অধ্যায় ৭

  ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ

-----------------------------------


MCQs


1. পড্রাম সম্মেলনে যে সংকটের বীজ বোনা হয়, তা হল-

(A) সুয়েজ সংকট

(B) ভিয়েতনাম সংকট

(C) বার্লিন সংকট

(D) কঙ্গো সংকট


উত্তর: (C) বার্লিন সংকট


2. পট্সডাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল-

(A) ১৯৪৩ সালে

(B) ১৯৪৪ সালে

(C) ১৯৪৫ সালে

(D) ১৯৪৬ সালে


উত্তর:(C) ১৯৪৫ সালে


3. বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা ঘটান-

(A) বুজভেল্ট

(B) ট্রুম্যান

(C) কেনেডি

(D) রেগন


উত্তর:(B) ট্রুম্যান


4. Churchill's Secret War- গ্রন্থটির রচয়িতা-

(A) মধুশ্রী মুখার্জী

(B) চার্চিল

(C) গান্ধিজি

(D) আর. সি. মজুমদার


উত্তর:(A) মধুশ্রী মুখার্জী


5. হ্যারি ট্রুম্যান ছিলেন মার্কিন-

(A) প্রধানমন্ত্রী

(B) অর্থমন্ত্রী

(C) রাষ্ট্রপতি

(D) কোনোটিই নয়


উত্তর:(C) রাষ্ট্রপতি


6. ফুলটন বক্তৃতা দিয়েছিলেন-

(A) চার্চিল

(C) স্ট্যালিন

(D) কেন্নান


উত্তর:(A) চার্চিল


7. ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবলুপ্তি-

(A) আঁতাত নামে পরিচিত  

(B) অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত

(C) দাঁতাত নামে পরিচিত

 (D) মৈত্রী নামে পরিচিত


উত্তর:(C) দাঁতাত নামে পরিচিত


8. 'দাঁতাত' কথার অর্থ হল-

(A)  ঠান্ডা লড়াই

(B) বিদ্রোহ

(C) উত্তেজনা প্রশমন

 (D) উত্তেজনা বৃদ্ধি


উত্তর:(C) উত্তেজনা প্রশমন


9. 17° সমাক্ষরেখায় বিভক্ত দেশটি হল- 

(A) কোরিয়া

(B) ভিয়েতনাম

(C) মায়ানমার

 (D) চিন


উত্তর:(B) ভিয়েতনাম


10. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির প্রবক্তা ছিলেন-

(A) বুলগানিন 

(B) ক্রুশ্চেভ

(C) ব্রেজনেভ

 (D) গর্বাচেভ 


উত্তর:(B) ক্রুশ্চেভ


11. জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে যুক্ত ছিল না-

(A) ভারত

(B) মিশর

(C) ফ্রান্স

(D) যুগোশ্লাভিয়া


উত্তর:(C) ফ্রান্স


12. নির্জেটি আন্দোলনের সূচনাকারী সম্মেলনটি ছিল—

(A) বান্দুং

(B) হাভানা

(C) কলম্বো

(D) নিউ দিল্লি


উত্তর:(A) বান্দুং


13. প্রথম নির্জেটি বেলগ্রেড সম্মেলনে-

(A) ২০টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে

(B) ২৫টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে

(C) ৩০টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে

(D) ৩৫টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে


উত্তর:(B) ২৫টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে


14. প্রথম নির্জেটি বেলগ্রেড সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন-

(A) জোসেফ টিটো

(B) নাসের

(C) কেনেথ কাউন্ডা

(D) মেনন


উত্তর:(A) জোসেফ টিটো


15. ২৭ দফা দাবি পেশ করা হয়েছিল কোন্ সম্মেলনে?

(A) বান্দুং

(B) বেলগ্রেড

(C) তেহরান

(D) নতুন দিল্লি


উত্তর:(A) বান্দুং


16. লুসাকা নিজোট সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে কিছু কর্মসূচি স্থির করা হয়, যেমন-

(A) আর্থিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি

(B) নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কিছু কর্মসূচি গ্রহণ

(C) বিশ্বায়নের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ

(D) বাণিজ্যায়নের লক্ষ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রকল্প গ্রহণ


উত্তর:(A) আর্থিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি


17. মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি পেট্রোপণ্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যে সংগঠনটি গঠন করে তার নাম হল-

(A) কমিকন

(B) ওয়ারশ

(C) ওপেক

(D) আরব লিগ


উত্তর:(C) ওপেক


18. সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করেন-

(A) নাসের

(B) টিটো

(C) চার্চিল

(D) নেহরু


উত্তর:(B) টিটো


19. জিওনিস্টদের সংগঠনের সভাপতি ছিলেন-

(A) বেন গুরিয়ান

(B) ওয়াইজম্যান

(C) আরাফত

(D) নাসের


উত্তর:(C) আরাফত


20. আরব-ইজরায়েল সংঘর্ষ চলাকালীন মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের টিরান প্রণালী দিয়ে-

(A) ইরাকের জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেন

(B) লেবাননের জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেন

(C) ইজরায়েলের জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেন

(D) জর্ডনের জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেন


উত্তর:(C) ইজরায়েলের জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেন


শূন্যস্থান পূরণ করো


1. ফিদেল কাস্ত্রো              রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।

(A) ব্রাজিলের

(B) বলিভিয়ার

(C) কিউবার

(D) চিলির


উত্তর:(C) কিউবার


2. ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েতনামে ভিয়েতকংদের গণ অভ্যুত্থানের ফলে                 |

(A) দিয়েম সরকারের পতন ঘটে

(B) নগুয়েন সরকারের পতন ঘটে

(C) চিয়াং সরকারের পতন ঘটে

(D)  কিম ইল সুঙ সরকারের পতন ঘটে


উত্তর:(A) দিয়েম সরকারের পতন ঘটে


3.              দেশের উত্তর-পূর্বদিকে সুয়েজ খাল অবস্থিত।

(A) স্পেন

(B) হল্যান্ড

(C) পোর্তুগাল

(D) মিশর


উত্তর:(D) মিশর


4. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ             খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়।

(A) ১৯৪৪

(B) ১৯৪৫

(C) ১৯৪৬

(D) ১৯৪৮


উত্তর:(B) ১৯৪৫


5.              সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে জার্মানিকে ৪ টি পৃথক অঞ্চলে ভাগ করা হয়।

(A) ইয়াল্টা

(B) পটস্ডাম

(C) প্যারিস

(D) ওয়াশিংটন


উত্তর:(B) পটস্ডাম


6. পটস্ডাম সম্মেলন আয়োজিত হয়                

(A) জাপানে

(B) চিনে

(C) জার্মানিতে

(D) ইটালিতে


4. 'First Lightning' নামে         পরিচিত।

(A)  সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম সফল পারমাণবিক বিস্ফোরণ

(B) আমেরিকা কর্তৃক হিরোসিমায় বোমা বিস্ফোরণ 

(C) আমেরিকার প্রথম সফল পারমাণবিক বিস্ফোরণ

 (D) ভারতের পোখরানে প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ


উত্তর(A)  সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম সফল পারমাণবিক বিস্ফোরণ


5.          'বাগদাদের কসাই' নামে নিন্দিত হন।

(A) সাদ্দাম হুসেন

(B) হোসনি মোবারক

(C) ফিদেল কাস্ত্রো

 (D) আয়াতোল্লা খোমেইনি


উত্তর:(A) সাদ্দাম হুসেন


6. দলাই লামা হলেন             |

(A) রাজনীতিবিদ

(B) ধর্মগুরু

(C) খেলোয়াড়

 (D) অভিনেতা


উত্তর:(B) ধর্মগুরু


7.            খ্রিস্টাব্দে দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটে।

(A) ১৯৫১

(B) ১৯৫২

(C) ১৯৫৩

 (D) ১৯৫৪


উত্তর:(A) ১৯৫১


8.             'নক্ষত্র যুদ্ধ' (Star-War)-এর কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 

(A) মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার

(B) রুশ রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচেভ

(C) বুশ রাষ্ট্রপতি ব্রেজনেভ 

(D) মার্কিন রাষ্ট্রপতি রেগান


উত্তর:(D) মার্কিন রাষ্ট্রপতি রেগান


9. মলোটভ ছিলেন           |

(A) সোভিয়েত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

(B) সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী

(C) সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত

(D) সোভিয়েত অর্থমন্ত্রী


উত্তর: (B) সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী


সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা


1. কখন দ্বিমেরু বিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল?


উত্তর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী জোট গড়ে উঠলে দ্বিমেরু বিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল।



2. ইয়াল্টা সম্মেলন কেন ডাকা হয়? অথবা, ইয়াল্টা সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর ইয়াল্টা সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল- [i] বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, [ii] যুদ্ধের পর জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা, [iii] পোল্যান্ডের সমস্যার সমাধান করা প্রভৃতি।



3. কবে, কী উদ্দেশ্যে মেডো গঠিত হয়? অথবা, CENTO কী?


উত্তর- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্যে বুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করা এবং এখানকার তৈলসম্পদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকার মদতে মধ্যপ্রাচ্যে গঠিত হয় মেডো যার পরে নাম হয় CENTO



4. ট্রুম্যান নীতি কী?


উত্তর- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস-সহ বিশ্বের যে-কোনো দেশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন, যা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত।



5. ট্রুম্যান কে ছিলেন?


উত্তর- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ছিলেন হ্যারি ট্রুম্যান।



6. কেন্নানের বেষ্টনী নীতি কী? 'অথবা' বেষ্টনী নীতি কী?


উত্তর- রাশিয়ায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান এক প্রবন্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার এবং সোভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার যে নীতি  পেশ করেন, তা কেন্নানের বেষ্টনী নীতি নামে পরিচিত।



7. কোন্ প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে শান্তির লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রস্তাব পেশ করে?


উত্তর: সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন প্রথমে আণবিক বোমা আবিষ্কার করে, পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন আরও শক্তিশালী, হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কার করে। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে শান্তির লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রস্তাব পেশ করেন।



প্রশ্ন:৪. ইউরেটম (EURATOM) কী?


উত্তর: ইউরেটম হল ইউরোপীয় আণবিক শক্তি কমিউনিটি। ইউরোপের পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলির উদ্যোগে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়।



প্রশ্ন:9. বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত কয়েকটি চুক্তি উল্লেখ করো।


উত্তর: পরমাণু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় একাধিক চুক্তি। যথা, দক্ষিণ মেরু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় আন্টার্কটিকা চুক্তি এবং দক্ষিণ আমেরিকাকে অস্ত্রমুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় ল্যাটেলোলকো (Tlatelolco) চুক্তি। এ ছাড়াও মার্কিন ও সোভিয়েত উভয়ের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় SALT-1 SALT-2 চুক্তি।



প্রশ্ন:10. SDI (Strategic Defence Initiative) কর্মসূচিটি কী?


উত্তর: মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান সোভিয়েত আক্রমণরোধের লক্ষ্যে এক নতুন প্রতিরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রকে মহাকাশেই ধ্বংস করে ফেলার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যে কর্মসূচি গৃহিত হয় তার নাম SDI (Strategic Defence Initiative) 



রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর বা LAQ


প্রশ্ন1. পটড্রাম সম্মেলন ও ইয়াল্টা সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।


উত্তর:  টস্ডাম সম্মেলন


পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে যেসব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পটস্ডাম সম্মেলন। জার্মানির রাজধানী বার্লিনের পাশে পটড্রাম শহরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী চলা এই সম্মেলনে মিলিত হন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যান, সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক ই. স্টালিন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল।


আলোচ্য বিষয়


i. জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায়।


ii. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জার্মানির সমাজব্যবস্থার পুনর্গঠন।


iii. ইয়াল্টা সম্মেলনের ঘোষণাপত্রগুলির মূল্যায়ন।


iv. পোল্যান্ডের পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারণ।


গৃহীত সিদ্ধান্ত


i. ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে। এই কাউন্সিল জার্মানি, ইতালি, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও ফিনল্যান্ডের সঙ্গে শান্তি চুক্তির খসড়া তৈরি করবে।


ii. জার্মানিকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয় যে, জার্মান জাতির স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে। এর পাশাপাশি জার্মানিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা, রাজনৈতিক দলগুলির অস্তিত্ব রক্ষা, নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে।


iii. জার্মানির সমরবাদ ও নাৎসিবাদের সম্পূর্ণরূপে অবসান ঘটানো হবে এবং সামরিক শিক্ষাকেন্দ্র ও নাৎসি প্রতিষ্ঠানগুলির অস্তিত্ব বিলোপ করা হবে।


iv. জার্মানিতে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হয় এমন কারখানাগুলি মিত্রপক্ষ নিজেদের অধিকারে নিয়ে আসবে।


v. আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে জার্মানির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে।


vi. পূর্ব প্রাশিয়াকে ভেঙে এর পশ্চিমাঞ্চল পোল্যান্ডকে দেওয়া হবে। আর অবশিষ্ট অংশ সোভিয়েত রাশিয়া পাবে।


vii. জার্মানির নৌবহরগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত রাশিয়া ও ব্রিটেন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে।


viii. জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করবে মিত্রপক্ষ নিযুক্ত কমিশন।


ইয়াল্টা সম্মেলন


পটভূমি: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষ্ণসাগরের পাশে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইয়াল্টা নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আর সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক স্টালিন।


আলোচ্য বিষয়


i. জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা।


ii. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন করা।


iii.বিশ্বে আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এক আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করা।


iv. রাশিয়ার দাবিমতো নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা।


v. দূরপ্রাচ্যের যুদ্ধে রাশিয়ার যোগদানের গুরুত্ব পর্যালোচনা করা।


vi. পোল্যান্ডের সীমানা ও ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রশ্নের সমাধান করা।


গৃহীত সিদ্ধান্ত 


i.জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ


[a] স্থির হয় নাৎসিবাদের কবল থেকে জার্মানবাসীকে মুক্ত করা হবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে।


[b] জার্মানির রাজধানী বার্লিনকেও চার ভাগ করে পশ্চিমাংশ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে এবং পূর্বাঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলা হয়। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার ভাগ থেকে ফ্রান্সকে কিছুটা অংশ দেওয়া হবে বলেও ঠিক হয়।


[c] স্থির হয় নবগঠিত জার্মানির শাসনতান্ত্রিক আইনকানুন আন্তর্জাতিক আইনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।


[d] সিদ্ধান্ত হয় জার্মানির অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে মিত্রপক্ষ।


[e] যুদ্ধে জার্মানি মিত্রপক্ষের যে ক্ষয়ক্ষতি করেছিল তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানির কাছ থেকে আপাতত ২০ মিলিয়ন ডলার আদায় করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।


ii. রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি


[a] রাষ্ট্রসংঘের সংবিধান রচনার জন্য আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে = মিত্রপক্ষের সকল দেশ এপ্রিল মাসে মিলিত হবে।


[b] রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলি ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা পাবে।


[c] নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ অছি পরিষদের রাষ্ট্রগুলির ব্যাপারে আলোচনা করতে পারবে।


iii. পোল্যান্ড নীতি


[a] ঠিক হয় দু-টুকরো পোল্যান্ডকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেওয়া হবে।


[b] পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সীমানা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য জার্মানির উত্তর-পশ্চিম দিকের ভূখণ্ড পাবে পোল্যান্ড।


iv. রাশিয়ার প্রাপ্তি


[a] দক্ষিণ মাঞ্জুরিয়ার রেলপথ ব্যবহারের অধিকার।


[b] কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ, শাখালিনের দক্ষিণাংশ এবং তার নিকটবর্তী উপদ্বীপ।


[c] দাইরেনের বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেখানে রাশিয়াকে বিশেষ সুযোগসুবিধা ও অধিকার প্রদান করা হয়।


[d] পোর্ট আর্থারকে নৌ-ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে ৯১ বছরের লিজের অধিকার প্রদান করা হয়।


প্রশ্ন2. ঠান্ডা লড়াই কাকে বলে? এর পটভূমি লেখো?

অথবা, 'ঠান্ডা লড়াই' কাকে বলে? কোন্ পরিস্থিতিতে 'ঠান্ডা লড়াই'-এর উদ্ভব হয়?

অথবা, ঠান্ডা যুদ্ধ বলতে কী বোঝ? কোন্ পরিস্থিতিতে ঠান্ডা যুদ্ধের উদ্ভব হয়?

অথবা, ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায়? কোন্ পরিস্থিতিতে ঠান্ডা লড়াই এর উদ্ভব হয়?

অথবা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে পৃথিবীতে ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভবের কারণগুলি উল্লেখ করো।


 উত্তর: ঠান্ডা লড়াই

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে একদিকে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট, অপরদিকে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য গড়ে তোলার জন্য এই দুই রাষ্ট্রজোটের মধ্যে যে গোপন লড়াই শুরু হয় তা ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত।

 

ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি/ঠান্ডা লড়াই উদ্ভবের পরিস্থিতি

 

1 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী পর্যায়: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবকে দমন করার জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগোষ্ঠী (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান) জারতন্ত্রের সমর্থনে রাশিয়ায় সেনা পাঠায়। সমাজতন্ত্রকে সূচনাকালেই শেষ করে দেওয়া ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কাজেই রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকেই বিশ্বে 'দ্বিমেরুকরণ রাজনীতি'র জন্ম হয়।

 

2 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পর্যায়

 

i. দ্বিতীয় রণাঙ্গনের ভূমিকা: যুদ্ধ চলাকালে জার্মানির প্রবল আক্রমণে দিশাহারা সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিমি জোটের কাছে জার্মানির বিরুদ্ধে পশ্চিম ইউরোপে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার অনুরোধ রাখে। কিন্তু এই অনুরোধকে নিয়ে চার্চিলের দুমুখো নীতি স্টালিনকে কুদ্ধ করে তোলে।

 

ii. পটস্ডাম সম্মেলন: জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ নিয়ে সোভিয়েত ও মার্কিন মতবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে। পটড্রাম সম্মেলন থেকেই ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে আসে।

 

3 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়

 

i. চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা: ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনে ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে এক ভাষণে (১৯৪৬ খ্রি., ৫ মার্চ) বলেন, উত্তর বালটিক সাগরের তীরবর্তী স্টেটিন থেকে দক্ষিণ অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের ট্রিয়েস্ট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল লৌহ যবনিকার (সোভিয়েত) আড়ালে ঢাকা। ফালটন বক্তৃতায় চার্চিল রুশ আগ্রাসন থেকে ইউরোপীয় সভ্যতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্পণ করেন।

 

ii. কেন্নানের বেষ্টনী তত্ত্ব: রাশিয়ায় কর্মরত প্রাক্তন সহকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান, মি. এক্স ছদ্মনামে আমেকিার 'ফরেন অ্যাফেয়ার্স' নামে পত্রিকায় এক প্রবন্ধে সোভিয়েতের আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার জন্য এবং সোভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য 'বেষ্টনী তত্ত্ব' (১৯৪৭ খ্রি., ৪ জুলাই) প্রকাশ করেন, যা মার্কিন প্রশাসন মেনে নেয়।

 

iii. ট্রুম্যান নীতি: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস-সহ বিশ্বের যে-কোনো দেশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন, যা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক আইজ্যাক ডয়েস্টার ট্রুম্যান নীতিকে ঠান্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বলে অভিহিত করেছেন।

 

iv. মার্শাল পরিকল্পনা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী জর্জ মার্শাল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা পেশ করেন, যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত। ইউরোপে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা নিয়ে ট্রুম্যান নীতির পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপিত হয় এই মার্শাল পরিকল্পনা। ফলে আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে ঠান্ডা লড়াই।

 

v. সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠন : সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করে কমিকন (COMECON বা Council for Mutual Economic Assistance) নামে একটি আর্থিক সহায়তা পরিষদ। মার্শাল পরিকল্পনার প্রত্যুত্তর হিসেবে কমিকন গঠিত হয়েছিল।

চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বালগেরিয়া, আলবানিয়া ও পূর্ব জার্মানি) নিয়ে গঠিত হয় ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা (Warsaw Pact Organisation, WPO), যা ছিল একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

 

প্রশ্ন3. ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করো।


 উত্তর:  সূচনা: মার্কিন যুক্তিরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রজোটের মধ্যে সংঘটিত ঠান্ডা যুদ্ধের চরি বা এই যুদ্ধের দায়বদ্ধতা নিয়ে ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রতত্ত্ববিদদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী ধারণা লক্ষ করা যায়। এই পরস্পরবিরোধী ধারণাগুলিই হল ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণা।

 

ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাসমূহ


1.চিরায়ত বা ঐতিহ্যবাহী ধারণা


1. সমর্থকগণ: ঐতিহ্যবাহী ধারণার সমর্থকগণ হলেন-মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ, কেন্নান, হার্বার্ট ফিস, ম্যাক্সিম লিটভিনভ, জন স্পেনিয়ার, উইলিয়াম এইচ. ম্যাকলিন, মার্টিন ম্যাককাউলে, জে.

আর. ম্যাককারথি, জন ডব্লিউ. ম্যাসন প্রমুখ।

 

ii. মূল বক্তব্য: ঐতিহ্যবাহী ধারণার মূল বক্তব্য হল-ঠান্ডা লড়াইয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা সোভিয়েত ইউনিয়নই বেশি দায়ী। এই ধারণা অনুযায়ী মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের শ্রেণিসংগ্রাম থেকেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা ঘটেছে। এই মতামত অনুসারে রাশিয়া তার কমিউনিস্ট জগতের পরিধি বাড়াতে চেয়েছিল, আর তা করতে গিয়ে রাশিয়া অকমিউনিস্ট দেশগুলির প্রতি মিত্রতামূলক সম্পর্ক নষ্ট করে। রাশিয়ার এই অগ্রগতি প্রতিরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সচেষ্ট হলে বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা ঘটে।

 

2 সংশোধনবাদী ধারণা

 

i.সমর্থকগণ: ঠান্ডা যুদ্ধে সংশোধনবাদী তাত্ত্বিক ধারণার পথপ্রদর্শক ছিলেন ওয়াল্টার লিপম্যান। এই ধারণার অন্যান্য কয়েকজন সমর্থক ছিলেন ডি. এফ. ফ্লেমিং, গ্যাব্রিয়েল কলকো, গার অ্যালপারোভিজ, হেনরি এ. ওয়ালেস, ওলিভার এডওয়ার্ডস, উইলিয়াম অ্যাপেলম্যান উইলিয়ামস, ওয়াল্টার লেফেভর, নরম্যান গ্রেবনের ডেভিড হরোউইজ, লয়েড গার্ডনার প্রমুখ।

 

ii. মূল বক্তব্য: সংশোধনবাদী তাত্ত্বিক ধারণার সমর্থকগণের মূল বক্তব্য হল-সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণশীল নীতি নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতি ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল। এই ধারণা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করতে না পেরে নিজস্ব প্রভাবাধীন অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটাতে শুরু করে ও ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।

 

3 বাস্তববাদী ধারণা

 

i. সমর্থকগণ: ঐতিহ্যবাহী এবং সংশোধনবাদী উভয় ধারণার মধ্যবর্তী অবস্থান গ্রহণ করে একদল গবেষক, ঐতিহাসিক ঠান্ডা যুদ্ধের যে তত্ত্ব পেশ করেছেন তা 'বাস্তববাদী তত্ত্ব' নামে পরিচিত। এই তত্ত্বের কয়েকজন সমর্থক হলেন হ্যানস্ জে. মরগ্যানথাউ, লুই জে. হ্যালে, রিচার্ড ব্রুকেট, জন লুইস গ্যাডিস প্রমুখ।

 

ii. মূল বক্তব্য: বাস্তববাদী ধারণার সমর্থকেরা ঠান্ডা যুদ্ধের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো-একটি পক্ষকে চূড়ান্তভাবে দায়ী করায় বিশ্বাসী নন। এঁদের ধারণায় ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনার জন্য সোভিয়েত বা মার্কিন উভয়পক্ষই দায়ী ছিল অথবা কোনো পক্ষই দায়ী ছিল না।

 

4.অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাখ্যা: কেউ কেউ মনে করেন যে, ঠান্ডা লড়াই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের অন্যতম দিক। গ্যাব্রিয়েল কলকো, কর্ডেল প্রমুখ এই অভিমতের সমর্থক। গ্যাব্রিয়েল কলকো দেখিয়েছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। আমেরিকা তার এই আর্থিক শক্তিকে ব্যবহার করে বিশ্ব-অর্থনীতির প্রধান চালকের আসন লাভের চেষ্টা করেছিল। এই লক্ষ্যে আমেরিকা তার বিদেশনীতিতে পরিবর্তন ঘটায়। মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ অর্থসাহায্য দিয়ে আমেরিকা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে নিজেকে পরিত্রাতা হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বৈদেশিক ক্ষেত্রে আমেরিকার অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের প্রধান বাধা ছিল সোভিয়েত রাশিয়া।

 

উপসংহার: রাশিয়া ও তার অনুগত রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে আমেরিকা একপ্রকার ক্রুসেড ঘোষণা করে। এর ফলেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত ঘটে।

 

প্রশ্ন4. ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায়? ঠান্ডা লড়াই-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করো।

অথবা, 'ঠান্ডা লড়াই' বলতে কী বোঝায়? এর উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যাগুলি আলোচনা করো।

  উত্তর: 


প্রশ্ন5. ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্রমবিকাশের ওপর আলোকপাত করো।

 

  উত্তর:   সূচনা: রুশ নেতা স্টালিনকে বাদ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল আটলান্টিক সনদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বিশ্ব ব্যবস্থাকে গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেন। আটলান্টিক সনদের ঘোষণা (১৯১৪ খ্রি., ১৪ আগস্ট)-কে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ও পশ্চিমি রাষ্ট্রজোটের পারস্পরিক দূরত্ব বাড়ে, যা পরবর্তীকালে ঠান্ডা লড়াইয়ের পথকে প্রশস্ত করে।

 

ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্রমবিকাশ (১৯৪২-৪৮ খ্রি.)

 

1 ইরান নিয়ে মতপার্থক্য: পারস্যের তৈলসম্পদ যাতে অক্ষশক্তি হস্তগত করতে না পারে সেই লক্ষ্যে গ্রেট ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পারস্যের মধ্যে এক ত্রি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি বলে দক্ষিণাঞ্চলে ব্রিটিশ এবং উত্তরাঞ্চলে সোভিয়েত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও স্থির হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে দুই দেশ পারস্য থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। পরে পারস্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রুশ হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে পারস্য রাষ্ট্রসংঘে অভিযোগ জানালে দুই (পারস্য ও রাশিয়া) দেশের মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের মধ্যস্থতায় এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (এপ্রিল, ১৯৪৬ খ্রি.)। স্থির হয় ২৫ বছরের জন্য উত্তর পারস্যের তৈল সম্পদের ওপর রুশ অধিকার স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু ১৯৪৭ খ্রি. নবগঠিত পারস্যের পার্লামেন্ট (মজলিস) এই চুক্তি বাতিল করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্যের বিনিময়ে তার সঙ্গে পারস্য নতুন করে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এই চুক্তির ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্যকে সামরিক ও অসামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ নিয়ে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির সূচনা হয়।

 

2 দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্নে মতভেদ: দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্নে রাশিয়া উদ্‌দ্বিগ্ন হয়ে পড়লে চার্চিল ঘোষণা (১৯৪২ খ্রি., মে) করেন, "১৯৪২-এর আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন মহাদেশীয় ভূখণ্ডে (ইউরোপের কোনো স্থানে) অবতরণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।" কিন্তু ঘোষণার কিছু দিন পরে (১৯৪২ খ্রি., জুলাই) ব্রিটেন ইউরোপে দ্বিতীয় রণাঙ্গনের পরিকল্পনা ত্যাগ করে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কায়রো ও তেহরান বৈঠকে চার্চিল, রুজভেল্ট ও স্টালিন দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কোথায় দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলা হবে, তা নিয়ে মতবিরোধ শুরু হয়।

 

3 গ্রিস সমস্যা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন হিটলারের নেতৃত্বে জার্মান সেনাবাহিনী গ্রিস দখল করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ বাহিনী গ্রিসকে জার্মান-মুক্ত করে (১৯৪৪ খ্রি.)। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে গ্রিসকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মোকাবিলার লক্ষ্যে গ্রেট ব্রিটেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চায়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান গ্রিসে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য পাঠান। ফলে রাশিয়া এবং পশ্চিমি শক্তিবর্গের মধ্যে অবিশ্বাস ও পারস্পরিক বিদ্বেষ বেড়ে যায়।


4
তুরস্ক বিরোধ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের শেষার্ধে রাশিয়া তুরস্কের পূর্বদিকে অবস্থিত প্রদেশের ওপর তার দাবি জানায়। কৃষ্ণসাগরের কাছাকাছি সমস্ত দেশের কাছে দার্দানালিকা প্রণালী উন্মুক্ত রাখার কথা বলা হয়। এ ছাড়া কৃষ্ণসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত নয় এমন দেশের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া দার্দানালিকা প্রণালীতে যুদ্ধজাহাজ যাতায়াতের ওপর নি

 

প্রশ্ন6. ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায়? ঠান্ডা লড়াই-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করো।

অথবা, 'ঠান্ডা লড়াই' বলতে কী বোঝায়? এর উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যাগুলি আলোচনা করো

  উত্তর: 

  


 👉Paid Answer ( For Membership User)

 

Editing by- Rita Moni Bora