অন্নদার আত্মপরিচয়
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন:
(ক) অন্নদার আত্মপরিচয় কবিতাটি কোন কাব্যের অন্তর্গত?
উত্তর: এটি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের "অন্নদামঙ্গল" কাব্যের অন্তর্গত।
(খ) ‘পাটুনীর বাক্যে মাতা হাসিয়া অন্তরে’ – এখানে মাতার পরিচয় দাও।
উত্তর: এখানে মাতা হলেন দেবী অন্নপূর্ণা।
(গ) ‘জীবন স্বরূপা সে স্বামীর শিরোমণি’ – ‘জীবন স্বরূপা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এখানে ‘জীবন স্বরূপা’ বলতে জলের দেবী গঙ্গাকে বোঝানো হয়েছে।
(ঘ) সেঁউতী বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: নৌকার জমা জল ছেঁচে ফেলার জন্য ব্যবহৃত কাঠের চারকোণা পাত্রকে সেঁউতী বলা হয়।
(ঙ) ‘পঞ্চমুখ’ শব্দের দ্ব্যর্থবোধক দিক ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এটি দ্ব্যর্থবোধক শব্দ—
১. এক অর্থে দুবাক্যে অত্যন্ত মুখর।
২. অপর অর্থে মহাদেব, যার পাঁচটি মুখ রয়েছে, তাই তাকে ‘পঞ্চানন’ বলা হয়।
(চ) ‘না মরে পাষাণ বাপ’ – এখানে ‘পাষাণ বাপ’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: এখানে ‘পাষাণ বাপ’ বলতে পর্বতরাজ হিমালয়কে বোঝানো হয়েছে।
২। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর:
(ক) ‘অভিমানে সমুদ্রেতে ঝাঁপ দিলা ভাই’ – বক্তার ভাই কে? এই প্রসঙ্গের পৌরাণিক ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: বক্তার ভাই হলেন মৈনাক পর্বত, দেবী ভগবতীর ভাই।
📌 পৌরাণিক প্রসঙ্গ:
পূর্বে পর্বতসমূহের পাখা ছিল, তারা উড়ে বেড়াত। এতে ক্ষতি হতো, তাই দেবরাজ ইন্দ্র বজ্র দিয়ে তাদের পক্ষচ্ছেদ করেন। মৈনাক ভয় পেয়ে সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়। দেবী ভগবতী এখানে সেই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন।
(খ) ‘সিদ্ধিতে নিপুণ’ – ‘সিদ্ধি’ শব্দটির দুটি অর্থ কী?
উত্তর:
১. এক অর্থে গাঁজা বা ভাঙ জাতীয় মাদক।
2. অপর অর্থে অষ্টসিদ্ধি (যেমন—অনিমা, লঘিমা, মহিমা, ঈশিতা, প্রাকাশ্য, কামবশায়িতা ইত্যাদি), যা মহাদেবের করায়ত্ত।
(গ) ‘কু কথায় পড়মুখ কণ্ঠভরা বিষ, কেবল আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব অহর্নিশ’ – দ্ব্যর্থবোধক দিক ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
🔹 ‘কু’ শব্দের দুই অর্থ → খারাপ কথা এবং পৃথিবী।
🔹 ‘দ্বন্দ্ব’ শব্দের দুই অর্থ → কলহ ও মিলন।
এই পঙক্তিতে দেবী অন্নপূর্ণা তাঁর স্বামী মহাদেবকে খারাপ কথা বলা ও কলহপ্রবণ বলে কটাক্ষ করেছেন। অন্যদিকে, মহাদেবের পাঁচটি মুখ সর্বদা পৃথিবীর ভালো-মন্দ আলোচনা করে, তাই ‘অহর্নিশ দ্বন্দ্ব’ শব্দটি এসেছে।
(ঘ) ‘ঈশ্বরীরে জিজ্ঞাসিল ঈশ্বরী পাটনী’ – এখানে উল্লিখিত দুই ঈশ্বরীর পরিচয় দাও।
উত্তর:
১. প্রথম ঈশ্বরী: দেবী অন্নপূর্ণা।
২. দ্বিতীয় ঈশ্বরী: ঈশ্বরী পাটুনী, যিনি গঙ্গা নদী পারাপার করান।
(ঙ) ‘কোন গুন নাহি তার কপালে আগুন’ – কে, কার সম্পর্কে এ কথা বলেছেন?
উত্তর: দেবী অন্নপূর্ণা মহাদেব সম্পর্কে বলেছেন।
📌 মহাদেব তিন গুণের (সত্ত্ব, রজ, তম) অতীত, তাই তাঁর কোনো গুণ নেই। তবে তাঁর কপালে তৃতীয় নয়ন জ্বলজ্বল করছে, যা দেবী ‘কপালের আগুন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
৩। দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর:
(ক) দেবী অন্নদা হরিহোড়ের গৃহ ত্যাগ করলেন কেন? তিনি কোথায় যাচ্ছেন?
উত্তর:
দেবী অন্নপূর্ণা ছল করে দরিদ্র হরিহোড়ের গৃহে আশ্রয় নেন। ধীরে ধীরে সংসারের দারিদ্র্য দূর হয়। কিন্তু হরিহোড়ের বাড়িতে নিত্য কলহ-বিবাদ চলত, যা দেবীর অপছন্দ হয়। তাই তিনি হরিহোড়ের গৃহ ত্যাগ করে ভবানন্দ মজুমদারের বাড়িতে যাচ্ছেন।
(খ) ‘ইহাতে বুঝিনু তুমি দেবতা নিশ্চয়’ – কে কাকে বলেছে? সে কীভাবে বুঝল?
উত্তর:
ঈশ্বরী পাটুনী দেবী অন্নপূর্ণাকে বলেছিল।
📌 কারণ: দেবীর পায়ের ছোঁয়ায় নৌকার কাঠের সেঁউতি সোনায় পরিণত হয়। এতেই সে বুঝতে পারে দেবী সাধারণ মানুষ নন, দেবতা।
(গ) ‘অন্নদার আত্মপরিচয়’ পাঠে তৎকালীন সমাজের চিত্র বর্ণনা করো।
উত্তর:
📌 অষ্টাদশ শতকের সমাজব্যবস্থা ফুটে উঠেছে এই পাঠে—
• দরিদ্র মানুষের অন্নসংকট ও দুর্দশার চিত্র।
• বাল্যবিবাহ, বহু বিবাহ ও সতীন সমস্যা বিদ্যমান ছিল।
• স্ত্রীরা অভিমান করে স্বামীর গৃহ ত্যাগ করতেন।
• দেব-দেবীর প্রতি মানুষের গভীর বিশ্বাস ও ভক্তি ছিল।
• মায়েরা সর্বদা সন্তানের কল্যাণ কামনা করতেন, যেমন ঈশ্বরী পাটুনীর ‘দুধে-ভাতে’ থাকার প্রার্থনা।
(ঘ) ঈশ্বরী পাটুনীর চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:
• তিনি সৎ, কর্তব্যপরায়ণ, ভক্তিমতী ও সরল মনের নারী।
• সমাজের আইন ও নিয়ম মেনে চলতেন।
• দেবীকে নিজের অর্থলাভের জন্য কিছু চাননি।
• দেবী বর দিতে চাইলে তিনি শুধুমাত্র সন্তানের দুধ-ভাতের অভাবমুক্ত জীবন চেয়েছেন।
৫। সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা: •
(ক) ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’
উত্তর:
📌 সূত্র: ভারতচন্দ্র রায়ের "অন্নদার আত্মপরিচয়" কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
📌 অর্থ:
🔹 দেবী বর চাইতে বললে ঈশ্বরী পাটুনী ধন-সম্পদ না চেয়ে সন্তান যেন অন্নহীন না হয়, শুধু এই আশীর্বাদ চান।
🔹 এতে একজন মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়েছে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর:
(১) কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দে, পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার পেঁড়ো গ্রামে।
(২) ‘অন্নদার আত্মপরিচয়’ কোন যুগের কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: মধ্যযুগের "অন্নদামঙ্গল" কাব্য থেকে।
(৩) দেবী অন্নপূর্ণা কোন নদী পার হয়েছিলেন?
উত্তর: গঙ্গিনী নদী।