অধ্য়ায়-৯

  ভারতের বিচার বিভাগ

----------------------------------------------------------

 

MCQs

 

 

1. লোক আদালতের প্রথম অধিবেশ বসে-

A) গুজরাটের জুনাগড়ে

 B) হরিয়ানার হিসারে

C) পাঞ্জাবের চন্ডীগড়ে

D) পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে


2. ক্রেতা আদালত কত স্তরবিশিষ্ট?

A) ২ স্তরবিশিষ্ট

B) ৪ স্তরবিশিষ্ট

C) ৩ স্তরবিশিষ্ট

D) এদের কোনোটিই নয়


3. ভারতে লোক আদালতের যাত্রা কত সালে শুরু হয়?

A) ১৯৭৯ সালে

B) ১৯৮০ সালে

C) ১৯৮১ সালে

D) ১৯৮২ সালে


4. দিল্লি হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি অনিল দেব সিং কবে রায় দেন যে নাগরিকদের সঙ্গে ভারত সরকারের এবং ভারত সরকারের সাথে তার কর্মচারীদের বিরোধ নিস্পত্তির জন্য স্থায়ী লোক আদালত প্রতিষ্ঠা করা উচিত?

A) ১৯৯৯ সালে

B) ২০০০ সালে

C) ২০০২ সালে

D) ২০০২ সালে


5. দিল্লি হাইকোর্ট কবে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় যে সব সরকারি মন্ত্রক ও দফতরে লোক আদালত গঠন করতে হবে?

A) ১৯৯৯ সালের ১২ মে

B) ১৯৯৯ সালের ১৩ মে

C) ১৯৯৯ সালের ১৪ মে

D) ১৯৯৯ সালের ১৫ মে


6. কোনো ব্যক্তি রাজ্য কমিশনের রায়ে সন্তুষ্ট হতে না পারলে রায় ঘোষণার কতদিনের মধ্যে জাতীয় কমিশনে আপিল করতে পারেন?

A) ২০ দিন

B) ২৫ দিন

C) ৩০ দিন

D) ৬০ দিন


7. ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ে ভারতের কোন্ রাজ্য জাতীয় কমিশনের আওতার বাইরে আছে?

A)  উত্তরপ্রদেশ

B)  বিহার

C)  মধ্যপ্রদেশ

D) জম্মু ও কাশ্মীর


8. ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ে রাজ্য কমিশনের সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ কত বছর?

A) ৪ বছর

B) ৫ বছর

C) ৬ বছর

D) ৭ বছর


9. কোনো ক্রেতা, ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ে জাতীয় কমিশনের রায়ে সন্তুষ্ট হতে না পারলে, তার বিরদ্ধে রায় ঘোষণার কত দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করতে পারেন?

A) ২০ দিন

B) ২৫ দিন

C) ৩০ দিন

D) ৪০ দিন


10. ক্রেতা সুরক্ষা বিষয়ে জাতীয় কমিশনের সদস্যগণ কত বছরের জন্য নির্বাচিত হন?

A) ৩ বছর

B) ৪ বছর

C) ৫ বছর

D) ৬ বছর


11. জেলার সর্বোচ্চ আদালত হল-

A) দায়রা আদালত

B)  ন্যায় পঞ্চায়েত

C) জেলা জজের আদালত

D)  মুনসেফ আদালত.

12. বড়ো বড়ো শহরে দেওয়ানি মামলার বিচার হয়-

A) নগর দেওয়ানি আদালতে

B) জেলা জজের আদালতে

C) ন্যায় পঞ্চায়েতে

D) দায়রা আদালতে


13. মুনসেফ আদালত হল-

A) দেওয়ানি আদালত

B) দায়রা আদালত

C) জেলা জজের আদালত

D) ন্যায় পঞ্চায়েত

 

14. অবর বিচারকের আদালতে কত টাকা মূল্যের মামলার বিচার হয়?

A) ৪০০০ টাকা

B) ৪০০০ টাকার অধিক

C) ৫০০০ টাকা

D) ৫০০০ টাকার অধিক

 

15. মুনসেফের আদালতে কত টাকা মূল্যের সম্পতির বিচার হয়?

A) ,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা

B) ,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা

C) ,০০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা

D) ,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা

------------------------------------------------------

 

Short Answer Question

 

1. কোনো ব্যক্তির অভিযোগকে জাতীয় কমিশন অসার বা হয়রানিমূলক মনে করলে কমিশন কী করতে পারে?

 

কমিশন অভিযোগটি বাতিল করে দেয় এবং এই ধরনের অভিযোগ আনার জন্য অনধিক ১০,০০০ টাকা

 জরিমানা করতে পারে

 

2. জেলা ক্রেতা আদালতে কীভাবে অভিযোগ দায়ের হয়?

 

জেলা ক্রেতা আদালতে ব্যক্তিগতভাবে অথবা কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে অথবা ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেওয়া যায়

 

3. বিচারের জন্য অভিযোগ গ্রহণের বিষয়ে জেলা ক্রেতা আদালতকে কতদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়?

বিচারের জন্য অভিযোগ গ্রহণের বিষয়ে জেলা ক্রেতা আদালতকে ২১ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হয়

4. প্রচলিত ব্যবস্থায় ন্যায়বিচারের জন্য মানুষকে আদালতের কাছে ছুটে যেতে হয়, কিন্তু কোন্ আদালত নিজেই ন্যায়বিচার নিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় ছুটে আসে?

 

লোক আদালত ন্যায়বিচার নিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় ছুটে আসে

 

5. যখন কোনো ক্রেতা আদালত সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দেয়, তখন সেই ক্ষতি পূরণের অর্থ কোথা থেকে আসে?

 

যখন কোনো ক্রেতা আদালত সরকার বা কোনো বিধিবদ্ধ সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দেয় তখন সেই ক্ষতিপূরণের অর্থের দায় বর্তায় জনসাধারণের ওপরে। এর কারণ করদাতা সাধারণ মানুষের অর্থই শেষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ রূপে দেওয়া হয়

6. রাজ্য কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি কার দ্বারা নির্ধারিত হয়?

 

রাজ্য কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি রাজ্য সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়

 

7. ভোগ্যপণ্য বা পরিসেবার ক্ষেত্রে কত মূল্য সম্পর্কিত বিষয় রাজ্য কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত?

 

ভোগ্যপণ্য বা পরিসেবার ক্ষেত্রে ২০ লক্ষ টাকার বেশি, কিন্তু ১ কোটি টাকার কম মূল্য-সম্পর্কিত বিষয় রাজ্য কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত

 

8. জাতীয় কমিশনের সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?

 

জাতীয় কমিশনের সদস্যদের যে-কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হতে হয়

 

9. রাজ্য কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় কমিশনে আপিল করার জন্য কী করতে হয়?

রাজ্য কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় কমিশনে আপিল করার জন্য রাজ্য কমিশনের রায়ে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়, তার ৫০ শতাংশ বা ৩৫০০০ টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, তা জমা দিতে হয়

 

10. জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য কমিশনে আপিল করতে হলে কত পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়?

 

জেলা আদালতের রায়ে যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়, তার ৫০ শতাংশ বা ২৫০০০ টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, সেই পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়

 

11. জাতীয় কমিশন কাদের নিয়ে গঠিত হয়?

 

জাতীয় কমিশন একজন সভাপতি ও কিছু সদস্য নিয়ে গঠিত হয়

 

12. লোক আদালতের দুটি উপযোগিতা উল্লেখ করো

 

লোক আদালতের দুটি উপযোগিতা হল- লোক আদালত সমাজের দুর্বলতর শ্রেণিকে বিনামূল্যে আইনি সাহায্য দেওয়ার জন্য কাজ করে, লোক আদালতগুলিতে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হয়ে থাকে

 

13. ক্রেতা আদালত কাকে বলে?

 

কোনো ক্রেতা যখন কোনো জিনিস বা পরিসেবা কিনতে গিয়ে প্রতারিত বা বঞ্চিত হন, তখন যে আইনগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি প্রতিকার পেতে পারেন, তাকে বলা হয় ক্রেতা আদালত। ক্রেতা আদালত প্রধানত ক্রেতাদের সুরক্ষা প্রদান করে

 

14. ক্রেতা আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য কী?

 

ক্রেতা আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য হল ক্রেতাদের সুরক্ষা প্রদান। ক্রেতার স্বার্থ দেখাই ক্রেতা আদালতের মূল কাজ। প্রবঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতার অভিযোগ বা নালিশের আইনসম্মত সুষ্ঠু প্রতিকার বা নিষ্পত্তিবিধানই এর উদ্দেশ্য

 

15. ক্রেতা আদালতের ক-টি স্তর রয়েছে এবং এগুলি কী কী?

 

ক্রেতা আদালতের তিনটি স্তর রয়েছে। এগুলি হল- জেলা স্তরে জেলা ক্রেতা আদালত, রাজ্য স্তরে রাজ্য ক্রেতা আদালত এবং জাতীয় স্তরে জাতীয় ক্রেতা আদালত

 

16. রাজ্য ক্রেতা আদালত কীভাবে গঠিত হয়?

 

রাজ্য ক্রেতা আদালত একজন সভাপতি এবং অন্য দুজন সদস্য, মোট তিনজনকে নিয়ে গঠিত হয়

17. রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে কাকে নিযুক্ত করা হয়?

 

হাইকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজ্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন

 

18. রাজ্য কমিশনের সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ কত বছর?

 

রাজ্য কমিশনের সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর অথবা ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত

 

20.রাজ্য কমিশনের সদস্যগণ পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন কি?

 

হ্যাঁ, রাজ্য কমিশনের সদস্যগণ পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন

--------------------------------

 

 Long Answer Question

 

প্রশ্ন 1. ক্রেতা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো

 

উত্তর: ক্রেতা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

 

ক্রেতা আদালতের যেসব ক্ষমতা ও কার্যাবলি রয়েছে তা হল-

 

[1] ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষিত করা: ক্রেতা আদালতের প্রথম ও প্রধান কাজ হল ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষিত করা। এর উদ্দেশ্যেই ক্রেতা আদালতের সৃষ্টি। প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত ক্রেতারা কীভাবে ন্যায্য প্রতিকার বা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন তা সুনিশ্চিত করাই এর প্রধান কাজ

 

[2] এক্তিয়ার পর্যালোচনা করা: অন্যান্য আদালতের মতো ক্রেতা আদালতও কোনো অভিযোগ বা নালিশ বিচার করার আগে সেই বিষয়ে তার এক্তিয়ার আছে কি না দেখে নেয়। এক্তিয়ারের মধ্যে না পড়লে সেই অভিযোগ বা নালিশের বিচার করা হয় না

 

[3] অন্তর্বর্তী আদেশ জারির ক্ষমতা: ২০০২ খ্রিস্টাব্দের সংশোধিত ক্রেতা ইরক্ষা আইন ক্রেতা আদালতকে মামলা চলাকালীন অন্তর্বর্তী আদেশ জারির ক্ষমতা আছে। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে যে, মামলা চলাকালীন ক্রেতা আদালত প্রয়োজনে মামলার ঘটনা ও অবস্থার বিচারবিবেচনা করে অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করতে পারে

 

[4] ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনে ক্রেতা আদালতকে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ ক্ষেত্রগুলি হল- কোনো সাক্ষী বা প্রতিপক্ষকে সমন পাঠিয়ে ক্রেতা আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা। সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ বা দ্রব্য সংগ্রহ করে সেগুলিকে উপস্থাপিত করা। সাক্ষীকে হলফনামা দিয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা ইত্যাদি

 

[5] নালিশ খারিজ করার ক্ষমতা: দেশের অসংখ্য ক্রেতা সাধারণের উপকার ও তাদের সুরক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্রেতা আদালত গঠিত হয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অনেক সময় ক্রেতারা এর অপব্যবহারও করে থাকেন। এক্ষেত্রে ক্রেতার নালিশ অতিতুচ্ছ (Frivolous) বা হয়রানিমূলক (Vexa- tious) বলে প্রমাণিত হলে তা খারিজ করে দিয়ে তাকে জরিমানা করার ক্ষমতা ক্রেতা আদালতের রয়েছে। যেমন, সোডা ওয়াটারের বোতলের ভিতর একটি ভাসমান বস্তু দেখা যাচ্ছিল বলে একজন ক্রেতা ক্রেতা আদালতে নালিশ করে ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে। জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে শেষ পর্যন্ত বাদীকে ভর্ৎসনা করে তার নালিশ খারিজ করে দেয় (P. A. Pouran Vs MC Dowell & Co., 1989) |

 

[6] আদেশ বলবৎ করার ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ২৫ নং ধারা অনুসারে ক্রেতা আদালতকে তার আদেশ বলবৎ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনুসারে যদি জেলা ক্রেতা আদালত, রাজ্য কমিশন বা জাতীয় কমিশনের দেওয়া কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ না মানা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা আদালত আদেশ অমান্যকারীর সম্পত্তি ক্রোক করতে পারে। এ ছাড়া ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ২৭ নং ধারায় আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ক্রেতা আদালতের দেওয়া আদেশ মানতে ব্যর্থ হলে আদেশ অমান্যকারীর জেল ও জরিমানা দুই হতে পারে। এই উদ্দেশ্যে জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরের ক্রেতা আদালতকে প্রথম শ্রেণির বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের যাবতীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে

 

[7] স্থানান্তর করার ক্ষমতা: বাদীর আবেদনক্রমে অথবা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজে থেকেই রাজ্য কমিশন রাজ্যের কোনো জেলা ক্রেতা আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলা ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাজ্যের অন্য কোনো জেলা ক্রেতা আদালতে স্থানান্তরিত করতে পারেন। জাতীয় কমিশনও ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনো মামলা এক রাজ্যের কোনো জেলা ক্রেতা আদালত থেকে রাজ্যের অন্য কোনো জেলা ক্রেতা আদালতে অথবা এক রাজ্য কমিশন থেকে অন্য রাজ্য কমিশনে স্থানান্তরিত করতে পারেন


[
৪] পুনর্বিচারের ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ১৭ নং ধারা অনুসারে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন এবং জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশনের হাতে মামলার রায় পুনর্বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতাবলে রাজ্য কমিশন যদি মনে করে রাজ্যের কোনো জেলা ক্রেতা আদালত বিচারাধীন অথবা বিচার নিষ্পত্তিকৃত কোনো মামলায় নিজের এক্তিয়ারের বাইরে কাজ করেছে বা আইনসংগত ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে কমিশন মামলার নথিপত্র তলব করে যথাযোগ্য আদেশ জারি করতে পারে। অনুরূপভাবে, জাতীয় কমিশন যদি মনে করে ভারতের কোনো রাজ্য কমিশন বিচারাধীন অথবা বিচার নিষ্পত্তিকৃত কোনো মামলায় নিজের এক্তিয়ারের বাইরে কাজ করেছে বা আইনসংগত ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে তাহলে সেই মামলার নথিপত্র তলব করে জাতীয় কমিশন যথাযোগ্য আদেশ জারি করতে পারে

 

প্রশ্ন 2. অধস্তন আদালতগুলির গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করো

 

উত্তর: অধস্তন আদালতগুলির গঠন

 

হাইকোর্টের অধস্তন আদালতগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়- জেলার অধস্তন আদালত, মহানগরীয় অঞ্চলের অধস্তন আদালত। অধস্তন খাদালতগুলির জেলা বিচারক এবং মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি ইত্যাদি রাজ্যপালের হাতে রয়েছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়াও অধস্তন আদালতের বিচারপতিদের অন্তত সাত বছর আইনজীবী রূপে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও হাইকোর্ট দ্বারা মনোনীত হয়

 

[1] জেলার অধস্তন আদালত: জেলার অধস্তন আদালতগুলির দুটি শ্রেণি রয়েছে।. দেওয়ানি আদালত, ii. ফৌজদারি আদালত

 

i. দেওয়ানি আদালত: দেওয়ানি আদালতগুলিকে ক্রমানুসারে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়- জেলা বিচারকের আদালত, অবর বিচারকের আদালত,ও মুন্সেফের আদালত এবং ন্যায় পঞ্চায়েত

 

ii. ফৌজদারি আদালত: ফৌজদারি আদালতগুলি ক্রমানুসারে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়- দায়রা আদালত, অবর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত, পঞ্চায়েত আদালত

 

[2] মহানগরীয় অঞ্চলের অধস্তন আদালত: মহানগরীয় অঞ্চলের অধস্তন আদালতগুলি কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাই প্রভৃতি মহানগরীতে রয়েছে। মহানগরের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আদালত হল মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। এই আদালতের নীচে রয়েছে নগর দেওয়ানি আদালত এবং নগর দেওয়ানি আদালতের নীচে আছে ক্ষুদ্র আদালত। মহানগরীয় এলাকায় ফৌজদারি মামলাগুলির বিচারের জন্য আছে নগর দায়রা আদালত। নগর দায়রা আদালতের নীচে আছে প্রেসিডেন্সি ক্ষুদ্র আদালত

 

অধস্তন আদালতের কার্যাবলি জেলার অধস্তন আদালত

 

[1] দেওয়ানি আদালত: অধস্তন আদালতগুলির অন্তর্গত জেলার দেওয়ানি আদালত জেলার দেওয়ানি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করে থাকে। এক্ষেত্রে জেলার দেওয়ানি আদালতগুলির শীর্ষে রয়েছে জেলা বিচারকের আদালত। এই আদালতে যে-কোনো মূল্যের দাবিদাওয়া সম্পর্কিত মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। জেলা বিচারক আবার জেলার ফৌজদারি আদালতের বিচারক হিসেবে কাজ করেন। অবর বিচারকের আদালত এবং মুনসেফের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা বিচারকের আদালতে আপিল করা যায়। জেলার অবর বিচারকের আদালত সাধারণত ৫,০০০ টাকার বেশি মূল্যের মামলা নিষ্পত্তি করে থাকে। মুনসেফের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অবর বিচারকের আদালতে আপিল করা যায়। মুনসেফের আদালতে ১,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা মূল্যের সম্পত্তি- সম্পর্কিত মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। জেলার দেওয়ানি আদালতের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থিত ন্যায় পঞ্চায়েত সামান্য পরিমাণ অর্থ সংক্রান্ত ছোটোখাটো মামলার বিচার করে থাকে

 

[2] ফৌজদারি আদালত: জেলার ফৌজদারি আদালতের ক্ষেত্রে দায়রা আদালত সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে কাজ করে। এই আদালতে অবর ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়। অবর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে জেলার গুরুতর ফৌজদারি মামলাগুলির বিচার করা হয়ে থাকে। জেলার ফৌজদারি আদালতগুলির সর্বনিম্ন স্তরে পঞ্চায়েত আদালত কাজ করে থাকে

 

মহানগরীয় অঞ্চলের অধস্তন আদালত

 

মহানগরের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত কাজ করে। মহানগরীয় এলাকার দেওয়ানি সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি নগর দেওয়ানি আদালতে করা হয়। এ ছাড়া মহানগরীর ক্ষুদ্র আদালতগুলিতে ছোটোখাটো দেওয়ানি মামলার বিচার করা হয়। মহানগরীর ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে নগর দায়রা আদালত সর্বোচ্চ ভূমিকায় কাজ করে। নগর দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আপিল করা যায়। প্রেসিডেন্সি ক্ষুদ্র আদালত মহানগরীর ছোটোখাটো ফৌজদারি মামলাগুলির নিষ্পত্তি করে থাকে। প্রেসিডেন্সি ক্ষুদ্র আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে নগর দায়রা আদালতে আপিল করা যায়

 

প্রশ্ন 3. মহাধর্মাধিকরণ বা হাইকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো

 অথবা, ভারতের হাইকোর্টগুলির গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করো

 অথবা, ভারতের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো

 

উত্তর: হাইকোর্টের গঠন

 

সংবিধানের ২১৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট বা মহাধর্মাধিকরণ থাকবে। তবে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে দুই বা ততোধিক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য মাত্র একটি হাইকোর্ট গঠন করতে পারে। ভারতে বর্তমানে ২৯টি রাজ্যে মোট ২১টি হাইকোর্ট রয়েছে। সংবিধানের ২১৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি হাইকোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও কয়েকজন অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হবে। অন্যান্য বিচারপতিদের সংখ্যা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ভারতীয় নাগরিকত্ব, যে-কোনো বিচারবিভাগীয় পদে কমপক্ষে ১০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা, হাইকোর্ট বা দুই বা ততোধিক এই ধরনের আদালতে ১০ বছর একটানা আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যিক। হাইকোর্টের বিচারপতিরা বর্তমানে ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত পদে আসীন থাকতে পারেন। তবে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অক্ষমতার অভিযোগের ভিত্তিতে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি অভিযুক্ত বিচারপতিকে অপসারিত করতে পারেন। রাজ্যের সঞ্চিত তহবিল থেকে হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি দেওয়া হয়

 

হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

 

হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে-

 

[1] মূল এলাকা-সম্পর্কিত ক্ষমতা: রাজস্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় হাইকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্গত। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলাকেও মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে সব হাইকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা নেই। শুধুমাত্র কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বাই হাইকোর্টের এই ক্ষমতা রয়েছে

 

[2] আপিল এলাকা-সম্পর্কিত ক্ষমতা: রাজ্যের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হল হাইকোর্ট। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অধস্তন জেলা জজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। হাইকোর্টের কোনো বিচারকের একক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়। এ ছাড়া আইন ও পদ্ধতিগত প্রশ্নে কোনো অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলায় ঊর্ধ্বতন আদালত যে রায় দেয় তার বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়। অন্যদিকে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ কোনো ব্যক্তিকে সাত বছরের অধিক কারাদণ্ড দিলে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। এ ছাড়া কয়েকটি নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে সহকারী দায়রা জজ বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যেতে পারে

 

[3] লেখ জারির ক্ষমতা: সুপ্রিমকোর্টের মতো হাইকোর্টগুলি নিজ নিজ এলাকায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখ, নির্দেশ ও আদেশ জারি করতে পারে । প্রসঙ্গত বলা যায়, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি সংরক্ষণ করা ছাড়াও হাইকোর্ট অন্য যে-কোনো উদ্দেশ্যে লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারে। এমনকি জরুরি অবস্থার সময়েও হাইকোর্টের 'বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ' ধরনের লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করার ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করা যায় না

 

[4] সাংবিধানিক বৈধতা বিচারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করার ক্ষমতাও হাইকোর্টের হাতে রয়েছে। এক্ষেত্রে অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে প্রণীত যে- কোনো আইনকে হাইকোর্ট অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে

 

[5] তত্ত্বাবধান-সম্পর্কিত ক্ষমতা: সংবিধানের ২৭৭ নং ধারা অনুযায়ী সামরিক আদালত ও সামরিক ট্রাইবিউনাল ছাড়া নিজ এলাকাভুক্ত অন্য সব আদালত ও ট্রাইবিউনালগুলির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অধস্তন আদালতগুলিকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাও হাইকোর্টের রয়েছে

 

[6] মামলা অধিগ্রহণের ক্ষমতা: সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এমন কোনো মামলা নিম্ন আদালত থেকে নিজের হাতে নেওয়ার ক্ষমতা হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে 

 

[7] নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা: অধস্তন আদালতগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে। জেলা আদালত ও অন্যান্য অধস্তন আদালতের বিচারপতি, কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে হাইকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

 

[৪] অন্যান্য ক্ষমতা: হাইকোর্ট নিজের অবমাননার জন্য অবমাননাকারীকে শাস্তি দিতে পারে। হাইকোর্ট বিচারকার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন নিজে তৈরি করতে পারে। হাইকোর্ট অভিলেখ আদালত হিসেবে (Court of Records) কাজ করে থাকে

                                                                          
উপসংহার: অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে হাইকোর্টের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে হাইকোর্টের গঠন ও ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এই আদালত প্রকৃত অর্থেই সর্বভারতীয় বিচারব্যবস্থার একটি অঙ্গ। হাইকোর্টের গঠন ও কাজকর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিচারপতিদের নিয়োগ, বদলি, অপসারণ, নতুন হাইকোর্ট গঠন, এক্তিয়ার সীমিতকরণ, বিচারপতিদের বেতন ও ভাতার বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস ইত্যাদি বিষয় সুনির্দিষ্টভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। তা ছাড়া হাইকোর্টের যে-কোনো সিদ্ধান্ত সুপ্রিমকোর্ট বাতিল করে দিতে পারে এবং সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশিত বিধিবিধান অনুসরণ করা হাইকোর্টের পক্ষে বাধ্যতামূলক। সুতরাং, হাইকোর্টকে সুপ্রিমকোর্টের অধীনে থেকে সহায়ক আদালত হিসেবে বিচারকার্য সম্পদান করতে হয়

 

 

প্রশ্ন 4. বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা কাকে বলে? বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার প্রকৃতি পর্যালোচনা করো

 

উত্তর:

 

5. ভারতীয় বিচারব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করো

 

 উত্তর:

 

প্রশ্ন 6. ভারতে বিভিন্ন ধরনের আদালতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দাও

 

উত্তর:

--------------------------------------

 

    👉Paid Answer (For Membership User)


Editing by- Rita Moni Bora