Chapter 12
আরোহমূলক দোষ
------------------------------
Long Answer Question
1. আরোহমূলক দোষ কী? বিভিন্নপ্রকার আরোহমূলক দোষের উল্লেখ ক
উত্তর: আরোহমূলক দোষ
আরোহ অনুমানোর ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করি। সিদ্ধান্তে এই সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় কিছু জাত সত্যের ওপর নির্ভর করে ঠিকই নির্ভর করে সিন্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লোক (Inductive rap) অবশ্যই থাকে। এই আরোহমূলক লাফের বিষয়টি সবসময় যে সঠিক হয়, এমন নয়। অর্থাৎ, এরূপ লাফের ক্ষেত্রে অবশ্যই একপ্রকার সংশয় থেকেই যায়। এর ফলে আরোহ অনুমানের সিখান্ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছু ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষি লাফের ক্ষেত্রে অবশ্যই একপ্রকার পোদের সৃষ্টি হয়। আরও বলা যায় যে, আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম দোষের (fallacies) উদ্ভব হয়। অণুলিকেই মাছের আরোহমূলক দোষ (Inductive fallacies)
আরোহমূলক দোখের প্রকার
আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটিকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বিভিন্ন প্রকার দোষের সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত দোষগুলিকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা -[1] অনুমান সংক্রান্ত দোষ এবং [2] অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ।
অলুমান সংক্রান্ত দোষ
আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে যে সমস্ত নিয়মের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলিকে যথাযথভাবে মেনে না চললে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় অনুমান সংক্রান্ত দোষ। এই অনুমান সংক্রান্ত দোষগুলিকে আবার তিনভাগে বিভক্ত করা যায়-[1] কারণ সংক্রান্ত দোষ (2) সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ এবং [3] উপমা যুক্তি সংক্রান্ত দোষ।
(1) কারণ সংক্রান্ত দোষ: আরোহ অনুমানের মূল উদ্দেশ্য হল সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এর মাধ্যমে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্ককে হলিত করা হয়। এই কার্যকারণ সম্পর্কটিকে তাই যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হয়। এই সম্পর্কটিকে যদি যথাযথভাবে নির্ণয় করা না হয়, তাহলে কোনো কার্যের প্রকৃত কারণটি কখনোই ধরা পড়ে না। কোনো কার্যের প্রকৃত কারণকে উল্লেখ না করে, অবভাসিত কোনো কারণকে যদি প্রকৃত কারণরূপে উল্লেখ করা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, সেই দোষকেই বলা হয় কারণ সংক্রান্ত দোষ।
তারণ সংক্রান্ত দোষের বিভাগ: কারণ সংক্রান্ত দোষকে আবার চারভাগে ভাগ করা যায়- (a) অবান্তর শর্ত বা বিষয়কে কারণ বলার দোষ (b) সহকার্যকে কারণ বলার দোষ [c] একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ এবং (d) কাকতালীয় দোষ। কোনো অবান্তর বিষয়কে যদি কোনো কার্যের কারণ বলে মনে করা হয় তাহলে অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষ হয়। একই কারণ থেকে উদ্ভূত দুটি বিষয়ের একটিকে যদি আর-একটির কারণ বলা হয়, তাহলে সহকার্যকে কারণ বলার দোষ হয়। কোনো ঘটনার একটি অনিবার্য বা আবশ্যিক শর্তকে যদি সমগ্র কারণরূপে মনে করা হয়, তাহলে একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ হয়। আর অহেতুক কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা হলে কাকতালীয় দোষের উদ্ভব হয়।
অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ
আরো অনুমানের মূল উদ্দেশ্যই হল পর্যবেক্ষণলব্ধ কতকগুলি দৃষ্টান্তের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এই উদ্দেশ্যে যেসমস্ত দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তা যদি যথাযথ না হয়, তবে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ। আমাদের পর্যবেক্ষণের শ্রান্তির জন্যই এই ধরনের দোষ উৎপন্ন হয় বলে একে পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত দোষ রূপেও উল্লেখ করা হয়। এই দোষ আবার দু- প্রকারের- [1] অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ এবং (2) ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
অপর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাবে উল্লেখ করা যায়- [i] নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ এবং [ii] প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাগে বিভক্ত করা যায়- (i) ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ এবং [ii] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
আরোহমূলক দোষের ছক
আরোহ অনুমান সংক্রান্ত দোষগুলিকে নীচের ছকটির সাহায্যে সহজভাবে উল্লেখ করা যায়।
2. অনুমান সংক্রান্ত দোষগুলি কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
আরোহ অনুমান সংক্রান্ত দোষ
আরোহ অনুমানের নিয়মগুলিকে যথাযথ অনুসরণ না করে যদি সিদ্ধান্ত গঠন করা হয় তাহলে অনুমান সংক্রান্ত দোষের উদ্ভব হয়। এই অনুমান সংক্রান্ত দোষ হল মূলত তিনটি-[1] কারণ সংক্রান্ত দোষ [2] সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ এবং [3] উপমা যুক্তি সংক্রান্ত দোষ। এই সমস্ত দোষগুলিকে নীচে উদাহরণ-সহ পরপর আলোচনা করা হল-
[1] কারণ সংক্রান্ত দোষ: আরোহ অনুমানের মূল কাজই হল সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এরূপ বচন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে একপ্রকার কার্যকারণ সম্বন্ধকে স্থাপন করা হয়। কার্যকারণ সম্বন্ধটিকে এক্ষেত্রে যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু সবসময় এই কার্যকারণ সম্বন্ধকে যথাযথভাবে উল্লেখ করা যায় না। এর ফলে কোনো কার্যের প্রকৃত কারণটিকে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। প্রকৃত কারণটিকে যদি যথাযথভাবে নির্ণয় করা না যায়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব ঘটে, সেই দোষকেই বলা হয় কারণ সংক্রান্ত দোষ।
[2] সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ বা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ: আরোহ অনুমানের প্রকৃত উদ্দেশ্যই হল সিদ্ধান্তে কার্যকারণ সম্পর্কিত একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু কার্যকারণ সম্পর্কের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ না করে, যদি কেবলমাত্র আমাদের অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে একটি সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তবে তা দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে এরূপ দোষকেই বলা হয় সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ। এই সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষের নাম হল অবৈধ সামান্যীকরণ (fallacy of illicit generalization)। কারণ, এরূপ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে সামান্য বা সার্বিক বচনটি যথাযথভাবে নিঃসৃত না হয়ে অবৈধভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়।
[3] উপমা যুক্তি সংক্রান্ত দোষ বা মন্দ উপমার দোষ: আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অনেক সময় আমরা উপমা বা সাদৃশ্য ব্যবহার করেও অনুমান গঠন করি। উপমা বা সাদৃশ্য ব্যবহার করে আমরা যখন কোনো অনুমান গঠন করি, তখন তাকে বলা হয় উপমা বা সাদৃশ্য যুক্তি (argument by মূল analogy)। উপমা যুক্তিতে দুটি বিষয় বা ঘটনার মধ্যে যদি কয়েকটি বিষয়ে মিল বা সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় এবং এদের কোনোটিতে যদি অন্য একটি নতুন বিশেষ ০৮ গুণ লক্ষ করা হয়, তাহলে অনুমান করা যায় যে, ওই নতুন বিশেষ গুণটি ে অপরটির মধ্যেও আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, যুক্তিবাক্যে যে সমস্ত গুণের সাদৃশ্য বা মিলের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে নতুন কোনো বিষয়ের সাদৃশ্য অনুমান করা হয়, তাকে প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ হতে হয়। যদি এরূপ যথাযথ সাদৃশ্য দেখা যায় তাহলে সাদৃশ্য বা উপমা যুক্তিটি উত্তম উপমা (good analogy) রূপেই গণ্য হয়। কিন্তু সাদৃশ্য যদি যথাযথ বা প্রাসঙ্গিক না হয় তবে সেক্ষেত্রে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকে বলা হয় মন্দ
উপমা (bad analogy)-র দোষ। অর্থাৎ, উপমার অপপ্রয়োগেই এরূপ দোষের। উদ্ভব ঘটে।
4. অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ কোনগুলি? অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ কী?
অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষসমূহ
আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে অনুমান সংক্রান্ত দোষ ছাড়াও আর এক ধরনের দোষ দেখা যায় এবং সেই দোষটি হল অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ। এই অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষকেই বলা হয় পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত দোষ। আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা মূলত অনুমানই গঠন করি। কিন্তু সেই অনুমান নির্ভর করে কতগুলি পর্যবেক্ষণলব্ধ দৃষ্টান্তের ওপর। সুতরাং অনুমানের ক্ষেত্রে যে পর্যবেক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রেও আমাদের নানারকম ভ্রান্তির সম্ভাবনা থেকে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নানা রকম দোষের উদ্ভব ঘটে।
অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ তথা পর্যবেক্ষণমূলক দোষকে তর্কবিদ মিল (Mill) মূলত দু-ভাগে ভাগ করেছেন- [1] অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) এবং [2] ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of mal- observation)। এই দু-ধরনের দোষই মূলত আমাদের পর্যবেক্ষণের ত্রুটি [2 থেকে উঠে আসে। ইন্দ্রিয়ের দুর্বলতা, আবেগ এবং নানাবিধ সংস্কারের ফলে অনেক সময় যথাযথভাবে অনুমানের দৃষ্টান্তগুলির পর্যবেক্ষণের ব্যর্থতাই এই সমস্ত দোষের উদ্ভব ঘটায়।
অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ
আরোহ অনুমানের মূল উদ্দেশ্যই হল সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এই সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আমরা একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্ককে উল্লেখ করতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন হল বিভিন্ন রকম ঘটনা বা দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করা। কারণ, যথাযথ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই সঠিক কার্যকারণ সম্পর্ককে হাজির করা যায়। কিন্তু নানা কারণে আমরা প্রয়োজনীয় ঘটনা বা দৃষ্টান্তসমূহকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। এর ফলে কিছু ঘটনা বা দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ থেকেই যায়। এরূপ অবস্থা সত্ত্বেও যদি আমরা কোনো অনুমান গঠন করি, তবে তা দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। অনুমানের ক্ষেত্রে এরূপ দোষকেই বলা হয় অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
5. অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ কয়প্রকার ও কী কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
উওরঃ অপর্যবেক্ষণমূলক দোষের শ্রেণিবিভাগ
অপর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা হয়- [1] নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ (non-observation of relevant negative instances) এবং [2] প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ (non-observation of essential circumstances)। এই দু-ধরনের অপর্যবেক্ষণমূলক দোষকে উদাহরণ-সহ নীচে আলোচনা করা হল-
[1] নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ: কোনো একটি ঘটনাকে যথাযথভাবে আলোচনা করার জন্য সেই ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত সমস্ত সদর্থক ও নঞর্থক ঘটনা বা শর্তসমূহকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কারণ, আমরা কোনো ঘটনার আলোচনার মাধ্যমেই তার কার্যকারণ সম্পর্ককে নির্ণয় করি। কারণ হল সদর্থক ও নঞর্থক ঘটনা বা শর্তের সমষ্টি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, আমরা শুধুমাত্র সদর্থক ঘটনাগুলিকেই পর্যবেক্ষণ করে থাকি, নঞর্থক ঘটনাসমূহকে পর্যবেক্ষণ করি না। এর ফলে গঠিত আরোহ অনুমানটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। এরূপ দোষটি হল নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ। এখানে নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে না-দেখা বা উপেক্ষা করা হয় বলে এরূপ দোষটিকে না-দেখা বা উপেক্ষার দোষরূপেও উল্লেখ করা হয়।
[2] প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ: অনেক সময় দেখা যায়, আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা যে কার্যকারণ সম্পর্কযুক্ত একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করি, সেই প্রক্রিয়ায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রয়োজনীয় বহু পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে উপেক্ষা করে থাকি। পারিপার্শ্বিক অবস্থাগুলির মধ্যে যেমন অনেক অবান্তর ঘটনা থাকে, তেমনি আবার অনেক প্রয়োজনীয় ঘটনাও থাকে। যথাযথভাবে কার্যকারণ সম্বন্ধমূলক আরোহ সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সমস্ত প্রয়োজনীয় অবস্থাসমূহকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এগুলিকে উপেক্ষা করে যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তবে তা দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। এরূপ দোষকেই বলা হয় প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণজনিত দোষ।
6. [i] টীকা লেখো: কাকতালীয় দোষ
[ii] ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ কয়প্রকার ও কী কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
[1] কাকতালীয় দোষ
যে কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণরূপে গ্রহণ করলে কাকতালীয় দোষের উদ্ভব হয়। এরূপ দোষে যা প্রকৃত কারণ নয় তাকেই কারণ বলে উল্লেখ করা হয় (Non-causa Pro-causa)। কাকতালীয় দোষ সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারণের গুণগত লক্ষণে বলা হয়েছে যে, কারণ হল শর্তহীন, অপরিবর্তনীয় অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা। অর্থাৎ, কার্যের যে-কোনো অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনাকেই কারণ বলা যায় না। কোনো কার্যের ঠিক আগের ঘটনাটি অনেক সময় আকস্মিকও হতে পারে। আর ঘটনাটি যদি আকস্মিক হয় তবে তা কখনোই শর্তহীন ও অপরিবর্তনীয় রূপে গণ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে কার্যের ঠিক আগের ওই আকস্মিক ঘটনাটিকে যদি কার্যটির কারণ বলে ধরা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc)।
কাকতালীয় দোষের হেতু
কাকতালীয় দোষটির উদ্ভব হয়েছে এভাবেই যে, তাল গাছের ওপর দিয়ে কাক উড়ে যাওয়ায় তালটি মাটিতে পড়ে গেল। সেকারণেই কাক উড়ে যাওয়াকে তাল পড়ার কারণ বলে মনে করা হয়েছে। সাধারণত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং অবাস্তব কল্পনাই হল এই দোষের মূলভিত্তি। আবার, অনেক সময় দেখা যায় যে, ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলেও এই ধরনের দোষের উদ্ভব হয়। ব্যতিরেকী পদ্ধতি যদি পরীক্ষণের ওপর নির্ভর না করে পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল হয়, তখন তার অপপ্রয়োগে অনেক সময় এই ধরনের দোষ ঘটে থাকে।
[ii] ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষের প্রকার
পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে, আমাদের ইন্দ্রিয়ের অক্ষমতা বা অসুস্থতার কারণে কোনো বস্তুকে ঠিক সেই বস্তুরূপে পর্যবেক্ষণ না করে অন্য বস্তুরূপে পর্যবেক্ষণ করে থাকি। যেমন-আমরা অনেক সময়ই কোনো ছায়াকে কায়ারূপে, দড়িকে সাপরূপে এবং চলন্ত ট্রেনে গাছপালা প্রভৃতিকে ছুটন্তরূপে দেখে থাকি। এরূপ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোনো অনুমান টির গঠন করা হয় তবে সেই অনুমানটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। এই ধরনের দোষের নাম হল ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
এই ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা যায়-[1] ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of individual mal-observation) এবং [2] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of universal mal-observation)। এই দু-ধরনের দোষের বিষয় দুটিকে উদাহরণ-সহ নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ: অনুমান গঠন করতে গিয়ে যদি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনাকে ব্যক্তিবিশেষ ভুল হিসেবে দেখে, তবে সেই ধরনের পর্যবেক্ষণকে বলা হয় ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ। এখানে পর্যবেক্ষণগত ভুলটি হল কোনো একজন ব্যক্তির, সার্বিকভাবে কোনো ভ্রান্তি নয়। যেমন-দূরের কোনো গাছের কাণ্ডকে দেখে মানুষ মনে করা, কোনো মহিলাকে দেখে পুরুষ মনে করা ইত্যাদি।
[2] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ: কোনো ঘটনার পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিবিশেষের ভ্রান্তি না হয়ে যদি তা কোনো সার্বিক নীতির ফলে ভ্রান্তি হয়, তবে সেই ধরনের পর্যবেক্ষণকে বলা হয় সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ। এখানে ব্যক্তিবিশেষের ভ্রান্তির কোনো ভূমিকা থাকে না। এখানে থাকে সঠিক কোনো নীতির ভ্রান্তিমূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, জলপূর্ণ কাঁচের পাত্রে ডোবানো কোনো লাঠিকে বাঁকা দেখার ভ্রান্তি, সমউচ্চতাসম্পন্ন পরপর বাড়িগুলিকে ক্রমান্বয়ে বেশি উচ্চতাসম্পন্নরূপে দেখার ভ্রান্তি ইত্যাদি।
7. [i] একটি আবশ্যিক বিষয় বা শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
[ii] সংক্ষিপ্ত টাকা লেখো: সহকার্যকে কারণ বলার দোষ
উওরঃ
[i] একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ
কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার ক্ষেত্রে কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনারূপে যে সমস্ত বিষয় লক্ষ করা যায় সেগুলি কতকগুলি শর্তের সমষ্টি মাত্র। এই সমস্ত শর্তগুলির কোনো কোনোটি আবশ্যিক বা অনিবার্য (necessary) রূপে গণ্য হতে পারে, আবার সেগুলির কোনো কোনোটি অনাবশ্যক বা অবান্তর রূপেও গণ্য হতে পারে। কারণের ক্ষেত্রে আবার একাধিক অনিবার্য শর্তও থাকতে পারে। একাধিক অনিবার্য শর্তের সমষ্টিকে কারণরূপে উল্লেখ না করে, যদি তাদের মধ্যে থেকে একটিমাত্র অনিবার্য শর্তকে কারণরূপে উল্লেখ করা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকে বলা হয় একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ।
[ii] সহকার্যকে কারণ বলার দোষ
কার্যকারণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে, কারণ হল কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা এবং কার্য হল কারণের অনুবর্তী ঘটনা। কিন্তু কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় যথাযথভাবে এই পূর্ববর্তী ও অনুবর্তী ঘটনার হিসেবটি মাথায় রাখি না। আমাদের অভিজ্ঞতায় অনেক সময় দেখা যায় যে, একই সার্বিক নীতির ফলে দু-ধরনের কার্য সংঘটিত হয়। এই দু-ধরনের কার্য তাই একে অপরের সহকার্যের সম্পর্কে আবদ্ধ। সেকারণেই এই দুটির একটি কখনোই অন্যটির কারণ হতে পারে না। দুটি সহকার্যের একটিকে যদি অন্যটির কারণ বা কার্য বলে মনে করা হয় তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, সেই দোষের নাম হল সহকার্যকে কারণ বলার দোষ।
8.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো: হেমন্তের পর শীত আসে। অতএব হেমন্ত শীতের কারণ।
উওরঃ
9.চের আরোহ যুক্তিটির বিচার করো এবং কোনো দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো:
ছাত্রটির পরীক্ষায় খারাপ ফলের কারণ হল তার গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি।
উওরঃ
10. কারণ সংক্রান্ত দোষ কোনগুলি? উদাহরণ-সহ অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক শর্তকে কারণ মনে করার দোষটি আলোচনা করো।
কারণ সংক্রান্ত দোষ
আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তে আমরা যে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করি তার মাধ্যমে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। সিদ্ধান্তে এই কার্যকারণ সম্পর্কটিকে যথাযথ বা সার্বিকভাবে নির্ণয় করতে হয়। কিন্তু কার্যকারণ সম্পর্কটি যদি যথাযথ বা সার্বিকভাবে নির্ণয় না করে অযথার্থ বা ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়, তাহলে আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে কারণ সংক্রান্ত দোষ-এর আবির্ভাব ঘটে। কারণ সংক্রান্ত দোষরূপে যেগুলিকে উল্লেখ করা যায়, সেগুলি হল-[1] অবান্তর শর্তকে কারণ বলার দোষ, [2] একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ, [3] সহ-কার্যকে কারণ বলার দোষ এবং [4] কাকতালীয় দোষ প্রভৃতি।
অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোখ
কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার ক্ষেত্রে আমরা সবসময়ই চেষ্টা করি কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণটিকে উল্লেখ করতে। কিন্তু কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণকে নির্ণয় করা কখনোই সহজসাধ্য নয়। কারণকে বলা হয় কার্যরূপ ঘটনার নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা। এই পূর্ববর্তী ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বিভিন্ন রকম শর্ত (conditions)। সমস্ত শর্তগুলি প্রাসঙ্গিকও হতে পারে, আবার তা অপ্রাসঙ্গিকও হতে পারে। কার্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্ত বা ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, সেগুলিকে বলা হয় প্রাসঙ্গিক শর্ত। আর যে সমস্ত শর্ত বা ঘটনার কোনো ভূমিকাই নেই, সেগুলিকে বলা হয় অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর শর্ত। কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের কাজ হল এই সমস্ত অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর ঘটনাগুলিকে সরিয়ে রেখে প্রাসঙ্গিক শর্তসমূহকে কারণরূপে উল্লেখ করা। কিন্তু আমরা সবসময় এরূপ প্রয়াে সফল হই না। অনেক সময় আমরা তাই ভুলক্রমে অথবা অজ্ঞতা অনুসা কোনো অপ্রয়োজনীয় অবান্তর শর্তকে কারণ বলে মনে করি এবং এভাে কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রতিষ্ঠা করি। যখনই এরূপ করা হয় তখন যে দোলে আবির্ভাব হয়, তাকে বলে অবান্তর শর্ত বা বিষয়কে কারণ বলে মনে ক দোষ। সাধারণত অন্বয়ী পদ্ধতি এবং সহপরিবর্তন পদ্ধতির অপপ্রে এরূপ দোষের উদ্ভব ঘটে।
11.সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো-মন্দ উপমা
উত্তর: মন্দ উপমা
আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অনেক সময় আমরা উপমা বা সাদৃশ্য ব্যবহার করেও অনুমান গঠন করি। উপমা বা সাদৃশ্য ব্যবহার করে আমরা যখন কোনো অনুমান গঠন করি তখন তাকে বলা হয় উপমা বা সাদৃশ্য যুক্তি (argument by analogy)। উপমা যুক্তিতে দুটি বিষয় বা ঘটনার মধ্যে যদি কয়েকটি বিষয়ে মিল বা সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় এবং এদের কোনোটিতে যদি অন্য শ্য একটি নতুন বিশেষ গুণ লক্ষ করা হয়, তাহলে অনুমান করা যায় যে, ওই নতুন
আরোহমূলক দোষ
বিশেষ গুণটি অপুরটির মধ্যেও আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, যুক্তিবাক্যে যে সমস্ত গুণের সাদৃশ্য বা মিলের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে অপর কোনো নতুন বিষয়ের সাদৃশ্য অনুমান করা হয়, তাকে প্রাসঙ্গিক তথ্য দরকার যে, যুক্তিবাক্যে যে সমস্ত গুণের সাদৃশ্য বা মিলেছিলে সাদৃশ্য বা উপমা যুক্তিটি উত্তম উপমা (good analogy) রূপেই গণ্য হয়। কিন্তু সাদৃশ্য যদি যথাযথ বাঘা হতে হয়। যদি এরুপ যথাযথ সাদৃশ্য দেখা যায় তায়, তাকে বলা হয় মন্দ উপমা (bad analogy)-র দোষ। অর্থাৎ, উপমার অপপ্রয়োগেই এরূপ দোষের উদ্ভব ঘটে।