অধ্য়ায়-৬
সরকারের বিভিন্ন বিভাগ
--------------------------------------
MCQs
1. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রধান প্রবক্তা হলেন-
(a) মতেত্ত্ব ✔
(b) ডাইসি
(c) ব্ল্যাকস্টোন
(d)বার্কার
2. সরকারি কার্যাবলিকে মূলত দুই ভাগ করা যায়-
(a) দুই
(b) তিন ✔
(c) চার
(d) পাঁচ
3. সরকারের তৃতীয় অঙ্গের নাম হল-
(a) আইন বিভাগ
(b) শাসন বিভাগ
(c) বিচার বিভাগ ✔
(d)সংবাদমাধ্যম
4. গেটেল, উইলোবি প্রমুখের মতে, সরকারের-
(a) চারটি বিভাগ
(b) পাঁচটি বিভাগ ✔
(c) ছয়টি বিভাগ
(d) সাতটি বিভাগ
6. "চারটি চোখ দুটি চোখের অপেক্ষা অনেক ভালো দেখে।" বলেছেন-
(a) লর্ড ব্রাইস
(b) ল্যাস্কি
(c) ব্লুন্টসলি ✔
(d) মিল
7. 'Government of England' গ্রন্থের লেখক হলেন-
(a) লাওয়েল ✔
(b) মতেঁস্কু
(c) বেজহট
(d) লর্ড অ্যাক্টন
৪ . স্পিরিট অব দ্য লজ গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
(a) ১৭৪২
(b) ১৭৪৩
(c) ১৭৪৬
(d) ১৭৪৮ ✔
9. কমেন্টারিজ অন দ্য লজ অব ইংল্যান্ড গ্রন্থটির রচয়িতা-
(a) মতেঁস্কু
(b) বোদাঁ
(c) ব্ল্যাকস্টোন ✔
(d) পলিবিয়াস
10 . কমেন্টারিজ অন দ্য লজ অব ইংল্যান্ড গ্রন্থটি কবে প্রকাশিত হয়?
(a) ১৭৪৮
(b) ১৭৫০
(c) ১৭৬২
(d) ১৭৬৫ ✔
11. কত সালে ফ্রান্সের গণপরিষদ প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি অপরিহার্য বলে ঘোষিত হয়?
(a) ১৭৪৮
(b) ১৭৫২
(c) ১৭৮৯ ✔
(d) ১৭৯০
12. একই হাতে যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনকে কে 'স্বেচ্ছাচারিতার সংজ্ঞা' বলে অভিহিত করেছেন?
(a) ল্যাস্কি
(b) ম্যাডিসন ✔
(c) মতেস্কু
(d) ব্ল্যাকস্টোন
13. "আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ যদি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে, তবে প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্বশীলতা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হবে" কার উক্তি?
(a) ম্যাডিসন
(b) মতেস্কু
(c) ল্যাস্কি ✔
(d) ফাইনার
14. কার মতে, "ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে সরকার কখনও মূর্ছিত হয়ে পড়বে, কখনও আবার সে ধনুষ্টংকার রোগীর মতো অসহায়ভাবে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করবে"?
(a) ল্যাস্কি
(b) স্যাবাইন
(c) ম্যাডিসন
(d) ফাইনার ✔
15. 'জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন' বলে কে মনে করতেন?
(a) মতেস্কু
(b) ব্ল্যাকস্টোন ✔
(c) ল্যাস্কি
(d) হ্য়ারিংটন
16. পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ-
(a) সম্ভব
(b) অকাম্য
(c) অসম্ভব
(d) অসম্ভব ও অকাম্য ✔
17. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় যাঁর রচনায়, তিনি হলেন-
(a) লেকি
(b) ব্রাইস
(c) অ্যারিস্টট্ল ✔
(d) ম্যাকিয়াভেলি
18. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রথম প্রযুক্ত হয়-
(a) ব্রিটেনে
(b) পাকিস্তানে
(c) নেপালে
1. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চারজন সমালোচকের নাম করো।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চারজন সমালোচক হলেন স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট, ল্যাস্কি ও লিপ্সন।
2. সরকারের ক-টি ভাগ ও কী কী?
▶ সরকারের তিনটি বিভাগ, যথা-① আইন বিভাগ, ② শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ।
3. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে একটি যুক্তি দাও।
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে একটি যুক্তি হল, এটি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।
4. গণতান্ত্রিক সরকার কোন্ কোন্ বিভাগের সাহায্যে কার্যাবলি সম্পাদন করে?
▶ গণতান্ত্রিক সরকার শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সাহায্যে কার্যাবলি সম্পাদন করে।
5. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কাকে বলে?
▶ সরকারের তিনটি বিভাগ যখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তখন তাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলে।
6. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কত প্রকার অর্থ করা যায়?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিন প্রকার অর্থ করা যায়।
6. কোন্ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির সমর্থন করেন?
▶ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বোঁদা প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির সমর্থন করেন।
7. সরকারের তিনটি বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের নীতিকে কী বলে?
▶ সরকারের তিনটি বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের নীতিকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলে।
8. মার্কিন সংবিধান রচনাকালে কারা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সমর্থন জানান?
▶ মার্কিন সংবিধান রচনাকালে হ্যামিলটন, ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সমর্থন জানান।
9. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্য কোন্ দেশগুলিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়?
▶ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশগুলিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়।
10. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির শর্ত তিনটি কী কী?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিনটি শর্ত হল-
① সরকারের তিনটি বিভাগ (শাসন, আইন ও বিচার) নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সম্পূর্ণ
② এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।
10. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পীঠস্থান হিসেবে কোন্ রাষ্ট্রকে মনে করা হয়?
▶ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পীঠস্থান মনে করা হয়।
12. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে কীরূপ শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে?
▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
13. কোন্ ধরনের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়?
▶ সংসদীয় বা মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।
14. কারা মনে করেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে বাস্তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষ দেখা দেবে?
▶ জন স্টুয়ার্ট মিল, ব্লন্টসলি, ফাইনার ল্যাস্কি প্রমুখ মনে করেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে বাস্তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষ দেখা দেবে।
15. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটিকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে স্বীকার করতে কারা সম্মত নয়?
1. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বটি আলোচনা করো।
উত্তৰ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্ব
মূল বক্তব্য
আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য প্রধান তিনটি বিভাগ হল আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল, রাষ্ট্র পরিচালনার তিন প্রধান স্তম্ভ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য। তিনটি বিভাগ পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখবে এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।
বৈশিষ্ট্য: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল① শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য, ② অন্য বিভাগের কাজে কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করা, ও একই ব্যক্তির একাধিক বিভাগের পদে একই সময়ে নিযুক্ত না থাকা।
উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল স্রষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল, রোমের দার্শনিক পলিবিয়াস ও সিসেরো, ফরাসি দার্শনিক জাঁ বোদাঁ এবং ইংল্যান্ডের চিন্তাবিদ জন লক ও হ্যারিংটন। পরবর্তীকালে ফরাসি চিন্তাবিদ মতেস্ক এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্ল্যাকস্টোনের রচনায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটে। ১৭৪৮ সালে মঁতেস্কু তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ The Spirit of the Laws প্রণয়ন করেন। এই গ্রন্থে তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কথা বলেন। মঁতেস্কুর অভিমত হল, আইন ও প্রশাসনের ক্ষমতা যদি কোনো একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বৈরাচারী আইন প্রণয়ন করে তাকে যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করতে পারে। এর ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই ব্যক্তিস্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির স্বীকৃতি আবশ্যক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্ল্যাকস্টোন তাঁর Commentaries on the Laws of England গ্রন্থে প্রায় অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি উদারভাবে গ্রহণ করার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, আইন, শাসন ও বিচারের সমস্ত ক্ষমতা একই বিভাগের হাতে থাকলে তা স্বৈরাচারিতায় পর্যবসিত হয়।
বাস্তব প্রয়োগ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সর্বপ্রথম বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় ১৭৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে। মার্কিন সংবিধানের ১, ২ এবং ৩ নং ধারা অনুযায়ী যথাক্রমে আইন, শাসন ও বিচারের যাবতীয় ক্ষমতা তিনটি বিভাগের হাতে আলাদাভাবে ন্যস্ত রয়েছে। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সের গণপরিষদ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে অপরিহার্য বলে ঘোষণা করে। বর্তমানে মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
সমালোচনা:
[1] বাস্তবায়ন দুরূহ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিরুদ্ধে প্রধান সমালোচনা হল বাস্তবে এই নীতির পূর্ণ প্রয়োগ আদৌ সম্ভব নয়। কারণ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগকে কখনোই পুরোপুরি স্বতন্ত্র করা যায় না।
[2] পূর্ণ প্রয়োগ অনভিপ্রেত: জন স্টুয়ার্ট মিল, ব্লুন্টন্সি, ফাইনার, ল্যাস্কি প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির পূর্ণ প্রয়োগ আদৌ কাম্য নয়। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করলে এই স্বাতন্ত্র্য বিরোধ ডেকে আনবে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পটভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বয়ং ম্যাডিসন ও অন্য যুক্তরাষ্ট্রীয়পন্থীরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রশাসন অচল হয়ে পড়বে।
[1] বিভাগীয় স্বাধীনতার সংরক্ষণ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে কাজকর্ম পরিচালনা করায় একে অপরের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায় না। এর ফলে বিভাগীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না।
[2] কর্মকুশলতার বৃদ্ধি: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবায়িত হলে সরকারের তিনটি বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে কাজ করার যে সুযোগ লাভ করে, তার ফলে তাদের কর্মকুশলতা বৃদ্ধি পায়।
[3] স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ: অনেকে মনে করেন, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবে রূপায়িত হলে সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়। কারণ এক্ষেত্রে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ প্রায় সমমর্যাদার অধিকারী হওয়ায় কোনো একটি বিভাগের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
[4] দায়িত্বশীলতার বিকাশ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের ফলে সরকারের তিনটি বিভাগের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এতে কাজকর্মের তাগিদে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে দায়িত্বশীলতার বিকাশ ঘটে।
[5] মতেত্ত্ব ও ম্যাডিসনের অভিমত: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম প্রবক্তা মতেস্কর মতে, আইন ও প্রশাসনের ক্ষমতা যদি কোনো একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে ন্যস্ত থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বৈরাচারী আইন প্রণয়ন করে তাকে যথেচ্ছভাবে কাজে লাগাতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অন্যতম রূপকার ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সপক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন আইন, শাসন ও বিচারের সমস্ত ক্ষমতা একই বিভাগের হাতে থাকলে তাকে স্বৈরাচারিতা বলে অভিহিত করা যায়।
3 "পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভবও নয়, সমীচীনও নয়।"- আলোচনা করো।
উত্তৰ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্ব
মূল বক্তব্য: আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য প্রধান তিনটি বিভাগ রয়েছে, যথা-আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল, সরকারের এই তিনটি বিভাগ নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না এবং একই ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না।
মতেস্কর অভিমত: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল প্রবক্তা ফরাসি দার্শনিক মতেস্কু তাঁর The Spirit of the Laws গ্রন্থে এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, সরকারের মূল তিনটি কাজ [যথাক্রমে আইন প্রণয়ন, আইনের বাস্তবায়ন (প্রশাসন) ও বিচারকার্য তিনটি পৃথক বিভাগের মাধ্যমে সম্পাদিত হওয়া উচিত। একই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে সরকারের এই তিনটি কাজ থাকা উচিত নয়। কারণ সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বৈরাচারী প্রবণতা দেখা দেবে ও তার ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়বে। কাজেই ব্যক্তিস্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির স্বীকৃতি প্রয়োজন। মূলত সমকালীন (১৭৪৮ খ্রি.) ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করে মতেস্ক ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বের প্রচার করেন। মার্কিন সংবিধান রচয়িতাদের অন্যতম ম্যাডিসন বলেন, একই হাতে সকল ক্ষমতার পুঞ্জীকরণকে সঠিক অর্থে স্বৈরাচারিতার অন্য নাম বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে ("The accumulation of all powers... in the same hands may justly be pronounced as the very defini- tion of tyranny")।
পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়:
যে সমস্ত কারণে পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বাস্তবে সম্ভব বলে মনে করা হয় না, সেগুলি হল-
4. আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলি আলোচনা করো। অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের কার্যাবলি আলোচনা করো।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসন বিভাগের এই স্থায়ী অংশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর সব দেশেই শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্যরা অর্থাৎ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিরা যেসব নীতি ও কর্মসূচি তৈরি করেন তা বাস্তবে রূপায়ণের দায়িত্ব পালন করেন স্থায়ী সরকারি কর্মীরা। এঁদের কর্মক্ষমতা, সততা, দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির ওপর সরকারের সাফল্য নির্ভরশীল।
শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের মূল বৈশিষ্ট্য
শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
[1] মেধার ভিত্তিতে নিযুক্তি: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সদস্যরা সরকারি কর্মী হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিযুক্ত হন। এঁদের নিয়োগের সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই ।
[2] নির্ধারিত বেতনক্রম: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সদস্যরা প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে বেতন পান। তাঁদের বেতন হার সংশোধনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাঁদের প্রমোশন দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে।
[3] স্তরবিন্যস্ত কার্যক্রম: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কাজকর্মের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এদের স্তরবিন্যস্ত কার্যক্রম। একদিকে যেমন শীর্ষে রয়েছেন ডিরেক্টর বা অধিকর্তা পর্যায়ের আমলারা, অন্যদিকে তেমনি সর্বনিম্ন ধাপে রয়েছেন কেরানি বা করণিকরা। নিম্নস্তরে প্রশাসনিক কাজকর্মের সুষ্ঠু - পরিচালনার জন্য শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ আসে। শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কাজকর্মকে এভাবে বিন্যস্ত করা হয়।
[4] স্থায়িত্ব: শাসন বিভাগের এই অ-রাজনৈতিক কর্মীদের কার্যকাল চার বা পাঁচ বছরের জন্য নির্দিষ্ট নয়, এঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হন। এই কারণে এঁদের প্রশাসনের স্থায়ী অংশ বলা হয়। শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্যরা তাঁদের কার্যকালের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলে সরে যেতে বাধ্য হন। যেমন, আমাদের এখানে কেন্দ্রে বা রাজ্যগুলিতে পাঁচ বছরের জন্য মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। পাঁচ বছর কাজ করার পর মন্ত্রীসভার মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। অন্যদিকে, শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা ৫৮ বা ৬০ বছর অবধি তাঁদের কাজে বহাল থাকেন।
[5] আইনসম্মত কর্তৃত্ব: সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েবারের মতে, শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশ বা আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব বিধিবদ্ধ আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। একজন সরকারি কর্মী কারুর প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য দেখিয়ে কিছু করতে পারেন না। তাঁর প্রশাসনিক কাজকর্মের সবটাই সরকারি নিয়মকানুন ও বিধিবদ্ধ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
[6] নিরপেক্ষতা: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নিরপেক্ষতা। যেহেতু এঁরা কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন তাই দল ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে এঁরা দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োগ করেন।
[7] নিরবচ্ছিন্নতা: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা প্রশাসনের কাজকর্মের নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে এক সরকারের চলে যাওয়া এবং নির্বাচনে জয়লাভের পর নতুন আর-এক সরকারের ক্ষমতায় আসার মাঝখানে যে ফাঁকা সময়টুকু থাকে, সেই সময়ে প্রশাসনিক কাজকর্মের নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখার গুরুদায়িত্ব পালন করেন স্থায়ী কর্মীরা।
[৪] নিয়মকানুনের প্রতি আনুগত্য: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সদস্যরা কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা কোনো সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকেন না। তাঁরা প্রশাসনিক নিয়মকানুন ও আইনের প্রতি অনুগত থাকেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের নিয়মকানুন মেনে কাজ করা হয়।
7. শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের অর্থ কী? শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কার্যাবলি ও গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কার্যাবলি
শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সদস্যরা যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম সম্পাদন করে থাকেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
[1] সরকারি নীতি, সিদ্ধান্ত ও আইনকানুন বাস্তবে রূপায়িত করা: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সরকারের নীতি, সিদ্ধান্ত ও আইনকানুনকে বাস্তবে রূপায়িত করা। শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্যরা যেসব নীতি ও সিদ্ধান্ত নেন, যেসব আইনকানুন তৈরি করেন, তাকে কার্যকরী করার দায়িত্ব শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীদের।
[2] শাসন বিভাগের কাজকর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে পুরোনো সরকার বিদায় নেয়, তারপর নির্বাচনের রায় মাথায় নিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে। এই যাওয়া-আসার মাঝখানের সময়টুকুতে প্রশাসনের কাজকর্মের অবশ্য কোনো ছেদ পড়ে না। শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা এ সময় প্রশাসনের কাজকর্মের ধারাবাহিকতা বা নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন।
[3] প্রশাসনিক পরামর্শ দান: এটা প্রায় সব দেশেই দেখা যায় যে, শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ অর্থাৎ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির মতো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা শাসনকার্য পরিচালনায় অভিজ্ঞ আমলাদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করেন। শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মী হওয়ার সুবাদে দীর্ঘকাল যাবৎ যে অভিজ্ঞতা আমলারা সঞ্চয় করেন তার মূল্য অনেক, আমলারা তাঁদের এই মূল্যবান অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ দান করে প্রশাসন পরিচালনার কাজকে আরও ত্বরান্বিত করেন।
[4] আইন প্রণয়নে সাহায্য দান: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আইন প্রণয়নের কাজে সরকারকে সাহায্য করা। বর্তমান যুগে আইন প্রণয়নের কাজটি বেশ জটিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি আইনের খসড়া বা বিল প্রস্তুত করা একজন মন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের এ ধরনের বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা কোনোটাই থাকে না। এই অবস্থায় শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা এগিয়ে আসেন। তাঁরা তাঁদের মেধা, দক্ষতা ও বিশেষীকৃত জ্ঞান দিয়ে আইনের খসড়া প্রস্তুত করার জটিল কাজটিকে যথাসম্ভব সহজ করে তোলেন। অনেকের মতে, বর্তমান যুগে আইনসভার অধিকাংশ বিলের প্রকৃত রচয়িতা শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মী বা আমলারা। রাজনৈতিক শাসকরা শুধু আইনের মূল নীতিটুকু ঠিক করেন কিন্তু তাকে পরিপূর্ণ চেহারা দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন স্থায়ী কর্মীরাই।
[5] অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা: শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা করা। এর মধ্যে রয়েছে সমগ্র দেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাজকর্মগুলির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে চলা, সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের পরিচালনা করা, সেগুলি যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা ইত্যাদি।
[6] সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ করা: শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সারা দেশ জুড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহ করে থাকেন। তা ছাড়া সরকারি প্রকল্পগুলির সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়েও তাঁরা অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার মতো কাজও করেন। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় আইনসভা ও রাজ্য আইনসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন সদস্যের তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রীরা যেসব তথ্যের বিবরণ দেন তা জুগিয়ে থাকেন শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরাই। এই কাজে আমলাদের ওপর নির্ভর করা ছাড়া মন্ত্রীদের কোনো উপায় থাকে না।
শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশ বা আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব পৃথিবীর সব দেশেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র যাই হোক না কেন, সর্বত্র শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা বিদ্যমান। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা নেই। আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রপরিচালনার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হল স্থায়ী কর্মীদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা বা আমলাতন্ত্র। এ যুগে আমলাতন্ত্র ছাড়া প্রশাসন পরিচালনা অসম্ভব। শুধুমাত্র সরকারি প্রশাসনে নয় বেসরকারি প্রশাসনেও আমলাতন্ত্রের অস্তিত্ব অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্য হিসেবে নেতা ও নেত্রীরা রাজনীতিতে যতখানি মন দেন প্রশাসনে তা দিতে পারেন না। তা ছাড়া সরকারের আনুমানিক আয়ব্যয়ের হিসাব বা বাজেট তৈরির মতো বিশেষ কাজে বা আইন প্রণয়নের কাজে অথবা উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার খুঁটিনাটি বিষয় তৈরির কাজে যে ধরনের দক্ষতা ও বিশেষীকৃত জ্ঞানের প্রয়োজন হয় তা রাজনৈতিক অংশের সদস্যদের থাকে না। এসব কারণে শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশকে প্রশাসন পরিচালনার জন্য স্থায়ী অংশের কর্মীদের ওপর নির্ভর করতেই হয়। এই নির্ভরতা আজ একুশ শতকের বিশ্বায়নের যুগে সব দেশেই ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
--------------------------------------------------------
👉Paid Answer (For Membership User)
Editing by- Rita Moni Bora