Chapter--12
শিক্ষায় প্রযুক্তির ভূমিকা
--------------------------------------------
👉Paid Answer (For membership User)
MCQ
1. ভাষা
পরীক্ষাগারের উদ্দেশ্য হল-
(a) ভাষা ব্যবহারকালে সঠিক উচ্চারণ করা
(b) Idiom ও phrase ব্যবহার করা
(c) যোগাযোগে উৎকর্ষ আনা
(d) ওপরের সবগুলি ✔
2. ভাষা পরীক্ষাগারে প্রতিটি শিক্ষার্থীর
কাছে কী থাকে?
(a) হেডফোন এবং টেপরেকর্ডার
(b) হেডফোন এবং লাউডস্পিকার ✔
(c) হেডফোন
(d) হেডফোন, লাউডস্পিকার
এবং টেপরেকর্ডার
3. টিচিং মেশিনের আবিষ্কারে কোন্ কোন্ ব্যক্তি মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছেন?
(a) প্যাভলভ এবং স্কিনার
(b) থর্নডাইক এবং উডওয়ার্থ
(c) স্কিনার এবং মিডনা প্রেসি ✔
(d) উডওয়ার্থ এবং মিডনা প্রেসি
4. টিচিং মেশিনের সাহায্যে শিক্ষার্থী কী করে?
(a) নির্দিষ্ট বোতাম টিপে শিক্ষার বিষয়বস্তু নিয়ে আসে এবং নিজেই শেখে
(b) নির্দিষ্ট বোতাম টিপে প্রশ্ন নিয়ে আসে
(c) নির্দিষ্ট বোতাম টিপে উত্তর দেয়
(d) ওপরের সবগুলি ✔
5. টিচিং মেশিন সম্পর্কে নীচের কোন্ তথ্যটি সঠিক নয়?
(a) এটি ভুল উত্তর হলে জানিয়ে দেয়
(b) এটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে
মিথস্ক্রিয়া ঘটায়
(c) এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার মেধা অনুযায়ী
শিখনের সুযোগ পায় ✔
(d) এটি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদ্যুতের
প্রয়োজন অপরিহার্য নয়
6. ভারতবর্ষের কোন্ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দূরদর্শনে নিজস্ব চ্যানেল আছে?
(a) বিশ্ববিদ্যালয় গ্রান্টস্ কমিশন
(b) ইন্দিরা গান্ধি ন্যাশনাল ওপেন
ইউনিভার্সিটি
(c) ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ
অ্যান্ড টিচিং
(d) ওপরের সবগুলি ✔
7. শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনের সাফল্যের কারণ কী?
(a) বিষয়বস্তুকে দর্শন ও শ্রবণগ্রাহ্য করে
তোলে
(b) অভিজ্ঞ শিক্ষকের দ্বারা একই সময় অসংখ্য
শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দান করা যায়
(c) শিক্ষার বিষয়বস্তুকে গতিময় করে তোলা যায়
(d) ওপরের সবগুলি ✔
8. শিক্ষাপ্রযুক্তিতে দূরদর্শনের কাজ কী?
(a) শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ
(b) জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসার ঘটানো
(c) কম্পিউটার সাক্ষরতার প্রসার ঘটানো
(d) ওপরের সবগুলি ✔
9. শিখনের কোন্ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পিত শিখন রূপ পেয়েছে?
(a) থর্নডাইকের চেষ্টা ও ভ্রান্তি তত্ত্ব
(b) স্কিনারের সক্রিয় অনুবর্তন তত্ত্ব ✔
(c) প্যাভলভের প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্ব
(d) কোহলারের অন্তর্দৃষ্টিমূলক মতবাদ
10. পরিকল্পিত শিখনের গুরুত্বপূর্ণ দিক কোন্টি?
(a) শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা
(b) ফ্যিাক সরবরাহ
(c) ফ্রেম প্রস্তুত করা
(d) ওপরের সবগুলি ✔
11. পার্শিভাল
এবং এলিংটনের (1984) মতে শিক্ষাদানে শিক্ষাপ্রযুক্তি কত ভাবে
ব্যবহৃত হয়?
(a) চার ভাবে ✔
(b) তিন ভাবে
(c) দু-ভাবে
(d) পাঁচ ভাবে
12. শিক্ষাবিজ্ঞানের
প্রযুক্তিকরণ (Technology of education)-এর
উদাহরণ হল-
(a) প্রোগ্রাম শিখন ✔
(b) রেডিয়ো
(c) ওভার হেড প্রোজেক্টর
(d) সকলের জন্য শিক্ষা
13. তন্ত্র
(System)-রূপে
বিবেচিত শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় 'Output' হল-
(a) মানবসম্পদ
(b) তথ্য
(c) শিক্ষার্থীর উন্নত পারদর্শিতা ✔
(d) শিক্ষাথী
14. শিক্ষায়
প্রযুক্তির পরিধির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল-
(a) অনুশিক্ষা
(b) শিক্ষা সম্প্রচার
(c) ব্যক্তিভিত্তিক শিখন
(d) ওপরের সবগুলি ✔
15. একটি
মাল্টিমিডিয়ার উদাহরণ হল-
(a) অডিও ক্যাসেট
(b) দূরদর্শন ✔
(c) রেডিও
(d) টেলিফোন
Short Answer Question
1. প্রযুক্তির একটি সংজ্ঞা দাও।
▶ প্রযুক্তি হল ব্যাবহারিক উদ্দেশ্যে (যেমন-সমস্যা) বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রয়োগ করা।
2. শিক্ষাপ্রযুক্তিবিদ্যা কী?
▶ শিক্ষাপ্রযুক্তিবিদ্যা হল
শিক্ষা-সম্পর্কিত বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান, যা বাস্তব শিখন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা
হয়।
3. শিক্ষাপ্রযুক্তিতে যে পাঁচটি 'M' সমন্বিত
হয়, সেইগুলি
কী?
▶ যে পাঁচটি 'M'-এর
সমন্বয়ে শিক্ষাপ্রযুক্তি গড়ে উঠেছে, সেই পাঁচটি 'M' হল-ম্যান
(Man), মেটিরিয়াল
(Material),
মিডিয়া (Media), মাস (Mass) এবং
মেথড (Method)।
4. শিক্ষাপ্রযুক্তিকে বিজ্ঞানভিত্তিক বলা
হয় কেন?
▶ শিক্ষাপ্রযুক্তি শিক্ষার লক্ষ্য
নির্দিষ্টকরণ, পাঠক্রম
প্রণয়ন, শিক্ষা-শিখন
প্রক্রিয়া মূল্যায়ন ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই বিজ্ঞানভিত্তিক নীতি প্রয়োগ করে। তাই একে
বিজ্ঞানভিত্তিক বলা হয়।
6. শিক্ষাপ্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষাপোকরণের
সম্পর্ক কী?
▶ শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং শিক্ষাপোকরণ এক নয়।
শিক্ষাপোকরণ শিক্ষাপ্রযুক্তির একটি অংশ মাত্র।
7.কীভাবে মহাভারতের একটি শ্লোকে বহু মাধ্যমের ব্যবহারকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে?
▶ মহাভারতের একটি শ্লোকে বলা হয়েছে, ব্যক্তি গুরু বা শিক্ষকের কাছে এক-চতুর্থাংশ জ্ঞান অর্জন করে, নিজের বুদ্ধিমত্তা এবং প্রতিভার সাহায্যে এক-চতুর্থাংশ জ্ঞান অর্জন করে, সহপাঠী এবং বন্ধুদের নিকট থেকে এক-চতুর্থাংশ জ্ঞান অর্জন করে। অবশিষ্ট অংশের জ্ঞান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্জিত হয় এবং এই চারটি মাধ্যম একই সঙ্গে মিথস্ক্রিয়াসহ সক্রিয় হয়।
8. শিক্ষাপ্রযুক্তির পরিধিকে কী কী ভাগে
বিভক্ত করা যায়?
▶ শিক্ষাপ্রযুক্তির পরিধিকে তিন ভাগে
বিভক্ত করা যায়- (a) প্রযুক্তিভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়া, (b) প্রযুক্তিভিত্তিক
সাধারণ শিক্ষা প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা এবং(c) ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা পরিমাপক।
9. তথ্যের উৎসের ভিত্তিতে ম্যাকেঞ্জি
শিক্ষাপ্রযুক্তিকে কী কী শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন?
▶ ম্যাকেঞ্জি তথ্যের উৎসের ভিত্তিতে
শিক্ষাপ্রযুক্তিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন-① ভাষা পরীক্ষাগার,
② টিচিং মেশিন এবং③পরিকল্পিত শিখন উপকরণ।
10. ভাষা
পরীক্ষাগারের সূচনা কোন্ দেশে হয়?
▶ ভাষা পরীক্ষাগারের সূচনা হয় আমেরিকায়।
11. ভাষা পরীক্ষাগারের প্রয়োজনীয়তা কী?
▶ ভাষা, বিশেষত
বিদেশি ভাষা, সঠিকভাবে
শোনা, বলা
এবং উচ্চারণ করতে শেখার জন্য ভাষা পরীক্ষাগারের প্রয়োজন।
12. ভাষা পরীক্ষাগারের উদ্দেশ্য কী?
▶ সঠিক শব্দচয়ন, Idioms ও phrase ব্যবহারের
ক্ষমতা বিকাশ এবং শিক্ষার্থীকে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম করে তোলাই ভাষা
পরীক্ষাগারের উদ্দেশ্য।
13. ভাষা পরীক্ষাগারে কী কী হার্ডওয়্যার
ব্যবহৃত হয়?
▶ ভাষা পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যারের
মধ্যে রয়েছে হেডফোন, লাউডস্পিকার এবং টেপরেকর্ডার।
14. ভাষা পরীক্ষাগারে কী সফটওয়্যার ব্যবহৃত
হয়?
▶ ভাষা পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত সফট্ওয়্যারের
মধ্যে রয়েছে টেপ রেকর্ডারে ব্যবহারযোগ্য ক্যাসেট।
15. ভাষা পরীক্ষাগারে 'মনিটর' কাকে
বলে?
Long Answer Question
1.শিক্ষাপ্রযুক্তির একটি সংজ্ঞা দাও। এর বৈশিষ্ট্যাবলি আলোচনা করো।
উত্তর: শিক্ষাপ্রযুক্তির সংজ্ঞা-গবেষণাভিত্তিক নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে সমগ্র শিখন এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে ধারাবাহিকভাবে নকশাকরণ, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়নই হল শিক্ষাপ্রযুক্তির কাজ।
[3] শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং শিখন পরিস্থিতির সংগঠন: শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাপ্রযুক্তি শিখন পরিস্থিতি সংগঠনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
[4] পরিমাপের কৌশল নকশাকরণ: শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়ার ফল পরিমাপের জন্য শিক্ষাপ্রযুক্তি পরিমাপকের নকশাকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
[5] পরিবেশ, মাধ্যম এবং পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ: শিখনের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শিক্ষাপ্রযুক্তি পরিবেশ, মাধ্যম এবং পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
[6] ইনপুট, আউটপুট
এবং প্রক্রিয়া: শিক্ষাপ্রযুক্তি শিক্ষা-শিখন
প্রক্রিয়াকে একটি আউটপুট। (সিস্টেম) টম) হিসেবে বিবেচনা। করে। যেমন-ইনপুট, প্রক্রিয়া
এবং
ii. প্রক্রিয়া হল উৎকর্ষের সঙ্গে জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য সঠিক শিক্ষাপ্রক্রিয়ার সুযোগ।
iii. আউটপুট হল নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উন্নত পারদর্শিতা।
[7] শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যম: শিক্ষাপ্রযুক্তি বৈদ্যুতিন মাধ্যম ব্যবহার করে, যেমন-বেতার, কম্পিউটার, টিভি ইত্যাদি। তবে কেবলমাত্র বৈদ্যুতিন মাধ্যম ব্যবহারের মধ্যেই শিক্ষাপ্রযুক্তি সীমাবদ্ধ নয়। সিস্টেম বা তন্ত্র ব্যবস্থাও এর অন্তর্ভুক্ত।
[৪] শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং শিক্ষাপোকরণ: শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং শিক্ষাপোকরণ এক নয়। শিক্ষাপোকরণ শিক্ষাপ্রযুক্তির একটি অংশ মাত্র।
2 .শিক্ষাপ্রযুক্তির পরিধি উল্লেখ করো।
উত্তর: শিক্ষাপ্রযুক্তির পরিধি--শিক্ষাপ্রযুক্তির পরিধিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা- [1] প্রযুক্তিভিত্তিক সাধারণ শিক্ষা প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনা, [2] প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা পরিমাপক এবং [3] প্রযুক্তিভিত্তিক পাঠদান প্রক্রিয়া।
রাউনট্রা (Rowntree, 1973) শিক্ষাপ্রযুক্তির প্রয়োগ সম্পর্কে নীচের বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন-
ii. শিখন পরিবেশ রচনা।
iii. বিষয়বস্তু নির্বাচন এবং বিন্যাসকরণ।
iv. সঠিক শিখন কৌশল এবং শিখন মাধ্যম নির্বাচন।
v. শিখনব্যবস্থার কার্যকারিতার মূল্যায়ন।
vi. মূল্যায়নের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে উত্তম শিখন পরিবেশ গড়ে তোলা। এ ছাড়াও শিক্ষাপ্রযুক্তির আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নীচে উল্লেখ করা
[6] শিক্ষণে বহুধা মাধ্যমের ব্যবহার, [7] ম্যাথেমেটিকস, [৪] কাজ বিশ্লেষণ, [9] মডিউল, [10] সিস্টেম দৃষ্টিভঙ্গি, [11] অনুশিক্ষণ, [12] শিক্ষা সম্প্রচার।
3. ভাষা পরীক্ষাগার কী? এর উদ্দেশ্য এবং পরিচালনা বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো। 1+3
উত্তর: ভাষা পরীক্ষাগার- যে প্রযুক্তিগত কৌশল ভাষা, বিশেষ করে বিদেশি ভাষাশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তাকে ভাষা পরীক্ষাগার বলা হয়।
ডাষা পরীক্ষাগারের উদ্দেশ্য ও পরিচালনা--ভাষা ব্যবহারে সঠিক শব্দচয়ন, idioms এবং phrase ব্যবহারের ক্ষমতা বিকাশ ভাষা পরীক্ষাগারের অন্যতম লক্ষ্য। এর আর-একটি লক্ষ্য হল সঠিক ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে উৎকর্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম করে তোলা।
একটি
নির্দিষ্ট কক্ষে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য পৃথক বসার ব্যবস্থা থাকে। একে বুথ বলা
হয়। এখানে হেডফোন এবং লাউডস্পিকার থাকে। পরীক্ষাগার
পরিচালককে
বলা হয় 'মনিটর'।
তিনি সাধারণত টেপরেকর্ডারের মাধ্যমে পাঠদান করেন। শিক্ষার্থীরা নির্দেশগুলি শুনে
তার পুনরাবৃত্তি করেন। কোনো শিক্ষার্থী ভুল করলে তিনি অর্থাৎ, 'মনিটর' শিক্ষার্থীর
সাথে যোগাযোগ করে ভুল সংশোধন করে দেন। প্রয়োজনবোধে শিক্ষার্থীও 'মনিটর'-এর
সাহায্য নিতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের পরীক্ষাগার ভারতবর্ষেও ব্যাপকভাবে চালু
হয়েছে। Bharat
Electronics ভাষা পরীক্ষাগারের সমস্ত যন্ত্র সরবরাহ
করে।
4.শিক্ষাপ্রযুক্তির শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করো। এই প্রসঙ্গে শিক্ষণ যন্ত্র এবং দূরদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: শিক্ষাপ্রযুক্তির শ্রেণিবিভাগ--শিক্ষাপ্রযুক্তিকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে। ম্যাকেঞ্জি (Mackenjee) এবং অন্যরা (1980) শিক্ষাপ্রযুক্তিকে তথ্যের উৎসের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভক্ত করেছেন। সেগুলি হল- [1] ভাষা পরীক্ষাগার, [2] টিচিং মেশিন, [3] দূরদর্শন, [4] পরিকল্পিত শিখন উপকরণ।
[3] উত্তরটি সঠিক হয়েছে কি না তা নির্দিষ্ট কৌশলের মাধ্যমে মেশিন বা যন্ত্রটি জানিয়ে দেয়। অনেক সময় ভুল হলে, কেন ভুল হয়েছে তা জানিয়ে দেয়। টিচিং মেশিনের মৌলিক নীতিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
[1] পাঠদান ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
[2] শিক্ষার্থী তার সময় ও ক্ষমতা অনুযায়ী শিখনের সুযোগ পায়।
[3] বিষয়বস্তুকে এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যাতে ভুলের সম্ভাবনা ন্যূনতম হয়।
[4] শিখনের বিষয়বস্তুকে যুক্তিসিদ্ধভাবে বিন্যাস করা হয়।
[5] যন্ত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে ফিডব্যাক (শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেয়) সরবরাহ করে, যাতে শিক্ষার্থী প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
[6] যন্ত্রটি শিক্ষার্থীকে সক্রিয় হতে উৎসাহিত করে।
[7] যন্ত্রটি
বিদ্যুৎ বা হাতের সাহায্যে চালানো যায়।
দূরদর্শন--দূরদর্শন একটি শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রযুক্তির উদাহরণ। ভারতবর্ষে শিক্ষায় দূরদর্শনের ব্যবহার দিল্লিতে শুরু হয়। 1961 সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে সর্বপ্রথম বিদ্যালয়ে দূরদর্শনের ওপর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সমগ্র দেশে শিক্ষায় দূরদর্শনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে হচ্ছে।
পায়। বর্তমানে একাধিক শিক্ষা সংস্থার নির্দিষ্ট চ্যানেল আছে, যেমন- NCERT, UGC (ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন), IGNOU (ইন্দিরা গান্ধি ন্যাশনাল মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়)। এগুলি দূরদর্শনের সাহায্যে বিষয়বস্তুকে দৃশ্য-শ্রাব্য করে তোলে। তা ছাড়া দূরদর্শনের মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে গতিশীল করে তোলা যায়, যার ফলে এটি শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
শিক্ষাপ্রযুক্তি
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে দূরদর্শনের সাহায্য নিয়েছে- [1] বিদ্যালয়ে
সম্প্রচার, [2] দূরদর্শনের
সাহায্যে পাঠদান, [3] শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, [4] দূরশিক্ষা, [5] করসপন্ডেস
কোর্স, [6] দৃশ্য-শ্রাব্য
উপকরণ প্রস্তুত, বিকাশ এবং ব্যবহার, [7] ভাষা
শিক্ষা এবং [৪] কম্পিউটার
সাক্ষরতা।
5.শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর: শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান হল-
[1] নতুন বিষয় শেখার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার: বর্তমানে CAI (কম্পিউটার সহযোগী নির্দেশনা)-এর সাহায্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রোগ্রামড্ শিখনের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের ইচ্ছামতো বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ গ্রহণ করতে পারে।
[2] ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণে কম্পিউটারের ব্যবহার: শ্রেণির প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর মেধা একরকম হয় না। কোনো শিক্ষার্থী যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অতিরিক্ত বিষয় পড়তে চায়, সেক্ষেত্রে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে তাকে ব্যক্তিগতভাবে বেশি সময় দিতে পারেন না। কিন্তু কম্পিউটার একই সময়ে বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীর প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এর ফলে, অল্পধী, সাধারণ এবং মেধাবী-সবধরনের শিক্ষার্থীই বিশেষভাবে উপকৃত হয়।
[3] শিখনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার: পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক বিষয় শিক্ষার্থীদের সামনে সুচারুরূপে উপস্থাপিত করার জন্য কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
[4] পঠনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার: শিক্ষার্থীদের ধ্বনি বা উচ্চারণ শিখনের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ধরনের শব্দকে সিলেবলে ভাগ করার ক্ষেত্রে, কঠিন শব্দ সহজে শেখার ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
[5] শিক্ষক-শিক্ষিকাকে
সাহায্য করতে কম্পিউটারের ব্যবহার: বর্তমানে
বিভিন্ন ধরনের অভীক্ষা (Test) প্রণয়নের ক্ষেত্রে, অভীক্ষার
ফলাফল বিশ্লেষণে, ছাত্রছাত্রীদের সফলতা-বিফলতার তথ্য
সংগ্রহের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
6. কম্পিউটার
ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা উল্লেখ করো।
[1] গতিশীলতা ও নির্ভুলতা: এটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নির্ভুলভাবে কাজ করতে পারে।
[2] তথ্য ও ১ ও পরিসংখ্যান সঞ্চয়: কম্পিউটার তার হার্ডডিস্কে বিপুল তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। এছাড়া প্রয়োজনমতো তা অতি দ্রুত সরবরাহও করতে পারে।
[3] সংযোগ: অনেকগুলি কম্পিউটারকে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের (LAN) মাধ্যমে যুক্ত করে একই তথ্যের ভিত্তিতে নানা ধরনের গণনা বিভিন্ন কম্পিউটারে করা যায়।
[4] কর্মক্ষমতা: যান্ত্রিক
ত্রুটি না ঘটলে কম্পিউটার অবিরাম নিখুঁতভাবে কাজ করে যেতে পারে।
কম্পিউটার ব্যবহারের অসুবিধা বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়তে থাকলেও এর অনেকগুলি অসুবিধাও রয়েছে।
[1] যান্ত্রিক অসুবিধা: কম্পিউটার একটি যন্ত্র এবং এটি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। যন্ত্র বিকল হলে বা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হলে এটি কাজ করতে পারে না।
[2] বিষয়বস্তু উপস্থাপনের অসুবিধা: সাধারণত কম্পিউটারের মনিটর ছোটো হয়, তাই এতে একসঙ্গে দীর্ঘ বিষয় উপস্থাপন করা যায় না।
[3] সংবেদনশীলতার
অভাব: কম্পিউটার যন্ত্র হওয়ায় এর থেকে কোনো
ধরনের সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় না।
7.শিক্ষাপ্রযুক্তির ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: শিক্ষাপ্রযুক্তির ধারণা--শিক্ষাপ্রযুক্তির ধারণাটিকে তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা যায়।
[1] বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে পাঠদান: এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষাপ্রযুক্তি বলতে বোঝায় ভৌতবিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি আবিষ্কৃত বিভিন্ন ধরনের সাধারণ এবং বিদ্যুৎচালিত যন্ত্র, যেমন- টেপরেকর্ডার, টিভি, কম্পিউটারভিত্তিক শিখন, প্রোজেক্টর ইত্যাদির সাহায্যে পাঠদান। James, O. Fein এবং অন্যরা অডিয়োভিশুয়াল শিক্ষা আন্দোলন প্রসঙ্গে বিষয়টি সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন।
[2] পাঠদানে বিজ্ঞানভিত্তিক নীতি প্রয়োগ: দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পাঠদানে বিজ্ঞানভিত্তিক নীতির ব্যবহার উল্লেখ করা হয়েছে। স্কিনার (Skinner), গ্যানে (Gagne) এবং অন্যরা এই দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থক। এখানে শিখনে মনস্তাত্ত্বিক নীতির ওপর গুরত্ব আরোপ করা হয়।
[3] শিক্ষা
ও প্রশিক্ষণতন্ত্র: তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি হল প্রথম ও দ্বিতীয়
দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বিত রূপ। শিক্ষাপ্রযুক্তির এই আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তা হলেন
ডেভিস এবং হার্টলে (Davis and Hartley)। এখানে
শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণতন্ত্র (system) হিসেবে বিবেচিত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি
অনুযায়ী শিক্ষা হল একটি তন্ত্র বা সিস্টেম, যার অংশ হল যন্ত্র, উপকরণ, মাধ্যম, মানুষ
ও পদ্ধতি। এখানে পরস্পর সম্পর্কিত সব উপাদানগুলিকে এমনভাবে সংগঠিত করা হয়, যার
ফলে শিক্ষার নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এইগুলি একই সঙ্গে সক্রিয় হয়।
8.শিক্ষায় শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা,
শিক্ষাপ্রযুক্তিবিদ্যার যে-কোনো চারটি সুবিধা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
[1] শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে শিক্ষাপ্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে সর্বত্র কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই কারণেই প্রাথমিক স্তর থেকেই কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
[2] পাঠক্রম পরিকল্পনা এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপযুক্ত পাঠক্রম পরিকল্পনায় শিক্ষাপ্রযুক্তি সাহায্য করে। বর্তমান পাঠক্রম পরিকল্পনায় যে বিভিন্ন মডেলের কথা বলা হয় (যেমন-টাবার মডেল, লাউটন মডেল ইত্যাদি) তা শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান।
[3] শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়া এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: শিক্ষা-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার উৎকর্ষসাধনে শিক্ষাপ্রযুক্তির বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা দেখা যায়। নীচে এগুলি উল্লেখ করা হল-
i. ব্যক্তিভিত্তিক শিক্ষণ: ব্যক্তিভিত্তিক শিক্ষণে শিক্ষাপ্রযুক্তি আবিষ্কৃত বিভিন্ন কৌশল, যেমন-প্রোগ্রামভিত্তিক শিখন, শিখন যন্ত্র, নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন ইত্যাদি বিশেষভাবে সাহায্য করে।
ii. শিক্ষাপ্রযুক্তি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েরই সহায়ক: একদিকে যেমন প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষণ, যথা-স্লাইড, ওভার হেড প্রোজেক্টর, ক্লোজড সার্কিট টিভি ইত্যাদির সাহায্যে উন্নতমানের পাঠদান করা যায়, তেমনই শিক্ষার্থীরাও পাঠদানের বিষয়টিকে অনুধাবন করতে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য মনে রাখতে সক্ষম হয়।
iii. শিক্ষণ মডেল: বর্তমানে শিক্ষা মনস্তত্ত্ববিদগণ শিক্ষণের একাধিক মডেল উদ্ভাবন করেছেন, যেমন-এনকোয়ারি মডেল, কনসেপ্ট অ্যাটেনমেন্ট মডেল ইত্যাদি। এই ধরনের মডেলের সাহায্যে পাঠদান আরও বিজ্ঞানসম্মত এবং কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে।
iv. শিক্ষণ দক্ষতার বিকাশ: শিক্ষা মনস্তত্ত্ববিদগণ শিক্ষাদানে কতকগুলি দক্ষতা নির্দিষ্ট করেছেন, যেমন-ব্যাখ্যাদান, প্রশ্নকরণ, উদাহরণ দান, ব্ল্যাকবোর্ডের ব্যবহার ইত্যাদি। এই দক্ষতাগুলি বিকাশে যে অনুশিক্ষণ কৌশলের সাহায্য নেওয়া হয়, তা শিক্ষাপ্রযুক্তির অবদান।
[4] মূল্যায়ন: মূল্যায়ন শিক্ষাপ্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এই মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রযুক্তি বিশেষভাবে সাহায্য করে। যেমন বহুবিধ প্রশ্নের (MCQ) নম্বর দান, মার্কশিট প্রস্তুত, নির্দিষ্ট 'ওয়েবসাইটের' (website) মাধ্যমে ফল প্রকাশ ইত্যাদি।
[5] শিক্ষা প্রশাসন এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মসূচি (যেমন-নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তার, ভরতির আবেদনপত্র, ভরতির যোগ্যতা, অর্জনকারীদের তালিকা ইত্যাদি) নির্দিষ্ট 'ওয়েবসাইটের' মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
[6] পাঠাগার এবং শিক্ষাপ্রযুক্তি: বর্তমানে প্রায় প্রতিটি কলেজের পাঠাগার শিক্ষাপ্রযুক্তির সাহায্য গ্রহণ করে উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রযুক্তির ভূমিকা কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ নয়, ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এই কারণেই একাদশ শিক্ষা পরিকল্পনায় বিদ্যালয়ে 'ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনোলজি'র (ICT) ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
9. 'শিক্ষাবিজ্ঞানে
প্রযুক্তি' এবং 'শিক্ষাবিজ্ঞানের
প্রযুক্তি'র মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করো।
শিক্ষাপ্রযুক্তির উদ্দেশ্যাবলি আলোচনা করো।
'শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তি' হল শিক্ষা প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বৈদ্যুতিন উপকরণ ব্যবহার করা, যেমন-কম্পিউটার, টিভি, রেডিয়ো, ওভার হেড প্রোজেক্টার ইত্যাদি। 'শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রযুক্তি' হল শিখন ও শিক্ষনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার। পরিকল্পিত শিক্ষণ, শিক্ষণ মডেল, শিক্ষার তন্ত্রভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি 'শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রযুক্তি'র অন্তর্ভুক্ত।
শিক্ষাপ্রযুক্তির উদ্দেশ্যাবলি
শিক্ষাপ্রযুক্তির উদ্দেশ্যাবলিকে দু-ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-ম্যাক্রো স্তরের উদ্দেশ্যাবলি এবং মাইক্রো স্তরের উদ্দেশ্যাবলি।
[1] ম্যাক্রো স্তরের উদ্দেশ্যাবলি: ম্যাক্রোস্তরীয় উদ্দেশ্যাবলি বলতে বোঝায় শিক্ষার ব্যাপক লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষাপ্রযুক্তির ভূমিকা। এইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
i. জনসমষ্টির শিক্ষার চাহিদা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা নির্দিষ্ট করা।
ii. শিক্ষার লক্ষ্য, কৌশল এবং কাঠামো স্থির করা।
ii. উপযুক্ত পাঠক্রম প্রণয়ন করা।
iv. শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে মানুষ, উপকরণ, সম্পদ এবং কৌশল নির্ধারণ করা।
v. শিক্ষা-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার উন্নতিকরণে শিক্ষণ মডেল তৈরি করা।
vi. পরিবেশের বাধাগুলিকে চিহ্নিত করে, তার প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
[2] মাইক্রোস্তরের
উদ্দেশ্যাবলি: মাইক্রোস্তরের উদ্দেশ্যাবলি বলতে বোঝায়
শ্রেণিকক্ষভিত্তিক উদ্দেশ্যাবলি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
ii. শ্রেণিকক্ষে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য স্থির করা এবং আচরণের ভিত্তিতে ব্যক্ত করা।
iii. পাঠদানের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে তাকে উপযুক্তভাবে বিন্যস্ত করা।
iv. সহজলভ্য শিক্ষা-শিখন উপকরণ এবং সম্পদকে চিহ্নিত করা।
10.পরিকল্পিত
শিখন বলতে কী বোঝ? শিক্ষাপ্রযুক্তির হার্ডওয়্যার এবং
সফটওয়্যার কাকে বলে এবং উভয়েই যে শিক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা করে তা
উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
শিক্ষাপ্রযুক্তির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এবং উভয়ের পারস্পরিক সহযোগিতা শিক্ষাপ্রযুক্তির অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষাপোকরণ তৈরি করা। প্রতিটি উপকরণের দুটি দিক আছে-একটি হার্ডওয়্যার এবং অপরটি সফটওয়্যার।
হার্ডওয়্যার শিক্ষাপ্রযুক্তি বলতে বোঝায় শিক্ষাক্ষেত্রে ইলেকট্রিক্যাল বা মেকানিক্যাল যন্ত্রের ব্যবহার। অর্থাৎ, দৃশ্য-শ্রাব্য উপকরণ, যেমন- ফিল্মস্ট্রিপ, স্লাইড, অডিয়ো ক্যাসেট এবং আধুনিক উন্নত শিক্ষাপোকরণ, যেমন-বেতার, টেপরেকর্ডার, দূরদর্শন, ভিডিও, টিচিং মেশিন ও কম্পিউটার ইত্যাদি। হার্ডওয়্যারের ভিত্তি হল ইলেকট্রোমেকানিক্যাল উপকরণের বিকাশের জন্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত নীতির ব্যবহার। বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলেই শিক্ষাক্ষেত্রে এই ধরনের প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে।ডেভিস-এর মতে, হার্ডওয়্যারের ভিত্তি হল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ভৌতবিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ব্যবহার।
সফটওয়্যার হল হার্ডওয়্যার ব্যবহারের জন্য বিষয়বস্তু তৈরি করা, যা হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। হার্ডওয়্যারের উৎস, যেমন-ভৌতবিজ্ঞান ও ফলিত প্রযুক্তিবিদ্যা এবং সফটওয়্যারের ভিত্তি হল আচরণগত বিজ্ঞান, বিশেষ করে মনোবিজ্ঞানের ' নীতিসমূহ।
মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন নীতি প্রয়োগ করে যখন শিক্ষণ এবং শিখনের উপযোগী বিষয়বস্তু তৈরি করা হয়, যা নির্দিষ্ট হার্ডওয়্যারের জন্য উপযোগী, তখনই আমরা বলি শিক্ষাপ্রযুক্তির সফটওয়্যার।
প্রসঙ্গত
উল্লেখ করা যায় যে, কেবলমাত্র হার্ডওয়্যার বা কেবলমাত্র
সফটওয়্যার শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না। এই দুটির সমন্বিত রূপ আমরা
শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার করি। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কোনো কোম্পানি ওভার হেড
প্রোজেক্টর (OHP) হার্ডওয়্যারের
দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তৈরি করে। শিক্ষক সেই OHP-এর সাহায্যে পাঠদানের জন্য
ট্রান্সপারেন্সি শিট্-এ বিষয়বস্তু লিখে শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করেন। এখানে
শিক্ষক সফটওয়্যার প্রস্তুত করলেন। তাই হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার একইসঙ্গে
ব্যবহৃত না হলে কার্যকরী হয় না। এই দুইয়ের একত্রীকরণের ফলে শিক্ষাপ্রযুক্তি গড়ে
ওঠে।
11 .শিক্ষাপ্রযুক্তির বিকাশকে ক-টি ভাগে বিভক্ত করা যায়?
[1] শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং দৃশ্যশ্রাব্য শিক্ষাপোকরণ: প্রথম পর্যায়ে শিক্ষাপ্রযুক্তি দৃশ্যশ্রাব্য শিক্ষাপোকরণ, যেমন-চার্ট, মানচিত্র, মডেল, স্পেসিমেন, মূর্তবস্তু ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই স্তরে শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং দৃশ্যশ্রাব্য উপকরণ (audio-visual aids) একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। কাচামারী
[2] শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং বৈদ্যুতিন বিপ্লব: দ্বিতীয় পর্যায়ে শিক্ষাপ্রযুক্তি বৈদ্যুতিন বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হয়, যা উন্নতমানের 'হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের' ভিত্তি বলে পরিচিত। প্রোজেক্টর, টেপরেকর্ডার, রেডিয়ো, স্লাইড, দূরদর্শন ইত্যাদি ব্যাপকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং শিক্ষাচিত্রে হর পরিবর্তন আনে।
[3] শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং গণশিক্ষা: তৃতীয় পর্যায়ে গণশিক্ষাকে সফল ও কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে শিক্ষাপ্রযুক্তি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়। এই পর্যায়ে কম্পিউটারের সহযোগিতা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
[4] শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং ব্যক্তিভিত্তিক শিক্ষা: চতুর্থ পর্যায়ে শিক্ষাপ্রযুক্তি ব্যক্তিভিত্তিক শিখনের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরিকল্পিত শিখন এবং শিক্ষণ শিক্ষাপ্রযুক্তিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। স্ব-শিখনের উপকরণ এবং শিখনযন্ত্র- ভিত্তিক স্ব-শিখন ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্ব পায়।
[5] শিক্ষাপ্রযুক্তি এবং সিস্টেম দৃষ্টিভঙ্গি: পঞ্চম এবং শেষ পর্যায়ে সিস্টেম বা তন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষাপ্রযুক্তিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এই পর্যায়ে সামগ্রিক শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়াকে গবেষণাভিত্তিক উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে নকশাকরণ, পরিচালন এবং মূল্যায়নের প্রক্রিয়া হিসেবে শিক্ষাপ্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। সবশেষে বলা যায়, উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতবর্ষের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষাপ্রযুক্তি এখনও শৈশবকাল অতিক্রম করতে সক্ষম হয়নি।
12 .বর্তমান
ভারতবর্ষে শিক্ষাপ্রযুক্তির ব্যবহার লেখো।
উত্তর: বর্তমান ভারতবর্ষে শিক্ষাপ্রযুক্তির অবস্থা--উন্নত দেশগুলিতে বিদ্যালয় স্তর থেকেই উচ্চমানের বৈদ্যুতিন শিক্ষাপ্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নত দেশ হিসেবে দাবি করলেও আমাদের ভারতবর্ষে উচ্চমানের শিক্ষাপ্রযুক্তি দূরে থাক, বহু সংখ্যক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনমতো চক-বোর্ডের ব্যবস্থাও নেই। এর প্রধান কারণগুলি হল-
[1] অর্থ ও উদ্যোগের অভাব: সমগ্র দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে ন্যূনতম বা শিক্ষাপোকরণ সরবরাহ করার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা ব্যয় করা হয় না। বর্তমানে প্রতিটি জেলায় জেলাভিত্তিক রিসোর্স কেন্দ্র আছে। রি কিন্তু রিসোর্স কেন্দ্র এবং বিদ্যালয়গুলির উদ্যোগের অভাবে শিক্ষাপোকরণ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয় না। এর ফলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
[2] যোগ্য
শিক্ষক এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাব: শহর ও
মফস্সলের কাপ্রযুক্তি বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাপোকরণ থাকলেও শিক্ষকগণ এগুলি যথাযথভাবে
ব্যবহার করেন না এবং উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শিক্ষাপোকরণগুলির কার্যকারিতা
হ্রাস পায়।
i. এমনভাবে শিক্ষাপ্রযুক্তি নির্দিষ্ট করা হবে যা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
ii. শিক্ষাপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্থিক ব্যয়ের কার্যকারিতা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
iii. পাশ্চাত্য দেশে ব্যবহৃত মডেলের পরিবর্তে দেশজ প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
iv. শিক্ষাপ্রযুক্তির উপকরণগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য শিক্ষকের প্রশিক্ষণ অপরিহার্য এবং শিক্ষাপোকরণগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করা বিশেষ প্রয়োজন।
EDITING BY--Liza Mahanta