অধ্য়ায়-৬

 সরকারের বিভিন্ন বিভাগ

--------------------------------------

 MCQs


1. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রধান প্রবক্তা হলেন-

(a) মতেত্ত্ব

(b) ডাইসি

(c)  ব্ল‍্যাকস্টোন

(d)বার্কার 

2. সরকারি কার্যাবলিকে মূলত দুই ভাগ করা যায়-

(a) দুই

(b) তিন

(c)  চার

(d) পাঁচ

3. সরকারের তৃতীয় অঙ্গের নাম হল-

(a) আইন বিভাগ

(b) শাসন বিভাগ

(c)  বিচার বিভাগ

(d)সংবাদমাধ্যম                                                                                                                                       

 4. গেটেল, উইলোবি প্রমুখের মতে, সরকারের-

(a) চারটি বিভাগ

(b) পাঁচটি বিভাগ

(c)  ছয়টি বিভাগ

(d) সাতটি বিভাগ                                                      

6. "চারটি চোখ দুটি চোখের অপেক্ষা অনেক ভালো দেখে।" বলেছেন-

(a) লর্ড ব্রাইস

(b) ল্যাস্কি

(c)  ব্লুন্টসলি

(d) মিল

7. 'Government of England' গ্রন্থের লেখক হলেন-

(a) লাওয়েল

(b) মতেঁস্কু

(c)  বেজহট

(d) লর্ড অ্যাক্টন

৪ . স্পিরিট অব দ্য লজ গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?

(a) ১৭৪২

(b) ১৭৪৩

(c)  ১৭৪৬

(d) ১৭৪৮

9. কমেন্টারিজ অন দ্য লজ অব ইংল্যান্ড গ্রন্থটির রচয়িতা-

(a) মতেঁস্কু

(b) বোদাঁ

(c)  ব্ল‍্যাকস্টোন

(d) পলিবিয়াস

10 . কমেন্টারিজ অন দ্য লজ অব ইংল্যান্ড গ্রন্থটি কবে প্রকাশিত হয়?

(a) ১৭৪৮

(b) ১৭৫০

(c)  ১৭৬২

(d) ১৭৬৫

11. কত সালে ফ্রান্সের গণপরিষদ প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি অপরিহার্য বলে ঘোষিত হয়?

(a) ১৭৪৮

(b) ১৭৫২

(c)  ১৭৮৯

(d) ১৭৯০

12. একই হাতে যাবতীয় ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনকে কে 'স্বেচ্ছাচারিতার সংজ্ঞা' বলে অভিহিত করেছেন?

(a) ল্যাস্কি

(b) ম্যাডিসন

(c)  মতেস্কু

(d) ব্ল‍্যাকস্টোন

13. "আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ যদি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে, তবে প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্বশীলতা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হবে" কার উক্তি?

(a) ম্যাডিসন

(b) মতেস্কু

(c)  ল্যাস্কি

(d) ফাইনার

14. কার মতে, "ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে সরকার কখনও মূর্ছিত হয়ে পড়বে, কখনও আবার সে ধনুষ্টংকার রোগীর মতো অসহায়ভাবে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করবে"?

(a) ল্যাস্কি

(b) স্যাবাইন

(c)  ম্যাডিসন

(d) ফাইনার

15. 'জীবন, সম্পত্তি ও স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন' বলে কে মনে করতেন?

(a) মতেস্কু

(b) ব্ল‍্যাকস্টোন

(c)  ল্যাস্কি

(d) হ্য়ারিংটন

16. পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ-

(a) সম্ভব

(b) অকাম্য

(c)  অসম্ভব

(d) অসম্ভব ও অকাম্য

17. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় যাঁর রচনায়, তিনি হলেন-

(a) লেকি

(b) ব্রাইস

(c)  অ্যারিস্টট্ল

(d) ম্যাকিয়াভেলি

18. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রথম প্রযুক্ত হয়-

(a) ব্রিটেনে

(b) পাকিস্তানে

(c)  নেপালে

(d) মার্কিন যুক্তরাষ্টে 
------------------------------------------------

 Short Answer Question

1. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চারজন সমালোচকের নাম করো।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চারজন সমালোচক হলেন স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট, ল্যাস্কি ও লিপ্সন।

 2. সরকারের ক-টি ভাগ ও কী কী?

সরকারের তিনটি বিভাগ, যথা- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ।

 3. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে একটি যুক্তি দাও।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে একটি যুক্তি হল, এটি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।

4. গণতান্ত্রিক সরকার কোন্ কোন্ বিভাগের সাহায্যে কার্যাবলি সম্পাদন করে?

গণতান্ত্রিক সরকার শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সাহায্যে কার্যাবলি সম্পাদন করে।

5. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কাকে বলে?

সরকারের তিনটি বিভাগ যখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তখন তাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলে।

 6. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কত প্রকার অর্থ করা যায়?

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিন প্রকার অর্থ করা যায়।

6. কোন্ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির সমর্থন করেন?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বোঁদা প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির সমর্থন করেন।

7. সরকারের তিনটি বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের নীতিকে কী বলে?

সরকারের তিনটি বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের নীতিকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলে।

 8. মার্কিন সংবিধান রচনাকালে কারা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সমর্থন জানান?

মার্কিন সংবিধান রচনাকালে হ্যামিলটন, ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সমর্থন জানান।

 9. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্য কোন্ দেশগুলিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশগুলিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়।

10. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির শর্ত তিনটি কী কী?

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিনটি শর্ত হল-

সরকারের তিনটি বিভাগ (শাসন, আইন ও বিচার) নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সম্পূর্ণ

এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।

একই ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না।

10. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পীঠস্থান হিসেবে কোন্ রাষ্ট্রকে মনে করা হয়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পীঠস্থান মনে করা হয়।

12. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে কীরূপ শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে?

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

13. কোন্ ধরনের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়?

সংসদীয় বা মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।

14. কারা মনে করেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে বাস্তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষ দেখা দেবে?

জন স্টুয়ার্ট মিল, ব্লন্টসলি, ফাইনার ল্যাস্কি প্রমুখ মনে করেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে বাস্তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষ দেখা দেবে।

15. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটিকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে স্বীকার করতে কারা সম্মত নয়?

স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট প্রমুখ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটিকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে স্বীকার করতে সম্মত নয়।
-----------------------------------------------------

 Long Answer Question

 1. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বটি আলোচনা করো।

উত্তৰ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্ব

মূল বক্তব্য

আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য প্রধান তিনটি বিভাগ হল আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল, রাষ্ট্র পরিচালনার তিন প্রধান স্তম্ভ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য। তিনটি বিভাগ পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখবে এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।

বৈশিষ্ট্য: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য, অন্য বিভাগের কাজে কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করা, ও একই ব্যক্তির একাধিক বিভাগের পদে একই সময়ে নিযুক্ত না থাকা।

উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল স্রষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল, রোমের দার্শনিক পলিবিয়াস ও সিসেরো, ফরাসি দার্শনিক জাঁ বোদাঁ এবং ইংল্যান্ডের চিন্তাবিদ জন লক ও হ্যারিংটন। পরবর্তীকালে ফরাসি চিন্তাবিদ মতেস্ক এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্ল‍্যাকস্টোনের রচনায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটে। ১৭৪৮ সালে মঁতেস্কু তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ The Spirit of the Laws প্রণয়ন করেন। এই গ্রন্থে তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কথা বলেন। মঁতেস্কুর অভিমত হল, আইন ও প্রশাসনের ক্ষমতা যদি কোনো একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বৈরাচারী আইন প্রণয়ন করে তাকে যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করতে পারে। এর ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই ব্যক্তিস্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির স্বীকৃতি আবশ্যক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্ল‍্যাকস্টোন তাঁর Commentaries on the Laws of England গ্রন্থে প্রায় অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি উদারভাবে গ্রহণ করার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, আইন, শাসন ও বিচারের সমস্ত ক্ষমতা একই বিভাগের হাতে থাকলে তা স্বৈরাচারিতায় পর্যবসিত হয়।

বাস্তব প্রয়োগ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সর্বপ্রথম বাস্তবে প্রয়োগ করা হয় ১৭৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে। মার্কিন সংবিধানের ১, ২ এবং ৩ নং ধারা অনুযায়ী যথাক্রমে আইন, শাসন ও বিচারের যাবতীয় ক্ষমতা তিনটি বিভাগের হাতে আলাদাভাবে ন্যস্ত রয়েছে। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সের গণপরিষদ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে অপরিহার্য বলে ঘোষণা করে। বর্তমানে মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।

 সমালোচনা:

[1] বাস্তবায়ন দুরূহ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিরুদ্ধে প্রধান সমালোচনা হল বাস্তবে এই নীতির পূর্ণ প্রয়োগ আদৌ সম্ভব নয়। কারণ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগকে কখনোই পুরোপুরি স্বতন্ত্র করা যায় না।

[2] পূর্ণ প্রয়োগ অনভিপ্রেত: জন স্টুয়ার্ট মিল, ব্লুন্টন্সি, ফাইনার, ল্যাস্কি প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির পূর্ণ প্রয়োগ আদৌ কাম্য নয়। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করলে এই স্বাতন্ত্র্য বিরোধ ডেকে আনবে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পটভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বয়ং ম্যাডিসন ও অন্য যুক্তরাষ্ট্রীয়পন্থীরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রশাসন অচল হয়ে পড়বে।

[3] ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ নয়: গিলক্রিস্ট, স্যাবাইন প্রমুখ আধুনিক লেখকরা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে মেনে নেননি। কারণ, আইন বিভাগ যদি স্বৈরাচারী হয়, তবে তার দ্বারা প্রণীত স্বৈরাচারী আইনকে কার্যকর করতে শাসন বিভাগ যেমন বাধ্য থাকে, তেমনি সেই আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করতে বিচার বিভাগও বাধ্য। সুতরাং, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কখনোই ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ হতে পারে না।
[4] তিন বিভাগের অসম ক্ষমতা: সমালোচকরা শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে সমক্ষমতাসম্পন্ন বলতে রাজি হননি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগ তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষমতার অধিকারী। কারণ আইন বিভাগের প্রণীত আইন অনুসরণ করে শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে চলতে হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে আইনসভা হল চূড়ান্ত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।

[5] জৈব মতবাদীদের সমালোচনা: বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্লুন্টসলির মতে সরকার হল জীবদেহের মতো। দেহ থেকে মস্তিষ্ককে পৃথক করলে জীবদেহের মৃত্যু যেমন অবশ্যম্ভাবী, ঠিক তেমনি সরকারের প্রধান বিভাগগুলিকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করলে সরকারের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

[6] মার্কসবাদী সমালোচনা: মার্কসবাদী সমালোচকরা সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বের সাফল্য সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মার্কসবাদীদের মতে, অসমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকার এক বিশেষ শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে চলে। কাজেই এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ অর্থহীন।

[7] সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রয়োগ অসম্ভব: যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র বা মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থা রয়েছে (যেমন ব্রিটেন, ভারত ইত্যাদি), সেখানে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।

প্রশ্ন 2. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি বিশ্লেষণ করো।

উত্তৰ:  ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি:


আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য প্রধান তিনটি বিভাগ রয়েছে। এগুলি হল-আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আইনবিভাগের কাজ আইন তৈরি করা, শাসন বিভাগের কাজ ওই আইন প্রয়োগ করা আর বিচার বিভাগের কাজ ওই আইন অনুসারে বিচার কাজ সম্পাদন করা। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল রাষ্ট্রপরিচালনার তিন প্রধান স্তম্ভ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য। বস্তুত, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে এমন এক ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে সরকারের প্রধান = তিনটি বিভাগ যথাক্রমে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

সপক্ষে যুক্তি

[1] বিভাগীয় স্বাধীনতার সংরক্ষণ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্যের সঙ্গে কাজকর্ম পরিচালনা করায় একে অপরের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায় না। এর ফলে বিভাগীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না।

[2] কর্মকুশলতার বৃদ্ধি: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবায়িত হলে সরকারের তিনটি বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে কাজ করার যে সুযোগ লাভ করে, তার ফলে তাদের কর্মকুশলতা বৃদ্ধি পায়।

[3] স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ: অনেকে মনে করেন, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বাস্তবে রূপায়িত হলে সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হয়। কারণ এক্ষেত্রে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ প্রায় সমমর্যাদার অধিকারী হওয়ায় কোনো একটি বিভাগের স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

[4] দায়িত্বশীলতার বিকাশ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগের ফলে সরকারের তিনটি বিভাগের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। এতে কাজকর্মের তাগিদে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে দায়িত্বশীলতার বিকাশ ঘটে।

[5] মতেত্ত্ব ও ম্যাডিসনের অভিমত: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম প্রবক্তা মতেস্কর মতে, আইন ও প্রশাসনের ক্ষমতা যদি কোনো একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে ন্যস্ত থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বৈরাচারী আইন প্রণয়ন করে তাকে যথেচ্ছভাবে কাজে লাগাতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অন্যতম রূপকার ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সপক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন আইন, শাসন ও বিচারের সমস্ত ক্ষমতা একই বিভাগের হাতে থাকলে তাকে স্বৈরাচারিতা বলে অভিহিত করা যায়।

3 "পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভবও নয়, সমীচীনও নয়।"- আলোচনা করো।

উত্তৰ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্ব

মূল বক্তব্য: আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য প্রধান তিনটি বিভাগ রয়েছে, যথা-আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল, সরকারের এই তিনটি বিভাগ নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না এবং একই ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না।

মতেস্কর অভিমত: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল প্রবক্তা ফরাসি দার্শনিক মতেস্কু তাঁর The Spirit of the Laws গ্রন্থে এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, সরকারের মূল তিনটি কাজ [যথাক্রমে আইন প্রণয়ন, আইনের বাস্তবায়ন (প্রশাসন) ও বিচারকার্য তিনটি পৃথক বিভাগের মাধ্যমে সম্পাদিত হওয়া উচিত। একই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে সরকারের এই তিনটি কাজ থাকা উচিত নয়। কারণ সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বৈরাচারী প্রবণতা দেখা দেবে ও তার ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে পড়বে। কাজেই ব্যক্তিস্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির স্বীকৃতি প্রয়োজন। মূলত সমকালীন (১৭৪৮ খ্রি.) ইংল্যান্ডের শাসনব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করে মতেস্ক ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ হিসেবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বের প্রচার করেন। মার্কিন সংবিধান রচয়িতাদের অন্যতম ম্যাডিসন বলেন, একই হাতে সকল ক্ষমতার পুঞ্জীকরণকে সঠিক অর্থে স্বৈরাচারিতার অন্য নাম বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে ("The accumulation of all powers... in the same hands may justly be pronounced as the very defini- tion of tyranny")।

পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়:

যে সমস্ত কারণে পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বাস্তবে সম্ভব বলে মনে করা হয় না, সেগুলি হল-

[1] সরকারি বিভাগগুলি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে চালিত হয়: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ প্রয়োগ বাস্তবে আদৌ সম্ভব নয়। কারণ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগকে কখনোই পুরোপুরি পৃথক করা যায় না। সংসদীয় ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকে। যেমন, ভারত ও ব্রিটেনের মন্ত্রীপরিষদ চালিত শাসনব্যবস্থায় দেখা যায় মন্ত্রীরা একদিকে যেমন শাসন বিভাগের কার্যাবলি সম্পাদন করছেন, অন্যদিকে তেমনি আইনসভার সদস্য হিসেবে আইন প্রণয়নের কাজেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। অনুরূপভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটেনের রানি একদিকে যেমন শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে তেমনি আবার আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

[2] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি প্রয়োগে অসংগতি: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি যে দেশের সংবিধানে প্রথম গৃহীত হয়, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তত্ত্বগতভাবে তিনটি বিভাগকে পুরোপুরি পৃথক করে দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেমন মার্কিন রাষ্ট্রপতি শাসন বিভাগের প্রধান হলেও বিচারপতিদের তিনি নিয়োগ করেন। বিচারপতিরা আবার প্রয়োজন মনে করলে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশ বাতিল করে দিতে পারেন।

অনুরূপভাবে মার্কিন আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেট সরকারি কর্মচারীর নিয়োগ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির নির্দেশনামা অনুমোদন না করলে তা কোনোভাবেই বাস্তবায়িত হয় না। বস্তুত সংসদীয় বা রাষ্ট্রপতিশাসিত যে ধরনের সরকারই হোক না কেন, বর্তমান বিশ্বে দলব্যবস্থার প্রভাবের ফলে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এ অবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ প্রয়োগ কখনোই সম্ভব নয়।

[3] তত্ত্বগতভাবে সম্ভব, বাস্তবে নয়: অনেকের মতে, পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বগতভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বাস্তবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ একে অপরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, আইনসভার হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকলেও যে সময়ে আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকে সেই সময়ে শাসন বিভাগের প্রধান (ভারতের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি) দেশের প্রয়োজনে সাময়িকভাবে অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। এ ছাড়াও বর্তমানে আইনসভার কাজকর্ম যেভাবে বেড়ে গেছে তাতে আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলির নির্ধারণের ভার আইনসভা শাসন বিভাগের হাতে তুলে দেয়। শাসন বিভাগের প্রণীত এ ধরনের আইনকে অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন (Delegated Legislation) বলা হয়। অনুরূপভাবে, বিচারকার্য সম্পাদন করতে গিয়ে অনেক সময় চলতি আইন যথেষ্ট বলে মনে না হলে বিচারপতিরা আইনের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য ব্যাখ্যার মাধ্যমে নতুন আইন সৃষ্টি করেন। একে বিচারপতিদের দ্বারা প্রণীত আইন বলা হয়। অন্যদিকে শাসন বিভাগের হাতেও বিচারের কিছু কাজ থাকে, যেমন রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক দণ্ডিত অপরাধীর শাস্তি মকুব বা হ্রাস ইত্যাদি। ব্রিটেন ও ফ্রান্সে প্রশাসনিক ন্যায়বিচার (Administrative Justice)-এর অস্তিত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে শাসন বিভাগের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের অন্যায় আচরণের বিচার ও শাস্তি দেওয়া হয়। কাজেই এ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব।

পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সমীচীনও নয়

পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণকে সমীচীন মনে না করার কারণগুলি হল-

[1] প্রশাসনিক অচলাবস্থার আশঙ্কা: জন স্টুয়ার্ট মিল, বুন্টস্ট্সি, ফাইনার, ল্যাস্কি প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির পূর্ণ | প্রয়োগ আদৌ সমীচীন বা কাম্য নয়। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করলে এই স্বাতন্ত্র্য বিরোধ ডেকে আনবে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পটভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বয়ং ম্যাডিসন ও অন্য যুক্তরাষ্ট্রীয়পন্থীরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রশাসন অচল হয়ে পড়বে।

[2] জৈব মতবাদীদের বক্তব্য: বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্লুন্টসল্লির মতে, সরকারি কাজকর্মের দক্ষতা ও সফলতা অর্জনের কারণেও পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সমীচীন নয়। কারণ সরকারের দক্ষতা ও সাফল্য প্রধান তিনটি বিভাগের পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পূর্ণ ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণের ফলে তিনটি বিভাগ যদি একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে তাহলে সরকারের কাজকর্ম কখনোই সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। সেক্ষেত্রে, সরকারি কাজকর্ম অচল হয়ে পড়তে পারে।

[3] আইন বিভাগের শ্রেষ্ঠতা: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি মনে করে যে, সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা সমান। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাধারণত আইন বিভাগ অন্য দুটি বিভাগ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতার দাবি রাখে। সংসদীয় গণতন্ত্রে আইনসভা হল চূড়ান্ত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তা ছাড়া আইন বিভাগ যথাযথভাবে আইন প্রণয়ন না করলে শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়তে পারে। এই কারণে পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কখনোই সমীচীন বা কাম্য হতে পারে না।

[4] সংসদীয় গণতন্ত্রে কাম্য নয়: সর্বোপরি যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র বা মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থা রয়েছে (যেমন গ্রেট ব্রিটেন, ভারত প্রভৃতি), সেখানে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে পৃথকীকরণ কখনোই সমীচীন বা কাম্য হতে পারে না। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম অনুসারে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগকে সবসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়।

4. আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলি আলোচনা করো। অথবা, আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের কার্যাবলি আলোচনা করো।

উত্তর: শাসন বিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলি:

অতীতে শুধুমাত্র দেশরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাই ছিল রাষ্ট্রের প্রধান কাজ। বর্তমানে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত শাসন বিভাগের কর্মকাণ্ডের পরিধি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন ।। বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি হল-

[1] অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা: শাসন বিভাগের প্রধান কাজ হল সুশৃঙ্খল সমাজজীবন গড়ে তোলার জন্য অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা। রাষ্ট্রের আইন বিভাগ যে সমস্ত আইনকানুন প্রণয়ন করে, শাসন বিভাগের দায়িত্ব হল সেইসব আইনকানুনকে বাস্তবায়িত করা। আইন লঙ্ঘনকারীকে গ্রেফতার করে বিচারের জন্য আদালতে পেশ করা, আদালতের রায় অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তিবিধানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

[2] প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ: শাসন বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল দেশের সার্বভৌমিকতা, অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করা। এজন্য স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী গঠন করা ও পরিচালনা করা শাসন বিভাগের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

[3] পররাষ্ট্রনীতি রূপায়ণ: আধুনিক বিশ্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিককালে পররাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার স কর্মকান্ড আগের চেয়ে বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। ভিন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রতিনিধি প্রেরণ; রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক চুক্তি সম্পাদন; পররাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রতিনিধিকে নিজ রাষ্ট্রে গ্রহণ; সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য পররাষ্ট্র সফরের আয়োজন; সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি কর্তৃক নির্ধারিত দায়দায়িত্ব পালন ইত্যাদি কাজের মূল দায়িত্ব শাসন বিভাগের।

[4] নীতি নির্ধারণ: শাসন বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নীতি নির্ধারণ করা। ব্রিটেন, ভারত প্রভৃতি সংসদীয় গণতন্ত্রে এই দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার হাতে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নীতি নির্ধারণের মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির। অবশ্য এ ব্যাপারে ক্যাবিনেট তাঁকে সাহায্য করে থাকে।

[5] নীতি ও কর্মসূচি রূপায়ণ: শুধুমাত্র নীতি নির্ধারণই নয়, নীতি ও কর্মসূচি রূপায়ণের প্রধান দায়িত্বও শাসন বিভাগের হাতে রয়েছে। জনগণের কাছে প্রতিশ্রুত কর্মসূচির কোন্টি আগে রূপায়ণ করা হবে, সে-সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শাসন বিভাগের প্রধান। কর্মসূচির বাস্তব রূপায়ণ গৃহীত নীতি অনুযায়ী যথাযথ হচ্ছে কি না তা দেখাশোনার দায়িত্বও শাসন বিভাগের।

[6] আইন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ ও আইন প্রণয়ন: যেসব দেশে সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ-চালিত সরকার রয়েছে, সেখানে আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা এবং প্রয়োজনে আইনসভা ভাঙার জন্য নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে শাসন বিভাগের প্রধানের হাতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শাসন বিভাগের প্রধান, রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া আইনসভায় পাস হওয়া কোনো বিল আইনে পরিণত হয় না। অন্যদিকে, আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন দেশের জরুরি প্রয়োজনে আইন বা অর্ডিন্যান্স জারি করার ক্ষমতা শাসন বিভাগের প্রধানের রয়েছে। অবশ্য এ ধরনের আইনকে পরবর্তী সময়ে আইনসভায় অনুমোদন করাতে হয়। অনেক সময় আইনসভা কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এ আইন প্রণয়নের দায়ভার শাসন বিভাগকে দিয়ে থাকে। এই আইনকে অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন (Delegated Legislation) বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের আইনের অস্তিত্ব রয়েছে।

[7] বিচার-সংক্রান্ত কার্য সম্পাদন: আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের কিছু বিচার-সংক্রান্ত কাজও রয়েছে। বিচারপতিদের নিয়োগ, দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হ্রাস, ক্ষমাপ্রদর্শন ইত্যাদি বিচারবিভাগীয় কাজ রাষ্ট্রপ্রধান করে থাকেন। এ ছাড়া প্রশাসনের কোনো কর্মীর দুর্নীতি, অন্যায় আচরণ প্রভৃতির বিচার ও শাস্তিবিধান শাসন বিভাগ করে থাকে। প্রসঙ্গত, ব্রিটেনের শাসন বিভাগীয় আইন ও ফ্রান্সের প্রশাসনিক আইনের কথা বলা যায়।

[৪] অর্থ-সংক্রান্ত কার্য সম্পাদন: কর ধার্য করা, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণসংগ্রহ, বৈদেশিক সাহায্যগ্রহণ ইত্যাদি অর্থ সংক্রান্ত কাজ শাসন বিভাগকে করতে হয়। শাসন বিভাগ এজন্য প্রয়োজনীয় নীতিনির্দেশিকা স্থির করে। এ ছাড়া সরকারি অর্থের হিসাব পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, আইনসভায় আর্থিক বছরের জন্য আনুমানিক আয়ব্যয়ের হিসাব (Budget) পেশ করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজও শাসন বিভাগ করে থাকে।

[9] জরুরি অবস্থা-সম্পর্কিত ক্ষমতা প্রয়োগ: আধুনিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের হাতে জরুরি অবস্থা-সম্পর্কিত কিছু ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষমতা দেশের শাসন বিভাগের প্রধানের হাতে ন্যস্ত থাকে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, ভারত প্রভৃতি দেশের সংবিধানে এজন্য উপযুক্ত বিধিব্যবস্থা রয়েছে।

[10] জনকল্যাণমূলক কার্য সম্পাদন: আধুনিক রাষ্ট্রকে জনকল্যাণকর রাষ্ট্র বলা হয়। এইজাতীয় রাষ্ট্রে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, যোগাযোগ ইত্যাদি নানান ক্ষেত্রে জনকল্যাণকর কাজকর্ম শাসন বিভাগকে সম্পাদন করতে হয়।

[11] নিয়োগ-সম্পর্কিত কার্য সম্পাদন: দেশের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সরকারি কর্মীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং পদচ্যুতি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষমতা শাসন বিভাগের রয়েছে। উচ্চপদস্থ সরকারি পদাধিকারীদের নিয়োগের ব্যাপারেও শাসন বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করে থাকে।

5. শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ ও অ-রাজনৈতিক স্থায়ী অংশ বলতে কী বোঝায়? শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের শ্রেণিবিভাগ করো। রাজনৈতিক অংশের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তর: শাসন বিভাগের রাজনৈতিক ও অ-রাজনৈতিক স্থায়ী অংশ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপক অর্থে শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনের একজন সাধারণ কর্মী পর্যন্ত সকল পদাধিকারীকেই বোঝায়। গঠন ও কাজকর্মের ভিত্তিতে শাসন বিভাগকে দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়- রাজনৈতিক অংশ (Political Executive) এবং অ-রাজনৈতিক স্থায়ী অংশ (Non-politi- cal Executive)। শাসন বিভাগের যে সমস্ত ব্যক্তি জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন, তাঁদের রাজনৈতিক অংশ বলে। এঁরা একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন এবং সম্পাদিত কাজকর্মের জন্য জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ, সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মন্ত্রীসভার সদস্যদের কথা বলা যায়। অন্যদিকে, শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক স্থায়ী অংশ বলতে প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত স্থায়ী কর্মচারীদের বোঝায়। এই স্থায়ী কর্মচারীরা যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্ত হন। এঁরা রাষ্ট্রকৃত্যক (Civil Ser- vants) বা আমলা (Bureaucrat) নামে পরিচিত।

শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের শ্রোণবিভাগ:

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশকে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভাজন করেছেন। যেমন- [1] প্রকৃত শাসক ও নামসর্বস্ব শাসক, [2] একক- পরিচালক ও বহু-পরিচালক এবং [3] উত্তরাধিকারসূত্রে মনোনীত শাসক এবং নির্বাচিত শাসক।

[1] প্রকৃত শাসক ও নামসর্বস্ব শাসক: কিছু কিছু রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের প্রধান তত্ত্বগতভাবে প্রধান হলেও বাস্তবে তিনি শাসন বিভাগ পরিচালনা করেন না। তাঁর নামে শাসনকার্য পরিচালিত হয়, কিন্তু তিনি শুধুমাত্র নামসর্বস্ব শাসকের ভূমিকায় থাকেন। তাই এ ধরনের শাসককে নামসর্বস্ব শাসক বলা হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও ব্রিটেনের রানি নামসর্বস্ব শাসকের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ব্রিটেনের রানির সম্বন্ধে বলা হয়, তিনি রাজত্ব করেন কিন্তু শাসন করেন না। অন্যদিকে, যাঁরা বাস্তবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন, অর্থাৎ কার্যত যাঁরা শাসন বিভাগের প্রধান তাঁদের প্রকৃত শাসক বলা হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ ভারতের প্রধানমন্ত্রী-সহ মন্ত্রীসভা বা ক্যাবিনেট এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী-সহ মন্ত্রীসভা বা ক্যাবিনেটের কথা বলা যায়।

[2] একক-পরিচালক ও বহু-পরিচালক: শাসন বিভাগের সমস্ত কাজকর্ম যখন শুধুমাত্র একজন পরিচালকের নেতৃত্বে বা নির্দেশে পরিচালিত হয় তখন তাকে একক-পরিচালক বলে। চরম রাজতন্ত্রকে একক-পরিচালকের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও একক-পরিচালকের অস্তিত্ব দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির কথা উল্লেখ করা যায়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি শাসন বিভাগের সর্বময় কর্তা, তাঁর নেতৃত্বে বা নির্দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শাসন বিভাগের সমস্ত কাজকর্ম পরিচালিত হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি তাঁর কাজকর্মের জন্য আইনসভা বা কংগ্রেসের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন না। অন্যদিকে, যখন শাসন বিভাগের প্রকৃত ক্ষমতা সমক্ষমতাসম্পন্ন বহুজনের হাতে ন্যস্ত থাকে তখন তাকে বহু-পরিচালক শাসন বিভাগ বলা হয়। প্রাচীন এথেন্সে ও রোমে বহু-পরিচালকের শাসন প্রচলিত ছিল। আধুনিককালে সুইটজারল্যান্ডে ফেডারেল কাউন্সিল (Federal Council)-এর ক্ষেত্রে বহু- পরিচালক শাসন বিভাগের অস্তিত্ব দেখা যায়। ফেডারেল কাউন্সিলের সব সদস্যরা সমক্ষমতার অধিকারী। অন্যদিকে, ভারতের শাসন বিভাগকে পুরোপুরি একক-পরিচালক বা বহু-পরিচালক শাসন বিভাগ বলে মেনে নিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাজি হননি। তাঁদের মতে, ভারতের ক্ষেত্রে একক-পরিচালক ও বহু-পরিচালকবিশিষ্ট শাসন বিভাগের একটি মিশ্রণ ঘটেছে।

[3] উত্তরাধিকারসূত্রে মনোনীত শাসক এবং নির্বাচিত শাসক: অনেক রাষ্ট্রে প্রধান শাসক জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হয়ে উত্তরাধিকারসূত্রে মনোনীত হন। এই কারণে তাঁকে উত্তরাধিকারসূত্রে মনোনীত শাসক বলে আখ্যা দেওয়া হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ব্রিটেনের রাজা বা রানির কথা বলা যায়। অন্যদিকে, বহু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের প্রধান জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এরূপ শাসককে নির্বাচিত শাসক বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রপতি বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির কথা বলা যায়।

শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের মূল বৈশিষ্ট্য

শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

[1] জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি: শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এঁরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। এই কারণে এঁদের জনপ্রতিনিধি বলা হয়ে থাকে।

[2] শাসন বিভাগের অস্থায়ী অংশ: শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের প্রতিনিধিরা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। তারপর সেই মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে শাসন বিভাগের কাজ থেকে তাঁদের সরে যেতে হয়। তাই এঁদের শাসন বিভাগের অস্থায়ী অংশ বলা হয়। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি নির্দিষ্ট কার্যকালের মেয়াদে ওই পদে নির্বাচিত হন | মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে শাসন বিভাগের কাজ থেকে তাঁদের সরে যেতে হয়। এঁরা কখনোই নিজেদের পদে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারেন না।

[3] নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী: শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এঁরা প্রশাসন পরিচালনার জন্য নীতি ও কর্মসূচি তৈরি করেন এবং এই বিষয়ে নিজেরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেমন, ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নীতি কী হবে, কোন্ কোন্ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে, সেই সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার রয়েছে। এভাবে শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা রূপায়ণ করার জন্য শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীদের কাছে নির্দেশ জারি করে থাকেন।

[4] রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংযোগ: শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের প্রতিনিধিরা মূলত দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকেই উঠে আসেন, তাঁরা দলীয় রাজনীতির প্রতিনিধি হিসেবে ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করে শাসন বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই কারণে তাঁদের শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ বলা হয়।

[5] জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা: শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের প্রতিনিধিদের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার ব্যাপারে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রে তাঁরা নিজেদের খেয়ালখুশি মতো প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারেন না। যেমন, ভারতের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও সমগ্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাকে তাদের কাজকর্মের জন্য লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। অন্যদিকে, মার্কিন রাষ্ট্রপতিও অসাংবিধানিক কোনো কাজকর্ম করলে তাঁকে পদচ্যুত করার ক্ষমতা মার্কিন আইনসভার রয়েছে। কার্যকালের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে পরবর্তী নির্বাচনে এঁদের প্রত্যেককেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এই দায়বদ্ধতা শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের নেই।

[6] নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণ: শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণ করা। নির্বাচনের সময় তাঁরা জনগণের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন ক্ষমতায় এসে শাসন বিভাগের কাজকর্ম পরিচালনার সময় সেদিকেও তাঁদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো সরকার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হলে বিরোধীরা সেটি ইস্যু করে তোলেন।

প্রশ্ন6. শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশ বলতে কী বোঝায়? শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তর: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশ

প্রশাসনের কাছে নিযুক্ত সরকারি কর্মীদের শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশ বলা হয়। এঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হন। এঁদের সঙ্গে নির্বাচনি রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এই কারণে এঁদের শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশরূপে অভিহিত করা হয়। এই অ- রাজনৈতিক স্থায়ী সরকারি কর্মীরা রাষ্ট্রকৃত্যক (Civil Servant) বা আমলা (Bureaucrat) নামেও পরিচিত। তাঁদের পরিচালনাধীন ব্যবস্থাকে বলা হয় আমলাতন্ত্র (Bureaucracy)। আমলাতন্ত্রের অধীনে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও অধস্তন সরকারি কর্মকর্তা, আধিকারিক, কেরানি সবাই একত্রে কাজ করেন।

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসন বিভাগের এই স্থায়ী অংশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর সব দেশেই শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্যরা অর্থাৎ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিরা যেসব নীতি ও কর্মসূচি তৈরি করেন তা বাস্তবে রূপায়ণের দায়িত্ব পালন করেন স্থায়ী সরকারি কর্মীরা। এঁদের কর্মক্ষমতা, সততা, দক্ষতা ও দূরদৃষ্টির ওপর সরকারের সাফল্য নির্ভরশীল।

শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের মূল বৈশিষ্ট্য

শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

 [1] মেধার ভিত্তিতে নিযুক্তি: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সদস্যরা সরকারি কর্মী হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিযুক্ত হন। এঁদের নিয়োগের সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই ।

[2] নির্ধারিত বেতনক্রম: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সদস্যরা প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে বেতন পান। তাঁদের বেতন হার সংশোধনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাঁদের প্রমোশন দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে।

[3] স্তরবিন্যস্ত কার্যক্রম: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কাজকর্মের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এদের স্তরবিন্যস্ত কার্যক্রম। একদিকে যেমন শীর্ষে রয়েছেন ডিরেক্টর বা অধিকর্তা পর্যায়ের আমলারা, অন্যদিকে তেমনি সর্বনিম্ন ধাপে রয়েছেন কেরানি বা করণিকরা। নিম্নস্তরে প্রশাসনিক কাজকর্মের সুষ্ঠু - পরিচালনার জন্য শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ আসে। শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কাজকর্মকে এভাবে বিন্যস্ত করা হয়।

[4] স্থায়িত্ব: শাসন বিভাগের এই অ-রাজনৈতিক কর্মীদের কার্যকাল চার বা পাঁচ বছরের জন্য নির্দিষ্ট নয়, এঁরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত হন। এই কারণে এঁদের প্রশাসনের স্থায়ী অংশ বলা হয়। শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্যরা তাঁদের কার্যকালের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলে সরে যেতে বাধ্য হন। যেমন, আমাদের এখানে কেন্দ্রে বা রাজ্যগুলিতে পাঁচ বছরের জন্য মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। পাঁচ বছর কাজ করার পর মন্ত্রীসভার মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। অন্যদিকে, শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা ৫৮ বা ৬০ বছর অবধি তাঁদের কাজে বহাল থাকেন।

[5] আইনসম্মত কর্তৃত্ব: সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েবারের মতে, শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশ বা আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব বিধিবদ্ধ আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। একজন সরকারি কর্মী কারুর প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য দেখিয়ে কিছু করতে পারেন না। তাঁর প্রশাসনিক কাজকর্মের সবটাই সরকারি নিয়মকানুন ও বিধিবদ্ধ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

[6] নিরপেক্ষতা: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নিরপেক্ষতা। যেহেতু এঁরা কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন তাই দল ও রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে এঁরা দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োগ করেন।

[7] নিরবচ্ছিন্নতা: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা প্রশাসনের কাজকর্মের নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে এক সরকারের চলে যাওয়া এবং নির্বাচনে জয়লাভের পর নতুন আর-এক সরকারের ক্ষমতায় আসার মাঝখানে যে ফাঁকা সময়টুকু থাকে, সেই সময়ে প্রশাসনিক কাজকর্মের নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখার গুরুদায়িত্ব পালন করেন স্থায়ী কর্মীরা।

[৪] নিয়মকানুনের প্রতি আনুগত্য: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সদস্যরা কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা কোনো সংগঠনের প্রতি অনুগত থাকেন না। তাঁরা প্রশাসনিক নিয়মকানুন ও আইনের প্রতি অনুগত থাকেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের নিয়মকানুন মেনে কাজ করা হয়।

7. শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের অর্থ কী? শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কার্যাবলি ও গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের কার্যাবলি

শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সদস্যরা যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম সম্পাদন করে থাকেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

[1] সরকারি নীতি, সিদ্ধান্ত ও আইনকানুন বাস্তবে রূপায়িত করা: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সরকারের নীতি, সিদ্ধান্ত ও আইনকানুনকে বাস্তবে রূপায়িত করা। শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্যরা যেসব নীতি ও সিদ্ধান্ত নেন, যেসব আইনকানুন তৈরি করেন, তাকে কার্যকরী করার দায়িত্ব শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীদের।

[2] শাসন বিভাগের কাজকর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে পুরোনো সরকার বিদায় নেয়, তারপর নির্বাচনের রায় মাথায় নিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে। এই যাওয়া-আসার মাঝখানের সময়টুকুতে প্রশাসনের কাজকর্মের অবশ্য কোনো ছেদ পড়ে না। শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা এ সময় প্রশাসনের কাজকর্মের ধারাবাহিকতা বা নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন।

[3] প্রশাসনিক পরামর্শ দান: এটা প্রায় সব দেশেই দেখা যায় যে, শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ অর্থাৎ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির মতো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা শাসনকার্য পরিচালনায় অভিজ্ঞ আমলাদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করেন। শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মী হওয়ার সুবাদে দীর্ঘকাল যাবৎ যে অভিজ্ঞতা আমলারা সঞ্চয় করেন তার মূল্য অনেক, আমলারা তাঁদের এই মূল্যবান অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ দান করে প্রশাসন পরিচালনার কাজকে আরও ত্বরান্বিত করেন।

[4] আইন প্রণয়নে সাহায্য দান: শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আইন প্রণয়নের কাজে সরকারকে সাহায্য করা। বর্তমান যুগে আইন প্রণয়নের কাজটি বেশ জটিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি আইনের খসড়া বা বিল প্রস্তুত করা একজন মন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের এ ধরনের বিশেষ জ্ঞান বা দক্ষতা কোনোটাই থাকে না। এই অবস্থায় শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা এগিয়ে আসেন। তাঁরা তাঁদের মেধা, দক্ষতা ও বিশেষীকৃত জ্ঞান দিয়ে আইনের খসড়া প্রস্তুত করার জটিল কাজটিকে যথাসম্ভব সহজ করে তোলেন। অনেকের মতে, বর্তমান যুগে আইনসভার অধিকাংশ বিলের প্রকৃত রচয়িতা শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মী বা আমলারা। রাজনৈতিক শাসকরা শুধু আইনের মূল নীতিটুকু ঠিক করেন কিন্তু তাকে পরিপূর্ণ চেহারা দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন স্থায়ী কর্মীরাই।

[5] অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা: শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা করা। এর মধ্যে রয়েছে সমগ্র দেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কাজকর্মগুলির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে চলা, সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের পরিচালনা করা, সেগুলি যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় তার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা ইত্যাদি।

[6] সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ করা: শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সারা দেশ জুড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহ করে থাকেন। তা ছাড়া সরকারি প্রকল্পগুলির সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়েও তাঁরা অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সমীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার মতো কাজও করেন। সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় আইনসভা ও রাজ্য আইনসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন সদস্যের তোলা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রীরা যেসব তথ্যের বিবরণ দেন তা জুগিয়ে থাকেন শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরাই। এই কাজে আমলাদের ওপর নির্ভর করা ছাড়া মন্ত্রীদের কোনো উপায় থাকে না।

পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের স্থায়ী | কর্মীরা দেশের প্রশাসনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাঁদের বাদ দিয়ে প্রশাসন পরিচালনা করা কোনোমতেই সম্ভব নয়।

শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশের গুরুত্ব:

শাসন বিভাগের স্থায়ী অংশ বা আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব পৃথিবীর সব দেশেই বৃদ্ধি                            পাচ্ছে। শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র যাই হোক না কেন, সর্বত্র শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা বিদ্যমান। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে শাসন বিভাগের স্থায়ী কর্মীরা নেই। আধুনিক বিশ্বের রাষ্ট্রপরিচালনার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হল স্থায়ী কর্মীদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা বা আমলাতন্ত্র। এ যুগে আমলাতন্ত্র ছাড়া প্রশাসন পরিচালনা অসম্ভব। শুধুমাত্র সরকারি প্রশাসনে নয় বেসরকারি প্রশাসনেও আমলাতন্ত্রের অস্তিত্ব অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশের সদস্য হিসেবে নেতা ও নেত্রীরা রাজনীতিতে যতখানি মন দেন প্রশাসনে তা দিতে পারেন না। তা ছাড়া সরকারের আনুমানিক আয়ব্যয়ের হিসাব বা বাজেট তৈরির মতো বিশেষ কাজে বা আইন প্রণয়নের কাজে অথবা উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার খুঁটিনাটি বিষয় তৈরির কাজে যে ধরনের দক্ষতা ও বিশেষীকৃত জ্ঞানের প্রয়োজন হয় তা রাজনৈতিক অংশের সদস্যদের থাকে না। এসব কারণে শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশকে প্রশাসন পরিচালনার জন্য স্থায়ী অংশের কর্মীদের ওপর নির্ভর করতেই হয়। এই নির্ভরতা আজ একুশ শতকের বিশ্বায়নের যুগে সব দেশেই ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

--------------------------------------------------------


    👉Paid Answer (For Membership User)


Editing by- Rita Moni Bora