Chapter 4 -
আমার কৈফিয়ৎ
প্রশ্ন ১। ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতাটির কবির নাম কী?
উত্তর:- ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতাটির কবির নাম হলো কাজী নজরুল ইসলাম।
উত্তর:- আমার কৈফিয়ত’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
প্রশ্ন ৩। “ভক্তরা বলে, ‘নবযুগ’ রবি!”- রবি কে?
উত্তর:- এখানে ‘রবি’ বলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন ৪। “বর্তমানের কবি আমি ভাই’ ভবিষ্যতের নই নবী”। ‘নবী’ শব্দের অর্থ লেখো।
উত্তর:- ‘নবী’ শব্দের অর্থ ভবিষ্যদ্বক্তা বা ঈশ্বরের বার্তাবাহক।
প্রশ্ন ৫। ‘বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবী।’ – কবি কে?
উত্তর:- এই পঙ্ক্তির কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
প্রশ্ন ৬। “আমরা তো জানি, স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস্!’ – ‘বার্তাকু শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:- বার্তাকু’ শব্দের অর্থ বাঁধাকপি (একটি শাকসবজি)।
প্রশ্ন ৭। ‘ভক্তরা বলে, নবযুগ রবি। যুগের না হই, ______ কবি’ (শূন্যস্থান পূর্ণ কর)
উত্তর:- ভক্তরা বলে, নবযুগ রবি। যুগের না হই, হুযুগের কবি।’
প্রশ্ন ৮। “গুরু ক’ন, ‘তুই করেছিস শুরু তালোয়ার দিয়ে দাঁড়ি চাচা!” – এখানে গুরু কে?
উত্তর:- এখানে ‘গুরু’ বলতে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন ৯। “ঠাঁই পাবে কবির ভবীর সাথে হেঁ।” – ‘ভবী’ শব্দের অর্থ লেখো।
উত্তর:- ‘ভবী’ শব্দের অর্থ ভবিষ্যৎ বধূ বা স্ত্রী।
প্রশ্ন ১০। “বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই _____। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তর:- “বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবী।”
প্রশ্ন ১১। “আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী।”- ‘ভৈরবী’ কী?
উত্তর:- ভৈরবী’ হল একটি রাগের নাম, যা সাধারণত ভোরবেলা পরিবেশিত হয়।
প্রশ্ন ১২। “ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও।” – ‘ফতোয়া’ কী?
উত্তর:- ‘ফতোয়া’ হল ধর্মীয় নির্দেশ বা আদেশ।
প্রশ্ন ১৩। “মাথার উপর জ্বলিছেন রবি।” – রবি কে?
উত্তর:- এখানে ‘রবি’ বলতে সূর্যকে বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন ১৪। “মাথার উপর জ্বলিছেন রবি।” – রবি শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:- ‘রবি’ শব্দের অর্থ সূর্য।
প্রশ্ন ১৫। “আমার কৈফিয়ৎ” কবিতার কবিকে তাঁর প্রেয়সী কী বলে গালি দেন?প্রশ্ন ১৬। “কাঁদে ছেলে মেয়ে। মাতা কয়” – কী বলে?
উত্তর:- কবিকে তাঁর প্রেয়সী ‘পাগল’, ‘ধোঁকাবাজ’ ইত্যাদি বলে গালি দেন।
প্রশ্ন ১৭। “প্রতি শনিবারেই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন” – এখানে কোন্ চিঠির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর:- মাতা বলেন, "কাঁদিস না রে বাছা, সব সইবে মা।"
প্রশ্ন ১৮। ‘হেরিনু, জননী’, ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় কবি মাকে কী করতে দেখেন?
উত্তর:- কবি তাঁর মাকে দুঃখ ভোগ করতে ও কষ্ট সহ্য করতে দেখেন।
প্রশ্ন ১৯। ‘কেন ওঠে নাকো তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর খুন? – খুন শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:- এখানে ‘খুন’ শব্দের অর্থ হত্যা বা জীবন নাশ।
প্রশ্ন ২০। ‘আমি বলি, প্রিয়ে হাটে ভাঙি হাঁড়ি’ – হাঁটে হাঁড়ি ভাঙার অর্থ কী?
উত্তর:- হাঁটে হাঁড়ি ভাঙার অর্থ গোপন কথা ফাঁস করে দেওয়া।
প্রশ্ন ২১। ‘স্বরাজিরা ভাবে নারাজি’ – ‘স্বরাজি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:- স্বরাজি’ শব্দের অর্থ স্বাধীনতা বা স্বরাজ সমর্থনকারী ব্যক্তি।
প্রশ্ন ২২। “ভক্তরা বলে, নবযুগ-রবি যুগের না হই, হুযুগের কবি” নবযুগ-রবি কাকে বলা হয়েছে?
উত্তর:- এখানে কাজী নজরুল ইসলামকে ‘নবযুগ-রবি’ বলা হয়েছে, কারণ তিনি ‘নবযুগ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সমাজে নতুন যুগের কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস, যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!” – পংক্তি দুটি কোন কবিতার অংশ? কবিতার লেখক কে? এখানে কে, কাদের সর্বনাশের কথা বলেছেন?
উত্তর:- পংক্তি দুটি আমার কৈফিয়ৎ কবিতার অংশ।
কবিতার লেখক কাজী নজরুল ইসলাম।
এখানে কবি অত্যাচারী শোষকদের সর্বনাশের কথা বলেছেন, যারা ভারতের তেত্রিশ কোটি মানুষের আহার কেড়ে নেয়।
প্রশ্ন ২। “বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবী” বর্তমানের এই কবির নাম কী? নবী বলতে কী বোঝ?
উত্তর:- বর্তমানের কবি হলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
'নবী' বলতে বোঝানো হয়েছে ভবিষ্যদ্বক্তা বা ঈশ্বরের বার্তাবাহক, অর্থাৎ কবি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার দাবী করেন না।
‘ভবী’ শব্দের অর্থ: ভবিষ্যৎ স্ত্রী বা বধূ।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি নবী নন, অর্থাৎ তিনি ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন না, বরং তিনি বর্তমানের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে চান।
মা সব কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করেন, বিশেষ করে সমাজের অত্যাচার ও দুঃখ-কষ্ট।
প্রশ্ন ৭। ‘ক্ষুধাতুর শিশু’ কী চায় আর কী চায় না – ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতা অনুসারে বলো।
উত্তর:- ক্ষুধাতুর শিশু চায়: অন্ন (খাবার) ও জীবনধারণের মৌলিক অধিকার।
ক্ষুধাতুর শিশু চায় না: ধর্মীয় উপদেশ বা উপাসনার কথা শুনতে—সে আগে ক্ষুধা মিটাতে চায়।
প্রশ্ন ৮। ‘পড়ে নাক’ বই, বয়ে গেছে ওটা। কেহ বলে, ‘বৌ’-এ গিলিয়াছে গোটা।’ – কে, বই পড়ে না? বৌ-এর পরিচয় কী?
উত্তর:- বই পড়ে না সাধারণ মানুষ বা সমাজের একশ্রেণির লোক, যারা জ্ঞানচর্চা এড়িয়ে চলে।
➡ ‘বৌ’ বলতে এখানে ‘বিধবা বিবাহ’ বোঝানো হয়েছে, অর্থাৎ কেউ কেউ বলেন যে, বিধবা বিবাহের কারণে সমাজের শিক্ষার অবনতি হয়েছে।প্রশ্ন ৯। ‘আমি বলি, প্রিয়ে হাটে ভাঙি হাঁড়ি _____ – কে, কাকে ‘প্রিয়ে’ বলেছেন?
উত্তর:- ‘‘আমি’ বলতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বোঝানো হয়েছে।
➡ ‘প্রিয়ে’ বলতে কবি তাঁর প্রেমিকা বা প্রিয়জনকে সম্বোধন করেছেন।প্রশ্ন ১০। নজরুল ইসালম রচিত দুখানি কাব্যের নাম লেখো।
উত্তর:- অগ্নিবীণা , সঞ্চিতা
প্রশ্ন ১১। নজরুল ইসলাম রচিত দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর:- বাঁধন হারা, মৃত্যুখেলা
প্রশ্ন ১২। নজরুল ইসলাম রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো।
উত্তর:- ঝিলিমিলি, আলেয়া
➡ ‘কনফুসি’ শব্দটি কনফুসিয়াস (Confucius) থেকে এসেছে, যিনি ছিলেন চীনের এক মহান দার্শনিক ও নীতিবিদ। এখানে এটি রূপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা সমাজের প্রচলিত নৈতিকতা ও উপদেশমূলক কথার প্রতি বিদ্রূপ প্রকাশ করে।
(খ) প্রভাতের ভৈরবী:
➡ ‘ভৈরবী’ হল একটি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত রাগ, যা সাধারণত সকালবেলায় পরিবেশিত হয়।
➡ ‘প্রভাতের ভৈরবী’ বলতে নতুন দিনের সূচনা বা জাগরণের প্রতীক বোঝানো হয়েছে। কবি এটি ব্যবহার করেছেন সমাজের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে।
(গ) নবী:
➡ ‘নবী’ শব্দের অর্থ ভবিষ্যদ্বক্তা বা ঈশ্বরের বার্তাবাহক।
➡ এখানে কবি বলতে চেয়েছেন যে, তিনি ভবিষ্যতের কোনো ভবিষ্যদ্বাণীকারী নন, বরং তিনি বর্তমানের বাস্তবতা তুলে ধরছেন।
(ঘ) ভায়োলেন্সের ভায়োলিন:
➡ ‘ভায়োলেন্স’ মানে হিংসা বা সহিংসতা, আর ‘ভায়োলিন’ হল একটি বাদ্যযন্ত্র।
➡ এখানে এটি বিদ্রূপাত্মকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা বোঝায় যে সমাজে সহিংসতা ও দমননীতির মধ্যেও কৃত্রিমভাবে সুরেলা বা শান্তিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়।
➡ ‘গোড়ারাম’ বলতে অন্ধধর্মবিশ্বাসী ও গোঁড়া ব্যক্তি বোঝানো হয়েছে, যে মনে করে কবি নাস্তিক।
পাতিরাম:
➡ ‘পাতিরাম’ বলতে ধর্মনিরপেক্ষ বা মুক্তচিন্তার ব্যক্তি বোঝানো হয়েছে, যে মনে করে কবি কনফুসিয়াসের মতো নীতিবাদী।
কবিতার কবি: কাজী নজরুল ইসলাম।
➡ এখানে কাজী নজরুল ইসলাম নিজের সমালোচকদের প্রতি বিদ্রূপ করে বলেছেন যে, কেউ কেউ তাঁকে ‘যুগের কবি’ না বলে ‘হুজুগের কবি’ বলে অভিহিত করে, অর্থাৎ তাঁর লেখা কেবল ক্ষণস্থায়ী উত্তেজনা সৃষ্টি করে, দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে না।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ২। “বন্ধুগো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে”, – কবি বুকে বিষ-জ্বালা অনুভব করছেন কেন? অথবা, উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- উদ্ধৃতাংশের ব্যাখ্যা:
"বন্ধুগো, আর বলিতে পারি না,
বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে।"
এই পঙ্ক্তিগুলো কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি তাঁর মনের গভীর যন্ত্রণা ও হতাশার কথা ব্যক্ত করেছেন।
কবি বিষ-জ্বালা অনুভব করছেন কেন?
সমাজের অন্যায় ও অবিচার:
- কবি দেখতে পান, সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য চরমে পৌঁছেছে।
- সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু ও দরিদ্ররা ক্ষুধার কষ্টে দিন কাটাচ্ছে, অথচ শাসকশ্রেণি ও ধনিকরা ভোগ-বিলাসে মত্ত।
তাঁর বিদ্রোহী স্বভাবের জন্য সমালোচিত হওয়া:
- কবির কবিতা ও বক্তব্য সমাজের রক্ষণশীল, গোঁড়া মানুষদের পছন্দ হয়নি।
- তাঁকে কখনো নাস্তিক, কখনো বিদ্রোহী বলে সমালোচনা করা হয়েছে।
স্বাধীনতা ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম:
- ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছিলেন, কিন্তু তৎকালীন শাসক ও সমাজের একাংশ তাঁর প্রতিবাদকে দমন করতে চেয়েছিল।
- তাঁর বক্তব্য ও কবিতা বহুবার নিষিদ্ধ করা হয়, যা তাঁকে মানসিকভাবে কষ্ট দিয়েছে।
ব্যক্তিগত দুঃখ:
- তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও নানা সমস্যা ছিল, যা তাঁর কষ্ট আরও বাড়িয়েছিল।
- প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছিন্নতা, দারিদ্র্য ও জীবনসংগ্রাম তাঁকে কষ্ট দিয়েছে।
উপসংহার:
এই পঙ্ক্তির মাধ্যমে কবি নিজের যন্ত্রণার কথা বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করেছেন। তাঁর দুঃখ শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি সমগ্র মানবজাতির দুঃখ।
তাঁর এই বিষাদ, সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও মানুষের দুঃখ লাঘবের জন্য বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
"আনকোরা মত নন্ভায়োলেন্ট নন -কো’র দলও নন্ খুশী
‘ভায়োলেন্সের ভায়োলিন’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি।”
প্রথম লাইন:
- ‘আনকোরা মত’ বলতে বোঝানো হয়েছে নতুন, অপরীক্ষিত বা প্রচলিত নয় এমন মতবাদ।
- ‘নন্ভায়োলেন্ট’ (Non-violent) বলতে অহিংস মতবাদ বোঝানো হয়েছে, যা মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত।
- ‘নন-কো’র দল’ বলতে বোঝানো হয়েছে নিরপেক্ষ বা কোনো মতবাদ অনুসরণ না করা ব্যক্তিদের দল।
- কবি বলছেন, তাঁকে নিয়ে অহিংসবাদীরা খুশি নয়, আবার যারা নিরপেক্ষ, তারাও সন্তুষ্ট নয়। অর্থাৎ, তাঁর মতবাদ সবাই গ্রহণ করছে না।
দ্বিতীয় লাইন:
- ‘ভায়োলেন্সের ভায়োলিন’ বলতে সহিংসতার সুর বোঝানো হয়েছে।
- কবি বিদ্রোহী এবং সংগ্রামী হওয়ার কারণে তাঁকে কেউ কেউ ‘সহিংসতা প্রচারকারী’ বলে মনে করে।
- ‘বিপ্লবী-মন তুষি’ বলতে বোঝানো হয়েছে তিনি আসলে একজন বিপ্লবী, যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন।
সারমর্ম:
কাজী নজরুল ইসলাম এই পঙ্ক্তিতে বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাঁর বিদ্রোহী ভাবধারা ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর অহিংসবাদীদের পছন্দ নয়, আবার নিরপেক্ষ ব্যক্তিরাও তাঁকে সমর্থন করে না। তাঁকে ‘সহিংসতার প্রচারক’ বলে অপবাদ দেওয়া হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন বিপ্লবী, যিনি সমাজের পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করছেন।
প্রশ্ন ৩। “যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকালে – বাণী কই, কবি? দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী! – উদ্ধৃতাংশের অন্তর্নিহিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- উদ্ধৃতাংশের বিশ্লেষণ:
"যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকালে – বাণী কই, কবি?
দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!"
প্রথম লাইন:
- ‘রবি’ বলতে এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বোঝানো হয়েছে।
- কবি বলতে চেয়েছেন যে, রবীন্দ্রনাথের কবিতা সর্বজনগ্রাহ্য ও সমাদৃত হলেও, তাঁর নিজের (নজরুলের) কাব্যিক প্রকাশ অনেকের কাছে বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- ‘বাণী কই, কবি?’ – এখানে কবি ব্যঙ্গাত্মকভাবে প্রশ্ন করছেন, অর্থাৎ তাঁর রচনার ভাষা ও বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
দ্বিতীয় লাইন:
- ‘দুষিছে সবাই’ – সমাজের রক্ষণশীলরা কবিকে নানা ভাবে দোষারোপ করছে।
- ‘আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী’ –
- ‘ভৈরবী’ একটি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের রাগ, যা সাধারণত ভোরে পরিবেশিত হয়।
- কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি নতুন দিনের সূচনা বা সমাজের পরিবর্তনের গান গাইছেন, যা সমাজের রক্ষণশীলরা বুঝতে পারছে না এবং তাঁকে দোষারোপ করছে।
অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
- নজরুল ইসলামের কবিতা ও সাহিত্য সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তাই অনেকেই তাঁর বিরোধিতা করেছেন।
- তিনি রবীন্দ্রনাথের মতো সর্বজনপ্রিয় কবি নন, বরং তিনি সংগ্রামের ও বিদ্রোহের কবি।
- যদিও তাঁকে সমাজ দোষারোপ করে, তবু তিনি অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন এবং সমাজের জাগরণের বার্তা দিয়েছেন।
সারমর্ম:
কাজী নজরুল ইসলাম এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে, সমাজের রক্ষণশীলরা তাঁর কাব্য ও চিন্তাধারাকে গ্রহণ করতে পারে না, তাঁকে সমালোচনা করে। কিন্তু তবু তিনি ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিনের গান গেয়ে যান, যেমন প্রভাতের ভৈরবী রাগ নতুন দিনের সূচনা করে।
‘রবি’ কে?
➡ এখানে ‘রবি’ বলতে কাজী নজরুল ইসলামকেই বোঝানো হয়েছে।
➡ সমালোচকরা তাঁকে ‘নবযুগ-রবি’ বলে অভিহিত করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে নতুন যুগের কবি হিসেবে দেখেন।
‘নবযুগ-রবি’ কাকে বলা হয়েছে?
➡ ‘নবযুগ-রবি’ বলা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামকে, কারণ তিনি তাঁর কবিতা ও রচনার মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা করতে চেয়েছিলেন।
➡ তাঁর লেখা ব্রিটিশবিরোধী, সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় ভরা।
➡ তিনি ‘নবযুগ’ নামক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেখানে তিনি সমাজ বদলের পক্ষে বলতেন।
কবি নিজেকে ‘হুজুগের কবি’ বলেছেন কেন?
➡ কবি এখানে ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেছেন যে, অনেকেই তাঁকে ‘যুগের কবি’ না বলে ‘হুজুগের কবি’ বলে অপমান করছে।
➡ ‘হুজুগের কবি’ বলতে বোঝানো হয়েছে, যে কবি কেবল সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করেন, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারেন না।
➡ সমালোচকরা মনে করতেন, নজরুলের কবিতা ও রচনা শুধু অস্থায়ী বিদ্রোহ এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করে, বাস্তবে সমাজ পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।
কবির বক্তব্য:
- নজরুল নিজেকে ‘যুগের কবি’ বলে মনে করতেন, কারণ তিনি চেয়েছিলেন একটি নতুন যুগের সূচনা করতে, যেখানে স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে।
- কিন্তু সমালোচকরা তাঁকে ‘হুজুগের কবি’ বলে বিদ্রূপ করতেন, যেন তাঁর কবিতা কেবল সাময়িক আলোড়ন তোলে, কিন্তু বাস্তবে কোনো স্থায়ী পরিবর্তন আনে না।
- এই লাইনগুলোতে কবি তাঁর প্রতি সমালোচকদের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবকে ব্যঙ্গ করেছেন এবং তাঁর কবিতা ও আদর্শের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
সারমর্ম:
➡ নজরুল তাঁর বিদ্রোহী কবিতা ও রচনার জন্য ‘নবযুগ-রবি’ নামে পরিচিত হলেও, সমালোচকরা তাঁকে ‘হুজুগের কবি’ বলে কটাক্ষ করতেন। তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেছেন, যদিও অনেকে তাঁকে সাময়িক উত্তেজনার কবি মনে করেন, তিনি আসলে এক নতুন যুগের সূচনা করতে চান।
প্রশ্ন ৫। ‘‘প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস, যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ! – অন্তর্নিহিত বক্তব্য বিশ্লেষণ করো। অথবা, কবি কাদের সর্বনাশ কামনা করেছেন ? তিনি কেন এই ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন?
উত্তর:- ➡ "প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!"
কবি কাদের সর্বনাশ কামনা করেছেন?
এখানে ‘যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস’ বলতে শোষক ও অত্যাচারী শাসকদের বোঝানো হয়েছে। এই শাসকরা সাধারণ জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাঁদের দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষত, ব্রিটিশ শাসক ও স্বদেশীয় লোভী জমিদারদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা সাধারণ মানুষের কষ্টের প্রতি উদাসীন ছিল।
কবি কেন এই ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন?
নজরুল ইসলাম ছিলেন বিদ্রোহী কবি। তিনি সমাজের অন্যায়, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। এখানে তিনি বলেছেন, তাঁর রক্ত যদি ঝরতে হয়, তবে যেন তা শোষকদের সর্বনাশের বার্তা হয়ে ওঠে। তিনি চান, শোষিত জনগণের মুক্তির জন্য তাঁর আত্মত্যাগ যেন ব্যর্থ না হয় এবং অত্যাচারীদের পতন যেন নিশ্চিত হয়।
অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
- কবি সমাজের শোষিত মানুষের দুঃখ-কষ্টের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
- তিনি শাসক ও শোষকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
- কবির বিশ্বাস, তাঁর রক্ত ও বিদ্রোহী লেখা একদিন শোষিতদের মুক্তি আনবে।
- এই চরণগুলোতে বিপ্লব ও প্রতিরোধের আহ্বান রয়েছে, যা নজরুলের বিদ্রোহী চেতনার প্রতিফলন।
‘দেব-দেবী’ নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে।"
বক্তব্য বিশ্লেষণ:
এই চরণগুলিতে কাজী নজরুল ইসলাম ধর্মান্ধতা ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন।
➡ ‘মৌ-লোভী মৌলবী’ ও ‘মোল্লারা’ বলতে এমন ধর্মীয় নেতাদের বোঝানো হয়েছে, যারা ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করেন। তাঁরা প্রকৃত ধর্মের শিক্ষা অনুসরণ না করে, কেবল ব্যক্তিগত লাভের জন্য ধর্মকে হাতিয়ার বানান।
➡ ‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে’ – এখানে কবি দেখিয়েছেন, এই ভণ্ড মৌলবীরা ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়ায়। যদি কেউ অন্য ধর্মের কথা বলে বা সহিষ্ণুতার কথা বলে, তাহলে তাঁরা তাকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে চায়।
অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
কবি দেখিয়েছেন, সমাজে এমন অনেক ধর্মীয় নেতা আছে, যারা প্রকৃত ধর্মকে ভুলে গিয়ে স্বার্থপর, সংকীর্ণ, এবং অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।
তাঁরা ধর্মকে অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষের মনে বিদ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টি করে।
কবি এই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এবং প্রকৃত ধর্মের মানবিক দিকটি তুলে ধরতে চেয়েছেন।
সারমর্ম:
এই লাইনগুলোতে ধর্মের নামে ভণ্ডামি ও কুসংস্কারকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। কবি বলতে চেয়েছেন, যারা ধর্মকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে এবং অন্যদের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাব পোষণ করে, তারা প্রকৃত ধর্মের শত্রু।
প্রশ্ন ৭। ‘ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটা ভাত একটু নুন’ – উক্তিটির ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:- ➡ কবির নাম:
এই লাইনটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত "আমার কৈফিয়ৎ" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
➡ উক্তিটির ব্যাখ্যা:
এই চরণে কবি তৎকালীন ভারতীয় সমাজের দারিদ্র্য ও শোষণের নির্মম চিত্র তুলে ধরেছেন।
🔹 ‘ক্ষুধাতুর শিশু’ বলতে সমাজের সেই দরিদ্র, অনাহারী শিশুদের বোঝানো হয়েছে, যাদের একমাত্র চাহিদা হলো খাবার পাওয়া।
🔹 ‘চায় না স্বরাজ’ – এখানে ‘স্বরাজ’ বলতে রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে বোঝানো হয়েছে।
🔹 ‘চায় দুটা ভাত একটু নুন’ – কবি বোঝাতে চেয়েছেন, যারা চরম দারিদ্র্যে ভুগছে, তাদের কাছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা বড় বড় আদর্শের চেয়ে খাবারটাই বেশি জরুরি।
➡ মূল বক্তব্য:
✔️ কবি সমাজের শোষকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, স্বাধীনতা বা রাজনৈতিক আন্দোলনের বড় বড় ভাষণ দিয়ে লাভ নেই, যদি সাধারণ মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে, অভুক্ত শিশু দুমুঠো ভাত না পায়।
✔️ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রথমে মৌলিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান) পূরণ করতে হবে, তারপর স্বাধীনতার কথা ভাবা উচিত।
➡ সারমর্ম:
এই লাইনগুলোতে নজরুল মানুষের বাস্তব সমস্যা, বিশেষ করে দরিদ্রদের দুর্দশার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাজনৈতিক স্বাধীনতার চেয়ে আগে ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়াটাই আসল কাজ – এই সত্য তিনি তুলে ধরেছেন।
প্রশ্ন ৮। ‘আম পারা পড়া হামবড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে। – কোন কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে ? কবি কাদের সম্বন্ধে একথা বলেছেন? ‘আম পারা কী?
উত্তর:- কোন কবিতা থেকে উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে?
এই লাইনটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত "আমার কৈফিয়ৎ" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
➡ কবি কাদের সম্বন্ধে একথা বলেছেন?
এই লাইনগুলিতে কবি সমাজের সেই শিক্ষিত ভণ্ড ও আত্মগর্বী লোকদের সমালোচনা করেছেন, যারা নিজেকে অত্যন্ত জ্ঞানী মনে করে, কিন্তু বাস্তব জীবনে কোনো মূল্যবান অবদান রাখে না।
🔹 ‘আম পারা পড়া হামবড়া’ বলতে বোঝানো হয়েছে, তারা সাধারণ বিদ্যা অর্জন করেছে, কিন্তু বাস্তব জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
🔹 এরা নিজেদের খুব বড় জ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞ ভাবে (‘হামবড়া’), কিন্তু সমাজের প্রকৃত সমস্যাগুলোর সমাধানে এদের কোনো ভূমিকা নেই।
🔹 এরা শুধু ভাত খাওয়া আর আত্মপ্রশংসায় ব্যস্ত থাকে।
➡ ‘আম পারা’ কী?
🔹 ‘আম পারা’ বলতে ছোটবেলায় গাছ থেকে আম পাড়ার অভ্যাস বোঝানো হয়েছে, যা এখানে অভিজ্ঞতার অভাব বা ছেলেমানুষি প্রবৃত্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
🔹 কবি বোঝাতে চেয়েছেন, এই তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ অত্যন্ত তুচ্ছ ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে ব্যস্ত থাকে, কিন্তু সমাজের প্রকৃত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে না।
➡ সারমর্ম:
এই লাইনগুলিতে নজরুল ভণ্ড, আত্মগর্বী এবং নিরর্থক বিদ্যাবুদ্ধির অহংকারীদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সমাজে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে শুধু পড়াশোনা করলেই হবে না, বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ করতে হবে এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন ৯। ‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে’ – পংক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- ➡ পংক্তিটির উৎস:
এই লাইনটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত "আমার কৈফিয়ৎ" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
➡ পংক্তিটির ব্যাখ্যা:
এই চরণগুলির মাধ্যমে কবি সমাজের ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি ও সংকীর্ণ মানসিকতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
🔹 ‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে’ – সমাজের কিছু ধর্মান্ধ মানুষ যারা সর্বদা ধর্মের কথা বলে, দেব-দেবীর নাম নেয়, কিন্তু বাস্তবে তারা ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা অনুসরণ করে না।
🔹 ‘সবে দাও পাজিটার জাত মেরে’ – যদি কেউ তাদের কুসংস্কার বা ভণ্ডামির বিরোধিতা করে, তবে তাকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে চায়, তাকে নাস্তিক বা জাতিচ্যুত বলে অপবাদ দেয়।
🔹 এইসব ধর্মান্ধ মানুষ সত্য ধর্মের আলো দেখানোর পরিবর্তে মানুষকে বিভক্ত করার কাজে লিপ্ত থাকে।
➡ অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
✔️ কবি সমাজের সেই লোকদের তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন, যারা ধর্মের নামে অন্যদের উপর অন্যায় অত্যাচার চালায়।
✔️ তারা প্রকৃত ধর্মবোধ থেকে বিচ্যুত হয়ে শুধু গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও বিদ্বেষ ছড়ায়।
✔️ কবি বলতে চেয়েছেন, প্রকৃত ধর্ম সহিষ্ণুতা ও মানবিকতার শিক্ষা দেয়, কিন্তু এই স্বার্থান্বেষী লোকেরা তা ভুলে গিয়ে ধর্মকে অপব্যবহার করছে।
➡ সারমর্ম:
এই পংক্তিতে নজরুল ধর্মীয় কুসংস্কার ও সংকীর্ণ মানসিকতার বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহী অবস্থান প্রকাশ করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, যারা সত্যের কথা বলে, সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তাদেরই গোঁড়া সমাজ অপমানিত ও বঞ্চিত করতে চায়।
প্রশ্ন ১০। ‘‘গুরু ক’ন, ‘তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা! প্রতি শনিবারেই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন ‘তুমি হাঁড়ি চাঁচা”।” – এখানে গুরু কে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- ➡ ‘গুরু’ কে?
এই উদ্ধৃতিটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত "আমার কৈফিয়ৎ" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘গুরু’ বলতে বোঝানো হয়েছে কবির সমালোচক ও বিদ্বেষীরা।
➡ উক্তিটির ব্যাখ্যা:
🔹 ‘গুরু ক’ন, ‘তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা!’ –
সমাজের কিছু ধর্মগুরু বা রক্ষণশীল লোকেরা নজরুলকে সমালোচনা করে বলছেন যে, তিনি ধর্ম ও সমাজের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
- ‘তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা’ বলতে বোঝানো হয়েছে, তিনি সাহসের সঙ্গে সমাজের কুসংস্কার ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
- সমাজের গোঁড়ারা মনে করে, তিনি ধর্মের গোঁড়ামিকে ধ্বংস করছেন।
🔹 ‘প্রতি শনিবারেই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন ‘তুমি হাঁড়ি চাঁচা” –
- কবির প্রেয়সী বা ভালোবাসার মানুষ প্রতিনিয়ত তাকে চিঠিতে গালি দেন।
- ‘হাঁড়ি চাঁচা’ বলতে বোঝানো হয়েছে একজন অকর্মণ্য বা নিষ্কর্মা ব্যক্তি, যে কেবল খাওয়া ও ছোটখাটো কাজেই ব্যস্ত থাকে।
- কবির বিদ্রোহী রূপ তাঁর প্রেয়সীরও পছন্দ নয়, তাই তিনিও কবিকে অবজ্ঞা করেন।
➡ পংক্তিটির অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
✔️ কবি সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা, রক্ষণশীলতা এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন।
✔️ তাঁর এই বিদ্রোহী ভূমিকার জন্য সমাজের গোঁড়া ধর্মগুরুরা তাঁকে নিন্দা করে।
✔️ এমনকি তাঁর নিজের ভালোবাসার মানুষও তাঁকে বুঝতে পারেন না এবং তাঁকে উপহাস করেন।
➡ সারমর্ম:
এই উদ্ধৃতিতে কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের গোঁড়ামি, সংকীর্ণতা ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন। সমাজের রক্ষণশীলরা তাঁকে বিদ্রোহী মনে করে, আবার তাঁর কাছের মানুষরাও তাঁকে পুরোপুরি বোঝে না। তবুও, তিনি ন্যায়ের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
প্রশ্ন ১১। “কবি বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা পড়ে শ্বাস ফেলে।” – কার লেখা? কবি বন্ধুরা কেন শ্বাস ফেলে?
উত্তর:- কার লেখা?
এই লাইনটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত "আমার কৈফিয়ৎ" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
➡ কবি বন্ধুরা কেন শ্বাস ফেলে?
🔹 কবির বন্ধুরা, যারা মূলত সমকালীন সাহিত্যিক ও কবি, তাঁকে নিয়ে হতাশ বোধ করেন কারণ নজরুলের লেখা প্রচলিত কাব্যরীতির বাইরে বিদ্রোহী, প্রতিবাদী ও সমাজ পরিবর্তনের ডাক দেয়।
🔹 তাঁরা আশা করেন, কবি প্রথাগত প্রেম, প্রকৃতি বা রোমান্টিক বিষয় নিয়ে কবিতা লিখবেন, কিন্তু নজরুল বরং সমাজের অন্যায়-অবিচার, শোষণ, ধর্মান্ধতা ও শাসকের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন।
🔹 নজরুলের সাহসী ও তীক্ষ্ণ বক্তব্য তাঁদের চিন্তার সঙ্গে মেলে না, তাই তাঁরা হতাশ হয়ে শ্বাস ফেলেন।
➡ অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
✔️ নজরুলের বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী চেতনাকে তাঁর সমসাময়িক কবিরা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেননি।
✔️ তাঁর রচনাশৈলী ও ভাষা ছিল প্রচলিত ধারা থেকে আলাদা, যা অনেককে হতাশ করেছিল।
✔️ তবে নজরুল সমাজের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রেখেছিলেন।
➡ সারমর্ম:
নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় শোষিতের পক্ষে ও শোষকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, যা অনেক সমকালীন কবির কাছে ছিল নতুন ও অপ্রত্যাশিত। ফলে, তাঁরা তাঁর লেখা পড়ে হতাশ বোধ করতেন, কারণ এটি প্রচলিত কাব্যধারার বাইরে ছিল। তবুও, নজরুল নিজের আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি।
প্রশ্ন ১৩। “পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে, মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে!” – উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- উদ্ধৃতাংশের ব্যাখ্যা:
🔹 “পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি” –
এখানে কবি নিজেকে অমর ভাবেন এবং নিজের জীবন-মৃত্যুকে গুরুত্ব দেন না। তিনি জানেন, তাঁর ভাবনা, আদর্শ ও কাব্য চিরকাল বেঁচে থাকবে।
🔹 “যুগের হুজুগ কেটে গেলে” –
কবি বুঝাতে চাচ্ছেন যে, সমাজের সাময়িক উন্মাদনা বা প্রতিকূলতা একসময় দূর হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই তাঁর লেখা বুঝতে পারবেন এবং তাঁর আদর্শ গ্রহণ করবেন।
🔹 “মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি” –
এখানে ‘রবি’ বলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বোঝানো হয়েছে।
- নজরুল মনে করেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর মাথার ওপরে আলোর মতো পথপ্রদর্শক হয়ে আছেন।
- এটি রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধার প্রকাশও হতে পারে, আবার প্রকৃত সূর্যের প্রতীক হিসেবেও ধরা যেতে পারে।
🔹 “রয়েছে সোনার শত ছেলে” –
- ‘সোনার শত ছেলে’ বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিভাবান তরুণদের, যারা সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।
- তিনি মনে করেন, নতুন প্রজন্ম তাঁর বিদ্রোহী চেতনা ও আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
➡ উদ্ধৃতাংশের অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
✔️ কবি ব্যক্তিগত সাফল্য বা জীবন-মৃত্যুকে গুরুত্ব দেন না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চিন্তাধারা ও আন্দোলনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
✔️ সময়ের সাথে সাথে তাঁর লেখা ও চিন্তাধারা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।
✔️ রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রেরণা হিসেবে বিদ্যমান আছেন, এবং নতুন প্রজন্মের তরুণরাই ভবিষ্যতের আলো হয়ে উঠবে।
➡ সারমর্ম:
কাজী নজরুল ইসলাম এখানে নিজের বিপ্লবী চেতনার অমরত্বের কথা বলেছেন।
তিনি মনে করেন, সাময়িক প্রতিকূলতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
একদিন সমাজের মানুষ তাঁর কথা বুঝবে, এবং তরুণ প্রজন্ম তাঁর আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রশ্ন ১৪। “দুকানে চশমা আঁটিয়া ঘুমান। কার সম্পর্কে এরূপ বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে?
উত্তর:-
কার সম্পর্কে বলা হয়েছে?
🔹 এই উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের “আমার কৈফিয়ৎ” কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
🔹 এখানে সেসময়ের বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত অভিজাত সমাজের মানুষদের বোঝানো হয়েছে।
➡ কেন বলা হয়েছে?
🔹 কবি বিদ্রূপের সাথে বলেছেন যে, সমাজের অনেক শিক্ষিত, জ্ঞানী ও অভিজাত ব্যক্তিরা জ্ঞানচর্চার নামে চশমা পরে থাকেন, কিন্তু বাস্তব সমস্যার প্রতি উদাসীন।
🔹 তাঁরা বইপত্র পড়ে, জ্ঞানচর্চা করে, কিন্তু বাস্তব জীবনে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার বিষয়ে কোনো মাথা ঘামান না।
🔹 তাঁরা নিজেদের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা করেন, বাস্তব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন না।
➡ উদ্ধৃতাংশের অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
✔️ সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের উদাসীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে কবির তীব্র বিদ্রূপ।
✔️ তাঁদের মনের অন্ধত্ব ও নিষ্ক্রিয় চিন্তাধারার কারণে সাধারণ মানুষ শোষিত ও অবহেলিত হচ্ছে।
✔️ কবি মনে করেন, কেবল জ্ঞানচর্চা নয়, বরং বাস্তবে কাজ করাই গুরুত্বপূর্ণ।
➡ সারমর্ম:
কবি এখানে তৎকালীন শিক্ষিত সমাজের নিষ্ক্রিয়তা ও নির্লিপ্ততার সমালোচনা করেছেন।
তাঁরা শুধু বইপত্র পড়েন, জ্ঞানচর্চা করেন, কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজে আসেন না।
এই উক্তির মাধ্যমে নজরুল তাঁদের ভণ্ডামি ও নিস্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে বিদ্রূপ করেছেন।
প্রশ্ন ১৫। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো: ‘‘গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতিরাম ভাবে কনফুসি। স্বরাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের অঙ্কুশি।”
উত্তর:-
সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা:
➡ উদ্ধৃতাংশ:
🔹 পংক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের “আমার কৈফিয়ৎ” কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
🔹 এই লাইনগুলোর মাধ্যমে কবি তাঁর নিজের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করেছেন এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাঁকে কিভাবে ভুল ব্যাখ্যা করে, তা তুলে ধরেছেন।
➡ শব্দ ও অর্থ বিশ্লেষণ:
🔹 “গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি” –
- গোঁড়া বা রক্ষণশীল ধর্মভীরু মানুষেরা কবিকে নাস্তিক বলে মনে করে।
- কারণ, তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা করেছেন এবং মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
🔹 “পাতিরাম ভাবে কনফুসি” –
- পাতিরাম বলতে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বোঝানো হয়েছে, যারা কবিকে একজন চিন্তাবিদ বা দার্শনিক (কনফুসিয়াসের অনুসারী) বলে মনে করে।
- অর্থাৎ, তাঁরা ভাবেন যে কবি শুধু তাত্ত্বিকভাবে সমাজ নিয়ে ভাবেন, বাস্তব জীবনে তাঁর কোনো অবদান নেই।
🔹 “স্বরাজীরা ভাবে নারাজী” –
- যারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িত, সেই স্বরাজবাদীরা মনে করে যে কবি তাঁদের বিরোধিতা করছেন।
- কারণ, নজরুল তাঁদের মতো সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেননি, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন।
🔹 “নারাজীরা ভাবে তাহাদের অঙ্কুশি” –
- ‘নারাজী’ বলতে যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন, তাদের বোঝানো হয়েছে।
- তারা মনে করত, কবি তাঁদের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণের বাধা বা প্রতিবন্ধক (অঙ্কুশ) হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
➡ অন্তর্নিহিত বক্তব্য:
✔️ কবি কোনো নির্দিষ্ট দল বা মতবাদকে অনুসরণ করেন না, তাই বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে এবং ভুল বোঝে।
✔️ ধর্মীয় গোঁড়ারা তাঁকে নাস্তিক মনে করে, সাধারণ মানুষ তাঁকে দার্শনিক ভাবে, রাজনীতিকরা তাঁকে তাঁদের বিরোধী মনে করে, আর অন্যরা মনে করে তিনি বাধা সৃষ্টি করছেন।
✔️ এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি কোনো নির্দিষ্ট দলের নন—তিনি সত্যের অনুসারী এবং মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
➡ সারমর্ম:
এই লাইনগুলোর মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর সমালোচকদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করেছেন।
তিনি সমাজের এক নিরপেক্ষ চিন্তাবিদ ও মানবতাবাদী কবি, কিন্তু বিভিন্ন গোষ্ঠী তাঁকে ভুলভাবে বিচার করে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে।
তবে, কবি এসবের পরোয়া করেন না এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ করো। অথবা, ‘আমারা কৈফিয়ৎ’ কবিতার সারমর্ম লেখো।
উত্তর:-
‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ
➡ কবিতার পরিচিতি:
🔹 কবিতার নাম: আমার কৈফিয়ৎ
🔹 কবি: কাজী নজরুল ইসলাম
🔹 কাব্যগ্রন্থ: সঞ্চিতা
➡ কবিতার মূলভাব:
“আমার কৈফিয়ৎ” কবিতাটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের আত্মপক্ষসমর্থনমূলক এক সাহিত্যকর্ম, যেখানে তিনি তাঁর বিদ্রোহী চেতনাকে ব্যাখ্যা করেছেন।
এটি একপ্রকার প্রত্যুত্তর বা আত্মপক্ষ সমর্থন, যেখানে তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাঁকে যে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে, তার জবাব দিয়েছেন।
এই কবিতায় তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে তাঁকে নাস্তিক, বিপ্লবী, স্বরাজ বিরোধী, গোঁড়া, হুজুগের কবি ইত্যাদি নানা তকমা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তিনি কোনো নির্দিষ্ট মতাদর্শের অনুসারী নন, বরং তিনি সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে একজন নিরপেক্ষ কণ্ঠস্বর।
➡ কবিতার ভাববস্তু বা বিশ্লেষণ:
১. কবির আত্মপক্ষ সমর্থন
কবিতায় নজরুল বলেন যে, বিভিন্ন মানুষ তাঁকে ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখে এবং বিচার করে।
- গোঁড়ারা তাঁকে নাস্তিক ভাবে, কারণ তিনি ধর্মীয় কুসংস্কার ও গোঁড়ামির সমালোচনা করেন।
- মৌলবীরা তাঁকে ধর্মদ্রোহী ভাবে, কারণ তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার।
- রাজনৈতিক দলগুলো তাঁকে তাদের স্বার্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যা করে, কেউ ভাবে তিনি স্বরাজ বিরোধী, আবার কেউ ভাবে তিনি বিপ্লবী।
- শিক্ষিত সমাজ তাঁকে দার্শনিক ভাবে, কিন্তু তাঁর সাহিত্যকে তারা ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পারে না।
তবে কবি কোনো বিশেষ মতবাদের অনুসারী নন। তিনি সব অন্যায়ের বিরুদ্ধেই কথা বলেন এবং মানবতার পক্ষে দাঁড়ান।
২. সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর ভুল ধারণা
এই কবিতায় কবি বলেছেন যে, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তাঁকে ভুল বোঝে এবং নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী তাঁর ভাবনাকে ব্যাখ্যা করে।
তিনি সমাজের ভণ্ডামি, শোষণ, অন্যায়, বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর কলম চালিয়েছেন। কিন্তু তবুও তাঁকে নানা দোষারোপের শিকার হতে হয়েছে।
কবিতায় উঠে এসেছে—
✔ ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
✔ স্বাধীনতা সংগ্রামের নামে ভণ্ডামির বিরুদ্ধে কবির ক্ষোভ।
✔ শিক্ষিত সমাজের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতার সমালোচনা।
✔ ক্ষুধার্ত ও শোষিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কবির গভীর সহানুভূতি।
৩. বিদ্রোহী কবির ঘোষণা
কবি নিজেকে কোনো দলের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, বরং সত্যের পক্ষের একজন স্বতন্ত্র কণ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
তিনি বলেন—
✔ তিনি ভবিষ্যতের নবী নন, তিনি বর্তমানের কবি।
✔ তিনি কুসংস্কার ও শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর।
✔ তিনি সত্যকে নির্ভীকভাবে উচ্চারণ করতে চান, তাতে যত বাধাই আসুক না কেন।
কবি স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তিনি কারো কাছে মাথা নত করবেন না। সত্য উচ্চারণের জন্য যদি তাঁকে নিন্দিত হতে হয়, তবে তাতেও তিনি পিছপা হবেন না।
➡ সারমর্ম:
“আমার কৈফিয়ৎ” কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন।
তিনি সমাজের নানা অসঙ্গতি, ভণ্ডামি, শোষণ ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, কিন্তু বিভিন্ন গোষ্ঠী তাঁকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে।
তবে তিনি কোনো মতবাদ, দল বা গোষ্ঠীর অনুসারী নন—তিনি কেবল সত্য ও মানবতার কবি।
✔ তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তাঁর বিদ্রোহ অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে।
✔ তিনি সত্যের পথে চলেন, তাতে যদি তাঁকে অপবাদও সহ্য করতে হয়, তবুও তিনি দমে যাবেন না।
✔ এই কবিতা নজরুলের আত্মপক্ষসমর্থন, যেখানে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি কোনো দল বা মতবাদের কবি নন, তিনি মানবতার কবি।
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার নামকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- নামকরণের অর্থ ও বিশ্লেষণ:
‘কৈফিয়ৎ’ শব্দের অর্থ জবাবদিহি, ব্যাখ্যা বা আত্মপক্ষ সমর্থন।
এই কবিতায় কবি নিজেকে ঘিরে সমাজের নানা ভুল ধারণা ও অপবাদগুলোর জবাব দিয়েছেন।
তাই কবিতার নাম ‘আমার কৈফিয়ৎ’ যথার্থ ও অর্থবহ।
✔ কবি কেন বিদ্রোহ করেন?
✔ কেন তাঁর কাব্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রোষ প্রকাশ পায়?
✔ কেন সমাজের কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, স্বার্থপর রাজনীতি ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন?
এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব তিনি এই কবিতার মাধ্যমে দিয়েছেন, তাই নামটি একেবারেই যথাযথ।
➡ নামকরণের তাৎপর্য:
১. আত্মপক্ষ সমর্থন ও জবাবদিহি
কবি এখানে ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি বিদ্রোহী স্বর তুলেছেন।
তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী তাঁকে ভুল ব্যাখ্যা করেছে এবং নিজেদের সুবিধামতো তাঁর ভাবনাকে বদলেছে।
✔ ধর্মীয় গোঁড়ারা তাঁকে নাস্তিক বলেন
✔ রাজনীতিবিদরা তাঁকে বিপ্লবী বা স্বরাজ-বিরোধী মনে করেন
✔ শিক্ষিত সমাজ তাঁকে অপযুক্তিবাদী ভাবে
কিন্তু কবি জানিয়ে দেন, তিনি মানবতার পক্ষে, সত্যের পক্ষে, শোষিতের পক্ষে। তাই তিনি এই কবিতায় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন, যা তাঁর ‘কৈফিয়ৎ’ বা জবাবদিহি।
২. বিদ্রোহী কবির প্রতিবাদ
কবি সমাজের অত্যাচার, শোষণ, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন।
তবে এই প্রতিবাদের কারণে তিনি নিন্দিত হয়েছেন, তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
এজন্য কবি এই কবিতার মাধ্যমে জবাব দিয়েছেন যে, তিনি কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য কবিতা লেখেন না, তিনি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকেন।
৩. কবির দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা
কবিতার নাম ‘আমার কৈফিয়ৎ’ হওয়ার কারণ হলো, এতে কবি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছেন।
✔ তিনি কাউকে খুশি করতে কবিতা লেখেন না।
✔ তিনি শোষিত, নির্যাতিত, দরিদ্র মানুষের কষ্ট ও বঞ্চনার কথা বলেন।
✔ তিনি ভণ্ডামির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।
তাই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিতে এই কবিতার নাম ‘আমার কৈফিয়ৎ’ একেবারেই যথাযথ।
➡ উপসংহার:
‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতার নাম একটি আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক শিরোনাম।
এই কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি বিদ্রোহী, কেন তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন, এবং কেন তাঁকে ভুল বোঝা হয়।
তিনি জানিয়ে দেন—তিনি সত্যের পথের যাত্রী, শোষিতের কণ্ঠস্বর।
তাই ‘আমার কৈফিয়ৎ’ নামটি কবিতার ভাবনার সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ ও যথার্থ।
প্রশ্ন ২। “আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় নজরুল ইসলাম তাঁর রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে যে কৈফিয়ৎ দিয়েছিলেন, তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:- “আমার কৈফিয়ৎ” কবিতায় নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কিত কৈফিয়ৎ বিশ্লেষণ
➡ কবিতার পরিচিতি:
🔹 কবিতার নাম: আমার কৈফিয়ৎ
🔹 কবি: কাজী নজরুল ইসলাম
🔹 কাব্যগ্রন্থ: সঞ্চিতা
➡ নজরুলের রাজনৈতিক জীবন ও তাঁর কৈফিয়ৎ
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের কবি।
তিনি সাম্য, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে ছিলেন।
তাঁর লেখনীতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বরাজ দাবি এবং গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান ছিল।
কিন্তু তাঁর এই রাজনৈতিক চিন্তাধারা নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
কেউ তাঁকে বিপ্লবী বলেন, কেউ স্বরাজবিরোধী বলেন, আবার কেউ বলেন, তিনি কোনো নির্দিষ্ট দলের নন।
এই বিভ্রান্তির জবাব দিতেই নজরুল ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
➡ ১. বিদ্রোহী কবির রাজনৈতিক অবস্থান
✔ কবি নিজেকে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অনুসারী বলে মানেন না।
✔ তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, শোষিতের পক্ষে থাকেন।
✔ তিনি স্বরাজবাদী বা বিপ্লবীদের দলে পড়েন না, আবার ব্রিটিশপন্থীও নন।
🔹 কবিতার লাইন:
👉 “স্বরাজিরা ভাবে নারাজি, নারাজিরা ভাবে তাহাদের অঙ্কুশি।”
📌 ব্যাখ্যা:
স্বরাজিরা (স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীরা) মনে করে নজরুল তাঁদের বিরোধী।
আবার, যারা স্বাধীনতা চায় না (নারাজিরা), তারা মনে করে নজরুল বিপ্লবীদের দলে।
অর্থাৎ, কবিকে কেউ সঠিকভাবে বুঝতে পারে না।
➡ ২. রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি কটাক্ষ
✔ নজরুল সমাজের রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থপরতা ও দ্বিচারিতা তুলে ধরেছেন।
✔ তিনি দেখিয়েছেন, কিভাবে রাজনৈতিক নেতারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে।
✔ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থের জন্য সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে।
🔹 কবিতার লাইন:
👉 “মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘মোল্লারা’ ক’ন হাত নেড়ে, দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে।”
📌 ব্যাখ্যা:
✔ কবি দেখিয়েছেন, কিভাবে ধর্মগুরু ও রাজনৈতিক নেতারা মানুষকে ভুল পথে চালিত করে।
✔ ধর্মের নামে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়, স্বার্থপর নেতারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়।
✔ কবি এই ভণ্ডামির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।
➡ ৩. দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি নজরুলের সহানুভূতি
✔ নজরুল ক্ষমতার লোভী নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
✔ তিনি বলেছেন, ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষ পিষ্ট হয়।
✔ তিনি দেখিয়েছেন, ক্ষুধার্ত মানুষ রাজনীতি বোঝে না, তারা শুধু বেঁচে থাকার জন্য খাবার চায়।
🔹 কবিতার লাইন:
👉 “ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত একটু নুন।”
📌 ব্যাখ্যা:
✔ কবি বলতে চেয়েছেন, রাজনীতি বড় কথা নয়, আগে মানুষের ক্ষুধা মেটানো দরকার।
✔ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম – সবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য আগে খাদ্য দরকার।
✔ এই লাইন থেকে বোঝা যায় যে, নজরুল নিছক রাজনীতিক নন, তিনি একজন মানবতাবাদী কবি।
➡ ৪. রাজনৈতিক আন্দোলন ও কবির অবদান
✔ নজরুল কেবল কবিতা লিখে প্রতিবাদ করেননি, তিনি নিজের জীবনেও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
✔ তাঁর ‘বিদ্রোহী’, ‘ভাঙার গান’, ‘চল্ চল্ চল্’ প্রভৃতি কবিতা বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করেছিল।
✔ তাঁর পত্রিকা ‘ধূমকেতু’ ব্রিটিশ সরকারের রোষের শিকার হয়েছিল।
✔ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কারাবন্দি করেছিল।
🔹 কবিতার লাইন:
👉 “ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও।”
📌 ব্যাখ্যা:
✔ নজরুল দেখিয়েছেন, কিভাবে ব্রিটিশ সরকার, সাম্প্রদায়িক নেতারা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ তাঁকে বিদ্রোহী ও কাফের বলে আক্রমণ করেছিল।
✔ কিন্তু তিনি কোনো অপবাদকে ভয় পাননি।
➡ উপসংহার:
‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় নজরুল ইসলাম তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি দেখিয়েছেন—
✔ তিনি কোনো নির্দিষ্ট দলের অনুসারী নন।
✔ তিনি সত্যের পথে চলেন, শোষিতের পক্ষে থাকেন।
✔ তিনি রাজনৈতিক ভণ্ডামি ও শোষণের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন।
✔ তিনি বিপ্লবী, কিন্তু নিছক হুজুগের রাজনীতিবিদ নন।
✔ তিনি ক্ষুধার্ত মানুষের মৌলিক অধিকারের পক্ষে।
তাই এই কবিতা তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের একটি জবাবদিহি বা কৈফিয়ৎ হিসেবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রশ্ন ৩। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় সাধারণ দরিদ্র মানুষের প্রতি কবির যে সহানুভূতি ও দরদের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:-
‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় সাধারণ দরিদ্র মানুষের প্রতি কবির সহানুভূতি ও দরদের বিশ্লেষণ
➡ ভূমিকা:
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের কবি।
তাঁর কবিতা ও লেখনীতে দরিদ্র, অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও দরদ প্রকাশ পেয়েছে।
‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় কবি শোষিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও তাদের প্রতি সমাজের উদাসীনতা তুলে ধরেছেন।
➡ ১. দরিদ্র মানুষের প্রতি সমাজের অবহেলা
✔ সমাজের উচ্চবিত্ত ও ক্ষমতাবানরা দরিদ্রদের কষ্ট বোঝে না।
✔ রাজনীতিবিদরা স্বাধীনতা, স্বরাজের কথা বলে, কিন্তু সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদার কথা ভাবে না।
✔ কবি দেখিয়েছেন, শোষিত মানুষের জীবনে শুধুই অভাব, দারিদ্র্য ও কষ্ট।
🔹 কবিতার লাইন:
👉 “ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত একটু নুন।”
📌 ব্যাখ্যা:
✔ দরিদ্র মানুষ রাজনীতি বোঝে না, তারা শুধু খাদ্যের জন্য সংগ্রাম করে।
✔ স্বরাজ, স্বাধীনতা, বিপ্লব – এসব বড় বিষয় হলেও ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য আগে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
✔ কবি মানবিকতা ও দরিদ্রদের অধিকারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
➡ ২. দরিদ্র মানুষের প্রতি শাসক ও সমাজের নির্মমতা
✔ শাসকগোষ্ঠী ও সমাজের প্রভাবশালীরা শোষণ ও দমন চালিয়ে যায়।
✔ দরিদ্র মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও অত্যাচারিত হচ্ছে।
✔ এই শোষণের বিরুদ্ধে কবি প্রতিবাদ করেছেন এবং শাসকদের সর্বনাশ কামনা করেছেন।
🔹 কবিতার লাইন:
👉 “প্রার্থনা ক’রো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের গ্রাস, যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!”
📌 ব্যাখ্যা:
✔ সমাজের ক্ষমতাশালী শ্রেণি গরিব মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।
✔ কবি চান, এই শোষকদের পরাজয় হোক, তাদের সর্বনাশ ঘটুক।
✔ এই লাইন থেকে কবির দরিদ্র ও শোষিত মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ পায়।
➡ ৩. দরিদ্র মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা
✔ কবি দরিদ্রদের অবহেলিত, নিপীড়িত ও শোষিত অবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
✔ তিনি দেখিয়েছেন, ধনী ও ক্ষমতাবানরা গরিবদের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত নয়।
✔ সমাজের অনেক মানুষ শুধু রাজনীতির বড় বড় কথা বলে, কিন্তু দরিদ্রদের সমস্যার সমাধান করে না।
🔹 কবিতার লাইন:
👉 “মৌ-লোভী যত মৌলবী আর মোল্লারা ক’ন হাত নেড়ে, দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে।”
📌 ব্যাখ্যা:
✔ কবি দেখিয়েছেন, কিভাবে ধর্মগুরু ও রাজনীতিবিদরা দরিদ্র মানুষের দুরবস্থাকে কাজে লাগায়।
✔ তারা ধর্মের নামে, জাতপাতের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, কিন্তু দরিদ্রদের জন্য কিছুই করে না।
➡ ৪. কবির প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ
✔ কবি দরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে বিক্ষুব্ধ ও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন।
✔ তিনি মনে করেন, শুধু বক্তৃতা, আদর্শের কথা বলে দরিদ্রদের উপকার করা যাবে না, বরং বাস্তবসম্মত সমাধান দরকার।
✔ তিনি শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ডাক দিয়েছেন।
🔹 কবিতার লাইন:
👉 “গুরু ক’ন, ‘তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁচা!”
📌 ব্যাখ্যা:
✔ কবি দেখিয়েছেন, নেতারা শুধু কথা বলে, কিন্তু তিনি বাস্তবে বিপ্লবের আহ্বান জানিয়েছেন।
✔ তিনি শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান।
➡ উপসংহার:
✔ ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম দরিদ্র মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
✔ তিনি শোষকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
✔ কবি মনে করেন, রাজনীতি, ধর্ম, আদর্শ বড় কথা নয় – প্রথমে দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানো দরকার।
✔ তাঁর কণ্ঠস্বর শোষিতদের আশার আলো ও শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আগুন।
এই কারণে ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতা সামাজিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।