Chapter 5 - 

 মেরুর ডাক

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘মেরুর ডাক’ কবিতাটির রচয়িতা কে?

উত্তর:- প্রমথনাথ বিশী।

পশ্ন ২। “দিগন্তেরি ধারটুকুতে নিতেজ রবি যায় দেখা,”- অংশটি কোন্ কবিতার অংশ?

উত্তর:- এটি ‘মেরুর ডাক’ কবিতার অংশ।

প্রশ্ন ৩। শূন্যস্থান পূর্ণ করো: “______ বিশাল দাঁতে তুষার মাটি খায় খুঁড়ে ______পঙ্গুদলে বিজ্ঞভাবে রয় চেয়ে।”

উত্তর:- “সিন্ধুঘোটক বিশাল দাঁতে তুষার মাটি খায় খুঁড়ে

পেঙ্গুইনের পঙ্গুদলে বিজ্ঞভাবে রয় চেয়ে।”

প্রশ্ন ৪। ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় কবির জীবিকা কী?

উত্তর:- কবি অভিযাত্রী বা গবেষক। তিনি উত্তর মেরু অভিযান করতে চান।

প্রশ্ন ৫। প্রমথনাথ বিশীর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর:- : তাঁর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রকৃতির মহিমা, অভিযানপ্রিয়তা, কল্পনার বিশালতা ও সৌন্দর্যচেতনা

প্রশ্ন ৬। বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে প্রমথনাথ কী নামে পরিচিত?

উত্তর:- তিনি ‘আধুনিক বাংলা সমালোচনা সাহিত্যের পথিকৃৎ’ নামে পরিচিত।

প্রশ্ন ৭। ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় কবি প্রমথনাথ কোন মেরুর ডাক শুনেছেন?

উত্তর:- কবি উত্তর মেরুর ডাক শুনেছেন।

প্রশ্ন ৮! ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় কবি কীভাবে নৌকার পাল তুলতে চেয়েছেন?

উত্তর:- কবি ঝড়ের বাতাসে পাল তুলতে চান, যাতে তাঁর তরী উত্তরের দিকে ছুটে যায়

প্রশ্ন ৯। জাহাজগুলি কবিকে কোথায় ডাকছে?

উত্তর:- উত্তর মেরুর তুষারময় অঞ্চলে অভিযান করতে ডাকছে।

প্রশ্ন ১০। কবির শরীরে কোথায় জলের ঝাপট লাগছে?

উত্তর:কবির বক্ষদেশে (বুকের অংশে)।

প্রশ্ন ১১। পবন কবিকে কীভাবে হাঁক দেয়?

উত্তর:- পবন শক্তিশালী ঝড়ো হাওয়ার মতো কবিকে ডাক দেয়

প্রশ্ন ১২। মাণ্ডুল কী?

উত্তর:- মাণ্ডুল হলো একটি সামুদ্রিক মাছ।

প্রশ্ন ১৩। কবির প্রাণ কেন কাঁদছে?

উত্তর:- অভিযানপ্রিয়তার জন্য, কবির মন উত্তরের মেরুর পথে যেতে চায়, তাই তাঁর প্রাণ কাঁদছে।

প্রশ্ন ১৪। ‘‘আবার মোরে ডাক দিয়েছে তুষার-মেরু উত্তরে;”- এখানে ‘তুষার মেরু’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর:- উত্তর মেরুর বরফাবৃত, বিপদসংকুল অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন ১৫। “সিন্ধুঘোটক বিশাল দাঁতে তুষার মাটি খায় খুঁড়ে” – সিন্ধুঘোটক কী?

উত্তর:- সিন্ধুঘোটক হলো সাগরে বসবাসকারী বিশাল আকৃতির স্তন্যপায়ী প্রাণী (Walrus)।

প্রশ্ন ১৬। “ছাদের বাধা আল্গা হ’ল ডাকছে তাঁবু _____। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তর:- ছাদের বাধা আল্গা হ’ল ডাকছে তাঁবু মেলি গো।”

প্রশ্ন ১৭। “পেঙ্গুইনের পঙ্গুদলে বিজ্ঞ ভাবে রয় চেয়ে,” – পেঙ্গুইন কী?

উত্তর:- পেঙ্গুইন হলো ঠাণ্ডা অঞ্চলে বসবাসকারী এক প্রকার সামুদ্রিক পাখি, যারা উড়তে পারে না।

প্রশ্ন ১৮। “তরীর কাছি তীরের কাছে চাচ্ছে এবার মুক্তি গো।” – কাছি শব্দের অর্থ কী?

উত্তর:- কাছি মানে মোটা দড়ি বা রশি, যা নৌকা বাঁধার জন্য ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন ১৯। “স্থির চপলা মেরুপ্রভা জ্বালায় রঙের ফুলঝুরি”- ‘চপলা’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর:- চপলা’ শব্দের অর্থ হল ‘অস্থির’ বা ‘চঞ্চল’।

প্রশ্ন ২০। কবির কী ভালো লাগছে না?

উত্তর:- কবির ভালো লাগছে না ঘরে বসে থাকা, তিনি অভিযানে যেতে চান।

প্রশ্ন ২১। মেরুতে সূর্য কেমন দেখায়?

উত্তর:- মেরুতে সূর্য কখনো দিগন্তের কাছে ছোট হয়ে দেখা যায়, কখনো দীর্ঘ সময় অস্ত যায় না।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

 প্রশ্ন ১। “ফুরিয়ে এলো খাবার পুঁজি ছিন্ন আমার বস্ত্র গো, মৃত্যু বুঝি মুচকে হাসে- না হয় মরণ তাই হবে।” – উদ্ধৃতিটি কোন্ কবিতার অংশ? কী দেখে কবির মনে হয়েছে মৃত্যু আসন্ন? অথবা, কবিতাংশটির লেখক কে? মৃত্যু ‘মুচকে’ হাসে কেন?

উত্তর: উদ্ধৃতিটি ‘মেরুর ডাক’ কবিতার অংশ।

কবি দেখেন যে তাঁর খাবারের পুঁজি ফুরিয়ে এসেছে এবং তাঁর পোশাক ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি অনুভব করেন যে মৃত্যু আসন্ন, এবং মৃত্যুকে কল্পনা করেন যেন তা তাঁকে ব্যঙ্গ করে মুচকি হাসছে

অথবা,

কবিতাংশটির লেখক: প্রমথনাথ বিশী।

মৃত্যু ‘মুচকে’ হাসে কেন?
কবি অনুভব করেন যে তাঁর জীবন সংকটাপন্ন। খাদ্যের অভাব, প্রচণ্ড ঠান্ডা এবং কঠিন পরিস্থিতির কারণে মৃত্যু যেন তাঁকে ব্যঙ্গ করে মুচকি হাসছে

প্রশ্ন ২। ‘‘তরীর কাছি তীরের কাছে চাচ্ছে এবার মুক্তি গো।’’ – ‘কাছি’ শব্দের অর্থ কী? ‘কাছি’ কেন তরীর কাছে মুক্তি কামনা করছে?

উত্তর: কাছি’ শব্দের অর্থ: নৌকার দড়ি বা রশি।

‘কাছি’ কেন তরীর কাছে মুক্তি কামনা করছে?
নৌকার দড়ি (কাছি) যখন তীরে বাঁধা থাকে, তখন নৌকাটি স্থির থাকে এবং চলতে পারে না। এখানে ‘কাছি’র মুক্তি কামনা বলতে বোঝানো হয়েছে যে নৌকার দড়ি খুলে দিলে নৌকাটি মুক্ত হয়ে যাত্রা শুরু করতে পারবে। কবিতার এই অংশে নৌকাটিকে যেন একপ্রকার বন্ধনমুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩। ‘‘আবার মোরে ডাক দিয়েছে তুষার-মেরু উত্তরে সে রব শুনে বিপদ গুণে কেমন ক’রে রই ঘরে !” – কবিতাটির নাম উল্লেখ করো। তুষার মেরু বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: কবিতার নাম: মেরুর ডাক

‘তুষার মেরু’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
‘তুষার মেরু’ বলতে কবি উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলকে বোঝাতে চেয়েছেন। এটি শুধুমাত্র ভৌগোলিক মেরুকে নির্দেশ করে না, বরং এটি প্রতীকী অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে অজানার প্রতি আকর্ষণ, নতুন অভিযানের আহ্বান এবং দুঃসাহসিক অভিযাত্রার চেতনাকে প্রকাশ করা হয়েছে। কবির মনে অজানাকে জানার এবং বিপদসঙ্কুল অভিযানে যাওয়ার এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা কাজ করছে, যা ‘তুষার মেরু’র ডাকের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৪। মেরু অঞ্চলে পাওয়া যায় এমন দুটি প্রাণীর নাম লেখো।

উত্তর: মেরু অঞ্চলে পাওয়া যায় এমন দুটি প্রাণীর নাম হলো:
  1. সিন্ধুঘোটক (Walrus)
  2. পেঙ্গুইন (Penguin)

প্রশ্ন ৫। ‘আবার মোরে ডাক দিয়েছে তুষার-মেরু উত্তরে।’ – কে, কাকে ডাক দিয়েছে?

উত্তর: ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় তুষার-মেরু কবিকে ডাক দিয়েছে। কবি এখানে প্রতীকীভাবে উত্তর মেরুর কঠিন পরিবেশ, অভিযানের আহ্বান এবং অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষাকে বোঝাতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন ৬। ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় ‘বরফ’ শব্দটির কয়টি এবং কী কী সমার্থক শব্দ উল্লিখিত হয়েছে?

উত্তর: ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় বরফ শব্দটির একাধিক সমার্থক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণত, কবিতাটিতে তুষার, হিম, শীত, স্নিগ্ধ, শুভ্র প্রভৃতি শব্দ বরফের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রশ্ন ৭। ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় বর্ণিত মেরুর জয় গাথা ব্যর্থ হবার কারণ কী?

উত্তর: ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় মেরুর জয়গাথা ব্যর্থ হবার প্রধান কারণ হলো প্রচণ্ড প্রতিকূল আবহাওয়া, চরম ঠান্ডা, খাদ্য ও বস্ত্রের অভাব, এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা। কবি উল্লেখ করেছেন যে, অভিযাত্রীরা খাবারের অভাবে, তীব্র শীতে, এবং বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির কারণে মেরু অভিযান সম্পূর্ণ করতে পারেনি, ফলে তাদের জয়গাথা ব্যর্থ হয়েছে।

প্রশ্ন ৮। ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় মেরু প্রভা সম্পর্কে কবি কী বলেছেন?

উত্তর: ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় কবি মেরুপ্রভার সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন,

“স্থির চপলা মেরুপ্রভা জ্বালায় রঙের ফুলঝুরি।”

এখানে ‘মেরুপ্রভা’ বলতে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর আকাশে দেখা দেওয়া মনোরম আলোকচ্ছটা বা অরোরা বোঝানো হয়েছে। কবি একে চপল ও স্থির বলে উল্লেখ করেছেন, যা তার রহস্যময় এবং মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যের পরিচয় দেয়। এটি আকাশে রঙ-বেরঙের আলোর ঝলকানি সৃষ্টি করে, যা ফুলঝুরির মতো মনে হয়।

প্রশ্ন ৯। “রুদ্র নিদাঘ জ্বালায় যেথা তপের আগুন মন্তরে।”

– উক্তিটির অর্থ পরিস্ফুট করো।

উত্তর:  উক্তিটির অর্থ হলো:

"যেখানে প্রচণ্ড গরম (রুদ্র নিদাঘ) তপস্যার আগুনের মতো প্রখরভাবে জ্বলছে।"

এখানে "রুদ্র নিদাঘ" বলতে ভয়ঙ্কর রোদ্র তাপ বা চরম গ্রীষ্মের তাপ বোঝানো হয়েছে। "তপের আগুন মন্তরে" বলতে সেই তাপকে এমন এক তীব্র জ্বালা হিসাবে দেখানো হয়েছে, যা যেন কোনো সাধকের তপস্যার আগুনের মতো সর্বগ্রাসী ও শক্তিশালী।

এই লাইন দ্বারা কবি প্রকৃতির কঠোর ও ভয়ংকর রূপের চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে প্রচণ্ড উত্তাপে চারপাশ ঝলসে উঠছে।


দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। ‘‘তাই বলে কি রইব পড়ে বিষুবরেখার অন্তরে,

রুদ্র নিদাঘ জ্বালায় যেথা তপের আগুন মন্তরে?

ব্যর্থ হবে মেরুর সে গান ব্যর্থ হবে জয়গাথা

মৃত্যু যেথা হাজার রূপে জমাট জলে সন্তরে !”

– অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: 

এই উদ্ধৃতির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে হলে প্রথমে এর মূল ভাব ও প্রতীকী অর্থ বোঝা দরকার।

কবিতার মূল ভাব:
উক্ত লাইনটি প্রমথনাথ বিশী রচিত "মেরুর ডাক" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি মেরু অভিযানের এক চিত্র তুলে ধরেছেন। কবির মনে এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা জাগে নতুন অন্বেষণে বেরিয়ে পড়ার, মেরুর শ্বেতশুভ্র বরফের দেশে গিয়ে বিজয় লাভ করার। কিন্তু এই পথ সহজ নয়—এখানে মৃত্যুর ছায়া সবসময় ঘনিয়ে থাকে।

লাইনগুলোর ব্যাখ্যা:
‘‘তাই বলে কি রইব পড়ে বিষুবরেখার অন্তরে,’’

বিষুবরেখা (Equator) হলো পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চল, যেখানে গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়া বিরাজ করে।
এখানে কবি প্রশ্ন করছেন—আমি কি শুধু এই গ্রীষ্ণমণ্ডলেই পড়ে থাকব? আমি কি সাহস করে নতুন দিগন্তের সন্ধানে যাব না?
‘‘রুদ্র নিদাঘ জ্বালায় যেথা তপের আগুন মন্তরে?’’

‘রুদ্র নিদাঘ’ মানে প্রচণ্ড সূর্যের তাপ, যা অগ্নির মতো প্রখর।
কবি বলতে চাইছেন, যেখানে প্রচণ্ড তাপদাহ আছে, সেখানে বসে থাকব না; বরং শীতল, বিপদসঙ্কুল মেরুর দিকে যাব।
‘‘ব্যর্থ হবে মেরুর সে গান ব্যর্থ হবে জয়গাথা’’

মেরু অভিযান এবং তার অন্বেষণ যেন এক বিজয়ের গান বা জয়গাথা।
যদি আমরা চেষ্টাই না করি, তাহলে সেই বিজয়ের গান (মেরুর ডাক) বিফল হয়ে যাবে।
‘‘মৃত্যু যেথা হাজার রূপে জমাট জলে সন্তরে !’’

এখানে কবি মেরুর কঠিন ও প্রাণঘাতী পরিবেশের কথা বলেছেন।
‘হাজার রূপে মৃত্যু’ বলতে তিনি বরফাচ্ছন্ন কঠিন পথ, প্রবল ঠান্ডা, খাদ্যের অভাব, বরফগলা জলে ডুবে যাওয়া ইত্যাদিকে বোঝাচ্ছেন।

অন্তর্নিহিত তাৎপর্য:
এই লাইনগুলোর মাধ্যমে কবি এক সাহসী অভিযাত্রীর মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
শুধু উষ্ণ, আরামদায়ক পরিবেশে বসে থাকলে মানুষের জীবন সার্থক হয় না। নতুন কিছু অর্জন করতে হলে ঝুঁকি নিতে হয়, দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়।
মেরু অভিযান এক প্রতীক, যা মানবজীবনের বৃহত্তর সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরে।
মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলেও, সেই ডাক উপেক্ষা করা যায় না—এটাই মানবজাতির চিরন্তন অভিযাত্রা।

উপসংহার:
কবিতার এই অংশটি কেবল মেরু অভিযানের গল্প নয়; এটি মানুষের স্বপ্ন, সাধনা ও সংগ্রামের প্রতিচিত্র। কবি বলতে চান, যদি আমরা শুধু নিরাপদ অঞ্চলে বসে থাকি, তাহলে কোনো নতুন দিগন্ত খুলবে না। ঝুঁকি নিয়ে, মৃত্যু উপেক্ষা করেই মানুষকে অগ্রসর হতে হয়—তবেই সে সফল হতে পারে।


প্রশ্ন ২। ‘‘ছাদের বাঁধা আল্গা হ’ল ডাকছে তাঁবু ইঙ্গিতে”

– ‘ছাদের বাঁধা আলগা’ হবার মানে কী? তাঁবু বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ১. ‘ছাদের বাঁধা আলগা’ হবার মানে:

এখানে ‘ছাদের বাঁধা’ বলতে তাঁবুর উপর যে কাপড় বা ঢাকনা টানা থাকে, তা বোঝানো হয়েছে।
‘আলগা হ’লো’ মানে সেটি ঢিলে হয়ে গেছে বা খুলে যেতে শুরু করেছে।
এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে প্রবল বাতাস বা প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তাঁবুর বাঁধন শিথিল হয়ে পড়ছে, যা যাত্রার জন্য প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

২. তাঁবু বলতে কী বোঝায়?

‘তাঁবু’ বলতে এখানে অভিযাত্রীদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র বা ক্যাম্প বোঝানো হয়েছে।
এটি প্রতীকী অর্থেও ব্যবহার করা হতে পারে, যা নতুন অভিযানের আহ্বান বা যাত্রার প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।
কবি বোঝাতে চাইছেন, যেন প্রকৃতির এক অদৃশ্য ডাক আসছে, যা অভিযাত্রীকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করছে।

সারসংক্ষেপ:
এই লাইনটির মাধ্যমে কবি প্রকৃতির শক্তিকে চিত্রিত করেছেন, যা অভিযাত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছে। প্রবল বাতাস তাঁবুর বাঁধন আলগা করে দিচ্ছে, যা যেন মেরুর পথে নতুন যাত্রার ইঙ্গিত বহন করছে।


প্রশ্ন ৩। ‘তরীর কাছি তীরের কাছে চাচ্ছে এবার মুক্তিগো,

প্রলয় শ্বাসে পাল ফেলেরে উঠছে তরীর হাল মেতে।’

– ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:  ব্যাখ্যা:

উল্লিখিত পঙ্‌ক্তিগুলি প্রমথনাথ বিশী রচিত ‘মেরুর ডাক’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি অভিযাত্রীদের সংগ্রাম এবং প্রকৃতির শক্তির সামনে মানুষের অসহায়তার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।

১. ‘তরীর কাছি তীরের কাছে চাচ্ছে এবার মুক্তিগো’ – এর ব্যাখ্যা:
‘তরী’ বলতে এখানে নৌকা বা জাহাজ বোঝানো হয়েছে, যা অভিযাত্রীদের যাত্রার বাহন।
‘কাছি’ বলতে নৌকাকে তীরের সাথে বাঁধা দড়ি বোঝানো হয়েছে।
এই বাক্যে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, দীর্ঘ দুঃসাহসিক অভিযানের পর নৌকাটি এখন তীরে এসে পৌঁছেছে এবং সেটির দড়িটি মুক্তি চাচ্ছে—অর্থাৎ, নোঙর তোলা বা বাঁধন খোলার সময় এসেছে।
এটি প্রতীকী অর্থেও ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে অভিযাত্রীদের মনও যেন স্থির জমি পাওয়ার জন্য মুক্তি কামনা করছে।

২. ‘প্রলয় শ্বাসে পাল ফেলেরে উঠছে তরীর হাল মেতে’ – এর ব্যাখ্যা:
‘প্রলয় শ্বাস’ বলতে প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস বা প্রকৃতির রুদ্ররূপ বোঝানো হয়েছে, যা প্রবল শক্তিতে বইছে।
‘পাল ফেলে’ বলতে নৌকার পাল নামিয়ে দেওয়া বোঝানো হয়েছে, কারণ বাতাস এত শক্তিশালী যে পাল খোলা রাখলে নৌকাটি উল্টে যেতে পারে।

‘তরীর হাল মেতে’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে নৌকাটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দুলছে বা টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে।
এই পঙ্‌ক্তির মাধ্যমে কবি প্রকৃতির শক্তিকে তুলে ধরেছেন, যেখানে প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে অভিযাত্রীদের নৌকা বিপদের সম্মুখীন হয়েছে।

সারসংক্ষেপ:
এই অংশে কবি অভিযাত্রীদের সংগ্রাম এবং প্রকৃতির প্রতিকূলতার চিত্র অঙ্কন করেছেন। নৌকা যখন তীরে এসে পৌঁছেছে, তখনও তা মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে। কিন্তু প্রকৃতি এতটাই উগ্র যে, নৌকাটিকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি মানুষের দুঃসাহসিক অভিযানের এক কঠিন বাস্তবতার প্রতিচিত্র।


প্রশ্ন ৪। ‘‘দিগন্তেরি ধারটুকুতে নিতেজ রবি যায় দেখা,

হাজার তারার দ্বিগুণ আলো তুষার মেঝেয় হয় লেখা।”

– উদ্ধৃতিটি কোন কবিতার অন্তর্গত ? উদ্ধৃতাংশটির সরলার্থ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:

ক. উদ্ধৃতিটির উৎস:
উল্লিখিত পঙ্‌ক্তিগুলি প্রমথনাথ বিশী রচিত "মেরুর ডাক" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

খ. উদ্ধৃতাংশের সরলার্থ ও বিশ্লেষণ:
এই অংশে কবি মেরুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং রহস্যময় পরিবেশের চিত্র অঙ্কন করেছেন।

"দিগন্তেরি ধারটুকুতে নিতেজ রবি যায় দেখা"

এখানে "দিগন্তেরি ধার" বলতে দিগন্তরেখা বোঝানো হয়েছে, যেখানে আকাশ ও বরফাচ্ছাদিত ভূমির সংযোগ দেখা যায়।

"নিতেজ রবি" বলতে নরম ও কম উজ্জ্বল সূর্য বোঝানো হয়েছে, কারণ মেরু অঞ্চলে সূর্য তেমন তেজস্বী নয়; বরং ম্লান আলো দেয়।
এই লাইন বোঝায় যে, মেরু অঞ্চলে সূর্য এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে, যেখানে তার আলো দিগন্তের সীমায় মৃদু আভা ছড়ায়।

"হাজার তারার দ্বিগুণ আলো তুষার মেঝেয় হয় লেখা"

এই লাইনে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, মেরু অঞ্চলের তুষারের উপর সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে এক অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি করে।
"হাজার তারার দ্বিগুণ আলো" বলতে বোঝানো হয়েছে যে মেরুর সাদা বরফের ওপরে পড়া সূর্যের আলো রাতের আকাশের তারার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল মনে হয়।
এখানে বরফের উজ্জ্বলতা এবং তার প্রতিফলিত আলোকে তুলে ধরা হয়েছে, যা মেরুর অপার্থিব সৌন্দর্য প্রকাশ করে।

সারসংক্ষেপ:

এই উদ্ধৃতাংশে কবি মেরু অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন। সূর্যের আলো সেখানে খুব উজ্জ্বল না হলেও বরফে প্রতিফলিত হয়ে চারপাশকে এক মায়াবী পরিবেশে পরিণত করে। এটি পাঠকের সামনে মেরুর সৌন্দর্য ও রহস্যময়তাকে জীবন্ত করে তোলে।


প্রশ্ন ৫। ‘‘আবার আমায় ডাক দিয়েছে তুষার-মেরু উত্তরে

চক্ষে যে দেশ হয়নি দেখা কাঁদছে পরাণ তার তরে” –

– অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ কবির মেরু অভিযানে যাওয়ার ইচ্ছা বহুদিনের

উত্তর:

ক. উদ্ধৃতিটির উৎস:
উল্লিখিত পঙ্‌ক্তিগুলি প্রমথনাথ বিশী রচিত "মেরুর ডাক" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

খ. অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ:
এই অংশে কবি তাঁর অজানার প্রতি আকর্ষণ, অভিযানের স্পৃহা এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ করেছেন।

"আবার আমায় ডাক দিয়েছে তুষার-মেরু উত্তরে"

এখানে "তুষার-মেরু" বলতে মেরু অঞ্চলের দুর্গম, শ্বেতশুভ্র, বরফে ঢাকা ভূমিকে বোঝানো হয়েছে।
"ডাক দিয়েছে" অর্থাৎ মেরুর প্রতি কবির এক গভীর আকর্ষণ অনুভূত হচ্ছে, যা তাঁকে নতুন অভিযানের দিকে আহ্বান জানাচ্ছে।

এটি শুধু ভৌগোলিক অভিযানের প্রতীক নয়, বরং এটি অজানাকে জানার, নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ও সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার প্রতীক।
"চক্ষে যে দেশ হয়নি দেখা কাঁদছে পরাণ তার তরে"

এই লাইনে কবি বলেছেন যে, এমন অনেক স্থান আছে যা তিনি নিজে চোখে দেখেননি, কিন্তু সেগুলোর প্রতি তাঁর অন্তরের এক গভীর আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
"চক্ষে যে দেশ হয়নি দেখা" দ্বারা বোঝানো হয়েছে অনাবিষ্কৃত ও অজানা স্থান, যা মানুষের কৌতূহল জাগায়।
"কাঁদছে পরাণ" মানে কবির মন অজানাকে জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।

গ. সারসংক্ষেপ:

এই উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি মেরু অভিযানে যাওয়ার প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ এবং অজানাকে জানার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। এটি শুধুমাত্র ভৌগোলিক অন্বেষণের কথা নয়, বরং এটি মানবসত্তার সীমাহীন জিজ্ঞাসা ও অজানার প্রতি অন্তর্দাহের প্রতিচ্ছবি।

প্রশ্ন ৬। কবি কল্পনায় তুষারাবৃত উত্তর মেরুর চিত্রটি কীরূপ ছিল?
উত্তর:
প্রমথনাথ বিশী রচিত "মেরুর ডাক" কবিতায় কবি কল্পনায় এক শ্বেতশুভ্র, রহস্যময়, তুষারাবৃত উত্তর মেরুর এক মনোমুগ্ধকর ও ভয়ংকর চিত্র অঙ্কন করেছেন। তাঁর কল্পিত মেরুর চিত্রটি ছিল নিচের মতো—

তুষারে আবৃত বিস্তীর্ণ ভূমি:

সর্বত্র জমাট বরফের আস্তরণ, যেখানে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে এক অদ্ভুত দীপ্তি সৃষ্টি করে।
“হাজার তারার দ্বিগুণ আলো তুষার মেঝেয় হয় লেখা” – এই লাইন থেকে বোঝা যায় যে বরফের ওপর সূর্যালোক পড়লে চারপাশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
মেরুপ্রভা বা অরোরা বোরিয়ালিসের রঙিন আলোকচ্ছটা:

কবির কল্পনায় মেরুপ্রভা এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে, যা অন্ধকার আকাশকে আলোকিত করে তোলে।
“স্থির চপলা মেরুপ্রভা জ্বালায় রঙের ফুলঝুরি” – এই লাইন থেকে বোঝা যায় মেরুপ্রভা যেন আকাশজুড়ে রঙের আতশবাজির মতো ঝলসে ওঠে।

প্রচণ্ড ঠান্ডা ও শৈত্যপ্রবাহ:

তীব্র ঠান্ডা বাতাস বইছে, যা জীবনযাত্রার জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল।
হিমশীতল পরিবেশে বরফের আস্তরণের নিচে জমাট জল এবং কঠিন আবহাওয়া কবির অভিযানের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

উত্তর মেরুর প্রাণীকুল:

কবির কল্পনায় সেখানে বিশাল সিন্ধুঘোটক (Walrus) বরফ খুঁড়ছে, পেঙ্গুইনের পঙ্গু দল দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“সিন্ধুঘোটক বিশাল দাঁতে তুষার মাটি খায় খুঁড়ে, পেঙ্গুইনের পঙ্গুদলে বিজ্ঞভাবে রয় চেয়ে।”

নিঃসঙ্গতা ও মৃত্যুর সম্ভাবনা:

মেরুর পরিবেশ জীবন ধারণের জন্য প্রতিকূল। এখানে একাকীত্ব, নির্জনতা ও মৃত্যুর শীতল ছায়া বিরাজমান।
কবি অনুভব করেন যে মেরু জয় করা সহজ নয়, কারণ মৃত্যু সেখানে হাজার রূপে অপেক্ষা করছে—
“মৃত্যু যেথা হাজার রূপে জমাট জলে সন্তরে !”

সারসংক্ষেপ:
কবির কল্পনায় উত্তর মেরু এক রহস্যময়, শ্বেতশুভ্র, অতিমাত্রায় শীতল, কিন্তু অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরা এক স্থান, যেখানে বরফের রাজত্ব, রঙিন মেরুপ্রভা, তুষারঝড় ও দুর্দমনীয় প্রতিকূলতা বিরাজ করে। তবে, কবির মনে এই চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও মেরুকে জয় করার এক দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা ছিল।

প্রশ্ন ৭। ‘‘জাহাজগুলো ডাকছে আমায় রিক্ত শাখার মাস্তুলে,

জলের ঝাপট লাগছে আমার নিদাঘ-দাগা পঞ্জরে

তাইতে কাঁদে পরাণ আমার, ঘাটের বাঁধন দেয় খুলে”

– কোন কবিতার অংশ? জাহাজগুলি কেন কবিকে আহ্বান জানায়? জলের ঝাপটা কোথায় লেগেছে?

উত্তর: এই উদ্ধৃতাংশটি প্রমথনাথ বিশী রচিত "মেরুর ডাক" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

১. জাহাজগুলি কেন কবিকে আহ্বান জানায়?
জাহাজগুলি প্রতীকীভাবে অজানার আহ্বান এবং নতুন অভিযানের প্রেরণা নির্দেশ করে।
কবির মনে উত্তর মেরু জয় করার এক দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
জাহাজের মাস্তুল বাতাসে দোল খাচ্ছে, যেন সেটি কবিকে দূর সমুদ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে ডাকছে।
কবির মনে হয়, এই ডাক এড়িয়ে ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয়।

২. জলের ঝাপটা কোথায় লেগেছে?
"জলের ঝাপট লাগছে আমার নিদাঘ-দাগা পঞ্জরে" – এই লাইন থেকে বোঝা যায়,
জলের ঝাপটা কবির শরীরে লেগেছে।
"নিদাঘ-দাগা পঞ্জর" অর্থ সূর্যের প্রখর উত্তাপে ক্লান্ত দেহ।
এই লাইনটি বুঝিয়ে দেয়, কবি দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় বন্দী থাকার ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং নতুন অভিযানের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।

সারসংক্ষেপ:
জাহাজগুলি কবিকে মেরু অভিযানের পথে আহ্বান জানাচ্ছে, কারণ সেটিই তাঁর স্বপ্ন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় থেকে গেছেন, তাঁর মন ছুটতে চায় অজানার উদ্দেশ্যে। সমুদ্রের জল তাঁর ক্লান্ত দেহে আঘাত হানছে, যা তাঁকে বাধনমুক্ত হতে ও অভিযানের পথে পা বাড়াতে অনুপ্রাণিত করছে।


প্রশ্ন ৮। “শ্যামল ধরার কোমল বাহু লাগছে না আর মোর ভালো,
মেরুর পানে ভাসবো এবার মরণ-সাদা পাল ভরে।”
– কবি মেরুর পানে ভাসতে চেয়েছেন কেন, বুঝিয়ে দাও।
অথবা, 
সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।
“শ্যামল ধরার কোমল বাহু লাগছে না আর মোর ভালো,
মেরুর পানে ভাসবো এবার মরণ-সাদা পাল ভরে।”
উত্তর:  
সম্প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা:
উল্লিখিত লাইন দুটি প্রমথনাথ বিশী রচিত "মেরুর ডাক" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবির অজানাকে জানার ইচ্ছা, বিপদের মধ্যেও অভিযানের আকাঙ্ক্ষা ও মেরু অভিযানের স্বপ্ন ফুটে উঠেছে।
বিশ্লেষণ:
১. "শ্যামল ধরার কোমল বাহু লাগছে না আর মোর ভালো"
কবি এখানে সবুজ-শ্যামল পৃথিবীকে বোঝাচ্ছেন, যা উষ্ণতা ও আরামের প্রতীক।
সাধারণ জীবনযাত্রা, আরামের পরিবেশ, এবং নিরাপদ আশ্রয় আর তাঁকে টানে না।
তাঁর হৃদয় এখন অন্যরকম উত্তেজনা ও চ্যালেঞ্জের জন্য ব্যাকুল।
তিনি মেরু অভিযানের ডাক শুনেছেন এবং সেখানে যাওয়ার জন্য উন্মুখ।
২. "মেরুর পানে ভাসবো এবার মরণ-সাদা পাল ভরে।"
"মেরু" এখানে উত্তর মেরুকে বোঝায়, যা চিরতুষারাচ্ছন্ন, রূক্ষ ও বৈরী পরিবেশের প্রতীক।
"মরণ-সাদা পাল" – এই শব্দগুচ্ছের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, মেরু অভিযানে যেতে হলে জীবনকে বাজি রাখতে হবে।
সাদা বরফ যেন মৃত্যুর প্রতীক, কারণ মেরুর ভয়ংকর পরিবেশে জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন।
কবি নিশ্চিত যে, অভিযানে মৃত্যুও আসতে পারে, তবুও তিনি পিছিয়ে যেতে চান না।
তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত এবং জীবনকে তুচ্ছ করে মেরুর পথে রওনা দিতে চান।
অন্তর্নিহিত তাৎপর্য:
এই পংক্তির মাধ্যমে মানুষের অজানাকে জানার ইচ্ছা, অভিযানের স্পৃহা, চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মনোবৃত্তি ও আত্মত্যাগের মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। কবি নিরাপদ জীবনে সন্তুষ্ট নন, বরং বিপদ ও প্রতিকূলতার মুখে পড়েও সাহসিকতার সঙ্গে অভিযানে বের হতে চান। এটি শুধু মেরু অভিযানের কাহিনি নয়, বরং মানবজাতির চিরন্তন সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি।
প্রশ্ন ৯। ‘তাই বলে কি রইব পড়ে বিষুবরেখার অন্তরে,
রুদ্র নিদাঘ জ্বালায় যেথা তপের আগুন মন্তরে?”
‘নিদাঘ’ শব্দের অর্থ কী? পংক্তি দুটির সারার্থ লেখো।
উত্তর: ‘নিদাঘ’ শব্দের অর্থ:
‘নিদাঘ’ অর্থ হলো প্রচণ্ড গরম, তীব্র রৌদ্র বা দহনকাল। এটি মূলত সূর্যের তীব্র তাপ এবং গ্রীষ্মের অগ্নিঝরা উত্তাপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
পংক্তি দুটির সারার্থ:
এই লাইন দুটি প্রমথনাথ বিশী রচিত "মেরুর ডাক" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি বিষুবরেখা অঞ্চলের অত্যধিক গরম জলবায়ুকে বোঝাতে ‘রুদ্র নিদাঘ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
সারার্থ:
কবি প্রশ্ন করছেন—
আমি কি সারাজীবন বিষুবরেখার গরম অঞ্চলে পড়ে থাকব?
যেখানে সূর্যের তীব্র উত্তাপে প্রকৃতি পুড়ছে, চারপাশ যেন অগ্নিকুণ্ডের মতো?
এখানে কবির অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা, অভিযানের তীব্র বাসনা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি উষ্ণ ও পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে শীতল, রহস্যময় মেরুর দিকে অভিযানে যেতে চান। তাঁর মন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘মেরুর ডাক’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর:  ‘মেরুর ডাক’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার
প্রমথনাথ বিশী রচিত "মেরুর ডাক" কবিতার নামকরণ যথার্থ ও অর্থবহ। নামের মধ্যে কবিতার মূল ভাব ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে।
১. অভিযাত্রার আহ্বান
‘ডাক’ শব্দটি এখানে প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কবি অনুভব করেন, মেরু যেন তাঁকে আহ্বান জানাচ্ছে। তিনি শ্যামল প্রকৃতির মাঝে থাকলেও তাঁর মন সর্বদা উত্তর মেরুর শ্বেতশুভ্র তুষারাবৃত প্রকৃতির দিকে টান অনুভব করে।
২. অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা
কবি অজানার সন্ধানে, নতুনকে জানার আকাঙ্ক্ষায় সুন্দর, পরিচিত প্রকৃতি ছেড়ে মেরুর দিকে যাত্রা করতে চান। তাঁর মনে এক দুর্নিবার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, যা তাঁকে "মেরুর ডাক" নামে অনুভূত হয়।
৩. সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি
মেরু মানেই প্রতিকূল আবহাওয়া, কঠিন জলবায়ু ও বিপদসংকুল পরিবেশ। কবি এই প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যেতে চান, জয়গাথা রচনা করতে চান। তাই ‘মেরুর ডাক’ শুধু একটি ভৌগোলিক অভিযাত্রার কথা বলে না, এটি মানুষের সংগ্রামী চেতনারও প্রতীক।
৪. প্রতীকী ও রূপক অর্থ
কবিতার শিরোনাম কেবল মেরু অভিযানের ডাক বোঝায় না, এটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই ও নতুন কিছু আবিষ্কারের আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি। জীবনের পথচলায় নানা বাধা-বিপত্তি থাকলেও, সেই বাধাকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কবি যেমন মেরুর ডাক শুনেছেন, তেমনি এটি মানুষের জীবনযুদ্ধেরও ইঙ্গিত বহন করে।
উপসংহার
কবিতাটির নাম "মেরুর ডাক" যথার্থ, কারণ এটি কেবলমাত্র ভ্রমণের ইচ্ছাকে নয়, বরং মানুষের অজানার প্রতি আকর্ষণ, সংগ্রাম, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার ইচ্ছা ও আত্মত্যাগের মনোভাব প্রকাশ করে। তাই নামকরণটি সম্পূর্ণ সার্থক।
প্রশ্ন ২। ‘মেরুর ডাক’ কবিতাটিতে মেরুর হাতছানিতে কবি যেভাবে উতলা হয়েছেন তার পরিচয় দাও।

উত্তর:  ‘মেরুর ডাক’ কবিতাটিতে মেরুর হাতছানিতে কবি যেভাবে উতলা হয়েছেন তার পরিচয়
প্রমথনাথ বিশীর ‘মেরুর ডাক’ কবিতায় কবির মনে মেরুর প্রতি এক গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে। কবি অজানাকে জানার, নতুনকে ছুঁয়ে দেখার এক দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায় উতলা হয়ে পড়েছেন। শ্যামল প্রকৃতি, পরিচিত পরিবেশ, উষ্ণতা ও নিরাপত্তার বন্ধন তাঁকে আর ধরে রাখতে পারছে না। বরং তিনি তুষারাবৃত মেরুর চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন।

১. মেরুর আহ্বানে অস্থির মন
কবিতায় দেখা যায়, কবির মন যেন মেরুর আকর্ষণে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে—

👉 “আবার মোরে ডাক দিয়েছে তুষার-মেরু উত্তরে।”
এই পংক্তিতে বোঝা যায়, কবির মনে মেরুর প্রতি গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে, যেন মেরু তাঁকে ডাকছে, আর তিনি সে ডাকে সাড়া দিতে চাচ্ছেন।

২. শ্যামল প্রকৃতির প্রতি অনাসক্তি
যে দেশ তাঁকে এতদিন ধরে আগলে রেখেছে, যে প্রকৃতির সৌন্দর্যে তিনি অভ্যস্ত, সেটি তাঁকে আর টানছে না—

👉 “শ্যামল ধরার কোমল বাহু লাগছে না আর মোর ভালো।”
এই পংক্তি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, কবি পরিচিত পরিবেশের বন্ধন ছিন্ন করে মেরুর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে চান।
৩. সংগ্রামের জন্য মানসিক প্রস্তুতি
কবি জানেন যে মেরুর প্রকৃতি ভয়ঙ্কর, জীবন সেখানে কঠিন, তবুও তিনি সেখানে যেতে উদগ্রীব—

👉 “ব্যর্থ হবে মেরুর সে গান ব্যর্থ হবে জয়গাথা
মৃত্যু যেথা হাজার রূপে জমাট জলে সন্তরে !”
এখানে কবি বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলেও তিনি অভিযানে যেতে প্রস্তুত।

৪. অজানাকে জানার তীব্র বাসনা
কবি এমন এক দেশে যেতে চান, যা তিনি স্বপ্নে কল্পনা করেছেন কিন্তু কখনো চোখে দেখেননি—

👉 “চক্ষে যে দেশ হয়নি দেখা কাঁদছে পরাণ তার তরে।”
এটি কবির অজানাকে জানার তীব্র বাসনা ও দুর্নিবার আকর্ষণের প্রকাশ।
উপসংহার
কবির মনে মেরুর হাতছানিতে এক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নিরাপদ পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে অজানার পথে, কঠিন বাস্তবতার পথে পা বাড়াতে চান। তুষারের দেশ, শীতল প্রকৃতি ও অভিযানের চ্যালেঞ্জ তাঁকে আকর্ষণ করছে, এবং তিনি সেই আহ্বানে সাড়া দিতে প্রস্তুত।

প্রশ্ন ৩। ‘মেরুর ডাক’ কবিতাটির বিষয়বস্তু আলোচনা করো।
উত্তর:  
‘মেরুর ডাক’ কবিতাটির বিষয়বস্তু আলোচনা

প্রমথনাথ বিশীর ‘মেরুর ডাক’ কবিতাটি এক অভিযাত্রিক মানসিকতার প্রতিফলন। কবিতায় কবি তুষারাবৃত মেরুর প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করেছেন এবং নিরাপদ পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে অজানা, কঠিন ও প্রতিকূল পরিবেশের দিকে যাত্রার সংকল্প করেছেন। এই কবিতায় অজানাকে জানার ইচ্ছা, অভিযানের চ্যালেঞ্জ, প্রকৃতির ডাক ও সংগ্রামের মানসিকতা ফুটে উঠেছে।

১. মেরুর ডাক ও অভিযাত্রিক মানসিকতা
কবিতার নাম থেকেই স্পষ্ট যে এটি মেরুর আকর্ষণ ও আহ্বানের উপর ভিত্তি করে রচিত। কবি অনুভব করেন যে মেরু তাঁকে ডাকছে, এবং সেই ডাকে তিনি সাড়া দিতে বাধ্য—

👉 “আবার মোরে ডাক দিয়েছে তুষার-মেরু উত্তরে।”
এটি বোঝায় যে কবি চিরপরিচিত পরিবেশ ছেড়ে অজানার দিকে যাত্রা করতে চান।
২. নিরাপদ জীবন ছেড়ে অজানার প্রতি আকর্ষণ
কবি মেরুর দিকে ছুটতে চান, কারণ পরিচিত প্রকৃতি তাঁর কাছে আকর্ষণ হারিয়েছে—

👉 “শ্যামল ধরার কোমল বাহু লাগছে না আর মোর ভালো।”
এখানে কবির মনে নতুনকে জানার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নিশ্চিন্ত, আরামের জীবন ছেড়ে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চান।
৩. সংগ্রাম ও বিপদের পূর্বাভাস
মেরুর প্রকৃতি কঠিন, সেখানে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। মৃত্যুও সেখানে নিত্যসঙ্গী—
👉 “মৃত্যু যেথা হাজার রূপে জমাট জলে সন্তরে !

কিন্তু তবুও কবি পিছপা নন, কারণ তিনি নতুনকে জানার জন্য প্রস্তুত।
৪. প্রকৃতির রুদ্র রূপ ও প্রতিকূলতা
কবিতায় মেরুর প্রাকৃতিক পরিবেশের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে—

👉 “সিন্ধুঘোটক বিশাল দাঁতে তুষার মাটি খায় খুঁড়ে,
পেঙ্গুইনের পঙ্গুদলে বিজ্ঞভাবে রয় চেয়ে।”
এটি মেরুর বৈচিত্র্যময় প্রাণীজগত এবং তার কঠোর পরিবেশের পরিচয় দেয়।

৫. অভিযানের সংকল্প ও সংগ্রামের মানসিকতা
কবি জানেন যে তাঁর পথ সহজ নয়, কিন্তু তিনি তা মেনে নিতে প্রস্তুত—

👉 “তাই বলে কি রইব পড়ে বিষুবরেখার অন্তরে,
রুদ্র নিদাঘ জ্বালায় যেথা তপের আগুন মন্তরে?”
এখানে কবির সংগ্রামী চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। তিনি নিশ্চিন্ত জীবনের বদলে কঠোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চান।

উপসংহার
‘মেরুর ডাক’ কবিতা অজানার প্রতি আকর্ষণ, অভিযানের সংকল্প, সংগ্রামী চেতনা ও প্রকৃতির রূঢ় বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছে। এটি শুধুমাত্র মেরু অভিযান নয়, বরং মানুষের সাহস, সংকল্প ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের প্রতীক। কবি মৃত্যুর ভয় না করেই নতুন দিগন্তের সন্ধানে বের হতে চান, যা মানবজাতির উন্নতি ও অভিযানের স্পৃহাকে প্রতিফলিত করে।