অধ্য়ায়-৮
ভারতের আইন বিভাগ
---------------------------------------------------
MCQs
1. বিধানসভায় যে-কোনো বেসরকারি বিল উত্থাপনের জন্য নোটিশ দিতে হয়-
A) ১৮ দিন আগে
B) ২১ দিন আগে
C) ১ মাস আগে ✔
D) ৩ মাস আগে
2. পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভার সদস্যসংখ্যা-
A) 80
B) ৪২ ✔
C) ৫২
D) ৫০
3. পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা-
A) ১৬ ✔
B) ১৭
C) ১৮
D) ১৯
4. ত্রিপুরা থেকে লোকসভার সদস্যসংখ্যা-
A) ২ ✔
B) ১৫
C) ৩১
D) ২২
5. ত্রিপুরা থেকে রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা-
A) ১ ✔
B) ২
C) ৩
D) 8
6. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হাইকোর্ট স্থাপন করতে কিংবা কোনো একটি অধস্তন আদালতকে হাইকোর্টের মর্যাদায় উন্নীত করতে পারে-
A) লোকসভা
B) রাজ্যসভা
C) রাষ্ট্রপতি
D) পার্লামেন্ট ✔
7. ভারতে নতুন রাজ্য গঠনের ক্ষমতা রয়েছে শুধুমাত্র-
A) লোকসভার
B) শুধুমাত্র রাজ্যসভার
C) পার্লামেন্টের ✔
D) রাষ্ট্রপতির
8. সংবিধানের 'মৌলকাঠামো' অপরিবর্তিত রেখে পার্লামেন্ট সংবিধানের যে-কোনো অংশ সংশোধন করতে পারে, বলে সুপ্রিমকোর্ট রায় দিয়েছিল-
A) এ কে গোপালন মামলায় (১৯৫০)
B) কেশবানন্দ ভারতী মামলায় (১৯৭৩) ✔
C) মানেকা গান্ধি মামলায় (১৯৭৮)
D) মিনার্ভা মিলস মামলায় (১৯৮০)
9. কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়-
A) রাষ্ট্রপতির আস্থা হারালে
B) জনগণের আস্থা হারালে
C) রাজ্যসভার আস্থা হারালে
D) লোকসভার আস্থা হারালে ✔
10. যে-কোনো ধরনের জরুরি অবস্থার ঘোষণাকে অবশ্যই অনুমোদিত হতে হয়-
A) কেবল লোকসভায়
B) কেবল রাজ্যসভায়
C) লোকসভা, রাজ্যসভা ও রাজ্য বিধানসভায়
D) লোকসভা ও রাজ্যসভায় ✔
11. অর্থ বিল উত্থাপিত হয়-
A) শুধুমাত্র রাজ্যসভায়
B) শুধুমাত্র লোকসভায় ✔
C) শুধুমাত্র সচিবালয়ে
D) শুধুমাত্র অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে
12. লোকসভায় পাস হওয়া কোনো অর্থ বিল রাজ্যসভা আটকে রাখতে পারে-
A) ১২ দিন
B) ১২ দিন
C) ১৮ দিন
D) ১ দিন ✔
13. সংবিধানের যে ধারা অনুসারে অর্থ বিল শুধুমাত্র লোকসভাতেই উত্থাপিত হতে পারে, রাজ্যসভাতে নয় সেটি হল-
A) ১০৭ নং ধারা
B) ১০৮ নং ধারা
C) ১০৯ নং ধারা ✔
D) ১১১ নং ধারা
14. সংসদের অধিবেশনে 'জিরো আওয়ার' শুরু হয়-
A) অধিবেশনের শুরুতে
B) মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর
C) প্রশ্নোত্তর পর্বের পর বেলা ১২ টায় ✔
D) অধিবেশনের শেষ পর্বে
A) নেহরু
B) আম্বেদকর
C) দুর্গাদাস বসু
D) সুভাষ কাশ্যপ ✔
-------------------------
1. রাজ্যপালকে 'স্বর্ণপিঞ্জরে
আবদ্ধ পক্ষী' বলে কে
অভিহিত করেছিলেন?
অথবা, কে রাজ্যপালকে 'সোনার খাঁচায় অবদ্ধ পাখি' বলে অভিহিত করেছেন?
▶ সরোজিনী নাইডু রাজ্যপালকে 'সোনার খাঁচায় অবদ্ধ পাখি' বলে অভিহিত করেছেন।
2. কোন্ ধরনের বিলকে রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে সম্মতির জন্য পাঠাতে বাধ্য থাকেন?
▶ হাইকোর্টের মর্যাদাহানিকর কোনো বিলকে রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে সম্মতির জন্য পাঠাতে বাধ্য থাকেন।
3.রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে ৩৫৬ নং ধারা জারির বিষয়টি কি আদালতের বিচারযোগ্য?
▶ হ্যাঁ, রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে ৩৫৬ নং ধারা জারির সমগ্র বিষয়টি আদালতের বিচারযোগ্য
4. রাজ্যপালের বেতন, ভাতা ইত্যাদি রাজ্যের কোন্ তহবিল থেকে দেওয়া হয়?
▶ রাজ্যপালের বেতন, ভাতা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঞ্চিত তহবিল থেকে দেওয়া হয়।
5. ভারতের কোনো রাজ্যের মন্ত্রীদের শপথবাক্য কে পাঠ করান?
▶ ভারতের কোনো রাজ্যের মন্ত্রীদের শপথবাক্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল পাঠ করান।
6. রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে কে কাজ করেন?
▶ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপাল কাজ করেন।
7. ভারতের কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশ কে করতে পারেন?
▶ সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল ভারতের কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশ করতে পারেন।
8. রাজ্যপালের দুটি বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা উল্লেখ করো।
▶ রাজ্যপালের দুটি বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা হল-① রাজ্যপাল আইনভঙ্গের অপরাধে দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত অপরাধীর দণ্ড হ্রাস করতে পারেন, ② রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করেন।
9. সংবিধানে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে অব্যাহতি দেওয়া
হয়েছে?
▶ ৩৬১ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো আদালতে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। পদে আসীন থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যায় না।
10. অর্ডিন্যান্স জারির ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তই কি চূড়ান্ত?
▶ অর্ডিন্যান্স জারির প্রশ্নে ৩৮তম সংশোধনী অনুযায়ী রাজ্যপালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু ১৯৭৮ সালে আগেকার ৩৮তম সংশোধনীতে পরিবর্তন আনা হয়। এক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত আদালত বিচার করে এবং মতামত জানাতে পারে।
11. রাজ্যপাল কোন্ কোন্ বিলকে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠাতে বাধ্য? অথবা, কোন্ কোন্ বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য সংরক্ষণ করা রাজ্যপালের অবশ্য কর্তব্য?
▶ রাজ্যপাল তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী রাজ্য বিধানসভার যে-কোনো বিলবে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠাতে পারেন। তবে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ, হাইকোর্টের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠাতে বাধ থাকেন।
12. রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়?
▶ সংবিধানের ষষ্ঠ
তপশিলে উল্লিখিত কিছু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে রাজ্যপালের
স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অবকাশ আছে, যেমন-মুখ্যমন্ত্রী
নিয়োগ ও অপসারণ, বিধানসভা ভেঙে দেওয়া রাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থা
সম্পর্কে রিপোর্ট প্রভৃতি। স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার ক্ষেত্রগুলিতে রাজ্যপাল
মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করেন না। তা ছাড়া স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার বৈধতা নিয়েও কোনো
প্রশ্ন তোলা যায় না।
---------------------------------
Long Answer Question
প্রশ্ন 1. সংসদীয় কার্যপদ্ধতি বলতে কী বোঝায়? জিরো আওয়ার, অনাস্থা প্রস্তাব কাকে বলে?
উত্তর: সংসদীয় কার্যপদ্ধতি
ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বলা হয় সংসদীয় গণতন্ত্র (Parliamentary Democracy)। আরও সহজভাবে বলতে গেলে বলা যেতে পারে সংসদ- চালিত গণতন্ত্র। ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভাকে বলা হয় সংসদ বা 'Parlia- ment'। ভারতীয় সংবিধানে সংসদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা তাদের কাজকর্মের জন্য সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। কোনো কারণে সংসদের আস্থা হারালে সমগ্র মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়।
কেন্দ্রীয় আইনসভা হিসেবে সংসদের একটি কার্যপদ্ধতি রয়েছে। সংসদ কীভাবে চলবে, অধিবেশনের সময় সদস্যরা কীভাবে প্রস্তাব উত্থাপন করবেন, বাজেট পাসের সময় তাঁদের ভূমিকা কী, অনাস্থা প্রস্তাব, ছাঁটাই প্রস্তাব, মুলতুবি প্রস্তাব, দৃষ্টি-আকর্ষণী বিজ্ঞপ্তি কীভাবে আনা যায় ইত্যাদি যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ের নিয়মকানুন বা পদ্ধতির কথা সংবিধানে লিখিত রয়েছে। সংসদ পরিচালনার এসব নিয়মকানুন বা পদ্ধতিকেই সাধারণভাবে সংসদীয় কার্যপদ্ধতি বলে অভিহিত করা হয়।
জিরো আওয়ার
সংসদীয় কার্যপদ্ধতির একটি অন্যতম বিষয় হল 'জিরো আওয়ার'। সংসদীয় বিধিব্যবস্থায় অবশ্য 'জিরো আওয়ার'-এর কোনো উল্লেখ নেই। তবে লিখিত নিয়মকানুন হিসেবে উল্লিখিত না হলেও সংসদীয় ব্যবস্থায় রীতিনীতি ও প্রথার ভিত্তিতে এর উদ্ভব ঘটেছে বলে মনে করা হয়। সংসদে বেসরকারি কর্মসূচি ও সরকারি কর্মসূচির মধ্যবর্তী সময়টিকে 'জিরো আওয়ার' বলা হয়ে থাকে।
সংসদের দৈনন্দিন পরিষদীয় কাজকর্মের দুটি পর্যায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল সরকারি কাজকর্ম (Government Business) এবং অন্যটি হল বেসরকারি কাজকর্ম (Non-government Business)। সংসদে প্রতিদিনের পরিষদীয় কাজকর্ম প্রশ্নোত্তর পর্ব দিয়েই শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বের কর্মসূচি হল বেসরকারি কর্মসূচি। প্রশ্নোত্তর পর্ব ছাড়াও মুলতুবি প্রস্তাব, দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাব, উল্লেখ পর্ব ইত্যাদিও বেসরকারি কর্মসূচিরূপে পরিচিত। সভার নিয়মানুসারে প্রথমে হয় বেসরকারি কাজকর্ম তারপরে সরকারি কাজকর্ম। বেসরকারি কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর সরকারি কর্মসূচি শুরু হয়। এই দুই কর্মসূচির মাঝখানে আলাদা কোনো সময় বরাদ্দ নেই। এই সময় না থাকার ব্যাপারটাই হল 'জিরো আওয়ার', অর্থাৎ বেসরকারি ও সরকারি কর্মসূচির মাঝখানের ফাঁকা সময়টুকু হল 'জিরো আওয়ার'। এই সময়টি হল শূন্য সময় এবং এরপর থেকে পুরো ১ ঘণ্টা ধরে আইনসভার যে-কোনো কক্ষের কাজকর্ম চলতে থাকে বলে এই সময়টিকে জিরো আওয়ার বলা হয়। সংসদের কার্যপদ্ধতি-সম্পর্কিত নিয়মাবলিতে প্রতিটি কর্মসূচির জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে, কিন্তু যেহেতু 'জিরো আওয়ার' বলে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই তাই তার জন্য কোনো সময়ও বরাদ্দ নেই। কাজেই বেসরকারি কর্মসূচি শেষ হওয়ার ঠিক পরেই এবং সরকারি কাজকর্ম শুরু হওয়ার ঠিক আগের পর্বটিই হল জিরো আওয়ার।
পার্লামেন্টে জিরো আওয়ারের জন্য ১ ঘণ্টা সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। এই সময়টা হল দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেও এই সময় নির্দিষ্ট রয়েছে। সাধারণত খুব জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা সভায় উত্থাপন করা দরকার মনে হলে সদস্যরা জিরো আওয়ারে তা উত্থাপন করতে পারেন। এজন্য স্পিকারের কাছে আগাম নোটিশ দেওয়া বা অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না।
জিরো আওয়ারের জন্য পার্লামেন্টের মূল্যবান সময় অপচয় হয়, বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা পিছিয়ে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সদস্যরা গুরুত্বহীন বিষয় উত্থাপন করে ব্যক্তিগত বা দলগত স্বার্থে 'জিরো আওয়ার'-কে ব্যবহার করেন ইত্যাদি সমালোচনা অনেকে করে থাকেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, ভারতীয় সংসদীয় কার্যপদ্ধতিতে জিরো আওয়ার বর্তমানে অপরিহার্য পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
অনাস্থা প্রস্তাব
সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংসদীয় ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ বা সরকারকে আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। আইনসভার আস্থা হারালে সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়। এককথায় বলা যেতে পারে সংসদীয় ব্যবস্থায় সরকার যতদিন আইনসভার আস্থাভাজন থাকবে ততদিন ক্ষমতায় টিকে থাকবে। আইনসভা কোনো কারণে সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করলে সরকারকে পদত্যাগ করে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।
সংসদীয় ব্যবস্থার দেশ হিসেবে ভারতেও এই নিয়ম চালু রয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ। লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থা হারালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা বা সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়। অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি লোকসভার সংসদীয় কার্যপদ্ধতি-সম্পর্কিত ১৯৮ নং বিধিতে আলোচিত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায়, অনাস্থা প্রস্তাব-সম্পর্কিত নিয়মকানুন লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে প্রায় একই রকমের।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের নিয়মগুলি হল-
[1] অধিবেশন শুরু হওয়ার অন্তত ১০ ঘণ্টা আগে সচিবের কাছে অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিশ দিতে হয়।
[2] অনাস্থা প্রস্তাব সমগ্র মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে আনতে হয়। কোনো একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় না।
[3] স্পিকার নিজে অথবা তাঁর অনুমতিক্রমে প্রস্তাবের উত্থাপক অনাস্থা প্রস্তাব পাঠ করতে পারেন।
[4] লোকসভার অন্তত ৫০ জন সদস্যের অনুমতি পেলে অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনার জন্য গৃহীত হয়।
[5] অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আলোচনার তারিখ এবং সময় স্পিকার ঠিক করেন।
[6] স্পিকারের সম্মতি পাওয়ার পর নির্দিষ্ট দিনে অনাস্থা প্রস্তাবের উত্থাপক সভায় প্রস্তাবটি পেশ করেন। সাধারণত অনাস্থা প্রস্তাবের অতি-সংক্ষিপ্ত বয়ানটি হল, 'এই সভা মন্ত্রীসভার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছে'।
[7] অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে, বিপক্ষে আলোচনা এবং তর্কবিতর্কের শেষে স্পিকার এই সম্পর্কে সভার সিদ্ধান্ত জানার জন্য ভোটাভুটির ব্যবস্থা করেন।
[৪] সভায় উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমর্থনে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে মন্ত্রীসভার পতন ঘটে।
প্রশ্ন 2. সংসদীয় কার্যপদ্ধতির সংজ্ঞা দাও। ছাঁটাই প্রস্তাব কাকে বলে?
উত্তর: সংসদীয় কার্যপদ্ধতি ছাঁটাই প্রস্তাব:
লোকসভায় বাজেট পাসের সময় ব্যয়বরাদ্দের দাবি নিয়ে আলোচনায় বিরোধীরা কোনো বিষয়ে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার জন্য যে প্রস্তাব উত্থাপন করে, সাধারণভাবে তাকে ছাঁটাই প্রস্তাব বলা হয়। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, বাজেট পাসের সময় লোকসভা প্রস্তাবিত ব্যয়বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে না, অবশ্য বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বা প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে লোকসভার ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণত বিরোধী সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটের কোনো বিষয়ে বরাদ্দ কমিয়ে ফেলার জন্য ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করে থাকেন।
লোকসভার নিয়ম অনুসারে তিন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনা যেতে পারে-[1] ব্যয়সংক্ষেপ-সংক্রান্ত ছাঁটাই প্রস্তাব (Economy Cut), [2] নীতি অনুমোদন-সম্পর্কিত ছাঁটাই প্রস্তাব (Disapproval of Policy Cut) এবং [3] প্রতীকী ছাঁটাই প্রস্তাব (Token Cut)।
[1] ব্যয়সংক্ষেপ-সংক্রান্ত ছাঁটাই প্রস্তাব: প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো ব্যয়বরাদ্দের দাবি মাত্রাতিরিক্ত বলে মনে হলে তা কমিয়ে ফেলার জন ব্যয়সংক্ষেপ-সংক্রান্ত ছাঁটাই প্রস্তাব আনা যেতে পারে। এতে কোনো বিশেষ খাতে বরাদ্দের পরিমাণের একটি নির্দিষ্ট অংশ হ্রাস করার প্রস্তাব আনা হয় যেমন, এই ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাবে বলা হতে পারে প্রতিরক্ষা খাতে সরকারের ব্যয়ের দাবির পরিমাণ ১০ কোটি টাকা কমানো হোক।
[2] নীতি অনুমোদন-সম্পর্কিত ছাঁটাই প্রস্তাব: কোনো বিশেষ খাতে সরকারের ব্যয়বরাদ্দের দাবিকে অস্বীকার করার জন্য বিরোধীরা নীতি অনুমোদন-সম্পর্কিত ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের দাবিকে ছাঁটাই করে নামমাত্র অঙ্কে কমিয়ে ফেলার কথা বলা হয়। যেমন এটা বলা হতে পারে যে গ্রামোন্নয়নের জন্য সরকারের ব্যয়ের দাবিকে ছাঁটাই করে ১ টাকা করা হোক।
[3] প্রতীকী ছাঁটাই প্রস্তাব: সাধারণত সরকারের কোনো অযৌক্তিক ব্যয়বরাদ্দের দাবির বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর জন্য এ ধরনের প্রতীকী ছাঁটাই প্রস্তাব তোলা হয়। এতে কোনো নির্দিষ্ট খাতে সরকারের তরফ থেকে যে পরিমাণ অর্থ অনুমোদনের জন্য দাবি করা হয় তার সামান্য কিছু অংশ কমিয়ে ফেলার প্রস্তাব করা হয়। যেমন, এক্ষেত্রে বলা হতে পারে সরকারের মোট ব্যয়বরাদ্দের দাবির পরিমাণ থেকে ১০০ টাকা ছাঁটাই করা হোক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সরকারের ব্যয়বরাদ্দের দাবি সম্পর্কে বিরোধীদের উত্থাপিত ছাঁটাই প্রস্তাবের ভাগ্য লোকসভার সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। কোনো ছাঁটাই প্রস্তাব যদি লোকসভার সদস্যদের ভোটে পাস হয়ে যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীসহ সমগ্র মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয়। কারণ লোকসভায় বিরোধীদের আনা ছাঁটাই প্রস্তাব পাস হওয়ার অর্থ হল সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ। সংবিধান অনুসারে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থা হারালে পদত্যাগ ছাড়া সরকারের পক্ষে আর কোনো রাস্তা খোলা থাকে না।
প্রশ্ন 3. মুলতুবি প্রস্তাব ও দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তর: মুলতুবি প্রস্তাব
লোকসভার সংসদীয় কার্যপদ্ধতিতে মুলতুবি প্রস্তাবের একটি স্বতন্ত্র তাৎপর্য রয়েছে। সাধারণত লোকসভা চলাকালীন কোনো জরুরি বিষয় উত্থাপনের একটি মাধ্যম হল মুলতুবি প্রস্তাব। সভার নির্দিষ্ট কর্মসূচি মুলতুবি রেখে এই ধরনের প্রস্তাব আলোচনার জন্য গৃহীত হয় বলে একে মুলতুবি প্রস্তাব বলে। মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপন করে যে বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তার জবাব সরকার পক্ষকে তক্ষুনি বা সেই দিনেই দিতে হয়। বিরোধী পক্ষ সাধারণত মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপন করে থাকে। তাই সরকার পক্ষ সবসময় চেষ্টা করে মুলতুবি প্রস্তাব যাতে সভায় আলোচনার জন্য গৃহীত না হয়। অধিবেশন শুরুর আগেই মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিশ দিতে হয়।মুলতুবি প্রস্তাবের তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে-① প্রস্তাবটি হল সুনির্দিষ্ট, ② বিষয়টিকে অত্যন্ত জরুরি প্রকৃতির হতে হবে, ③ জনস্বার্থের দিক থেকেও বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে।
এ ছাড়া মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করার বিষয়ে কতকগুলি শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলি হল-
[1] একদিনের অধিবেশনে একটির বেশি মুলতুবি প্রস্তাব পেশ করা যায় না।
[2] একটির বেশি বিষয় আলোচনাতেও অন্তর্ভুক্ত করা যায় না।
[3] প্রস্তাবটি সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর হতে হয়।
[4] আদালতের বিচারাধীন কোনো বিষয়কে মুলতুবি প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করা যায় না।
[5] কোনো বিষয় ইতিপূর্বে সভায় আলোচিত হয়ে গেলে তা প্রস্তাব হিসেবে আনা যায় না।
সংসদীয় কার্যপদ্ধতিতে মুলতুবি প্রস্তাবের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বিরোধী পক্ষ এই প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করার ও ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি তুলে ধরার তাৎক্ষণিক সুযোগ লাভ করে। অবশ্য মুলতুবি প্রস্তাবে সরকার পক্ষের পরাজয় ঘটলে মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগ করতে হয় না। তবে এর ফলে সরকারের নৈতিক পরাজয় ঘটে।
দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাব
সংসদীয় কার্যপদ্ধতিতে দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই
প্রস্তাবের মাধ্যমে বিধায়ক বা
সাংসদরা জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত জরুরি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রীর
দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন বলে
একে দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাব বলা হয়। দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাবের মাধ্যমে
বিরোধী পক্ষের সদস্যরা সরকারের
কাজকর্মের ত্রুটিবিচ্যুতি, ব্যর্থতা, দুর্নীতি প্রভৃতি
বিষয় তুলে ধরতে পারেন। অন্যদিকে, সরকারি পক্ষের
সদস্যরা এর মাধ্যমে সরকারি কাজকর্মের সাফল্যকে সভায় তুলে ধরার সুযোগ পান।
দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাব উত্থাপনের বিষয়ে কয়েকটি নিয়ম বা শর্ত রয়েছে। যেমন-
[1] প্রস্তাবটিকে জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত এবং জরুরি বিষয়ের হতে হয়,
[2] প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মন্ত্রীকে দেওয়া হবে কি না, প্রস্তাবটি নিয়ে কোনোরকম আলোচনা হবে কি না সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা স্পিকার বা অধ্যক্ষের হাতে রয়েছে,
[3] দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাবের নোটিশ লিখিতভাবে সভার সচিবের কাছে জমা দিতে হবে,
[4] একইদিনে একাধিক নোটিশ জমা পড়লে স্পিকার বা অধ্যক্ষ তার মধ্যে থেকে যেটি খুব জরুরি সেটি অনুমোদন করেন,
[5] দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাব যে দফতরের মন্ত্রীর দৃষ্টি
আকর্ষণের জন্য উত্থাপন করা হয়, স্পিকার সেই
মন্ত্রীকে উত্তর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তবে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী প্রস্তাব উত্থাপনের দিন বা অন্য যে-কোনো দিন উত্তর দিতে পারেন।
দৃষ্টি-আকর্ষণী প্রস্তাব নিয়ে কোনো বিতর্ক বা ভোটাভুটি হয় না। বিধায়ক বা সাংসদ প্রস্তাবের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে মন্ত্রী লিখিতভাবে তাঁর বক্তব্য জানিয়ে থাকেন।
প্রশ্ন 4. নিয়মতান্ত্রিক
শাসক হিসেবে রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতা আলোচনা করো।
অথবা, অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতা
ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতো সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপালও নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। সংবিধানের ১৫৩ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য একজন রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। তবে দুই বা ততোধিক রাজ্যের জন্য একই ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করা যেতে পারে। রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁর নিয়মতান্ত্রিক ভূমিকার কথা তুলে ধরা যেতে পারে। রাজ্যপাল যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক শাসক, তাই তাঁর পদটিকে নেহাত নামসর্বস্ব পদ বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেন।
নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলার কারণ
[1] রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুসারে ক্ষমতা প্রয়োগ: সংসদীয় প্রশাসনে রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে রাজ্যপালকে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা রাজ্যপালের নামে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তা ছাড়া সংবিধানে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, রাজ্যপালকে পরামর্শ দান ও সাহায্য করার জন্য একটি মন্ত্রীসভা থাকবে। রাজ্যপাল এই সাংবিধানিক নির্দেশ অনুযায়ী চলতে বাধ্য।
[2] রাজ্য মন্ত্রীসভার দায়বদ্ধতা: সংবিধান অনুসারে রাজ্যের মন্ত্রীসভা তাদের সম্পাদিত কাজকর্মের জন্য রাজ্য বিধানসভার কাছে যৌথভাবে দায়বদ্ধ থাকে, রাজ্যপালের কাছে নয়। এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে রাজ্যপাল প্রকৃত শাসক নন, তিনি একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসকমাত্র।
[3] মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা: নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতাবলে রাজ্যপাল, বিধানসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, তার নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করে থাকেন। রাজ্যপালের এই ক্ষমতা নেহাতই আনুষ্ঠানিক।
[4] মন্ত্রীসভা বাতিলের নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা: মন্ত্রীসভাকে বাতিল করার যে ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে থাকে তাকেও তত্ত্বগত বলা হয়েছে। কারণ এক্ষেত্রেও রাজ্যপাল কতকগুলি নিয়ম অনুসরণ করেই কাজ করেন। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তাদের গরিষ্ঠতা হারালে মন্ত্রীসভা পদচ্যুত হয়। অতএব, রাজ্য মন্ত্রীসভার টিকে থাকার বিষয়টি বিধানসভাতেই স্থির হয়ে যায়। সংবিধানের ১৬৪(১) নং ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যপালের 'সন্তুষ্টি'র ওপর মন্ত্রীদের ক্ষমতাসীন থাকার বিষয়টি নির্ভরশীল। এই প্রসঙ্গে, ড বাবাসাহেব আম্বেদকরের বক্তব্য হল, এখানে 'সন্তুষ্টি' কথাটি দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার স্বীকৃত নীতি অনুসারে ব্যবহৃত হয়েছে। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন যতদিন মন্ত্রীসভার প্রতি থাকবে, ততদিন মন্ত্রীরা ক্ষমতায় টিকে থাকবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন হারালে রাজ্যপালের 'সন্তুষ্টি' মন্ত্রীসভাকে ক্ষমতায় রাখতে পারে না।
[5] জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি: অনেকে মনে করেন, সংবিধান রচয়িতারা রাজ্যপালকে নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই কারণে তিনি নির্বাচিত না হয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। তাই মন্ত্রীরা যেখানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সেখানে রাজ্যপাল হলেন রাষ্ট্রপতির দ্বারা মনোনীত একজন ব্যক্তিমাত্র।
[6]স্বেচ্ছাধীনক্ষমতারসীমাবদ্ধতা:রাজ্যপালের যে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা রয়েছে, সেক্ষেত্রেও তিনি একনায়কের মতো যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না। আদালতের বিভিন্ন রায়ে একথা বলা হয়েছে। ১৯৫০ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে ঘোষণা করেন যে, রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শ ছাড়া স্বেচ্ছাধীনভাবে রাজ্যপালের কাজ করার ক্ষমতা নেই (The Governor under the present Constitution cannot act except in accordance with the advice of his ministers.)। গণপরিষদের সদস্যদের মধ্যে কৃয়মাচারি এবং মুন্সী প্রমুখ এই মতামত ব্যক্ত করেন। আম্বেদকরের বক্তব্য, রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দায়িত্বশীল সংসদীয় ব্যবস্থায় কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না। সংবিধান বিশেষজ্ঞ এম ভি পাইলির মতে, এটা স্পষ্টভাবে বলা যেতে পারে যে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বাস্তবে চরম ক্ষমতা হয়ে উঠতে পারে না। কারণ চরম স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা হল স্বৈরতন্ত্রের একটি উপাদান। রাজ্যপালকে যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করতে হয়, তাই তিনি কোনো অবস্থাতেই একজন স্বৈরতান্ত্রিক হতে পারেন না।
প্রশ্ন 5. রাজ্যপালের
সঙ্গে মন্ত্রীপরিষদের সম্পর্কের মূল্যায়ন করো। অথবা, ভারতের
কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর মন্ত্রীপরিষদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: রাজ্যপালের
সঙ্গে মন্ত্রীপরিষদের সম্পর্ক
সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামো কেন্দ্রের মতো ভারতীয় অঙ্গরাজ্যগুলিতেও
প্রবর্তিত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যের
নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান হলেন রাজ্যপাল। প্রকৃত শাসনক্ষমতা মন্ত্রীসভার হাতে
ন্যস্ত রয়েছে। সংবিধানের ১৬৩(১) নং ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি রাজ্যে
মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীসভা থাকবে। রাজ্যের প্রশাসন পরিচালনায়
মন্ত্রীসভা রাজ্যপালকে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করবে।
[1] মন্ত্রীসভা
গঠন: সংবিধানের ১৬৪ নং
ধারায় রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য মন্ত্রীসভার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ
কতকগুলি নির্দেশ উল্লিখিত হয়েছে। রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা
হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ
করে থাকেন। কিন্তু বিধানসভায় কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, সেক্ষেত্রে
রাজ্যপালের স্ববিবেচনা অনুসারে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। ১৯৫৭ সালে কেরলে, ১৯৮২ সালে
হরিয়ানায়, ১৯৯৭ সালে উত্তরপ্রদেশে, ২০০৫ সালেঝাড়খণ্ডে
এবং গোয়ায় এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল মন্ত্রীসভা
গঠনে স্ববিবেচনা প্রয়োগ করেন।
[2] রাজ্যপালের
'সন্তুষ্টি' এবং
মন্ত্রীসভার কার্যকাল: সংবিধানের ১৬৪(১)
নং ধারায় বলা হয়েছে, মন্ত্রীসভার কার্যকালের মেয়াদ রাজ্যপালের 'সন্তুষ্টি'র ওপর নির্ভর করবে
(... "The Ministers shall hold office during the pleasure
of the Governor.")। ড বাবাসাহেব আম্বেদকরের অভিমত হল, সংসদীয়
শাসনব্যবস্থার স্বীকৃত মৌল নীতি অনুযায়ী 'সন্তুষ্টি কথাটি
ব্যবহার করা হয়েছে। বস্তুতপক্ষে, রাজ্য বিধানসভায়
সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন না থাকলে রাজ্যপালের 'সন্তুষ্টি' সেই মন্ত্রীসভাকে
টিকিয়ে রাখতে পারে না। ('During pleasure' is always understood to mean that
the 'pleasure' shall not continue not withstanding the fact that the ministry
has lost the confidence of the majority.)।রাজ্যপাল সংবিধানের ১৬৪ (১) নং ধারা অনুযায়ী তাঁর 'সন্তুষ্টি' প্রত্যাহার করে
নিয়ে মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করতে পারেন কিনা সেসম্পর্কে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ
রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৬৭ সালে
পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ধরমবীর, অজয় মুখোপাধ্যায়ের
নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভাকে রাজ্য বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার সুযোগ না
দিয়ে বরখাস্ত করেছিলেন। অনুরূপভাবে, ১৯৭০ সালে
উত্তরপ্রদেশের চরণ সিং মন্ত্রীসভার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল গোপাল রেড্ডি মুখ্যমন্ত্রীকে
বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ না দিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার
সুপারিশ করেন। ১৯৮৪ সালে সিকিম, জম্মু ও কাশ্মীর
এবং অন্ত্রের মন্ত্রীসভাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল প্রায় একইভাবে বরখাস্ত করেন।
১৯৬৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাকির হোসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে লেখা
এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল যদি মনে করেন যে মন্ত্রীসভা বিধানসভার আস্থা
হারিয়েছে, তাহলে মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করার জন্য রাজ্যপাল
স্ববিবেচনা অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ১৯৬৮ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে
জানায় যে, রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার পরামর্শকে উপেক্ষা করতে পারেন
এবং মন্ত্রীসভার ওপর থেকে তাঁর 'সন্তুষ্টি' প্রত্যাহার করে
মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করতে পারেন। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় অবশ্য এক্ষেত্রে
বিতর্কের সমাপ্তি ঘটাতে পারেনি। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে এক
রায়ে ঘোষণা করে যে, রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক হলেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের
কোনো ব্যক্তিগত 'সন্তুষ্টি' নেই। রাজ্যপালের 'সন্তুষ্টি' হল মন্ত্রীসভার
সন্তুষ্টিবিশেষ। মন্ত্রীসভার সহযোগিতা ও পরামর্শের প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের 'সন্তুষ্টি'-র বিষয়টি বিচার
করতে হবে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামোর মুখ্য রীতি অনুযায়ী রাজ্যপাল
মন্ত্রীসভার সহযোগিতা ও পরামর্শ অনুযায়ী সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। প্রসঙ্গত
উল্লেখ করা যায় যে, সারকারিয়া কমিশনের অভিমত হল, যতক্ষণ রাজ্য
বিধানসভায় মন্ত্রীসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে ততক্ষণ রাজ্যপাল মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত
করতে পারেন না।
(3) স্বেচ্ছাধীন
ক্ষমতা: সাধারণভাবে
স্বাভাবিক অবস্থায় রাজ্যপালকে মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হলেও, যেসব ক্ষেত্রে
তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা আছে সেখানে তিনি মন্ত্রীসভার পরামর্শ নিতে বাধ্য নন।
প্রসঙ্গত বলা যায়, কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল এই স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা
প্রয়োগ করতে পারবেন সেই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। এই
ব্যাপারে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিয়েছে সংবিধান [১৬৩ (২) নং ধারা]।
তার ফলে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার আওতায় রাজ্যপাল কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সাংবিধানিকভাবে
তার বিরোধিতা করা যাবে না।
সংবিধানে রাজ্যপালকে আইন, শাসন, অর্থ প্রভৃতি
ক্ষেত্রে যে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে তা অনেকটাই তত্ত্বগত, বাস্তবে
কার্যক্ষেত্রে এসব ক্ষমতা মন্ত্রীসভা ভোগ করে থাকে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রাজ্যের
আইন, প্রশাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষমতা রাজ্য মন্ত্রীসভা প্রয়োগ করে। এই
বিষয়ে যাবতীয় দায়দায়িত্ব মন্ত্রীসভার ওপর বর্তায়। স্বাভাবিক অবস্থায় রাজ্যপালের যে
এর ভূমিকা, তাতে তাঁকে নামসর্বস্ব সাক্ষীগোপাল ছাড়া আর কিছু বলা
যায় না। রাজ্যপালের এই ভূমিকা রাজ্যের সুষ্ঠু প্রশাসন পরিচালনার পক্ষে সহায়ক।
রাজ্য মন্ত্রীসভার প্রশাসন পরিচালনা সংক্রান্ত নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ, আইন
প্রণয়ন-সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রস্তাব রাজ্যপালকে জানানোর দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। তা
ছাড়া রাজ্যপাল যদি নিজে থেকে রাজ্য প্রশাসন বিষয়ে কিছু জানতে চান, তাহলে সেই বিষয়ে
তাকে অবগত করানোর দায়িত্বও মুখ্যমন্ত্রীর ওপর বর্তায়। রাজ্যপাল অনেক সময় কোনো
বিশেষ বিষয় বিচারবিবেচনার জন্য মন্ত্রীসভায় পেশ করার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে
নির্দেশ দিতে পারেন। রাজ্য মন্ত্রীসভার সঙ্গে রাজ্যপালের সংযোগের সেতু রচনা করেন
মুখ্যমন্ত্রী।
[4] সংসদীয়
রীতিনীতি: বস্তুত, সংসদীয়
শাসনব্যবস্থার রীতিনীতির ওপর রাজ্যপাল ও মন্ত্রীসভার সম্পর্ক দাঁড়িয়ে রয়েছে।
স্বাভাবিক অবস্থায় রাজ্যপালকে মন্ত্রীসভার সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে চলতে হয়। এই
পরামর্শ অগ্রাহ্য করে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্যপাল মন্ত্রীসভাকে
বরখাস্ত করতে পারেন। এমনকি তিনি বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থাও
করতে পারেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে আগের শাসক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে
মন্ত্রীসভা গঠন করলে রাজ্যপালের প্রতি জনগণের অনাস্থা প্রকাশিত হয়। এই ঘটনা
রাজ্যপাল-পদের পক্ষে মর্যাদাহানিকারক। এই প্রসঙ্গে দৃষ্টান্তস্বরূপ, ১৯৮৪ সালের ১৬
আগস্ট অন্ধ্রের তৎকালীন রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী এন টি রামা রাওকে হঠাৎ বরখাস্ত করে
অগণতান্ত্রিকভাবে সংখ্যালঘু কংগ্রেস দলের সমর্থনপুষ্ট ভাস্কর রাওকে মুখ্যমন্ত্রী
হিসেবে নিয়োগ করেন। অবশ্য এক মাসের মধ্যে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে
না পারায়, রাজ্যপাল ১৯৮৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভাস্কর রাওকে
পদচ্যুত করতে এবং পুনরায় রামা রাওকে মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য আহ্বান জানাতে বাধ্য হন।
[5] মনোনীত
পদাধিকারী: অনেকের মতে, রাজ্যপাল ও
মন্ত্রীসভার সম্পর্কের বিষয়ে সংবিধানের ১৬৪ (১) নং ধারা এবং ১৬৪ (২) নং ধারা বিশেষ
তাৎপর্যপূর্ণ। ১৬৪(১) নং ধারায় যেমন রাজ্যপালের 'সন্তুষ্টি'-র কথা বলা হয়েছে, পাশাপাশি ১৬৪(২)
নং ধারায় রাজ্য বিধানসভার কাছে মন্ত্রীসভার যৌথ দায়বদ্ধতার নীতি ঘোষিত হয়েছে।
সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত
প্রতিনিধিদের হাতে প্রকৃত ক্ষমতা অর্পিত থাকে। মন্ত্রীরা হলেন রাজ্যের জনগণের
নির্বাচিত প্রতিনিধি। অন্যদিকে, রাজ্যপাল
রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হয়ে আসেন, তাঁর মনোনয়নের
সঙ্গে জনগণের নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এই কারণে রাজ্যপালকে জনপ্রতিনিধি বলা
যায় না। সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রশাসনে মনোনীত পদাধিকারীর হাতে প্রকৃত ক্ষমতা থাকতে
পারে না। বস্তুত, সংবিধান-প্রণেতারা রাজ্যপালের পদটিকে রাজ্যের
নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধানের পদ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সংসদীয় শাসনব্যবস্থার
প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুসারে, শাসনতান্ত্রিক প্রধান সর্বদা মন্ত্রীসভার পরামর্শমতো
কাজ করবেন, এটাই প্রত্যাশা করা যায়। তা ছাড়া রাজ্যের প্রশাসনের
দায়দায়িত্বের সবটাই মন্ত্রীসভার ওপর বর্তায়। রাজ্য প্রশাসনের কাজকর্মের জন্য রাজ্য
মন্ত্রীসভাকে দায়ী করার অর্থ হচ্ছে, মন্ত্রীসভাকে
প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। মন্ত্রীসভার ক্ষমতায় আসীন থাকার
বিষয়টি, সংসদীয় রীতি অনুযায়ী, বিধানসভার
সদস্যদের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল, রাজ্যপালের
সন্তুষ্টির ওপর নয়। মন্ত্রীসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাচাই করার বিষয়টিও বিধানসভায়
ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক, রাজ্যপালের
অনুমানের ভিত্তিতে বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়া কাম্য নয়।
উপসংহার: সংসদীয়
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রীসভার হাতে
প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত রয়েছে। তত্ত্বগতভাবে রাজ্যপাল রাজ্য প্রশাসনের প্রধান হলেও, প্রকৃত ক্ষমতা
তাঁর হাতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যপাল একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসক। মন্ত্রীসভার সঙ্গে তাঁর
সম্পর্ক সেভাবেই নির্ধারিত হয়।
------------------------------------
Editing by- Rita Moni Bora