Chapter 5 - 

কৃপণ


অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন:

(ক) ‘কৃপণ’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর: ‘কৃপণ’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

(খ) কবিতার ‘আমি’ গ্রামের পথে কী উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন?
উত্তর: কবিতার ‘আমি’ ভিক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামের পথে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন।

(গ) রথ থেকে নেমে রাজাধিরাজ ভিখারিকে কী বলেছিলেন?
উত্তর: রাজাধিরাজ রথ থেকে নেমে ভিখারির সামনে হাত বাড়িয়ে বলেছিলেন— "আমায় কিছু দাও গো"!

(ঘ) ভিখারি রাজাধিরাজকে কী দিয়েছিলেন?
উত্তর: ভিখারি রাজাধিরাজকে একটি ছোট শস্যকণা দিয়েছিলেন।

(ঙ) দিনান্তে ঘরে ফিরে ভিখারি তাঁর ভিক্ষান্নের মধ্যে কী দেখেছিলেন?
উত্তর: দিনান্তে ঘরে ফিরে ভিখারি তাঁর ভিক্ষান্নের মধ্যে একটি ছোট স্বর্ণকণা দেখেছিলেন।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন:

(ক) রাজাধিরাজ রথ থেকে পথের ধারে কী ছড়িয়ে দেবেন এবং তা নিয়ে ভিখারি কী করবেন বলে ভেবেছিলেন?
উত্তর: ভিখারি ভেবেছিলেন রাজাধিরাজ রথ থেকে পথের ধারে ধন-ধান্য ও টাকা-পয়সা ছড়িয়ে দেবেন। আর সে দুহাত ভরে সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে নিজের ঝুলি পূর্ণ করবে।

(খ) রথ থামার পর রাজাধিরাজ কী করেছিলেন?
উত্তর: রথ থামার পর রাজাধিরাজ নেমে এসে ভিখারির সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা চেয়েছিলেন।

(গ) রাজাধিরাজের কথা শুনে ভিখারির কী মনে হয়েছিল?
উত্তর: রাজাধিরাজের কথা শুনে ভিখারি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন, রাজাধিরাজ তাঁর সঙ্গে প্রবঞ্চনা করছেন, কারণ এক রাজাধিরাজের কোনো অভাব থাকার কথা নয়।

(ঘ) ভিক্ষান্নের মধ্যে সোনার কণা দেখে ভিখারি কেন আক্ষেপ করেছিলেন?
উত্তর: ভিক্ষান্নের মধ্যে সোনার কণা দেখে ভিখারি আক্ষেপ করেছিলেন এই ভেবে যে, যদি তিনি তার সম্পূর্ণ ঝুলি উজার করে দিতেন, তাহলে হয়তো প্রচুর সোনার কণা পেতেন।

(ঙ) ‘রাজভিখারি’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘রাজভিখারি’ বলতে এখানে স্বয়ং ঈশ্বরকে বোঝানো হয়েছে। কবি দেখিয়েছেন, ঈশ্বর ভিখারির কাছে হাত পেতে ভিক্ষা চাইছেন, যা এক গভীর ভাবার্থ প্রকাশ করে।

দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন:

(ক) ‘কৃপণ’ কবিতার কাহিনি নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃপণ কবিতাটি এক গভীর দার্শনিক সত্যকে রূপকের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এক ভিখারি গ্রামের পথে ভিক্ষা করে ফিরছিল। হঠাৎ সে দেখে, সোনার রথে চড়ে রাজাধিরাজ গ্রামের পথে আসছেন। রাজাধিরাজের মহিমা দেখে ভিখারি মুগ্ধ হয়।

ভিখারি মনে মনে আশা করেছিল, রাজাধিরাজ পথের ধারে ধন-সম্পদ ছড়িয়ে দেবেন এবং সে তা কুড়িয়ে নিজের ঝুলি পূর্ণ করবে। কিন্তু হঠাৎই রাজাধিরাজ তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত পেতে বলেন— “আমায় কিছু দাও গো”!

রাজাধিরাজের এমন আচরণে ভিখারি হতভম্ব হয়ে যায়। সে মনে করে, রাজাধিরাজ তাকে প্রবঞ্চনা করছেন। তাই বাধ্য হয়ে সে তার ঝুলি থেকে একটি শস্যকণা বের করে রাজাধিরাজকে দেয়।

দিনশেষে ঘরে ফিরে ভিখারি তার ঝুলি উজার করে দেখতে পায়, তার ভিক্ষান্নের মধ্যে একটি সোনার কণা রয়েছে। তখন সে গভীর আক্ষেপ করে ভাবে— যদি সে তার সমস্ত ঝুলি রাজাধিরাজকে দান করত, তবে সে অগণিত সোনার কণা পেতে পারত! তখনই সে উপলব্ধি করে, রাজাধিরাজ আসলে স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন, যাকে সে চিনতে পারেনি।

(খ) ‘কৃপণ’ কবিতায় কৃপণ কে – ভিখারি না রাজভিখারি? তোমার মতামত দাও।
উত্তর:
‘কৃপণ’ কবিতায় প্রকৃত কৃপণ ভিখারি নিজেই।

রাজাধিরাজ এখানে স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতীক। তিনি ভিখারির হৃদয়ের দয়ার পরিমাণ পরীক্ষা করতে এসেছিলেন। কিন্তু ভিখারি দানে কৃপণতা দেখিয়েছিল— সে তার সম্পদ থেকে সামান্য এক কণা শস্যই দান করেছিল।

অন্যদিকে, রাজাধিরাজ ধন-সম্পদের অধিকারী হয়েও নিজের সমস্ত ঐশ্বর্য ত্যাগ করে মানুষের হৃদয়জয় করতে চেয়েছিলেন। তাই দেখা যায়, প্রকৃত কৃপণ ভিখারি নিজেই, কারণ সে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেনি।

(গ) ভিখারি রাজাকে ক্ষুদ্র কণা ভিক্ষা দিয়েছিলেন এবং পরিশেষে কেন তার জন্য আক্ষেপ করেছিলেন?
উত্তর:
ভিখারি ভেবেছিল, রাজাধিরাজ পথের ধারে ধন-সম্পদ ছড়িয়ে দেবেন, যা সে কুড়িয়ে নেবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটে ঠিক উল্টো।

রাজাধিরাজ হঠাৎই তার সামনে এসে ভিক্ষা চান। এতে ভিখারি হতভম্ব হয়ে যায় এবং ভাবে, রাজাধিরাজ তার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তাই কৃপণতার পরিচয় দিয়ে সে কেবল একটি শস্যকণা রাজাধিরাজকে দেয়।

পরিশেষে, ঘরে ফিরে ভিখারি তার ভিক্ষান্নে একটি সোনার কণা দেখতে পায় এবং গভীরভাবে আক্ষেপ করে। সে ভাবে— যদি সে তার সমস্ত ঝুলি রাজাকে দান করত, তবে হয়তো সে অসংখ্য সোনার কণা পেত।

(ঘ) ‘কৃপণ’ কবিতায় কবির চরিত্র চিত্রণের দক্ষতার পরিচয় দাও।
উত্তর:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতায় এক গভীর জীবনদর্শন প্রকাশ করেছেন। কবি দেখিয়েছেন, ঈশ্বর নিঃস্বার্থ আত্মসমর্পণ চান। ঈশ্বর নিজে কিছু চান না, কিন্তু যিনি বিনিময়ে কিছু দেন, তাকে তিনি দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেন।

ভিখারি চরিত্রটি সাধারণ মানুষের প্রতীক, যে চিরকাল ঈশ্বরের কাছে চাইতে অভ্যস্ত। কিন্তু যখন ঈশ্বর তার কাছে কিছু চান, তখন সে কৃপণতা করে। রাজাধিরাজ এখানে ঈশ্বরের রূপক। ভিখারির আচরণের মধ্য দিয়ে কবি মানুষের কৃপণ মানসিকতার চিত্র এঁকেছেন।

(ঙ) ‘কৃপণ’ কবিতার আলোকে রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরচেতনার বিশ্লেষণ করো।
উত্তর:
‘কৃপণ’ কবিতার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরচেতনার এক গভীর ভাবনা প্রকাশ করেছেন। কবি দেখিয়েছেন, ঈশ্বর লাভ সহজ নয়। ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য জাগতিক মোহ-মায়া ত্যাগ করে আত্মসমর্পণ করতে হয়।

রাজাধিরাজ এখানে ঈশ্বরের প্রতীক, যিনি মানুষকে পরীক্ষা করতে এসেছেন। ভিখারি নিজের কৃপণতার জন্য ঈশ্বরকে চিনতে পারেনি।

এই কবিতার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বোঝাতে চেয়েছেন— যদি কেউ সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরকে দান করে, তবে ঈশ্বর তাকে শতগুণ ফিরিয়ে দেন।