অধ্য়ায়-৭


ভারতের শাসন বিভাগ

-------------------

MCQs   

1. ভারতের রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?

(a) নির্বাচনের মাধ্যমে ✔

(b)মনোনয়নের মাধ্যমে

(c)উত্তরাধিকারসূত্রে

(d)জনগণের দ্বারা

2. বর্তমানে ভারতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ক-টি?

(a) ৬ ✔

(b)৭

(c) ৮

(d)৯

3. ভারতের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য কমপক্ষে কতজন সদস্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন?

(a) অর্ধেক

(b) এক-তৃতীয়াংশ

(c) এক-চতুর্থাংশ ✔

(d) এক-পঞ্চমাংশ

4. ভারতের রাষ্ট্রপতি বর্তমানে মাসে কত বেতন পান?

(a) ৫০,০০০ টাকা

(b) ১,০০,০০০ টাকা

(c) ১,২৫,০০০ টাকা

(d) ১,৫০,০০০ টাকা ✔

5. পদে থাকাকালীন রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা আনতে গেলে কতদিন আগে নোটিশ দিতে হয়?

(a) একমাস

(b) দুই মাস ✔

(c) তিন মাস

(d) চার মাস

6. ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় শাসনকার্য কার নামে সম্পাদিত হয়?

(a) রাষ্ট্রপতির নামে

(b) প্রধানমন্ত্রীর নামে ✔

(c) কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার নামে

(d) সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নামে

7. কেন্দ্রের শাসনকার্য পরিচালনা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক?

(a) ৭৭ নং ধারা

(b) ৭৮ নং ধারা ✔

(c) ৭৯ নং ধারা

(d) ৮০ নং ধারা

8. কেন্দ্রের শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা কার কর্তব্য?

(a)কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার

(b) কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী

(c) কেন্দ্রীয় সংসদবিষয়ক মন্ত্রীর

(d) প্রধানমন্ত্রীর ✔

9. ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কে?

(a) রাষ্ট্রপতি ✔

(b) প্রধানমন্ত্রী

(c) প্রতিরক্ষা মন্ত্রী

(d) স্থলবাহিনীর সেনাধিনায়ক

10. ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান কে?

(a) প্রধানমন্ত্রী

(b) রাষ্ট্রপতি ✔

(c) প্রতিরক্ষামন্ত্রী

(d) স্থলবাহিনীর প্রধান

11. ভারতে বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে সন্ধি বা চুক্তি কার নামে সম্পাদিত হয়?

(a) প্রধানমন্ত্রী

(b) প্রতিরক্ষা মন্ত্রী

(c) কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী

(d) রাষ্ট্রপতি ✔

12. ভারতে যুদ্ধ ঘোষণা কে করতে পারেন?

(a) প্রধানমন্ত্রী

(b) রাষ্ট্রপতি ✔

(c) প্রতিরক্ষা মন্ত্রী

(d) স্থলবাহিনীর প্রধান

13. রাষ্ট্রপতির জারি করা কোনো অধ্যাদেশকে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার কতদিনের মধ্যে অনুমোদন করাতে হয়?

(a) ২ সপ্তাহ

(b) একমাস

(c) ৬ সপ্তাহ ✔

(d) ২ মাস

14. ভারতীয় সংবিধানের কত নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন?

(a) ১২৩ নং ✔

(b) ১২৫ নং

(c) ১৩০ নং

(d) ২১৩ নং

15. ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্ব বণ্টনের জন্য অর্থ কমিশন কে গঠন করেন?

(a) প্রধানমন্ত্রী

(b) অর্থমন্ত্রী

(c) উপরাষ্ট্রপতি

(d) রাষ্ট্রপতি ✔

------------------------------------------------  

Short Answer Question

1. ভারতীয় সংবিধানের ৪৪ তম সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে কীভাবে সীমাবদ্ধ ক রা হয়েছে?

৪৪তম সংবিধান সংশোধনী অনুসারে বর্তমানে জরুরি অবস্থা জারি থাকলেও রাষ্ট্রপতি ২০ নং ও ২১ নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলিকে খর্ব করতে পারেন না।

2. রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থার সময় যেসব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন সেগুলির মধ্যে যে-কোনো দুটি উল্লেখ করো।

রাজ্য সরকারের এবং রাজ্যপাল বা যে কোনো সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের যাবতীয় ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি নিজের হাতে নিতে পারেন এবং রাজ্য আইনসভাকে বরখাস্ত করতে বা ভেঙে দিতে পারেন।

3. কী কারণে ভারতের রাষ্ট্রপতি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন?

সমগ্র ভারত বা তার যে-কোনো অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম বিপন্ন হয়েছে মনে করলে রাষ্ট্রপতি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

4. আর্থিক জরুরি অবস্থায় রাষ্ট্রপতি যেসব বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন সেগুলির মধ্যে যে-কোনো দুটি উল্লেখ করো।

কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলিকে আর্থিক ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সবরকম নির্দেশ দিতে পারে এবং কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন, ভাতা প্রভৃতি হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারে।

5. রাষ্ট্রকৃত্যক বা আমলা কাদের বলা হয়?

সরকারি প্রশাসনে দু-ধরনের প্রশাসক থাকেন- রাজনৈতিক প্রশাসক ও অ-রাজনৈতিক প্রশাসক। এই অ-রাজনৈতিক প্রশাসক হল রাষ্ট্রকৃত্যক বা আমলা।

6 . ভারতের রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রত্যক্ষভাবে জনসাধারণের ভোেট নির্বাচিত হন না। সংসদের দুটি কক্ষের নির্বাচিত সদস্য এবং রাজ্য-আইনসভার নিম্নকক্ষ বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে গঠিত এক নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন।

7. কার কাছে ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁর পদত্যাগপত্র পেশ করতে পারেন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি উপরাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করতে পারেন।

8. ভারতের আইন বিভাগের মুখ্য আধিকারিক কে?

অ্যাটর্নি জেনারেল ভারতের আইন বিভাগের মুখ্য আধিকারিক।

9. ভারতের প্রথম নাগরিক কাকে বলে?

রাষ্ট্রপতিকে ভারতের প্রথম নাগরিক বলে।

10. রাষ্ট্রপতি কখন সমস্ত সরকারি কর্মীদের বেতন ও ভাতা হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন?

রাষ্ট্রপতি আর্থিক জরুরি অবস্থার সময় সমস্ত সরকারি কর্মীদের বেতন ও ভাতা হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন।

12. পশ্চিমবঙ্গে আজ পর্যন্ত কতবার 'রাষ্ট্রপতির শাসন' জারি করা হয়েছে?

পশ্চিমবঙ্গে আজ পর্যন্ত মোট ৪ বার 'রাষ্ট্রপতির শাসন' জারি করা হয়েছে।

13. ভারতে আজ পর্যন্ত কতবার আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে?

ভারতে আজ পর্যন্ত একবারও আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।

14. ভারতের রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদার সম্পর্কে নেহরু কী বলেছেন?

তিনি বলেছেন, 'আমরা তাঁকে (রাষ্ট্রপতিকে) কোনো প্রকৃত ক্ষমতা অর্পণ করিনি; কিন্তু আমরা তাঁর পদমর্যাদাকে কর্তৃত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক করে গড়ে তুলেছি।'

15. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান রক্ষা করার শপথ নিতে হয়?

ভারতীয় সংবিধানের ৬০নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান রক্ষা করার শপথ নিতে হয়।

---------------------------------------

Long Answer Question

প্রশ্ন 1. রাজ্য প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বিশ্লেষণ করো।

অথবা,

রাজ্য প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো। অথবা, একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।

অথবা, ভারতের যে-কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।

উত্তর:  মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি

সংবিধান অনুযায়ী, বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা বা নেত্রীকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন। অবশ্য রাজ্য বিধানসভায় কোনো দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ব্যাপারে রাজ্যপাল তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রের মতো অঙ্গরাজ্যগুলিতে যে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা চালু রয়েছে তাতে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।

[1] রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা: সংবিধানের ১৬৩ (১) নং ধারা অনুসারে, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রীসভা শাসনকার্য পরিচালনায় রাজ্যপালকে সাহায্য করতে ও পরামর্শ দিতে পারে। মন্ত্রীসভায় গৃহীত যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও আইন সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্বন্ধে রাজ্যপালকে অবহিত করানোর দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্যপাল এসব ব্যাপারে কোনো তথ্য জানতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী তা জানিয়ে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রী অনেক সময় নিয়মিতভাবে রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার জন্য সচিবদের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তবে দেখা যায় যে, কেন্দ্র ও রাজ্যে একই রাজনৈতিক দলের শাসন জারি থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালের অধিকতর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

[2] রাজ্য বিধানসভার নেতা: রাজ্য বিধানসভার নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই ভূমিকা পালন করেন। বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা, প্রয়োজনে ভেঙে দেওয়ার জন্য রাজ্যপালকে পরামর্শ দিতে পারেন তিনি। বিধানসভায় সরকারি নীতি উপস্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় তিনি সহকর্মী মন্ত্রীদের সাহায্য করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি বিধানসভায় পাস করানোর দায়িত্বও মুখ্যমন্ত্রীর। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী, বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখেন। রাজ্যের জটিল কোনো সমস্যা নিয়ে তিনি বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন।

[3] রাজ্য মন্ত্রীসভার নেতা: রাজ্য মন্ত্রীসভায় মুখ্যমন্ত্রীর স্থান সবার ওপরে। মন্ত্রীসভায় তিনি সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য। সংবিধানের ১৬৩ (১) নং ধারা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের নেতা। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন এবং প্রয়োজন হলে পদচ্যুত করতে পারেন। মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর বণ্টন এবং পুনর্বণ্টন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি দপ্তরের কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেদিকে তিনি দৃষ্টি রাখেন। মন্ত্রীসভার বৈঠক তিনি আহ্বান করেন এবং সভায় সভাপতিত্ব করে থাকেন। কোনো কারণে কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মতবিরোধ ঘটলে সেই মন্ত্রীকে তিনি পদত্যাগ করতে বলতে পারেন। ক্যাবিনেটের নীতি নির্ধারণ ও রূপায়ণে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকাই প্রধান। সরকারি নীতির সমন্বয়সাধনের প্রধান দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। বিভিন্ন দফতরের কাজকর্মের অগ্রগতি সম্বন্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে ওয়াকিবহাল থাকতে হয়। বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীদের মধ্যে কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে তার নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে মন্ত্রীসভার ঐক্য ও সংহতি বজায় রেখে চলতে হয়।

[4] সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা: সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতাও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। রাজ্য আইনসভার ভিতরে এবং বাইরে দল বা জোটকে সঠিক নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর। দলের বা জোটের নীতি ও কর্মসূচিকে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি নীতির মাধ্যমে রূপায়ণ করেন। দলের বা জোটের ভাবমূর্তি মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্মের ওপর নির্ভরশীল। দলের বা জোটের শৃঙ্খলা ও সংহতি রক্ষায় তিনি সদা সতর্ক থাকেন। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সাহায্য করে।

[5] জনমতের সংগঠক: জনসংযোগ রক্ষা মুখ্যমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাজ্যের বিভিন্ন জনপ্রিয় উৎসব-অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দেন। এ ছাড়া বেতার, দূরদর্শন, সংবাদপত্র, জনসভা ইত্যাদির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নানারকম সমস্যা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের সপক্ষে শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলেন। বস্তুতপক্ষে, রাজ্যের জনগণ মুখ্যমন্ত্রীকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের কান্ডারি বলে মনে করে। এই কারণে রাজ্যবাসীর দাবিদাওয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে মুখ্যমন্ত্রীকে কাজ করতে হয়। রাজ্যের জনমত অনুধাবন ও নিয়ন্ত্রণে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্যগুলির প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর পদটির স্বতন্ত্র গুরুত্ব রয়েছে। রাজ্যের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকৃত শাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়, কারণ তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্য প্রশাসন পরিচালিত হয়। তবে কেন্দ্রের মতো রাজ্যগুলিতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা থাকলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রবল ক্ষমতার অধিকারী নন। কেন্দ্রের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সঙ্গে রাজ্যের সংসদীয় কাঠামোর পার্থক্যের প্রধান কারণ রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই, কিন্তু অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের স্ববিবেচনা অনুযায়ী কাজ করার অধিকার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার মধ্য দিয়ে স্বীকৃত হয়েছে। রাজ্যপালের এই ক্ষমতার প্রয়োগকে আদালতের এক্তিয়ারের বাইরে রাখা হয়েছে। তবে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে একই রাজনৈতিক দল সরকারি ক্ষমতায় আসীন থাকলে রাজ্যপাল নেহাতই নিয়মতান্ত্রিক শাসকের ভূমিকা পালন করেন। সেক্ষেত্রে রাজ্যের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রকৃত প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাজ করার পথে কোনো বাধা থাকে না। অন্যদিকে, কেন্দ্র ও রাজ্যে ভিন্ন দল ক্ষমতাসীন থাকলে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনপুষ্ট রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিকূল অবস্থায় ফেলতে পারে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের দলীয় সমর্থন ও সহযোগিতা এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতা, ক্যাবিনেটের সহযোগিতা প্রভৃতির ওপর মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা নির্ভরশীল।

প্রশ্ন 2. রাজ্য মন্ত্রীসভার গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো।

উত্তর: রাজ্য মন্ত্রীসভার গঠন

ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, অঙ্গরাজ্যগুলিতে শাসনকার্য পরিচালনায় রাজ্যপালকে সাহায্য ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি মন্ত্রীসভা রয়েছে (১৬৩ নং ধারা)। যেসব রাজ্যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আছে সেখানে মন্ত্রীদের যে-কোনো একটি কক্ষের সদস্য হতে হয়। অন্যদিকে, যেসব রাজ্যে শুধুমাত্র রাজ্য বিধানসভা রয়েছে সেখানে মন্ত্রীদের আবশ্যিকভাবে রাজ্য বিধানসভার সদস্য হতে হয়। রাজ্য আইনসভার সদস্য নন এমন কোনো ব্যক্তি রাজ্য মন্ত্রীসভায় নিযুক্ত হলে তাঁকে ৬ মাসের মধ্যে রাজ্য আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হতে হয়। রাজ্য মন্ত্রীসভায় তিন শ্রেণির মন্ত্রী রয়েছেন- [1] ক্যাবিনেট বা পূর্ণমন্ত্রী, [2] রাষ্ট্রমন্ত্রী এবং [3] উপমন্ত্রী। মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলির স্বাধীন দায়িত্বে থাকেন ক্যাবিনেট বা পূর্ণমন্ত্রীরা। রাষ্ট্রমন্ত্রীরা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পান। আমন্ত্রিত না হলে তাঁরা রাজ্য ক্যাবিনেটের বৈঠকে যোগ দিতে পারেন না। অন্যদিকে, উপমন্ত্রীরা বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রীদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। সমগ্র মন্ত্রীসভার নেতৃত্বে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি মন্ত্রীসভা পরিচালনা করেন। কোনো কোনো রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পরবর্তী পর্যায়ে একজন উপমুখ্যমন্ত্রীও রয়েছেন।

রাজ্য মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি হল-

[1] নীতি নির্ধারণ ও রূপায়ণ: ন্ত্রীসভার প্রধান কাজ হল সরকারি নীতি করা এবার গহীত নীতিগুলি নেওয়া। এভাবে মন্ত্রীসভা রাজ্যের শাসনবিষয়ক যাবতীয় কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

[2] আইন প্রণয়ন: রাজ্য মন্ত্রীসভার হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে। রাজ্যের যাবতীয় আইনের খসড়া বা বিল মন্ত্রীসভার নির্দেশে রাজ্য আইনসভায় উপস্থাপন করা হয়। রাজ্য আইনসভায় মন্ত্রীসভার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বিল উত্থাপন করে থাকেন। এ ছাড়া আইনসভা কোনো আইনের মূলনীতিগুলি নির্ধারণ করার পর সেগুলিকে পূর্ণতা দানের দায়িত্ব মন্ত্রীসভাকে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রীসভা যেসব আইন প্রণয়ন করে তা অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইনরূপে পরিচিত।

[3] আয়ব্যয় নিয়ন্ত্রণ: মন্ত্রীসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা হল রাজ্যের সরকারি আয়ব্যয় নিয়ন্ত্রণ। প্রতিবার আর্থিক বছর শুরু হওয়ার আগে রাজ্য মন্ত্রীসভার পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী বাৎসরিক আয়ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব বা বাজেট পেশ করেন। মন্ত্রীসভার আর্থিক নীতি বাজেটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।

[4] অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি: রাজ্যের আইনসভার অধিবেশন স্থগিত থাকাকালীন রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে জরুরি প্রয়োজনে রাজ্যপাল অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। তবে এ ধরনের অধ্যাদেশকে রাজ্য আইনসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে আইনসভার অনুমোদন লাভ করতে হয়। তা না হলে অধ্যাদেশটি বাতিল হয়ে যায়।

[5] বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়সাধন: সরকারি কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়সাধনের দায়িত্ব মন্ত্রীসভার ওপর ন্যস্ত।

[6] সরকারি কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ: মন্ত্রীসভার ওপর রাজ্য সরকারি কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করার দায়িত্ব রয়েছে। এজন্য রাজ্য মন্ত্রীসভা প্রয়োজনীয় নীতিনির্দেশিকা জারি করতে পারে।

[7] শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে সংযোগ রক্ষা: রাজ্য মন্ত্রীসভা রাজ্যের শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে সংযোগ রক্ষার কাজ করে থাকে। রাজ্য প্রশাসনের কর্তা হিসেবে রাজ্য মন্ত্রীসভা যাবতীয় শাসনবিষয়ক প্রস্তাব বা নীতি আইনসভায় ব্যাখ্যা করে থাকে। অন্যদিকে, আইনসভাও প্রশাসন-সংক্রান্ত যে-কোনো বিষয় সম্পর্কে মন্ত্রীসভার মাধ্যমে অবহিত হয়।

উপসংহার: ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কেন্দ্রের মতোই রাজ্যের শাসন বিভাগ বা মন্ত্রীসভার কর্মপরিধি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। তবে ভারতীয় অঙ্গরাজ্যে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকায় অনেক সময় রাজ্য মন্ত্রীসভাকে রাজ্যের শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। অবশ্য রাজ্য মন্ত্রীসভার প্রতি রাজ্যের জনগণের সক্রিয় সমর্থনের ভিত্তি মজবুত থাকলে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা শাসনকার্য পরিচালনায় অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে না।

------------------------------------



Editing by- Rita Moni Bora