অধ্যায়-৫
জলবায়ু পরিবর্তন
--------------------------------------------
MCQ
1. ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে শান্ত আবহাওয়াবিশিষ্ট অংশকে বলে
a) ঘূর্ণি
b)কুণ্ডলী
c)বলয়
d)চক্ষুশীর্ষ
উত্তর: c)বলয়
2. পূর্ব চিন সাগরে সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় যে নামে পরিচিত
a) টাইফুন
b) হারিকেন
c) উইলি-উইলি
d)টর্নেডো
উত্তর: a) টাইফুন
3. প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ুর গতিবেগ হয় ঘণ্টায় প্রায়-
a)20-50 কিমি
b)150-200 কিমি
c)100-200 কিমি
d) 200-300 কিমি
উত্তর: a)20-50 কিমি
4. ঝড়ের প্রকৃতি ও তীব্রতা অনুযায়ী বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে কতগুলি শ্রেণিতে ভাগ করেছে?
a)চারটি
b)ছয়টি
c)পাঁচটি
d)দুটি
উত্তর: a)চারটি
5. সীমান্ত বিনাশের সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটিকে বলে-
a)ফ্রন্টোজেনেসিস
b)অক্লুডেড ফ্রন্ট
c)ফ্রন্টোলাইসিস
d)সীমান্ত
উত্তর:
6. সাইক্লোন (Cyclone) শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন
a) রসবি
b) পলম্যান
c) হেনরি পিডিংটন
d) ভি বার্কনেস
উত্তর: হেনরি পিডিংটন
7. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের অধিক তীব্রতার পর্যায়টি হল
a)সৃষ্টি পর্যায়
b)পরিণত পর্যায়
c)বিকাশশীল পর্যায়
d)সমাপ্তি পর্যায়
উত্তর: b)পরিণত পর্যায়
8. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়-
a) 0°-3° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
b)40°-60° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
c)5°-20° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
d)60°-90° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
উত্তর: c)5°-20° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে
9.হারিকেনের উৎপত্তি হয় প্রধানত
a)ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে
b)আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে
c)অক্টোবর-নভেম্বর মাসে
d)জুন-জুলাই মাসে
উত্তর: c)অক্টোবর-নভেম্বর মাসে
10. নিম্নগামী ও বহির্মুখী বায়ু দেখা যায়
a) ঘূর্ণবাতে
b) ডিপ্রেসনে
c) প্রতীপ ঘূর্ণবাতে
d) সাইক্লোনে
উত্তর: c) প্রতীপ ঘূর্ণবাতে
11. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি নদীর উপত্যকায় সৃষ্ট টর্নেডোকে বলে
a) টাইফুন
b) ব্যাগুই
c) উইলি-উইলি
d) টুইস্টার
উত্তর: d) টুইস্টার
12.গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রে বায়ুর চাপ সাবারণত হ্রাস পায়
a) 25 মিলিবার
b) 35 মিলিবার
c) 30 মিলিবার
d) 40 মিলিবার
উত্তর: d) 40 মিলিবার
13.মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতে সাম্য সীমান্ডের সৃষ্টি হয়-
a) প্রাথমিক পর্যায়ে
b) অন্তিম পর্যায়ে
c) তৃতীয় পর্যায়ে
d) যে-কোনো পর্যায়ে
14. দক্ষিণ আমেরিকার চিলি উপকূল বরাবর কয়েক বছর অন্তর উন্ন স্রোতের আগমনের ফলে সৃষ্ট আবহাওয়ার অবস্থাকে বলে-
a) হিমপ্রাচীর
b) টুইস্টার
c) টাইফুন
d) এল নিনো
উত্তর: d) এল নিনো
15. নাতিশীতোর ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়-
a) 20° 30° উত্তর/দক্ষিণ অক্ষাংশ অঞ্চলে
b) 35°-65° উত্তর/দক্ষিণ অক্ষাংশ অঞ্চলে
c) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
d) 70°-90° উত্তর/দক্ষিণ অক্ষাংশ অঞ্চলে
উত্তর: b) 35°-65° উত্তর/দক্ষিণ অক্ষাংশ অঞ্চলে
16. নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতে সমপ্রেষরেখাগুলির আকৃতি হয়-
a) বৃত্তাকার
b) 'V'-আকৃতির
c) বর্গাকার
d) আয়তাকার
উত্তর: b) 'V'-আকৃতির
17. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের ব্যাস হয় সাধারণত
a) 80-300 কিমি
b) 200-250 কিমি
c) 100-300 কিমি
d) 500-600 কিমি
18. উন্ন ও শীতল সীমান্ত দেখা যায়-
a) মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতে
b) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতে
c) ক্রান্তীয় ডিপ্রেসনে
d) বজ্রঝঞ্ঝায়
উত্তর: a) মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাতে
19. একটি সীমান্তযুক্ত ঘূর্ণবাতের উদাহরণ হল
a) প্রতীপ ঘূর্ণবাত
b) তাপীয় ঘূর্ণবাত
c) নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত
d) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত
উত্তর: c) নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত
20.পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ুর মুখোমুখি মিলন সীমানায় সৃষ্ট ঘূর্ণবাতকে বলে-
a) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত
b) উপক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত
c) নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত
d) গৌণ ঘূর্ণবাত
উত্তর: c) নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাত
Very Short Answer Question
1. 'বিশ্ব উন্নায়ন'-এর দুটি প্রভাব উল্লেখ করো।
উত্তব়: বিশ্ব উন্নায়নের দুটি প্রভাব হল-জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস ও জলবায়ুর পরিবর্তন।
2. 'আলোকপ্রেমী' ও 'আলোকবিদ্বেষী' উদ্ভিদের একটি করে উদাহরণ দাও।
উত্তব়: আলোকপ্রেমী উদ্ভিদ হল সূর্যমুখী এবং আলোকবিদ্বেষী উদ্ভিদ হল পান।
3. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে কোন্ বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক থাকে?
উত্তব়: ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক থাকে।
4:. 'ভাসমান মূলী জলজ উদ্ভিদের' সংজ্ঞা দাও।
উত্তব়: যেসব উদ্ভিদের মূল মাটির সঙ্গে যুক্ত না থেকে জলের ওপর ভেসে বেড়ায় তাদের ভাসমান জলজ উদ্ভিদ বা ভাসমান মূলী জলজ উদ্ভিদ বলে।
5. 'উচ্চ তাপযুক্ত উদ্ভিদ' বলতে কী বোঝায়?
উত্তব়:যেসব উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য সারাবছর বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় তাদের মেগাথার্মস বলে।
6. কিয়োটো প্রোটোকল কী?
উত্তব়: গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য 1997 সালে যে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিল সেটি কিয়োটো প্রোটোকল নামে পরিচিত।
7. পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অপার্থিব কারণের উল্লেখ করো।
উত্তব়: সৌরশক্তির পরিমাণের হ্রাসবৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অপার্থিব কারণ।
8.পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে একটি প্রাকৃতিক কারণের উল্লেখ করো।
উত্তব়: আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রাকৃতিক কারণ।
9. 'বিশ্ব উন্নায়ন'-এর দুটি প্রভাব উল্লেখ করো।
উত্তব়: বিশ্ব উন্নায়নের দুটি প্রভাব হল-জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস ও জলবায়ুর পরিবর্তন।
10. গ্লোবাল ওয়ার্মিং কী?
উত্তব়: বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) বলে।
11. বায়ুমণ্ডলে CO₂ বৃদ্ধির প্রধান উৎস কী?
উত্তব়: জীবাশ্ম জ্বালানির দহন বায়ুমণ্ডলে CO₂ বৃদ্ধির প্রধান উৎস।
12. পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী কী?
উত্তব়: পৃথিবীর গড় উন্নতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী।
13. ওজোনস্তর ক্ষয় পাওয়ার একটি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ লেখো।
উত্তব়: ওজোনস্তর ক্ষয় পাওয়ার একটি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ হল-অধিক পরিমাণে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন গ্যাসের নির্গমন।
14.ওজোনস্তরকে 'পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌরপর্দা' বলার কারণ কী?
উত্তব়: ওজোন গ্যাসটি অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ছাতার মতো পৃথিবীকে রক্ষা করে বলে একে 'পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌরপর্দা' বলে।
15. প্রাকৃতিক উপায়ে ওজোনস্তর কীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়?
উত্তব়: অতিবেগুনি রশ্মির সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে ওজোনস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
16. কোন্ দেশ বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে?
উত্তব়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে
17. বায়ুমণ্ডলের কোন্ স্তরে ওজোন পাওয়া যায়?
উত্তব়: বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন পাওয়া যায়।
18. ওজোন স্তরের ক্ষয় নিয়ন্ত্রণে কোন্ আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
উত্তব়: ওজোন স্তরের ক্ষয় নিয়ন্ত্রণে মন্ট্রিল চুক্তি বা মন্ট্রিল প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
19. বিশ্ব উন্নায়নের প্রধান কারণ কী?
উত্তব়: গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি বিশ্ব উন্নায়নের প্রধান কারণ।
Long Answer Question
প্রশ্ন 1. অম্লবৃষ্টির কারণ ও তার প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তব়:অম্লবৃষ্টির কারণ
অম্লবৃষ্টির কারণগুলি হল—
[1] কলকারখানা থেকে বায়ুদূষণ: অম্লবৃষ্টির প্রধান কারণ হল বায়ুদূষণ। বিভিন্ন কলকারখানা থেকে সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গত হয়। বাতাসে ভাসমান এই সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইড জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিডে পরিণত হয়।
[2 ] তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত গ্যাস: তা ছাড়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
থেকে নির্গত হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস বায়ুর জলীয় বাষ্পের সাথে মিশে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। এরপর সালফিউরিক, নাইট্রিক ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বৃষ্টিপাত, তুষারপাত এবং কুয়াশার
সাথে মিশে ঝরে পড়লে তাকে অম্লবৃষ্টি বলে। অম্লবৃষ্টির pH-এর মান 6-এর কম হয়।
অম্লবৃষ্টির প্রভাব
অম্লবৃষ্টির ফলে মৃত্তিকা, জল, উদ্ভিদ, মানুষ এবং বিভিন্ন অট্টালিকা ও সৌধের উপর যথেষ্ট প্রভাব পরে। প্রভাবগুলি হল-
[1] মৃত্তিকা দূষণ: অম্লবৃষ্টির ফলে মৃত্তিকা দূষিত হয় এবং মৃত্তিকার উর্বরাশক্তি হ্রাস পায়।
[2] জলদূষণ: পুকুর, হ্রদ, জলাশয় ইত্যাদির জল অম্লবৃষ্টির ফলে দূষিত হয়। এর ফলে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটে।
[3] উদ্ভিদের ক্ষতি: অম্লবৃষ্টির প্রভাবে গাছের পাতা কুঁকড়ে ও ঝলসে যায়। বনভূমি ও তৃণভূমি ধ্বংস হয়।
[4] অট্টালিকা ও সৌধের ক্ষতি: মারবেল নির্মিত অট্টালিকা, সৌধ ইত্যাদি অম্লবৃষ্টির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের তাজমহলের ক্ষতির অন্যতম কারণ অম্লবৃষ্টি।
[5] মানুষের ক্ষতি: মানুষ অম্লবৃষ্টির দ্বারা প্রভাবিত হলে তাদের চামড়াও কোশের ক্ষতি হয়।
প্রশ্ন 2. গ্রিনহাউস প্রভাব বলতে কী বোঝায়? গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলাফল বা প্রভাবগুলি কী? অথবা, গ্রিনহাউস প্রভাব বলতে কী বোঝ? বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাবগুলি উল্লেখ করো।
উত্তব়:গ্রিনহাউস প্রভাব
আধুনিককালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে এই গ্যাসগুলি মিলিতভাবে বায়ুমণ্ডলে চাঁদোয়ার মতো একটি গ্যাসীয় স্তরের সৃষ্টি করে এবং এই স্তর গ্রিনহাউসের মতো আচরণ করে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌরবিকিরণ অতি সহজেই পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রবেশ করে।
গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলাফল বা প্রভাব
বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধির প্রধান ফলাফল হল, পৃথিবী জুড়ে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, যা বিশ্ব উয়ায়ন (Global Warming) নামে পরিচিত। পৃথিবীর এরূপ তাপমাত্রা বৃদ্ধির কুপ্রভাব পরিবেশে লক্ষ করা যায়।
[1] জলবায়ুর পরিবর্তন: পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ার ফলে (প্রায় 1.5 °সে বেড়েছে) পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। শীতের প্রকোপ কমেছে ও গ্রীষ্মের প্রকোপ বেড়েছে। নাতিশীতোয় জলবায়ু উন্নতর হচ্ছে। ঋতুগুলোর অনিয়মিত আগমন লক্ষ করা যাচ্ছে। পৃথিবীতে বজ্রঝড়, ঘূর্ণিঝড়, খরা ইত্যাদির প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়ছে।
[2] সমুদ্রজলের উন্নতা বৃদ্ধি: বিশ্ব উয়ায়নের ফলে সমুদ্রজলের গড়
উয়তা ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলে সমুদ্রজলে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণের পরিমাণ কমছে। পরিণতিস্বরূপ উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটনগুলি কার্বন ডাইঅক্সাইডের অভাবে খাদ্য তৈরি করতে পারছে না ও মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া সমুদ্রজলের উয়তা বাড়ায় প্রবাল কীট-সহ অন্যান্য বহু জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ ঘটছে।
[3 ] বরফ ও হিমবাহের গলন: তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ, জলে ভাসমান হিমশৈল ও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। ফলে সমুদ্রজলের উচ্চতার পরিমাণ বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য হিমালয়ের অমরনাথ গুহায় বরফের শিবলিঙ্গের উচ্চতা কমে গেছে। বিশ্ব উন্নায়নের ফলে হিমবাহের পশ্চাদপসরণ (Glacial retreat) ঘটছে ও হিমরেখার উচ্চতা বাড়ছে।
[4] সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি: পুরু বরফের স্তর গলতে থাকায় সমুদ্রজলের পরিমাণ ও জলপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে উপকূলবর্তী এলাকার নীচু অংশ ক্রমশ জলে ডুবে যাবে, ক্ষয়চক্র ব্যাহত হবে। এ ছাড়া সমুদ্রে নোনা জলের প্রবেশে মাটি অনুর্বর হবে, সমুদ্রজলের উয়তার তারতম্যের জন্য সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন এবং সামুদ্রিক জীবজন্তু ও উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটবে।
[5] কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস ও শস্য উৎপাদনের স্থান পরিবর্তন: তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে দেখা যাচ্ছে যে, হিমালয়ের কুলু উপত্যকায় আপেল চাষের স্থানে পেঁয়াজ-রসুনের চাষ হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে কৃষিজমির পরিমাণও কমছে।
[6] জীববৈচিত্র্য ধ্বংস: বিশ্ব উন্নায়নের ফলে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ চিরতরে হারিয়ে যাবে। গবেষক ডেনিস মার্কির পর্যবেক্ষণজনিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের গড় উয়তা ও °সে বৃদ্ধি পেলে 40% স্তন্যপায়ী প্রজাতি এবং কয়েক শতাংশ পাখি চিরতরে বিলুপ্ত হবে।
[7] উদ্ভিদের বিনাশ: তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ, ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ধ্বংস হবে এবং অত্যধিক তাপমাত্রাজনিত কারণে দাবানলের সংখ্যাও বাড়বে।
[৪] জলের জোগানে ঘাটতি: তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বাষ্পীভবন দ্রুততর হবে। ফলে ভূপৃষ্ঠে হ্রদ, নদী, জলাশয়ের জলের পরিমাণকমবে। এ ছাড়া মৃত্তিকায় আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস পেলে ভূগর্ভের জলে টান পড়বে।
প্রশ্ন 3. প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি কী? জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ আলোচনা করো।
উত্তব়:প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস
বিশ্ব উন্নায়নের কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি হল-কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, ওজোন, জলীয় বাষ্প, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন।
জলবায়ুর পরিবর্তনে পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ
[ 1] বায়ুমণ্ডলের গঠনের পরিবর্তন: পৃথিবীতে উদ্ভিদের আবির্ভাবের পূর্বে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ছিল বহুগুণ বেশি। কার্বন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতিতে বাতাসের উয়তাও ছিল বেশি। পরবর্তীকালে পৃথিবী উদ্ভিদের আবরণে ঢেকে যায়। ফলে উদ্ভিদ দ্বারা অতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষিত হওয়ায় পৃথিবীর উয়তা বহুগুণে হ্রাস পায় এবং পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন সূচিত হয়।
[2] মহাদেশসমূহের স্থান পরিবর্তন ও ভূসংক্ষোভ:-
(i) ভূ-আন্দোলনের ফলে অভিসারী পাত সীমানায় পলিরাশি সংকুচিত ও উত্থিত হলে বায়ু চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং বেশি উচ্চতার কারণে স্থানটি শীতল হয়ে পরে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় হিমালয় ও তিব্বত মালভূমির উত্থানের ফলে পশ্চিম চিন ও মধ্য এশিয়ায় মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
(ii) মহাদেশীয় চলনের ফলে জলবায়ুর আঞ্চলিক পরিবর্তন ঘটে। মেরু অঞ্চলের নিরক্ষরেখামুখী চলনের ফলে মেরু সংলগ্ন অঞ্চলের বরফ গলে গেলে হৈমিক জলবায়ুর পরিবর্তে উয় জলবায়ুর আবির্ভাব ঘটে। মহাদেশের মেরুমুখী সঞ্চলনের ফলে বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়। মহাদেশীয় সঞ্চলনের ফলে মহাদেশ ও মহাসাগরের মধ্যে স্থান বিনিময় ঘটে। ফলে বাষ্পীভবনের মাত্রার হেরফের ঘটে যা জলবায়ুর পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(iii) দুটি অভিসারী সামুদ্রিক পাত সীমানায় অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সমুদ্রের জল বেশ উয় হয়ে যায়। তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত হয়, যা জলবায়ুর পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্থলভাগে আগ্নেয় বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে ধূলিকণা, ধূম, বিভিন্ন গ্যাস নির্গত হয়। এ ছাড়া বাতাসে CO₂ -এর মান ভীষণভাবে বেড়ে গেলে বাতাসের উয়তা বেড়ে যায়। আবার ধূলিকণা, লবণ কণা জল আকর্ষণকারী কেন্দ্রাণু (Hygroscopic Nuclei) রূপে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। বাতাসে এদের পরিমাণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে জলীয় বাষ্পেরও পরিমাণ বেশি হয় এবং ঘনীভবনের ফলে বাতাস ভারী হয়ে যায়। এর পরিণতি হিসেবে প্রচুর বৃষ্টিপাত তথা অধঃক্ষেপণ ঘটে এবং পৃথিবী অধিক মাত্রায় শীতল হয়।
প্ৰশ্ন4. জলবায়ু পব়িবৰ্তনেব় প্ৰমাণসমুহ আলোচনা কব়ো |
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণসমূহ:-
1988 সালে কানাডার টরেন্টোতে 'পরিবর্তনশীল জলবায়ু' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের অনেক প্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে। এসব প্রমাণ
সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল :-
[1] অতীতে হিমবাহের অগ্রগমন ও পশ্চাদপসরণের চিহ্ন: হিমবাহের পর্যায়ক্রমিক অগ্রগমন ও পশ্চাদপসরণের চিহ্ন থেকে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা করা যায়। গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা গেছে যে খ্রিস্টের জন্মের 3000 বছর পূর্বে পৃথিবীতে বরফাবৃত অঞ্চল কমে গিয়েছিল। এখনকার তুলনায় হিমরেখা 300 মিটার ওপরে অবস্থান করছিল। আবার 500 খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ হিমরেখা অনেকটা নেমে এসেছিল। পরবর্তীকালে তার আবার পশ্চাদপসরণ ঘটে।
[2] বরফের আবরণের গভীরতা: পাইপ দিয়ে ড্রিল করে বরফ স্তরের অতি গভীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে বরফের বিভিন্ন স্তরে আবদ্ধ বায়ুর বুদ্বুদকে বিশ্লেষণ করে অতীতের বিভিন্ন সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় CO₂ -এর পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়।
[3] লবণের আস্তরণ: ভূপৃষ্ঠে ভূতাত্ত্বিক যুগে যেসব লবণ সঞ্চিত হয়েছে তা থেকে অতীতের জলবায়ু সম্পর্কে জানা যায়। যেমন-আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মরুভূমির উপরিভাগে কোথাও কোথাও বিস্তীর্ণ লবণ খনি দেখা যায়। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভূতাত্ত্বিক যুগে এসব অঞ্চলে আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করছিল। বর্তমানে যেসব অঞ্চল লবণের স্তর দিয়ে আবৃত সেসব অঞ্চলে পূর্বে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছিল।
[4] সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন: বিশ্ব জলবায়ু সম্পর্কিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেলের (IPCC) এক হিসাবে দেখা যায় গ্রিনহাউস প্রভাবে বিগত কয়েক শতকে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা 10-20 সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কমে যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের ওঠা-নামার কারণে পৃথিবীব্যাপী সমুদ্র উপকূলের বেশ কিছু অংশ সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়। প্লাইস্টোসিন যুগে সমুদ্র সমতলের ওঠা-নামা থেকে জানা যায় যে, ওই সময়ে হিমবাহের আবরণ বেড়েছিল না কমেছিল।
[5] প্রাণীর জীবাশ্ম: প্রাণীর জীবাশ্ম থেকে অতীতের জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেমন-অমেরুদণ্ডী প্রাণী 'প্ল্যাঙ্কটন' (Plankton) মারা যাওয়ার পর সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়। এই প্ল্যাঙ্কটন জাতীয় অতি সূক্ষ্ম প্রাণীগুলো বিশেষ বিশেষ তাপমাত্রায় বাস করে। ফলে সমুদ্রের যেসব অঞ্চলে এসব প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে সেসব অঞ্চলের সমুদ্রের এবং তার উপরস্থ বায়ুর তাপমাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
[6] উদ্ভিদের জীবাশ্ম: উদ্ভিদের অস্তিত্ব রক্ষায় জলবায়ুর প্রভাব সর্বাধিক। একটি নির্দিষ্ট প্রকৃতির উদ্ভিদ একটি নির্দিষ্ট জলবায়ুতেই গড়ে ওঠে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে যে ধরনের বড়ো পাতার উদ্ভিদ জন্মায়, তা মরুভূমিতে স্বাভাবিকভাবে জন্মাতে পারে না। আবার নাতিশীতোয় অঞ্চলের সরলবর্গীয় উদ্ভিদ পূর্ববর্তী কোনো অঞ্চলেই স্বাভাবিকভাবে গড়ে উঠতে পারে না। জয়শলমিরের মরু জলবায়ুতে সরলবর্গীয় দেওদর গাছের উপস্থিতি একেবারেই অসম্ভব। কারণ দেওদর গাছ অন্য উচ্চ অক্ষাংশীয় শীতল জলবায়ুতে অথবা উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে জন্মায়। তথাপি এই অঞ্চলের উড ফসিল পার্কে দেওদর গাছের (1 কোটি ৪০ লক্ষ বছর পূর্বের) জীবাশ্ম ওই অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনেরই আভাস দেয়। অতীতের জলবায়ুর প্রকৃতি সম্পর্কে উদ্ভিজ্জের পরাগরেণু বিশ্লেষণের মাধ্যমেও জানা যায়। পুরাতন হ্রদ ও ডোবা থেকে সংগৃহীত মাটিতে যেসব পরাগরেণু পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করে গাছের প্রকারভেদ ও তাদের জীবদ্দশাকালের জলবায়ু সম্পর্কে জানা যায়।
👉Paid Answer (For Membership User)
Editing by- Rita Moni Bora