অধ্যায় ৬ 

 

             দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং উপনিবেশসমূহ

 

 MCQs

 

1. ভারতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ছিলেন-
(A)  জওহরলাল নেহরু
(B) আবুল কালাম আজাদ
(C) মহম্মদ আলি জিন্না
(D) বল্লভভাই প্যাটেল
উত্তর: (A)  জওহরলাল নেহরু

2. বাংলার ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যে নারী শহিদ হন-
(A)  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
(B) বীণা দাশ
(C) শান্তি ঘোষ
(D) মাতঙ্গিনী হাজরা
উত্তর: (D) মাতঙ্গিনী হাজরা

3. স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল ছিলেন-
(A)  . রাজেন্দ্র প্রসাদ
(B) রাজাগোপালাচারী
(C) লর্ড মাউন্টব্যাটেন
(D) স্যার পেথিক লরেন্স
উত্তর: (B) রাজাগোপালাচারী

4. গণপরিষদের প্রথম স্থায়ী সভাপতি ছিলেন-
(A)  বি. আর. আম্বেদকর
(B) জওহরলাল নেহরু
(C) গান্ধিজি
(D) . রাজেন্দ্র প্রসাদ
উত্তর:(D) . রাজেন্দ্র প্রসাদ

5. গণপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল-
(A)  ৫৮৯
(B) ৩৮৯
(C) ১৮৯
(D) ৪৮৯.
উত্তর: (B) ৩৮৯

6. আধুনিককালে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি সবচেয়ে বেশি উপনিবেশ স্থাপন করে- 
(A) এশিয়া আফ্রিকায়  
(B) দক্ষিণ আমেরিকায়
(C) এশিয়া আমেরিকায়
(D) আফ্রিকা আমেরিকায়
উত্তর: (A) এশিয়া আফ্রিকায়  

7. ২১ (একুশ) দফা দাবি পেশ করে- 
(A) জাপান
(B) ভিয়েতনাম
(C) চিন
(D) ইন্দোনেশিয়া
উত্তর: (A) জাপান

8. জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে-
(A) ১৯৪১ খ্রি.
(B) ১৯৪২ খ্রি.
(C) ১৯৪৪ খ্রি.
(D) ১৯৪৫ খ্রি.
উত্তর: (A) ১৯৪১ খ্রি.

9. বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া সম্মেলন (Greater East Asia Conference) অনুষ্ঠিত হয়
(A) ১৯৪১ খ্রি.
(B) ১৯৪২ খ্রি.
(C) ১৯৪৩ খ্রি.
(D) ১৯৪৪ খ্রি.
উত্তর: (C) ১৯৪৩ খ্রি.

10. পূর্ব এশিয়ার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের জনক বলা হয়-
(A) ক্যাপ্টেন মোহন সিংকে
(B) ভগৎ সিংকে
(C) রাসবিহারী বসুকে
(D) সুভাষচন্দ্র বসুকে
উত্তর: (C) রাসবিহারী বসুকে

11. হিরোশিমায় আণবিক বোমা ফেলে-
(A) রাশিয়া
(B) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
(C) গ্রেট ব্রিটেন
(D) ভারত
উত্তর: (B) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র

12. স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন-
(A) হাত্তা
(B) . সুকর্ণ
(C) সুহার্তো
(D) হাব্বিবি
উত্তর: (B) . সুকর্ণ

13. . সুকর্ণ কোন্ দেশের নেতা ছিলেন?
(A) চিনের
(B) ইন্দোচিনের
(C) ইন্দোনেশিয়ার
(D) জাপানের
উত্তর: (C) ইন্দোনেশিয়ার

14. ভিয়েতনামের হাইফং অঞ্চলে বোমা নিক্ষেপ করে কয়েক হাজার নিরীহ ভিয়েতনামিকে হত্যা করে-
(A) ইংল্যান্ড
(B) ফ্রান্স
(C) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
(D) জাপান
উত্তর: (B) ফ্রান্স

15. আধুনিককালে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি সবচেয়ে বেশি উপনিবেশ স্থাপন করে- 
(A) এশিয়া আফ্রিকায়
(B) দক্ষিণ আমেরিকায় 
(C) এশিয়া আমেরিকায়
(D) আফ্রিকা আমেরিকায়
উত্তর: (A) এশিয়া আফ্রিকায়

16. ২১ (একুশ) দফা দাবি পেশ করে- 
(A) জাপান
(B) ভিয়েতনাম
(C) চিন
(D) ইন্দোনেশিয়া
উত্তর: (A) জাপান

17. জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে-
(A) ১৯৪১ খ্রি.
(B) ১৯৪২ খ্রি.
(C) ১৯৪৪ খ্রি.
(D) ১৯৪৫ খ্রি.
উত্তর:(A) ১৯৪১ খ্রি.

18. বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া সম্মেলন (Greater East Asia Conference) অনুষ্ঠিত হয়
(A) ১৯৪১ খ্রি.
(B) ১৯৪২ খ্রি.
(C) ১৯৪৩ খ্রি.
(D) ১৯৪৪ খ্রি.
উত্তর:(C) ১৯৪৩ খ্রি.

19. পূর্ব এশিয়ার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের জনক বলা হয়
(A) ক্যাপ্টেন মোহন সিংকে
(B) ভগৎ সিংকে
(C) রাসবিহারী বসুকে
(D) সুভাষচন্দ্র বসুকে
উত্তর:(C) রাসবিহারী বসুকে

20. হিরোশিমায় আণবিক বোমা ফেলে-
(A) রাশিয়া
(B) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র
(C) গ্রেট ব্রিটেন
(D) ভারত
উত্তর: (B) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র


শূন্যস্থান পূরণ করোে

1. পলাশির যুদ্ধের                 বছর পর ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে
(A) ১৮৮
(B) ১৯০
(C) ১৯২
(D) ১৯৮
উত্তর: (B) ১৯০

2. ফজলুল হক ছিলেন বাংলার                |
(A) কৃষক প্রজা দলের নেতা
(B) শ্রমিক প্রজা দলের নেতা
(C) সোশ্যালিস্ট দলের নেতা
(D) কমিউনিস্ট দলের নেতা
উত্তর: (A) কৃষক প্রজা দলের নেতা

3. স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন                |
(A) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল
(B) আবুল কালাম আজাদ
(C) মহম্মদ আলি জিন্না
(D) লাল বাহাদুর শাস্ত্রী
উত্তর: (A) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল

4. আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হয়                |
(A) ১৯৪০ খ্রি.
(B) ১৯৪১ খ্রি.
(C) ১৯৪২ খ্রি.
(D) ১৯৪৩ খ্রি.
উত্তর: (C) ১৯৪২ খ্রি.

5. ইন্দোচায়না কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন                
(A) মেও-সে-তুং
(B) হো-চি-মিন
(C) বাও দাই
(D) মহম্মদ হাত্তা
উত্তর: (B) হো-চি-মিন

6. ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন               
(A) . সুকর্ণ
(B) বেনবেল্লা
(C) হো-চি-মিন
(D) সান ইয়াৎ-সেন
উত্তর:(C) হো-চি-মিন

7. ভিয়েতমিন গঠন করেন             
(A) নগুয়েন-আই-কুয়োক
(B) নগুয়েন-গিয়াপ
(C) বাও-দাও
(D) -দিন-দিয়েম
উত্তর:(B) নগুয়েন-গিয়াপ

8. বিংশ শতকের গোড়ার দিকে            চিন দেশের জাতীয়তাবাদীরা 'পূর্বে চলোআন্দোলনের ('Go East' movement) ডাক দেন। 
(A) চিন
(B) ভিয়েতনাম
(C) জাপান
(D) ইন্দোনেশিয়া
উত্তর:

9. জাপান              খ্রিস্টাব্দে মাঞ্জুরিয়া দখল করে
(A) ১৯৩০
(B) ১৯৩১
(C) ১৯৩২
(D) ১৯৩৩
উত্তর:(B) ১৯৩১

10. মিউনিখ চুক্তি সম্পাদিত হয়               খ্রিস্টাব্দে
(A) ১৯৩৭
(B) ১৯৩৮
(C) ১৯৩৯
(D) ১৯৪০
উত্তর:(B) ১৯৩৮

 Short Answer Question

প্রশ্ন 1. সুকর্ণ কে ছিলেন?

উত্তর: PNI দলের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি

প্রশ্ন 2. কোন্ কোন্ দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গড়ে উঠেছে?

উত্তর: জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিয়ো এবং একশোরও বেশি ছোটো বড়ো দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গড়ে উঠেছে

প্রশ্ন 3. উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী কী নামে পরিচিত ছিল?

উত্তর: উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী ভিয়েতমিন নামে পরিচিত ছিল

প্রশ্ন 4. ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনামের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

উত্তর: ঐক্যবন্ধ ভিয়েতনামের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন হো-চি-মিন

প্রশ্ন 5. 'বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া যৌথ অগ্রগতি বলয়' কী?

উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান, মিত্রশক্তিভুক্ত ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে কোণঠাসা করার পর জাপানি বিদেশমন্ত্রী মাৎসুওকা এশিয়ায় বিস্তার নীতি গ্রহণ করেন, যা 'বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া যৌথ অগ্রগতি বলয়' নামে পরিচিত

প্রশ্ন 6. 'টানাকা মেমোরিয়াল' কী?

উত্তর: জাপানের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী প্রধানমন্ত্রী টানাকা জাপানের সম্রাট হিরোহিতোর কাছে প্রদত্ত এক প্রতিবেদনে জানান যে, পূর্ব এশিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য জাপানের উচিত যুদ্ধনীতি গ্রহণ করা। এই প্রতিবেদন টানাকা মেমোরিয়াল (১৯২৭ খ্রি.) নামে পরিচিত

প্রশ্ন 7. সিয়াটো কেন গঠিত হয়?

উত্তর: ইন্দোচিন-সহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সাম্যবাদ মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন উদ্যোগে গঠিত হয় সিয়াটো (SEATO) বা 'দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা'

প্রশ্ন 8. হো-চি-মিন কে ছিলেন?

উত্তর: হো-চি-মিন ছিলেন ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি

প্রশ্ন 9. ভিয়েতকং কাকে বলে?

উত্তর: দক্ষিণ ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট, অকমিউনিস্ট এমনকি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও মার্কিন অনুগ্রহপুষ্ট ন-দিন-দিয়েম সরকারের বিরোধীতার লক্ষ্যে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট নামে এক সংগঠন গড়ে তোলে (১৯৬০ খ্রি.)। এদের দিয়েম সরকার ভিয়েতনামি কমিউনিস্ট বা ভিয়েতকং আখ্যা দেয়

প্রশ্ন 10. লিঙ্গজ্যোতি চুক্তি কী?

উত্তর: ডাচদের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার প্রজাতন্ত্রী নেতাদের যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তা নাম লিঙ্গজ্যোতি চুক্তি। বাটাভিয়া (জাকার্তা)-র লিঙ্গজ্যোতি শহরে এই চুক্তি স্বাক্ষরি হয়। এই চুক্তিতে ইন্দোনেশিয়ার পূর্ণ স্বাধীনতার স্বীকৃতি না দিয়ে সেখানে এক যুক্তরাষ্ট্রী ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়

11.বলকান পরিকল্পনা কী?

উত্তর-  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অটোমান সাম্রাজ্যের ভাঙনের পর বলকান অঞ্চলে জাতিভিত্তিক একাধিক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের উদ্ভব প্রক্রিয়াই বলকান পরিকল্পনা নামে পরিচিত

12. কবে গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে?

উত্তর-  গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর

13. পরাধীন ভারতের শেষ ভাইসরয় কে ছিলেন?

উত্তর  পরাধীন ভারতের শেষ ভাইসরয় ছিলেন মাউন্টব্যাটেন

14. ভারত কবে প্রজাতন্ত্র হল?

উত্তর-  ভারত ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র হল

15. ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন কী?

উত্তর-  ভারতবাসীকে স্বাধীনতা দান প্রসঙ্গে ভারত-সচিব পেথিক লরেন্স, বাণিজ্য-সচিব স্ট্যাফোর্ড ক্লিপস এবং নৌ-সচিব এ. ভি. আলেকজান্ডার-এই তিনজনকে নিয়ে গড়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলটি ভারতের ইতিহাসে ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন (১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ) নামে খ্যাত

14. এটলির ঘোষণা কী?

উত্তর-  ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট এটলি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঘোষণা করেন যে, ভারতের স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনার জন্য ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার তিনজন সদস্যকে নিয়ে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধি দলকে ভারতে পাঠানো হবে

16. রশিদ আলি কে?

উত্তর-  রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন

17. 'রশিদ আলি দিবস' কী? অথবা, রশিদ আলি দিবস কবে এবং কেন পালিত হয়েছিল?

উত্তর-  আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন রশিদ আলিকে বিচারে ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলে, প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ব্যাপক ছাত্র ধর্মঘট এবং ১২ তারিখে সাধারণ ধর্মঘট ঘটে, যা 'রশিদ আলি দিবস' নামে পরিচিত

18. লিনলিথগোর প্রস্তাবের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো

উত্তর-  লিনলিথগোর প্রস্তাবের দুটি ত্রুটি ছিল- [i] এই প্রস্তাবে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দানের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো উল্লেখ ছিল না। [ii] এই প্রস্তাবে সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়

19. ক্লিপস প্রস্তাব কী?

উত্তর-  ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্লিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ) ও ভারতকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে ২৯ মার্চ একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত


Long Answer Question

প্রশ্ন1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির সঙ্গে জাপানিদের সংযোগজনিত ধারা বিশ্লেষণ করো

উত্তর- সূচনা: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আই. এন. এ. (Indian National Army) জাপানি সাহায্যে ভারতের মুক্তি অর্জনে সচেষ্ট হলে উভয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। আই. এন. এ. ও জাপানিদের সংযোগজনিত ধারা


1 প্রাথমিক ধারা

i. জাপানিদের দিক থেকে

[a ] এশিয়ায় জাপানি বিস্তার নীতি: 'বৃহত্তর পূর্ব এশিয়া যৌথ অগ্রগতি বলয়' পরিকল্পনা অনুসারে জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজের সম্প্রসারণ ঘটাতে শুরু করে। জাপানের সামরিক সাফল্যে উৎসাহী হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারতীয়রা জাপানের সঙ্গে সংযোগ-স্থাপনে সচেষ্ট হয়

[b] ফুজিওয়ারার উদ্যোগ: জাপানি ইম্পিরিয়াল জেনারেল হেডকোয়াটার্স-এর মেজর ইওয়াইচি ফুজিওয়ারার নেতৃত্বে ব্যাংককে ফুজিওয়ার কিকন মিশন গঠিত হয়। এই মিশন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলায় সচেষ্ট হয়। ফুজিওয়ারা যুদ্ধবন্দি ভারতীয়দের নিয়ে মোহন সিং এর নেতৃত্বে এক সেনাদল গঠনের উদ্যোগ নেন

c] ফারার পার্ক-এর সমাবেশ: ক্যাপটেন মোহন সিং-এর নেতৃত্বে জাপানের হাতে বন্দি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাদের নিয়ে সিঙ্গাপুরের পতনের পরের দিন অর্থাৎ ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরের ফারার পার্ক-এ এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ফুজিওয়ারা ফারার পার্কের এক সমাবেশে যুদ্ধবন্দি ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমরা তোমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেব এবং তোমাদের কাজে সর্বতোভাবে সহায়তা করব।"

[d] তোজো-র বিবৃতি: সিঙ্গাপুরের পতনের পর জাপানি প্রধানমন্ত্রী তোজো পার্লামেন্ট (Diet)-এ এক বিবৃতি দেন। এই বিবৃতিতে তিনি বলেন-জাপান কখনও ভারতীয়দের শত্রু বলে ভাবে না ও ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্তি অর্জনের লড়াইয়ে জাপান সর্বতোভাবে ভারতবাসীকে সাহায্য করবে

ii. ভারতীয়দের দিক থেকে

[a] আই. এন. এ. গঠন: টোকিওতে আয়োজিত এক সম্মেলনে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ) ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ (Indian Indepen- dence League) গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থির হয় এই সংঘ বা লিগ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে জাপানের সহযোগিতা লাভের চেষ্টা চালাবে। পরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে আয়োজিত এক সমাবেশে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় আজাদ হিন্দ বাহিনী বা আই. এন. এ.

[b] কর্মপরিষদ গঠন: আই. এন. এ.র কার্যপ্রণালী নির্ধারণের জন্য একটি কর্মপরিষদ গঠন করা হয়। এই পরিষদের সদস্য হন- রাসবিহারী বসু, জেনারেল মোহন সিং, পি.কে. মেনন এবং জি. কিউ. গিয়ানি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ ও আই. এন. এ. উভয়ের নেতৃত্বদানের জন্য সুভাষচন্দ্রকে আহ্বান জানানো হয়। সুভাষচন্দ্র যাতে নির্বিঘ্নে পূর্ব এশিয়ায় আসতে পারেন সে বিষয়ে জাপান সরকারের সাহায্য প্রার্থনা করে এই পরিষদ

2 পরবর্তী ধারা:

i. সুভাষ-তোজো সাক্ষাৎ: এক দুঃসাহসিক সামুদ্রিক অভিযান শেষে নেতাজি টোকিও (জাপানের রাজধানী) শহরে আসেন। টোকিওতে এসে সুভাষচন্দ্র জাপানি প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তোজো (Hideki Tojo)- র সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাতের কয়েকদিন পর ইম্পিরিয়াল ডায়েট- এর এক সভায় সুভাষের উপস্থিতিতে তোজো ঘোষণা করেন- "ভারতের স্বাধীনতার জন্য যা যা করা সম্ভব সেসব করতে জাপান প্রস্তুত।”

ii. সুভাষের নেতৃত্ব গ্রহণ: তোজোর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে সুভাষচন্দ্র রাসবিহারী বসু ও আবিদ হাসানের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে এসে পৌঁছোন। সিঙ্গাপুরের ক্যাথে থিয়েটারে ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রাসবিহারী বসুর হাত থেকে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন সুভাষচন্দ্র

iii. আজাদ হিন্দ ও জাপানি সেনাদের অভিযান

[a ] সুভাষ ও জাপানি সেনাধ্যক্ষের মিলিত সিদ্ধান্ত: দিল্লি অভিযানের সূচনাকালে সুভাষ ও জাপানি সেনাধ্যক্ষ কাওয়ার কিছু সিদ্ধান্ত নিলেন, যেমন- আজাদ হিন্দ বাহিনী জাপানি সেনাবাহিনীর সমান মর্যাদা পাবে, আজাদ হিন্দ ও জাপানি উভয় সেনাবাহিনী একই নেতৃত্বাধীনে থাকবে এবং একই সমরকৌশল মেনে যুদ্ধ করবে, অধিকৃত ভারতীয় অঞ্চলগুলির দায়িত্বভার ও কর্তৃত্ব থাকবে আজাদ হিন্দ সেনাদের হাতে

[b] ভারতভূমিতে পদার্পণ: জাপানিদের সাহায্য ও নেতাজির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উদ্দীপ্ত হয়ে আজাদ হিন্দ সেনারা আরাকান দখল করে। বার্মা সীমা অতিক্রম করে তারা ভারতভূমিতে পা রাখে এবং মণিপুরের মৈরাং-এ তারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে (১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল)


উপসংহার: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জাপানের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা বিনষ্ট হওয়ায় আই. এন. এ.র সেনারাও শেষপর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগে বাধ্য হন

প্রশ্ন2. ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ড. সুকর্ণ-এর ভূমিকা লেখো

অথবা, ইন্দোনেশিয়ার মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতায় ড. সুকর্ণ-এর অবদান আলোচনা করো। 

উত্তর- সূচনা: জাভা, সুমাত্রা, বোর্নিয়ো এবং একশোরও বেশি ছোটো-বড়ো দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। আঠারো শতক থেকে এই দ্বীপ রাষ্ট্রে ডাচ বা ওলন্দাজদের উপনিবেশ গড়ে ওঠে। অনেক ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে শেষপর্যন্ত ড. সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা ফিরে পায়


ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ও সুকর্ণ

1 PNI দলগঠন: ইতিপূর্বে হল্যান্ডে গঠিত (১৯২২ খ্রি.) ইন্দোনেশিয় ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সুকর্ণ। সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে PNI দল। অল্পদিনের মধ্যে এই দল ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে। সুকর্ণের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই রাজনৈতিক দলটি ইন্দোনেশিয়ার পূর্বেকার রাজনৈতিক দল PKI-এর জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যায়


2 ঔপনিবেশিক সরকারের বিরোধিতা: সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে PNI দল ইন্দোনেশিয়ার সকল অকমিউনিস্টদের একজোট করে এবং অসহযোগীতার নীতি গ্রহণ করে। এই দল কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়। পাশাপাশি এই দল সাম্রাজ্যবাদ ও ধনতন্ত্রের বিরোধিতা করে


3 জাতীয়তাবাদের ভিত্তি স্থাপন: সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী দল দলীয় পতাকা হিসেবে লাল ও সাদা পতাকা গ্রহণ করে।n ইন্দোনেশীয় ভাষা ও জাতীয় সংগীত 'ইন্দোনেশিয়া বয়া' (বৃহত্তর ইন্দোনেশিয়া) গ্রহণ করে। এইভাবে এই দল ইন্দোনেশিয়াবাসীর অন্তরে জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে


4 আন্দোলন দমন: ডাচ সরকার ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে সুকর্ণ-সহ চারজন জাতীয় নেতাকে বন্দি করে, জাতীয় দল ভেঙে দিয়ে তাকে বেআইনি ঘোষণা করে। এই সময়ে এই দলের দুই নেতা মহম্মদ হাত্তা ও সুতান জাহরির বিদেশে শিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে আসেন ও জাতীয় আন্দোলন পরিচালনার ভার নেন


5 পারতাই ইন্দোনেশিয়া গঠন: বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সুকর্ণ পুনরায় জাতীয় আন্দোলনে মনোনিবেশ করেন। তিনি ইন্দোনেশিয়ার বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলিকে একজোট করে পারতাই ইন্দোনেশিয়া নামে এক গণ সংগঠন গড়ে তোলেন। ডাচ সরকারের কুনজরে পরে তিনি পুনরায় বন্দি হন এবং তাঁকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানো হয়। এদিকে হাত্তা ও জাহরিরকেও নিউগিনিতে বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়


6 জাপানের ইন্দোনেশিয়া দখল: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানি হল্যান্ড দখল করে নিলে (১৯৪০ খ্রি.) ইন্দোনেশিয়ায় হল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। এই সুযোগে জাপান ইন্দোনেশিয়া দখল করে নেয় (১৯৪২ খ্রি.)। জাপান ঔপনিবেশিক সরকার সুকর্ণকে নির্বাসন থেকে মুক্তি দেয়। জাপানি কর্তৃপক্ষ সুকর্ণ ও হাত্তাকে ব্যবহার করে ইন্দোনেশিয়াবাসীর সাহায্য লাভের চেষ্টা করে


7 প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা: জাপানকে যুদ্ধে সাহায্য দানের আশ্বাস দিয়ে সুকর্ণ এক লক্ষ সেনাবিশিষ্ট এক সামরিক সংগঠন গড়ে তোলার সুযোগ পান। এ ছাড়াও তিনি জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে গোপনে স্বাধীনতার প্রস্তুতি চালিয়ে যান। শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হেরে গেলে সুকর্ণ স্বাধীনতার জন্য এক প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন (১৯৪৫ খ্রি., ১৪ আগস্ট)। এর তিনদিন পরে অর্থাৎ ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৭ আগস্ট সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষিত হয় ও এক প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী নেতারা সরকারের পাঁচটি নীতি অর্থাৎ পঞ্চশীল ঘোষণা করেন। এগুলি ছিল-জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ, সম্মতি, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ঈশ্বর বিশ্বাস। স্বাধীনতা ঘোষণার পর নতুন সরকার কয়েকটি সমস্যার মুখোমুখি হয়, যথা-ইন্দোনেশীয় ভাষা ও জাতীয় সংগীত 'ইন্দোনেশিয়া বয়া' (বৃহত্তর ইন্দোনেশিয়া) গ্রহণ করে। এইভাবে এই দল ইন্দোনেশিয়াবাসীর অন্তরে জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে


4 আন্দোলন দমন: ডাচ সরকার ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে সুকর্ণ-সহ চারজন জাতীয় নেতাকে বন্দি করে, জাতীয় দল ভেঙে দিয়ে তাকে বেআইনি ঘোষণা করে। এই সময়ে এই দলের দুই নেতা মহম্মদ হাত্তা ও সুতান জাহরির বিদেশে শিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে আসেন ও জাতীয় আন্দোলন পরিচালনার ভার নেন


5 পারতাই ইন্দোনেশিয়া গঠন: বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সুকর্ণ পুনরায় জাতীয় আন্দোলনে মনোনিবেশ করেন। তিনি ইন্দোনেশিয়ার বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলিকে একজোট করে পারতাই ইন্দোনেশিয়া নামে এক গণ সংগঠন গড়ে তোলেন। ডাচ সরকারের কুনজরে পরে তিনি পুনরায় বন্দি হন এবং তাঁকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানো হয়। এদিকে হাত্তা ও জাহরিরকেও নিউগিনিতে বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়


6 জাপানের ইন্দোনেশিয়া দখল: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানি হল্যান্ড দখল করে নিলে (১৯৪০ খ্রি.) ইন্দোনেশিয়ায় হল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে। এই সুযোগে জাপান ইন্দোনেশিয়া দখল করে নেয় (১৯৪২ খ্রি.)। জাপান ঔপনিবেশিক সরকার সুকর্ণকে নির্বাসন থেকে মুক্তি দেয়। জাপানি কর্তৃপক্ষ সুকর্ণ ও হাত্তাকে ব্যবহার করে ইন্দোনেশিয়াবাসীর সাহায্য লাভের চেষ্টা করে


7 প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা: জাপানকে যুদ্ধে সাহায্য দানের আশ্বাস দিয়ে সুকর্ণ এক লক্ষ সেনাবিশিষ্ট এক সামরিক সংগঠন গড়ে তোলার সুযোগ পান। এ ছাড়াও তিনি জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে গোপনে স্বাধীনতার প্রস্তুতি চালিয়ে যান। শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হেরে গেলে সুকর্ণ স্বাধীনতার জন্য এক প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন (১৯৪৫ খ্রি., ১৪ আগস্ট)। এর তিনদিন পরে অর্থাৎ ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৭ আগস্ট সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষিত হয় ও এক প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী নেতারা সরকারের পাঁচটি নীতি অর্থাৎ পঞ্চশীল ঘোষণা করেন। এগুলি ছিল-জাতীয়তাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ, সম্মতি, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ঈশ্বর বিশ্বাস। স্বাধীনতা ঘোষণার পর নতুন সরকার কয়েকটি সমস্যার মুখোমুখি হয়, যথা-পঞ্চশীলের বিরোধিতা, PNI দলের বিভাজন ও PIR গঠন, কমিউনিস্টদের অভ্যুত্থান ও ক্যাবিনেট সদস্যদের অপহরণ পরিকল্পনা প্রভৃতি


৪ ওলন্দাজদের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জাপান হেরে গেলে ওলন্দাজরা পুনরায় ইন্দোনেশিয়ায় নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তৎপর হয়। সুমাত্রা ও জাভা বাদে ইন্দোনেশিয়ার অবশিষ্ট অংশ ওলন্দাজদের অধীনে চলে যায়। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ সৈন্যরা ডাচদের পূর্ণ মদত জোগায়। শুধু তাই নয় জাভায় ঢুকে ব্রিটিশ সেনারা দু-লক্ষ ওলন্দাজ বন্দিদের মুক্ত করে। এই প্রেক্ষাপটে রানি উইলহেল মিনা ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে এক ঘোষণা জারি করেন। এই সময়ে সমগ্র ইন্দোনেশিয়া দু-ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এর এক ভাগ ছিল সুকর্ণ-এর প্রজাতন্ত্রের অধীনে আর অপর ভাগে ছিল মিত্র শক্তির সাহায্য নিয়ে হল্যান্ডদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটেনের মধ্যস্থতায় ইন্দোনেশিয়া ও হল্যান্ডের মধ্যে লিঙ্গজ্যোতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (২৫ মার্চ, ১৯৪৭ খ্রি.)। এই চুক্তিতে ঠিক হয়- [i] জাভার বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে এক সংবিধান সভা ডাকা হবে। [ii] হল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াকে নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করা হবে যে ইউনিয়নে থাকবে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থ দপ্তর। স্বাভাবিকভাবেই ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদীরা এই চুক্তি মেনে নেয়নি


9 মার্কিন উদ্যোগ ও ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা লাভ: লিঙ্গজ্যোতি চুক্তি স্বাক্ষরের তিন মাসের মধ্যে ডাচ সরকার ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশি শাসন কায়েম করেন। ভারত-সহ এশিয়ার দেশগুলি ঐক্যবদ্ধভাবে ডাচদের বিরোধিতা করে ও ইন্দোনেশিয়ার প্রতি সমর্থন জানায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও হল্যান্ড কূটনৈতিক চাপ দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় ডাচ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে উদ্যোগী হয়


উপসংহার: UNO-এর মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে একটি সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় এবং ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা পায়। গঠিত হয় যোলোটি অঙ্গরাজ্য বিশিষ্ট ইউনাইটেড স্টেটস অব ইন্দোনেশিয়া। স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ড. সুকর্ণ এবং প্রধানমন্ত্রী হন মহম্মদ হাত্তা। ড. সুকর্ণ-এর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় আন্দোলন বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরাধীন জাতিগুলিকে উদ্বুদ্ধ করে

3. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত ইন্দোনেশিয়াতে ইউরোপীয় উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করো

উত্তর-

প্রশ্ন4.  সংবিধান সভা কীভাবে গঠিত হয়? ভারতীয় গণপরিষদের লক্ষ্যগুলি কী ছিল?

উত্তর- সংবিধান সভার গঠন

1 বিভিন্ন সম্মেলনের দাবি মেনে: ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের এক সম্মেলনে গণপরিষদ গঠনের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর তিন বছর পরে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রামগড় কংগ্রেস সম্মেলনে কংগ্রেস কার্যকরী সমিতি গণপরিষদ গঠনের পক্ষে জোরালো অভিমত ব্যক্ত করে। অবশেষে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে ভারতের সংবিধান রচনার বিষয়টি নীতিগতভাবে মেনে নেয়


2 কূপল্যান্ড পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন চার্চিল মন্ত্রীসভার সদস্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতে আসেন (১৯৪২ খ্রি., ২৩ মার্চ)। ক্লিপস ভারতবাসীর কাছে তাঁর বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবে বলা হয়-ব্রিটিশ সরকার ও গণপরিষদের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু মুসলিম লিগ পৃথক গণপরিষদ গঠনের দাবি জানায়। পাশাপাশি জাতীয় কংগ্রেসও ক্লিপস প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করে। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ কূপল্যান্ডকে ভারতে পাঠায়। কুপল্যান্ড ঐকমত্যের ভিত্তিতে কংগ্রেস ও লিগের কাছে ক্ষুদ্র আকারের গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব রাখেন। এই প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরিবর্তে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণপরিষদ গঠনের উল্লেখ থাকায় কূপল্যান্ড পরিকল্পনাও শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়

3 মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব মেনে: [i] ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের মোট জনসংখ্যার নির্দিষ্ট অনুপাত অনুযায়ী গণপরিষদে আসন লাভ করবে। প্রতিটি প্রদেশ ১০ লক্ষ জন পিছু একজন করে প্রতিনিধি গণপরিষদে পাঠাতে পারবে। [ii] গণপরিষদের সকল আসন সাধারণ শ্রেণি (অ-শিখ, অ-মুসলমান), শিখ ও মুসলমান-এই তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ করে দেওয়া হবে। [iii] প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের সদস্যবৃন্দ একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজ নিজ প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। [iv] দেশীয় রাজ্যগুলি থেকে ৯৩ জন প্রতিনিধি পাঠানো যাবে

4 নির্বাচনের মাধ্যমে: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে গণপরিষদ গঠন করার জন্য এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চিফ কমিশনার শাসিত ৪টি আসন সমেত ব্রিটিশ-ভারত থেকে মোট ২৯৬ জন প্রতিনিধি নির্ধারণের জন্য এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে দলগত বিচারে কংগ্রেস শতকরা ৬৯ ভাগ আসন লাভের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। অর্থাৎ ২৯২টি প্রাদেশিক আসনের মধ্যে কংগ্রেস পায় ২০৮টি এবং মুসলিম লিগ পায় ৭৩টি আসন। সংবিধান রচনার লক্ষ্যে গঠিত খসড়া কমিটি (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট) গণপরিষদের কাছে খসড়া সংবিধান পেশ করে। দীর্ঘ আলাপ- আলোচনার পর রচিত হয় ভারতীয় সংবিধান

ভারতীয় গণপরিষদের লক্ষ্য

সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে গণপরিষদের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীন ভারতের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরি। এর পাশাপাশি ভারতের সংবিধান ন্যায়বিচার, স্বাধীন চিন্তা ও মতপ্রকাশ, স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ ইত্যাদির অধিকার দিতে চেয়েছিল ভারতীয় নাগরিকদের। সকল নাগরিক যাতে সমান সুযোগ পায় এবং সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, গণপরিষদের সদস্যগণ তাও উদ্দেশ্যরূপে গ্রহণ করেছিলেন। ভারতীয় সংবিধানের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি হল-

1 আর্থসামাজিক উন্নতি: গণপরিষদের সর্বপ্রধান লক্ষ্য ছিল স্বাধীন ভারতের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, ভারতের নবগঠিত সংবিধান ভারতবাসীর স্বাধীনতা রক্ষা করবে, ক্ষুধার্তের অন্ন জোগাবে, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেবে এবং প্রত্যেকের আত্মবিকাশের ব্যবস্থা করবে। ড. সর্বপল্লি রাধাকৃয়াণ বলেন, গণপরিষদের মূল লক্ষ্য হবে ভারতের আর্থসামাজিক বিপ্লব সাধন

2 গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠন: ভারতের সংবিধান প্রণেতাগণ গণপরিষদের রাজনৈতিক লক্ষ্য বর্ণনা করে বলেন যে, ভারত আত্মপ্রকাশ করবে এক স্বাধীন, সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রজাতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র হিসেবে। যেখানে থাকবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও সংসদীয় গণতন্ত্রের অস্তিত্ব


3 সামাজিক লক্ষ্য: সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বিশেষ শশ সংরক্ষণ ব্যবস্থা, শিশু ও নারীকল্যাণ, অস্পৃশ্যতা বিলোপ ইত্যাদি বিষয়গুলি গণপরিষদে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে

প্রশ্ন5. ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রেক্ষাপট ও ব্রিটিশের ভূমিকা লেখো

উত্তর- সূচনা: যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতের রাজনীতিতে এক অচলাবস্থা তৈরি হয়। কংগ্রেস এবং লিগের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। জিন্না পাকিস্তান দাবিতে অটল থাকায় এই দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। অপর দিকে বড়োলাট লিনলিথগোর স্থলে নতুন বড়োলাট ওয়াভেল ভারত নিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেন। তিনি লন্ডনের ব্রিটিশ মন্ত্রীসভাকে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার অনুরোধ জানান

হস্তান্তরের প্রেক্ষাপট ও ব্রিটিশের ভূমিকা

1 ওয়াভেল পরিকল্পনা: বড়োলাট ওয়াভেল ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের কাছে একটি সূত্র উত্থাপন করেন, সেটিই 'ওয়াভেল পরিকল্পনা' নামে খ্যাত। তিনি বলেন- [i] নতুন সংবিধান গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় নেতাদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে [ii] বড়োলাটের শাসন পরিষদে বর্ণহিন্দু ও মুসলমান সদস্যের সংখ্যা সমান থাকবে [iii] একমাত্র বড়োলাট ও প্রধান সেনাপতি ছাড়া শাসন পরিষদের অন্য সমস্ত সদস্য হবে ভারতীয় [iv] ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে পর্যন্ত ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশের হাতেই থাকবে [v] সরকার যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এবং সংবিধান রচনার কাজ আরম্ভ করবে

2 সিমলা বৈঠক

i. আলোচ্য বিষয়: ওয়াভেলের পরিকল্পনা মেনে সিমলায় এক বৈঠক বসে (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জুন)। কংগ্রেস, মুসলিম লিগ ও অন্যান্য দলের নেতাদের এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সিমলা বৈঠকে বড়োলাট ওয়াভেলের পরিকল্পনাগুলি আলোচিত হয়। তবে এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দুটি- প্রথমটি ছিল, বড়োলাটের কাউন্সিল বা শাসন পরিষদ যে সমস্ত নীতির ভিত্তিতে কাজ করবে সেগুলি ঠিক করা। দ্বিতীয়টি ছিল, কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হবে বা এই কাউন্সিলের কারা সদস্য হবে তা ঠিক করা

ii. পরিণতি: জিন্না যখন বড়োলাটের কার্যনির্বাহক সমিতিতে লিগের দ্বারা মুসলিম সদস্য নিয়োগের দাবি জানান তখন কংগ্রেস সে দাবি মেনে নিতে চায়নি। এ ছাড়া ব্রিটেনের রক্ষণশীল দলও ভারত ত্যাগ করতে রাজি ছিল না। ফলে সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হয়

3 ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন


i. উদ্দেশ্য: মন্ত্রী মিশনের উদ্দেশ্য ছিল দুটি- [a] ভারতকে স্বাধীনতাদান এবং ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার জন্য যে গণপরিষদ তৈরি হবে তার গঠন, পদ্ধতি ও নীতি নির্ধারণ করা [b] ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির বৃহত্তর মতৈক্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালের জন্য একটি জনপ্রতিনিধিভিত্তিক সরকার গঠন করা

ii. প্রস্তাব: এই মিশনের প্রধান প্রস্তাবগুলি ছিল-[a] ভারতে একটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে। দেশীয় রাজ্যগুলি এই যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দিতে পারবে। [b] কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। কেবলমাত্র পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ বিষয়ক ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর। প্রদেশগুলিতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তিত হবে [c] প্রদেশগুলিকে তিনটি বিভাগেই বিভক্ত করা হবে [d] ভারত যুক্তরাষ্ট্রে যোগদানে ইচ্ছুক দেশীয় রাজ্য ও প্রদেশগুলির নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদ গঠিত হবে [e] নতুন সংবিধান চালু হলে যে-কোনো নির্বাচিত প্রাদেশিক আইনসভা ইচ্ছা করলে যে-কোনো বিভাগে যোগ দিতে কিংবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেও পারবে। [f] যতদিন না নতুন সংবিধান প্রণীত হয়, ততদিন ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করা হবে

4 মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা:

i. মাউন্টব্যাটেনের লক্ষ্য: ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনের লক্ষ্য ছিল অখণ্ড ভারত। তাই ২৪ মার্চ থেকে ৬ মে -র মধ্যে তিনি ভারতীয় নেতৃমণ্ডলী ও রাজন্যবর্গের সঙ্গে ১৩৩টি বৈঠক করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই নতুন বড়োলাট বুঝে নেন যে, ভারত বিভাগ ছাড়া ভারতীয় সমস্যার কোনো সমাধান নেই

ii. বিভিন্ন প্রস্তাব: মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবে বলা হয়- [a] ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ডোমিনিয়নের সৃষ্টি করা হবে। ডোমিনিয়ন দুটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়সমূহ পরিচালনা করবে [b] মুসলমান প্রধান প্রদেশ-সিন্ধু, ব্রিটিশ অধিকৃত বালুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে পাকিস্তান গড়া হবে। [c] পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করে কোন্ অঞ্চলকে কোন্ ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হবে তা নির্ধারণের জন্য একটি 'সীমানা নির্ধারণ কমিশন' ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই গঠিত হবে। [d] আসামের শ্রীহট্ট জেলা কোন্ ডোমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে তা গণভোটে স্থির হবে। [e] দেশীয় রাজ্যগুলি নিজ নিজ রাজ্যে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করবে এবং ইচ্ছা করলে তারা যে-কোনো ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে [f] প্রতি ডোমিনিয়নের নির্বাচিত  গণপরিষদ নিজ এলাকার সংবিধান রচনা করবে। [g] যতদিন না সংবিধান রচিত হচ্ছে ততদিন ব্রিটিশ সরকার নিযুক্ত একজন গভর্নর- জেনারেল ওই ডোমিনিয়নে থাকবেন [h] স্বাধীনতা-লাভের নর প্রতি ডোমিনিয়নের নির্বাচিত আইনসভা নিজ নিজ দেশের জন্য আইন দুই রচনা করবে

উপসংহার: ভারতবাসীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সদিচ্ছা না থাকলেও সমকালীন ভারতের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ব্রিটিশকে স্বাধীনতা দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করে

প্রশ্ন6. আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযানের বর্ণনা দাও

উত্তর- সূচনা: সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযান এক চোখে- স্মরণীয় ঘটনা। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর আজাদ হিন্দ সেনারা পূর্ব সীমান্ত পৌঁছো দিয়ে ভারতে ঢুকে দিল্লির লালকেল্লা অধিকার করবে

আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত অভিযান


1 যুদ্ধ পরিকল্পনা: সুভাষচন্দ্র বসু ও জাপানি সেনাধ্যক্ষ কাওয়াবের মধ্যে এক যুদ্ধ পরিকল্পনা রচিত হয়। এই পরিকল্পনায় ঠিক হয় আজাদ হিন্দ বাহিনীর সুভাষ ব্রিগেড ও ৩১ নং জাপানি বাহিনী মিলিতভাবে আরাকান ফ্রন্টে অভিযান করবে এবং ইম্ফলের দিকে এগিয়ে যাবে। সামরিক অভিযানের সুবিধার্থে ভারতের নিকটবর্তী রেঙ্গুনে প্রধান সামরিক দপ্তর গড়ে তোলা হয়

2 অভিযানের সূচনা: আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিভিন্ন ব্রিগেডের মধ্যে সুভাষ ব্রিগেডের প্রথম দলটি তাইপুং থেকে যাত্রা শুরু করে (১৯৪৩ খ্রি., ৯ নভেম্বর)। আজাদ হিন্দ ফৌজের দুটি ডিভিশনের ২০ হাজার সেনার মধ্যে প্রথম ডিভিশনটি পরিচালনা করেন মেজর জেনারেল জামান কিয়ানি। দ্বিতীয় ডিভিশনটির পরিচালনা করেন কর্নেল শাহনওয়াজ

3 রেঙ্গুনে পদার্পণ: জাপানি নেতাদের সহযোগিতা, নেতাজির বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও উজ্জীবনী মন্ত্রে দীক্ষিত আজাদ হিন্দ সেনারা ১৯৪৪-এর জানুয়ারিতে রেঙ্গুনে এসে উপস্থিত হয়। রেঙ্গুনে আজাদ হিন্দ সেনারা ২৪ টি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়ে অভিযান শুরু করে

4 ভারত সীমান্তে অভিযান: রেঙ্গুন থেকে পায়ে হেঁটে আজাদ হিন্দ সেনারা ভারত সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলে। সেসময় দৈনিক ৮০ পাউন্ড ওজনের জিনিসপত্র কাঁধে নিয়ে গড়ে ২৫ মাইল করে হেঁটে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলাই ছিল দৈনন্দিন কাজ। জাপানি সেনারা যে পথ ৫দিনে অতিক্রম করত, তাড়াতাড়ি সীমান্তে পৌঁছোনোর আগ্রহে আজাদ হিন্দ সেনারা সেপথ দুদিনে অতিক্রম করে

5 সীমান্তে প্রবেশ: কক্সবাজার থেকে ৫০ মাইল দূরে মৌডকে ব্রিটিশ ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায় আজাদ হিন্দ বাহিনী। অতর্কিত এই আক্রমণে ব্রিটিশ সেনারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে পালিয়ে যায়, সেগুলি দখল করে নেয় আজাদ হিন্দ সেনারা

6 মৈরাং-এ জাতীয় পতাকা উত্তোলন: একে একে কোহিমা দুর্গ ও ডিমাপুর-কোহিমা রোডের একটি ক্যান্টনমেন্ট দখল করে আজাদ হিন্দ সেনারা (১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ এপ্রিল)। মণিপুরের অন্তর্গত কোহিমা

কবরটিও তারা দখল করে নেয়। মণিপুরের মৈরাং-এ জাতীয় পতাকা তোলা 2 নৌব হয় (১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল)। শুরু হয় মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল বীরত্বপূর্ণ লড়াই

7 আত্মসমর্পণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের কোণঠাসা পরিস্থিতি এবং খেলের প্রত্যাবর্তনে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনারা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ফলে খাদ্য ও অস্ত্রের জোগান বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে তীর বর্ষা নেমে যাওয়ায় এবং ছড়িয়ে প বৃনিতম প্রয়োজনীয় খাদ্য ও যুদ্ধ সরঞ্জামের অভাবে আজাদ হিন্দ সেনারা বাধ্য হয় পিছু হটতে। ইম্ফল বা মণিপুর সীমান্তে ব্রিটিশ সেনাপতি স্লিম ও ভূনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনারা এগিয়ে আসে। ব্রিটিশের ভারী ট্যাংক, কামান এবং বিমান বাহিনীর আক্রমণে আজাদ হিন্দ সেনাদের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। অবশেষে জাপান মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করলে (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট) আজাদ হিন্দ সেনারা অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সহকর্মীদের পরামর্শে নেতাজি আত্মসমর্পন থেকে বিরত থাকেন

8 নেতাজির অন্তর্ধান: আজাদ হিন্দ সেনাদের আত্মসমর্পণের ফলে নেতাজির দিল্লি দখল অধরা থেকে যায়। কিন্তু তিনি ভেঙে না পড়ে, দু- চোখে নতুন স্বপ্ন নিয়ে বার্মা (এখনকার মায়ানমার) থেকে সায়গন পৗঁছোন। কথিত আছে, যে এরপর ফরমোজার কাছে তাই-হোকুতে এক বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও ভারতবাসী এ কথা আজও বিশ্বাস করে না। সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সেনাদের অবদানকে স্বীকার করে যে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে, তাতে ঐক্য (ইত্তেফাক), বিশ্বাস (ইৎমাদ) হতে ও আত্মোৎসর্গ (কুরবানি) শব্দগুলি উল্লিখিত আছে। শব্দগুলি আজও আজাদ ছিন্দ যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়

উপসংহার: আজাদ হিন্দ সেনারা দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছোতে পারেনি বটে, কিন্তু তাদের ভারত অভিযানের সামগ্রিক প্রচেষ্টা মূল্যহীন নয়। ভারতের পরাধীনতা মোচনের লক্ষ্যে আজাদ হিন্দ সেনাদের ভারত অভিযান সমকাল ও পরবর্তীকালের প্রজন্মকেও গভীর দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করে

6. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো এবং এই আন্দোলনে মহিলাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

উত্তর-


1. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচিনে ইউরোপীয় উপনিবেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি আলোচনা করো

উত্তর- সূচনা: ইন্দোচিন বলতে আন্নাম, টংকিং এবং কোচিন চিনকে বোঝায়। এই ইন্দোচিনের অধিবাসীরা দীর্ঘদিন বিভিন্ন ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনে পরাধীন ছিল। দীর্ঘ সংগ্রামের পর এই অঞ্চল ঔপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে মুক্তি পায়


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচিনে ইউরোপীয় উপনিবেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি


ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ: উনিশ শতক নাগাদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত সমগ্র ইন্দোচিন উপদ্বীপ অঞ্চলটি ফরাসি সাম্রাজ্যবাদী শাসনের আওতায় আসে। মূলত উনিশ শতকে তৃতীয় নেপোলিয়ানের আমলেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের সূচনা ঘটে। এর মধ্যে আবার বিংশ শতকের প্রথম দিক থেকে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ইন্দোচিনে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা ঘটে


2 জাপানি সাম্রাজ্যবাদ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার সাম্রাজ্য বিস্তার নীতির প্রয়োগ ঘটাতে শুরু করে। এদিকে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়কালে জার্মান আক্রমণে ফ্রান্স কোণঠাসা হয়ে পড়লে সেই সুযোগে জাপান সমগ্র ইন্দোচিনে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ইন্দোচিন জাপানি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের শিকার হয়। জাপানি সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ইন্দোচিনবাসী একজোট হয়। ফলস্বরূপ বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা হো-চি-মিন (নগুয়েন-আই-কুয়োক)-এর নেতৃত্বে ইন্দোচিন, ভিয়েতনাম নামে আত্মপ্রকাশ করে


3 ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে পট্সডাম সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল জাপান ইন্দোচিন থেকে সরে গেলে ইন্দোচিনের উত্তরাঞ্চলে জাতীয়তাবাদী কুয়োমিং তাং চিন ও দক্ষিণাঞ্চলে ব্রিটেন দায়িত্ব নেবে। এদিকে হো-চি-মিন-এর নেতৃত্বে হ্যানয় অঞ্চলে অস্থায়ী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। হো-চি-মিন এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে ভিয়েতনাম থেকে ব্রিটিশ ও চিনা সামরিক বাহিনী সরে যায়। এই সুযোগে ফ্রান্স পুনরায় ভিয়েতনামে নিজের আধিপত্য  প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হয়। কিন্তু হো-চি-মিন ভিয়েতনামে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাধা দেন। অবশেষে ভিয়েতমিন গেরিলা বাহিনীর আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ফ্রান্স ভিয়েতমিনের 10 সঙ্গে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয় (১৯৪৬ খ্রি., মার্চ)। চুক্তির শর্তানুসারে হো-চি-মিন এর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে ইন্দোচিন ফেডারেশন এবং ফরাসি ইউনিয়নের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু অচিরেই এই চুক্তিকে অবজ্ঞা করে ফ্রান্স ভিয়েতনামে নিজের ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। আমেরিকাও ফ্রান্সের এই উদ্যোগকে সমর্থন করে। এমনকি ব্রিটেনও ইন্দোচিনে ফ্রান্সকে তার পর্বতন সাম্রাজ্যের পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে সমর্থন জানায়


4 মার্কিনি হস্তক্ষেপ:

1. ফ্রান্সকে সাহায্য: ইন্দোচিনে হো-চি-মিন-এর নেতৃত্বাধীন সরকারকে সাম্যবাদী সোভিয়েত ও চিন সমর্থন জানালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সকে সরাসরি সাহায্য করার নীতি গ্রহণ করে


ii. প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ: জেনেভা সম্মেলন (১৯৫৪ খ্রি., ২০ জুলাই)-এ গৃহীত সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ভিয়েতনামে দীর্ঘ ফরাসি সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটে। তারপরই সাম্যবাদের প্রসার রোধের লক্ষ্যে আমেরিকা সরাসরি ভিয়েতনাম সংকটে অংশগ্রহণ করে। মার্কিন প্রশাসন প্রথমেই দক্ষিণ ভিয়েতনামে বাও-দাই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করে ফ্রান্স বিরোধী ও সাম্যবাদ বিরোধী নেতা ন-দিন-দিয়েমকে


iii. সিয়াটো গঠন: উত্তর ভিয়েতনামে হো-চি-মিনের সরকারকে চিন ও সোভিয়েত তার সাহায্য অব্যাহত রাখে। পক্ষান্তরে ইন্দোচিন-সহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সাম্যবাদ মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন উদ্যোগে গঠিত হয় সিয়াটো (SEATO)¹¹ বা 'দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা'এদিকে দিয়েমের মার্কিন তোষণে দক্ষিণ ভিয়েতনামে গণ অসন্তোষ দেখা দেয়। দক্ষিণ ভিয়েতনামে মার্কিন আগ্রাসনের বিরোধিতার লক্ষ্যে গঠিত হয় জাতীয় মুক্তি মোর্চা (NLF) 12


iv. মার্কিনদের পরাজয়: দক্ষিণ ভিয়েতনামে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দিয়েম সরকারের পতন ঘটে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় জেনারেল নগুয়েন ভ্যান থিউ-এর হাতে। ভিয়েতকং বাহিনী ও উত্তর ভিয়েতনামের বাহিনীর মিলিত আক্রমণে মার্কিনিরা পিছু হটে। প্যারিস সম্মেলনে (১৯৭৩ খ্রি., ২৩ জানুয়ারি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং ভিয়েতকং-এর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মার্কিন প্রশাসন তাদের সৈন্য ও পরামর্শদাতাদের ভিয়েতনাম থেকে সরিয়ে নিতে রাজি হয়


উপসংহার: শেষপর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হয়। আত্মপ্রকাশ ঘটে সংযুক্ত, স্বাধীন, সার্বভৌম সমাজবাদী ভিয়েতনাম রাষ্ট্রের


প্রশ্ন8. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রকৃতি আলোচনা করো। এই আন্দোলনের গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তর- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রকৃতি


1 গণবিদ্রোহ: ভারত ছাড়ো আন্দোলন ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ গণবিদ্রোহ। এই বিদ্রোহে শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছিল। বড়োলাট লিনলিথগো এই আন্দোলনের ব্যাপকতা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর এত বড়ো গণবিদ্রোহ ভারতে সংগঠিত হয়নি। ইতিহাসবিদ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন "১৯৪২-এর গণবিদ্রোহ প্রকৃত অর্থেই ছিল সৈনিক যুদ্ধ। সেনাপতি দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন, কিন্তু সৈনিকদের ভূমিকা ছিল এনে গৌরবময় কারণ তাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে শহিদ বহু হয়েছেন।"


2 গণযুদ্ধ: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে নিখিল ভারত কংগ্রেস এক কমিটি আগস্ট আন্দোলনকে গণযুদ্ধ বলে স্বীকার করে নেয়। এই আন্দোলনকে ভারতের মুক্তিসংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায় বলা যায়। অধ্যাপক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর 'পলাশী থেকে পার্টিশান' নামক গ্রন্থে লিখেছেন "ফরওয়ার্ড ব্লক, এ. আই. টি. ইউ. সি., সি. এস. পি এবং এ. আই. কে. এস- এর মতো কংগ্রেস অনুমোদিত ও সহযোগী সংগঠনগুলির পরিচালনায় গত দুই দশকের উগ্র আন্দোলনগুলি গণ অভ্যুত্থানের অনুকূল ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।” সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মতে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে এধরনের ব্যাপক বিদ্রোহ ইতিপূর্বে আর কখনও সংঘটিত হয়নি


3 অহিংস আন্দোলন থেকে বিচ্যুতি: গান্ধিজির অহিংস আদর্শ নীতি মেনে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলেও শেষপর্যন্ত এই আন্দোলন অহিংস আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়। এই পর্বে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস কার্যকরী সমিতির অধিবেশনেও স্বীকার করা হয় যে বহু স্থানেই জনতা কংগ্রেসের গৃহিত অহিংস নীতি থেকে সরে গিয়েছিল। শুধুমাত্র সাধারণ মানুষই নয়, গান্ধিবাদে সমর্থনকারী জাতীয় নেতাদের অনেকেই সহিংস পন্থা মেনে আন্দোলন পরিচালনা করেন। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারে স্বরাষ্ট্র সমরমন্ত্রী ও জাতীয় সেনাদলের সর্বাধিনায়ক সুশীলকুমার ধাড়া নিজের আত্মজীবনী গ্রন্থ। 'প্রবাহ'-তে লেখেন "মেদিনীপুর জেলায় ইংরেজ সরকারের সব কিছু মুছে পুছে দেব। তাতে যে জাতীয় হিংসা হবে বা অহিংসা থেকে বিচ্যুতি হবে তাকে গ্রাহ্য করা হবে না। যেমন-থানা পুড়িয়ে দেওয়া, রাস্তা কেটে বা পুল উড়িয়ে বা ট্রেনলাইন উঠিয়ে পথ অবরোধ করা। থানা বা সরকারি ঘাঁটিতে আগুন দিলে যদি কেউ বা পুড়ে মরে তাকে হিংসা বলে ধরার দরকার নেই।


4 জাতীয়তাবাদী আন্দোলন: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সারা ভারতজুড়ে এক জাতীয় জাগরণ শুরু হয়। ভারত থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়নের লক্ষ্যে সকল ভারতবাসী এক জাতি এক প্রাণ হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সাধারণ কংগ্রেসকর্মী ছাড়াও ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, ছোটো ব্যবসায়ী ও কারিগরাও একত্রিত হয়ে এই আন্দোলনে সামিল হয়। এই আন্দোলন প্রমাণ করে যে স্বাধীনতার জন্য আপামর ভারতবাসী সবধরনের অত্যাচার লাঞ্ছনা মেনে নিতে এমনকি মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত। বড়োলাট লিনলিথগো স্বীকার করেছিলেন যে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের পর ইংরেজরা এর থেকে বড়ো সরকার বিরোধী কোনো প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি। জওহরলাল নেহরু বলেছেন-“নেতা নেই, সংগঠন নেই, উদ্যোগ-আয়োজন কিছু নেই, কোনো মন্ত্র বলা নেই, অথচ একটা অসহায় জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মপ্রচেষ্টার অন্য কোনো পথ না পেয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠল-এ সত্যই বিস্ময়ের ব্যাপার।'

প্রশ্ন9. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি ও অগ্রগতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

উত্তর- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি

1 ক্লিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতা: ক্লিপসের প্রস্তাবে ভারতবাসী অনুভব করেnযে-ইংরেজ সরকার কখনোই স্বেচ্ছায় তাদেরকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবে না। তাই স্বাধীনতা পেতে হলে সরাসরি ইংরেজদের সঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই

2 ব্রিটিশ দমননীতি: শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের জবাব হিসেবে ব্রিটিশ সরকার তার সামরিকবাহিনী দ্বারা ভারতবাসীর ওপর যে অকথ্য নির্যাতন, অত্যাচার চালিয়ে আসছিল তাতে ভারতীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করেছিল

3 দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্যের জোগান কম হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। চালের খুচরো দাম বেড়ে হয় ৩০-৩৫ টাকা প্রতি মণ; কেরোসিন, কাপড়, ওষুধপত্র প্রভৃতি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই অপচেষ্টা আটকাতে তেমন উদ্যোগী হয়নি

4 স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা: অসহযোগ, আইন অমান্য আন্দোলন ভারতবাসীর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে তীব্রতর করে তুলেছিল। ভারতবাসী চেয়েছিল শেষবারের মতো এক সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন গড়ে তুলে ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে

5 শীর্ষ নেতাদের জঙ্গি মনোভাব: ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষ নেতাদের জঙ্গি মানসিকতা, বিশেষত গান্ধিজির অনমনীয় মনোভাব আর-একটি গণ আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছিল। গান্ধিজি দেশবাসীর উদ্দেশে 'করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে' মন্ত্র ঘোষণা করেন। জওহরলাল এ প্রসঙ্গে বলেছেন- "গান্ধিজিকে ইতিপূর্বে আর কখনও এতটা ব্রিটিশবিরোধী হতে দেখা যায়নি।"

 ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অগ্রগতি বা প্রসার

জাতীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎগতিতে আন্দোলন ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। "ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো" ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস আলোড়িত হতে থাকে

1 বাংলায়: বাংলায় আগস্ট আন্দোলনের মূলকেন্দ্র ছিল কলকাতা, ঢাকা, মেদিনীপুর, হুগলি-সহ বিভিন্ন জায়গা। মেদিনীপুর জেলার তমলুক ও কাঁথি মহকুমায় এই আন্দোলন সবচেয়ে তীব্ররূপ ধারণ করেছিল। মাতঙ্গিনী হাজরার নাম এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। তমলুকে গঠিত হয় স্বাধীন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। এ ছাড়াও দিনাজপুর, বীরভূম, ফরিদপুর, বরিশাল, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান প্রভৃতি জেলাতেও আন্দোলন গণচরিত্র লাভ করে। দিনাজপুরের বালুরঘাটে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়

2 বিছারে: বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজাফফরপুর, পূর্ণিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এই আন্দোলন তীব্ররূপ ধারণ করেছিল। ওইসব জায়গায় আন্দোলনকারীরা জাতীয় পতাকা তোলেন। উত্তর ভাগলপুরে এক জাতীয় সরকার গড়ে তোলা হয়। বিহারের ১০টি জেলার অন্তত ৮০ শতাংশ থানা জী। বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়। জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে এবং সিয়ারাম ও পরশুরাম নামক দুই বৈপ্লবিক দলের প্রভাবে আন্দোলন চরমে পৌঁছোয়

3 যুক্তপ্রদেশে: যুক্তপ্রদেশের বালিয়া, আজমগড়, সুলতানপুর, জৌনপুর, গোরক্ষপুর প্রভৃতি জেলায় গান্ধিজির 'করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে' ধ্বনি জনগণকে স্বাধীনতালাভে ব্যাকুল করে। বালিয়া জেলায় চিতু পাণ্ডের নেতৃত্বে জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে

4 ওড়িশায়: ওড়িশার বালেশ্বর, তালচের, কোরাপুট, কটকে বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল ছাত্ররা। কোরাপুটে লক্ষ্মণ নায়েকের নেতৃত্বে উপজাতি কৃষকরা সক্রিয় হয়। তালচেরে 'চাব্বি মল্লা রাজ' কায়েম হয়

5 অন্যান্য অঞ্চলে: মধ্যপ্রদেশের নাগপুর, অমরাবতী, বান্দ্রা, বেতুল ছিল এই আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র। মদনলাল বাগড়ি নাগপুর 'হিন্দুস্থান রেড আর্মি' গঠন করেন। আসামের গোয়ালপাড়া, তেজপুর, বরপোতা অঞ্চলে, কেরলের কালিকটে, মাদ্রাজের মাদুরায় এই আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়ে

10. কোন্ পরিস্থিতিতে ক্রিপস ভারতে আসে? ক্রিপসের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে ভারতীয়দের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়?

উত্তর-

প্রশ্ন11.লিনলিথগো প্রস্তাব সম্বন্ধে আলোচনা করো

উত্তর- সূচনা: ব্রিটিশ সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয়দের সাহায্য লাভের লক্ষ্যে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। এই লক্ষ্যপূরণের জন্য বড়োেলাট লিনলিথগো সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং কিছু প্রস্তাব পেশ করেন যা লিনলিথগো প্রস্তাব নামে পরিচিত

লিনলিথগো প্রস্তাব

1 প্রেক্ষাপট: এইসময় ভারতের বড়োেলাট লিনলিথগো একতরফা ঘোষণায় বলেন যে ভারত ব্রিটেনের পক্ষে বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হল যে লিনলিথগো ভারতীয় নেতৃবর্গ বা কেন্দ্রীয় আইনসভার সঙ্গে কোনোরকম পরামর্শ না করেই এই ঘোষণা করে দেন। তাই লিনলিথগোর এই ঘোষণায় ভারতের জনগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন

2 কংগ্রেসের শর্তাধীন সহযোগিতার সিদ্ধান্ত: লিনলিথগোর ঘোষণার প্রতিবাদে জাতীয় কংগ্রেস মন্ত্রীসভাগুলি থেকে পদত্যাগ করে। তবে কংগ্রেস ব্রিটিশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পথ খোলা রাখে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি এক প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাবে ব্রিটেনের পক্ষ অবলম্বনের ব্যাপারে কংগ্রেস দুটি শর্তের উল্লেখ করে। প্রথম শর্তে বলা হয়, কেন্দ্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। আর দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়, ব্রিটিশকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে যুদ্ধ শেষে তারা ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান করবে। জাতীয় কংগ্রেসের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হয় বামপন্থী গোষ্ঠীগুলি

3 ব্রিটিশের বিভেদকামী ভূমিকা: বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ব্রিটিশ ভারতে মুসলিম লিগকে অধিক গুরুত্ব দিতে শুরু করে। বিশেষত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লিগের বিদ্বেষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্রিটিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে লিগ ও কংগ্রেসের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে ওঠে

4 লিনলিথগোর আগস্ট প্রস্তাব: গভর্নর জেনারেল এক ঘোষণায় বলেন (১৯৪০ খ্রি., ৮ আগস্ট)- [i] ব্রিটিশ সরকার ভারতে ডোমিনিয়ন ধরনের এক দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে ইচ্ছুক। [ii] ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের কোনো পরিবর্তন করার আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরামর্শ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন দল, সম্প্রদায় এবং দেশীয় রাজাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে। [iii] ভারতে একটি যুদ্ধ উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে

5 কংগ্রেসের রামগড় অধিবেশন: কংগ্রেসের রামগড় অধিবেশনে (১৯৪০ খ্রি., মার্চ) লিনলিথগোর প্রস্তাব সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাই রামগড় অধিবেশনে স্থির হয়- [i] সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জাতীয় কংগ্রেস অংশ নেবে না। [ii] ডোমিনিয়নের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা হবে। [iii] গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে। [iv] জাতীয় কংগ্রেস সাংগঠনিকভাবে নিজেদেরকে প্রস্তুত করবে এবং সংকট তৈরি হলে আইন অমান্য করবে

6 মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশন: মুসলিম লিগ কংগ্রেসের গণপরিষদ গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করে। লিগ আশঙ্কিত হয় এই ভেবে যে, প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গণপরিষদ বা সংবিধান সভা গঠিত হলে জাতীয় কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব বা প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এ সময়কালে মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশনে মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ফলে জাতীয় রাজনীতি এক জটিল আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়

7 সমালোচনা-

প্রথমত, এই প্রস্তাবে ভারতকে পূর্ণ স্বাধীনতাদানের ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো উল্লেখ ছিল না। বলা হয়েছিল যুদ্ধ শেষে ভারতকে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের মধ্যে একটি ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়া হবে

ই দ্বিতীয়ত, এই প্রস্তাবে সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এই অহেতুক প্রতিশ্রুতিদান আসলে জিন্নার পাকিস্তান দাবিকেই সমর্থন করেছিল বলা চলে। তাই এই প্রস্তাবকে কংগ্রেস হতাশাজনক বলে সমালোচনা করে

৪ ফলাফল

গান্ধিজির ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহ: জাতীয় কংগ্রেস দ্বারা আগস্ট প্রস্তাব। সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। বড়োলাট লিনলিথগোর ঘোষণায় আপত্তি - তুলে গান্ধিজি ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহের উদ্যোগ নেন। কংগ্রেস কার্যকরী সমিতির অনুমোদনের পর প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিগুলি এবং কংগ্রেসের সাধারণ কর্মীগণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নেয়


উপসংহার: কংগ্রেস ছাড়াও লিগ-সহ অন্যান্য দলগুলিও ব্রিটিশের বিরোধিতা শুরু করে। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে এক অচলাবস্থা তৈরি হল। জাতীয় রাজনীতির এই অচলাবস্থা দূর করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল এই প্রস্তাবের কিছু অংশ সংশোধন করে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ক্লিপস মিশনকে ভারতে পাঠান


👉Paid Answer ( For Membership User)


Editing by-Rita Moni Bora