Chapter 16 - 

ভাত

১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 

( ক ) উচ্ছবের আসল নাম কী ? 

উত্তর: উচ্ছবের আসল নাম উৎসব নাইয়া

( খ ) উচ্ছব কার জমিতে কাজ করত ? 

উত্তর: উচ্ছব তাদের গ্রামের সতীশ মিস্ত্রীর জমিতে কাজ করত।

( গ ) কার মঙ্গল কামনায় যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল ? 

উত্তর: কলকাতার এক বড়ো বাড়ির গৃহকর্তার মঙ্গল কামনায় যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল।

( ঘ ) বাসিনী লুকিয়ে উচ্ছবকে কী খেতে দিয়েছিল ?

উত্তর: বাসিনী লুকিয়ে উচ্ছবকে ঠোঙায় করে ছাতু খেতে দিয়েছিল।

২। সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 

( ক ) উচ্ছবের চেহারা ও বেশভূষার বর্ণনা দাও । 

উত্তর: উচ্ছব একজন গ্রাম্য মানুষ। তার চাহনি ছিল উগ্র প্রকৃতির। তার বেশভূষাতে ছিল একটি বন্য ভাব। সে ময়লা লুঙ্গি পরত, যা তার দেহের তুলনায় অত্যন্ত ছোট ছিল।

( খ ) উচ্ছবের গ্রামে ভাতের অভাবের কারণ কী ছিল ? 

উত্তর:  উচ্ছবের গ্রামে ভাতের অভাবের প্রধান কারণ ছিল দরিদ্রতা ও দুর্ভিক্ষ। গ্রামে অধিকাংশ মানুষই ভূমিহীন ছিল এবং বড়োলোকদের জমিতে মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করত। সেই বছর ফসল পরিপক্ক হওয়ার আগেই পোকায় নষ্ট করে দেয়, ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতিকে আরও চরম করে তোলে, যার ফলে গ্রামে ভাতের তীব্র অভাব হয়েছিল।

( গ ) “ রন্ন হল মা নক্বী ” – কার উক্তি ? ‘ রন্ন ’ ও ‘ নক্কী ’ বলতে কী বোঝ ? 

উত্তর: “রন্ন হল মা নক্বী” উক্তিটি উচ্ছবের ঠাকুমার

  • ‘রন্ন’ শব্দের অর্থ অন্ন বা খাবার
  • ‘নক্কী’ বলতে লক্ষ্মী দেবীকে বোঝানো হয়েছে। আঞ্চলিক উচ্চারণে ‘ল’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ন’ হয়েছে এবং ‘ক্ষ্মী’ পরিবর্তিত হয়ে ‘ক্কী’ হয়েছে।

( ঘ ) যজ্ঞের অনুষ্ঠানে কী কী মাছ রান্নার আয়োজন করা হয়েছিল ? 

উত্তর: যজ্ঞের অনুষ্ঠানে রান্নার জন্য বিভিন্ন ধরনের মাছ আনা হয়েছিল। সেগুলো হলো—

  • বড়ো ইলিশ
  • পাকা পোনার পেটি
  • চিতলের কোন
  • ডিমপোরা ট্যাংরা
  • বড়ো ভেটকি মাছ ইত্যাদি।

( ঙ ) বড়ো কর্তাদের বাড়িতে প্রতিদিন কী কী চালের ভাত রান্না হত ? 

উত্তর: বড়ো কর্তাদের বাড়িতে প্রতিদিন পাঁচ রকম চালের ভাত রান্না হত—

  1. ঝিঙেশাল চালের ভাত – নিরামিষ ভাত-তরকারির সঙ্গে খাওয়ার জন্য।
  2. রামলাল চালের ভাত – মাছের সঙ্গে খাওয়ার জন্য।
  3. কনকপানি চালের ভাত – বড়ো বাবুর জন্য, তিনি এটি ছাড়া খান না।
  4. পদ্মজালি চালের ভাত – মেজ ও ছোট ছেলের জন্য।
  5. মোটা সাপটা চালের ভাতব্রাহ্মণ ঝি ও চাকরদের জন্য রান্না হত।
৩। দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্নঃ 
( ক ) যজ্ঞের ফর্দতে কী কী জিনিষের নাম ছিল ? 
উত্তর: যজ্ঞের ফর্দতে কী কী জিনিসের নাম ছিল?

যজ্ঞ উপলক্ষে আয়োজনের জন্য এক দীর্ঘ ফর্দ তৈরি করা হয়েছিল, যাতে বিভিন্ন ধরনের খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসের উল্লেখ ছিল। ফর্দতে উল্লেখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো—

  1. চালের বিভিন্ন প্রকারভেদ – ঝিঙেশাল, রামলাল, কনকপানি, পদ্মজালি ইত্যাদি।
  2. নানা ধরনের ডাল – মসুর, অড়হর, কলাই, মটর ইত্যাদি।
  3. বিভিন্ন ধরনের মাছ – ইলিশ, চিতল, ভেটকি, পোনা, ট্যাংরা ইত্যাদি।
  4. মাংস – খাসির মাংস, হাঁস-মুরগির মাংস ইত্যাদি।
  5. দুধ, ঘি, মাখন ও মিষ্টান্ন – ক্ষীর, সন্দেশ, রসগোল্লা, মণ্ডা ইত্যাদি।
  6. শাকসবজি ও মশলা – আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, লঙ্কা, ধনে ইত্যাদি।
  7. ফল-মূল – কলা, নারকেল, আম, জাম, পেঁপে ইত্যাদি।
  8. পান-সুপারি, গঙ্গাজল ও নানা উপাচার যজ্ঞের আচার-অনুষ্ঠানের জন্য।

( খ ) “ কিন্তু সাগরে শিশির পড়ে ” ––―― ব্যাখ্যা করো । 
উত্তর: “কিন্তু সাগরে শিশির পড়ে” – ব্যাখ্যা করো।

এই প্রবাদবাক্যের অর্থ হলো অতি সামান্য উপকার বা দান, যা বৃহৎ সমস্যার সমাধান করতে পারে না

গল্পে এই বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অল্প দানের মাধ্যমে দরিদ্রদের দুর্দশা লাঘব করার প্রচেষ্টাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার জন্য। তারা যদি সত্যিকারের সাহায্য করতে চাইত, তবে গ্রামের গরিব মানুষদের জন্য স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করত। কিন্তু তারা কেবল সামান্য কিছু খাবার দিয়ে নিজেদের কর্তব্য শেষ করেছে বলে মনে করে। ফলে এটি সাগরে শিশির পড়ার মতো নগণ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।


( গ ) “ কলকাতা গিয়ে খেচে মেখে আসি ” ― কে বলেছে ? কলকাতায় গিয়ে তার কী অভিজ্ঞতা হয়েছে লেখ । 
উত্তর: “কলকাতা গিয়ে খেচে মেখে আসি” ― কে বলেছে? কলকাতায় গিয়ে তার কী অভিজ্ঞতা হয়েছে লেখ। এই উক্তিটি উচ্ছবের

উচ্ছব কলকাতায় গিয়ে খুব কষ্টের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। সে মনে করেছিল, কলকাতায় গেলে হয়তো কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে গিয়ে—

  1. শহরের মানুষের নিষ্ঠুরতা ও উদাসীনতা দেখে হতবাক হয়।
  2. খাবার ও আশ্রয়ের জন্য তাকে চরম সংগ্রাম করতে হয়।
  3. কেউ তাকে সাহায্য করতে রাজি হয়নি, বরং অবহেলা করেছে।
  4. কাজ খুঁজতে গিয়ে সে প্রতারণার শিকার হয়।
  5. অবশেষে ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে, কলকাতার প্রতি ঘৃণা জন্মে।

“খেচে মেখে আসি” কথাটির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, কলকাতা গিয়ে সে শুধুই দুর্ভোগ পেয়েছে, কোনো লাভ হয়নি।


( ঘ ) উচ্ছবের খিদের বর্ণনাই ভাত গল্পের মূল বিষয় যুক্তিসহ আলোচনা করো ।
উত্তর: উচ্ছবের খিদের বর্ণনাই ‘ভাত’ গল্পের মূল বিষয় যুক্তিসহ আলোচনা করো।

গল্পের মূল প্রতিপাদ্য হলো ক্ষুধার তীব্র যন্ত্রণা ও সামাজিক বৈষম্য। উচ্ছবের খিদে কেবল তার শারীরিক চাহিদার প্রতিফলন নয়, বরং এটি দরিদ্র শ্রেণির মানুষের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কষ্টের প্রতীক

  1. উচ্ছবের খিদের চিত্রায়ণ:

    • প্রথম থেকেই দেখা যায় যে, উচ্ছব অতিশয় ক্ষুধার্ত
    • সে কিছু খাবারের আশায় বারবার চেয়ে বেড়ায়
    • যখন বাসিনী চুপিচুপি তাকে খাবার দেয়, তখন সে অতি আগ্রহের সঙ্গে তা খেতে শুরু করে।
    • কিন্তু পরক্ষণেই ধরা পড়ে এবং নির্মম অত্যাচারের শিকার হয়
  2. গল্পের মূল বার্তা:

    • ক্ষুধার চেয়ে বড় কোনো সত্য নেই। অভাব মানুষকে সম্মান ভুলিয়ে দেয়, লজ্জার অনুভূতিও হারিয়ে যায়
    • সমাজে দরিদ্রদের প্রতি অবিচার ও উপেক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকটভাবে দেখানো হয়েছে
    • ধনী শ্রেণি যজ্ঞের আয়োজন করে আত্মতুষ্টি লাভ করে, কিন্তু দরিদ্রদের ক্ষুধার কথা ভাবে না
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ 

 ১। ভাত গল্পটি কার লেখা ? 
উত্তর: ভাত গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।

২। উচ্ছবের চাহনি কেমন ছিল ? 
উত্তর: উচ্ছবের চাহনি ছিল উগ্র প্রকৃতির। তার চোখে একধরনের বন্য দৃষ্টি ছিল, যা তাকে অভাব ও কষ্টের প্রতিচ্ছবি করে তুলেছিল।

৩। উচ্ছব কী পোষাক পরেছিল ? 
উত্তর: উচ্ছব একটি ময়লা ও ছেড়া লুঙ্গি পরেছিল, যা তার দেহের তুলনায় ছোট ছিল।

৪। বড়ো পিসিমা চিরকাল এ সংসারের কোন দিকটি তদারক করেছেন ? 
উত্তর: বড়ো পিসিমা চিরকাল সংসারের রান্নাবান্না ও গৃহস্থালির কাজের দিকটি তদারকি করেছেন।

৫। ‘ ভাত খাবে কাজ করবে ’ – কথাটি কে বলেছিল ? 
উত্তর: “ভাত খাবে, কাজ করবে” কথাটি বড়ো পিসিমা বলেছিলেন।

৬। কে দূরদর্শী লোক ছিলেন ? 
উত্তর: বড়ো বাড়ির গৃহকর্তা দূরদর্শী লোক ছিলেন। তিনি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কাজ করতেন।

৭। উচ্ছব কার সঙ্গে কোলকাতায় এসেছিল ? 
উত্তর: উচ্ছব কালী ঘোষালের সঙ্গে কলকাতায় এসেছিল।

৮। “ ময়ুর ছাড়া কার্তিক আসবে নাকি ’ – কে , কাকে বলেছে ? 
উত্তর: “ময়ুর ছাড়া কার্তিক আসবে নাকি” কথাটি বড়ো পিসিমা তার স্বামীকে বলেছিলেন।

৯। বড়ো বাড়ির গৃহকর্তার কি রোগ হয়েছে ? 
উত্তর: বড়ো বাড়ির গৃহকর্তার অজানা জ্বর হয়েছিল, যা কোনোভাবেই কমছিল না।

১০। বড়ো বাড়ির গৃহকর্তার মৃত্যু প্রতিরোধের জন্য কী করা হয়েছিল ? 
উত্তর: বড়ো বাড়ির গৃহকর্তার মৃত্যু প্রতিরোধের জন্য যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিল এবং বৈদ্য-হোম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

১১। মেজ বউ কী রান্না করেছে ? 
উত্তর: মেজ বউ মাছের ঝোল ও নানা ধরনের তরকারি রান্না করেছে।

১২। গৃহকর্তার কোন ছেলে বিলাতে থাকে ? 
উত্তর: গৃহকর্তার বড় ছেলে বিলাতে থাকে

১৩। কে তান্ত্রিক এনেছেন ? 
উত্তর: বড়ো পিসিমা তান্ত্রিক এনেছেন।

১৪। কালো বিড়ালের লোম কে আনতে গেছে ? 
উত্তর: কালো বিড়ালের লোম আনতে উচ্ছব নিজেই গেছে

১৫। কোথা থেকে বালি আনতে হবে ? 
উত্তর: গঙ্গার ঘাট থেকে বালি আনতে হবে

১৬। মেজ ও ছোটবাবুর জন্য কোন চাল রান্না হয় ? 
উত্তর: মেজ ও ছোটবাবুর জন্য ভালো মানের আতপ চাল রান্না হয়

১৭। বড়ো পিসিমা কার সাহায্যে চাল বিক্রি করেন ? 
উত্তর: বড়ো পিসিমা গৃহপরিচারকদের সাহায্যে চাল বিক্রি করেন

১৮। কোন নদীর জলে উচ্ছবের ঘর ভেসে যায় ? 
উত্তর: গঙ্গা নদীর জলে উচ্ছবের ঘর ভেসে যায়

১৯। উচ্ছব স্ত্রীকে কী বলে ডাকত ? 
উত্তর: উচ্ছব তার স্ত্রীকে "মইনো" বলে ডাকত।

২০। উচ্ছবের পিতার নাম কী ? 
উত্তর: উচ্ছবের পিতার নাম শিবচরণ দাস

২১। গৃহকর্তা কত বছর বয়সে মারা যান ? 
উত্তর: গৃহকর্তা ৬৫ বছর বয়সে মারা যান

২২। উচ্ছব কোন চালের ভাতের ডেচকি মাথায় নিয়ে গিয়েছিল ? 
উত্তর: উচ্ছব মোটা চালের ভাতের ডেচকি মাথায় নিয়ে গিয়েছিল

২৩। উচ্ছব কিভাবে ভাত খায় ? 
উত্তর: উচ্ছব অতি দ্রুত, বড় বড় লোকমে গোগ্রাসে ভাত খায়, যেন বহুদিন কিছু খায়নি