Chapter 10
সাহিত্যে খেলা
প্রশ্ন ১। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধের রচয়িতা কে?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী।
প্রশ্ন ২। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তরঃ ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ প্রবন্ধ সংগ্রহ গ্রন্থের অন্তর্গত।
প্রশ্ন ৩। প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম কী?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম ছিল বীরবল।
প্রশ্ন ৪। প্রমথ চৌধুরী কোন পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী "সবুজ পত্র" পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন।
প্রশ্ন ৫। রোড্যার কে?
উত্তরঃ রোড্যার (Roald Dahl) একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক ছিলেন, যিনি শিশুতোষ সাহিত্য ও ছোটগল্পের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তাঁর লেখা জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে রয়েছে "চার্লি অ্যান্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি", "ম্যাটিল্ডা", "দ্য বি এফ জি", "জেমস অ্যান্ড দ্য জায়ান্ট পীচ" ইত্যাদি। তিনি তাঁর রচনায় কল্পনা, রসিকতা ও চমকপ্রদ কাহিনির জন্য বিখ্যাত।
প্রশ্ন ৬। সাহিত্যের উদ্দেশ্য কী?
উত্তরঃ সাহিত্যের উদ্দেশ্য হলো মানবজীবনের বহুমুখী অভিজ্ঞতা, চিন্তা, অনুভূতি ও কল্পনাকে শিল্পরূপ দেওয়া।
প্রশ্ন ৭। ভাস্কর রোঁড্যার সম্পূর্ণ নাম লেখো।
উত্তরঃ ভাস্কর রোঁড্যার (Rodin) এর সম্পূর্ণ নাম হলো অগাস্ট রোঁড্যার (Auguste Rodin)। তাঁর পুরো নাম François-Auguste-René Rodin।
প্রশ্ন ৮। “তাঁরা কুশীলবকে তাঁদের যথাসবর্ষ, এমনকী কৌপীন পর্যন্ত পেলা দিয়েছিলেন”। – ‘কৌপীন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ‘কৌপীন’ শব্দের অর্থ হলো জাঙিয়া বা লঙ্গোট। এটি সাধারণত প্রাচীন ভারতীয় যোগী ও সন্ন্যাসীরা পরিধান করতেন।
প্রশ্ন ৯। ‘বীরবল’ কোন্ লেখকের ছদ্মনাম?
উত্তরঃ ‘বীরবল’ ছিল প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম।
প্রশ্ন ১০। সরস্বতীর বরপুত্রও যে নট বিটের দলভুক্ত হয়ে পড়েন, তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ কে?
উত্তরঃ সরস্বতীর বরপুত্রও যে নট বিটের দলভুক্ত হয়ে পড়েন, তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ মধুসূদন দত্ত।
প্রশ্ন ১১। ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী ছিলেন ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক।
প্রশ্ন ১২। “এই পুতুল গড়া হচ্ছে তাঁর খেলা।” – পুতুল গড়া কার খেলা?
উত্তরঃ"পুতুল গড়া" স্রষ্টা বা কবির খেলা। এখানে সৃষ্টিশীল কার্যকলাপকে খেলার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যেখানে কবি বা লেখক সৃজনশীলতাকে উপভোগ করেন।
প্রশ্ন ১৩। ‘বিদ্যাসুন্দর’ খেলনা হলেও রাজার বিলাস ভবনে পাঞ্চালিকা।” বিদ্যাসুন্দর কী?
উত্তরঃ‘বিদ্যাসুন্দর’ একটি কাব্যগ্রন্থ, যা বিদ্যাপতি ও সুন্দরীর প্রেমকাহিনি নিয়ে রচিত। এটি মূলত মঙ্গলকাব্যের একটি শাখা, যেখানে প্রেম, সমাজ ও নীতিবোধের সংমিশ্রণ ঘটে।
প্রশ্ন ১৪। ‘পৃথিবীর শিল্পমাত্রেই এই _____ খেলা খেলে থাকেন।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ ‘পৃথিবীর শিল্পমাত্রেই এই পুতুল খেলা খেলে থাকেন।’
প্রশ্ন ১৫। “যখন তখন হাতে কাদা নিয়ে, আঙ্গুলের টিপে মাটির পুতুল তোয়ের করে থাকেন।” – এখানে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে শিল্পীর কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ১৬। খেলার মধ্যে উপরি পাওনা থাকলে একে কী বলে?
উত্তরঃ খেলার মধ্যে উপরি পাওনা থাকলে একে বোনাস বা উপহার বলে।
প্রশ্ন ১৭। “সাহিত্যের উদ্দেশ্যে সকলকে আনন্দ দেওয়া, কারো ____ করা নয়।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ “সাহিত্যের উদ্দেশ্যে সকলকে আনন্দ দেওয়া, কারো উপদেশ করা নয়।”
প্রশ্ন ১৮। ব্রাহ্মণ ও শূদ্রের প্রভেদ কোথায় থাকে না?
উত্তরঃ ব্রাহ্মণ ও শূদ্রের প্রভেদ খেলার জগতে থাকে না।
প্রশ্ন ১৯। কৃষ্ণচন্দ্র কে ছিলেন?
উত্তরঃ কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন নদিয়া জেলার নবদ্বীপের রাজা, যিনি কৃষ্ণচন্দ্র রায় নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ২০। নিজের আয়ত্তের বাইরে গিয়ে উচ্চস্থানে উঠবার অন্তিম ফল কী?
উত্তরঃ নিজের আয়ত্তের বাইরে গিয়ে উচ্চস্থানে উঠবার অন্তিম ফল হলো পতন।
প্রশ্ন ২১। মানুষের দেহ মনের সকল প্রকার কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কাজ কোনটি?
উত্তরঃ মানুষের দেহ-মনের সকল প্রকার কাজের মধ্যে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করা শ্রেষ্ঠ কাজ।
প্রশ্ন ২২। এক কথায় সাহিত্য সৃষ্টি ______ লীলামাত্র। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ এক কথায় সাহিত্য সৃষ্টি শিবলীলামাত্র।
প্রশ্ন ২৩। কবির মনের নিত্য নৈমিত্তিক কর্ম কী?
উত্তরঃ কবির মনের নিত্য নৈমিত্তিক কর্ম সৃষ্টি।
প্রশ্ন ২৪। “সাহিত্যের উদ্দেশ্যে সকলকে _____ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ "সাহিত্যের উদ্দেশ্যে সকলকে আনন্দ"।
প্রশ্ন ২৫। ‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের _____ জোগানো।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো।)
উত্তরঃ "সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের আনন্দ জোগানো।"
প্রশ্ন ২৬। কিণ্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তরঃ কিণ্ডারগার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফ্রিডরিখ ফ্রোবেল (Friedrich Fröbel)।
প্রশ্ন ২৭। “সাহিত্য ছেলের হাতের ______ নয় গুরুর হাতের বেতও নয়।” (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ “সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনা নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়।”
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “কাব্যরস নামক অমৃতে যে আমাদের অরুচি জন্মেচে, তার জন্য দায়ী” লেখকের মতানুসারে সাহিত্যের অরুচির জন্য দায়ী কারা?
উত্তরঃ লেখকের মতানুসারে, সাহিত্যের অরুচির জন্য দায়ী হলেন আধুনিক শিক্ষিত সমাজ ও পণ্ডিতগণ, যারা সাহিত্যের প্রকৃত সৌন্দর্য ও আনন্দ উপভোগ করতে অক্ষম।
প্রশ্ন ২। ‘‘কৃষ্ণচন্দ্রের মনোরঞ্জন করতে বাধ্য না হলে তিনি বিদ্যাসুন্দর রচনা করতেন না।” – বিদ্যাসুন্দর কে রচনা করেছিলেন? কৃষ্ণচন্দ্র কে ছিলেন?
উত্তরঃ বিদ্যাসুন্দর রচনা করেছিলেন ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর।
কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন নদিয়ার রাজা, যিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করতেন।
প্রশ্ন ৩। “আসল কথা এই যে, মানুষের দেহ-মনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ।” – ‘ক্রিয়া’ ও ‘ক্রীড়া’ শব্দ দুটির অর্থ লেখো।
উত্তরঃ ক্রিয়া – কার্য বা কর্ম, যা কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য করা হয়।
ক্রীড়া – খেলা বা আনন্দের জন্য সম্পন্ন হওয়া কার্য।
প্রশ্ন ৪। “কৃষ্ণচন্দ্রের মনোরঞ্জন করতে বাধ্য না হলে তিনি ‘বিদ্যাসুন্দর’ রচনা করতেন না।” – পাঠটির লেখক কে? ‘বিদ্যাসুন্দর কার রচনা?
উত্তরঃ পাঠটির লেখক: প্রমথ চৌধুরী।
‘বিদ্যাসুন্দর’ রচয়িতা: ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর।
প্রশ্ন ৫। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা কে? তিনি কোন ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন?
উত্তরঃ ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা: প্রমথ চৌধুরী।
তিনি যে ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন: বীরবল।
প্রশ্ন ৬। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা কে? তিনি কোন ছদ্মনামে সাহিত্যক্ষেত্রে পরিচিত ছিলেন?
উত্তরঃ ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির রচয়িতা প্রমথ চৌধুরী। তিনি সাহিত্যক্ষেত্রে বীরবল ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন।
প্রশ্ন ৭। “এমন কি কবির আপন মনের গোপন কথাটিও গীতিকবিতাতে বঙ্গভূমির স্বগতোক্তি স্বরূপেই উচ্চারিত হয়।” – উদ্ধৃতিটি কোন পাঠ থেকে নেওয়া হয়েছে? গীতি কবিতা কী?
উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে।
গীতি কবিতা হল এমন এক ধরনের কবিতা যা সঙ্গীতের সুরে বা গান হিসেবে পরিবেশনযোগ্য। এই ধরনের কবিতায় সাধারণত মনের ভাব, অনুভূতি, প্রেম, দুঃখ, আনন্দ ইত্যাদি সুরের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, যা এক ধরনের সঙ্গীত বা গানের আঙ্গিকে গীত হয়।
প্রশ্ন ৮। ‘কুশীলব’ ও ‘কৌপিন’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ কুশীলব শব্দের অর্থ হলো অভিনেতা বা নট, যারা নাটক বা অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন।
কৌপিন শব্দের অর্থ হলো একটি ধরনের প্রাচীন ভারতীয় লজ্জা-ভাগ বা অন্তর্বাস, যা সাধারণত সোজা প্যাঁচানো কাপড়ের টুকরো দিয়ে তৈরি হয়।
প্রশ্ন ৯। ‘বিদ্যাসুন্দর’-এর রচয়িতা কে? এটি কোন কাব্যের অংশ?
উত্তরঃ ‘বিদ্যাসুন্দর’-এর রচয়িতা হলেন কৃষ্ণচন্দ্র সেন। এটি ‘বিদ্যাসুন্দর’ নামক কাব্যগ্রন্থের অংশ, যা কৃষ্ণচন্দ্র সেনের একটি প্রখ্যাত কাব্য।
প্রশ্ন ১০। ‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে ____ দেওয়া, কারো ______ করা নয়।’ (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ ‘সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া, কারো অধিকার করা নয়।’
প্রশ্ন ১১। হীরক ও কাচের সম্বন্ধকে ‘সাহিত্যে খেলা’র লেখক কোন সম্বন্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তরঃ ‘সাহিত্যে খেলা’র লেখক হীরক ও কাচের সম্বন্ধকে পৃথিবীর শিল্প এবং সাহিত্য সম্বন্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
প্রশ্ন ১২। রোড্যা কোন্ দেশের লোক? তিনি কী কারণে বিখ্যাত?
উত্তরঃ রোড্যা ফ্রান্স দেশের লোক। তিনি ভাস্কর্য শিল্পী হিসেবে বিখ্যাত। তাঁর কাজের মধ্যে মানবিক অনুভূতি এবং সৌন্দর্যবোধের চমৎকার প্রতিফলন দেখা যায়।
প্রশ্ন ১৩। যিনি গড়তে জানেন, তিনি ______ গড়তে পারেন _____ গড়তে পারেন। (শূন্যস্থান পূর্ণ করো)
উত্তরঃ যিনি গড়তে জানেন, তিনি পুতুল গড়তে পারেন পৃথিবী গড়তে পারেন।
প্রশ্ন ১৪। শিক্ষাদান ও সাহিত্যের ‘ধর্মকর্ম’ এক নয় স্বতন্ত্র এ নিয়ে প্রমথ চৌধুরী যে যুক্তি দিয়েছেন, তার একটি উল্লেখ করো।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী "সাহিত্যে খেলা" প্রবন্ধে বলেন যে, শিক্ষাদান এবং সাহিত্যের ধর্মকর্ম এক নয়, স্বতন্ত্র। তিনি যুক্তি দেন যে, সাহিত্যের উদ্দেশ্য শুধু জ্ঞানদান বা শিক্ষা প্রদান নয়, তার উদ্দেশ্য মানুষের আনন্দ এবং মানসিক উত্সাহ জোগানো। সাহিত্য কেবল পাঠকের মনের গভীরে স্পর্শ করতে চায়, তাকে ভাবনা, অনুভুতি এবং ভাবনা জগতের দিকে দৃষ্টি দিতে চায়, যা শিক্ষাদানের ক্ষেত্র থেকে আলাদা।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। “এ পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নেই” উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি "এ পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নেই" প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যে খেলা প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই উক্তিটি প্রকৃতির বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যায়।
প্রথমত, প্রমথ চৌধুরী এই উক্তি দ্বারা বলতে চেয়েছেন যে, খেলাধুলা, শিল্প বা সাহিত্য, এমনকি মননশীল কাজেও সামাজিক অবস্থান বা জাতিগত বিভেদ অপ্রাসঙ্গিক। খেলার ময়দানে, অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টিশীল কর্ম, খেলাধুলা বা সাহিত্য চর্চায়, মানুষের জাত, ধর্ম, বর্ণ, সামাজিক অবস্থান বা শ্রেণি-বৈষম্য কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না। সমস্ত মানুষের জন্য খেলা বা শিল্প এককভাবে অভিজ্ঞান হয়, যা তাদের ব্যক্তিগত গুণাবলী ও সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করে।
এখানে, ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ বলতে সমাজে প্রচলিত ঐতিহ্যগত শ্রেণীবিভাজন বুঝানো হয়েছে। ব্রাহ্মণদের সাধারণত ধর্মীয় বা শিক্ষাগত ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং শূদ্রদের সমাজে নিম্নস্থান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খেলার ময়দানে বা সাহিত্যে, এই সব সামাজিক প্রথার কোনও মূল্য নেই। এখানে প্রতিভা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা একমাত্র মাপকাঠি। সকলেই একত্রে খেলতে পারে, একে অপরের সঙ্গী হতে পারে এবং সমাজের শ্রেণী-বিভাজন বা শাসন ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে একে অপরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে খেলা বা সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে।
এছাড়া, প্রমথ চৌধুরী আরও জানিয়েছেন যে, সাহিত্য বা খেলা কেবল সামাজিক বৈষম্য ছেড়ে, মানুষের অভ্যন্তরীণ চেতনা ও সৃজনশীলতাকে উদ্বুদ্ধ করে। এই প্রেক্ষাপটে, ব্রাহ্মণ বা শূদ্রের পার্থক্য একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।
অতএব, উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, খেলার ময়দানে, অর্থাৎ প্রকৃত সৃজনশীল কার্যকলাপে, মানুষের প্রকৃত গুণাবলী ও ক্ষমতাই মুখ্য, এবং সেগুলি জাতিগত বা সামাজিক অবস্থান দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
প্রশ্ন ২। “সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া কারো মনোরঞ্জন করা নয়।” – কোন্ রচনায় এই বাক্যটি আছে উল্লেখ করে অতি সংক্ষেপে লেখকের এহেন উক্তির কারণ নির্দেশ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যে খেলা প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে।
এখানে প্রমথ চৌধুরী বলতে চেয়েছেন যে, সাহিত্যের আসল উদ্দেশ্য হল মানুষের মধ্যে আনন্দ সৃষ্টি করা, তবে এটি কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মনোরঞ্জন করতে নয়। সাহিত্যের কাজ মানুষের মনকে উদ্দীপ্ত করা, তাদের চিন্তা-ভাবনাকে প্রসারিত করা এবং আনন্দের উপলব্ধি তৈরি করা।
তিনি এহেন উক্তি করেছেন, কারণ তখনকার সময়ে অনেকেই সাহিত্যকে শুধু একটি উপভোগ্য মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা সাধারণত কিছু নির্বাচিত শ্রেণির মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য রচিত। তবে প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের উচ্চতর উদ্দেশ্যকে চিহ্নিত করেছেন, যা সবাইকে আনন্দ দেয় এবং তাদের চিন্তা ও অনুভূতির একটি বিস্তৃত পরিসর তৈরি করে।
প্রশ্ন ৩। “সাহিত্যের উদ্দেশ্য আনন্দ দেওয়া – কারো মনোরঞ্জন করা নয়।” – উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যে খেলা প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি সাহিত্যের উদ্দেশ্যকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আনন্দ সৃষ্টি করা, তবে এটি কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মনোরঞ্জনের জন্য রচিত নয়।
এই উক্তির যথার্থতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সাহিত্যের প্রাকৃত কাজ হচ্ছে মানুষের চিন্তা ও অনুভূতিকে উদ্দীপ্ত করা এবং তাদের জীবনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং আনন্দ নিয়ে আসা। সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নতুন চিন্তার উদ্রেক হয়, যা তাদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। সাহিত্যের কাজ শুধুমাত্র কোনো বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মনোরঞ্জনের জন্য নয়, বরং সকল শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য আনন্দ এবং চিন্তার মুক্তির পথ উন্মুক্ত করা।
এছাড়া, সাহিত্যের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র উপভোগ বা আনন্দদান নয়, বরং এটি সমাজের পরিবর্তনের এক শক্তিশালী মাধ্যমও। সাহিত্য আমাদের চিন্তা ও মননশীলতা পরিবর্তন করতে সাহায্য করে, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
তাহলে, প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের উদ্দেশ্যকে সামাজিক এবং মানসিক উন্নতির সাথে যুক্ত করে, যা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মনোরঞ্জন নয়, বরং মানুষের সামগ্রিক উন্নতির দিকে মনোযোগ দেয়।
প্রশ্ন ৪।.‘‘এ পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নেই”। – কোন্ রচনায় এই বাক্যটি আছে? উল্লেখ করে অতি সংক্ষেপে লেখকের এহেন উক্তির কারণ নির্দেশ করো।
উত্তরঃ এই বাক্যটি প্রমথ চৌধুরীর "সাহিত্যে খেলা" প্রবন্ধে আছে।
প্রমথ চৌধুরী এখানে খেলার মাধ্যমে সমাজের শ্রেণী-বিভেদকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে সকল শ্রেণি, জাতি বা ধর্মের মানুষ সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তা হলো খেলার ময়দান। খেলা এমন একটি কার্যকলাপ যেখানে সমাজের সামাজিক বা আধ্যাত্মিক প্রভেদ নির্ধারিত নয়। এখানে ব্রাহ্মণ-শূদ্র, উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র সকলেই একযোগে আনন্দ উপভোগ করতে পারে এবং নিজের দক্ষতা অনুযায়ী অংশগ্রহণ করতে পারে।
এভাবে, প্রমথ চৌধুরী সমাজের অসমতা এবং শ্রেণীভেদ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের মননের পরিচ্ছন্নতা এবং আনন্দের গুরুত্ব তুলে ধরতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন ৫। “আসল কথা এই যে, মানুষের দেহ-মনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ।” – যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি "সাহিত্যে খেলা" প্রবন্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য, যেখানে প্রমথ চৌধুরী বলেন, “আসল কথা এই যে, মানুষের দেহ-মনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ।”
এই উক্তির যথার্থতা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, লেখক এখানে ক্রীড়ার গুরুত্ব এবং তার মানবিক দিক তুলে ধরেছেন। ক্রীড়া কেবল শারীরিক বা মানসিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি মানুষের অন্তর্নিহিত সৃজনশীলতারও একটি মাধ্যম। ক্রীড়ার মাধ্যমে মানুষের মেধা, দক্ষতা, মনোযোগ, প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার ক্ষমতা, সহনশীলতা এবং টীমওয়ার্কের গুণাবলি বিকাশ লাভ করে।
এছাড়া, ক্রীড়া মানুষের জীবনে আনন্দ এবং উচ্ছ্বাস নিয়ে আসে, যা অন্য কোনো কার্যকলাপে প্রাপ্ত হয় না। ক্রীড়ায় এক ধরনের নির্মল খেলা থাকে, যেখানে মানুষ নিজেকে চ্যালেঞ্জ করে, সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে, এবং জীবনের আনন্দ ও সন্তুষ্টি অর্জন করে।
এই কারণেই প্রমথ চৌধুরী বলেছেন যে, দেহ-মনের সকল প্রকার ক্রিয়ার মধ্যে ক্রীড়া শ্রেষ্ঠ। এটি কেবল শারীরিক পরিশ্রম নয়, বরং আত্মবিশ্বাস, একাগ্রতা এবং আনন্দের এক পূর্ণতা নিয়ে আসে।
প্রশ্ন ৬। “যিনি গড়তে জানেন, তিনি শিবও গড়তে পারেন আবার বাঁদরও গড়তে পারেন।” – অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এই উক্তি “যিনি গড়তে জানেন, তিনি শিবও গড়তে পারেন আবার বাঁদরও গড়তে পারেন।” প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ থেকে উদ্ভূত। এখানে লেখক খেলার মাধ্যমে সৃজনশীলতার এক গভীর দিক তুলে ধরেছেন।
এই উক্তির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হল, যে ব্যক্তি সৃজনশীলতা ও শিল্পীসত্তা নিয়ে কিছু নির্মাণ করতে জানেন, তার হাতে যে কিছুই তৈরি হবে, তা সবসময় কেবল উচ্চ মানের হতে হবে, এমন নয়। তিনি যেমন মহাকাব্য, শিব, বা কোনও মহৎ সৃষ্টি গড়তে সক্ষম, তেমনি একইভাবে ভয়ঙ্কর বা অকারণ কিছু, যেমন বাঁদর বা নেগেটিভ কিছু তৈরি করতেও সক্ষম।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ন দিকও রয়েছে—সৃজনশীলতার প্রকৃতি হলো এটি কেবল এক ধরনের প্রক্রিয়া, যার ফলাফল নির্ভর করে শিল্পীর উদ্দেশ্য ও মনোভাবের ওপর। একজন শিল্পী যখন তার মন থেকে কিছু সৃষ্টি করে, তখন সেটি তার চিন্তা এবং ধ্যানের প্রভাব গ্রহণ করে। সুতরাং, তিনি যে সৃষ্টি করতে পারেন, তা তার দক্ষতা ও চিন্তা শক্তির উপর ভিত্তি করে আলাদা হতে পারে।
অতএব, এই উক্তি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে সৃজনশীলতা শক্তিশালী এবং বহুমুখী, এবং এটি যে কোন দিকেই পরিচালিত হতে পারে, যে কেউ সেই সৃজনশীলতা ব্যবহার করে ভাল বা মন্দ কিছু তৈরি করতে পারে।
প্রশ্ন ৭। “একটু উঁচুতে না চড়লে আমরা দর্শক এবং শ্রোতৃমণ্ডলীর নয়ন মন আকর্ষণ করতে পারিনে। বেদিতে না বসলে, আমাদের উপদেশ কেউ মানে না, রঙ্গমঞ্চে না চড়লে, আমাদের অভিনয় কেউ দেখে না; আর কাঠমঞ্চে না দাঁড়ালে, আমাদের বক্তৃতা কেহ শোনে না।” – অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এই উক্তিটি প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ থেকে উদ্ভূত, যেখানে লেখক সাহিত্যিক বা বক্তার সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে কিছু পদক্ষেপের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
এখানে লেখক বলতে চেয়েছেন, যে ব্যক্তি সমাজে নিজের কথা বলার বা কিছু করার জন্য উদ্যত হন, তাকে তার কাজ বা বক্তব্য সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য এক ধরনের মঞ্চ বা স্থান প্রয়োজন। এর মাধ্যমে, লেখক সমাজে নিজের উপস্থিতি এবং প্রভাব তৈরি করতে চান। এই মঞ্চটি একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র যেখানে তার কথা বা কাজ দর্শকদের কাছে পৌঁছাবে এবং তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
উঁচুতে না চড়লে দর্শক আকর্ষণ হয় না: এটি বলতে চেয়েছেন, সমাজের কাছে নিজেকে তুলে ধরার জন্য, কিছু অর্জন বা শ্রদ্ধা পাওয়া দরকার। অন্যথায়, সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে আমাদের কথা শুনবে না বা গুরুত্ব দেবেন না।
বেদিতে না বসলে উপদেশ কেউ মানে না: একজন ব্যক্তি যদি একজন গুরু বা উপদেষ্টা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করে, তবে তার উপদেশ বা মতামত কেউ গুরুত্ব দেবে না।
রঙ্গমঞ্চে না চড়লে অভিনয় কেউ দেখে না: একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী যদি মঞ্চে না উঠেন, তার অভিনয় কেবল তখনই পরিস্ফুট হবে, যখন তিনি অন্যদের সামনে উপস্থিত হবেন। এখানে সৃজনশীলতার প্রতি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশিত হয়েছে।
কাঠমঞ্চে না দাঁড়ালে বক্তৃতা কেউ শোনে না: বক্তৃতার ক্ষেত্রেও যদি ব্যক্তিটি জনসমক্ষে উপস্থিত না হন, তার কথা বা বক্তব্য শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাবে না।
এই উক্তি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সমাজে নিজের স্থান প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, উপযুক্ত মঞ্চ বা ক্ষেত্রের প্রয়োজন হয়। একজন সাহিত্যিক, শিল্পী, বা বক্তা যখন নিজের কাজ, ভাবনা, বা বক্তব্য প্রদর্শন করেন, তখন তার কাজের মূল্য এবং তা সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ, সঠিক পরিবেশ এবং সুযোগ না থাকলে, শিল্পী বা চিন্তাবিদ সমাজে তার প্রভাব বিস্তার করতে অক্ষম থাকেন।
প্রশ্ন ৮। “বিশ্বমানবের মনের সঙ্গে নিত্যনূতন সম্বন্ধ পাতানোই হচ্ছে কবি-মনের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম।” – অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ এখানে “বিশ্বমানবের মনের সঙ্গে নিত্যনূতন সম্বন্ধ পাতানোই হচ্ছে কবি-মনের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম।” – এই উক্তিটি কবির মূল কাজ এবং দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অনেক কিছুই বলে দেয়।
প্রথমত, কবি একটি বিশেষ ধরনের সৃজনশীল মানুষ, যার কাজ শুধু অনুভূতি বা ভাবনাকে শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা নয়, বরং পৃথিবী ও তার মানুষের গভীর অনুভূতি, চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং আনন্দের সাথে একাত্ম হওয়া। কবি তার রচনায় এসব মানবিক অনুভূতির প্রকাশ ঘটান, যাতে সমাজের একেকটি মানুষ নিজের চিন্তা-ভাবনা বা অভিজ্ঞতা কবির কবিতায় খুঁজে পায়।
এখানে "বিশ্বমানব" বলতে বিশ্বব্যাপী বা সকল মানুষের কথা বলা হয়েছে। কবির কাজ হচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, তার অনুভূতি, চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা। কবি তাদের চিন্তা ও মনোভাবকে তুলে ধরে, তাদের মধ্যে একটি সম্বন্ধ স্থাপন করেন, যা নতুন বা নিত্যনূতন। অর্থাৎ, কবি সমাজের সবার মনের অবস্থা, সমস্যা, এবং আনন্দকে তার কবিতায় রূপ দেন।
কবি-মনের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম বলতে, এই উক্তিতে কবির অন্তর্নিহিত কাজকে বুঝানো হচ্ছে, যেখানে তিনি অবিরতভাবে মানুষের মধ্যে প্রাসঙ্গিকতা সৃষ্টি করেন, তাদের অনুভূতিতে যুক্ত হন, তাদের নতুন প্রেরণা দেন। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে কবি সবসময় নিজেকে মানুষের মনের মধ্যে খুঁজে পান এবং তার কাজের মাধ্যমে তাদের নতুন কিছু দেখানোর চেষ্টা করেন।
অর্থাৎ, কবির কাজ কেবল সাহিত্য রচনা বা বাহ্যিক শব্দশিল্প সৃষ্টি নয়, বরং তিনি মানুষের জীবন এবং তাদের মনের সাথে একত্রিত হয়ে সেই সম্পর্কের গভীরতা অনুভব করেন এবং তার কবিতার মাধ্যমে এই সম্পর্ককে প্রকাশ করেন।
এই উক্তিটি কবির একধরনের মানবিকতা ও সামগ্রিক সংবেদনশীলতার প্রতি সম্মান এবং তার কাজের সার্থকতা জানান দেয়।
প্রশ্ন ৯৷ ‘‘এ পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নাই।” – মর্মার্থ বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি "এ পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ-শূদ্রের প্রভেদ নাই" মানবজাতির সকল স্তরের সমান অধিকার ও মর্যাদার কথা তুলে ধরে।
এখানে "খেলার ময়দান" বলতে বোঝানো হয়েছে সেই স্থান যেখানে মানুষ শুধুমাত্র তার কর্মের ভিত্তিতে মূল্যায়িত হয়। খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ, শূদ্র, বা অন্য কোন সামাজিক শ্রেণীভেদ নেই, কারণ সেখানে মানুষ তার প্রতিভা, দক্ষতা, শারীরিক ক্ষমতা, ও চেষ্টা অনুযায়ী কাজ করে। সমাজের সামাজিক অবস্থান, জাতিগত বিভেদ বা উচ্চ-নিচু মনোভাব সেখানে অপ্রয়োজনীয়। খেলার ময়দানে, যেমন প্রতিযোগিতা বা ক্রীড়া ক্ষেত্রে, একমাত্র প্রতিভা এবং পরিশ্রমই মূল্যবান।
এই উক্তি দিয়ে লেখক বিশেষভাবে বলতে চেয়েছেন যে, সমাজের প্রথাগত ধর্মীয় বা জাতিগত বিভেদগুলি তখন অর্থহীন হয়ে যায় যখন মানুষ খেলা বা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এখানে শূদ্র-ব্রাহ্মণ, উঁচু-নিচু কোন পার্থক্য নেই। খেলাধুলা বা সৃজনশীল কর্মের ক্ষেত্রে সবাই সমান, এবং এখানে ব্যাক্তির শ্রম ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ।
এমন একটি পরিবেশের দিকে লেখক ইঙ্গিত করছেন যেখানে কোনো ব্যক্তি তার সামাজিক বা জাতিগত পরিচয়ের উপর নির্ভর না করে, তার যোগ্যতা ও প্রয়াসের ভিত্তিতে সমাদৃত হয়। সমাজের বিভাজন দূর করে এই ধরনের খেলার ময়দান সকল মানুষের মধ্যে একতা ও সমান সুযোগ সৃষ্টি করে।
এখানে সমাজের দ্বন্দ্ব, শ্রেণীভেদ ও শোষণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা রয়েছে, যেখানে সবাই সমান, এবং সব মানুষের মধ্যে একই ধরনের সুযোগ ও সম্মান থাকতে হবে।
প্রশ্ন ১০। “কবির কাজ হচ্ছে কাব্য সৃষ্টি করা, আর শিক্ষকের কাজ হচ্ছে প্রথমে তা বধ করা, তারপর তার শবচ্ছেদ করা।” – তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি “কবির কাজ হচ্ছে কাব্য সৃষ্টি করা, আর শিক্ষকের কাজ হচ্ছে প্রথমে তা বধ করা, তারপর তার শবচ্ছেদ করা” একটি গভীর ও উদাহরণমূলক আক্ষরিক বক্তব্য, যা কবি এবং শিক্ষক—উভয়ের ভূমিকা ও কাজের পার্থক্য বুঝানোর চেষ্টা করে।
এখানে কবির কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কাব্য সৃষ্টি করা, যা এক ধরনের সৃজনশীলতা ও শিল্পের প্রকাশ। কবি তাঁর মনোজগৎ থেকে, ভাবনা ও অনুভূতি থেকে, একটি কাব্য সৃষ্টি করেন। এই কাব্য হলো কবির আত্ম-প্রকাশের একটি মাধ্যম, যা ভাবনা, শব্দ এবং অনুভূতির নিপুণ সমন্বয়ে রচিত হয়। কবি তার কাব্যে গভীরতা, সৌন্দর্য এবং উপলব্ধি রাখেন, যার মাধ্যমে তিনি পাঠকের হৃদয়ে বিশেষ স্থান তৈরি করেন।
অন্যদিকে শিক্ষকের কাজ হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে "প্রথমে তা বধ করা, তারপর তার শবচ্ছেদ করা।" শিক্ষকের কাজ হল কাব্য বা সৃষ্টির গভীরতা এবং সাহিত্যকর্মের মানের বিচার করা। শিক্ষকের দ্বারা "বধ করা" অর্থাৎ, কবির সৃষ্টি বা কাব্যকে মূল্যায়ন করা এবং তাতে ভুল বা অপূর্ণতা দেখানো। এর পরবর্তী অংশে "তার শবচ্ছেদ করা" বলতে বোঝানো হয়েছে যে, শিক্ষক কাব্যটির নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করে, তার শক্তি এবং দুর্বলতা তুলে ধরেন, যা লেখকের সাহিত্যকর্মের গভীরতর বোঝাপড়া সৃষ্টি করে।
এই উক্তি আমাদের জানিয়ে দেয় যে, কবি সৃষ্টি করেন, আর শিক্ষক সেই সৃষ্টির বিচারের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তার বাস্তবতা তুলে ধরেন। কবি, যিনি তাঁর কাব্য রচনার সময় মনের স্বাধীনতা এবং অনুভূতি প্রকাশ করেন, তাকে শিক্ষকের কঠোর বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। শিক্ষক, প্রকৃতপক্ষে, সাহিত্যকর্মের গুণমান পরীক্ষা করেন, সৃষ্টির আঙ্গিক এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে সমালোচনা করেন এবং শেষে কবির কাজকে আরো উন্নত ও নিখুঁত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া, এই উক্তি কাব্যশিল্পের সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণাত্মক সমালোচনার মধ্যে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে, যেখানে প্রতিটি কাজ সৃষ্টি হওয়ার পর, তার মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ১১। “সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়।” যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি “সাহিত্য ছেলের হাতের খেলনাও নয়, গুরুর হাতের বেতও নয়।” প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ থেকে এসেছে, যা সাহিত্য সম্পর্কে একটি গভীর ও মূল্যবান মতামত প্রদান করে। উক্তিটির বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাই যে, লেখক সাহিত্যের প্রকৃত ভূমিকা এবং উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে চেয়েছেন। এখানে তিনি সাহিত্যকে দুটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন:
১. ছেলের হাতের খেলনা – এখানে "ছেলের হাতের খেলনা" শব্দটি দিয়ে সাহিত্যকে একটি তুচ্ছ, হালকা, অবজ্ঞায়িত জিনিস হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র বিনোদন বা শিশুদের খেলার মতো কিছু হতে পারে। যদি সাহিত্যকে শুধুমাত্র এইভাবে দেখানো হয়, তবে তা তার প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং গুরুত্ব থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। সাহিত্য কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং এটি মানব জীবনের গভীর উপলব্ধি, ভাবনা এবং চিন্তা-ভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এর মাধ্যমে সমাজের নানা দিক, নৈতিকতা, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মানবিক অনুভূতি প্রকাশ করা হয়।
২. গুরুর হাতের বেত – অন্যদিকে, "গুরুর হাতের বেত" শব্দটির মাধ্যমে সাহিত্যকে একটি দণ্ড, বাধ্য করার উপকরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ, সাহিত্যকে যদি আমরা শুধুমাত্র শাসন, শিক্ষা বা আদেশের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করি, তবে এর সত্যিকার রূপকে আমরা ভুলভাবে উপস্থাপন করব। সাহিত্য একটি সৃজনশীল এবং মুক্ত চিন্তার প্রকাশ, যা মানুষের মনের অনুভূতিকে জাগ্রত করে এবং সমাজকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ দেয়। একে গুরুর নির্দেশনার মতো শক্ত হাতে পরিচালনা করা উচিত নয়।
তাহলে, এই উক্তিটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সাহিত্যকে কোনো একপেশে বা একমাত্র দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার না করা, এবং তা একটি সৃজনশীল, মুক্ত ও গভীর প্রকৃতির মাধ্যম হিসেবে দেখা উচিত। সাহিত্য শুধুমাত্র খেলনা বা শাসনের বাহন নয়, এটি মানব জাতির চিন্তা, অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতার মঞ্চ, যেখানে শিল্প, সৌন্দর্য, এবং ভাবনা একত্রিত হয়ে জীবনের একটি গভীর চিত্র আঁকে।
অতএব, উক্তিটির যথার্থতা বলা যায়, কারণ লেখক সাহিত্যকে মানবীয় অনুভূতি, শিল্প, এবং মুক্ত চিন্তার নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশ হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তা কোনো বাহ্যিক উদ্দেশ্য বা চাপের অধীনে আবদ্ধ থাকা উচিত নয়।
প্রশ্ন ১২। “স্বর্গ হতে দেবতারা মধ্যে-মধ্যে ভূ-তলে অবতীর্ণ হওয়াতে কেউ আপত্তি করেন না, কিন্তু মর্ত্যবাসীদের পক্ষে রসাতলে গমন করাটা বিশেষ নিন্দনীয়।” – যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি “স্বর্গ হতে দেবতারা মধ্যে-মধ্যে ভূ-তলে অবতীর্ণ হওয়াতে কেউ আপত্তি করেন না, কিন্তু মর্ত্যবাসীদের পক্ষে রসাতলে গমন করাটা বিশেষ নিন্দনীয়।” প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধ থেকে উদাহৃত, যা মানব প্রকৃতি ও সমাজের দ্বৈত মানদণ্ড এবং দুই শ্রেণির মধ্যে ভেদাভেদের প্রতি একধরনের সমালোচনা।
বিশ্লেষণ:
১. দেবতাদের ভূ-তলে অবতরণ:
দেবতারা স্বর্গ থেকে ভূ-তলে অবতীর্ণ হতে পারেন, এটা কোনো সমস্যা বা আপত্তি হিসেবে দেখা হয় না। কারণ, দেবতারা দেবতা হওয়ার জন্য সম্মানিত। তাদের ভূমিকা, ক্ষমতা এবং অবস্থান সবই স্বর্গীয়। দেবতাদের জন্য পৃথিবীতে আসা বা মানুষের মধ্যে মিশে যাওয়া কোনো অস্বাভাবিক বা নিন্দনীয় কাজ নয়, বরং তাদের অভ্যর্থনা হয়। সমাজ ও সংস্কৃতিতে দেবতাদের এমন সম্মান ও মর্যাদা থাকে।
মর্ত্যবাসীদের রসাতলে গমন:
কিন্তু মর্ত্যবাসীদের ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যক্তি "রসাতলে" (অর্থাৎ নিচে, বিপদে বা পতিত অবস্থায়) চলে যায়, তা সমাজে নিন্দনীয় হিসেবে গণ্য হয়। এখানে মর্ত্যবাসী বলতে সাধারণ মানুষকে বুঝানো হয়েছে, যাদের জন্য সমাজের নিচু অবস্থানে যাওয়া বা বিপদগ্রস্ত হওয়া অস্বাভাবিক, নিষ্ঠুর এবং নেতিবাচক মনে করা হয়।
লেখক এখানে দুটি ভিন্ন শ্রেণীর ভিন্ন মনোভাবের তুলনা করেছেন: দেবতাদের জন্য ভূপৃষ্ঠে অবতরণ কোনো ক্ষতিকর বা নিন্দনীয় বিষয় নয়, কিন্তু মর্ত্যবাসীদের যদি কোনো পতন ঘটে বা তারা দুর্দশায় পড়ে, তা তখন সমাজের কাছে অপমানজনক এবং অসম্মানজনক হয়ে ওঠে।
তাৎপর্য:
এই উক্তিটির মর্মার্থ হচ্ছে, সমাজে সাধারণ মানুষের জন্য এক ধরনের দ্বৈত মানদণ্ড রয়েছে। যখন সমাজের উচ্চতর স্তরের (দেবতা বা ক্ষমতাশালী) ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো কাজ করেন, তখন সেটি প্রশংসিত হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষ বা মর্ত্যবাসীরা যখন কোনো অসুখী পরিস্থিতিতে পড়েন, তখন সেটি তিরস্কৃত হয়। লেখক এভাবে সমাজের নৈতিক মানদণ্ডের দ্বৈততা এবং শ্রেণী বিভাজনকে প্রকাশ করেছেন, যা বিশেষ করে সমাজের প্রতিষ্ঠিত নিয়মকানুনের প্রতি সমালোচনা জানায়।
প্রশ্ন ১৩। “সাহিত্যের উদ্দেশ্য যে আনন্দ দান করা – শিক্ষা দান করা নয়।” – উক্তিটি কোন রচনার অংশ? লেখক প্রদত্ত উদাহরণের সাহায্যে বক্তব্যটির সত্যতা নিরূপণ করো।
উত্তরঃ উক্তিটি ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধের অংশ, যা প্রমথ চৌধুরী লিখেছেন। এই প্রবন্ধে তিনি সাহিত্য ও শিক্ষার উদ্দেশ্য এবং তাদের পার্থক্য ব্যাখ্যা করেছেন। উক্তির মাধ্যমে লেখক এই ধারণাটি তুলে ধরেছেন যে সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য হলো আনন্দ দেওয়া, কিন্তু শিক্ষা দেওয়া নয়।
লেখকের বক্তব্যের সত্যতা নিরূপণ:
প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়েছেন:
সাহিত্যের আনন্দময় দিক:
প্রমথ চৌধুরী উল্লেখ করেন যে, সাহিত্য একটি আনন্দদায়ক খেলা। এটি মানুষের মনের আরাম ও সুখের জন্য সৃষ্টি করা হয়। সাহিত্য মানে শুধুমাত্র শিক্ষামূলক বার্তা দেওয়া নয়, বরং মানুষের মনকে আনন্দিত করা এবং তাদের জীবনে সৌন্দর্য ও অনুপ্রেরণা আনা।
উদাহরণস্বরূপ, কবিতা, গানের রচনা, ছোটগল্প ও উপন্যাস এগুলি মানুষের মনে আনন্দের সৃষ্টি করতে পারে। এসব রচনা কোনো বিশেষ শিক্ষা দিতে না চাইলেও, তাদের মধ্যে গভীর আনন্দ এবং অনুভূতি থাকে যা পাঠককে জাগ্রত করে।
শিক্ষার কাজ আলাদা:
সাহিত্যের সঙ্গে শিক্ষার উদ্দেশ্য এক নয়, লেখক উল্লেখ করেছেন। শিক্ষকরা যেমন পাঠ্যপুস্তক দিয়ে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য পূর্ণ করেন, সাহিত্যকাররা মনের আনন্দে লেখনীর মাধ্যমে মানবিক অনুভূতির গভীরতা তুলে ধরেন।
যেমন, একটি উপন্যাসে সামাজিক অবস্থা বা মানসিক যন্ত্রণার বর্ণনা করা হলে, তা শুধুমাত্র পাঠকের মনে চিন্তা এবং অনুভূতির সঞ্চার করে, কিন্তু তার উদ্দেশ্য শিক্ষা দেওয়া নয়। এটি পাঠককে ভাবতে বা অনুভব করতে উদ্বুদ্ধ করে।
উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা:
প্রমথ চৌধুরী এক স্থানেই "কবি বা সাহিত্যিক, যে কোনো দিক থেকে শিক্ষকের সঙ্গে তুলনা করার মতো নয়, কারণ তাদের কাজ শিক্ষাদান নয়, বরং মনের আনন্দ সৃষ্টি করা।"
লেখক এমন এক উদাহরণ দিতে পারেন যে, যদি কেউ কেবলমাত্র পাঠ্যবই পড়ে শিক্ষা নেয়, তবে সে শুধু তথ্যই সংগ্রহ করছে। কিন্তু, যখন কেউ সাহিত্য রচনা পড়ছে, সে ভাবছে, অনুভব করছে, এবং তার মনের অভ্যন্তরীণ আবেগ ও অনুভূতিগুলির সঙ্গে মিলিত হচ্ছে। সাহিত্য শুধু শিক্ষাকে সমর্থন করে না, বরং অনুভূতিকে প্রাণিত করে, যা মানবিক জীবনের এক বিশেষ দিক।
প্রশ্ন ১৪। ‘পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ শূদ্রের প্রভেদ নেই’ – সাহিত্যের খেলা প্রবন্ধ অবলম্বনে উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরীর প্রবন্ধ *‘সাহিত্যে খেলা’*তে উক্তিটি, "পৃথিবীতে একমাত্র খেলার ময়দানে ব্রাহ্মণ শূদ্রের প্রভেদ নেই", একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা তুলে ধরে। এখানে লেখক সাহিত্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও চরিত্রের উপর আলোকপাত করেছেন, এবং এই প্রবন্ধে তিনি সাহিত্যের ক্ষেত্রের সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের সম্পর্ক তুলে ধরেছেন।
উক্তিটির তাৎপর্য:
খেলার ময়দানে সমতা:
প্রমথ চৌধুরী এটির মাধ্যমে বলতে চেয়েছেন যে, সাহিত্যের জগতে কোন প্রকার সামাজিক অবস্থান বা ধর্মীয় বিভাজন থাকে না। খেলার ময়দানে যেমন সব খেলোয়াড়ের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না, ঠিক তেমনি সাহিত্যের মঞ্চেও সকল ব্যক্তি সমান। সাহিত্যে কোনো ব্রাহ্মণ বা শূদ্রের প্রভেদ, শ্রেণীভেদ বা বর্ণভেদ চলে না।
সাহিত্যে মানবিকতা:
সাহিত্য মানবিক অনুভূতি ও চেতনার অবাধ প্রবাহ। এখানে ধর্ম, জাতি বা বর্ণের সীমাবদ্ধতা নেই, কারণ সাহিত্যে মূল উদ্দেশ্য হলো মানবিক অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও আনন্দের প্রকাশ। একজন লেখক তার রচনায় যা চেয়েছেন তা প্রকাশ করে, এবং পাঠক সেই অনুভূতির সাথে সংযুক্ত হতে পারে, irrespective of their caste or status.
সামাজিক প্রথার বাইরে সাহিত্য:
সাহিত্যে, কোনো ব্যক্তি তার সমাজের ধারা বা অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে নিজের ভাবনা, অনুভূতি, এবং চিন্তাভাবনাগুলি প্রকাশ করতে পারে। এখানে কোন সামাজিক প্রথার আধিপত্য থাকে না। ব্রাহ্মণ বা শূদ্র, উচ্চবর্ণ বা নিম্নবর্ণ, কেউই সাহিত্যের পরিসরে অবরুদ্ধ নয়। সাহিত্য সকলের জন্য উন্মুক্ত, এটি শ্রেণীহীন এবং সকলের জন্য এক অভিন্ন মঞ্চ।
প্রতিভা ও সৃজনশীলতার গুরুত্ব:
সাহিত্য মনের গভীরতা এবং সৃজনশীলতার ফল, যা কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণী বা বর্ণের অন্তর্ভুক্ত নয়। এখানে গুণের মূল্য সর্বোচ্চ, এবং সেটা পর্যালোচনার জন্য কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রয়োজন হয় না। একজন লেখক বা কবি তার সৃজনশীলতা এবং অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সমাজের বিভাজন থেকে মুক্ত।
সাহিত্যের একত্রিত দৃষ্টি:
সাহিত্যের মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতির মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন হয়, যা সমস্ত বিভাজন অতিক্রম করে। সাহিত্য এক এমন মাধ্যম, যেখানে সমস্ত শ্রেণি বা বর্ণের মানুষের অভিজ্ঞতা একত্রিত হয়। এটি কোনও একটি গোষ্ঠী বা শ্রেণীটির সম্পত্তি নয়, বরং মানুষের সম্মিলিত ঐতিহ্য এবং চেতনা।
প্রশ্ন ১৫। ‘এইসব জিনিষে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে।’ কোন্ কোন্ জিনিষে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে বলে প্রমথ চৌধুরী ভেবেছেন, লেখো।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী তাঁর প্রবন্ধ *‘সাহিত্যে খেলা’*তে উল্লেখ করেছেন যে, সাহিত্যের বাজার বিভিন্ন দুনিয়াভরা নানা জিনিসে ছেয়ে গেছে। তিনি চিন্তা করেছেন যে, সাহিত্যের বাজারে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাহিত্যের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং মানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তিনি যেসব জিনিসের কথা বলেছেন, সেগুলি হল:
বিপণন এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি:
সাহিত্যের প্রতি মানুষ অনেক সময় ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রবৃত্ত হয়েছে। অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে সাহিত্যকে বিক্রির একটি পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা প্রকৃত সাহিত্যবোধের সঙ্গে মানানসই নয়।
ফরমালিজম এবং প্রথাগত সাহিত্য:
প্রমথ চৌধুরী অভিযোগ করেছেন যে সাহিত্যের বাজারে ফরমালিজম এবং প্রথাগত ধারণাগুলির আধিপত্য বেড়ে গেছে। এর ফলে প্রকৃত সৃজনশীলতার প্রতি মনোযোগ কমেছে এবং সাহিত্যে নিখাদ মানের অগ্রগতি কমেছে। এটি সাহিত্যের উপর একধরনের সংকীর্ণতা সৃষ্টি করেছে।
কৃত্রিম সাহিত্য:
কিছু সাহিত্য কাজ বাজারের চাহিদার দিকে তাকিয়ে তৈরি হচ্ছে, যেখানে শুদ্ধ সাহিত্যিক উদ্দেশ্য বা চিন্তা নেই। শুধু পাঠক আকর্ষণের জন্য রচিত হচ্ছে বই বা কাজগুলি। এর ফলে সাহিত্যের গুণগত মানের অবক্ষয় ঘটছে।
পাঠকের পক্ষে সাহিত্যিক উপাদান বিশ্লেষণ:
লেখক বলেছেন যে, সাহিত্যকে এমনভাবে সহজ করে দেওয়া হচ্ছে যেন পাঠক দ্রুত আনন্দ বা মনোরঞ্জন পায়, তবে এর গভীরতা ও সত্যতা অনেক সময় হারিয়ে যায়।
প্রশ্ন ১৬। “সাহিত্য খেলাচ্ছলে শিক্ষা দেয়।” এ মন্তব্য সম্বন্ধে লেখক প্রমথ চৌধুরীর অভিমত কী?
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী তাঁর প্রবন্ধ *‘সাহিত্যে খেলা’*তে বলেছেন যে, “সাহিত্য খেলাচ্ছলে শিক্ষা দেয়।” এই মন্তব্যটি প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত হল, সাহিত্য এক ধরনের খেলা, যেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নেই, বরং এটি একটি অবমুক্ত, মুক্তমনে গড়ে ওঠা সৃষ্টি। লেখক মনে করেন, সাহিত্য কখনোই একান্তভাবে শিক্ষাদান বা শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে রচিত নয়। বরং সাহিত্যকে একটি মুক্ত খেলা হিসেবে দেখতে হবে, যেখানে লেখক তার মননশীলতা ও অনুভূতিকে প্রকাশ করেন।
প্রমথ চৌধুরী বুঝাতে চেয়েছেন যে, সাহিত্য কখনোই সরাসরি শিক্ষা দিতে চায় না বা শিক্ষা প্রদান তার প্রধান লক্ষ্য নয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মনের গভীরে আনন্দ সৃষ্টি করা, মানবতাকে উজ্জীবিত করা, এবং জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ভাবনা তৈরি করা। সাহিত্য মানুষের অভিজ্ঞতা ও জীবনবোধের প্রতি একটি অভ্যন্তরীণ দৃষ্টি প্রদান করে, যা মাঝে মাঝে সরাসরি শিক্ষা বা তথ্যদান থেকে আলাদা এবং অনেক ক্ষেত্রে নৈঃশব্দ্যে শিক্ষা দেয়।
তবে, তিনি বলেন, এই খেলা-খেলা সৃষ্টির মধ্যে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা, চিন্তাভাবনা সৃষ্টি করা এবং কখনো কখনো জীবনের গভীর সত্যকে তুলে ধরা হয়। সাহিত্য মানুষের অন্তর্নিহিত অনুভূতিতে শিহরণ সৃষ্টি করে, তাকে নতুন চিন্তা ও অভিজ্ঞতার মধ্যে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করে, যা এক ধরনের অপ্রত্যাশিত শিক্ষা হতে পারে।
এইভাবে, প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতিকে এক ধরনের খেলাচ্ছলেই তুলনা করেছেন, যেখানে শিক্ষা ধীরে ধীরে, আকর্ষণীয় এবং উপভোগ্যভাবে মানুষের মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
প্রশ্ন ১৭। “অতএব সাহিত্যে আর যাই কর না কেন, পাঠক সমাজের মনোরঞ্জন করবার চেষ্টা করো না।” – প্রসঙ্গটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ প্রমথ চৌধুরী তাঁর প্রবন্ধ *‘সাহিত্যে খেলা’*তে বলেছেন, “অতএব সাহিত্যে আর যাই কর না কেন, পাঠক সমাজের মনোরঞ্জন করবার চেষ্টা করো না।” এই মন্তব্যের তাৎপর্য হলো, সাহিত্য রচনার মূল উদ্দেশ্য কখনোই পাঠক সমাজের মনোরঞ্জন করা নয়। প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যকে কোনো বাহ্যিক বা শালীন উদ্দেশ্য পূরণের মাধ্যম হিসেবে দেখতে চান না। তিনি মনে করেন, সাহিত্যকে যেন কোনোভাবে বানানো বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না করা হয়, যে উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পাঠকদের আনন্দ বা মনোরঞ্জনের জন্য থাকবে।
এখানে তিনি দুইটি মূল ধারণা তুলে ধরেন:
সাহিত্য তার মূল উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীভূত হোক: সাহিত্য রচনার মূল লক্ষ্য হল মানুষের মন ও অনুভূতির গভীরে প্রবেশ করা, নতুন চিন্তা ও অনুভূতির সৃষ্টি করা, এবং মানুষের জীবনের নানা দিককে উন্মোচন করা। সাহিত্য কখনোই শুধু পাঠককে আনন্দ দেওয়ার জন্য নয়, বরং তার চিন্তা ও অনুভূতিতে নতুন আলো ফেলতে চায়।
সাহিত্যকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়: তিনি জানাচ্ছেন যে সাহিত্য যদি শুধুমাত্র মনোরঞ্জন বা বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য লেখা হয়, তবে তা নিজের মৌলিকতা হারাবে। সাহিত্যকে খেলার মতো অবাধ ও সৃজনশীল হতে দেওয়া উচিত, যাতে তা সমাজের কোনো গড়ে ওঠা দৃষ্টিভঙ্গিকে না অনুসরণ করে, বরং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
অর্থাৎ, প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে একটি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি দেন, যেখানে লেখক তার অন্তর্নিহিত অনুভূতি ও চিন্তাকে প্রকাশ করতে পারেন, পাঠককে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে নিয়ে আসতে পারেন, এবং সমাজের কোনো বাহ্যিক চাহিদা বা সুবিধার জন্য তা তৈরি না হয়।
দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির মধ্যদিয়ে লেখক প্রমথ চৌধুরী সাহিত্য সম্বন্ধে যে ধারণাটি তুলে ধরেছেন তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির মধ্যদিয়ে লেখক প্রমথ চৌধুরী সাহিত্য সম্বন্ধে যে ধারণাটি তুলে ধরেছেন, তা হলো সাহিত্য একটি খেলাস্বরূপ।
প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধে সাহিত্যকে একটি সৃজনশীল খেলার সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে লেখক তার মনের অমৃতকে অবমুক্ত করে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। এই প্রবন্ধে তিনি সাহিত্যকে নিছক কুশলতা বা অনুশীলন হিসেবে দেখতে চান না। বরং, সাহিত্যকে একটি শিল্প হিসাবে, যে শিল্পের মধ্যে খেলার আনন্দ, উদ্ভাবনের স্বাধীনতা এবং সৃষ্টিশীলতার অভিব্যক্তি রয়েছে, সে দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন।
প্রবন্ধের মূল ধারণা:
সাহিত্য একটি সৃজনশীল খেলা: প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যকে একটি খেলার সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে খেলার যেমন কিছু নিয়ম-কানুন থাকে, তেমনি সাহিত্যের ক্ষেত্রেও কিছু মৌলিক এবং শাশ্বত চর্চা ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। কিন্তু এটি কোনো বাধ্যবাধকতা নয়; বরং লেখক তার মনের মতো করে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করতে পারেন। এর মাধ্যমে তিনি সৃষ্টির আনন্দকে ফুটিয়ে তুলতে চান, যা একটি খেলার মতো সৃজনশীল ও আনন্দদায়ক। সাহিত্যে কোনো কঠোরতা বা সংকীর্ণতার স্থান নেই, বরং এটি একটি মুক্ত এবং উদার মাধ্যম হিসেবে দেখতে চান লেখক।
সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য আনন্দ প্রদান: লেখক বলেছেন, সাহিত্যের উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনোরঞ্জন করা নয়, বরং তা আনন্দ প্রদান করা। সাহিত্য এক ধরনের শুদ্ধ আনন্দ বা অমৃতের উৎস হতে পারে যা পাঠককে চিন্তা করতে শেখায়, মনের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে এবং সমাজের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করাতে সাহায্য করে। তবে, এই আনন্দের মধ্যে কোনো বাহ্যিক উদ্দেশ্য বা চাপ থাকে না। সাহিত্যের এই আনন্দ শুধুমাত্র জ্ঞানের প্রসার এবং মানুষের মনোভাবের উন্নতির জন্য।
সাহিত্য ও শিক্ষার পার্থক্য: প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের এবং শিক্ষার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, সাহিত্য শুধুমাত্র তথ্য বা শিক্ষা দেওয়ার জন্য নয়, বরং এটি একটি প্রক্রিয়া যেখানে মানুষের মন এবং অনুভূতির বিকাশ ঘটে। সাহিত্য কখনোই শিক্ষকের কঠোরতার মতো নয়, বরং এটি মিষ্টি ও মধুর খেলা, যেখানে পাঠক এবং লেখক উভয়েই মনের আনন্দে একসঙ্গে ভেসে যায়।
সাহিত্যের শৈল্পিক গুণাবলি: প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের শৈল্পিক গুণাবলি এবং এর সৃষ্টির পদ্ধতিকে একটি খেলার মতো স্বাধীন ও অবাধ অবস্থায় রাখতে চান। তাঁর মতে, সাহিত্য শুধু একটি নিছক বাহ্যিক উপকরণের সংমিশ্রণ নয়, বরং এর মধ্যে অনুভূতি, চিন্তা এবং কল্পনার গভীরতা থাকতে হয়। সাহিত্যে খেলার মতোই, শুদ্ধ কল্পনা, চিন্তা ও আবেগের মিশ্রণই একটি সফল সাহিত্য রচনার মূল সুর।
অনুশীলনীর প্রশ্নোত্তরঃ
প্রশ্ন ১। লেখক প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির মূল বিষয়বস্তু তোমার নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ লেখক প্রমথ চৌধুরীর ‘সাহিত্যে খেলা’ প্রবন্ধটির মূল বিষয়বস্তু হলো সাহিত্যের প্রকৃতি এবং তার ভূমিকা। প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের সঙ্গে খেলার তুলনা করেছেন। তাঁর মতে, সাহিত্য এক ধরনের সৃজনশীল খেলা, যেখানে লেখক তার মনের ভাবনা, চিন্তা ও অনুভূতির সৃজনশীল প্রকাশ ঘটান। তিনি সাহিত্যের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পাঠককে আনন্দ দেওয়া এবং মনের গভীরে প্রবাহিত হওয়া বলে মনে করেন, তবে কোনো মনোরঞ্জন বা বাহ্যিক উদ্দেশ্য নয়। সাহিত্য কখনো শিক্ষার মতো কঠোর বা বাধ্যবাধকতা নয়, এটি একটি মধুর এবং মুক্ত প্রক্রিয়া যেখানে লেখক ও পাঠক একে অপরের অনুভূতি ও চিন্তা ভাগ করে নেন।
এছাড়া, লেখক সাহিত্যের মধ্যে শুদ্ধ আনন্দের কথা বলেন, যা শুধুমাত্র জ্ঞানের প্রসার কিংবা সামাজিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নয়, বরং এটি মানুষের মনোভাবের উন্নতি এবং অনুভূতির বিকাশ ঘটায়। লেখক আরও বলেন, সাহিত্যের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই, কারণ এটি এমন একটি খেলা যেখানে সকল মানুষের মনের গহীনে প্রবাহিত হয়, যে কেউ তার মনের ভাবনা এবং অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে।
এইভাবে, প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের উদার, সৃজনশীল, এবং আনন্দময় গুণাবলি তুলে ধরেছেন, যা এক ধরনের খেলার মতোই স্বাধীন এবং আনন্দদায়ক।