অধ্যায় ৮
অব-উপনিবেশীকরণ
MCQs
1. অব-উপনিবেশীকরণের পরবর্তী আন্তর্জাতিক সংঘাত কোনটি?
(A) আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ
(B) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
(C) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
(D) ভিয়েতনামের যুদ্ধ
উত্তর- (D) ভিয়েতনামের যুদ্ধ
2. দক্ষিণ এশিয়ার একটি সহযোগিতা সংস্থা হল-
(A) সার্ক
(B) আসিয়ান
(C) আরব লিগ
(D) ন্যাটো
উত্তর- (A) সার্ক
3. প্যালেস্টাইন কাদের উপনিবেশ ছিল?
(A) হল্যান্ডের
(B) পোর্তুগালের
(C) ফ্রান্সের
(D) ব্রিটেনের
উত্তর- (D) ব্রিটেনের
4. রোয়ান্ডা কাদের উপনিবেশ ছিল?
(A) পোর্তুগালের
(B) বেলজিয়ামের
(C) ফ্রান্সের
(D) ইটালির
উত্তর- (B) বেলজিয়ামের
5. কার নেতৃত্বে গোল্ড কোস্ট স্বাধীনতা অর্জন করে?
(A) লুমুম্বা
(B) নকুমা
(C) ময়েশ শাম্ব
(D) রুজভেল্ট
উত্তর- (B) নকুমা
6. কবে অব-উপনিবেশীকরণের গতি সবচেয়ে তীব্র হয়?
(A) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে
(B) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে
(C) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে
(D) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর
7. আব্দ-আল-কাদির কবে আত্মসমর্পণ করেন?
(A) ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর- (A) ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে
8. আলজেরিয়া কবে স্বাধীনতা লাভ করে?
(A) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর- (B) ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে
9. জেকুইস ম্যাসু কে ছিলেন?
(A) রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
(B) বেলজিয়ান সেনাপতি
(C) ব্রিটিশ কনসাল
(D) ফরাসি জেনারেল
উত্তর- (D) ফরাসি জেনারেল
10. আলজেরিয়ার সুতীব্র স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়-
(A) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে
5. পূর্ববঙ্গে বাংলাভাষী মানুষের সংখ্যা ছিল আনুমানিক-
(A) ৬৫ শতাংশ
(B) ৭৭ শতাংশ
(C) ৮৮ শতাংশ
(D) ৯৮ শতাংশ
উত্তর- (D) ৯৮ শতাংশ
6. ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার কোন্ রাষ্ট্রকে দেউলিয়া রাষ্ট্র ঘোষণা করে?
(A) ভারত
(B) বাংলাদেশ
(C) কঙ্গো
(D) ইথিওপিয়া
উত্তর- (A) ভারত
7. পূর্ববঙ্গে স্বাধীনতার দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের-
(A) জানুয়ারি মাসে
(B) ফেব্রুয়ারি মাসে
(C) মার্চ মাসে
(D) এপ্রিল মাসে
উত্তর- (C) মার্চ মাসে
৪. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামি ছিলেন-
(A) বরফত
(B) সালাম
(C) জব্বর
(D) মুজিবুর রহমান
উত্তর- (D) মুজিবুর রহমান
9. পাক বাহিনী কবে পূর্ব পাকিস্তানে চূড়ান্ত গণহত্যা চালায়?
(A) ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর- (D) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে
10. বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন-
(A) জওহরলাল নেহরু
(B) লাল বাহাদুর শাস্ত্রী
(C) ইন্দিরা গান্ধি
(D) রাজীব গান্ধি
উত্তর- (C) ইন্দিরা গান্ধি
11. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিক সহায়তা করেন ভারতের-
(A) জওহরলাল নেহরু
(B) লালবাহাদুর শাস্ত্রী
(C) ইন্দিরা গান্ধি
(D) রাজীব গান্ধি
উত্তর- (C) ইন্দিরা গান্ধি
12. বাংলাদেশ কবে স্বাধীনতা লাভ করেছিল-
(A) ১৯৪৭ খ্রি.
(B) ১৯৫১ খ্রি.
(C) ১৯৬৫ খ্রি.
(D) ১৯৭১ খ্রি.
উত্তর- (D) ১৯৭১ খ্রি.
13. বাংলাদেশে বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়-
(A) ২১ ফেব্রুয়ারি
(B) ৩ মার্চ
(C) ২৫ মার্চ
(D) ১৬ ডিসেম্বর
উত্তর- (D) ১৬ ডিসেম্বর
14. বাংলাদেশের আইনসভার নাম হল-
(A) লোকসভা
(B) জাতীয় সভা
(C) জাতীয় সংসদ
(D) জাতীয় পরিষদ
উত্তর- (C) জাতীয় সংসদ
15. স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন-
(A) শেখ মুজিবুর রহমান
(B) জিয়াউর রহমান
(C) শেখ হাসিনা
(D) খালেদা জিয়া
উত্তর- (A) শেখ মুজিবুর রহমান
16. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়-
(A) ২১ জানুয়ারি
(B) ২১ ফেব্রুয়ারি
(C) ২১ এপ্রিল
(D) ২১ জুন
উত্তর- (B) ২১ ফেব্রুয়ারি
17. ভারতে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়-
(A) ১৯৫০ খ্রি.
(B) ১৯৫১ খ্রি.
(C) ১৯৫২ খ্রি.
(D) ১৯৫৩ খ্রি.
উত্তর- (B) ১৯৫১ খ্রি.
18. ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে সার্ক (SAARC)-এর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়-
(A) কলকাতায়
(B) ঢাকায়
(C) কলম্বোতে
(D) কাঠমান্ডুতে
উত্তর- (B) ঢাকায়
19. ভারতে মহাকাশ কর্মসূচির জনক ছিলেন-
(A) ড. বিক্রম সারাভাই
(B) হোমি জাহাঙ্গির ভাবা
(C) শান্তিস্বরূপ ভাটনগর
(D) প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ
উত্তর- (A) ড. বিক্রম সারাভাই
20. ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা হল-
(A) সংসদীয়
(B) স্বৈরাচারী
(C) রাষ্ট্রপতি শাসিত
(D) একদলীয়
শূন্যস্থান পূরণ করো
1. স্বাধীন আলজেরিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন |
(A) জিয়াউর রহমান
(B) সৈয়দ নজরুল ইসলাম
(C) শেখ মুজিবুর
(D) আহমেদ বেন বেল্লা
উত্তর- (D) আহমেদ বেন বেল্লা
2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আলজেরিয়ার জনগণ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন।
(A) জার্মান
(B) ফরাসি
(C) ব্রিটিশ
(D) ওলন্দাজ
উত্তর- (B) ফরাসি
3. ফরাসিরা আলজেরিয়ায় খ্রিস্টাব্দে অভিযান শুরু করে।
(A) ১৮২০
(B) ১৮২৫
(C) ১৮৩০
(D) ১৮৩৫
4. ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ ১৬২ টি আসনের মধ্যে আসন পায়।
(A) ৮৮টি
(B) ১১২টি
(C) ১৫০টি
(D) ১৬০টি
উত্তর- (D) ১৬০টি
5. ভারত পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের |
(A) ১২ নভেম্বর
(B) ৩ ডিসেম্বর
(C) ১৭ ডিসেম্বর
(D) ২৮ ডিসেম্বর
উত্তর- (B) ৩ ডিসেম্বর
6. বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে সালে।
(A) ১৯৭২
(B) ১৯৭১
(C) ১৯৪৯
(D) ১৯৭৫
উত্তর- (B) ১৯৭১
7. স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন |
(A) জিয়াউর রহমান
(B) শেখ হাসিনা
(C) খালেদা জিয়া
(D) মুজিবুর রহমান
উত্তর- (A) জিয়াউর রহমান
8. ভারতীয় সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতি ছিলেন
(A) ড. বি. আর. আম্বেদকর
(B) জওহরলাল নেহরু
(C) গান্ধিজি
(D) ড. সুকর্ণ
9. 'Planned Economy for India' গ্রন্থটি রচনা করেন।
(A) জওহরলাল নেহরু
(B) বল্লভভাই প্যাটেল
(C) এম. বিশ্বেশ্বরাইয়া
(D) বি. আর. আম্বেদকর
উত্তর- (C) এম. বিশ্বেশ্বরাইয়া
10. ভারতে ----------------------- খ্রিস্টাব্দে দূরদর্শন সম্প্রচার শুরু হয়।
(A) ১৯৫৭
(B) ১৯৫৯
(C) ১৯৬৮
(D) ১৯৭৫
উত্তর- (B) ১৯৫৯
11. ভারতীয় রাজনীতিতে চালু রয়েছে এমন একটি ব্যবস্থা হল |
(A) বহুদলীয়
(B) ত্রিদলীয়
(C) দ্বিদলীয়
(D) একদলীয়
উত্তর- (A) বহুদলীয়
12. পাকিস্তানের আইনসভার উচ্চকক্ষের নাম |
(A) রাজ্যসভা
(B) লর্ডসভা
(C) সিনেট
(D) জাতীয় সভা
উত্তর- (C) সিনেট
13. স্পুটনিক খ্রিস্টাব্দে মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল।
(A) ১৯৫৯
(B) ১৯৬৩
(C) ১৯৭১
(D) ১৯৫৭
উত্তর- (A) ১৯৫৯
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলি বা SAQ
উত্তর- যে শিল্পের মাধ্যমে ওজনে ভারী বা বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করে পণ্য উৎপাদিত হয়, তাকে ভারী শিল্প বলে। বৃহৎ নির্মাণশিল্প, রাসায়নিক শিল্প, লৌহ-ইস্পাত শিল্প, ক্রেন বা বুলডোজারের মতো বড়ো আকারের যন্ত্রপাতি নির্মাণশিল্প প্রভৃতিকে ভারী শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উত্তর- জওহরলাল নেহরুর শাসনকালে হোমি জাহাঙ্গির ভাবা ছিলেন ভারতের পরমাণু গবেষণার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা। তাঁর সভাপতিত্বে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
54. দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দ্বারা কোন্ কোন্ ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে? অথবা, দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কোন তিনটি লৌহ-ইস্পাত কারখানা স্থাপিত হয়?
উত্তর- দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দ্বারা তিনটি ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে। এগুলি হল- [i] রাউরকেল্লা স্টিল প্ল্যান্ট, [ii] ভিলাই স্টিল প্ল্যান্ট এবং [iii] দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট।
43. দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দুটি ত্রুটি লেখো।
উত্তর- দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দুটি প্রধান ত্রুটি ছিল-[i] মুদ্রাস্ফীতি ও অন্যান্য কারণে এই পরিকল্পনার মাঝপথে ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে ৪,৬০০ কোটি টাকা করা হয়। [ii] কয়লা এবং ইস্পাত উৎপাদনও তার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম ছিল।
44. দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর- দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার দুটি প্রধান গুরুত্ব ছিল-[i] এই পরিকল্পনায় শক্তি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। [ii] অন্তত ৯০ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছিল।
32. স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচন কবে হয়েছিল?
উত্তর- স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে ১৯৫১-৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
33. স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার উল্লেখ করো।
উত্তর- স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর ভারতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ছিল-খাদ্য সংকট, অর্থনৈতিক দুর্দশা, উদ্দ্বাস্তু সমস্যা, বেকারত্ব, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাব, কাশ্মীরে পাক আগ্রাসন প্রভৃতি।
25. 'পাকিস্তান পিপল্স পার্টি কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর- 'পাকিস্তান পিপল্স পার্টি' প্রতিষ্ঠা করেন জুলফিকার আলি ভুট্টো।
26. পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনসভা কয়টি কক্ষবিশিষ্ট এবং কী কী?
উত্তর- পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনসভা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। এর উচ্চকক্ষের নাম সিনেট এবং নিম্নকক্ষের নাম জাতীয় পরিষদ।
27. পাকিস্তানের নিয়মতান্ত্রিক ও প্রকৃত শাসক কারা?
উত্তর- পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আইনসভা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। এর উচ্চকক্ষের নাম সিনেট এবং নিম্নকক্ষের নাম জাতীয় পরিষদ।
11. স্বাধীন বাংলাদেশ কবে সৃষ্টি হয়?
অথবা, বাংলাদেশ কবে স্বাধীনতা লাভ করে?
উত্তর- ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়।
12. স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা কাকে বলা হয়?
উত্তর- স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা মুজিবুর রহমানকে বলা হয়।
13. বাংলাদেশের প্রকৃত ও নিয়মতান্ত্রিক শাসক কে?
উত্তর- বাংলাদেশের প্রকৃত শাসক হলেন-প্রধানমন্ত্রী ও নিয়মতান্ত্রিক শাসক হলেন-রাষ্ট্রপতি।
14. ভারতীয় গণপরিষদের সভাপতি কে ছিলেন এবং ভারতের সংবিধান কবে গৃহীত ও কবে প্রবর্তিত হয়?
উত্তর- ভারতীয় গণপরিষদের সভাপতি ছিলেন ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ। ভারতের সংবিধান ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর গৃহীত হয় এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি প্রবর্তিত হয়।
1. ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দুইটি সমস্যার নাম কী কী?
উত্তর- ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দুটি সমস্যা ছিল-উদ্বাস্তু সমস্যা ও ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন সমস্যা।
4. বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে পূর্ববঙ্গে কবে চূড়ান্ত আন্দোলন হয় এবং এই আন্দোলনে কারা নিহত হন? অথবা, ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি স্মরণীয় কেন?
উত্তর- বাংলা ভাষা রক্ষার দাবিতে পূর্ববঙ্গে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত আন্দোলন হয়। এই আন্দোলনে পাক পুলিশের গুলিতে মহম্মদ সালাউদ্দিন, আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত ও রফিকুদ্দিন আহমেদ নিহত হন।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর বা LAQ
প্রশ্ন1. ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজন ও পৃথক
পাকিস্তানের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করো।
সূচনা: ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে স্বাধীনতার দাবিতে ভারতে
তীব্র ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ব্রিটেনও যথেষ্ট
ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই উপনিবেশগুলি ধরে রাখার শক্তি ব্রিটেনের ছিল না। এই
পরিস্থিতিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে স্বাধীনতা প্রদান
করে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে
পৃথক পাকিস্তানের সৃষ্টি
1 স্বাধীনতা আন্দোলন: উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে জাতীয়তাবাদী
চেতনার বিকাশ ঘটে। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার পর ভারতীয়দের
রাজনৈতিক অধিকারের দাবি জোরদার হতে থাকে। বিংশ শতকের প্রথম থেকে ভারতে
ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ১৯০৫
খ্রিস্টাব্দের স্বদেশি আন্দোলন, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের
অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের আইন অমান্য আন্দোলন, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রভৃতি
এদেশে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়।
2 পৃথক পাকিস্তানের দাবি: আলিগড় আন্দোলনের নেতা স্যার সৈয়দ আহমদ খান
(১৮১৭-১৮৯৮ খ্রি.) ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা ছড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন যে, হিন্দু ও মুসলিম দুটি পৃথক জাতি। তাদের একত্রে
সহাবস্থান সম্ভব নয়। পরবর্তীকালে ভারতীয় রাজনীতি ও স্বাধীনতা আন্দোলনে
দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রভাব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। মুসলিম লিগ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহোর
অধিবেশনে মুসলিমদের জন্য পৃথক পাকিস্তানের দাবি জানায়। এটি 'লাহোর প্রস্তাব' নামে
পরিচিত।
3 আন্দোলনের অগ্রগতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময় ব্রিটিশ শাসনের
বিরুদ্ধে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ভারতে আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ-বিদ্রোহ, ভারতকে স্বাধীনতা দানের
বিষয়ে ব্রিটেনকে
আমেরিকার চাপ প্রভৃতি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার যথেষ্ট চাপে পড়ে। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যয়ভারের ফলে ব্রিটিশ শক্তি যথেষ্ট দুর্বল হয়ে
পড়ে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ভারতে স্বাধীনতা দানের কথা ভাবতে শুরু করে।
4 সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লিগের সাম্প্রদায়িক
উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। 'লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান' ধ্বনি তুলে লিগ পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে আপোসহীন
সংগ্রাম শুরু করে। পৃথক পাকিস্তান সৃষ্টিতে ব্রিটিশ সরকারকে বাধ্য করতে লিগ ১৯৪৬
খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিয়ে কলকাতায় ব্যাপক হারে হিন্দু
নিধন চালায়। অবশ্য কয়েকদিন পর হিন্দুরাও এখানে পালটা আক্রমণ চালাতে শুরু করে।
পরবর্তী দুমাসে নোয়াখালি এবং ত্রিপুরায়ও ব্যাপক হারে হিন্দু নিধন হয়।
5 স্বাধীনতা লাভ ও পৃথক পাকিস্তান: তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে
ব্রিটিশ সরকার মুসলিম লিগের পৃথক পাকিস্তানের দাবি মেনে নিয়ে ভারত বিভাজনের
সিদ্ধান্ত নেয়। 'ভারতের স্বাধীনতা আইন'-এর মাধ্যমে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত
স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ভারত
স্বাধীনতা লাভ করার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে অর্থাৎ ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশ, সিন্ধু, পশ্চিম
পাঞ্জাব, পূর্ববঙ্গ এবং আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে
পাকিস্তান গঠিত হয়; অর্থাৎ পাকিস্তানের দুটি ভূখণ্ড হয়- একটি পশ্চিম
পাকিস্তান এবং অপরটি পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ববঙ্গ)। অবশিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে ভারত গঠিত
হয়। কংগ্রেসও বাধ্য হয়ে ভারত বিভাজনের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে
মুসলিমদের জন্য পৃথক পাকিস্তানের সৃষ্টি হলেও ধর্মই যে-কোনো রাষ্ট্র গঠনের প্রধান
শর্ত নয়, তা কয়েক বছরের মধ্যে পাকিস্তানে সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
সৃষ্টির কিছুকাল পরই পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব
পাকিস্তানের ওপর তীব্র অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, সামাজিক
ও সাংস্কৃতিক বঞ্চনা চাপিয়ে দেয়। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ পূর্ববঙ্গে পশ্চিম
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের পরিণতিতে পাকিস্তান
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের
জন্ম হয়।
প্রশ্ন2. স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান ও শেখ মুজিবুর রহমানের
ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা, স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ কীভাবে হয়েছিল তা
বর্ণনা করো।
উত্তর:
প্রশ্ন3 'ভারী শিল্প' বলতে কী বোঝায়? স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে ভারতে ভারী শিল্পের
বিকাশে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়?
ভারী শিল্প
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ
থেকে ভারী শিল্পের সংজ্ঞা দেওয়া যায়। [1] যে
শিল্পের মাধ্যমে ওজনে ভারী বা বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করে পণ্য উৎপাদিত হয়, তাকে ভারী শিল্প বলে। বৃহৎ নির্মাণশিল্প, রাসায়নিক শিল্প, লৗহ-ইস্পাত
শিল্প, কেন বা বুলডোজারের মতো বড়ো আকারের যন্ত্রপাতি নির্মাণশিল্প
প্রভৃতিকে ভারী শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। [2] যে
শিল্পে প্রচুর ৪ বৃহৎ যন্ত্রপ্রযুক্তি শিল্প, খনিজ
শিল্প প্রভৃতি শিল্পে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয় বলে এগুলি ভারী শিল্পের
অন্তর্ভুক্ত। [3] অন্যভাবে বলা যায়, ভারী
শিল্প কোতে সেই শিল্পকে বোঝায়, যেখানে উৎপাদিত
শিল্পপণ্য সর্বামার কি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি না করে অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রে
বিক্রি করা হয়া যেমন-লৌহ-ইস্পাত শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বস্ত্রশিল্পের জন্য ব্যবহার
করা হতে পারে।
ভারী শিল্পের বিকাশে
বিভিন্ন উদ্যোগ
1 সরকারি উদ্যোগ: ভারী শিল্প সম্পর্কে সরকারি শিল্পনীতিতে বলা হয় যে, আগে থেকে বেসরকারি মালিকানায় থাকা শিল্পগুলিতে
সরকার আপাতত হস্তক্ষেপ করবে না। সরকার মনে করলে ১০ বছর পর এগুলি জাতীয়করণ করতে
পারে। তবে নতুন করে এসব ভারী শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে না। এসব
শিল্পের বিকাশে সরকার নিজে 1 উদ্যোগ নেবে।
2 মহলানবিশের ভূমিকা: প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অর্থনৈতিক
উপদেষ্টাদের মধ্যে অন্যতম পরিসংখ্যানবিদ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ভারী শিল্পের
বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তিনি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, ভারতের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও অগ্রগতির জন্য মৌলিক
কিছু ভারী শিল্প গড়ে তোলা খুবই জরুরি। মহলানবিশ আমেরিকা, সোভিয়েত রাশিয়া-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে
সেখানকার ভারী শিল্প সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন এবং ভারতে অনুরূপ
শিল্পের 2 প্রসারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রাখেন।
3 নেহরুর সমর্থন: মহলানবিশ ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের পরিকল্পনা
কমিশনের কাছে তাঁর পরিকল্পনা পেশ করেন। এতে তিনি দেশে ভারী শিল্পের বিকাশ ও আধুনিক
যন্ত্রচালিত শিল্পায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। মহলানবিশের পরিকল্পনাকে
প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু সমর্থন করেন। ফলে ভারতের 'পরিকল্পনা কমিশন' সেই
পরিকল্পনা অনুসারে দেশে ভারী শিল্প ও আধুনিক যন্ত্রচালিত শিল্পায়ন বাস্তবায়িত করার
উদ্যোগ নেয়।
4 শক্তি কমিশন: ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন ছিল শক্তি
উৎপাদন। পরমাণু শক্তির বিষয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে নেহরুর প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন হোমি
জাহাঙ্গির ভাবা। তাঁর সভাপতিত্বে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে 'ভারতের শক্তি কমিশন' প্রতিষ্ঠিত
হয়। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে 'Development
of Atomic Energy' প্রতিষ্ঠিত হয়।
5
'CSIR'প্রতিষ্ঠা: প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু 'Council for Scientific and
Industrial Research' (CSIR)-এর
মাধ্যমে সারা ভারতে বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ নেন। এই প্রতিষ্ঠান
বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রসারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির উদ্যোগ নেয়।
6 জাতীয় গবেষণাগার স্থাপন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে গবেষণার জন্য নেহরুর উদ্যোগে
সারা দেশে প্রায় ৫০টি জাতীয় গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে তাঁকে বিশেষভাবে
সহায়তা করেন শান্তিস্বরূপ ভাটনগর ও কে. এস. কৃয়ান।
7 বিদেশি সহায়তা: ভারতে ভারী শিল্পের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ঘটানোর
উদ্দেশ্যে ভারত সরকার বিদেশ থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করেন। প্রযুক্তিবিদ্যায় উন্নত ও অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী আমেরিকা, সোভিয়েত রাশিয়া-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আর্থিক
ও প্রযুক্তিগত সহায়তা গ্রহণ করা হয়।
8 কারিগরি প্রশিক্ষণ: ভারী শিল্পের প্রসারের প্রয়োজনে সরকার যথার্থ
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদ তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই উদ্দেশ্যে নেহরুর
সরকার বিভিন্ন আই.আই.টি. (Indian
Institute of Technology) নামে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে খড়গপুরে এবং পরবর্তীকালে
মাদ্রাজ, বোম্বাই, কানপুর
ও দিল্লিতে আই.আই.টি. প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন4 স্বাধীন ভারতে বিভিন্ন ভারী শিল্পের ধারাবাহিক
বিকাশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
সূচনা: ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী
পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং ভারী শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ভারী শিল্পের
ধারাবাহিক বিকাশ
1 প্রথম পরিকল্পনায় শিল্পের প্রসার: প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫১-৫৬ খ্রি.)
বিভিন্ন ভারী শিল্পে উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। সিমেন্ট, ভারী রাসায়নিক দ্রব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পজাত দ্রব্য প্রভৃতি উৎপাদন
লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে। এই পরিকল্পনাকালে শিল্পোৎপাদন ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ৩৭০
মাইল নতুন রেলপথ নির্মিত হয়। এই সময় সরকারি উদ্যোগে যেসব ভারী শিল্পের কারখানা গড়ে
ওঠে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পেট্রোলিয়াম
শোধনাগার, রেল ইঞ্জিন তৈরি, সার
উৎপাদন, নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন প্রভৃতি।
2 দ্বিতীয় পরিকল্পনায় শিল্পোৎপাদন: দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫৬-৬১ খ্রি.)
নেহরু-মহলানবিশ মডেল অনুসারে দেশে ভারী শিল্প গড়ে তোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া
হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন, রেল ও সড়ক পরিবহণ, জাহাজ
ও বিমান চলাচল প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটেছিল। তবে ইস্পাত, কয়লা, সিমেন্ট
প্রভৃতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে
রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে 'হিন্দুস্থান স্টিল লিমিটেড' (HSL) নামে কোম্পানির অধীনে ভারতে তিনটি ইস্পাত কারখানা
নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই তিনটি ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠায় মোট ব্যয় হয়েছিল
৩৫৩ কোটি টাকা। এই তিনটি কারখানা হল-
i. রাউরকেল্লা ইস্পাত কারখানা: জার্মানির সহযোগিতায় ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে উড়িষ্যার
রাউরকেল্লায় রাউরকেল্লা স্টিল প্ল্যান্ট (RSP) নামে
প্রথম ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে। এর সহযোগী কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ক্রুপ
ডেমাগ, ফ্রায়েড রূপ, এসেন, ডেমাগ প্রভৃতি। এই কারখানায় ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে
উৎপাদন শুরু হয়।
ii. ভিলাই ইস্পাত কারখানা: সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় মধ্যপ্রদেশের ভিলাই-এ
ভারতের দ্বিতীয় ইস্পাত কারখানা ভিলাই স্টিল প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯৫৭ খ্রি.)।
এই কারখানায় ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে উৎপাদন শুরু হয়।
iii. দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা: বিড়লা ব্রাদার্স নামে সংস্থার উদ্যোগে এবং
ব্রিটেনের সহযোগিতায় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে দুর্গাপুর স্টিল
প্ল্যান্ট নামে ভারতের তৃতীয় ইস্পাত কারখানাটি স্থাপিত হয়। এই কারখানায় ১৯৬২
খ্রিষ্টাব্দে উৎপাদন শুরু হয়।
3 অন্যান্য লৌহ-ইস্পাত কারখানা: দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পরবর্তীকালে আরও
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লৌহ-ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে। [i] তৃতীয়
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় 'বোকারো স্টিল লিমিটেড' (BSL) নামে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অধীনে বিহারে
বোকারো স্টিল প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। এই কারখানায় ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে
উৎপাদন শুরু হয়। [ii] এরপর তামিলনাড়ুর সালেম স্টিল প্ল্যান্ট (১৯৮২
খ্রি.), অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে 'রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড' নামে একটি কারখানা (১৯৯২ খ্রি.) এবং কর্ণাটকের
বিজয়নগরে দুটি বড়ো লৌহ-ইস্পাত কারখানা (১৯৯৮ খ্রি.) স্থাপিত হয়।
4 পেট্রো-রাসায়নিক শিল্প: ১৯৫০-এর দশকে আই.সি.আই. কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গের
রিষড়ায় পলিইথিলিন তৈরির একটি কারখানা গড়ে তোলে। এরপর ক্রমে উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে
'সিন্থেটিক অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেড', অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে 'পলিকেম লিমিটেড' ও 'কেমিক্যালস অ্যান্ড প্লাস্টিকস লিমিটেড', মহারাষ্ট্রের ট্রম্বেতে 'ইউনিয়ন কার্বাইড (ইন্ডিয়া) লিমিটেড' প্রভৃতি পেট্রো-রাসায়নিক কারখানা গড়ে ওঠে। এ ছাড়া
মহারাষ্ট্রের থানে, গুজরাটের জওহরনগর ও জামনগর, তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন, কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর, পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া প্রভৃতি স্থানে পেট্রো-রাসায়নিক
শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।
5 অন্যান্য ভারী শিল্প: উপরোক্ত শিল্পগুলি ছাড়া ভারতে গড়ে ওঠা অন্যান্য
উল্লেখযোগ্য ভারী শিল্পগুলি হল 'ভারত হেভি ইলেকট্রিক
লিমিটেড'
(BHEL), 'হিন্দুস্তান মেশিন
টুল্স'
(HMT), 'হিন্দুস্তান এরোনটিক্স
লিমিটেড'
(HAL), 'ইন্ডিয়ান রেয়ার আর্থ' (IRE) প্রভৃতি।
উপসংহার: স্বাধীনোত্তরকালে ভারতে ভারী শিল্পের ধারাবাহিক
বিকাশ ঘটেছে এবং শিল্পোৎপাদন খুব দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রশ্ন5: স্বাধীনোত্তরকালে ভারতে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার
অগ্রগতির বিবরণ দাও।
সূচনা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর শিল্পায়নের
জন্য আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার প্রসারের বিশেষ প্রয়োজন অনুভূত হয়। ভারতের প্রথম
প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
ভারতে আধুনিক
প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতি
1 নেহরুর ভূমিকা: জওহরলাল নেহরু উপলব্ধি করেছিলেন যে, আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির ওপর
স্বাধীন ভারতের শিল্পায়নের অগ্রগতি নির্ভর করছে। প্রযুক্তির উন্নতির জন্য তিনি
সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নেহরুর উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে গবেষণার
জন্য প্রায় ৫০টি জাতীয় গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়।
2 বিজ্ঞানীদের ভূমিকা: ভারতে প্রযুক্তির উন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন
বিজ্ঞানী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হলেন
প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, হোমি জাহাঙ্গির ভাবা, ড.
বিক্রম সারাভাই এবং শান্তিস্বরূপ ভাটনগর। হোমি ভাবার উদ্যোগে ভারতে 'টাটা ইন্সটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ', 'অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন অব ইন্ডিয়া' স্থাপিত হয়।
3 কৃষি প্রযুক্তি: ভারতে কৃষি প্রযুক্তির উন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন
উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ বিষয়ে অসামান্য অবদান রাখেন বিজ্ঞানী সি. সুব্রহ্মনিয়াম। তিনি
গবেষণাগারে উন্নততর কৃষিবীজ তৈরি করে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি করেন। জলসেচের
ব্যাপক প্রসারের ফলে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অতিরিক্ত ৪৫
মিলিয়ন কৃষিজমি জলসেচের আওতায় আসে। খাদ্য উৎপাদনও ৩৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন বৃদ্ধি
পায়।
4 ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি: ভারতে প্রযুক্তিশিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে এন.আর.
সরকারের সভাপতিত্বে ২২ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি
আমেরিকার 'মাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি'-র অনুকরণে 'ইন্ডিয়ান
ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি' প্রতিষ্ঠার পক্ষে অভিমত দেয়। সেই অনুসারে তৎকালীন
শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে (১৮ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের
খড়গপুরে এই প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে মাদ্রাজ, বোম্বাই, কানপুর
ও দিল্লিতে আই. আই. টি. প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রযুক্তির উন্নতি বিষয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে
মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় Centre for Advanced
Technologies বা CAT।
5 মহাকাশ ও পরমাণু গবেষণা: মহাকাশ গবেষণায় অগ্রগতির উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় ১৯৬০-এর
দশকের শুরুতে 'ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা' (Indian Space Research
Organization) গড়ে তোলা হয়। ভারতের
মহাকাশ গবেষণা কর্মসূচিতে অসামান্য অবদান রাখেন পদার্থবিদ ড. বিক্রম সারাভাই।
এজন্য তাঁকে 'ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জনক' বলা হয়। সোভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় ভারতে পরমাণু
শক্তি গবেষণার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। ভারত ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে (১৮ মে)
রাজস্থানের পোখরানে প্রথম পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।
6 প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি: স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির
ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের 'প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা' (Defence Research and
Development Organisation) প্রতিষ্ঠিত
হয়। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে চিনের কাছে ভারতের পরাজয়ের ঘটনা জওহরলাল নেহরুকে প্রতিরক্ষা
বিষয়ে আরও যত্নবান করে। এর ফলে রাশিয়ার সহায়তায় ভারতে প্রতিরক্ষা-বিষয়ক বিভিন্ন
উদ্যোগ নেওয়া হয়।
7 সম্প্রচার প্রযুক্তি: ভারতে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে বেতার সম্প্রচার শুরু হলেও
তা স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে যথেষ্ট প্রসারিত হয়। 'অল ইন্ডিয়া রেডিও' ১৯৫৬
খ্রিস্টাব্দে 'আকাশবাণী'-তে
পরিণত হয়। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতে দূরদর্শন সম্প্রচার শুরু হয়। ১৯৬৫
খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এর যথেষ্ট প্রসার ঘটে। ১৯৬০-এর দশকে ভারতে কম্পিউটার
সফটওয়্যার গবেষণার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে।
ব্যর্থতা
1 জন-বিস্ফোরণ: স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী ৬০ বছরে ভারতের জনসংখ্যা
অন্তত ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১/৩ অংশই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস
করে। এই অত্যধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা
সৃষ্টি করে।
2 অর্থসংকট: ভারতে প্রযুক্তির উন্নতিতে অর্থ বিনিয়োগের পরিমাণ
খুবই কম ছিল। ভারতের তুলনায় আমেরিকায় এ বিষয়ে অর্থ বিনিয়োগ হয় অন্তত ৭৫ গুণ বেশি। S
উপসংহার: কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও স্বাধীন ভারতে
প্রযুক্তিবিদ্যার যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। এর অন্যতম উদাহরণ হল কৃষিপ্রযুক্তিতে অগ্রগতির
অন্যতম দৃষ্টান্ত কৃষিক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লব। শক্তি এবং ইস্পাত উৎপাদনের হার বৃদ্ধি
দেশের প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতিতে বিশেষ সহায়তা করেছে।
প্রশ্ন6: ইন্দোনেশিয়ার মুক্তিসংগ্রামের প্রসার ও স্বাধীনতা
লাভ সম্পর্কে আলোচনা করো।
👉Paid Answer ( For Membership User)