. CABE পুরো কথাটি কী?
(i) ক্যালকাটা অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(ii) সেন্ট্রাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(iii) কোর অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(iv) কারেন্ট অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
উত্তর: (ii) সেন্ট্রাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
21. SABE পুরো কথাটি কী?
(i) সোশ্যাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(ii) সেভারেল অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(iii) স্টেট অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(iv) সিনিয়র অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
উত্তর: (iii) স্টেট অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
22. নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মুদালিয়র কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) শ্রী সুভাষ বসু
(ii) শ্রী অনাথ বসু
(iii) শ্রী রাসবিহারী বসু
(iv) শ্রী কমল বসু
উত্তর: (iii) শ্রী রাসবিহারী বসু
23. নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) শ্রীটিকে দেব
(ii) শ্রী এম কে ব্যাস
(iii) শ্রী এস টি ব্যাস
(iv) শ্রী এম কে দেব
উত্তর: (ii) শ্রী এম কে ব্যাস
24 . নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) ড. সি কে শ্রীমালী
(ii) ড. কে এস শ্রীমালী
(iii) ড. এম এস শ্রীমালী
(iv) ড. ডি কে শ্রীমালী
উত্তর: (iii) ড. এম এস শ্রীমালী
25. নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) শ্রী জি এ তারপরভেলা
(ii) শ্রী পি কে তারপরভেলা
(iii) শ্রী এম কে তার পরভেলা
(iv) শ্রী টি সি তারপরভেলা
উত্তর: (i) শ্রী জি এ তারপরভেলা
Short Question Answer
1. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন কবে এবং কার সভাপতিত্বে গঠন করা হয়?
উত্তর: 1952 খ্রিস্টাব্দের 23 সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়রের নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়।
2. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের শিরোনাম কী ছিল? এটি আর কী নামে অভিহিত হয়?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের শিরোনাম ছিল সেকেন্ডারি এডুকেশন কমিশন। এটি মুদালিয়র কমিশন নামেও অভিহিত হয়।
3. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের দুজন বিদেশি শিক্ষাবিশেষজ্ঞের নাম লেখো।
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের দুজন বিদেশি শিক্ষাবিশেষজ্ঞ হলেন জন ক্রিস্টি এবং ড. কিনেথ রাস্ট উইলিয়াম।
4. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের ভারতীয় শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের ভারতীয় শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা হলেন ড. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়র, ড. কে এস শ্রীমালী, শ্রীমতী হংস মেহতা, শ্রী জে এ তারপরভেলা, শ্রী এস টি ব্যাস, শ্রী কে জি সায়েদিন এবং শ্রী অনাথ বসু।
5. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন কবে কাজ শুরু এবং কবে কাজ শেষ করে?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন 1952 খ্রিস্টাব্দে কাজ শুরু করে এবং 1953 খ্রিস্টাব্দে কাজ শেষ করে।
6. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টটি কত পৃষ্ঠাব্যাপী ছিল?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টটি 311 পৃষ্ঠাব্যাপী ছিল।
7. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে কতগুলি অধ্যায় ছিল?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে 16টি অধ্যায় ছিল।
৪. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষার যে-কোনো একটি লক্ষ্য উল্লেখ করো।
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে, ভারতে যে নতুন গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাতে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীরা যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, সেই অনুসারে তাদের চরিত্রগঠন করা এই শিক্ষার একটি লক্ষ্য।
9. কী উদ্দেশ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল?
উত্তর: স্বাধীনতার পর সর্বভারতীয় ভিত্তিতে মাধ্যমিক শিক্ষার সংস্কারের জন্য এবং প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধানের জন্য এই শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়।
10. মুদালিয়র কমিশনের চারটি বিচার্য বিষয় উল্লেখ করো।
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের চারটি বিচার্য বিষয় হল-① ভারতবর্ষে মাধ্যমিক শিক্ষার তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধান করা। ② মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য, সংগঠন ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা। ③ প্রাথমিক, বুনিয়াদি ও উচ্চতর শিক্ষার সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার সম্পর্ক স্থাপন করা। 4 বিভিন্নপ্রকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা।
11. মাধ্যমিক শিক্ষার একটি লক্ষ্য উল্লেখ করো।
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষার একটি লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার বিকাশ সাধন করা।
12. মুদালিয়র কমিশনের অপর নাম কী ছিল?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের অপর নাম মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন।
13. মুদালিয়র কমিশনের সদস্যসংখ্যা কত ছিল?
উত্তর: : মুদালিয়র কমিশনের সদস্যসংখ্যা ছিল 9 জন। আমা
14. কোন্ শিক্ষা কমিশন ত্রিভাষাসূত্রের কথা বলেছেন?
উত্তর: মুদালিয়র শিক্ষা কমিশন সর্বপ্রথম ত্রিভাষাসূত্রের কথা বলেছেন।
Long Question Answer
1. পাঠক্রমে সাতটি মূল বিভাগ বা প্রবাহের অবতারণা প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশন প্রচলিত শিক্ষার পাঠক্রমের যে ত্রুটি চিহ্নিত করেন, তা লেখো। পাঠক্রমের মূল অংশের এবং ঐচ্ছিক অংশের বিষয় সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ উল্লেখ করো।
উত্তর: প্রচলিত পাঠক্রমের ত্রুটি মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে সুপারিশ করার আগে প্রচলিত শিক্ষার পাঠক্রমের কতকগুলি ত্রুটি চিহ্নিত করে। ত্রুটিগুলি হল-
[1] পুথিকেন্দ্রিক ও তাত্ত্বিক: মুদালিয়র কমিশনের মতে, প্রচলিত পাঠক্রম পুথিকেন্দ্রিক ও তত্ত্বমূলক, জীবনের সঙ্গে এই পাঠক্রমের কোনো যোগ নেই।
[2] বিষয়গতভাবে ভারাক্রান্ত: প্রচলিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম বিষয়গতভাবে খুবই ভারাক্রান্ত। অথচ বিষয়গুলির বেশিরভাগ অংশ তাৎপর্যহীন এবং সমৃদ্ধ নয়।
[3] ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক নয়: কমিশনের মতে, প্রচলিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক নয়। ওই পাঠক্রমে ব্যাবহারিক ও কর্মভিত্তিক বিষয়ের যথেষ্ট অভাব ছিল।
[4] বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদাপূরণে সহায়ক নয়: প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম বয়ঃসন্ধিকালের ছাত্রছাত্রীদের চাহিদাপূরণে সহায়ক ছিল না।
[5] পরীক্ষানির্ভর: প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম ছিল মূলত পরীক্ষানির্ভর। মাত্রাতিরিক্ত পরীক্ষার চাপ ছাত্রছাত্রীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলত।
[6] কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনে সহায়ক বিষয়ের অভাব: প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমে দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের উপযোগী তেমন কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
উল্লিখিত ত্রুটিগুলিকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে মুদালিয়র কমিশন নিম্নলিখিত পাঠক্রমের সুপারিশ করে-
[1] নিম্নমাধ্যমিক স্তরের জন্য: নিম্নমাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়গুলিতে যেসব বিষয় পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, সেগুলি হল। ভাষা, ii. সামাজিক শিক্ষা, iii. সাধারণ বিজ্ঞান, iv. গণিত, v. কলা ও সংগীত, vi. হাতের কাজ, vii. শিল্প এবং viii. শারীরশিক্ষা।
[2] উচ্চ ও উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য: কমিশনের মতে, নিম্নমাধ্যমিক স্তরের পাঠ শেষ করার পর প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিশেষ বিশেষ সামর্থ্য ও অনুরাগ একটি নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে। তাই, এই পর্যায়ের পাঠক্রম প্রণয়নের সময় ছাত্রছাত্রীদের সামর্থ্য ও অনুরাগের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পাঠক্রমে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও বিষয়বস্তুকে এমনভাবে সংযোজিত করতে হবে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের রুচি, প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে পারে। এই নীতির কথা বিবেচনা করে মুদালিয়র কমিশন পাঠক্রমকে দুটি অংশে ভাগ করে উপস্থাপন করে। এদের একটি হল- আবশ্যিক (compulsory) বা মূল (core) অংশ; অপরটি হল ঐচ্ছিক (elective) অংশ। এ ছাড়াও অতিরিক্ত বিষয় (optional subject)-ও থাকবে।
পাঠক্রমের মূল এবং ঐচ্ছিক অংশের বিষয়সমূহ সম্পর্কে সুপারিশ মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক পাঠক্রমকে মূল অংশ ও ঐচ্ছিক অংশে ভাগ করেন। পাঠক্রমের উভয় অংশের বিষয়সমূহ সম্পর্কেই কমিশনের রিপোর্টে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।
মূল অংশের বিষয়সমূহ
কমিশন পাঠক্রমের আবশ্যিক বা মূল অংশে যে বিষয়গুলিকে উপস্থাপন করেছে, তা নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] ভাষা: এই পর্যায়ে দুটি ভাষা শেখা দরকার।
(i)মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, অথবা মাতৃভাষা এবং প্রাচীন ভাষার মিশ্রণ।
(ii) নীচে উল্লিখিত ভাষাগুলির মধ্যে যে-কোনো একটি-① হিন্দি (যাদের মাতৃভাষা হিন্দি নয়), ② প্রাথমিক ইংরেজি (যারা আগে ইংরেজি পড়েনি), ও ইংরেজি (যারা আগে ইংরেজি পড়েছে), ④ একটি আধুনিক ভারতীয় ভাষা (হিন্দি ছাড়া), ⑤ একটি আধুনিক ইউরোপীয় ভাষা (ইংরেজি ব্যতীত), ⑥ একটি প্রাচীন ভাষা।
[2] সমাজবিজ্ঞান: সাধারণ পাঠ (প্রথম দু-বছর সময়কালের জন্য)
[3] গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান: সাধারণ পাঠ (প্রথম দু-বছর সময়কালের জন্য)
[4] হাতের কাজ বা হস্তশিল্প: নীচের বিষয়গুলির মধ্যে থেকে যে-কোনো একটি-কাঠের কাজ, ধাতুর কাজ, বয়ন ও বুনন, টাইপোগ্রাফি, দর্জির কাজ, বানান তৈরি, সেলাই ও সূচিশিল্প, মূর্তি নির্মাণ, কর্মশালায় প্রস্তুতিমূলক কাজ ইত্যাদি।
ঐচ্ছিক অংশের বিষয়সমূহ
কমিশন ঐচ্ছিক পাঠক্রমে বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়গুলিকে সাতটি মূল প্রবাহে বা বিভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করেছে। এদের যে-কোনো বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীকে তিনটি বিষয় নির্বাচন করতে হবে। নীচে সাতটি বিভাগ ও সেগুলির অন্তর্গত বিষয় উল্লেখ করা হল-
শিক্ষার্থীরা উপর্যুক্ত বিভাগের বিষয়গুলি থেকে আরও একটি বিষয়কে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।
2. মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য 'শিক্ষণ পদ্ধতি' বিষয়ে যে সকল মূল্যবান সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে, তা লেখো। 'নির্দেশনা ও পরামর্শদান' সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি কী কী?
উত্তর:মুদালিয়র কমিশনের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষণ পদ্ধতি বিষয়ক সুপারিশ
মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য গতিশীল শিক্ষণ পদ্ধতির সুপারিশ করে। ওই সুপারিশে যা বলা হয়, তা নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] তথ্য পরিবেশনের পরিবর্তে মূল্যবোধ 3 কর্মপ্রবণতার বিকাশসাধন: কমিশনের মতে, বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষণ পদ্ধতির লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মূল্যবোধ ও সঠিক ধারণা গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে কর্মের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করা।
[2] মুখস্থের পরিবর্তে কর্মমুখী প্রকল্প পদ্ধতি গ্রহণ: পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে মুখস্থের পরিবর্তে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন কর্মমুখী প্রকল্পে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। যে-কোনো বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি ও চিন্তাশক্তির বিকাশের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
[3] ব্যক্তিগত ও দলগত কর্মপ্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব প্রদান: বিদ্যালয় স্তরে
শিক্ষার্থীরা যাতে ব্যক্তিগত ও দলগত কর্মপ্রচেষ্টায় শিক্ষালাভের চেষ্টা করে, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়।
[4] বাড়ির কাজের ওপর গুরুত্ব: কমিশন ছাত্রছাত্রীদের দৈনিক বাড়ির কাজ (home task) দেওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে।
[5] গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা: প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাতে গ্রন্থাগার গড়ে ওঠে, তার জন্য কমিশন সুপারিশ করে। ওইসব গ্রন্থাগারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করার পরামর্শও দান করা হয়।
[6] শিক্ষা-সহায়ক উপকরণের ব্যবহার: শিক্ষাদানের সময় ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ এবং কঠিন বিষয়গুলি সহজ করে বোঝানোর জন্য শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সহায়ক উপকরণ ব্যবহার প্রসঙ্গেও মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন অভিমত ব্যক্ত করে।
মুদালিয়র কমিশনের নির্দেশনা ও পরামর্শদান বিষয়ক সুপারিশ কমিশন মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষামূলক এবং বৃত্তিমূলক নির্দেশনা ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করে। কমিশনের সুপারিশগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] নির্দেশনা ও পরামর্শদানের ওপর গুরুত্ব:
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা-
কর্তৃপক্ষকে শিক্ষামূলক নির্দেশনা ও পরামর্শদানের বিষয়ে সঠিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
[2] শিক্ষাক্রম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: বহুমুখী শিক্ষাক্রম সম্পর্কে - ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে, তার জন্য চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ সামর্থ্য এবং পছন্দের বিষয়গুলি চলচ্চিত্রের তথ্যের সঙ্গে যাচাই করার সুযোগ পাবে।
[3] গাইডেন্স অফিসার ও কেরিয়ার মাস্টার নিয়োগ: প্রত্যেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইডেন্স অফিসার ও কেরিয়ার মাস্টার নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকূল্যে বিদ্যালয়ে নিযুক্ত শিক্ষকদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান করতে হবে।
EDITING BY--Liza Mahanta