Chapter 9 -
ফুলের বিবাহ
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন:
(ক) "ফুলের বিবাহ" কোন গ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তরঃ "ফুলের বিবাহ" বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "কমলাকান্তের দপ্তর" গ্রন্থের অন্তর্গত।
(খ) কোন ফুলের সঙ্গে কোন ফুলের বিবাহের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ মল্লিকা ফুলের সঙ্গে গোলাপ ফুলের বিবাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(গ) ফুলের বিবাহের ঘটকালি কে করেছিল?
উত্তরঃ ফুলের বিবাহে ভ্রমর ঘটকালি করেছিল।
(ঘ) পাত্র গোলাবলালের পদবি কী ছিল?
উত্তরঃ পাত্র গোলাবলালের পদবি ছিল গন্ধ্যোপাধ্যায়।
(ঙ) ফুলের বিবাহে নিতবর কে হয়েছিল?
উত্তরঃ ফুলের বিবাহে সেঁউতি ফুল নিতবর হয়েছিল।
(চ) মল্লিকা কন্যার পিতা কে?
উত্তরঃ মল্লিকা কন্যার পিতা ক্ষুদ্র মল্লিকা বৃক্ষ।
(ছ) মল্লিকা ও গোলাবের বিবাহে পুরোহিত কে ছিল?
উত্তরঃ এই বিবাহে পুরোহিত ছিল নসীবাবুর নয় বছরের মেয়ে কুসুমলতা।
(জ) বাসর ঘরে রসিকতা করতে গিয়ে কে শুকিয়ে উঠেছিল?
উত্তরঃ বাসর ঘরে রসিকতা করতে গিয়ে টগর শুকিয়ে উঠেছিল।
(ঝ) বাসরঘরে কে নীল শাড়ি ছড়িয়ে জমিয়ে বসেছিল?
উত্তরঃ ঝুমকা ফুল নীল শাড়ি ছড়িয়ে জমিয়ে বসেছিল।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন:
(ক) ফুলের বিবাহ কোন মাসের কত তারিখে সম্পন্ন হয়েছিল?
উত্তরঃ ফুলের বিবাহ ১লা বৈশাখে সম্পন্ন হয়েছিল।
(খ) ঘটক যখন গোলাপের বাড়িতে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে যায়, তখন গোলাপ কী করছিল?
উত্তরঃ তখন গোলাপ তাসের সঙ্গে নেচে-হেসে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা করছিল।
(গ) বিয়েতে মৌমাছিরা কীসের বায়না নিয়েছিল, এবং কেন তারা সে কাজ করতে পারেনি?
উত্তরঃ মৌমাছিরা সানাই বাজানোর বায়না নিয়েছিল, কিন্তু তারা রাতে দেখতে না পাওয়ায় সেই কাজ করতে পারেনি।
(ঘ) বরযাত্রায় কার বাহক হওয়ার কথা ছিল, এবং শেষ পর্যন্ত কে বাহকের ভূমিকা পালন করেছিল?
উত্তরঃ বরযাত্রায় বাতাস বাহক হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সে অদৃশ্য থাকায় কমলাকান্ত নিজেই সেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
(ঙ) নসীবাবুর কন্যার নাম কী? তার বয়স কত?
উত্তরঃ নসীবাবুর কন্যার নাম কুসুমলতা, তার বয়স নয় বছর।
(চ) বরযাত্রায় পিঁপড়েদের ভূমিকা কেমন ছিল?
উত্তরঃ পিঁপড়েরা বরযাত্রায় মোসায়েব হয়ে এসেছিল, যাদের কাজ ছিল ঝগড়া বাঁধানো ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।
৩। রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর:
(ক) গোলাপের সঙ্গে বিবাহ স্থির হওয়ার আগে মল্লিকার পিতা কোন কোন পাত্রের কথা বিবেচনা করেছিলেন, এবং কেন সেগুলি কার্যকর হয়নি?
উত্তরঃ মল্লিকার পিতা প্রথমে উদ্যানের রাজ স্থলপদ্মের সঙ্গে বিবাহ স্থির করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পাত্রপক্ষের ঘর উঁচু বলে তারা আগ্রহ দেখায়নি। জবা ও গন্ধরাজও বিবাহে সম্মত ছিল, কিন্তু জবার মাথা গরম এবং গন্ধরাজের অহংকার বেশি থাকায় পাত্রীপক্ষ তা গ্রহণ করেনি।
(খ) ঘটক হিসাবে ভ্রমরের ভূমিকা বিস্তারিতভাবে লেখো।
উত্তরঃ ভ্রমর ছিল ফুলের বিবাহের প্রধান ঘটক। উদ্যানের সব ফুল ও বৃক্ষের সম্পর্কে তার ভালো ধারণা ছিল। সে যেমন কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষের মানসিকতা বুঝত, তেমনি কন্যার সৌন্দর্য, গুণ ও পাত্রপক্ষের সামর্থ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত। সে ঘটক হিসেবে বরপক্ষের কাছ থেকে কিছু প্রণামীর দাবিও করেছিল।
(গ) ফুলের বিবাহ বরযাত্রার বিবরণ দাও।
উত্তরঃ বরযাত্রা শুরু হয় গোধূলি লগ্নে। গোলাব প্রস্তুত হলে উচ্চিঙ্গড়ার নহবৎ বাজতে থাকে। মৌমাছিরা সানাই বাজানোর বায়না করলেও যেতে পারেনি।
- জোনাকি আলো হাতে পথ দেখায়,
- কোকিল গান গেয়ে চলে,
- গন্ধরাজ সুগন্ধ ছড়িয়ে বরযাত্রাকে মাতিয়ে তোলে,
- অশোক নেশায় লাল,
- পিঁপড়েরা মোসায়েব হয়ে ঝগড়া বাধাতে চায়,
- বরযাত্রায় আরও যোগ দেয় করবী, চাঁপা, কুটজ ও কুরুবক।
(ঘ) বাসরঘরের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ বিবাহের পর গোলাবকে বাসরঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে
- টগর রসিকতা করতে গিয়ে শুকিয়ে পড়ে।
- রজনীগন্ধাকে বর রঙ্গ করে "তারকারাক্ষসী" বলে ডাকে।
- বকুল লাজুক হয়ে এককোণে চুপচাপ বসে থাকে।
- ঝুমকা নীল শাড়ি ছড়িয়ে জমিয়ে বসে।
- বান্ধবী যুথি বর গোলাবের কানে কানে কথা বলে।
(ঙ) ফুলের বিবাহ বর্ণিত আখ্যানে বাঙালি বিবাহের যে বাস্তবতা লুকিয়ে আছে তা পরিস্ফুট করো।
উত্তরঃ "ফুলের বিবাহ" মূলত বাঙালি বিবাহের রূপক প্রতিচিত্র। এতে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা, কুলীন বরপক্ষের অহংকার, ঘটকের দৌরাত্ম্য, দেনাপাওনা, বরযাত্রার আড়ম্বর ও বাসরঘরের হাস্যরসের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।
- মল্লিকার পিতা ভালো পাত্র খুঁজতে ব্যস্ত, যা বাঙালি সমাজের বাস্তব ছবি।
- ভ্রমরের ঘটকালি ঠিক মানুষের ঘটকের মতোই, যে পাত্র ও কন্যার গুণাগুণ যাচাই করে।
- বরযাত্রায় নেশাগ্রস্ত অতিথি, মোসায়েবদের ঝগড়া করা, সবই বাস্তবের অনুরূপ।
- বাসরঘরের ঠাট্টা-মশকরা বাস্তব জীবনের বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানেরই প্রতিফলন।
(চ) "ফুলের বিবাহ" অবলম্বনে বঙ্কিমচন্দ্রের সমাজমনস্কতার পরিচয় দাও।
উত্তরঃ "ফুলের বিবাহ" মূলত রূপক কল্পনা হলেও বাস্তব জীবনের উপমায় ভরা।
- কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার দুর্দশা,
- বরপক্ষের অহংকার ও কুলজী দপ্তরের মর্যাদা,
- ঘটকের কৌশল,
- বাঙালি বিবাহের আড়ম্বর ও দেনাপাওনা—এসবের মিশেলে লেখক সমাজের বাস্তব চিত্রই ফুটিয়ে তুলেছেন।