অধ্যায় -4
মৃত্তিকা
--------------------------
MCQ
b) বায়ু ক্ষয়
c) নদীপাড় ক্ষয়
d) খাত ক্ষয় ✔
2. শস্যাবর্তন পদ্ধতির সর্বাধিক সুবিধা হল-
a) মৃত্তিকার ক্ষয়রোধ
b) দ্রুত ফলন বৃদ্ধি
c) মৃত্তিকার উর্বরতা বজায় রাখা ✔
d) জলসেচের সুবিধা
3. শীর্ষস্তরের মাটি ক্ষয়ে প্রধান ভূমিকা গ্রহণকারী প্রক্রিয়াটি হল-
a) খাত ক্ষয়
b) বায়ুপ্রবাহ
c) নালি ক্ষয় ✔
d) চাদর ক্ষয়
4. জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে একই জমিতে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে পরপর শস্যের চাষকে বলে-
a) ফালি কর্ষণ
b) শস্যাবর্তন ✔
c) আন্তঃকৃষি
d) মালচিং
5. পেডালফার মাটিতে বেশি পরিমাণে থাকে
a) ক্যালশিয়াম
b) অ্যালুমিনিয়াম ✔
c) পটাশিয়াম
d) জৈব পদার্থ
6. পেডালফার মাটি যেরূপ জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায়, তা হল-
a) শীতল
b) শুষ্ক
c) আর্দ্র ✔
d) নাতিশীতোয়
7. অনুদ্রবণ বেশি হলে সৃষ্টি হয়
a) পেডোক্যাল মাটি
b) সিরোজেম মাটি
c) পেডালফার মাটি ✔
d) মরু মাটি
8. সোলানচাক ও সোলনেৎজ মাটি সৃষ্টির প্রক্রিয়া হল-
a) ধৌত
b) ইলুভিয়েশন
c) অনুস্রবণ
d) কৈশিক ✔
9. পেডোক্যাল মাটি সৃষ্টির প্রধান কারণ হল-
a) বাষ্পীভবন ✔
b) বৃষ্টিপাত
d) তুষারপাত
d) অনুস্রবণ
10. পিট বা বগ মাটি সৃষ্টি হয়
a) মরু অঞ্চলে
b) চুনাপাথরগঠিত অঞ্চলে
c) ব্যাসল্ট শিলায়
d) জলাভূমিতে ✔
11. একটি ক্ষারধর্মী মাটির উদাহরণ
a) ল্যাটেরাইট
b) পডসল
c) সোলানচাক ✔
d) লোয়েস
12. অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলের মৃত্তিকা হল-
a) ল্যাটেরাইট ✔
b) রেনজিনা
c) লোয়েস
d) পলল মৃত্তিকা
13. মরু বা মরুপ্রায় অঞ্চলে সৃষ্ট মাটি যে বর্গের অর্ন্তগত, তা হল-
a) এন্টিসল
b) ভার্টিসল
c) এরিডিসল ✔
d) অক্সিসল
14. লাল মাটি প্রধানত দেখা যায়-
a) বিহারে
b) অন্ধ্রপ্রদেশে ✔
c) রাজস্থানে
d) গুজরাতে
অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি
প্রতিটি প্রশ্নের মান 1
1. মৃত্তিকা বিজ্ঞানের জনক কাকে বলা হয়?
Ans: আদিশিলা পেরিডোটাইট ও সারপেনটাইন জাতীয় হলে মৃত্তিকা
ক্ষারধর্মী হয়।
প্রতিটি প্রশ্নের মান 7
১. মৃত্তিকা বলতে কী বোঝায়? মৃত্তিকার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
প্রশ্ন ২. মাটি সৃষ্টিতে নিষ্ক্রিয় বা পরোক্ষ উপাদানগুলির
ভূমিকা সম্বন্ধে আ
Ans :
প্রশ্ন ৩. মাটি গঠনে সক্রিয় উপাদানগুলির প্রভাব সম্পর্কে লেখো।
Ans :
প্রশ্ন ৪. পরিবেশের ওপর মৃত্তিকাক্ষয়ের প্রভাব বিশ্লেষণ করো।
Ans : পরিবেশের ওপর মৃত্তিকাক্ষয়ের প্রভাব
[1] প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর প্রভাব:
(1) মাটি ছাড়া উদ্ভিদ জন্মায় না। কারণ মাটি উদ্ভিদকে পুষ্টি জোগায়। ফলে ভূমিক্ষয় হলে মাটির উর্বরতা কমে ও গাছপালার পরিমাণ কমে যায়।
(ii) বালি, পলি ও কাদাকণা দিয়ে মাটি তৈরি হয়। ফলে মাটির মধ্যে অসংখ্য ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রপথে জল চুঁইয়ে মাটির নীচে জলস্তর তৈরি করে। তাই ভূমিক্ষয় হলে মাটির মধ্যে জলের জোগান কমে যায়। ভৌম জলস্তর নেমে যায়।
(iii) মাটি বৃষ্টির জল ধারণ করে এবং সূর্যের তাপে কিছুটা জল মাটি থেকে বাষ্পীভূত হয়। ওই বাষ্প পরে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত হারে ভূমিক্ষয় হলে স্বাভাবিক জলচক্র ব্যাহত হয়।
(iv) মাটির মধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিয়োজকরা বসবাস করে। যেমন- ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি। এদের কাজ হল উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ ও জৈব আবর্জনাকে দ্রুত পচিয়ে তা থেকে পুষ্টিকর রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কাশন করে মাটিতে জমিয়ে রাখা।
(iv) ভূমিক্ষয় হলে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায় ও বন্যা দেখা দেয়।
(v) ভূমিক্ষয়ের জন্য জলাধারের জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
[ 2] মানবিক পরিবেশের ওপর প্রভাব: ভূমিক্ষয়ের জন্য মানুষেদ্ধ অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাজকর্মে সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-
(i) উর্বর মাটি ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে ফলন কমে যায়। ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায়।
(ii) ভূমিক্ষয় বেশি হলে মাটি ধুয়ে শেষ পর্যন্ত নদীর মধ্যে এসে জমা হয়। ফলে নদীর গভীরতা কমে যায়। নদী নৌপরিবহণের অযোগ্য হয়ে ওঠে।।
(iii) ভূমিক্ষয়ের ফলে জলসেচ ব্যবস্থার ক্ষতি হয়।
(iv) মৃত্তিকাক্ষয়ের ফলে নদী মজে গেলে নদীর মোহানায় গড়ে তোলা বন্দরের ক্ষতি হয়। কলকাতা বন্দরের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বিশেষ প্রকট হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিককালে
(v) মৃত্তিকাক্ষয়ের জন্য জলাজমিগুলির (Wetland) মধ্যে মাটি জমতে জমতে ভরাট হয়ে ওঠে। ফলে ওই জলাজমির বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হয়।
প্রশ্ন ৫. মৃত্তিকাক্ষয় বা ভূমিক্ষয়ের কারণগুলি আলোচনা করো।
Ans : মুস্তিকাক্ষয়ের কারণসমূহ
মাটির স্তর ক্রমাগত অস্বাভাবিক হারে ক্ষয় হওয়ার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণ উভয়ই রয়েছে।
[1] প্রাকৃতিক কারণ:
i) খাড়া ঢাল: খাড়া পাহাড়ি ঢালের ওপর প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির জলে মাটি ধুয়ে যায়।
ii) স্বল্প পরিমাণ বনভূমি: মাটির ওপর গাছপালার ঘন আবরণ না থাকলে বৃষ্টির জল, নদীর জল, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে ভূমিক্ষয় হয়।
iii) আলগা মাটি, মাটিতে চটচটে আঠালো ভাব না থাকলে ভূমিক্ষয় সহজ হয়। সে কারণে সমুদ্রের ধারে, মরুভূমির কাছে, মালভূমির ঢালে মাটি তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যায়।
[2] মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
i) বনভূমির বিলোপ: অতিরিক্ত গাছ কেটে ফেলার জন্য মাটির দানাগুলি আলগা হয়ে যায়। ফলে গাছের শিকড় আর তখন মাটিকে আঁকড়ে রাখতে পারে না।
(ii) ধাপচাষ: পাহাড়ি ঢালের ওপর চাষ-আবাদ করার জন্য ধাপ কাটা হয়। এই ধাপগুলি জমির সমোন্নতিরেখা (Contour) বরাবর তৈরি করা না হলে বৃষ্টির জলের আঘাতে বা জলপ্রবাহের মাধ্যমে মাটি ক্ষয়ে যায়।
(iii) অনিয়ন্ত্রিত পশুপালন: পাহাড়ি অঞ্চলে অতিরিক্ত পশুচারণ করা হলেও ভূমিক্ষয় হয়। কারণ গবাদি পশু মাটির উপরিস্থিত ঘাসের আবরণকে খেয়ে প্রায় নির্মূল করে ফেলে। ফলে মাটি ক্ষয়প্রবণ হয়ে পড়ে।
(iv) ত্রুটিপূর্ণ জলসেচ: জলসেচ ব্যবস্থা অবৈজ্ঞানিক হলে মাটির গুণমান নষ্ট হয়। ফলে ভূমিক্ষয়ের হার বৃদ্ধি পায়।
(v) জমির অনুপযুক্ত ব্যবহার: জমিকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার না করা হলে অর্থাৎ যে জমিকে যে কাজে লাগালে ভাল হয় তাকে সেই কাজে না লাগিয়ে অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা হলে মাটির ক্ষয় হয়।
প্রশ্ন ৬.মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে? মৃত্তিকা সংরক্ষণের কৃষিজ পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
Ans :মৃত্তিকা সংরক্ষণ
যে বিজ্ঞানসম্মত ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার মাধ্যমে মৃত্তিকার ক্ষয় রোধ করে উর্বরতা শক্তি পুনরুদ্ধার, জমির কার্যকারিতা শক্তি বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি মাটি সম্পদকে মানুষের কল্যাণে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা হয়, তাকে মৃত্তিকা সংরক্ষণ বলে।
মৃত্তিকা সংরক্ষণের কৃষিজ পদ্ধতিসমূহ
[1] ফসল পুনরাবর্তন: শস্যাবর্তন, আন্তঃকৃষি এবং নানা ধরনের শস্য একই জমিতে চাষের মাধ্যমে মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করা যায়। কারণ এতে কোনো সময়ই জমি উন্মুক্ত বা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে না এবং মৃত্তিকার দৃঢ়তাও বৃদ্ধি পায়। এই জন্য ভারতে বর্ষাকালে একই জমিতে ভুট্টা, মটর, ছোলা ইত্যাদি শস্যের চাষ হয়।
[2] জৈব পদার্থের সংরক্ষণ: এই ব্যবস্থা একদিকে মৃত্তিকার উর্বরতা বাড়ায় এবং অন্যদিকে মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া শস্য কেটে নেওয়ার পর গাছের অবশিষ্ট অংশ কৃষিক্ষেত্রে রেখে দেওয়া হয়। পাতা, মূল ইত্যাদিও জমিতে ফেলে রাখা হয়। এগুলি মৃত্তিকাকে ঢেকে রেখে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
[3] শস্য নির্বাচন: মৃত্তিকাক্ষয় রোধের জন্য এমন ধরনের শস্য নির্বাচন করা উচিত যেগুলি সর্বাধিক পরিমাণ ভূপৃষ্ঠ আচ্ছাদিত করে রাখতে পারে এবং মৃত্তিকা কণাগুলিকে দৃঢ়ভাবে সংঘবদ্ধ করতে পারে।
[4] সমোন্নতিরেখা বরাবর কৃষিকাজ বা ফালি চাষ: পাহাড়ের সুদীর্ঘ লম্বা ঢালে চাদর ক্ষয় ও নালি ক্ষয় বেশি হয়। ঢালের আড়াআড়ি বহু সরু সবু ফালি তৈরি করে কার্যকরী ঢালের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিলে ওই দুই প্রবণ ক্ষয়ের তীব্রতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া প্রত্যেকটি ফালিতে খাদ্যশস্য। মধ্যবর্তী ঢালু জমিতে খড় বা ঘাস জাতীয় শস্য পর্যায়ক্রমে চাষ করতে জলপ্রবাহ বেশি গতি লাভ করতে পারে না। এভাবে ফালি চাষের বাব মাটির ক্ষয় রোধ করা যায়।
যখন সমোন্নতিরেখার সমান্তরালে না করে আড়াআড়ি ফালি তৈরি করা হয় তখন সেই ব্যবস্থাকে সমোন্নতিরেখা বরাবর চাষ বা ফানিল চাষ বলে।
[5] ধাপ গঠন: ঢালু জমিতে বিভিন্ন প্রকার ধাপ গঠন করলে ঢালের গ্রেডিয়েন্ট বা কৌণিক মান ও কার্যকরী দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়। ফলে সেখানে বেঞ্চ ধাপ (Bench Terrace) তৈরি করা হয় যেখানে জলের প্রবাহকে প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। জমিতে বড়ো বড়ে যন্ত্রের ব্যবহার ও পুরো জমিকে চাষের জন্য কাজে লাগাতে কৃষকের সাধারণত প্রশস্ত ভিতের ধাপ (Broad-based Terrace) গঠন করে। এ ধরনের ধাপযুক্ত জমিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে মাটি প্রায় ক্ষয়ই হয় না।
[6] সংরক্ষিত কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ: সংরক্ষিত কৃষি পদ্ধতিতে কতকগুলি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাটিকে যথাসম্ভব অকর্ষিত রেখে অর্থাৎ অনেকটা অংশ খড়-কুটো ইত্যাদি জৈব পদার্থ দিয়ে ঢাকা রেখে চারাগাছ লাগানো ব বীজ বোনা হয়। এর ফলে মাটির কণা আলগা হয় না এবং অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।
জয় ও
প্রশ্ন ৭.মৃত্তিকা ক্ষয় কাকে বলে? জলের মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
Ans :মৃত্তিকা ক্ষয়
বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি (বৃষ্টিপাত, জলপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি) ও মানুষের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ ও কার্যাবলির ফলে মাটির পৃষ্ঠস্তরের হালকা ও অসংবদ্ধ অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত, অপসারিত ও নগ্নীভূত হয় এবং মাটির উর্বরতা-সহ স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য দ্রুত হ্রাস পায়। একে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে।
জলের মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পদ্ধতিসমূহ
প্রধানত জলের মাধ্যমে চারভাবে মৃত্তিকা ক্ষয় পরিলক্ষিত হয়।
[1] কর্দমাক্ত ক্ষয়: বৃষ্টির কণা সরাসরি মৃত্তিকার উপরিভাগে পড়লে বৃষ্টিকণার আঘাতে মাটির কণাসমষ্টি ভেঙে গিয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কণায় পরিণত হয়, এই প্রক্রিয়াকে কর্দমাক্ত ক্ষয় (Splash Erosion) বলে। কর্দমাক্ত ক্ষয়ের ফলে মৃত্তিকার উপরিস্তরে সূক্ষ্ম মৃত্তিকা কণার মধ্যবর্তী ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে বৃষ্টির জল মৃত্তিকার গভীরে পৌঁছোতে পারে না এবং মৃত্তিকার উপরিভাগের কণাগুলি বৃষ্টির জলের সঙ্গে অন্যত্র পরিবাহিত হয়ে যায়।
[2] চাদর ক্ষয়: প্রবল বৃষ্টির জলে ভূমির ঢাল বরাবর জমির ওপরের পাতলা মাটি স্তর চাদরের মতো সরে যায়। একে চাদর ক্ষয় (Sheet Erosion) বলে। এই প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকা স্তরের পুরুত্ব (Thickness ক্রমশ কমতে থাকে। এই পদ্ধতিতে মৃত্তিকা ক্ষয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে হতে থাকে এবং মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পায়।
[3] নালি ক্ষয়: বৃষ্টির জলের আঘাতে মাটিতে সরু লম্বা অগভীর গর্ত সুধু হয়। একে রিল বলে। ক্রমাগত বৃষ্টির জলে রিলগুলির গভীরতা ও দৈর হালদা পাওয়ার ফলে সৃষ্ট নালি করাবর মাটি ধুয়ে যায়। একে নালি স্বা (Rill Erosion) বলে। এই ধরনের মৃত্তিকার ক্ষয় নির্দিষ্ট অঞ্চ সীমাবদ্ধ থাকে। বিশেষ করে শুষ্ক অঞ্চলে হঠাৎ করে প্রবল বৃষ্টিপাত হজ তীব্র জলস্রোতের প্রবাহে ভূমিভাগে অসংখ্য নালির সৃষ্টি হয়। নাজি ক্ষয়যুক্ত অঞ্চলে মাটি বন্ধুর ও কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
[4] খাত ক্ষয়: উদ্ভিদবিহীন উন্মুক্ত ও ঢালু জমিতে বৃষ্টির জল দ্বারা নাড়ি ক্ষয় আরও তীব্রতর হলে তা ধীরে ধীরে খাত ক্ষয়ে (Gully Erosion) পরিণত হয়। বৃষ্টির জলের প্রবল আঘাতে নালিগুলি পরস্পরের সাহে যুক্ত হয়ে অধিকতর চওড়া হয়ে পড়ে। এরপর মাটি ক্রমাগত বুয়ে আরও গভীর ছোটো ছোটো খাত বা গর্ত সৃষ্টি করে। এই ধরনের খাত বরাদ মৃত্তিকার ক্ষয় লক্ষ করা যায়।
প্রশ্ন ৮.মৃত্তিকা সংরক্ষণ কাকে বলে? মৃত্তিকা সংরক্ষণের কৃষিজ পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
Ans :মৃত্তিকা সংরক্ষণ
যে বিজ্ঞানসম্মত ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার মাধ্যমে মৃত্তিকার ক্ষয় রোধ করে উর্বরতা শক্তি পুনরুদ্ধার, জমির কার্যকারিতা শক্তি বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি মাটি সম্পদকে মানুষের কল্যাণে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা হয়, তাকে মৃত্তিকা সংরক্ষণ বলে।
মৃত্তিকা সংরক্ষণের কৃষিজ পদ্ধতিসমূহ:
[1] ফসল পুনরাবর্তন: শস্যাবর্তন, আন্তঃকৃষি এবং নানা ধরনের শস্য একই জমিতে চাষের মাধ্যমে মৃত্তিকাক্ষয় রোধ করা যায়। কারণ এতে কোনো সময়ই জমি উন্মুক্ত বা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে না এবং মৃত্তিকার দৃঢ়তাও বৃদ্ধি পায়। এই জন্য ভারতে বর্ষাকালে একই জমিতে ভুট্টা, মটর, ছোলা ইত্যাদি শস্যের চাষ হয়।
[2] জৈব পদার্থের সংরক্ষণ: এই ব্যবস্থা একদিকে মৃত্তিকার উর্বরতা বাড়ায় এবং অন্যদিকে মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া শস্য কেটে নেওয়ার পর গাছের অবশিষ্ট অংশ কৃষিক্ষেত্রে রেখে দেওয়া হয়। পাতা, মূল ইত্যাদিও জমিতে ফেলে রাখা হয়। এগুলি মৃত্তিকাকে ঢেকে রেখে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
[3] শস্য নির্বাচন: মৃত্তিকাক্ষয় রোধের জন্য এমন ধরনের শস্য নির্বাচন করা উচিত যেগুলি সর্বাধিক পরিমাণ ভূপৃষ্ঠ আচ্ছাদিত করে রাখতে পারে এবং মৃত্তিকা কণাগুলিকে দৃঢ়ভাবে সংঘবদ্ধ করতে পারে।
[4] সমোন্নতিরেখা বরাবর কৃষিকাজ বা ফালি চাষ: পাহাড়ের সুদীর্ঘ লম্বা ঢালে চাদর ক্ষয় ও নালি ক্ষয় বেশি হয়। ঢালের আড়াআড়ি বহু সরু সবু ফালি তৈরি করে কার্যকরী ঢালের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিলে ওই দুই প্রবণ ক্ষয়ের তীব্রতা হ্রাস পায়। এ ছাড়া প্রত্যেকটি ফালিতে খাদ্যশস্য। মধ্যবর্তী ঢালু জমিতে খড় বা ঘাস জাতীয় শস্য পর্যায়ক্রমে চাষ করতে জলপ্রবাহ বেশি গতি লাভ করতে পারে না। এভাবে ফালি চাষের বাব মাটির ক্ষয় রোধ করা যায়।
যখন সমোন্নতিরেখার সমান্তরালে না করে আড়াআড়ি ফালি তৈরি করা হয় তখন সেই ব্যবস্থাকে সমোন্নতিরেখা বরাবর চাষ বা ফানিল চাষ বলে।
[5] ধাপ গঠন: ঢালু জমিতে বিভিন্ন প্রকার ধাপ গঠন করলে ঢালের গ্রেডিয়েন্ট বা কৌণিক মান ও কার্যকরী দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়। ফলে সেখানে বেঞ্চ ধাপ (Bench Terrace) তৈরি করা হয় যেখানে জলের প্রবাহকে প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। জমিতে বড়ো বড়ে যন্ত্রের ব্যবহার ও পুরো জমিকে চাষের জন্য কাজে লাগাতে কৃষকের সাধারণত প্রশস্ত ভিতের ধাপ (Broad-based Terrace) গঠন করে। এ ধরনের ধাপযুক্ত জমিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে মাটি প্রায় ক্ষয়ই হয় না।
[6] সংরক্ষিত কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ: সংরক্ষিত কৃষি পদ্ধতিতে কতকগুলি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাটিকে যথাসম্ভব অকর্ষিত রেখে অর্থাৎ অনেকটা অংশ খড়-কুটো ইত্যাদি জৈব পদার্থ দিয়ে ঢাকা রেখে চারাগাছ লাগানো ব বীজ বোনা হয়। এর ফলে মাটির কণা আলগা হয় না এবং অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।
জয় ও
প্রশ্ন ৯. আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকা কী এবং কীভাবে এই মৃত্তিকার উৎপত্তি হয়? আঞ্চলিক ও অনাঞ্চলিক মাটির তুলনা করো।
Ans :আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকা
প্রতিটি আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলয়ে স্থানীয়ভাবে ভূপ্রকৃতি, আদিশিলা, অণু-জলবায়ু (micro climate) প্রভৃতি উপাদানের তারতম্য হয়। এইসব উপাদানের প্রভাবে নতুন ধরনের মাটি সৃষ্টি হয়। এ জাতীয় মাটিকে আন্তঃআঞ্চলিক মাটি (Intrazonal Soil) বলা হয়।
আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকার উৎপত্তি বিভিন্নভাবে আন্তঃআঞ্চলিক মাটির সৃষ্টি হয়। উৎপত্তি অনুযায়ী এ জাতীয় মাটিগুলি হল-
[1] জলাভূমির মৃত্তিকা: বিভিন্ন প্রকার জলাভূমিতে অবায়ুজীবী
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জৈব পদার্থ বিয়োজিত হয়ে যে কালচে রঙের মৃত্তিকা আঞ্চলিক মাটি ও অনাঞ্চলিক মাটির তুলনা
সৃষ্টি হয়, তাকে জলাভূমির মৃত্তিকা বলে। উদাহরণ- পিট বা বগ মৃত্তিকা।
[2] চুনময় মৃত্তিকা: শিলাতে হাতে চুন বা চুনজাতীয় পদার্থের প্রাধান্য থাকলে চুনময় মৃত্তিকা গড়ে ওঠে। যেমন- চুনাপাথর বা চক শিলা থেকে উৎপন্ন রেনজিনা (Rendzina) মৃত্তিকা। এই মৃত্তিকা সাদা, ধূসর ও বাদামি বর্ণের হয়।
[3] লবণাক্ত মৃত্তিকা: মাটির উপরিভাগে লবণের সঞ্চয় ঘটলে লবণাক্ত মৃত্তিকা গড়ে উঠে। শুষ্ক ও শুষ্কপ্রায় অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাতের জন্য ধৌত প্রক্রিয়া কম হয়। এর ফলে লবণের সঞ্চয় ঘটে। আবার বাষ্পীভবন বেশি হওয়ায় কৈশিক প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত লবণ ওপরে উঠে আসে। এভাবে লবণাক্ত মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। এই প্রকার মাটি ক্ষারধর্মী হয়। সোলানচাক ও সোলোনেৎজ হল এই প্রকার মাটির উদাহরণ।
👉Paid Answer (For Membership User)
Editing by- Rita Moni Bora