Chapter 7 -
প্ৰত্যহের ভার
পদ্যাংশ
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতাটির কবি কে?
উত্তর: বুদ্ধদেব বসু।
প্রশ্ন ২। ‘প্রত্যহের ভার’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর: ‘প্রত্যহের ভার’ বলতে বোঝানো হয়েছে দৈনন্দিন জীবনের দায়িত্ব, ক্লান্তি ও সংকট।
প্রশ্ন ৩। কে বাণী বিহঙ্গকে আনন্দে অভ্যর্থনা করেছেন?
উত্তর: কবি নিজে।
প্রশ্ন ৪। “যে-বাণী আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা।” – শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
উত্তর: “যে-বাণী বিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা।”
প্রশ্ন ৫। “প্রত্যহের ভার” কবিতায় কবি কাকে আনন্দের সঙ্গে অভ্যর্থনা করেছেন?
উত্তর: কবি বাণী বিহঙ্গকে আনন্দের সঙ্গে অভ্যর্থনা করেছেন।
প্রশ্ন ৬। “প্রত্যহের ভার” কবিতায় কবি বাণী বিহঙ্গকে কোথায় আশ্রয় দিয়েছেন?
উত্তর: কবি বাণী বিহঙ্গকে তার হৃদয়ে আশ্রয় দিয়েছেন।
প্রশ্ন ৭। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় কবি কোথায় ডম্বরু বাজার কথা বলেছেন?
উত্তর: কবিতায় বলা হয়েছে যে, যদি হৃদয় শুধুই হতাশার ডম্বরুর মতো বাজে, তবে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন ৮। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় বর্ণিত মৃত্যুর মৃদঙ্গ কবির রক্ত কে শোনে?
উত্তর: কবির রক্তই মৃত্যুর মৃদঙ্গ শোনে।
প্রশ্ন ৯। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় কখন কবির মন প্রত্যহের ভার তুলে গেছে?
উত্তর: যখন কবির মন জীবনের অবশ্য বাঁচার ইচ্ছাকে ভুলে গেছে।
প্রশ্ন ১০। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় কবি কখন কালের কাছে স্তব্ধ হয়ে যান?
উত্তর: যখন কবি বাণীর আত্মাকে নিজের সত্তা বলে অনুভব করেন।
প্রশ্ন ১১। “_________যে – মুহূর্তে বাণীর আত্মারে জেনেছি আপন সত্তা ব’লে স্তব্ধ মেনেছি কালেরে, মূঢ় প্রবচন”– কে আত্মারে আপন সত্তা বলে জেনেছেন?
উত্তর: কবি নিজে।
প্রশ্ন ১২। “যদি হৃৎপিণ্ড শুধু হতাশার ডম্বরু বাজায়’’, ‘ডম্বরু’ কী?
উত্তর: ডম্বরু হল এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র, যা এখানে হতাশার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রশ্ন ১৩। “রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু;” – ‘মৃদঙ্গ’ কী?
উত্তর: মৃদঙ্গ একটি বাদ্যযন্ত্র, যা এখানে মৃত্যুর শব্দের প্রতীক।
প্রশ্ন ১৪। “যখন মন অনিচ্ছার অবশ্য বাঁচার ভুলেছে জীবন ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার।” – ‘অনিচ্ছা’ শব্দটির অর্থ লেখো।
উত্তর: অনিচ্ছা শব্দের অর্থ হলো না চাওয়া বা আগ্রহহীনতা।
প্রশ্ন ১৫। বৎসরের আবর্তনে, অদৃষ্টের _________ বাঁকে বাঁকে, (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তর: বৎসরের আবর্তনে, অদৃষ্টের গূঢ় বাঁকে বাঁকে।
প্রশ্ন ১৬। কবি বুদ্ধদেব বসু কোন সালে পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন?
উত্তর: ১৯৭০ সালে।
প্রশ্ন ১৭। কবি বুদ্ধদেব বসু কোন সালে অকাদেমী পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর: ১৯৭৪ সালে।
প্রশ্ন ১৮। “যে বাণী বিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা” – কে অভ্যর্থনা করেছেন?
উত্তর: কবি নিজে।
প্রশ্ন ১৯। কাকে অনুসরণ করে বুদ্ধদেব বসুর কাব্য সাধনা শুরু হয়?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অনুসরণ করে।
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি গ্রন্থ হলো ‘তিথিডোর’ এবং ‘রাতভর বৃষ্টি’।
প্রশ্ন ২। “হোক তার বেগচ্যুত পঞ্চমুক্ত বায়ুর কম্পন”
পংক্তিটি কোন্ কবিতার? কবিতার লেখক কে?
উত্তর: “হোক তার বেগচ্যুত পঞ্চমুক্ত বায়ুর কম্পন” পংক্তিটি ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতার লেখক বুদ্ধদেব বসু।
প্রশ্ন ৩। “______যখন মন অনিচ্ছার অবশ্য-বাঁচার
ভুলেছে জীবন ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার।”– ‘অনিচ্ছা’ শব্দটির অর্থ লেখো। ‘প্রত্যহের ভার’ কথাটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: 🔹 ‘অনিচ্ছা’ শব্দটির অর্থ হলো অসংকল্প বা কোনো কিছু না চাওয়া।
🔹 ‘প্রত্যহের ভার’ কথাটির তাৎপর্য হলো প্রতিদিনের জীবনযাত্রার দায়িত্ব ও কঠিন বাস্তবতা, যা মানুষকে বহন করতে হয়।
প্রশ্ন ৪। ‘যে-বাণী বিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা
– উক্তিটি কোন্ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে? বাণী বিহঙ্গ কথাটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: 🔹 উক্তিটি বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
🔹 ‘বাণী বিহঙ্গ’ কথাটির অর্থ হলো কাব্যিক ও সৃজনশীল বাণীকে পাখির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা কবির মনে আনন্দ জাগায় এবং তাকে অনুপ্রাণিত করে।
প্রশ্ন ৫। ‘ভুলেছে ভীষণ ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার’
উদ্ধৃতিটি কোন্ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে? কবি কে?
উত্তর: 🔹 উদ্ধৃতিটি বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
🔹 এই কবিতার কবি হলেন বুদ্ধদেব বসু।
প্রশ্ন ৭। ‘যে-বাণী বিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা’
– শব্দের অর্থ কী? কে অভ্যর্থনা করেছেন?
উত্তর: ‘যে-বাণী বিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা’ কথাটির অর্থ হলো যে ভাষা বা বাক্যপাখিকে (বাণী বিহঙ্গ) কবি আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। এখানে "বাণী বিহঙ্গ" বলতে ভাষা বা কবিতার অনুপ্রেরণাকে বোঝানো হয়েছে।
কবি বুদ্ধদেব বসু এই বাণী বিহঙ্গকে অভ্যর্থনা করেছেন।
প্রশ্ন ৮। “_____ যে-মুহূর্তে বাণীর আত্মারে জেনেছি আপন
সত্তা ব’লে ______”
– পংক্তিটি কোন্ কবিতার? কে আত্মারে আপন সত্তা বলে জেনেছেন?
উত্তর: উক্ত পংক্তিটি বুদ্ধদেব বসুর "প্রত্যহের ভার" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি বুদ্ধদেব বসু নিজেই বাণীর আত্মাকে নিজের সত্তা বলে জেনেছেন।
প্রশ্ন ৯। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় জীবনের জটিলতার সঙ্গে কার তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: "প্রত্যহের ভার" কবিতায় জীবনের জটিলতার সঙ্গে ডম্বরুর (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) বাজনার তুলনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন ১০। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় কবি সংকটের মধ্যেও ভাষাকে কোথায় মর্যাদা দিয়েছেন?
উত্তর: "প্রত্যহের ভার" কবিতায় কবি সংকটের মধ্যেও ভাষাকে হৃদয়ে আশ্রয় ও মর্যাদা দিয়েছেন।
প্রশ্ন ১১। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় কবি কাকে, কোথায় বারবার অভ্যর্থনা করেছেন?
উত্তর: "প্রত্যহের ভার" কবিতায় কবি বাণী বিহঙ্গকে তার হৃদয়ে বারবার অভ্যর্থনা করেছেন।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “________যে-মুহূর্তে বাণীর আত্মারে জেনেছি আপন
সত্তা ব’লে স্তব্ধ মেনেছি কালেরে, মূঢ় প্রবচন
মরত্বে; যখন মন অনিচ্ছার অবশ্য-বাঁচার
ভুলেছে ভীষণ ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার।
অথবা,
অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
– বাণীর আত্মারে কে আপন সত্তা বলে মেনেছেন? প্রত্যহের ভার কীভাবে ভুলে গেছে?
উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসু "প্রত্যহের ভার" কবিতায় বাণীর আত্মাকে (ভাষা ও সাহিত্যকে) আপন সত্তা বলে মেনে নিয়েছেন। তিনি ভাষাকে শুধু প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি, বরং তা তার অস্তিত্বের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
প্রত্যহের ভার ভুলে যাওয়ার প্রসঙ্গ:
কবিতায় বলা হয়েছে, যখন কবির মন জীবনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও বেঁচে থাকার যন্ত্রণা ভুলে যায়, তখন সে প্রত্যহের ভারও ভুলে যায়। অর্থাৎ, যখন ভাষার গভীর উপলব্ধি তাকে আচ্ছন্ন করে, তখন দুঃখ-কষ্ট, দৈনন্দিন জীবনের কঠোর বাস্তবতা তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়। ভাষার শক্তি ও সৌন্দর্যের মধ্যে ডুবে গিয়ে তিনি জীবনের জটিলতা ও বোঝাকে ভুলতে সক্ষম হন।
প্রশ্ন ২। “যে-বাণী বিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা
হন্দের সুন্দর নীড়ে বার-বার, কখনো ব্যর্থনা
হোক তার বেগচ্যুত পঞ্চমুক্ত বায়ুর কম্পন
জীবনের জটিল গ্রন্থিল বৃক্ষে; _____”
অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ:
"যে-বাণী বিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা
হন্দের সুন্দর নীড়ে বার-বার, কখনো ব্যর্থনা"
এখানে কবি বাণী বিহঙ্গ বা ভাষাকে একটি পাখির (বিহঙ্গের) রূপকে উপস্থাপন করেছেন। কবির কাছে ভাষা বা কাব্যিক প্রকাশ একটি স্বাধীন ও উচ্ছ্বসিত শক্তির প্রতীক, যা সে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন এবং আপন কাব্য-নীড়ে আশ্রয় দিয়েছেন।
তবে, তিনি স্বীকার করেছেন যে সবসময় এই ভাষার সার্থকতা থাকে না—"কখনো ব্যর্থনা" শব্দগুচ্ছ দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে কবির প্রকাশ, অনুভূতি বা সাহিত্য সবার কাছে পৌঁছায় না, কখনো তা ব্যর্থও হতে পারে।
"হোক তার বেগচ্যুত পঞ্চমুক্ত বায়ুর কম্পন
জীবনের জটিল গ্রন্থিল বৃক্ষে;"
এখানে কবি চেয়েছেন যে ভাষা বা কবিতা শুধু বাতাসে ভাসমান কোনো শব্দমাত্র না হয়ে জীবনের জটিল বাস্তবতায় প্রবেশ করুক, তা যেন মানুষের অনুভূতির গভীরে গেঁথে যায়। "জটিল গ্রন্থিল বৃক্ষে" দ্বারা তিনি জীবনের জটিল সমস্যাবলিকে বুঝিয়েছেন, যেখানে ভাষা তার সৃষ্টিশীল শক্তির মাধ্যমে প্রবাহিত হবে এবং গভীর দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।
মূল বার্তা:
এই পঙক্তিগুলোর মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে ভাষা ও সাহিত্য নিছক শব্দের খেলা নয়; এটি জীবনের গভীর সত্যের বাহক। কবি চান, তার ভাষা যেন শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন ৩। ‘যে-বাণী বিহঙ্গে আমি করেছি অভ্যর্থনা
ছন্দের সুন্দর নীড়ে বার-বার, কখনো ব্যর্থ না
হোক তার বেগ-চ্যুত পঞ্চমুক্ত বায়ুর কম্পন
জীবনের জটিল গ্রন্থিল বৃক্ষে।’
– পংক্তিগুলোর রচয়িতা কে? ‘বাণী’ এবং ‘জীবন’ কে এখানে কাদের সঙ্গে কবি অভেদ কল্পনা করেছেন? ‘পঞ্চমুক্ত বায়ু কী?
উত্তর: (ক) পংক্তিগুলোর রচয়িতা:
এই পংক্তিগুলোর রচয়িতা হলেন বুদ্ধদেব বসু। এটি তার ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
(খ) ‘বাণী’ এবং ‘জীবন’ কাদের সঙ্গে কবি অভেদ কল্পনা করেছেন?
‘বাণী’ এখানে কবির ভাষা, কাব্য বা সাহিত্য প্রকাশের প্রতীক। কবি এটিকে একটি পাখির (বিহঙ্গের) সঙ্গে তুলনা করেছেন যা ছন্দময় ও সুন্দর নীড় খোঁজে। এটি বোঝায় যে কবির ভাষা ছন্দের আশ্রয়ে আশ্রিত, কিন্তু তার গন্তব্য শুধুমাত্র ছন্দ বা নান্দনিকতা নয়।
‘জীবন’ এখানে বাস্তবতার প্রতীক। কবি জীবনকে ‘জটিল গ্রন্থিল বৃক্ষে’ তুলনা করেছেন, যেখানে অসংখ্য সমস্যা, বাধা ও সংগ্রামের স্তর রয়েছে। তিনি চান, তার ভাষা যেন শুধুমাত্র ছন্দের সৌন্দর্যে আবদ্ধ না থাকে, বরং বাস্তব জীবনের কঠিন বাস্তবতার সঙ্গেও যুক্ত হয়।
অতএব, কবি এখানে ‘বাণী’ ও ‘জীবন’-কে অভেদ কল্পনা করেছেন, যেখানে ভাষা ও সাহিত্য বাস্তব জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
প্রশ্ন ৪। “______যে ছন্দোবন্ধন
দিয়েছি ভাষারে, তার অন্তত আভাস যেন থাকে
বৎসরের আবর্তনে, অদৃষ্টের ক্রূর বাঁকে বাঁকে,
কুটিল ক্রান্তিতে ______
– মর্মার্থ বা যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: (ক) পংক্তির বিশ্লেষণ:
উক্ত পংক্তিগুলো কবি বুদ্ধদেব বসুর "প্রত্যহের ভার" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি তার ভাষা ও ছন্দের গভীরতাকে সংরক্ষণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।
➡ "যে ছন্দোবন্ধন দিয়েছি ভাষারে" – কবি তার ভাষাকে ছন্দে বাঁধতে চেয়েছেন, অর্থাৎ সাহিত্য ও কাব্যরূপে প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
➡ "তার অন্তত আভাস যেন থাকে" – কবি চান যে তার সৃষ্ট ভাষা, ছন্দ, কাব্যকলা যেন চিরকাল টিকে থাকে, অন্তত একটি ছায়া বা স্মৃতির মতো হলেও যেন থেকে যায়।
➡ "বৎসরের আবর্তনে, অদৃষ্টের ক্রূর বাঁকে বাঁকে" – সময়ের প্রবাহে ও ভাগ্যের নির্মম বাঁকে কবির ভাষা ও কাব্যের অস্তিত্ব যেন লুপ্ত না হয়ে যায়, বরং টিকে থাকে।
➡ "কুটিল ক্রান্তিতে" – জীবনের কঠিন সংকট বা পরিবর্তনের সময়েও কবি চান যে তার ভাষার শক্তি বজায় থাকুক।
(খ) মর্মার্থ বা যথার্থতা:
এই পংক্তিতে কবি সময়, ভাগ্য ও বাস্তবতার কঠিন পরিস্থির বিরুদ্ধে তার সাহিত্য ও ভাষার টিকে থাকার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। কবি জানেন যে সময় পরিবর্তনশীল, ভাগ্য কখনো অনুকূল আবার কখনো প্রতিকূল হতে পারে, জীবনে নানা সংকট আসতে পারে, কিন্তু তিনি চান, তার সৃষ্টি যেন এই সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকে।
এই ভাবনার মধ্যে একধরনের অনন্তকাল বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা এবং সাহিত্য চিরকালীন হওয়ার বাসনা প্রকাশিত হয়েছে। কবি চান তার লেখা শুধুমাত্র একসময়ের জন্য নয়, বরং আগামী প্রজন্মের মধ্যেও বেঁচে থাকুক, যেন কালচক্র ও ভাগ্যের নির্মমতা তার ভাষাকে মুছে ফেলতে না পারে।
(গ) সারসংক্ষেপ:
কবি তার ভাষাকে ছন্দে বেঁধেছেন এবং চান যে তা সময়, ভাগ্য ও জীবনের কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও টিকে থাকুক। তিনি আশঙ্কা করেন যে বৎসরের আবর্তন, ভাগ্যের কঠিন বাঁক ও সংকটময় মুহূর্ত তার কাব্যকে মুছে ফেলতে পারে, কিন্তু তিনি প্রত্যাশা করেন যে তার ভাষা অন্তত একটি স্মৃতির মতো হলেও ভবিষ্যতে রয়ে যাবে।
প্রশ্ন ৫। “_____যদি ক্লান্তি আসে, যদি শান্তি যায়,
যদি হৃৎপিণ্ড শুধু হতাশার ডম্বরু বাজায়,
রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু; – তবুও মনের
চরম চূড়ান্ত থাক সে-অমর্ত্য অতিথি
ক্ষণের চিহ্ন, _____”
– অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:
(ক) পংক্তির বিশ্লেষণ:
উক্ত পংক্তিগুলো কবি বুদ্ধদেব বসুর "প্রত্যহের ভার" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি জীবনসংগ্রামের কঠোর বাস্তবতা এবং মানসিক অবসাদের বিরুদ্ধে এক দৃঢ় মানসিক শক্তির কথা বলেছেন।
➡ "যদি ক্লান্তি আসে, যদি শান্তি যায়," – এখানে কবি জীবনের ক্লান্তি এবং শান্তির ক্ষয়িষ্ণুতাকে তুলে ধরেছেন। জীবনে অনেক সময় ক্লান্তি এসে ভর করে, শান্তি আমাদের থেকে দূরে সরে যায়।
➡ "যদি হৃৎপিণ্ড শুধু হতাশার ডম্বরু বাজায়," – হতাশার ফলে হৃদয় যখন শুধু দুঃখ ও বিষাদ প্রকাশ করে, তখন মনে হয় জীবন যেন শুধুই বেদনা এবং নিরাশার এক সুরে বাজছে।
➡ "রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু;" – এই চরণটি জীবন ও মৃত্যুর চিরন্তন দ্বন্দ্বকে প্রতিফলিত করে। যখন মন সম্পূর্ণ হতাশায় নিমজ্জিত হয়, তখন মনে হয় যেন মৃত্যুর ডাক শুনতে পাচ্ছে, জীবন থমকে যাচ্ছে।
➡ "তবুও মনের চরম চূড়ান্ত থাক সে-অমর্ত্য অতিথি" – কিন্তু এর মধ্যেও কবি মনের এক পরম শক্তির কথা বলছেন। তিনি চান, যতই ক্লান্তি বা হতাশা আসুক, মনের মধ্যে যেন এক অমর শক্তি (অমর্ত্য অতিথি) টিকে থাকে।
➡ "ক্ষণের চিহ্ন," – জীবনে দুঃখ, হতাশা, ক্লান্তি আসবে, কিন্তু সেগুলো যেন শুধু একটি সাময়িক মুহূর্তের চিহ্ন হয়ে থাকে এবং চিরস্থায়ী না হয়।
(খ) অন্তর্নিহিত তাৎপর্য:
এই পংক্তির মাধ্যমে কবি জীবনের ক্লান্তি, হতাশা এবং মৃত্যুভয়কে অতিক্রম করার শক্তির কথা বলেছেন।
🔹 ক্লান্তি ও হতাশা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, মনের মধ্যে যদি এক চরম, চূড়ান্ত শক্তি থাকে, তবে তা মানুষকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
🔹 কবি বোঝাতে চান যে হতাশার অন্ধকারেও ‘অমর্ত্য অতিথি’ বা এক চিরন্তন শক্তি মনের মধ্যে থাকলে, মানুষ নিজেকে ধরে রাখতে পারবে।
🔹 তিনি মনে করেন, মৃত্যু ও বেদনা অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু এগুলো যেন আমাদের চূড়ান্ত সত্য না হয়। আমাদের মন যেন এগুলোকে সাময়িক বলে গ্রহণ করে এবং দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে চলে।
(গ) সারসংক্ষেপ:
এই পংক্তির মাধ্যমে কবি জীবনের হতাশা ও মৃত্যুভয়কে অতিক্রম করার বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, যতই ক্লান্তি আসুক, হৃদয় যতই হতাশায় ভরে উঠুক, মৃত্যুভয় যতই সামনে আসুক, মনের মধ্যে এক অমর শক্তি থাকলে মানুষ এগিয়ে যেতে পারবে।
এই শক্তিই তাকে জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার অনুপ্রেরণা দেবে।
প্রশ্ন ৬। “____যখন মন অনিচ্ছার অবশ্য বাঁচার
ভুলেছে ভীষণ ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার’
– পংক্তিটি কোন্ কবিতার অন্তর্গত ? পংক্তি দুটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: (ক) পংক্তির উৎস:
উক্ত পংক্তিগুলো বুদ্ধদেব বসু রচিত "প্রত্যহের ভার" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
➡ "যখন মন অনিচ্ছার অবশ্য বাঁচার" – এখানে কবি বলতে চেয়েছেন, জীবন অনেক সময় আমাদের উপর বেঁচে থাকার এক অনিচ্ছাকৃত বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেয়। এই 'অবশ্য বাঁচার' অর্থ হলো, ব্যক্তি ইচ্ছুক হোক বা না হোক, তাকে বেঁচে থাকতে হয় এবং জীবনসংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়।
➡ "ভুলেছে ভীষণ ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার’" – যখন মন এই অনিচ্ছাকৃত বেঁচে থাকার চাপে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন জীবনের কঠিন দায়িত্ব, দুঃখ-কষ্ট ও বাধ্যবাধকতার ভার সে ভুলে যেতে শুরু করে। প্রত্যহের ভার বলতে বোঝানো হয়েছে দৈনন্দিন জীবনের চাপ, ক্লান্তি ও দায়িত্বের বোঝা।
(খ) পংক্তির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য:
এই পংক্তির মাধ্যমে কবি জীবনের দায়িত্ব, সংগ্রাম ও মানসিক চাপের বিরুদ্ধে মানুষের মানসিক অবচেতন অবস্থাকে প্রকাশ করেছেন।
🔹 প্রথম অংশে কবি বলেন, মানুষ অনেক সময় বাধ্য হয়ে বেঁচে থাকে, যদিও সে চায় না। জীবনের দায়িত্ব পালনে কখনো কখনো এক ধরনের 'অনিচ্ছা' জন্ম নেয়, কিন্তু তবুও তাকে বাঁচতে হয়।
🔹 দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, এক সময় এই বাধ্যবাধকতার চাপ কমে আসে বা মন এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে সে দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি, দায়িত্ব ও সমস্যাগুলোকে আর অতটা গুরুত্ব দেয় না।
(গ) সারসংক্ষেপ:
এই পংক্তিতে জীবনের কঠোর বাস্তবতার এক গভীর দর্শন প্রকাশ পেয়েছে।
✅ প্রথমে মন অনিচ্ছাকৃতভাবে বেঁচে থাকে, এক ধরনের বাধ্যতামূলক জীবনযাপন করে।
✅ কিন্তু ধীরে ধীরে সেই চাপ ও ভার মন ভুলে যেতে থাকে এবং জীবনের বাস্তবতাকে মেনে নেয়।
✅ এখানে কবি মানুষের মানসিক অভিযোজন (adaptation) এবং বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়ার প্রবৃত্তির কথা বলেছেন।
এইভাবে, কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে জীবন যত কঠিন হোক না কেন, একসময় মানুষ তার দায়িত্বের ভার ভুলে যেতে শেখে এবং বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
প্রশ্ন ৭। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো:
‘‘যদি ক্লান্তি আসে, যদি শান্তি যায়,
যদি হৃৎপিণ্ড হতাশায় ডম্বরু বাজায়,
রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু; – তবুও মনের
চরম চূড়ায় থাক সে-অমর্ত্য অতিথি-ক্ষণের চিহ্ন”
উত্তর:
সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা:
(ক) পংক্তির উৎস:
উল্লিখিত পংক্তিগুলো বুদ্ধদেব বসু রচিত “প্রত্যহের ভার” কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় কবি জীবনের দুঃখ-কষ্ট, ক্লান্তি এবং মৃত্যু সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা প্রকাশ করেছেন।
(খ) শব্দ ও বাক্যের ব্যাখ্যা:
🔹 “যদি ক্লান্তি আসে, যদি শান্তি যায়”
➡ এখানে কবি বলতে চেয়েছেন, জীবনে ক্লান্তি আসতেই পারে, মানসিক ও শারীরিক শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
🔹 “যদি হৃৎপিণ্ড হতাশায় ডম্বরু বাজায়”
➡ "হৃৎপিণ্ড হতাশায় ডম্বরু বাজায়" বলতে বোঝানো হয়েছে যে, যদি জীবন হতাশায় পরিপূর্ণ হয় এবং মনে ক্রমাগত অশান্তির বাজনা বাজতে থাকে, তবুও জীবন থেমে থাকে না।
🔹 “রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু”
➡ মৃত্যুকে এখানে "মৃদঙ্গ" শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। কবি বলতে চেয়েছেন, আমাদের জীবন প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। "রক্ত" দ্বারা জীবনের চেতনাকে বোঝানো হয়েছে, যা মৃত্যুর ডাককে নীরবে অনুভব করে।
🔹 “তবুও মনের চরম চূড়ায় থাক সে-অমর্ত্য অতিথি-ক্ষণের চিহ্ন”
➡ কবি এখানে বলতে চেয়েছেন, যতই ক্লান্তি, হতাশা ও মৃত্যুর ছায়া নেমে আসুক না কেন, মনের উচ্চ শিখরে (চূড়ায়) সেই অবিনশ্বর (অমর্ত্য) শক্তির অস্তিত্ব যেন টিকে থাকে। "অমর্ত্য অতিথি" বলতে বোঝানো হয়েছে মনের অদম্য শক্তি ও চেতনা, যা সমস্ত কষ্টের মাঝেও বেঁচে থাকে এবং মানুষকে বাঁচতে অনুপ্রাণিত করে।
(গ) সার্বিক ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য:
➡ কবিতার এই অংশে কবি জীবনের কঠিন বাস্তবতার কথা বলেছেন—যেখানে ক্লান্তি, হতাশা, দুঃখ এবং মৃত্যুর আশঙ্কা সবসময় বিরাজ করে।
➡ কিন্তু তবুও কবি মনে করেন যে, মানুষের মনে থাকা "অমর্ত্য অতিথি" বা অবিনশ্বর চেতনা, সৃষ্টিশীলতা ও আত্মার শক্তি এই কষ্টের মাঝেও টিকে থাকে এবং মানুষকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
এই পংক্তির মূল বার্তা হলো: জীবন ক্লান্তিকর, কষ্টদায়ক এবং অনিশ্চিত হলেও মনের গভীরে থাকা শক্তি, সৃষ্টিশীলতা ও আশার প্রতীক কখনো মুছে যায় না।
এই শক্তিই মানুষকে হতাশা ও মৃত্যুভয় অতিক্রম করে বেঁচে থাকতে শেখায়।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতাটির বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা
ভূমিকা:
বুদ্ধদেব বসু রচিত “প্রত্যহের ভার” কবিতাটি একজন সৃষ্টিশীল মানুষের মানসিক সংগ্রাম, ভাষার প্রতি তার দায়িত্ববোধ, এবং জীবনের কঠোর বাস্তবতার মধ্যে আত্মার মুক্তি খোঁজার আকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। কবিতাটিতে জীবন, দুঃখ-কষ্ট, মৃত্যুচেতনা, ভাষার শক্তি ও সৃষ্টিশীলতার গুরুত্ব বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে।
বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ:
জীবনের ক্লান্তি ও দুঃখ-কষ্ট:
কবিতার শুরুতেই কবি জীবনের প্রতিদিনের ভার (দায়িত্ব ও সংগ্রাম) সম্পর্কে বলেন।
➡ মানুষের জীবন চিরদিন একরকম থাকে না; এটি ক্লান্তি, হতাশা, সংগ্রাম ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
➡ এই “প্রত্যহের ভার” মানুষের উপর চেপে বসে, যা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে।
ভাষার প্রতি কবির দায়িত্ববোধ:
কবিতায় কবি ভাষার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।
➡ তিনি ভাষাকে "বাণী বিহঙ্গ" বা এক মুক্ত স্বাধীন পক্ষীরূপে কল্পনা করেছেন, যাকে তিনি আনন্দের সঙ্গে অভ্যর্থনা করেছেন।
➡ কবির বিশ্বাস, ভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি মানুষের আত্মার প্রতিচ্ছবি। তাই তিনি ভাষার সৌন্দর্য ও ছন্দ বজায় রাখার জন্য দায়িত্বশীল।
জীবনের জটিলতা ও সংকট:
➡ কবি জীবনের "জটিল গ্রন্থিল বৃক্ষে" ভাষার অবস্থান কল্পনা করেছেন।
➡ অর্থাৎ, জীবন জটিল, কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভরা, তবুও ভাষা এবং সৃষ্টিশীলতা তার মধ্যে টিকে থাকে।
মৃত্যুচেতনা ও হতাশা:
➡ কবি জীবনের সঙ্গে মৃত্যুর একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তুলে ধরেছেন।
➡ তিনি বলেছেন, “রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু”, যা বোঝায় যে মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।
➡ জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রামে হতাশা ও ক্লান্তি আসতে পারে, কিন্তু কবির মতে মনের চূড়ায় সৃষ্টিশীলতা ও আশার আলো থাকা উচিত।
সৃষ্টিশীলতার শক্তি ও মুক্তি:
➡ কবিতার শেষ অংশে কবি বলেন যে,
যদিও জীবন ক্লান্তিকর, হতাশার, এবং কখনো কখনো অর্থহীন মনে হয়, তবুও সৃষ্টিশীলতা ও ভাষার শক্তি মানুষের আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখে।
➡ তিনি মনে করেন, যতদিন ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পের সুরক্ষা থাকে, ততদিন মানুষ জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে পারবে।
উপসংহার:
➡ “প্রত্যহের ভার” কবিতাটি শুধু ব্যক্তি মানুষের জীবনসংগ্রামের কথা বলে না, বরং সাহিত্য, ভাষা ও সৃষ্টিশীলতার গুরুত্বও তুলে ধরে।
➡ কবি বিশ্বাস করেন, জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, ভাষা ও সৃষ্টিশীলতা মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি যোগায়।
➡ তাই তিনি ভাষাকে শুধুমাত্র এক প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং এক অবিনশ্বর চেতনা ও আত্মার অংশ হিসেবে দেখেছেন, যা মানুষকে মৃত্যুর মধ্যেও অমরত্বের স্বাদ দেয়।
প্রশ্ন ২। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতাটিতে কবির আশাবাদী মনের যে পরিচয় পাওয় যায়, তা বিশ্লেষণ করো।
অথবা,
‘প্রত্যহের ভার’ কবিতাটিতে কবির আশাবাদী মনের যে পরিচয় ফুটে উঠেছে, তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় কবির আশাবাদী মনের পরিচয়
ভূমিকা:
বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় কবির জীবনবোধ, সংগ্রাম, হতাশা ও আশাবাদ একসূত্রে গাঁথা হয়েছে।
কবি জীবনের ক্লান্তি ও দুঃখ-কষ্টের কথা বলেছেন, তবে সেই সঙ্গে তিনি আশার আলো ও সৃষ্টিশীলতার শক্তিতেও বিশ্বাসী।
কবিতা জুড়ে হতাশার সুর থাকলেও, কবি জীবনের প্রতি আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছেন, যা তাঁর গভীর জীবনচেতনার পরিচয় বহন করে।
কবিতায় আশাবাদী মনের প্রকাশ:
১. দুঃখ-সংগ্রামের মধ্যেও ভাষার প্রতি বিশ্বাস কবি জীবনের জটিলতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ভাষাকে মর্যাদা দিয়েছেন।
তিনি ভাষাকে “বাণী বিহঙ্গ” বা মুক্ত পাখিরূপে কল্পনা করেছেন এবং আনন্দের সঙ্গে তাকে অভ্যর্থনা করেছেন। এটি বোঝায় যে কবির আশাবাদ ভাষার শক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
২. হতাশা ও ক্লান্তি অতিক্রম করার মানসিকতা কবি জীবনের ক্লান্তিকর মুহূর্তের কথা বলেছেন, যেমন—
“যদি ক্লান্তি আসে, যদি শান্তি যায়,
যদি হৃৎপিণ্ড শুধু হতাশার ডম্বরু বাজায়।”
তবে এরপরই তিনি আশার কথা বলেন,
“তবুও মনের চরম চূড়ায় থাক সে-অমর্ত্য অতিথি।”
অর্থাৎ, দুঃখ ও হতাশা এলেও কবি মনে করেন, মানুষের মননে সৃষ্টিশীলতা ও আশার দীপ জ্বলতে থাকা উচিত।
৩. মৃত্যু ও ব্যর্থতার পরেও এগিয়ে যাওয়ার মনোভাব কবি বলেন, “রক্ত শোনে মৃত্যুর মৃদঙ্গ শুধু”, যা বোঝায় যে জীবন মৃত্যু ও ক্লান্তির দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু কবি এখানে থেমে যান না; তিনি বিশ্বাস করেন যে, জীবনের অন্তর্নিহিত শক্তি মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
৪. ভাষার শক্তিতে ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা
কবি ভাষাকে চিরন্তন মনে করেন এবং বলেন—
“যে ছন্দোবন্ধন দিয়েছি ভাষারে, তার অন্তত আভাস যেন থাকে বৎসরের আবর্তনে, অদৃষ্টের ক্রূর বাঁকে বাঁকে।”
এটি বোঝায় যে কবি চান তাঁর ভাষা ও সৃষ্টি ভবিষ্যতেও টিকে থাকুক এবং এটি নতুন প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হোক। কবির এই ভাবনায় গভীর আশাবাদের প্রকাশ ঘটেছে।
উপসংহার:
কবিতায় প্রথমদিকে জীবনের দুঃখ, ক্লান্তি ও হতাশার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত কবি আত্মবিশ্বাস ও ভাষার শক্তির মাধ্যমে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।
কবি মনে করেন, জীবন যত কঠিনই হোক না কেন, ভাষা ও সৃষ্টিশীলতার শক্তি মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হতাশার নয়, বরং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জয়লাভের। তাই, ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতায় কবির আশাবাদী মনের এক অনন্য প্রকাশ ঘটেছে।
প্রশ্ন ৩। ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর: ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা
ভূমিকা:
বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রত্যহের ভার’ কবিতার নামকরণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও যথার্থ।
‘প্রত্যহের ভার’ শব্দগুচ্ছের অর্থ হল দৈনন্দিন জীবনের বোঝা, ক্লান্তি ও দায়িত্ব।
কবিতাটিতে কবি জীবনের ক্লান্তি, সংগ্রাম ও হতাশার কথা বলেছেন, তবে একই সঙ্গে ভাষার শক্তি ও সৃষ্টিশীলতার মধ্য দিয়ে সেই ভার কাটিয়ে ওঠার কথা তুলে ধরেছেন।
এ কারণে কবিতার মূল ভাবের সঙ্গে শিরোনামটির গভীর সংযোগ রয়েছে।
নামকরণের সার্থকতা:
১. জীবনের দায়িত্ব ও ক্লান্তির প্রতিচ্ছবি
কবি জীবনের বোঝার কথা বলেছেন—
“যখন মন অনিচ্ছার অবশ্য-বাঁচার
ভুলেছে ভীষণ ভার, ভুলে গেছে প্রত্যহের ভার।”
এখানে ‘প্রত্যহের ভার’ বলতে বোঝানো হয়েছে জীবনের দায়িত্ব, ক্লান্তি, কষ্ট ও সংগ্রাম।
এই ভার মানুষকে কখনো হতাশ করে, কখনো ক্লান্ত করে।
অতএব, নামটি কবিতার মূল ভাবনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
২. দুঃখ-বেদনাকে কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা
কবিতা শুধু জীবনের বোঝা বা কষ্টের কথা বলে না, বরং তা কাটিয়ে ওঠার কথাও বলে।
কবি বলেন—
“যদি ক্লান্তি আসে, যদি শান্তি যায়,
যদি হৃৎপিণ্ড শুধু হতাশার ডম্বরু বাজায়,
তবুও মনের চরম চূড়ায় থাক সে-অমর্ত্য অতিথি।”
এটি বোঝায় যে প্রত্যহের ভার থাকলেও মানুষ তার মধ্যে থেকেও আশার আলো খুঁজে পায়।
তাই, শিরোনামটি কেবল কষ্ট ও ক্লান্তির প্রতীক নয়, বরং তা অতিক্রম করারও ইঙ্গিত দেয়।
৩. ভাষা ও সৃষ্টিশীলতার মুক্তির বার্তা
কবি ভাষাকে ‘বাণী বিহঙ্গ’ বা মুক্ত পাখিরূপে কল্পনা করেছেন এবং বলেন—
“যে-বাণী বিহঙ্গে আমি আনন্দে করেছি অভ্যর্থনা।”
অর্থাৎ, জীবনের সব ভার, কষ্ট ও হতাশার পরও কবি ভাষার আশ্রয়ে মুক্তি খুঁজে পান।
এটি দেখায় যে, ‘প্রত্যহের ভার’ জীবনের বাস্তবতা হলেও, তা ভাষার শক্তিতে হালকা হয়ে যায়।
৪. নামের কাব্যিকতা ও সার্বজনীনতা
‘প্রত্যহের ভার’ নামটি কেবল এই কবিতার জন্যই প্রাসঙ্গিক নয়, বরং এটি প্রতিটি মানুষের জীবনের বাস্তবতার প্রতিফলন।
প্রত্যেকেই জীবনে নানারকম দায়িত্ব ও ক্লান্তির ভার বহন করে, যা এই শিরোনামে প্রতিফলিত হয়েছে।
এছাড়া, নামটি সংক্ষিপ্ত, ছন্দময় ও অর্থবহ, যা পাঠকের মনে গভীর রেখাপাত করে।
উপসংহার:
‘প্রত্যহের ভার’ শিরোনামটি কবিতার ভাবনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত ও অর্থবহ।
এটি জীবনের বাস্তবতা, সংগ্রাম, ক্লান্তি ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা—এই সবকিছুকে একসঙ্গে প্রকাশ করে।
নামটি যেমন দুঃখ ও বোঝার প্রতীক, তেমনই তা ভাষা ও সৃষ্টিশীলতার শক্তির মাধ্যমে মুক্তির ইঙ্গিতও বহন করে। এই কারণে, কবিতাটির নামকরণ অত্যন্ত সার্থক, যথার্থ ও অর্থবহ।